কবি শৌভিক বণিক এর কবিতা-
১।। ∆ অরূপ-রতন ∆
অরূপরতন
এইসব স্বপ্ন ছেড়া ঘুম পেরিয়েই ছোট্ট একটা ইস্টিশান।
ভাঙা বাঁশের সাঁকোর উপর বাতাসের সিম্ফোনি
ফিসফিস বলে আমাকে উদভ্রান্ত করে
শাপলা-শালুক দেখে, অসময়ে ঝরে পড়ে অসংখ্য মুকুল।
সাঁকোটির ছায়ার বসে মূহূর্ত কথা ভাবি
সময়ের অক্লান্ত স্রোত
নদীর ওপারে ঘন বন। যতদূর সূর্যের ইচ্ছার আলো, দেখি গাছেদের সারি বদ্ধ গান
মর্মর ধ্বনি উঠে যায়, ঝরাপাতা গল্প লিখে রাখে।
সন্ধ্যারাগের ভেতর সমবেত পাখিদের ধ্বনি
সাই শিষ্যের একতারা বাজায় মনকেমনের সুর
পুরাতন বিষণ্নতা সারিয়ে তোলে ধ্রুবপদ
আমাকে পাগল ভাবে চরাচর
এমন রূপের কাছে তো নতজানু বসতে ইচ্ছে হয়
পাগল না হলে কি অরূপরতনের খোঁজ পাওয়া যায়।
২।। ∆ ভ্রামণিক ∆
না ফেরার
কোথাও বিরতি নেই
অগোছালো জলে ফিরে আসে নদী
পাহাড়ি ঢাল ভেঙে তটরেখা নামে
আমিও নদীর মতো ভ্রমণ পিয়াসী
হিমশৈল ঘৃণা অদৃশ্য চুম্বন
পিছনেই ফেলে রাখি
কংক্রিটের চার দেয়াল তবুও
বিশুদ্ধ হেঁটে চলা ঘুমের ভেতর
৩।। ∆ ঋতুর রং ∆
যাপন কিনতে চেয়ে যে
শেষে বেছে নিলে মৃত্যুকে
তার প্রতিবাদের ফাঁক খুলছে বিরোধী শিবির
হে প্রিয় মহাকাল
অজুহাত খুঁজছ স্বপ্ন দেখার
ইতিহাসে ঢুকে পড়ছে রোমান্টিক প্রেম
পর্বতের গন্ধ আর পাহাড়ের শিশির
তবু
চুপকথার আড়ালে
ঋতুর রং আঁকছে আকাশ...
৪।। ∆ বিরহ-বাজনা ∆
অনবসর সময় নিঃসঙ্গতাপ্রিয় খুঁজছে
পরিত্রাণের রাস্তা
রাতের পর রাত নিকষ অন্ধকার যদিও
লিখে রাখছে নদী
তবু
পাখির শিসে শান দেওয়া হরবোলা
জাগিয়ে দিচ্ছে বিষাদ
কদম্ব-কৃষ্ণ বিহিন কলিকাল
জীর্ণ স্টিটলাইট সাক্ষী রেখে পোশাক ছাড়ছে
শ্রীরাধিকা
করুণ সুর আর
সানাইবাদকের ঠোঁটে জেগে উঠছে শরীর...
৫।। ∆ সাপ ∆
বৃত্তান্তে কোন জীবন কথা নেই
সংলাহীন সময় গড়িয়ে চলে নিরুতাপ
যদিও সে উষ্ণতার ভাষ্য শিখেছে বহুকাল
সংশয়ের পথে আপোষ শিখে নিয়েছে মন
কুয়াশাবলয় ঢেকে দেয় ধূলিঝড়
আর
জলের ঘনত্ব বাড়ানো লবন দেখে নেয়
দু-চোখে এখন মৃত্যু-ছায়া
তবু সুযোগ পেলে ভিতরের সাপটা ফোস করে উঠে
যে এখনো কামড়াতে শেখেনি...
অলংকরণ - অমৃতা নায়ক
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment