পলাশ মজুমদার এর কবিতা -
∆
কবিতার দোকান
কবিতার দোকানে কবিও বিক্রয় হচ্ছে।
এক কিলো কবি কিনতে আধা কিলো বিশ্বাস।
বহু কিনলে দু'এক কিলো ফ্রিতে দিচ্ছে দোকান।
অবিক্রিত ছেঁড়াফাটা কবিদের চৈত্রসেলে
অতি সুলভে ক্রয়ের সুবিধা।
সামান্য বিশ্বাসে ছাড়া হবে ত্রুটিযুক্ত কবিদের।
ভাবনা হচ্ছে, বিশ্বাস ফুরিয়ে গেলে
কবিতা দুর্বিনীত হয়ে ওঠে।
ভাবনা হচ্ছে, কবিতার জন্য আত্মঘাতী হওয়া
কবিদের কাছে বিচিত্র কিছু নয়।
∆
ডট
এই দেখুন মানচিত্র।
আসুন আমরা ম্যাপ পয়েন্টিং শিখি।
প্রথমে ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি।
ধান, গম, যব, বাজরা হয়ে খনিজসম্পদ খুঁজি আসুন।
তারপর পাহাড়, পর্বত, নদী, ইন্ডিয়া গেট, তাজমহল হয়ে
সবশেষে ধর্ষণপ্রবণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি কালো ডট পেন ব্যবহার করে।
ডট দিতে দিতে মণিপুর, রাজস্থান, ইউপি, বিহার
প্রভৃতি শেষ করে ঢুকে পড়ি সোনার বাংলায়।
কালু মিদ্যার ধানক্ষেত, লখাই মান্ডির গোয়ালঘর ছুঁয়ে
বিষ্যুদবারের হাটে, রাজার পথে ডট দিতে দিতে এগিয়ে যাই পরিক্রমায়...
নিজের গাঁয়ে এসে যখন পৌঁছলাম আমরা,
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার নেমেছে, গাঢ় নিষেধাজ্ঞা নেমেছে!
অগত্যা আমরা যে যার বেডরুমের দিকে
এগিয়ে গেলাম কিছু অভিজাত ডট চিহ্ন সঙ্গে নিয়ে।
কালো ফুটকির তারায় ছেয়ে যাচ্ছে ভারতবর্ষের দেহ!
অথচ আপনাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না,
ধর্ষণ কোন সুস্থ দেশের অর্থকরী ফসল হতে পারে না!
∆
জনৈক সুবীরদাকে নিয়ে
সুবীরদাকে তোমরা চিনবে না। খামখেয়ালী। একরোখা। দরিদ্র, অথচ অহংকারী বারোমাস। নষ্ট করার মতন দেদার অবসর, অথচ সংসারে তার যমের অরুচি। ৩৬৫ দিনে ৭৩৭টা কবিতা লেখা তার কাছে জলভাত, অথচ ভীতুরা পড়ে না তাকে। অথবা আমরা সকলে ভীতু।
আসলে সুবীরদা বলতে চান, অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মানুষ বলে ডাকা হোক। এই যে আমি লিখছি, তুমি লিখছো, মহারথীরা লিখছেন। ধরে নাও, এইসব লেখায় মনভোলানো অজস্র প্রশংসা স্তুতির নিচে একজন লিখলেন, 'শালা, যত্তসব অখাদ্য লিখেছিস।"
জানবেন, তিনি সুবীরদা। আসলে সুবীরদা হলেন দাউ দাউ আগুন, চিতা যার প্রণয়নী। সুবীরদা বরাবর অন্ধকারের দিকে। আলোর দিকে চাটুকারিতা আর অনাবশ্যক সৌজন্যতা।
আমাকে পড়তে না পারার অক্ষমতার জন্য পৃথিবী তোমাকে ক্ষমা করলুম না - একথা সুবীরদা অনায়াসেই লিখতে পারতেন, কিন্তু লিখলেন না। আসলে তাঁর কাছে, ক্ষমা করার অক্ষমতা জানান দেয়া, একপ্রকার ক্ষমা-ই।
অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment