Tuesday 21 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৮

কবি গৌতম মাহাতো’র কবিতা (সংগ্রহ)-





১।।    ∆ চার্বাক (১) ∆



নৈশভােজের পর উঠে দাঁড়ালেন যিশু মােমের আলাে ধুয়ে দিচ্ছিল গৃহদের পাপ মুখর হয়ে ওঠা শ্বাস নাড়িয়ে দিল নিশ্চল শিখা। বৃষ্টিরা কোল পেতে বসেছে তখন, আসলে আমরা আড়াল চেয়েছি কিয়ৎকাল । 

ফিরে তাকালেন তিনি একবার 

— মুদ্রায় তার স্মিত হাসি 
         কারণ তিনি জানতেন—তিনি ফিরবেন না আর।

 বললেন— 'তােমাদের দেওয়ার মতাে কিছুই তো নেই শুধু এই ক্রুশটুকু ছাড়া।'





 ২।।    ∆ চার্বাক (২) ∆



তিনি আমাদের গুণের জোব্বা পরিয়ে দিলেন একে একে অথচ নিজে নির্গুণ। ছায়ার ক্লেশের ইন্ধনে তখনও আগুন, নাকে সরাবি বাতাস, শীতল শয্যা          পেতে  দিল নির্মিত রাত
 জোব্বার বােতাম আঁটতে আঁটতে বললাম       “আমি যাবাে” 
চশমার কাচ মুছে পরিয়ে দিল আবার। দেখি – আমি, তিনি, তারা 
  সব আছে 
          শুধু 
              আলাের দেখা নেই ফরাসে ছড়িয়ে পড়লাে জহরতি হাসি আর ফাঁক

      মেলে ধরা দৃষ্টি এসে বসলাে তার জলছোঁয়া জোব্বার গায়ে়।





৩।।  ∆ কালকুঠরির চাবি(১৩) ∆




পাপোষের তাগিদটা অনুভব করি প্রতিবার বিছানায় ওঠার আগে।আবার উঠে গেলে বেমালুম ডুবে যাই নিরালা আলোয়।ব্রিফকেশ থেকে উঁকি নেয় আমাদের আধফালি মির্জা গলিব।তুমি চাল চুলোয় চাপিয়ে নিচ্ছো সেদ্ধ সাঁঝের কথা মেপে।ম্যাহফিল ম্যাহফিল হারিয়ে ওড়ে। জলময়ূর।ডানা মুড়ে বসার মধ্যে তার চেনা সম্ভ্রম-ওরে, কে কোথায় আছিস চিনে রাখ দ্রোহদের মুখ।এরা কাছে আসে।হেলানো হাসি মিঠি টিকা দ্যায়।জলজ আলপনা।তবু দেখ মুহূর্তে ভুলে যাই ভুলের বানান।এই তো ঠিক হল!!ধর,ঠিক হল আমরা আমাদের মত করে থাকি।তাতে কার কি-ই বা এসে গ্যালো!! তবু ঠিক দ্যাখো বিছানায় যাওয়ার আগেই পাপোষের তাগিদ খুঁজে পাই।হয়তো বিগত মনখারাপ আজও পাপোষেই লেগে আছে।লেগে আছে
বাবার পায়ের স্পর্শ।

মা পাপোষ ব্যবহার করে না।খুঁটে বেঁধে রাখা চাবির চেয়ে ঢের কম চিনতো তাকে।ওই যে পান্থপাদপ, তাকে আমি চিনি বিগত কয়েক জন্ম হতে,তার নিহত ছায়ার মত ক্ষয়ে গ্যাছে স্বর্নছত্র যার।অথচ কুসুমের আতপ এসে তার চুমে যায় কপাল চিবুক।অথচ এই ম্যাহমানখানা ঠোঁটে তুলে দিব্য জিরিয়ে নিত লহমাখানেক।নিয়েও ছিল।কিন্তু সে সময়টুকু খোয়া গ্যালো নিত্যিপুজোয়.. আর ইদানিং একাদশী।




৪।।  ∆ কালকুঠরির চাবি(১১)‌ ∆



চেয়েছিলুম বারিশ হোক ধূঁয়াধার।সেও।চঞ্চল শহরের দেহ নিস্তেজ হয়ে এলো ক্রমশ,পালিশ করা আলো তোমার ও পল্লবে এসে থমকালো।বললে তোমার সফরের কথা বল মুসাফির!তোমার তাঁবুর গল্প বল!আমি তখন ভাবছিলুম...
নাহ,কিছুই ভাবছিলুম না।আমাদের মাঝখানে রিনিকি ঝিনিকি হাওয়াদের বাড়ি আর তাদের অনায়াস যাতায়াত।
  তারপর আর তাঁবুর গল্প বলা হয়নি।তবু আমরা চেয়ে ছিলুম বারিশ হোক ধূঁয়াধার।রাস্তার কোনও বেহেড মাতাল গাইছিল-"সজনী তেরে নয়না মুঝে আজ সাঁঝ সবেরে পুকারে তেরী ওর..তেরী ওর..তেরী ওর..
বলতে চেয়েছিলুম তোর চোখ গাভীর মত গভীর।আর স্পর্শকোটাল! সেতো জন্মান্তরের আরোগ্য শিশির
তুমি বলে উঠলে স মু দ্র।আমি তোমার দিকেই চেয়ে আছি অপলক- ভেসে যাচ্ছে আমার নিরলস ব্যাধি,ভেসে যাচ্ছে তোমার আরোগ্য,ছড়িয়ে পড়ছে আমার নির্বাণ আর ছড়িয়ে পড়ছে তোমার ঝিনুক ঝিনুক কথারা।জানু পেতে বসেছি ক্ষনিক
খুঁটে খুঁটে কুড়িয়ে নিচ্ছি সে সব যত্ন শিশির।
    জো রাতভর দরওয়াজা খটখটাতা রাহা
ও তু নেহী,
কোই ভটকা হুয়া পবন থা শায়দ
যদিও আমরা দুজনেই চেয়েছিলুম আজ বারিশ হোক ধূঁয়াধার।





৫।।   ∆ কালকুঠুরির চাবি(১৯) ∆




হাড়ের সেতু পেরিয়ে ওপারে রঙিন দোতারা শহর।প্রায় শোনা যাচ্ছে ঘুণের গান।ঘিসাপিটা মেঘ এসে বলে গ্যালো কাল আজানের পর নৈঋত কোন জুড়ে বাতায়ন খোলা হবে।আমার নিহত রুহ-এর বাইরে হ্যালোজেন পোষ্ট শরীরে ক্রমাগত আলো ফেলতে ফেলতে শৈশব কুড়িয়ে নিচ্ছে যেভাবে,মনে হয় নিঃসঙ্গ বীজের শাঁস তোর ধারালো নাখুনে।কত বুদবুদ ওঠে, কত মরে যায় আবদ্ধ বাথটবে।কে রাখে বল কার খোঁজ!! কে নেয় প্রাচীন শরীর।দুহাতে উঠে আসা কাঠ যদি সাম্পান হয়ে যেতে পারে তবে ওপারে শহরের সাথে যোগাযোগ সাবলীল হয়।
   জানো!! দাদুর একটি ইজিপ্সিও কৌট ছিল।সেটা সে পেয়েছিল কোন এক বাউলে কাছে।দাদু বলত
            --ঘুম আছে। আছে নিরাময় সাঁঝ।দু চার কলি গানও বেরোতে পারে তবে সে গান নিহত ছায়াদের গান।
   ওই যে দূরে রোদ্দুর বেয়ে চলে যাচ্ছে সুরঙ্গম সাম্পান..
শহুরে মেয়েটির কাজে ভুল হয়।আমি আগাপাশতলা মেঠোমাঠা স্মৃতি তুলে এনে পাতে রেখে বসি,আহা গো জলাহার,আহা গো জলজ আহার,তোমাদের ভুখ মেটে আশ মেটে কই!! মাথা জুড়ে খাবি খায় কত কত আলো।যার স্মৃতি বলে কিছু নেই সে আর যাই হোক তার ডানা হবে না কোনওদিন।
   তাই হাড়ের সেতু পেরিয়েই ওপারে যেতে হবে রঙিন দোতার শহর।আর শোনা যাবে ঘুণের ঘুঙুর...



অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment