Friday, 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৬


কবি প্রাণনাথ শেঠ এর কবিতা-







১।।  ∆ আলো ∆



চারিদিকে ছড়ানো মণিমুক্তো
বর্ণালি চোখে জড়িয়ে আছে আঁধার
পোয়াবারো ভয়েদের, পেতেছে জমাটি সংসার

এ বড় সুসময় আমাদের
সুরধাম ছেড়ে মরলোকে পথেঘাটে দেবতারা জমিয়েছে আসর
আঁধার-চোখে ঠাওর হচ্ছে না দানব না-কী ঈশ্বর

ভয়দের নিয়ে কথা হোক এবার
গায়ের রং, আকার আয়তন, গুণপনা-এইসব 
সব কোথায় কবে (কার আশিসে নাকি অভিশাপে)   ছিঁড়ে ছিল জন্মনাড়ি তার

এস বসি, খুঁজে দেখি অতীত বর্তমান
কালোয় না আলোয়- কোথায় অনায়াস বিচরণ
রাম জন আলি ভেদে কীভাবে বদলায় আবরণ।





২।।    ∆ অমরতা ∆



এতদিনে সম্বিত হল
উত্তুরে বাতাস দক্ষিণে যায়
ভীতরা ভয়ে দেখায় দাঁত নখ
সোজা হাঁটলে ডাইনে বাঁয়ে কোনদিকেই বাঁকে না পথ
এতদিনে সম্বিত হল
ভুলভাল জেনেছি কত
রোগ বিয়োগ গুণ ভাগ
 ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞানের ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব

এতদিনে সম্বিত হল
আমি আমি করে বড়ো একা
ভুলে গেছি জল আলো মাটির এ দেশ
ফুল পাখি নদীর ভূবনডাঙা

এতদিনে সম্বিত হল
সঙ্গে যায় না কিছুই
হেজে যাওয়া ধন-সম্পত্তি টাকা-কড়ি
কেটে যাওয়া দাগ-ই শোনায় অমরতার বাণী।





৩।।    ∆  ঈশ্বরলিপি ∆



উচ্চকাঙ্খার সমানুপাতিক যুদ্ধ, সমান অনোন্যক জীবন
ইতিহাস সে কথা লেখেনি কখনো।

ভয়কে অনুবাদ করে ভূত ভগবান শয়তানের জন্ম
এই সত্য মানেনি শাস্ত্র।

বাতাসের অনির্দিষ্ট দিক, এই সহজ সত্য জানি না বলেই
দিকভ্রম হয়, গড়ি পূব-পশ্চিমের গল্প।

নামতে নামতে, ভাঙতে ভাঙতে অবিভাজ্য অবয়ব
স্বর্গ মর্ত্য পাতালের বানানো কাহিনি, পাপ- তাপের ঘেরাটোপে
কেউ ঈশ্বরমুখী কেউ ঘোরতর নাস্তিক।

রসেবশে মজে থাকি ফুল পাখি নদীর দেশে
ঈশ্বরের ঈশ্বর হওয়ার বাসনায় বাঁশ খড় মাটির পুত্তলি বানাই
বিসর্জণও দিই অবলীলায়
আর দিব্যি গড়গড়িয়ে চলে তাঁর জগৎ-সংসার।





৪।।   ∆ ঈশ্বরমতি ∆



একেই বলে খইভাজা কাজ
সবকিছু ফেলে, কালো চোখ আর কানা কান দিয়ে
সহজ ও কঠিন কাজের ফর্দ লিখি।

নীচে নামা সহজ
ভাঙা
অপমান করা
আরো সহজ খড়-মাটির দেবতা গড়া।

সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন
ঠিক পথে থাকা
ভুল স্বীকার
আরো কঠিন কালোকে কালো বলা।

তালিকা বানানো শেষ
ভয়রা অভিধানকে তালাক দিয়ে
পরে নেয় জমকালো পোশাক
আমাকে ভয় দেখায়।

থ মেরে দেখছে গাছ-গাছালি
ঘাম আর তপ্ত নিঃশ্বাস হারিয়ে
আমি ক্রমশ ঈশ্বরমুখী হয়ে উঠছি।





৫।‌।  ∆  ঝমঝম বৃষ্টি ও একটি রাত্রির গল্প ∆




যার ঘরদোর নেই সেই
মেঘ আর রোদের চাঁদোয়া খাটিয়ে মহল্লা বানায়
বাতাসের সঙ্গে ভাব জমায়, যে
সাত সমুদ্র পেরিয়ে তার জন্য বয়ে আনে রূপকথা।

সে রাত্রির নিস্তব্ধতায় অসংখ্য আলোকবিন্দুর                                                    ভিতর খুঁজে পায়
এক যুগ আগে মহানিস্ক্রমনে যাওয়া দুই                                                               অভিমানী তারা
যারা অণুক্ষণ তাকে চোখে চোখে রাখে।

সেই ছেলেটা জলকে জল বলে
ফুলের মালি
পাখির জন্য রোপন করে তারা, আর
পাহাড় কেটে কেটে হতে চায় ভগীরথ।

ইতিহাস ভূগোল আর পিথাগোরাসের সূত্র                                                ঠিকঠাক বোঝার আগে
সে হারিয়েছে দুই পরমধন।

খালি পা, দড়ি প্যান্টৈর শৈশব পেরিয়ে
ছায়াকে কায়ায় ধরে রাখার দিনে-কান্নারা
দলা পাকিয়ে উঠে আসে গলায়।

দূর আকাশের মমতাভরা আশিস জোছনা হয়ে
                                      সিক্ত করে আত্মজকে।





অলংকরণ - পৌলমি দেবনাথ

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

No comments:

Post a Comment