কৃষ্টি কেতাবী পর্ব
ভাস্করব্রত পতি’র প্রবন্ধ
মেদিনীপুরের মাটি সংস্কৃতির মাটি। ঐতিহ্যের মাটি। সংগ্রামের মাটি। তাই এখানে পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা লোকসংস্কৃতির নানা ঘরানা ঠাঁই পায় লেখনীর আঁচড়ে। গত কয়েক বছর ধরে মেদিনীপুরের বুকে জন্মগ্রহণ করেছে অসংখ্য লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন। কিছু হয়তাে পথ চলতে পারেনি। থেমে গিয়েছে। কিছু এখনও চলছে। আবার কিছু নবউদ্যমে শুরু করেছে। তবে এ ধরনের পত্রপত্রিকার সংখ্যা হাতে গােনা। তবুও তাদের নীরব কাণ্ডকারখানা আদপে জেলার বিলীয়মান সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার নিরলস অবদান বৈকি!
মেদিনীপুর থেকে এরকম অসংখ্য পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয় যেখানে অন্যান্য বিষয়ের সাথে লােকসংস্কৃতিকেও প্রাধান্য দিয়ে ছাপানাে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হবে সৃজন, শব্দের মিছিল, এবং সায়ক, দেশকাল সাহিত্য, সকলের কথা, আপনজন, নােনাচাতর, উপত্যকা, কথামেঘ, লােককৃতি, মরশুমী, পথ, বিনির্মাণ, মেঠোপথ, সুস্বন, জ্বলদর্চি, অমৃতলােক, সূর্যদেশ, পিনাক, দিঘলপত্র ইত্যাদি পত্রিকার নাম। এবার বরং তাকাই লোকসংস্কৃতি বিষয়ক পত্র পত্রিকা ও তার সম্পাদকদের নামের দিকে।
হারিয়াড় সাকাম -- সম্পাদক : ড. সুহৃদকুমার ভৌমিক।
মহিষাদল বার্তা -- সম্পাদক : অধ্যাপক হরিপদ মাইতি।
সহজিয়া -- সম্পাদক : মধুসূদন মুখোপাধ্যায়।
অমিত্রাক্ষর -- সম্পাদক : অচিন্ত্য মারিক।
পুণ্যিপুকুর -- সম্পাদক : ভাস্করব্রত পতি।
আত্মানুসন্ধান -- সম্পাদক : অতনুনন্দন মাইতি।
সাহিত্য সম্মিলনী -- সম্পাদক : রাজর্ষি মহাপাত্র ও কৃতিসুন্দর পাল।
সমীক্ষাপত্র লোকায়ত -- সম্পাদক : ড. শ্যামল বেরা। এষণা -- সম্পাদক : শাস্তিপদ নন্দ।
তাম্রলিপ্ত শারদীয়া -- সম্পাদক : জয়দেব মালাকার। লোকভাষ -- সম্পাদক : তরুণ সিংহ মহাপাত্র।
দর্শন -- সম্পাদক : আভা চক্রবর্তী।
অন্যস্রোত -- সম্পাদক : ফিরোজ খান। লোককথা -- সম্পাদক : হরপ্রসাদ সাহু।
তাম্রলিপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনী -- সম্পাদক : অশোক কুমার পট্টনায়ক।
লােকায়ত -- সম্পাদক : তাপসকান্তি রাজপণ্ডিত, শ্যামল বেরা ও শংকর মহাপাত্র।
দণ্ডভুক্তি -- সম্পাদক : সন্তু জানা।
মেঘবল্লরী -- সম্পাদক : প্রাণনাথ শেঠ।
ইতিহাস দর্পণ -- সম্পাদক : স্বপন দাস।
সমীক্ষাপত্র লোকায়ত : একসময় পত্রিকাটি জেলার অন্যতম লোকসংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ এটির প্রকাশনা বন্ধ। কোলাঘাটের ক্ষারুই ইউনিয়ন স্কুলের একসময়ের শিক্ষক তথা গবেষক ড. শ্যামল বেরার সম্পাদনায় ২০০৩ থেকে এর পথচলা শুরু হয়। কিন্তু ২০০৭ থেকে বন্ধ। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও লােকসংস্কৃতি বিষয় নিয়েই পত্রিকার অবয়ব। সরকারি রেজিস্ট্রেশন (WBBEN/03/11233) ছিল পত্রিকাটির। কিন্তু আর্থিক সমস্যা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার দরুণ পত্রিকাটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী লেখাকে প্রাধান্য দেওয়া হত। পুঁথিপত্র, প্রাচীন নথি, মেলা, লােকগান, লৌকিক দেবদেবী, লােকশিক্ষা, লােককাহিনি, লােককথা, লােকচিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পেত। থাকত লোকসংস্কৃতি বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানের খবরাখবর। এখানে লিখেছেন তারাপদ সাঁতরা, শঙ্কর মহাপাত্র, তাপসকান্তি রাজপণ্ডিত, ভাস্করব্রত পতি, মধুসূদন মুখোপাধ্যায়, ড. শ্যামল বেরা, সনৎকুমার নস্কর, যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী, আর্য চৌধুরী, গৌরকুমার মৌলিক, গােপীকান্ত কোঙার, নিতাই জানা, বিধান বিশ্বাস, অনিমেষকান্তি পাল, ইন্দুভূষণ অধিকারী প্রমুখ বিশিষ্টজন।
অমিত্রাক্ষর : মেদিনীপুর শহর থেকে প্রকাশিত অচিন্ত্য মারিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত একটি ভিন্ন স্বাদের পত্রিকা এই 'অমিত্রাক্ষর'। লোকসংস্কৃতির একটু অন্য ধারার লেখায় সমৃদ্ধ পত্রিকাটি। 'পোষ্টকার্ড' সংখ্যা দিয়ে শুরু। এ পর্যন্ত মোট ১১ টি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটিতেই দুর্ধর্ষ উপস্থাপনা। কেবলমাত্র মেদিনীপুরের লেখকদের লেখা নিয়েই 'অমিত্রাক্ষরে'র নিয়মিত আত্মপ্রকাশ। বছরে একবার শারদোৎসবের আগে। অচিন্ত্য মারিকের সম্পাদনায় অত্যন্ত উঁচুমানের এই পত্রিকাটি লোকসংস্কৃতির অন্তর্লোক ছুঁয়ে যায়। বর্তমানে তা সারা রাজ্যে প্রচারিত এবং প্রসারিত। স্বয়ং কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পত্রিকাটির কাটাছেঁড়া করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার। সম্পাদকের নিজস্ব ভাবনায় মেদিনীপুরের মাটির লেখকরাই পারে কলকাতাকে টেক্কা দিতে। তা তিনি করেও দেখিয়েছেন।
'পোষ্টকার্ড' সংখ্যার পর ২০১১ তে 'চড়াই' সংখ্যা আত্মপ্রকাশ করে। ২০১২ তে 'শ্মশান' সংখ্যা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী উপস্থাপন। এর পরের বছর 'ছদ্মবেশ' সংখ্যা ছিল অসম্ভব সুন্দর একটা উপহার। ২০১৪ তে মেদিনীপুরের কবি বিতশোক ভট্টাচার্যকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা আত্মপ্রকাশ করে। এই বছরই মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। ২০১৫ তে পত্রিকার বিষয় ছিল 'আড্ডা'। পরের বছর 'এক যে ছিল দেশ'। ২০১৭ তে 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' নিয়ে সংখ্যাটি তো হটকেকের মতো উবে গিয়েছে। সম্পাদকের কথায় আর মাত্র একটি কপিই রয়েছে! ২০১৮ তে অমিত্রাক্ষর প্রকাশ করে 'কাঠবিড়ালি' সংখ্যা। অসংখ্য অজানা তথ্য সমৃদ্ধ ছিলো তা। বিশ্বের কাঠবিড়ালি নিয়ে এরকম সংখ্যা আগে কেউই করেনি। ২০১৯ এ মহাত্মা গান্ধীর জন্মের ১৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ 'গান্ধিজী' সংখ্যা পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। চলতি ২০২০ সালে পত্রিকার বিষয় 'গীতা ও কোরাণ'। মুখ্য উপদেষ্টায় জাহিরুল হাসান। 'অমিত্রাক্ষর' অবশ্য ঘুম কেড়েছে কলকাতার প্রোথিতযশাদের।
এষণা : আঞ্চলিক ইতিহাস, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র 'এষণা' প্রকাশিত হয় পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা শহর থেকে। শান্তিপদ নন্দ পত্রিকাটির সম্পাদনা করেন। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত অন্বেষা গােষ্ঠীর (রেজিঃ নং এস/৩৫৩২৫/৮০) নিজস্ব পত্রিকা। পত্রিকার সাথে যুক্ত আছেন অম্বিকেশ দাশ, অমরকুমার মাইতি, হরেন্দ্রনাথ মাইতি, বীরকুমার শী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ইতিমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন পত্রিকার এক অন্যতম কর্ণধার তথা লেখক এবং গবেষক শিশুতােষ ধাওয়া। ১৯৯৯ সালে 'এষণা' পত্রিকা প্রকাশ করেছিল 'মন্দির মসজিদ স্থাপত্য' প্রেমী গবেষক ডেভিড ম্যাকাচ্চিয়ান স্মরণ সংখ্যা। গবেষক বিষ্ণুপদ পণ্ডাকে নিয়েও সংখ্যা হয়েছে। এগরা মহকুমা এলাকার সাংস্কৃতিক ইতিহাস ধরার পাশাপাশি দুই মেদিনীপুরের আঞ্চলিক ইতিহাসের টুকরাে টুকরাে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে এখনও।
লোকভাষ : লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ক পত্রিকা। ১৪১৮-এর পৌষ মাসে 'লােকভাষ' পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হলেও দ্বিতীয় সংখ্যা আত্মপ্রকাশ করেছে ১৪২১ সালে। পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন শিক্ষক গবেষক তরুণ সিংহ মহাপাত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থেকে প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম সংখ্যা বােদ্ধাদের নজর কেড়েছে। পাঁচমিশেলী লেখার সম্ভারে 'লোকভাষ' পেয়েছে বহু বিশিষ্ট গবেষক লেখককে। দ্বিতীয় সংখ্যার বিষয় 'লৌকিক দেবদেবী'। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নামজাদা লােকগবেষকগণই এখানে লিখেছেন নিয়মিত। উল্লেখযােগ্য লেখকরা হলেন অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়, সূর্য নন্দী, চিন্ময় দাশ, ড. শ্যামল বেরা, দীপককুমার রায়, আদিত্য মুখােপাধ্যায়, বিধান বিশ্বাস, বিজয় পাণ্ডা, মেঘদূত ভুঁই, জ্যোতির্ময় রায়, ভাস্করব্রত পতি, ড. প্রবালকান্তি হাজরা, ড. অসীমকুমার মান্না প্রমুখ। অত্যন্ত উঁচুমানের এই পত্রিকাটির অবয়ব নজরকাড়া। দামও সাধ্যসীমিত। ঝকঝকে সম্পাদনা। তবে আপাতত পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে।
পুণ্যিপুকুর : 'মেলা-উৎসব-ব্রত-পার্বণ-পূজা-পরব' বিষয়ক বাংলাভাষায় প্রকাশিত একমাত্র পত্রিকাটি হল 'পুণ্যিপুকুর (ISSN NO- 23497254)। ২০১১-এর জানুয়ারিতে কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে এর প্রথম আত্মপ্রকাশ। বছরে দুটি সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন ভাস্করব্রত পতি। পত্রিকার নামকরণ করেছিলেন মধুসূদন মুখােপাধ্যায়। তিনিই পত্রিকার লােগােটি এঁকেছিলেন। যা এখনও ব্যবহৃত হয়। এ-পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম দুটি সংখ্যা পাঁচমিশেলী লেখায় সমাদৃত ছিল। কিন্তু প্রতিটি লেখাই উৎসব বিষয়ক। তৃতীয় সংখ্যাটির বিষয় ছিল 'চড়ক ও গাজন'। পুণ্যিপুকুর-এর চতুর্থ সংখ্যায় বিষয় 'রাবণ'। কিন্তু এই রাবণ নিয়ে অসংখ্য লেখা পাওয়ায় পঞ্চম সংখ্যাটিও সেই 'রাবণ'-কে নিয়ে প্রকাশ করতে হয়েছে। ষষ্ঠ সংখ্যায় বিষয় রাখা ছিল 'ঘুড়ি'। এরপর প্রকাশিত হয়েছে পুণ্যিপুকুর ব্রত নিয়ে একটি মূল্যবান সংখ্যা। যা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বিহারের সাসারামে শের শাহ সুরীর সমাধিতে। উদ্বোধন করেন ড. মৌসম মজুমদার। খুব শিগগিরই প্রকাশিত হতে চলেছে পুণ্যিপুকুর পত্রিকার রথ সংখ্যা।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে পত্রিকাটি সমাদৃত হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার হাউর-এর সাহড়দা গ্রাম থেকে এটি কাশফুল সংখ্যা এবং কৃষ্ণচূড়া সংখ্যা নামে প্রকাশিত হয় দু'বার। এখানে বিভিন্ন সংখ্যায় লিখেছেন ড. নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, ড. প্রদ্যোতকুমার মাইতি, ড. অসীমকুমার মান্না, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিধান বিশ্বাস, ড. শ্যামল বেরা, জ্যোতির্ময় রায়, ড. প্রণব রায়, ড. সুব্রত মুখােপাধ্যায়, তরুণ সিংহ মহাপাত্র, অহিভূষণ পাত্র, গুরুচরণ খাটুয়া, ভাস্করব্রত পতি, দিগেন বর্মণ, ড. প্রবালকান্তি হাজরা প্রমুখ নামি দামি লেখকগণ। চৈত্রের সংক্রান্তি থেকে বৈশাখের সংক্রান্তি পর্যন্ত বাংলার মহিলারা বৃষ্টির কামনায় 'পুণ্যিপুকুর ব্রত' পালন করেন। সেই ব্রতের নামেই পত্রিকার নামকরণ। শুধু 'পুণ্যিপুকুর' বিষয় নিয়েই আলাদা একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী সংখ্যার বিষয় 'রথযাত্রা'। এক দিকে পত্রিকাটি বহন করে চলেছে লােকসংস্কৃতির নানা অঙ্গনকে। অন্যদিকে পরিবেশ বাঁচানাের সংকল্পকে সামনে রেখে গ্রামীণ মহিলাদের ব্রতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত সুচারুভাবেই।
হারিয়াড় সাকাম : ড. সুহৃদকুমার ভৌমিক সম্পাদিত 'হারিয়াড় সাকাম' পত্রিকাটি বাংলা এবং সাঁওতালি ভাষার রচনার এক উল্লেখযােগ্য পত্রিকা। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছিল এই পত্রিকাটি। আঞ্চলিক ইতিহাস, আঞ্চলিক সাহিত্য, প্রত্নতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক অসংখ্য লেখায় সমৃদ্ধ ছিল হারিয়াড় সাকাম বা সবুজপত্র। ১৯৬৩ সালে এটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে দ্বিভাষিক পত্রিকা হিসেবে। প্রথম বছরে দুটি সংকলন। পরে ত্রৈমাসিক এবং তারও পরে মাসিক পত্রিকা হিসেবে (DL. No. Tam-695 dt. 16.6.84 Postal Regd. No.-WB/TMK-27) প্রকাশিত হতে থাকে শুধু সাঁওতালি ভাষায়। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পথ চলার পর মূলতঃ আর্থিক কারণে পত্রিকাটি ২০০৩ সালে তার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। শেষের দিকে পত্রিকাটি অবশ্য অনিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হত।
মেছেদার 'মারাংবুরুং প্রেস'-এ এর জন্ম। সাঁওতালি ভাষা-সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই প্রেসটির অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতেই হবে। এখান থেকে বহু সাঁওতালি বই, সংকলন, অভিধান-এর পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে গীতাঞ্জলি বা সেরেঞ সপেঞ, গল্পগুচ্ছ বা গামগাছলে এবং ঈশোপনিষদ-এর অনুবাদ। সাঁওতালি ছাড়াও সাদরি, মুণ্ডা, পাঁচপরগনিয়া, কুড়ুখ, কোল (হাে), ইংরাজি, সংস্কৃত ভাষার বই প্রকাশিত হয়েছে। 'হারিয়াড় সাকাম' পত্রিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মারাংবুরু প্রেসের নাম। এখনও মেছেদাতে প্রেসটির সাইনবাের্ড রয়েছে। কিন্তু এখানে প্রকাশনা বন্ধ। 'হারিয়াড় সাকাম'-এর প্রথম সংকলনটি প্রকাশিত হয় ১৩৭০-এর ১লা বৈশাখ। তখন দাম ছিল দশ নয়া পয়সা। পত্রিকার সভাপতি ছিলেন ড. সুহৃদকুমার ভৌমিক। সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন বার্ষা হাঁসদা, সুরেন্দ্রনাথ টুডু এবং জ্যোতিষ হাঁসদা। পরবর্তীতে এই কমিটি বদলে যায়। পত্রিকায় ৪০ বছর পূর্তিতে পূর্বে প্রকাশিত বাছাই করা রচনার একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। পত্রিকার সাথে যুক্ত অনিল মণ্ডল, বীরলিটা হেমব্রম, মণ্ডল হেমব্রম, ধর্মদাস কিসকু, সাধন মাণ্ডি, কৃষ্ণরায় টুডুদের নাম উল্লেখ করতেই হবে।
মেঘবল্লরী : ছড়াকার তথা প্রধানশিক্ষক প্রাণনাথ শেঠের সম্পাদনায় 'মেঘবল্লরী'র (ISSN 23955961) বিশেষ সংখ্যা গুলো তো লোকসংস্কৃতির এক একটি মাইলস্টোন বলা চলে। ২০১৩ তে 'তুলসীমঞ্চ' সংখ্যা খুব আলোড়ন ফেলে দেয়। বাংলা সাহিত্যে এ বিষয় নিয়ে আগে কখনও কাজ হয়নি। এরপর 'প্রমিলা' সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০১৪ তে। ২০১৬ তে প্রকাশিত হয় 'হলদিয়া' সংখ্যা। ৪১৬ পাতার একটি আকর গ্রন্থ যেন! ২০১৭ তে আবারও ধামাকা! প্রকাশিত হয় 'গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলো সংখ্যা'। ২৪০ পাতার একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। এই সংখ্যার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলা একাডেমি লিটল ম্যাগাজিন ২০১৮ পুরস্কার জোটে 'মেঘবল্লরী'র। পরের বছর ২০১৮ তে পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার বিষয় ছিল 'লিটল ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ ও প্রচ্ছদ শিল্পী' বিষয়। ২০১৯ তে আবারও বিশেষ সংখ্যা 'বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস' প্রকাশিত হয় প্রাণনাথ শেঠের সম্পাদনায়। ২০২০ তে এই পত্রিকার প্রকাশিতব্য বিশেষ বিষয় 'গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্প'। এরাজ্যের স্বনামধন্য লোকসংস্কৃতি বিষয়ক লেখকদের একত্রিত করে এক প্রামান্য ইতিহাস তুলে ধরছেন অজস্র প্রতিবন্ধকতা সামলে।
আত্মানুসন্ধান : ১৯৯৭ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে 'আত্মানুসন্ধান' নামের পত্রিকাটি। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা এটি। ফি বছর একটি সংখ্যা করে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে পত্রিকার সম্পাদনা করেন অতনু নন্দন মাইতি। মুখ্য উপদেষ্টায় কেদার দাস। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের 'গোপীনাথপুর প্রগতি ওয়েলফেয়ার অ্যাসােসিয়েশান' আয়ােজিত লোকসংস্কৃতি উৎসবের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এই 'আত্মানুসন্ধান' পত্রিকাটি। এই অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত রথীন মজুমদার, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, নবকুমার পাল, আলােক ঘােষ, অনিল পট্টনায়ক, সুদীপ সিংহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। বিভিন্ন সংখ্যায় আত্মানুসন্ধানে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন ড. শ্যামল বেরা, ভাস্করব্রত পতি, সােমা মুখােপাধ্যায়, অজিত করণ, দিব্যেন্দু দাস, অতনুনন্দন মাইতি, ইমানুল হক, মন্মথ গােরায় প্রমুখ প্রবন্ধকারগণ।
তাম্রলিপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মিলনী : এখনও পর্যন্ত তিনটি সংখ্যা আত্মপ্রকাশ করেছে। শেষেরটি তুলনামূলকভাবে আয়তনে বড়। গত ১৪১৯-এর 'বর্ষা' সংখ্যা হিসেবে শেষ সংখ্যা প্রকাশিত। সম্পাদনা করেছেন অশােককুমার পট্টনায়ক। সংগঠনের ১৬ তম বছরে পা রাখা উপলক্ষ্যে শেষ সংখ্যার বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছিল তমলুক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'দি প্রদীপ' পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং তথ্য। এজন্য ১৯৫১, ১৯৫২, ১৯৫৩, ১৯৫৭, ১৯৬১, ১৯৬২ এবং ১৯৬৩-তে প্রকাশিত 'দি প্রদীপ' পত্রিকার (বর্তমান সম্পাদক চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু) খবরাখবর নিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পরে প্রকাশিত হল 'তাম্রলিপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মিলনী'র তৃতীয় সংখ্যা। ১৯৯৪-এর ১৭ই জুলাই গঠিত হয়েছিল 'তাম্রলিপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ'। এরপর গত ২০০২-তে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এতে লিখেছেন উমা নাগ, রামচন্দ্র ধাড়া, রাজর্ষি মহাপাত্র, বনানী মালাকার, ড. কমলকুমার কুণ্ডু, নীতিন রায়, নিতাই জানা প্রমুখ।
লােকায়ত : ১৪০১ বঙ্গাব্দে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে প্রথম প্রকাশ ঘটে 'লোকায়ত' পত্রিকার। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক এই পত্রিকাটি তাপসকান্তি রাজপন্ডিত, ড. শ্যামল বেরা এবং শংকর মহাপাত্রদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকে। প্রতি সংখ্যায় ক্ষেত্রসমীক্ষালন্ধ এবং গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ও নিবন্ধ নিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশিত হত। 'আমাদের ইতিহাস সংস্কৃতির সত্যরূপ অন্বেষণ করা এবং তুলে ধরা' - এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করাই লক্ষ্য পত্রিকার। 'লোকায়ত' মনে করে ইতিহাসকে গল্পে পরিণত করলে, তার পরিণতি দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। এই বিপদের হাত থেকে দেশ ও দেশের ইতিহাসকে বাঁচানােই আমাদের দেশপ্রেমের পরিচায়ক হয়ে উঠুক। এখানে লিখেছেন তারাপদ সাঁতরা, ড. নির্মলেন্দু ভৌমিক, মােহিনীমােহন গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর মহাপাত্র, শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, তপনকুমার দাস, অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. শ্যামল বেরা, তাপসকান্তি রাজপণ্ডিত প্রমুখ।
লােককথা : তাম্রলিপ্ত লোকসংস্কৃতি উন্নয়ন সমিতির মুখপত্র হিসেবে প্রতি বছর মহিষাদল থেকে প্রকাশিত হয় লোককথা পত্রিকা। অত্যন্ত উঁচুমানের এবং গুণমানের এই পত্রিকাটি গবেষকদের কাছে সংগ্রহযােগ্য ম্যাগাজিন। মহামূল্যবান এবং তথ্য পরিপূর্ণ এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন কবি, লেখক হরপ্রসাদ সাহু। তাঁর সম্পাদনায় পত্রিকাটি ফি বছর নতুন রূপে ধরা দেয় পাঠকদের কাছে। ২০০৬ থেকে এর প্রকাশনা শুরু। নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল থেকে আত্মপ্রকাশ করে চলেছে। নিটোল সম্পাদনার ফসল এটি। এখানে বিভিন্ন সময়ে লিখেছেন ড. অসীমকুমার মান্না, দিগেন বর্মণ, তারাপদ সাঁতরা, বীতশােক ভট্টাচার্য, রােহিনীনাথ মঙ্গল, চিন্ময় দাশ, ড. প্রবালকান্তি হাজরা, ভাস্করব্রত পতি, প্রভাতকুমার দাশ, ড. প্রদ্যোতকুমার মাইতি, শিশিরকুমার বাগ, সৌরভকুমার ভূঞ্যা প্রমুখ। হরপ্রসাদ সাহু সংগৃহীত 'সত্যনারায়ণের পালা'-র দেখা মিলবে লোককথার অষ্টম সংখ্যায়।
মহিষাদল বার্তা : ২০১২-এর জুলাই মাসে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় মহিষাদল বার্তা পত্রিকার। হলুদ কাগজে ছাপা পত্রিকাটি এক অনন্য পরিবেশন। মহিষাদলের সংস্কৃতি সভার মুখপত্র এই পত্রিকাটিতে স্থান পায় লোকসংস্কৃতি, আঞ্চলিক ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্বের যাবতীয় তথ্য সম্বলিত উপাদান। মহিষাদল ঘিরেই লেখাগুলি আবর্তিত হয়। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক হরিপদ মাইতি। কার্যকরী সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন হরপ্রসাদ সাহু এবং সৌরভকুমার ভূঞ্যা। স্বাভাবিকভাবেই পত্রিকাটি হয়ে উঠেছে মহিষাদলের আয়না। এখানে বিভিন্ন সংখ্যায় লিখেছেন শিশিরকুমার বাগ, হরপ্রসাদ সাহু, সৌরভকুমার ভূঞ্যা, হরিপদ মাইতি, ভাস্করব্রত পতি, মানসী মিশ্র হালদার, পারমিতা গিরি, ড. সুস্নাত জানা, বিধান দত্ত প্রমুখ লেখকগণ। মহিষাদলের নানা খবরাখবরও গুরুত্ব দিয়ে ছাপানাে হয় পত্রিকাটিতে।
অন্যস্রোত : গত ২০০৮-এর জানুয়ারি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার ফিরােজ খানের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করে লােকবিষয়ক পত্রিকা 'অন্যস্রোত'। একসময় ধারাবাহিকভাবে প্রতিমাসে প্রকাশিত হত। সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব বিষয়ক মাসিক এই ম্যাগাজিনটি সারা রাজ্যে সমাদৃত। বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে বহুবার। পত্রিকাটিতে (রেজিঃ নং- WBBEN/2010/30681) নিয়মিত লেখেন বিমলকুমার শীট, রােহিণীনাথ মঙ্গল, ভাস্করব্রত পতি, ফিরােজ খান, যুগজিৎ নন্দ, দীপককুমার পাল, শান্তিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়, নন্দদুলাল রায়চৌধুরী, লক্ষ্মীকান্ত পাল, কামরুজ্জামান, মহম্মদ সালাউদ্দিন, শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, পুলকেন্দু সিংহ প্রমুখ লেখকগণ।
সহজিয়া : লােকায়ত শিকড় সন্ধানের পক্ষে 'সহজিয়া' প্রকাশিত হয় বার্ষিক সংকলন হিসেবে। ২০০৫ থেকে প্রতিবছর প্রকাশিত হয় অত্যন্ত উচ্চমানের লোকসংস্কৃতি বিষয়ক এই পত্রিকাটি। মধুসূদন মুখোপাধ্যায় সম্পাদনায় প্রথম কয়েক বছর পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে প্রকাশিত হত। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে হুগলির ত্রিবেণী থেকে। বইটির লেখার মান, প্রচ্ছদ-ভাবনা, অঙ্গসজ্জা, অলংকরণ এবং পরিবেশন সবেতেই উন্নত এবং মার্জিত রুচির আভাস লক্ষ করা যায়। ফি বছর এই বাংলার লােকায়ত কিছু মানুষজনকে প্রদান করা হয় পত্রিকার নামেই 'সহজিয়া সম্মান'। যা এই পত্রিকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
দণ্ডভুক্তি : পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থেকে গবেষক, শিক্ষক, লেখক এবং প্রত্ন সংগ্রাহক সন্তু জানার সম্পাদনায় গত ২০১৮ এর আগষ্ট মাস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে 'দণ্ডভুক্তি'। সহ সম্পাদনায় রয়েছেন পবিত্র পাত্র। দাঁতন অঞ্চলের বিশিষ্ট মানুষজনই এই পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা। দাঁতন থানা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- এ তথ্য কেউই জানতেন না। সেই অনালোকিত ইতিহাস পত্রিকায় তুলে ধরেছেন সন্তু জানা। এই দাঁতন এলাকায় ডাক হরকরা কত দিন ধরে ছিল সেই অনালোচিত ইতিহাসও উঠে এসেছে সন্তু জানার গবেষনায়। ১৮৭০ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত 'মিশনারি হেল্পার' (১৮৪০ সালে এই পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়) পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে ভারতের চারটি যায়গা দাঁতন, বালেশ্বর, কটক ও মেদিনীপুর থেকে ডাক যেতো ইংল্যান্ডে।
এই পত্রিকাটি প্রকাশনা করছে 'দণ্ডভুক্তি একাডেমী'। সেইসাথে নিয়মিত দণ্ডভুক্তি আলোচনা চলে বিশিষ্ট গবেষকদের নিয়ে। এ পর্যন্ত মোট দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া দ্বিমাসিক ভার্সান হিসেবে পত্রিকার ছয়টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার জনপদ, জনজীবন, আঞ্চলিক ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি নিয়েই বেড়ে উঠেছে দণ্ডভুক্তির কলেবর। বিভিন্ন সংখ্যায় লিখেছেন নলিনী বেরা, সুধীর দত্ত, সূর্য নন্দী, ড. মধুপ দে, ড. বিমল কুমার শীট, ড. দীপক কুমার বড়পণ্ডা, শচীন সাউ, নির্মলেন্দু গুণ, অ্যালবার্ট অশোক, সুধীর মাইতি, তরুণ সিংহ মহাপাত্র, চিন্ময় দাশ, ইয়াসিন পাঠান, অরিন্দম ভৌমিক, বিশ্বজিৎ ঘোষ, অরুন কুমার সাউ, শান্তনু অধিকারী, ভাস্করব্রত পতি প্রমুখ লেখকগণ।
তাম্রলিপ্ত শারদীয়া : পাক্ষিক কাগজ হিসেবে তমলুক শহর থেকে 'তাম্রলিপ্ত' নিয়মিত প্রকাশিত হলেও বছরে একবার 'তাম্রলিপ্ত শারদীয়া' নামে প্রকাশিত হয় পেটভর্তি আঞ্চলিক ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, লােকসংস্কৃতির প্রবন্ধ নিয়ে। জয়দেব মালাকার সম্পাদিত এই পত্রিকাটির আয়তন পশ্চিমবঙ্গে বিরলতম। মূলতঃ মেদিনীপুর জেলার ওপর প্রবন্ধকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। লেখার গুণগত মান এবং প্রাচুর্যতায় এটি হয়ে উঠেছে ঈর্ষণীয় এবং সংগ্রহযােগ্য পত্রিকা। একসময় পত্রিকাটি যুগ্মভাবে সম্পাদনা করতেন অনিল পট্টনায়ক ও জয়দেব মালাকার। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নিয়মিত ভাবে এখনও প্রকাশিত হয়ে চলেছে পত্রিকাটি। এর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর হল- RNINO -27010/74 । পত্রিকাটির মূল বৈশিষ্ট্য হল এর বিশালদেহী আয়তন। ড. কমলকুমার কুণ্ডু, রাধাকৃষ্ণ বাড়ি, ড. পশুপতি প্রসাদ মাহাতাে, ড. প্রদ্যোতকুমার মাইতি, ভাস্করব্রত পতি, কানাইলাল দাস, জয়দীপ পণ্ডা, সাধনচন্দ্র প্রামাণিক, বনানী মালাকার, রামচন্দ্র ধাড়া, ড. রামরঞ্জন রায়, ড. সুস্নাত জানা, রাজর্ষি মহাপাত্র প্রমুখ নিয়মিত লেখেন এই পত্রিকায়। অতীতে এখানে লিখেছেন মালীবুড়াে, সুশীল কুমার ধাড়া, ইন্দুভূষণ অধিকারী, কুমুদিনী ডাকুয়া, গােপীনন্দন গােস্বামী, রমণীমােহন মাইতি প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ।
দর্শন : মাত্র তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিটি সংখ্যায় লেখকসূচির যে তালিকা মেলে তা বেশ শক্তপােক্ত। এঁদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত লেখক। ১৯৯৬ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে প্রকাশনা শুরু হয়। পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন আভা চক্রবর্তী। মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানের ইতিহাস, ভ্রমণ ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক বাৎসরিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল 'দর্শন'। সম্পাদকীয় দপ্তর ছিল খড়গপুরেই। সম্প্রতি এই পত্রিকার অন্যতম সহযোগী অভিজিৎ গোস্বামীর মৃত্যু হয়েছে।
সাহিত্য সম্মেলনী : পূর্ব মেদিনীপুর সাহিত্য সম্মেলনীর মুখপত্র এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন রাজর্ষি মহাপাত্র এবং কৃতিসুন্দর পাল। অর্ধ বাৎসরিক এই পত্রিকাটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় লােক ঘরানার লেখাকেই। তমলুক থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে। বহু নামিদামি লেখক এখানে নিয়মিত লেখেন।
ইতিহাস দর্পণ : পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন থেকে স্বপন দাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে ২০২০ এর আগষ্টে লক ডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই। সহ সম্পাদনায় তনুজা মিশ্র এবং গৌরাঙ্গ পাত্র। প্রধান উপদেষ্টায় আছেন শিবশঙ্কর সেনাপতি। মূলতঃ সর্বভারতীয় আঞ্চলিক ইতিহাস তথা বিকৃত ইতিহাসের সঠিক তথ্যানুসন্ধান করে প্রকাশ করাই এই 'ইতিহাস দর্পণ' পত্রিকার মূল লক্ষ্য। ষান্মাসিক এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় লিখেছেন সূর্য নন্দী, ড. শ্যামল বেরা, চিন্ময় দাশ, সন্তু জানা, শিবশঙ্কর সেনাপতি, ড. কালীপদ প্রধান, ভাস্করব্রত পতি, শান্তিপদ নন্দ, ড. বিমল কুমার শীট, বিশ্বজিৎ ঘোষ, অতনুনন্দন মাইতি এবং স্বপন দাস।
পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে অসংখ্য লোক উপাদান রয়েছে। এসব নিয়ে নিয়মিত লেখেন ঝর্ণা আচার্য্য, চিন্ময় দাশ, লখীন্দর পালোই, তরুণ সিংহ মহাপাত্র, ড. শ্যামল বেরা, অরিন্দম ভৌমিক, ড. মধুপ দে, শান্তিপদ নন্দ, সুদর্শন সেন, জয়দীপ পণ্ডা, রাজর্ষী মহাপাত্র, ড. দীপক কুমার বড়পণ্ডা, ড. প্রবালকান্তি হাজরা, সুধাংশু শেখর ভট্টাচার্য, নরেশ জানা, ভাস্করব্রত পতি, সন্তু জানা, ফিরোজ খান, অতনুনন্দন মাইতি, সুগত পাইন, ড. অসীম কুমার মান্না, রোহিনী নাথ মঙ্গল, পার্থসারথি দাস, অরুণ কুমার সাউ প্রমুখ লেখকগণ। এঁদের লেখাতেই সমৃদ্ধ হয় এইসব লোকসংস্কৃতি, আঞ্চলিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক পত্রপত্রিকাগুলি। গত কয়েক বছর ধরে চলছে পত্রিকা প্রকাশে তুমুল মন্দা। আর্থিক অনটন আর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লিটল ম্যাগাজিন জগতে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আর বিশেষ এই শ্রেনীর পত্রপত্রিকা প্রকাশের পর ক্রেতা পাওয়াও দুষ্কর। তবুও চলছে। তবুও চলবে।
ছবি - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
ভালো লাগল
ReplyDelete