কবি নলিনী বেরা এর কবিতা -
১।। গাছ
গাছকে ঈশ্বর ভাবি,তাই
জল ঢেলে পায়ে
বলবান করি, যেন
মাটির শরীর থেকে নবজন্ম
ঈশ্বরের হয়
গাছকে ঈশ্বর ভাবি, ঈশ্বরের মতো
মাটির ভিতর অথবা অগর স্বর্গে
যেহেতু তার স্বচ্ছন্দ বিহার,বিচক্ষণ
ঈশ্বরের মতো
অরণ্যে ঈশ্বরের নবজন্ম হোক
সবচেয়ে দুরতম দৃশ্যে
তোমাকে দেখেছি জায়মান
দেদার ছড়িয়ে রয়েছ সুখে
পত্রে পুষ্পে একাত্মীকরণ
আমি আজীবন সলিল সিঞ্চনে
গাছেদের পাদপীঠ আদ্রকরে বলি;
ছায়া দাও,ছায়া ঈশ্বরীর মতো
২।। দেয়ালে নারীর মুখ
এ-যুগে আমার প্রতিদিনের রাত কেটে
সুখের ভিতরে
যেতে চাইলেই এরকম ওষুধের কথা মনে
কী দারুণ পড়ে
আমার বিনিদ্র রাত বিধবার দীর্ঘশ্বাস যেন
হাঁটুভেঙে কান্না
যতবার নিঃশব্দে ঘুমোতে চাই মরুতবাহন
জানালার পর্দা কাঁপে
চিকন ডিমের মতো আমার পিছল ঘুম
ভেঙে ঘোরাঘুরি
খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে যাই
আচমকা ঘাসে
এখন তারারা,যাঁদের সপ্তর্ষি বলেজানি;একাএকা
কী ভীষণ পথ হেঁটে
ফুটপাতে জুতোর পেরেক চিনে দেন
বিষন্ন বুকের আাদল
এ-যুগে আমার প্রতিদিনের রাত কেটে
সুখের ভিতর
যেতে চাইলে এরকম ওষুধের কথা মনে
কী দারুণ পড়ে
আমার বিনিদ্র রাত কাটে দেয়ালে নারীর মুখ দেখে
৩।। ফুলকে ভালবাসা
ফুলকে ভালবাসার মতো সুখ নেই, নিবারণ পাপড়িগুলি কেন ছিঁড়ে ফেলো
তার চেয়ে নতমান এই আমি বসেছি বাগানে একটু শিশির দাও
দয়ানিধি ফুল ও শিশির উভয়েই আর্দ্র করে আমার শরীর নদী হোক
তিলক মাটির বন মাকড়া পাথর নদীতীর থেকে উড়াল তিতির
যে ফুল বাসলে ভালো কিছু কিছু গন্ধও ভালবাসা হয়ে যায়
যে হও সে হও তুমি তো সাঁওতালের ঝি গিরিমাটি দেয়ালে ফোটাও ফুল
ধরো হাত বাঁশের আগড় ফেড়ে পাতার মুকুট দাওয়ায় উঠেছি
না,এখনই ফ্যালো না মুছে জলো হাত গিরি - জল - বাটিতে চোবানো
৪।। ম্রিয়মান রোদ্দুরের দিকে
রোদ পায়ে হেঁটে যায় সুখ, সারাদিনের মেয়েরা আর
অ আ ক খ
কী রকম রোদ ছেড়ে এসময় রোদের কিনারে যাচ্ছি
আজকাল রোদে গায়ে সোনার হরিণ লাফায়
কেউ কী শরৎ কালের মাস দেয়ালে টাঙায়
না হয় হাওয়ায় সানাইদীঘির জলে জলবীজ ফাটে
দ্যাখো , দুপুরে দয়িতা - নারী খেতে দিয়েছিলো
লাল শাক
আজকাল কী ভীষণ তৃপ্তিহীন আমার বিকেল
যে যায় রাস্তার পীচে ম্রিয়মান রোদ্দুরের দিকে
স্বজন - সান্নিধ্য তারা ঠিক পাবে
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে যেন কথা কয়ে উঠি
যে হও গাঁয়ের লোক,বলো মা কেমন আছে
৫।। সরস্বতী পুজা
ক্ষিতীশ আমি কাছাকাছি বন্ধু,পড়ি এক সঙ্গে ,টুকু পড়ে না,তার প্রায় বিয়ের বয়স , গ্রামের ইস্কুলে সরস্বতী পুজো হলে ভিড় করে গ্রামসুদ্ধ লোক
বড় ইস্কুল দূরে ,পুজো হলে গ্রামের ছোট ইস্কুলেই আমরা উৎসব করি
সেবার পুজোর পাশের গ্রামকে টেক্কা দিয়ে সুন্দর প্রতিমা গড়ি,রাঙতায় মোড়া
জমজমাট ভিড় উপছে পড়ে গ্রামের লোকের, এমনকি পাশের গ্রামের
দু'দিন ধরেই সামনে ভিড়, তিনদিনের দিন দুপুরে ফাঁকা ,গেল রাতে আমরা
গোটা দুই নারকেল খেয়েছি ভেঙে কুরে ,খোঁজ করলে দিয়েছি দোষ
কীর্তনীয়দের ,যারা সারারাত্রি গান করেছিল ভাঙ খেয়ে , নির্জন দুপুরে
টুকু এল প্রতিমা দর্শনে ,ভিজে শাড়ি ও শরীর,চান সেরে নদী থেকে
দেখেই প্রতিমা বলে,বাঃ সুন্দর তো।আচমকা ক্ষিতিশ এক কান্ড করে
সরস্বতীর বীণা টুকুর সুডৌল বুকের উপর চেপে ধরে বলে, ঠিক তোর মতো
না ? টুকু হেসেছিল, আমি মনে মনে বলি,অর্ধমী ক্ষিতীশ, তোর পাপ হবে
অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
<><><><><><><><><><><><><><><><><><>
No comments:
Post a Comment