শাপলা পর্ব - ৫
১।। লাশচক্
°°°°°°°
বিষাদের ঘোরেই আপাদমস্তক ব্যথা
প্রতিটি সুন্দরের কাছে এখন নিরাপদ দূরত্বের চিঠি
কাব্য করার সময় না জানি আর ফিরবেনা
অজস্র পাতার অবাধ খসে পড়া, শুনশান রাস্তার মতো দিকে দিকে ন্যাড়া গাছের সারি !
একটা দুটো পাখির মতো নির্ভয় সতর্ক পুলিশ
বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে আরোগ্য,
মহাজীবনের গান।
লাশচক্ শিরোনামের জায়গা
পৃথিবীতে একটিও নেই,
প্রসূতি ভরসার মতো রূপকথার আদলে তৈরি
ঘোষিত ধর্মকাঁটায় বিকচ্ছে রঙ বেরঙের খবর।
নির্দ্ধারিত সীমা কাটা শ্মশান দীর্ঘ জিহ্বায় দখল করছে রাজপথ থেকে সাগর, নিরপরাধ লাশের আজ কোন পাসপোর্ট ভিসার দরকার নেই।
রক্তনালিকায় প্রত্যাশারা, আকণ্ঠ বিপন্নতার ভেতর
তারা খসার নিয়মে মরে পড়ছে ঠক ঠক,
লাশচক্ শিরোনামের জায়গা এখন
আকণ্ঠ শরীর, নাকি মিথ্যে নিরাময় স্রোতে
গা ভাসানো এক-পৃথিবী মানুষের মন ?
২।। শেষপর্বের কয়েক পংক্তি
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
অধিকতর সভ্যতা চেয়েছে মানুষ
পেটভরলেই মন ভেজাতে বড়োবেশি উতলা
শরীরের নিয়মেই খাদ্যাভ্যাস
অতলস্পর্শের জন্য সোমরস আয়োজন !
চিবিয়ে খায় জ্যোৎস্না আর নিঃস্বতার চাঁদ, গড়াগড়ি একপাশে শ্মশানের আধেক পোড়া কাঠ
প্রতিটি নিয়ম রেখায় ঝুলতে থাকে কিছু সমর্থন
প্রতিটি প্রতিবাদের আড়ালে থাকে সম্ভাবনার বীজ
পালটে যাচ্ছে সময় ও সময়ের ছবি
চোখের অভিযোজন চাই আর সহ্যের সাহস।
মাটি সুন্দর আকাশ সুন্দর বলেছে----মানুষ
তিনি মহৎ সে মন্দ বলেছে-----মানুষ
চারা পুঁতছে ফুল ছিঁড়ছে----মানুষ
শীতল উষ্ণ স্রোত পেরিয়ে ক্লান্ত বোধ
একদিন বোবা হয়ে গেলে
এভাবেই অনুবাদহীন পৃথিবী-পাথর,
একা এবং নিশ্চিহ্ন মানুষ।
৩।। মহাপৃথিবীর যাত্রী
°°°°°°°°°°°°°°°°°
যদি সব ঠিক থাকে
আমাদের দেখা হবে।
প্রতি মুহূর্তে মরণ
নির্ভরতার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিচ্ছে
শোকের ক্যালেন্ডার
আলগা জোর আর
ধনুকের মতো বেঁকে আসা মেরুদণ্ড
হাতড়াতে থাকে বিশল্যকরণী ভোর
অসংখ্য তুলিকলমের দীর্ঘশ্বাস
আনন্দের সেই রোদ, জ্যোৎস্না
কী কাজে লাগে, অর্ধেক পৃথিবী
যখন ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়ে লাশের ওপর !
অকাল ক্ষয় রোগে কাঁপতে থাকে
পরমায়ুর দ্রাঘিমা বলয়
জ্বিহায় জড়ানো অমৃত যদি ফেরায়
আগামী পৃথিবীর গানে
তবে আমাদের দেখা হবেই।
৪।। মাইলফলকের গান
°°°°°°°°°°°°°°°°°°
বিদ্যাসাগরের পর এই প্রথম কেউ
মাইলফলক সংখ্যাতত্ত্বের মনোযোগী পাঠক, ঘরছাড়া মরশুমি করোনা বাতাসে
উড়ে পড়া খড়কুটো, পরিযায়ী শ্রমিক।
প্রেমিকা চাকাও কখনো সখনো ঘাতিনী হলে
বৈশাখ রোদে আধেক পোড়া রাস্তা শরীর,
সস্তার রক্তে কেমন স্নানে ভিজে যায়।
এসব দেখতে থাকেন নাতিশীতোষ্ণ পুরের বাসিন্দা
রাজা ও রাজপণ্ডিত। নির্বাচনের পর
বিধিসম্মত ভাবে চলা ও বলা পালটে নেওয়ার নাম
নাকি রাজনীতি ও গণতন্ত্র ?
বন্ধুতার যাবতীয় চিরন্তন গন্ধ, বইয়ের পাতায় আটকে থাকাই সম্ভাব্য দহন ?
কত সহজ ভাবে কুশল বিনিময় ভুলে যায় আমাদের সহযাত্রী পাড়া !
৫।। অন্তর্ঘাত
°°°°°°°
ছায়ারা একত্র দাঁড়ালে অভিমানী আলো
বেছে নেয় মহানিষ্ক্রমণের পথ,
ছায়া একাকার মানে রাত্রির একাংশ
যে মুছে দেয় চেতনার সমূহ রঙ
প্রশস্ত স্রোতে ভাসমান নুড়িকাঁকর
সেও এক জীবনের মিথ -----
যার কাছে ইহজন্মের ঋণ বেড়ে গেছে।
সচেতন অবহেলা রাত্রির চেয়ে কম কিছু নয় !
সাজানো অপেক্ষার ভেতর ডানা মেলে
অনন্যোপায়, অনিবার্য কিছু ঘটে যাওয়ার আগে
কবি ফিরে গেছে অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি ফেলে।
আটকাতেই পারতে ভালোবেসে, নিরাময়
হয়ত চাওনি বলে ছায়ার বিষে নীল হয়ে গেছে
একটি আলোর মতো একজন কবি।
অলংকরণ - ইন্দ্রানী পন্ডা
"""'"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
No comments:
Post a Comment