Friday 21 August 2020
কবিতা
কবিতা
কবিতা
১।। ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/১ ∆
কতটা কাছে এলে তুমি ভিজবে সন্ধ্যার সমুদ্রে ? ক্যামেরার লেন্স বন্দী অস্তগামী সূর্য ।সমুদ্র সৈকতে বালির লোভনীয় আদরে ভেজা শাড়ি ।উপচে পড়া তোমার তরুণী যৌবন ।নিষ্প্রদীপ অন্ধকার মেখে সাজিয়ে রেখেছো পশ্চিমের আলো ।আনন্দ কতটা গভীর হলে তুমি ভাগ করে নিতে পারো পলাশ মাখা ডুবন্ত বিকেল ? সমুদ্রের আদর কক্ষে লাভ সাইন এঁকে তাৎক্ষণিক ভালোবাসা ছুড়ে দিও গভীর সমুদ্র বক্ষে ।সন্ধ্যা ,রাত ,সকাল নতুন আমেজে নতুন রূপে সঙ্গমের মহরত খুঁজে আনো সমুদ্রের আলাপ চারিতায় ।
২।। ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথপোকথন /২ ∆
সমুদ্রের বিচে বসে সেল ফোনে ব্যস্ত তুমি ।আমি ব্যস্ত ঢেউ মাখতে । ব্যস্ততা কতটা নির্জন হলে আমাদের পরিচয় হবে ।কিছুক্ষণ বাদেই অন্ধকার গ্রাস করে ফেলবে সমুদ্র ।সন সন শব্দলহরী উন্মাদের মতো ছুটে আসবে ঢেউ হয়ে ।আমাদের ব্যস্ত মুহুর্তেরা সূর্যের সাথে ডুবে যাবে সমুদ্রের গভীরে ।জাহাজের ভাঙা মাস্তুল ভেজা ইচ্ছেরা পিয়ানোর সুর হয়ে ভেসে উঠবে নির্জন সমুদ্রের অতলান্ত গভীরে ।
৩।। ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/৩ ∆
দূর দেশ থেকে ভেসে আসা নীল ঢেউ সমুদ্রের কিনারে আলতো ভাবে চুমু খায় । প্রতিটি ঢেউয়ের শিরা উপশিরায় জড়িয়ে আছে তোমার আনন্দ উচ্ছ্বাস। সৈকতে লেখা আদর সংলাপ ঢেউ বন্দি করে নিয়ে যায় নির্জন গভীরতায় ।আমাদের লেখা নামের প্রথম অক্ষর ভেসে যাই নীল জলের নীলিমায় । কতটা ভালোবাসা দিলে সমুদ্র আমাকে ঢেউ ফিরিয়ে দেবে ...
আমি নিজেকেই দিতে পারি তার বিনিময়ে ।
৪।। ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন / ৪ ∆
কতটা সন্ধ্যা নামলে তুমি সমুদ্রের গভীরে নিয়ে যাবে ? কতটা ঢেউ উঁচু হলে তুমি নিজেকে ভাসিয়ে দেবে ?সমুদ্রের কিনারে পড়ে থাকা ঝিনুক আমাদের অভিমান দেখে মুচকি হাসে ।প্রবালের রক্তিম রঙে রাঙানো ঠোঁট ,মুক্তের আভায় উদ্ভাসিত হাসি ।ডুবে যাওয়া সূর্যের মৃদু আলো তোমার প্রকাশিত নাভি প্রদেশের প্রেমে নেশাতুর ।সন্ধ্যা যত গভীরে মিশে যাবে আমাদের চেনা স্পর্শ ততোটাই গভীর হয়ে মিশে যাবে আনন্দ উচ্ছলতায় ।কোনো পরিজায়ী পাখিকে সাক্ষী রেখে আমাদের অপূর্ণতা ভরিয়ে দেবো সন্ধ্যা ও সমুদ্রের মিলন অবসরে ।
৫।। ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/৫ ∆
পথ ভুল করে তোমার সাথে রাতের রিক্ততা মেখে নি।তোমার ভেজা অন্তর্বাস সমুদ্রের নিশ্বাসে শুকোতে চায়।চাঁদের আলোয় নখের বালি সরিয়ে নেলপলিশ আঁকতে মশগুল ।তারাদের কাতর আহ্বানে চোখে কাজল এঁকে জল মাখতে ভালোবাসো ।তোমার মেহেন্দি কাটা হাতে ঝিনুকের সৌন্দর্য প্রতিটি যুবকের হার্ট বিট বেড়ে ওঠার কারণ ।তোমার ভালোলাগা তোমার নিজস্ব সম্পদ,অভিমান তোমার একান্ত আপন ।তোমার রক্তিম হাতের তালুতে বন্দি অনাবৃত উন্মত্ত সমুদ্র ।
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে এবার খানিক থেমে
যেই দেখছি পিছন ফিরে : পথ গিয়েছে নেমে !
খাদের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আরেকটু যাই যদি
ঝিলমিলিয়ে উঠছে জেগে কবেকার এক নদী ।
ঘাটের কাছে থমকে আছে সারবাঁধা সব নৌকো
আরশিতে দাগ কাটছে সময় গোল-তেকোনা-চৌকো,
এই ভাসছে, ডুবছে আবার কাটাকুটির খেলায়
অজস্র চুমকিতে আকাশ সেজেছে রাত-বেলায়।
শোনাচ্ছে কি শোলককথা নীরবতার ভাষায় ?
অতীত, আমায় অতীত টানে মুখর ভালোবাসায় !
যেন আমি দাঁড়িয়ে আছি সময় ছুটছে দ্রুত --
ছুটন্ত সব ছবির সারি --- অদেখা অশ্রুত ।
ধানের ক্ষেতে লুটিয়ে আছে শেষবিকেলের রোদ
বাতাসে কি বাজছে কোথাও বিষণ্ণ সরোদ ?
কেউ কি আছে দূরে কাছে, কেউ কি আছে পাশে
তাকিয়ে ফিরি তোমার দিকেই নিছকই অভ্যাসে !
আমাদের যারা বলেছিল সেই কথাটি
তারা কেন আজ লুকিয়ে বেড়ায় আড়ালে ?
আত্মগোপনে তৎপর কেন তারা সব
তীক্ষ্ণ সময় মুখোমুখি এসে দাঁড়ালে ?
সে কথায় তবে ভুল ছিল কোনো, বিভ্রম !
আবেগতাড়িত স্বপ্ন ও রঙে ছড়ানো ?
ছিল কি শুধুই কথা ও কথার বেসাতি
মিথ্যে এবং অলীক মোড়কে জড়ানো ?
আসলে তা নয়, বলেছিল যারা কথাটি
ছিল না কথায় বিশ্বাস কণামাত্র ;
মুখোমুখি এই সময় দাঁড়ালে যেন-বা
ঠোঁটের সমীপে বিষভরা এক পাত্র !
দিন গেলে দিন কথা আর কাজে ফাঁকটা
বেড়ে যায় রোজ দিন ও রাতের প্রান্তে ;
যারা চলে গেল, এই নিদারুণ প্রহরে
পারবে কি আর ফিরিয়ে তাদের আনতে ?
২.
শেষবিকেলের সূর্য গা ধুচ্ছে অজয়ের জলে
রাঙা আকাশকে মুখরিত করে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল
তারা ফিরে যেতে চায় খড়কুটোর সংসারে ...
জয়দেবের মেলায় তোমার সঙ্গে হঠাৎ-দেখা
ভিড় থেকে, ভিড়ের ধূলোর অস্পষ্টতা ভেঙে
কী ভাবে যেন আমরা মুখোমুখি, হঠাৎ !
মাঝখানে অনেকগুলো দিন
তুমি বলে উঠলে, 'ইশ্, কতদিন পর ...'
অস্ফুটে আমিও !
আমাদের দেখা হল মুখোমুখি, আচম্বিতে
কথা হল, যেরকম কথা হয় দুজনের মধ্যে
কলেজ ক্যান্টিন থেকে সুবলের ঢাকাকেবিন হয়ে
কথারা ফিরে এল মোদি রাহুল আর নীল-সাদায়
আখরায় ফিরে এসে শেষ প্রহরে
অক্ষরে সাজাতে চাই তোমার অবিরল কথাদের
কথারা হারিয়ে যায় স্মৃতির আবছা কুয়াশায় ...
৩.
এই কথাটাই সেই কথা কি, বলতে চেয়েছিলাম !
সম্মুখে এক ধূধূ প্রান্তর
পথ গিয়েছে আলপথটি ধরে
ওই দিকে এক আকাশপ্রান্ত ছুঁয়েছে ধানক্ষেত
ওদিকেই কি গিয়েছিলাম তোমার হাতটি ধরে ?
তোমার হাতে ভরা ছিল আশ্রয়েরই ছায়া
জিরিয়ে নেবো,জুড়িয়ে যাবে সারাদিনের ক্লান্তি
টলটলে জল একটি দিঘি দিগন্তের ও পারে
কেন আমায় এমন ডাকে ডুবদেওয়া এক নেশায়
প্রচ্ছদে আজ লুকিয়ে আছে না-বলা সব কথা
বাহির ভুবন মাতোয়ারা উৎসবে উৎসবে ...
ভিতর ঘরে ঘুমিয়ে আছে সেই কথাটাই তবে ?
৪.
তুমি যখন বলো কথাগুলি, মনে হয়, ঠিক।
সে যখন অন্যভাবে,
তা যে কথার কথা নয়, বুঝতে পারি।
এ দু'য়ের দোলায় আমি নিরালম্ব ভাসতে থাকি ...
অথচ কতো কী-ই তো বলা যেতে পারে
কতো রকমভাবে :
তুমি জানো, সেও বিলক্ষণ জানে।
বিপর্যস্ত আমি শুধু খুঁজে ফিরি এইসব কথাদের মানে।