Friday 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৪

কবি খুকু ভূঞ্যা এর কবিতা-






১।।  পরিক্রমা
        •••••••••


ভাতের হাঁড়িতে জল ঢালার শব্দ
ঘুমোতে গেল রাতের পুরুষ,কাককুইলি স্বপ্ন।
কাঁদালের পাশে সচিবুড়ির বাঁশবন,
সে আজ চৈত্র একাদশী, সে আজ চাঁদ।
ফোঁটা ফোঁটা দুঃখের বড়ি ফুটে উঠেছে শিরা ওঠা কপালের ভাঁজে।
ঘোমটা টেনে বুড়ি দাগ লুকিয়ে হাসছে ‌।

এই নাও আমার উইঢিবির গল্প,নক্ষত্রহীন চোখ,
পাম গাছের মাথায় জ্বলা জোনাকির উত্তাপ,
নিশ্চুপ তুলসীতলা,ঘাস বাগান
দূরে ধানবনে ডাহুকের প্রহর জাগানো গান।

বসে আছি ভাঙা উঠোনে
আহত ঝিঁ ঝিঁ নক্ষত্রের আলোয় সচিবুড়ির ছায়া কাঁপছে--





২।।     মান
          •••••


যদি আসতে পারো আমি ফেরাব না।
সারি সারি গাছ পাহারায়,
জেগে আছে ফুল পাখি প্রজাপতি
আর অগনিত কালো চোখ,
পারবে কি এসব তুচ্ছ করে দরজায় টোকা দিতে?

কী সুন্দর মেঘ করেছে!
ঝিরিঝিরি ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি
ভিজে যাচ্ছে সন্ধ্যামনি পাড়া ‌।

স্নান সেরে বসে আছি, দীপ জ্বলছে টিমটিম
চন্দন গন্ধে ম ম বাতাস
পসরা প্রস্তুত,
আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছি বেদী,
পূজার জন্য হাত বাড়িও না
স্বয়ং পূজা হয়ে যাও নীল পুরুষ--




৩।।    অন্তরাল
          •••••••••


না ফেরা অতিথির মতো নীরব অক্ষর--
ভাঙা কোনো প্রাচীন বাঁশী,
গদ্যের ঘরকন্নায় কৃষিকাজ চাষবাস।
কান খোলা--
অগনিত শ্বাসাঘাতে মাটি চৌচির, ধোঁয়া উড়ছে
কালো পতাকা--
তুমি কি স্বাধীনতা খুঁজছো, না ভাত?
ভাত,নাকি বেঁচে থাকা?
এখন নড়ে না ওঠা কোনো বিস্ময়কর নয়
কাঠ পুড়বে স্বাভাবিক দহনে
থমথমে সকালের ভেতর কেবল জীবনবীজ রক্ষা করা
পোকামাকড়ের হাত থেকে, সতর্কে একা 




৪।।   আঁচল আড়াল
         •••••••••••••••


ভাত চড়ালাম,কাঠ পুড়ছে
এই বসন্তেও এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল,
বাঁশপাতা থেকে টপটপ শব্দ; ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে‌।
কাঁদালের পাশে দাঁড়িয়ে খানিক অন্ধকার দেখলাম
ঠিক যেন তোর থোকা থোকা মনখারাপ
ভিজল কি তোর চোখ?
সেদিকে তাকিয়ে দিশা কি প্রশ্ন করছে
রোজ কি কাঁদতে হয়?
মাটিভাত খেলার পুতুল মেয়ে অত কি আর বোঝে--
হাজার কাজের ফাঁকে চোখ কেন ভিজে যায়?
মা জানে, তুই আর আমি গোপনে গোপনে--




৫।।   চিতা দুপুর
        •••••••••••


ভালোবাসা ফুল নয়, কাঁটার আদরে
 বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ।
অথচ চাঁদ ঝুলে থাকে,কতই না ধূপ ধুনো ওড়ে।
সময় মনে রাখে না, মূহূর্তের মিলন ধ্বনি
দূরে নির্মাণ করে ঝলসানো বসন্ত আর মৃত নদীদাগ।

বলেছি তো, এসো বিশ্বাসে বাঁধি মোহনা।
ওই চাঁদ দেখে,
জোসনায় পালক ডুবিয়ে উড়ে যাওয়া পাখি
যদি কাল ফেরে গোটা একটা রাত নিয়ে ঠোঁটে,
কে বাড়াবে হাত কার দিকে?
কে জ্বালবে দীপ কার চোখে?

বিশ্বাস বীজ দাও
উর্বর বেদনা প্রসারিত বহুদূর--
হে ঋষিপ্রেম,
একটি তপোবন দাও, চিতা দুপুর--




অলংকরণ - সুদীপ্তা মাইতি

"""'"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""

No comments:

Post a Comment