কবি শুভঙ্কর দাস এর কবিতা-
১।। ∆ অফুরন্ত ১ ∆
অভাবের বুকে সহস্র ছুরি ঘুরছে,
এতখানি তীক্ষ্ণ আর তপ্ত
উঁকি মেরে দেখলেই কেটে রক্তাক্ত বা পুড়ে ছাই হওয়ার সম্ভবনা শুধু প্রবল নয়,একেবারে নিশ্চিত!
অথচ অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয় তাদের...
যাদের অন্ন নেই,ফুটো আকাশ আছে,বস্ত্র নেই,বজ্রপাতী বৃক্ষ আছে,আর বাসস্থানের কথা না তোলাই ভালো।
অভাব ধুলোর ভেতর খেলতে খুব ভালোবাসে,খেলাতেও...
রূপকথার ভেতর এমন রাক্ষসের কল্পনা দক্ষিণারঞ্জনও করতে পারবেন না যে,সহস্রবার মরে গেলেও মরে না!
ঠিক কোনো ভিখিরির হাত ধরে উঠে এসে রাজার মুকুট ধূলায় মিশিয়ে দেয়,
আমাদের ভাবের ঘর চুরি গেলেও,অভাব অফুরন্ত!
২।। ∆ অফুরন্ত ২ ∆
কতখানি একা হলে শূন্যতার তীর সাজিয়ে ফেলবে শরশয্যা!
সত্যিকারের তীরের চেয়ে ভয়ংকর, বুকে- পিঠে গেঁথে থাকা তীরের ছায়া।
দিনরাত সচল ভীষ্ম হয়ে ঘুরতে হবে,এই ভয়ে হৃদয় এতোখানি সকাতর, যে কৃপনকঠিন,তার সামনেও অঞ্জলিপুটে স্থির
আসলে প্রাপ্তি নয়,এই চাওয়ার ভঙ্গিটুকুই আসল,
শুধু ফুটিয়ে তোলা,সে যে নিঃস্ব নয়,
এই তার শক্তি, অফুরন্ত জয়!
৩।। ∆ অফুরন্ত ৩ ∆
মনে হল ফুরিয়ে গেছি...
যেইমাত্র এমন জল-শুকনো অনুভব আসে,অমনি কোথা থেকে এক শস্য-আঁকা মেঘ উড়ে আসে!
আমি ছুটতে থাকি,রক্তে,স্নায়ুতে,আয়নায় আর অপ্রত্যাশিত আয়োজনের ভেতর
দেখি,কোথাও সেই মেঘ নেই!
এতো সরোবর নয়,যে স্নান করে নেব বা ডুবসাঁতারে পান করে নেব আকন্ঠ!
এ তো সাবান নয়,যে নিজস্ব মুদ্রায় মেখে নেব প্রতিটি অঙ্গে স্বাধীন সৌরভের ঘোষণায়!
তাহলে কী?
এই মেঘ আর প্রেরণা এক!
এই প্রেরণা আর পৃথিবী এক!
প্রথম দরজা খুলে গেলেই পরেরটা খুলে যায়
যেন আকস্মিক অভিযান...
রৌদ্রে ক্লান্ত, তার মধ্যে সহসা ভেসে আসা কোমল কটাক্ষ,যেন বলতে চায়,এই তো তোমার নিজস্ব ভুবন,তোমারই ভাবে
আমি অন্ধকারে অফুরন্ত আলো হয়ে যাই!
৪।। ∆ অফুরন্ত ৪ ∆
স্কুল-পালানোর গন্ধ নেই যে শৈশবে,তা যেন সেইরকম আঁকা ছবি,বড্ড রঙভরা,কিন্তু অরঙিন!
নানারকমের পালানো ছিল আমার,ঠাকুমার কাছে শেখা,তিনি বলতেন,যে চোখের জল থেকে পালাতে পারে,সে সাগর ছুঁতে পারে!
এরকম এক স্কুলপালানোর দুপুরে এসে দেখি,সকলের চোখের জলে ঠাকুমা তুলসীপাতা নিয়ে শুয়ে আছেন একা!
আমার মনে হল,এ আবার কী ধরণের পালানো?
কোনো শোক বা দুঃখের লেশমাত্র আমাকে পালানোর আনন্দ থেকে বিরত করতে পারল না!
মা-পিসি- দিদিরা ঠাকুমার মরিচাপড়া সিন্দুক খুলেছে,বের হচ্ছে জিনিস,কাঁসার বাসনকোসন, রূপোর বালগোপাল,দাদুর সাদাকালো ফটোগ্রাফ,সোনা বাঁধানো বাইশটি কড়ি,আর একটা খবরের কাগজে মলাট দেওয়া বই,গীতাঞ্জলি...
ঠাকুমা দুপুরবেলা শুয়ে বলতেন,একটু ঠাকুরের বই পড়ি!
এটা পড়লে, আর কোথাও পালাতে ইচ্ছে করে না!
আমি পাশে শুয়ে চুপটি করে শুনতাম!
একথা মনে হতেই চোখে কালো মেঘরঙা জল এসে গেল এবং কিছুতেই পালাতে পারলাম না!
আমি সাগর ছুঁতে চাই না,ঠাকুমা তোমাকে ছুঁতে চাই অফুরন্ত জলে...
৫।। ∆ অফুরন্ত ৫ ∆
সময়ের বড্ড জ্বর।
এই ভুবনের ভার কার হাতে ন্যস্ত?
আমরা কি ইতিহাসের প্রতিটি পাতা উলটে দেখেছি! না কি নিজের সুবিধে মতো সাজিয়েছি ঘটনার ধূসরতা!
নিজের অল্প আয়েশের আয়োজনে নাকি
যত গাঁজাখুরির আড়ম্বর!
সেই তপোবন থেকে উড়ে আসছে যজ্ঞের ধুলো
অশ্বমেধের অসহায় পশুর চিৎকার
দেবতার বরে অভিষিক্ত রাজা ও রাজার পরিবার
এত সাধনার সম্রাট মুনি-ঋষিদের চোখের সামনে ভোগের চূড়া
চমৎকার!
আমি তো সেই দেশ থেকে হেঁটে আসছি...
যেখানে অসুখ আরামে সহবাস করে অপ্রতিরোধ্য অতিথির মতো!
যেখানে অন্যায় হাসিমুখে সকল মুখোশ পরে নিয়ে সাধুর ভড়ং করে!
যেখানে একদিকে কুবের বসে থাকে চব্য-চুষ্য-লেহ্যর পাহাড়ে আর পরাণ মাঝি নিজের হাড়ে নৌকা বানিয়ে ভুবন পারাপার করে!
তার মাঝখানে সহসা কোনো এক রাজার পুত্র সবকিছু ছেড়ে মানুষের পায়ের ধুলোর ভেতর খুঁজে নেয় বৃক্ষ, বোধের
সেই অফুরন্ত ভারতবর্ষ চাই... জন্মান্তর...
অলংকরণ - শুভদীপ প্রধান
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সবগুলো কবিতাই খুব সুন্দর। বিশেষ করে মন ছুঁয়ে গেল চতুর্থ কবিতাটি। অসাধারণ।
ReplyDeleteসবগুলো কবিতাই খুব সুন্দর। বিশেষ করে মন ছুঁয়ে গেল চতুর্থ কবিতাটি। অসাধারণ।
ReplyDeleteসবগুলো কবিতাই খুব সুন্দর। বিশেষ করে মন ছুঁয়ে গেল চতুর্থ কবিতাটি। অসাধারণ।
ReplyDelete