বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-১
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল এর কবিতা -
∆
দিতির জলকণা খুঁজি
বিচ্ছিন্ন পাখির পালকের মতো সাদা ফুলের দিকে তাকিয়ে আমারই শরীর পুড়ে যাচ্ছে আদিম অনার্যে, কোদালের বাঁটে লেগে থাকে মাটি – কোনো পরাজয় নেই ; আকাশ জুড়ে পার্থেনিয়াম, সেখানে পুঁতে রাখছে আঁধার, হয়তো সব নিষিদ্ধে ভাত ফোটার রংটুকু সারা পথ জুড়ে, কিছু কান্না ভাসে অজীর্ণ অপুষ্টিতে ; এত মায়ামেঘ, নাবাল ঠেলে ওঠে যায় সাপ সাপ দুপুর – কারা যেন দামনের সাথে গোলমাল চায়
ধূসরতার কোনো মানে নেই ছায়ারোদে, অর্থহীন হলুদ ভেঙে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন বিরতির পর – তাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায় নিটোল বাদামি স্ত্রী ও সন্তানেরা ; মাছ ভাজার গন্ধ আসে আর জং বাজে মার্টগার্ডে, তারপর তন্ন তন্ন করে আমি দিতির জলকণা খুঁজি
ধর্মপোতার কাছে ভাঙা ইটের টুকরোগুলো মৃত্যু পিপাসায় সম্ভোগ সারে –
∆
কাঁপতে থাকে জলতল
বর্ষা হওয়ার কথা ছিল না আজ ; বেঁচে থাকার একটা প্রহর পর্যন্ত শুধুমাত্র, আমরা দেখতে পাচ্ছি নাগরদিঘিটি একে একে অধিকার করে জমিন, মাথার উপর ভেসে বেড়াচ্ছে উদভ্রান্ত জঙ্গল বিষয়ক মেঘ – আলপথের ধারে গজিয়ে ওঠা অস্থাবরে ভাঙা ডালপালার ন্যাতানো কোটি, আমি কাদা ছেটানো হাত পা নিয়ে সাদাসিধে – ভেজা বিড়িতে আগুন লাগাই ; ভেঙ্গে যাওয়া আর হাতড়ানো শ্বাসের টানে কাঁপতে থাকে জলতল
এসব অসামান্য আয়ুতে শেওলার উপর রোদ পড়ে – আর পরস্পরকে দেখতে থাকি আমি ও দামন
মৃগনাভি দিতির ঝিঙে ফুল ফোটানো সামনের সবুজ বাড়িটি তার মধ্যবিত্ত নিয়ে জলাশয়ে শালুক ফোটায়
∆
বিশল্যকরণী ঝোপের পাশে
এক একটা আকাশ থেকে আশ্চর্য রকম বাজ পড়ে, তখন বিশল্যকরণী ঝোপের পাশ দিয়ে ক্ষীণ কোমরের রমনীটি এগিয়ে যায় পাড়ার শেষ সীমায়, তখনও ইচ্ছের ভিতর ময়ূরীর পালক, সেখানে ধান ঝাড়াইয়ের পর দমবন্ধ বুকে জমে থাকে খড়কুটো – বাতাসের আঘাত চায় অথবা হাড়জিরে আত্মা নিয়ে উষ্ণ কাতর হয়ে পড়ে; ঠিক কতখানি ফসল জমতে পারে বাঁধের কিনারায়
কয়েকটা খয়েরি বিন্দুর রেখায় নুনের যন্ত্রণা থেকে সে তথ্য জানা যায় না – সাবড়া আর শিরীষ গাছ ছায়া দানে আড়ষ্ট হলেও আবারও দমকা বাতাস আসে – উড়ে যায় দুপুরের তেজ : তেষ্টা বাড়তে বাড়তে দীর্ঘতায় জমাট বাঁধে আলুথালু পুরুষ
এই সরলতার জন্য তুমি কি খুন করতে পারো দিতি
অলংকরণ - নিশিপদ্য
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••