Friday, 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৬


কবি দিশারী মুখোপাধ্যায় এর কবিতা-





১।।  ∆ সূচনা ∆



ঠিক কোনখান থেকে শুরু করা যায় 
এই পাথর খোলামকুচি নাকি ফুল-ফল 
এই নালা নর্দমা নাকি আকাশ পাতাল 
এই হাতাখুন্তি নাকি কবিতা গান 


চব্বিশ ঘন্টা ব্যাপী খুঁজেছি দিনের আলোয় 
চব্বিশ ঘন্টা ব্যাপী খুঁজেছি রাতের অন্ধকারে 
দিনের অন্ধকারও দেখেছি 
রাতের আলোও দেখেছি 
ঠিক কোনখান থেকে শুরু হয়েছে এই জল 
জল থেকে প্রবাহ আর প্রবাহ থেকে ঘুম 


ঘুম বলতে ঠিক কী বোঝায় 
হয়তো এই পাথর জানে কিংবা জানে পাখি কিংবা গান 






২ ।।  ∆ সত্য এবং অসত্য ∆



শব্দার্থ নিয়ে আমি লড়াই-এ মাতি না , শব্দকে ভালবাসি শুধু ।
শব্দের ভেতর ব্রহ্মা আছেন কী নেই এসব জ্ঞানের তৃষ্ণা 
জ্ঞানীদেরই থাকে শুধু , জল পান করে যারা শীতল হন না কোনোদিন । 

রঙ যাকে ছুঁয়ে থাকে তাকেই রঙিন বলে মানি , রঙেদের 
জাত গোত্র সন্ধানে নামি না।  রঞ্জন বা রঞ্জনাকে সমান বন্ধুত্ব দিয়ে 
নিজের বুকের মাঠ সবুজ পোশাকে ঢেকে সাজিয়ে নিয়েছি । 
আকাশে নক্ষত্রগুলি দিনরাত্রি ডাকে । 

স্বপ্নের ভেতর যার পেয়েছি সন্ধান কেবল অলীক বলে তাকে 
দূরে রাখিনি সরিয়ে , বিজ্ঞানীর মত তার সন্ধান করেছি 
গলাধঃকরণ আর আঙ্গিকরণের সাথে সাথে , ভবঘুরে বলে যারা 
তাচ্ছিল্য করেছে মানস প্রেমিক- পাখিদের তাদের জন্য আজও সুখবর 
দিতে পারছি জেনো , মানস মন্থন করে আতপ ভাতের গন্ধ 
বন্টন করার বিল পাখিদের সংসদে কাল অনুমতি পাবে । 

আলোর ভেতর আমরা স্বাধিকার পাই , অন্ধকারে পাই নিজ নিজ পরিচয় । 


 



 ৩ ।।  ∆  ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ∆



গভীর শালজঙ্গলের ভেতর প্রচ্ছন্ন এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ 
গাছের ডালে ডালে জড়িয়ে থাকা লতাগুলি মোটা হতে হতে 
পাইথন ঘুম ,তার নিচে ফাঁকে ফাঁকে স্টাফকোয়াটার্সের গায়ে 
সুগন্ধি সাবানের ফেনায় সূর্য ভেঙে রামধনু । চত্বরের মাঝ বরাবর 
যোগ চিহ্নটি চিত হয়ে শুয়ে ভাগ অঙ্কে সরবে নীরব , আর 
সেই যোগচিহ্ন বেয়ে পিঁপড়ে-মানুষেরা আলোর অন্ধকারে ঘুরপাক 
অবিরাম । মেয়ে-হস্টেলের পাশ দিয়ে এক বনবাসের রাস্তা 
যা ইন্টারনেটে ধরা পড়ে না । ছেলে-হস্টেলের চারধারে আছে 
বেশ কিছু গর্তপথ , ভাসপক্ষী বসে আছে ড্রাগ-যোনি পথে 
কলার উঁচানো অধ্যাপকরা ধাতু প্রস্তরে হাবুডুবু । তবু এই কলেজ 
ক্যাম্পাসের বেশ স্ফীত বক্ষে দুর্গাচালা অহরহ পাল্টে দিচ্ছে 
আলোর অর্থ অন্ধকারের সামর্থ্যকে । এইখানে 
আমগাছের নিচে এক গুমটি-ডাকঘরে বসে একজন অনুজ্জ্বল কবি 
অহরহ মেপে চলেছেন মানুষের রক্তচাপ, শর্করা ও 
হিমোগ্লোবিনের দৈনন্দিন ত্রাস-ব্যাকরণ  





  ৪ ।।  ∆ জলযীশু ∆



পাথরের জলপান চলে 
চরিত্র খোয়ার ভয় বিন্দুমাত্র থাকে না জলের 
সে জানে চরিত্র বলে নিজস্ব কিছু নেই তার 
অথবা যা আছে তাকে বিকৃত করে 
খিদে ছটফট বাঘেরও ক্ষমতা নেই 
সুতরাং পাথরকে স্তনদান 

স্তনপানে পাথরের মেদমজ্জা বাড়ে 
লৌকিক-সংসারধর্মে ভাষা পায় রঙ পায় অনাকৃতি পায় 
একদিন জলকেই সে গবেষণা করবে ঠিক করে 
ছোটো বড় পত্রিকায় জল নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধ গান গল্প কবিতায় 
যা ইচ্ছা তাই লিখে চলে 
যা ইচ্ছা তা বুঝে নিয়ে কিছু লোক 
পাথরকে সংবর্ধনা দেয় 

জলকে যারা জল বলে চেনে 
তারাই কেবল জানে 
জলে আর যিশুখ্রিষ্টে পার্থক্য নেই 





৫ ।।  ∆ ঘাটশিলা ∆



সুবর্ণরেখার কাছে জল চেয়ে বিব্রত হয়েছি
জল নেই অশ্রু নেই উচ্ছ্বাস নেই আছে আর্তি শুধু
সোনার রেখার ছবি বদলে গেছে কার্বনের দাগে 
ধারাগিরি গিয়ে দেখি গিরি আছে ধারা নেই 
গাছেরা নির্বাক আর অনুজ্জ্বল স্থিরচিত্রে বাঁধা
বিভূতিভূষণ নেই চতুর্দিকে বিভূতি কেবল 
চায়ের দোকানে গিয়ে জল চাইলে কিনলের বোতল 
যে মেয়েটি জল দিত কিছুদিন আগে তার 
মৃত্যু হয়েছে বলে বোতল-জলেরা খুব দাপাচ্ছে এখন 
সামান্য জঙ্গল থেকে রাস্তার হাত ধরে পার হতে হতে 
দেখি একটি বালক একাই 
আনন্দে পাথর চেটে তৃষ্ণা মুক্ত নধর উদ্ভিদ 




অলংকরণ - অমৃতা নায়ক

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°



No comments:

Post a Comment