কবি দীপক হোতা’র কবিতা-
১।। ∆ সাপ বৃক্ষের খেলা ∆
তুমুল উল্লাসে ভিজতে থাকে গাছ
পাতাগুলি শুষে নিচ্ছে তরল আর্দ্রতা
সবুজ আরও সঞ্জীবিত জলীয় মোচ্ছবে
গাছেদের এই মহোৎসবে সামিল হয়েছে-
আজ কিছু সরীসৃপ।
স্বর্ণলতা এক জড়িয়ে রয়েছে শরীর জাপটে,
যেন একটি সাপ লেপটে রয়েছে বুকের ওপর।
উন্নত স্তনের মত প্রতিদিন বেড়ে ওঠা বৃক্ষাংশ,
বুঝে নেয় বড় হওয়ার গল্প.......
সাপেদেরও এক নিজস্ব ভালবাসা আছে
মিথুন পর্বের ভাষা বুঝে ফেলে-
গর্ভের ভিতর।
অথচ তুমি বুঝলে না-
জলীয় উপাদানের সম্পৃক্ত শৃঙ্গার।
আহ্বানের ও একটা অভিমুখ থাকে,
মহত্তর আগুন নির্মানে!
যাকে তুমি চিনতে পার নি-
উত্থাপনের চোখল বিস্তারে.............
পূর্ণ জলাশয়ের অন্তরে যে উত্তাপ সঞ্চিত থাকে,
মগ্ন হয়ে দেখো- এখানেও সূর্যোদয় হয়।
এসো নন্দিনী!এই মধ্যরাতে ঊর্যস্বী প্রজ্ঞায়,
সাপ ও বৃক্ষের খেলা দেখি মুগ্ধ সর্মপনে।
সমস্ত নিরাশক্ত অভ্যাস ঝেড়ে ফেলে-
এসো, আজ প্রবল প্লাবনে ডুবে যাই.......
২।। ∆ ক্ষত গভীর হলে ∆
মেঘ আঁকলে আকাশ,
জল আঁকলে নদীর কথা-
মনে হয়।
গোলাপ আঁকলো যে ছেলেটি-
কাঁটার কথা মনে হয়নি তার।
মেয়েটি ভুলে গিয়েছিল,
সঁপে দেওয়া ভাদ্র দুপুর!
শূন্যতলে ঝুলে পড়া নিঃসঙ্গ বারান্দায়,
শব্দগুলি ভেসে যাচ্ছিল-
নিরুচ্চারিত বিকেলে..............
স্হির জলাশয়ের গভীরে,
যে অন্তস্রোত বয়ে যায়-
কতটুকু চেনা যায় তাকে?
এখন পাহাড়ের ও অভিমান হয়!
প্রতিবাদী মেঘেদের শূন্য আস্ফালনে,
পুড়তে থাকে হলুদ পাতার গাছ।
ক্ষত গভীর হলে,
নিস্তরঙ্গ চাঁদ নুয়ে পড়ে-
বাদামী জ্যোৎস্নায়..................
৩।। ∆ বিষন্ন বিকেলের রং ∆
বিষণ্ণতা আমাকে বিদ্ধ করে না-
বিষণ্ণতা পেলে বিকেলের রং খুঁজি,
তোমার নীল স্কার্ফের রেশমী রুমালে।
বিকেলই আমাকে বুঝতে শেখায়,
সুপ্রভাতের সুরভিত বিশ্বাস।
শুরু করেছিলাম সেদিন আমার
আত্মজয়ের সঞ্চিত উপাখ্যান।
অথচ পারলাম কই যাপনের নৈরাশ্যে
সংখ্যাহীন হয়ে যাওয়া কুমারী সন্ধ্যায়!
বিষণ্ণতা আমাকে বিদ্ধ করেনা-
উপলব্ধি বা অনুশাসনের ক্রুশবিদ্ধ দেওয়ালে
নৈরাজ্যের চিত্রকল্প আঁকি।
অপসৃয়মান দিগন্ত বলয়ে মেখে নিই সবুজ
সুঘ্রাণ। সুললিত সুরের মূর্ছনায় বেটোফেন রাত্রি,
আমাকে আলিঙ্গন করে তরল মৌতাতে।
আমি দু'হাতে আঁকড়ে ধরি অবশিষ্ট ক্রোধ
মেঘের বঞ্চনায়-
অনুবাদ করি শস্যক্ষেতের হাহাকার।
বীজগুলো উড়ে যায় ফেনিল উৎসবে.......
তারপর দয়ালু বৃক্ষের কাছে দাঁড়াই হাত পেতে
প্রার্থনা করি,হে!আমার বৃক্ষদেবতা -
অনুর্বর উঠোনে মেলে দাও পাতার নিঃশ্বাস!
পুকুরের নিস্তব্ধতায় ভেসে আসে পাখির গুঞ্জন
ধার্মিক আঁধারে নামে জোনাকী জীবন।
বিষণ্ণতা আমাকে বিদ্ধ করে না-
জলের উল্লাসে ধুয়ে দিই পুরোনো ক্ষতের দাগ।
উজ্জ্বল প্রেমিকের হাতে তুলে ধরি নিঃশেষটুকু
ছায়াছন্ন লাজুক ঝর্ণায়..........
৪।। ∆ ছায়া ∆
ভাবলেই আতঙ্কিত
হই-
এতদিনেও তাদের
চিনলাম কই?
কারা ওরা?
সামনে পেছনে-
রয়েছে যারা.........
কেবা বন্ধু,কে যে শত্রু
কার!
নিজেই কি চিনেছি,
নিজেকে? বিশ্বস্ত হবার জো
আমি নাকি,আমার মতই-
অন্য কেউ!
চারপাশে কাছে দূরে-
ঘোরে ফেরে ছায়ার মত,
প্রেমে-অপ্রেমে
কেউ না কেউ.........
৫।। ∆ লণ্ঠনের আলো ∆
আমাদের গ্রামের বাড়িতে
একটা পুরোনো লন্ঠন ছিল,
চল্লিশ বছরের।
বড় প্রিয় ছিল সে আমার,ঠিক
পুরোনো বান্ধবীর মত।
ওর ঐ বাতি তোলার চাবিটা-
ওঠানামা করাতে করাতে মনে হত,
আমি আবিষ্কার করেছি আলোর নিয়ন্ত্রন।
কতটা বাড়ালে অন্ধকার ছোট হয়ে আসে, কতটা দূরে সরে যায়-
অন্ধকারের পথ।
হাত দুলিয়ে দুলিয়ে ঝড়ের মুখে
লন্ঠনটা নিয়ে ঘরবার করতাম
ঝড় ঝাপটার মধ্যেও নিভতে দেখিনি।
কখোনো ঐ আলোর পাখিটাকে নাড়াচাড়া করলে,
স্বপ্নে ভেসে যেতাম............
মনে হত যেন,
কোন কাচঘরের জলসায় আগুন মাখছি।
নাচঘরের মৌতাতে মুখের আঁচল সরিয়ে নরম গালে হাত রেখে বলছি-
তুমি তো আমার শ্রাবণ সন্ধ্যার প্রবল
বৃষ্টিপাত।
আমাকে এখন ভিজিয়ে দাও,
পুড়িয়ে দাও সফল সংগ্রামে।
তোমার মায়াবী আলোয় আমাকে
পরিশুদ্ধ কোরো
একদিন আচমকা হাত থেকে
খসে পড়লো লন্ঠন। ঝনঝন করে
ভেঙে পড়লো কাচ উঠোনের উপর
ভাঙ্গলো আলো,আলোর ঠিকানা।
মা বললেন-কাচ ভাঙলে ভাগ্য ভাঙে,
ভেঙে পড়ে লক্ষীর ঘর।
ঘর ভাঙার কথা ভাবিনি তখন
তবু লন্ঠনের জন্য ভেঙে পড়েছিলাম।
কাচগুলো আর পাইনি কোথাও -
একদিন এইভাবে ভেঙ্গে পড়লো তার,
পাঁজর ছিন্ন বাতিঘর।
কোথাও খুঁজে পাইনি তারপর..........
অলংকরণ - অমৃতা নায়ক
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
No comments:
Post a Comment