১।। ∆ বশীকরণ ∆
মন্ত্রপূত জবা , আলতা-সিঁদুর -আতপচালের মণ্ডা হলুদ মাখা সর্ষের মধ্যে
ইচ্ছা ঠাকুরানীকে বধ করে তাঁর মন্ত্রগুপ্তি ওম স্বাহা , ওম স্বাহা
হে নারী- মাংস- মদ ও লোভ লালা,হে দেবতা, ক্ষমতা দম্ভ
সর্ব গ্রহ , রিপু ও ঋতু , কেতু ও বৃহস্পতি দেব লোভী মন ক্ষমতালোভী হলে
কাকের পালকে এসে ধরা দাও
হে কালোবিদ্যা জাদুকরি শব্দ
ছুটে যা , তাঁকে আমি মন্ত্রে তন্ত্রে পেতে চাই
শুধুই খিদের গ্রাসে
২।। ∆ জলাতঙ্ক ∆
তিনপ্রহরের বিলের ধারে দেখেছিলাম
সাপ গিলে খাচ্ছে সাপের সন্তান
গিলে খাচ্ছে সন্তানের মৃতনাভী শোক
ভুলে যাচ্ছে মা সাপের ডিমের জগত , ভুলে যাচ্ছে
প্রসববেদনা রক্তাক্ত জরায়ুর জল
এ কেমন জলাশয় ! যেখানে একে অপরের শরীর
চাটতে চাটতে নখাঘাতে দাঁতের রোমহর্ষে
নীলাভ স্তনে ধর্মযাজকের ক্রুসেড সেনার স্বাক্ষর
সেখানে জন্মানো শিশুরা বিশুদ্ধ আর্যরক্ত কিনা পরীক্ষা
দিতে দিতে বুলেটের সামনে পুরো প্যালেস্টাইন
আমাদের জন্ম হয়েছিল লিঙ্গের উদ্বেগে একথা
বিশ্বাস করতে বাধ্য হলে পিতার মধ্যে গৌরাঙ্গ নেই
মায়ের দু পায়ের ফাঁকে ধর্মের বীজ বুনে দিলেন যে পিতা
তার কুলীনতা আর ধর্ম ভালোবাসার অন্তরালে
যারা রয়েছেন তাদের যদি শ্রেণীশত্রু বানিয়ে দাও
তাহলে আমিও ভাই এর বুকে ভাই এর ছুরি
কোন লুব্রিকেন্ট সন্ধ্যায় নারীর যোনিতে পুরুষ লিঙ্গ
চাপিয়ে দেওয়া এই সময়টাকে মান্যতা দিয়ে বলব
হত্যা তুমি জায়েজ
গির্জার ঘণ্টা নাড়িয়ে রক্তের দিকে হেঁটে যাওয়া অন্ধকার
তোমাকে শাবাশ
মসজিদের দিকে নামাজী মাথা রেখে তলোয়ারে শান দেওয়া
মস্তিষ্ক তোমাকে শাবাশ
মন্দিরের আরতি প্রদীপের শিখায় হাত ছুঁইয়ে গানফাইটের
চেতনা পুরুষ , তোমাকে শাবাশ
ক্রমে ক্রমে দুষ্প্রাপ্য প্রজাতিরে দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি
সন্তান গিলে ঢেকুর তুলে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকি......
৩।। ∆ জতুগৃহ ∆
যখন তোমাকে ছুঁতে চাইলাম
ওমনি ছুড়ে দিলে পুরুষের মেধাবী আগুন
শহরের সহস্রাব্দ কাঠ নিয়ে যেই না তোমাকে আবার ছুঁতে চাইলাম
ওমনি ভস্মে পরিনত হোল শরীরের জতুগৃহ !
যেবার তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ঘুমিয়ে গেল বংশানুক্রমিক নদী
ওমনি তুমি শবসাধনায় জিতে নিলে স্বর্গমর্তপাতাল
আর কেমন অবলীলায় ঈশ্বর হয়ে উঠলে
আমি ও যগডুমুরের ভূমিকায় , আহূতি নাও দেব আমার !
ফিরে এসো পুরুষ ----
ডাকের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে সাত- সাতটা মহাসমুদ্র
তুমি জন্মান্তরবাদের অমরত্বের দিকে রেখে যাচ্ছ যোনিকঙ্কাল
আমি তখন ইহজন্মের খাল কেটে কুমির ডাকছি
৪।। ∆ হালুম ∆
তোর, গোলাপি আঁচল খসে গেলে বিধ্বংসী ঝড় ওঠে
পুরুষদ্বীপে , আসমানি দেবতা দোলে ঝড়ের দোলনায়
তোর আঁচল খসে গেলে কদম্বতরুতলে আড়বাঁশিতে
ভিখারি মাধব , উড়ে যায় শখের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
ওই,আঁচল খসে গেলে রাজা দেখে প্রজার ঘরে অফুরন্ত ধন ,
গুপ্তঘাতক অস্ত্র নামিয়ে শাক্ত বনে যায়
সনাতন আঁচল খসে গেলেই কে আপন কে পর!
দাদার হাতে বাবার চোখে আঁচলখোলা রাধিকার যৌবন ।
তোর,আঁচল খসে গেলে শিরায় শিরায় রাসায়নিক
যুদ্ধ প্রস্তাব , ঘাপটি মেরে প্রধানমন্ত্রী হালুমের প্রত্যাশায়
আঁচল খসে গেলে কে সীতা কেই বা দ্রোপদী!
লোলুপজঙ্গললে মাংসাশী সবাই , যতই তোর চোখে থাকুক
ধুলোবালির বৃন্দাবন ।
৫।। ∆ ক্যানভাস ∆
পুটুস,আকাশ দেখে
আমি পুটসের বন্যসোহাগ দেখি
শ্যামলা গড়নে ভাঁজ-পড়া কোমরে অসংলগ্ন কাপড় খুঁজি
বুনোশূকরের মাংসের পোড়া ধোঁয়া,মহুয়ার যুবতীপূর্ণিমায়
পুটুস মাদিবাঘ হয়ে ওঠে , হিংস্র দাঁতে ছিঁড়ে খায় হাড়-মাংস
এইসব দেখি আর লুকোনো শিকারিদের মতো
ক্যানভাসে টুকে রাখি হরিণের বিশ্বাসী দৃষ্টি
পুটুসের মাটিবুকে নিটোল ডুমুরের-ফল আছে ,
আমি পুটুসের আদিমজঙ্গলের ঘাসপালা দেখি , চিবোই
চিবোনোর ফলসরূপ রস থেকে তৈরি হয় রং
রসের মহিমায় আমার ক্যানভাসে জেগে ওঠে এক প্রত্ননারী
জ্যোৎস্নাবনে সে এক অদ্বিতীয়া জ্যোৎস্না , সামান্য নখের আঁচড়ে
ভেঙে যায় সে
এগজিবেশন সৌন্দর্যের সমস্ত সার্চলাইটটুকু কেড়ে নেয় পুটুসমণি
আমি দর্শকের মুগ্ধতা ও নিলামের দর ধরে থাকি
কালো রং থেকে আমার পুটুসরানি কর্পোরেট সভ্যতার দিকে
হাঁটতে থাকে
পুটুসকে নিলামে তুলি শিল্পের প্রয়োজনে
পুটুসের কলে জল নেই , বিড়িপাতা পড়ে আছে দাওয়ায়
অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
চাবুক লেখা। শিহরিত হলাম প্রথম কবিতা থেকেই। ভাবনা গুলো দারুণ। ইহজন্মের খাল কেটে কুমির আনা, সন্তান গিলে ঢেঁকুর তোলা। মুগ্ধ করল। কবিকে শ্রদ্ধা।
ReplyDeleteধন্যবাদ , মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো
ReplyDeleteঅন্য স্তরের লেখা, সাবলীল অথচ সমর্পিত, বিষাদবৈভবে সম্পদশালী এক অতুলনীয় সঞ্চয়। চিরজীবী হোক এই লেখনী।
ReplyDeleteধন্যবাদ , মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো
Deleteধন্যবাদ , মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো
Delete