Friday 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৫

কবি প্রতাপ মুখোপাধ্যায় এর কবিতা-






১।।    আফরিন এসো, এসো ভুল করি ।।
           •••••••••••••••••••••••••••••••••



তাকিয়ে থাকা টুকু মেঘের চোখে এঁকে দিয়েছি, বৃষ্টির পায়ে লিখেছিলাম চলে যাওয়া । হারিয়ে যাবে ভাবিনি । ভেবেছিলাম ফিরে আসবে আবার বর্ষায় ।

বৃষ্টিতে স্নান সেরে ফলবতী কলাবউ, শরীর বেয়ে তাঁর জল নেমে আসে, তৃষিত মাটির বুকে এক-এক ফোঁটা, হায়রে তৃষ্ণা ! মেটেনা, বেড়ে যায় ।

এখন সব মুখে মুখোশের ঘ্রাণ, ভয় পাই তুমি যদি এসে ফিরে যাও । তোমাকে ভ্রমিত করে অচেনা আঘ্রাণ । যদি তুমি শোনো ভুল বাতাসের বাণী ।

একবার ভুল করে নুপুর বাজুক । একবার বৃষ্টিতে এসো নেমে পড়ি । আফরিন এসো,  আরও একবার, ভুল করে এসো, এসো ভুল করি ।




২।।     বৈদগ্ধ এবং জন শৌচালয় ।।
          ••••••••••••••••••••••••••••••


বৈদগ্ধ কাঞ্চনজঙ্ঘার নাভির গভীরে লুকিয়ে থাকা আলো । 
আমার এই চড়ুই পাখির জীবন! পায়ে পায়ে কাঁকর,পাথর..
কখনো নুন কখনো বা পান্তার গুপ্ত ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে সূর্য পা ছড়িয়ে বসে, কোনো সুখী কবিতার মনোরম উপমায় ।

জন শৌচালয়ের লাইন শেষ হলে হাতে স্বর্গ নেমে আসে । 
জন শৌচালয়ে দেড়-দুমিনিট শেষ হতে হতে..
এই উপমহাদেশে আরো কিছু বেজন্মার, জন্মের বীজ বপন হয়ে যায় ।
মহান রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রিয় কোষাগারের পশ্চাদটি মেরে নেতিয়ে পরেন, বিষধর নেতার কর্পোরেট শ্যালক ।
মাথামুন্ডুহীন অবোধ্য শব্দের সঙ্গে জন জুড়ে দিয়ে এবং পরে দরদী শব্দটির অশ্লীল সংযোজন ঘটিয়ে, তৃপ্তির উদগার তোলে, আমলা তন্ত্রের কোন শ্বেতবরাহনন্দন ।

শৌচালয়ের আগে জন শব্দটি বসিয়ে, মহান শাসকের বৈদগ্ধ, এবং জনগণের ঔকাত বুঝিয়ে দেওয়া হয় ।




৩।।       নুন-জল ।।
            ••••••••••


পড়িনা কেন জানো ?
পড়া যদি লেখায় চলে আসে ।
পুরাণ আর ইতিহাস, সেতো আমারই অতীত ।
হয়তো আমাকে ছুঁয়ে আছে । 
নতুবা ছুঁয়ে আছি চরাচর ।
মা ছিলেন মায়ের মতো । 
আয়নার সামনে দাঁড়াতেন, সেজে উঠতো
ব্রহ্মান্ড ।
ভগবান কাহিনীতে কথা বলেন, নয়তো করোনায় । 
পিপিই'র ভেতর শুধু নুন-জল বহে যায় ।




৪।।     পার্থ ।।
           •••••


মৃত কর্ণ কৌরব ছিলেন না ।
জীবিত কর্ণও কৌরব ছিলেন না ।
কর্ণ ছিলেন নীল অভিমান ।

রথের চাকা ভেঙে গেলে , হেসে ছিলেন
মেঘপুরুষ, চরাচর নতজানু, মুহুর্মুহু শঙ্খনাদ
বৃষ্ণি সিংহ-বাসুদেব, গীতা অমৃত, আপনি কপট ।

দ্রোহকাল পেরিয়ে এসে, দেখি শুধু মৃত শঙ্খ,
স্তুপিকৃত মলিন কঙ্কাল ।

হাজার পার্থ মৃত, সারথী অমর ।




৫।।     আততায়ী ।।
           ••••••••••


সবাই সশস্ত্র সেদিন এবং সন্ত্রস্ত !

কুম্ভিলা নগরের দোরে দোরে নীল আর হলুদ ভয় আড়ি পেতে ছিল, দেওয়ালের চোখে
কুটিল সন্দেহ, বাতাস বহে চলছিল, মানুষের কান এড়িয়ে, 
সবাই সতর্ক সেদিন এবং সন্দিহান ।

একটি জনপদ হেঁটে চলেছিল, যেন সারিবদ্ধ পিপিলিকা, শৃঙ্খলাপরায়ন । 

জনপদটি ধ্বংসের আগে যে সমবেত গান গেয়েছিল, 
সেই গীতিকার কে খুঁজে চলেছে, আর একটি
ধ্বংসম্মুখ জনপদ ।




অলংকরণ - ইন্দ্রানী পন্ডা

""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""”"""”""""""""""""""""""""""""

No comments:

Post a Comment