শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় এর কবিতা -
∆∆
লবণহ্রদ কিম্বা ক্ষত
ভালো যে আছি এমন কিছু নয় অথচ খারাপ বলতেও পারছি না ।
এমতবস্থায় একটু বেশি জল পান করলে শরীর হালকা হয় - একে একে বেরিয়ে যায়
ক্ষোভ -ক্ষতি - ক্ষতের ঘন তরল । শারীরিক সৌন্দর্যের জমা দাগ মিশে গিয়ে এঁটো হয়ে যায়
আমায় পবিত্র করে যাও কিম্বা নষ্ট করতে হলে সাথে নিয়ে নাও
অথচ এরকম শান্তিপূর্ণতা কখনোই কাম্য ছিল না
যে যায় সে দীর্ঘ গেলে - চলা থেমে যায়
চলে যেতে হয় বলেই হয়ত ফিরে আসা
কিম্বা হয়ত ফেরা না চাওয়ায় - যেতে বলা
এত জটিল তো কিছুই কোথাও ছিল না
নিতান্তই সরল বলেও যে কিছু হয় না তাও জানা
অথচ রোজ দেখছি তুমি যেখানে আছো সেখানে গেলে তুমি আমার জায়গায় চলে আসছো
বলা ভালো একটি লবণহ্রদে তুমি ভেসে যাচ্ছো কিম্বা দূরে... অথবা এসব কিছুই না!
∆∆
মেহগনি সহযোগে
প্রত্যাখান নেওয়ার মতো ক্ষমতা এসে গেলে আমরা বড়ো হয়ে যাই। কান্না একটি ছোঁয়াচে রোগ - দরদের চেয়ে ঢের গুণ বেশি! তো যা বলার - একটি পোষ্য কান্না। প্রভুর কাছে জিরিয়ে নিতে চায় এবং
আরেকটু চায় নরম হতে। এই অঝোরে বর্ষা দেখার সৌভাগ্য ময়ূর জীবনকে আমি ঈর্ষা করি। মানুষের সংস্পর্শে এলে বর্ষা বাড়ে কিম্বা জলতল। লেখা ছড়িয়ে আসছে, আরও ছিটিয়ে থাকছে ধারালো আঘাত - পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এবং বন্ধুর গ্রেফতারী পরোয়ানা।
তো যা বলা হয়েও হল না - তোমার বোঝা উচিৎ, কেন একমাত্র তুমি বললেই নৈঃশব্দ্য আসে
সেদ্ধ মগজ ঠান্ডা হয়ে বিস্তারিত দিনলিপি গুছিয়ে রাখি
আসলে যা বলার,ক্রমশ যা বোঝা হয়ে উঠছে -
আমার সমস্যাটা কী?
কেন এত রাগ হয়?
কেনই বা এত গা জ্বলে?
এত ভাবিই বা কেন?
এখন যেমন, একটি বলিরেখা বরাবর সমস্ত সরল শিশুসুলভ আলো এনে রাখে - সমস্ত জটিল বর্গীয় চিরহরিৎ জীবন আরেকটু বেশিদিন আটকে থাকুক -
মেহগনি আঠার সহযোগে সেগুনের বাকল...
শিলিগুড়ির একটিমাত্র অমলতাস আমার চেনা - যে দেখিয়েছিলো তার শীতঘুম পর্ব উদযাপন হয়। আমার কাছে একটি রাধাচূড়া এবং জারুল গাছ আছে। এসব চেনা গাছ ক্রমশ মিশে যায় অমলতাসের সাথে।
একেকটা জড়ুল পৃথক করে দিচ্ছে সকলকে - দাগ সংযোগে তৈরি হয় একটি পবিত্র জন্ম। এসো এবার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা নিরূপণে বসি - কিম্বা একটি জন্মবৃত্তান্ত...
∆∆
চাতক-জন্ম
বহুদিন লেখা হচ্ছে না! বলা ভালো বহুদিন লিখতে পারছি না...
তো যা বলার ছিলো - একটি বাড়ি! যাবো একদিন যেখানে অথবা যেখান থেকে বাধ্য হয়ে এসেছি তাদের কথা। আমি যে বাবাকে ভালোবাসি না তা নয় কিম্বা আমি যে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাইনা এমনটাও নয়। বখে যাওয়া ছোটো একজনকে বোঝাতে চাইছি না এমন কিছুও নয়! এসবের জন্য আমাকে ছুটতে হবে। ক্রমশ এসো সচন্দনে ফুল বেল কাটা ছিটিয়ে দিচ্ছি । কুঞ্জে কুঞ্জে কুউহু করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে স্বর্ণলতার মতো কেউ একজন। পেলব হলদে বর্ণের খানিক ঝিমিয়ে থাকা একটা কান্ড দেখছি - পাতলা পাতলা শিরা ছড়িয়ে আছে একেকটি পাতা জুড়ে। এরম কারুকার্য না জানি কোন সুদূর দেশের বানানো। একটি গেরুয়া পরিধান করা জীব আবির্ভূত হয়ে কতটা সন্ন্যাসী হতে পারে? অথবা আমাদের পাতি বসনে ত্যাগ কতটা ?
এই যে দেখছি যাদের তাদেরকে তাড়াচ্ছিই বা কেন! অথবা যাদের তাড়াতে চাইছি তাদের রাখতে পারলাম না কেন?
এরকম রাতের ভয় বহুদিন পর আসছে! লেখার মতো। এ মুহূর্তে আমার কাছে একজনের থাকা, এই চাওয়াটা আসছে। পরিবার ভীষণ ছোটো একটা কথা তাও দেখুন কীভাবে ভয় এবং জয়ে তাদেরকে খুঁজে বেরোলাম! কোথাও কেউ নেই। অথবা আমিই থাকতে পারিনি। তো যা বলার, বলাটুকু হলো - "সবাই তখন কইবে কথা তুমি রবে নিরুত্তর"- উত্তরে নীরবতা ভাঙে না নিরবতা উত্তর হয়? এ শহরে সবাই কথা বলছে, সবার আওয়াজও হচ্ছে তবুও ক্রমশ এই শহর স্তব্ধ হয়ে আছে। একটিমাত্র কিম্বা গুটিকয়েক আওয়াজের অভাবে কান তীর্থের কাক হয়ে আসছে। এ চাতক-জন্ম বড়োই করুণ! চিল-শকুন গন্ধ গা গুলিয়ে দিচ্ছে
আমিই বা শালা কতটা নিচ্ছি নিজে??
অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
আবারো মুগ্ধ করলেন শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়। বেশ কিছুকাল ধরেই ওনার কবিতা বা গদ্য পাওয়া মাত্রই পড়ে ফেলি , ভীষণ সম্ভবনাময় শক্তিশালী কলম। এক সহজ সাবলীল মৌলিক চলন আছে যা পাঠক হিসাবে ছুঁয়ে যায়। শ্রেয়সীর আরও লেখা পড়তে চাই অনুরোধ রইলো
ReplyDelete