Friday, 21 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি সন্দীপন দাস’র কবিতা-




১।।   ∆ সূর্যাস্তের পরে ∆



তোমার শরীর জুড়ে সূর্যাস্ত, আঁচলে পাখি
যে পাখি মৃত্যু চেয়ে ফিরে পেয়েছে প্রজন্মের গান
যে গান খোলা জানলা, সন্ধেমণি ফুলের ব্যথা...
বেলাশেষে ঘরে ফিরতে চাওয়া আমরা হারিয়ে ফেলেছি
ফেরার পথ, হারিয়ে ফেলেছি প্রেম,পরজন্ম কিংবা
ঠোঁটে লেগে থাকা হাজারো প্রশ্ন আর তার উত্তর,
এ কবিতাও...

তোমার সারা শরীরে সূর্যাস্ত, ধুলো, আঁচলে পাখি...





২।।   ∆ ঐশ্বরিক ∆




যেভাবে শব্দেরা এসেছিল
সেভাবে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো এ সকালের ভোর
এখন সূর্যাস্ত হচ্ছে তোমার সারা শরীরে
পাশে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ‌‌‌,মেঘসন্ধে,প্রতীয়মান অতীত...
বৃষ্টির মধ্যে যে তুমি-তুমি গন্ধটা আছে ,তা আমাকে 
সারাজীবন ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ালো অক্ষরময়
বর্ণমালার কাছে তাই নিঃশব্দে রেখে যাই পাখির মনকেমন, আলোর অভিমান,এ কবিতা...

যেভাবে মাটির প্রদীপ জ্বলেছিল
সেভাবে তুমি আবারও ফিরিয়ে দিও এই ঈশ্বরজন্ম...





৩।।   ∆ মূকাভিনয় ∆



এ ভোর অভিমানী
তোমার অনেক ভাষা।আমি চেয়েও ফিরে পাইনি
সেই সব শব্দদের যারা বারবার নিজেদের ঈশ্বর বলে দাবি করত...
একা মেঘ তখন শান্ত নদীতে ভেসে যায়...
ঘরফিরতি পাখিদের ডানা জুড়ে তোমার সাজিয়ে দেওয়া
অভিমান,আনমনা সন্ধে
পলকে আমিও আলো সাজাতে গিয়ে দেখি মুখ লুকিয়ে
একা একা কাঁদছে চেনা ডাকনামগুলো
বন্ধুরাও ছোঁয়াচে কান্না ফেলে যায় আড়ালে...

এ সকাল বড় মনখারাপের
তোমার অনেক কথা।আমি নীরবে কান্না মুছেও
ফিরে পাইনি অভিমানের বাংলাভাষা...




৪।।  ∆ থার্ড আই ∆



বদলে যাচ্ছে প্রতিটি বাড়ি
বদলে যাচ্ছে একেকটা ঠিকানা
আড়ালে পাল্টে যাচ্ছে চেনা সব মুখও

বদল হচ্ছে আমার আর তোমার সম্পর্কও শহর
প্রতিনিয়ত রং বদলাচ্ছে তোমার রাজপথের সব শিরা-উপশিরা
আলো-আঁধারি সব অলিগলিও...

বদলে যাচ্ছে একদা আদিদেবতার কন্ঠে ধারণ করা বিষও
প্রতিটি সন্ধের শেষে তার রং গাঢ় থেকে গাঢ়...
আরো গাঢ় হয়ে উঠছে...





৫।।  ∆ অধিপ্রজ্ঞা ∆



পিশাচ আর ঈশ্বরের যুদ্ধে আমি সেই কবে জিতে গ্যাছি
তবু প্রতি সন্ধেয় শান্ত নদীর কাছে তাই
চুপটি করে নামতে থাকি অনেক অনেক অতল...
জলের ওঠাপড়ার শব্দ আজ আর আমায় ভাবায় না
চুপটি করে ঘুমিয়ে থাকে চাঁদ,ঝাঁঝিপাতা,শ্যাওলার দল...
এভাবেই আমি শিখে গ্যাছি জলের রং চিনে নিতে...
নামি, আরো নামি... তলিয়ে যেতে থাকে এল-নিনো,
কাঁপতে থাকা ছায়ার শরীর,সব লুকানো তরবারি...

এখন ভোর...
কবি ছদ্মবেশী কবিতাদানব এখন আমার পায়ের কাছে
নতজানু হয়ে বসে আছে
জল ছুঁয়ে কবিজন্ম থেকে মুক্তিলাভের আশায়...




ক্যামেরা বন্দি- অর্ণব জানা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি রুদ্র মোস্তফা’র কবিতা-




১।।   ∆ বিপন্ন প্রেমের গেরস্থালি ∆



তোমার চোখের দিকে তাকাতে ভয় হয়;
অনেক জলে ধুয়ে আমার স্বপ্নগুলো
দৃষ্টির রশিতে শুকাতে দিয়েছো:
চোখে চোখ রেখে স্বপ্নগুলো ফিরিয়ে নিতে ভয় হয়। 
অনাহূত অপরাধ মুছে দেয় ভবিষ্যতের সীমারেখা;
বেদনার গেরস্থালি অতীত 
বাসি গল্পের গন্ধ ছড়ায় সম্পর্কের বর্তমান ছায়ায়।
তোমার চোখের দিকে তাকাতে ভয় হয় :
দৃষ্টির অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে
অসমাপ্ত গল্পের অবশিষ্ট বর্ণমালা।





২।।  ∆ কক্ষ পথের দাবি ∆



কণ্ঠজুড়ে শ্যাওলা কাদা পিছলে পড়া ভুল উচ্চারণ,
বুক জুড়ে সৌভিক শৈলবেড়ি 
থমকে যাওয়া শব্দের আস্তরণ;
তবু তোমার পাশে দাঁড়াই,
নৈবিদ্দ ভালোবাসা গামারি ফলের মতো ঝরে
অনুচ্চারিত শব্দের চাপে ।
জানো তুমি-চলছে 
ভেতর-বাহিরে অলিখিত জরুরী বিধান,
স্বরবর্ণ-ব্যজ্ঞনবর্ণের মুছে গেছে সংবিধান;
কোন বন্দরেই আজ আর নেই তাদের 
প্রকাশ্য মিছিল: 
অস্তিত্ব মুছে কণ্ঠের খুব কাছে 
আজ তারা ফসিল;
তবু তুমি চাও কণ্ঠনালী ছিঁড়ে 
বেরিয়ে আসুক অন্তত চারটি বর্ণ
মেহগনি ফলের মতো ছড়িয়ে পড়ুক
দ্রোহ-প্রেম-পুনর্জাগরণে
ভা-লো-বা-সি ।






৩।।    ∆ কোন কালেই ঘর ছিলে না ∆

                                                                                                                                                      কোন কালেই ঘর ছিলে না বাসন্তীর ।
রাত জেগে কপাট আগলে কারো জন্য অপেক্ষা ছিলো না ।
বুকের রশিতে শরীর মেলে দিয়ে কেউ কখনো
ঘাম শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে বলে নি ।
অনাহূত ঈর্ষায় কেউ কখনো বলে নি,
‘অকারণে কেন জানালা খুলো,
কেনো ভিজাও চোখের কাজল ?
চুপসে যাওয়া জারুল বনে 
যে আসে ক্ষণে ক্ষণে
তার জন্য কেনো দিন গুনো ?’
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
হাত ভরা কাঁচা মাটির গন্ধে লেপটে দেয়া উঠোনের স্বপ্ন ছিলো না।
রোয়া উঠা রাতে কারো মাথার চুল বিলি কাটতে কাটতে
কখনো জাগে নি মনে সিঁধেল চোরের ভয় ।
বলে নি কেউ, ‘উঠো ভোর বেলা,
কাজ আছে মেলা,
সকাল সকাল যেতে হবে গঞ্জে ।’                                                                                                                  
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
ছিলো ঈশ্বরের লীলাসঙ্গী মা ;
ক্ষুধা ভাঙতে গিয়ে দেহ ভেঙে ভেঙে
সে চূর্ণ হয়ে গেছে জোছনা-জল-রোদে ।
বাসন্তীর মালসা ভরা সাদা ভাতে মিশে থাকে তার গুঁড়ো —
আর শরীর ঘেঁষা পীড়িত চাঁদের উল্লাসে প্রকট হয় পৈতৃক ঋণ ।                                                                       
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
ছিলো তাঁবু ঘেরা এক তাড়িত জীবন ।
ছিলো মাথার উপর উপচে পড়া আকাশ—
আর ছিলো ঈশ্বরের মতো বহুরূপী বাবু ।





৪।।     ∆ খুনি ∆



তুমিও এক দিন দণ্ডিত হবে স্বপ্ন খুনের দায়ে ; 
কিছু স্বপ্ন ঝলসে দিয়েছো,
কিছু স্বপ্নের চেপে ধরেছো টুঁটি, 
থেঁতলে দিয়েছো কিছু স্বপ্ন,
কিছু করেছো গুম।
প্রতিটি স্বপ্নের হাহাকার আগলে নির্বাক হৃদয়।
নিরন্তর যে সূর্য— 
মনের আলো-উত্তাপে যার জেগে উঠে ডুবে যাওয়া;
সেখানে কি কখনো দেখো না স্বপ্ন হত্যার ছায়া?
কখনো কি খুলে দেখেছো সাদা থানে মোড়ানো
মেঘের কফিনে কতোটা পচন ধরেছে স্বপ্নের?
ভারী বাতাসে ন্যুব্জ ভালোবাসায় হৃদয় কতোটা মুমূর্ষু ? 
কতোটা অকালে ভুলেছি একাল- সেকাল?
জেনে রেখো,
তুমিও একদিন দণ্ডিত হবে স্বপ্ন খুনের দায়ে।





৫।।    ∆ ভিজে যাওয়া বর্ষা ∆



আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি অভিযোজনের ছিদ্র দিয়ে 
চুইয়ে চুইয়ে কবে যেনো  ঢুকে গেছে 
আমার নাগরিক  স্নান ঘরে। 
স্মৃতির সুতো দিয়ে সময়ের মসৃণ থানে বোনা
সোনালি শৈশব সারা দেয় 
এই শহরে বৃষ্টিতে বুনোজলের  ডাকে। 

আহা, শৈশব!
ঝুম বৃষ্টিতে ঝাঁক বেঁধে কতো দিন নামি না জলে।
কতো কাল লুকাই না স্নান-রাঙা চোখ 
মায়ের শাণিত শাসনের ভিড়ে! 
কতো কাল ভাসাই না ভেলা... 
কতোকালের ভেসে যাওয়া স্কুল ফাঁকি 
ডুবে যাওয়া সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা সহ 
কেমন করে জেগে উঠে স্নান-ঘরে!

মায়ের শাণিত শাসন ক্ষয়ে গেছে 
বয়ে যাওয়া সময়ের ধারে,
তালি দেয়া ছাতার মতো জীর্ণ হয়ে গেছে 
বাবার বুকের ছাতিম—
তবু শহরে বৃষ্টিতে তাদের ঝাপসা চোখ 
চকচকে হয়ে যায়  বর্ষার জলে।
অভিযোজনের ছিদ্রে চোখ রেখে 
আমি ভিজি স্নান-ঘরে...
জানালার ওপারের বৃষ্টিতে ভিজে যায় 
দুই প্রজন্মের পুরানো বর্ষা।




অলংকরণ - অঞ্জন দাস

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪


অনিমেষ মণ্ডল এর কবিতা-





১।।  ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/১ ∆




কতটা কাছে এলে তুমি ভিজবে সন্ধ্যার সমুদ্রে ? ক্যামেরার লেন্স  বন্দী অস্তগামী সূর্য ।সমুদ্র সৈকতে বালির লোভনীয় আদরে ভেজা শাড়ি ।উপচে পড়া তোমার তরুণী যৌবন ।নিষ্প্রদীপ অন্ধকার মেখে সাজিয়ে রেখেছো পশ্চিমের আলো ।আনন্দ কতটা গভীর হলে তুমি ভাগ করে নিতে পারো পলাশ মাখা ডুবন্ত বিকেল ? সমুদ্রের আদর কক্ষে লাভ সাইন এঁকে তাৎক্ষণিক ভালোবাসা ছুড়ে দিও গভীর সমুদ্র বক্ষে ।সন্ধ্যা ,রাত ,সকাল নতুন আমেজে নতুন রূপে সঙ্গমের  মহরত খুঁজে আনো সমুদ্রের আলাপ চারিতায় ।




২।।   ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথপোকথন /২ ∆




সমুদ্রের বিচে বসে সেল ফোনে ব্যস্ত তুমি ।আমি ব্যস্ত ঢেউ মাখতে । ব্যস্ততা কতটা নির্জন হলে আমাদের পরিচয় হবে ।কিছুক্ষণ  বাদেই অন্ধকার গ্রাস করে ফেলবে সমুদ্র ।সন সন শব্দলহরী উন্মাদের মতো ছুটে আসবে ঢেউ হয়ে ।আমাদের ব্যস্ত মুহুর্তেরা সূর্যের সাথে ডুবে যাবে সমুদ্রের গভীরে ।জাহাজের ভাঙা মাস্তুল ভেজা ইচ্ছেরা পিয়ানোর সুর হয়ে ভেসে উঠবে নির্জন সমুদ্রের অতলান্ত গভীরে ।




৩।।   ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/৩ ∆




দূর দেশ থেকে ভেসে আসা নীল ঢেউ সমুদ্রের কিনারে আলতো ভাবে চুমু খায় । প্রতিটি ঢেউয়ের শিরা উপশিরায় জড়িয়ে আছে তোমার আনন্দ উচ্ছ্বাস। সৈকতে লেখা আদর সংলাপ  ঢেউ বন্দি করে নিয়ে যায় নির্জন গভীরতায় ।আমাদের লেখা নামের প্রথম অক্ষর ভেসে যাই নীল জলের নীলিমায় । কতটা ভালোবাসা দিলে সমুদ্র আমাকে ঢেউ ফিরিয়ে দেবে ...
আমি নিজেকেই দিতে পারি তার বিনিময়ে ।





৪।।  ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন / ৪ ∆



কতটা সন্ধ্যা নামলে তুমি সমুদ্রের  গভীরে নিয়ে যাবে ? কতটা ঢেউ উঁচু হলে তুমি নিজেকে ভাসিয়ে দেবে ?সমুদ্রের কিনারে পড়ে থাকা ঝিনুক আমাদের অভিমান দেখে মুচকি হাসে ।প্রবালের রক্তিম রঙে রাঙানো ঠোঁট ,মুক্তের আভায় উদ্ভাসিত হাসি ।ডুবে যাওয়া সূর্যের মৃদু আলো তোমার প্রকাশিত নাভি প্রদেশের প্রেমে নেশাতুর ।সন্ধ্যা যত গভীরে মিশে যাবে আমাদের চেনা স্পর্শ ততোটাই গভীর হয়ে মিশে যাবে আনন্দ উচ্ছলতায় ।কোনো পরিজায়ী পাখিকে সাক্ষী রেখে আমাদের অপূর্ণতা ভরিয়ে দেবো সন্ধ্যা ও সমুদ্রের মিলন অবসরে ।






৫।।  ∆ সন্ধ্যা ও সমুদ্রের কথোপকথন/৫ ∆




পথ ভুল করে তোমার সাথে রাতের রিক্ততা মেখে নি।তোমার ভেজা অন্তর্বাস সমুদ্রের নিশ্বাসে শুকোতে চায়।চাঁদের আলোয় নখের বালি সরিয়ে নেলপলিশ আঁকতে মশগুল ।তারাদের কাতর আহ্বানে চোখে কাজল এঁকে জল মাখতে ভালোবাসো ।তোমার মেহেন্দি কাটা হাতে ঝিনুকের সৌন্দর্য প্রতিটি যুবকের হার্ট বিট বেড়ে ওঠার কারণ ।তোমার ভালোলাগা তোমার নিজস্ব সম্পদ,অভিমান তোমার একান্ত আপন ।তোমার রক্তিম হাতের তালুতে বন্দি অনাবৃত উন্মত্ত সমুদ্র ।



ক্যামেরা বন্দি- অর্ণব জানা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি অশোক ঘোড়ই এর কবিতা-





১।।  ∆ অনেক রাত্রি পর্যন্ত একটি ঘোড়াকে ∆



অনেক রাত্রি পর্যন্ত একটি ঘোড়াকে সে
চরে বেড়াতে দ্যাখে রাস্তার পাশে। সাদা
ঘোড়া। মহিনের ঘোড়াগুলোর একটি
সে-ঘোড়া নয়। ঘোড়াটি কোনও 
সার্কাসওলার। পেছনের পায়ে চাবুকের
নিশান বোঝা যায়। এক রাত্রে সে ঘোড়াটির
ঘাস চিবানোর শব্দ শুনে তার বিষণ্ণতা
বুঝতে চেয়েছিল। আরেক রাত্রে, সে
চোখে চোখ রেখেছিল ঘোড়াটির। এখন
হয়তো তারা একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায় কোথাও
কোনও রাস্তার পাশে





২।।  ∆ গন্ধে সে ফুল চিনে নিত ∆




গন্ধে সে ফুল চিনে নিত,সে ছিল অন্ধ।
বিভিন্ন গন্ধের ফুল দিয়ে সে ছোট ছোট
স্তবক বানাতো। তার ইচ্ছে ছিল,লোকেরা
আসবে আর তোড়াগুলো নিয়ে যাবে।
কেউ আসত না।কারন; প্রত্যেক তোড়ার
ফুল ছিল সাদা আর বিষণ্ণতার গন্ধ দিয়ে
গাঁথা। রাত্রে,ঘরে ফিরে,নিজের বিছানাতে
ফুলগুলো সাজিয়ে সে শুয়ে পড়ত




৩।।   নাইনথ সিম্ফনি




মেয়ে ও বউ ঘুমিয়ে গেলে সে উঠে আসে
পড়ার ঘরে। প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। 
দেয়ালে টাঙিয়ে দেয় অ্যান্তনি মিকালেফের
সেলফ পোর্ট্রেটস,রেকর্ড প্লেয়ারে চালিয়ে
দেয় মাহলারের নাইনথ সিম্ফনি। বাজারের
সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের ছুরিটিই সে নিজের
গলায় চেপে ধরে আর বিভোর হয়ে যায়।
রাত্রি বাড়তে থাকে




৪।।   ∆ গণহত্যার কবরের ওপর ∆



গণহত্যার কবরের ওপর সে ঘুঘু ছেড়ে দিত
প্রতি রাত্রে। পাখিওলাকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে
সে কিনে নিত দুটো-চারটে ঘুঘু প্রতি দিন।
ঘুঘুদের ষড়যন্ত্র মৃতদের পাশ ফিরতে সাহায্য
করবে;এ রকমই তার ভাবনা ছিল। অন্ধকারের 
ভেতরও নিজেদের আলোয় নানা ছন্দে উড়ত
যখন এতগুলো ঘুঘু, তখন সে গণহত্যার
কবরের পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে যেত 





৫।।  ∆ শববাহী গাড়িদের যাতায়াতের সময় ∆




রাত্রে শববাহী গাড়িদের যাতায়াতের সময় ট্রাফিকের দায়িত্ব 
সে একাই সামলে নেয়। সমস্ত ট্রাফিক-সিগন্যালে সে 
বাজিয়ে দেয় মাহলারের নাইনথ সিম্ফনি। অন্যান্য গাড়িগুলো 
রাস্তার বামদিক চেপে শব্দহীন স্থির হয়ে যায়। এতদিনে সমস্ত 
চুল্লিই জলের তলায় চলে গেছে। শববাহী গাড়িগুলো রাস্তাতেই 
লাইন দিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। সে জানে, এমন নিঃশব্দ 
রাত্রির সফর শবদেহ কিংবা নাইনথ সিম্ফনি কেউই ভুলতে 
পারবে না




অলংকরণ - অঞ্জন দাস

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪


কবি নিলুফা জামান এর কবিতা-





১।।   ∆ ছিন্নমূল ভালোবাসা ∆




স্মৃতির ভেতরে জেগে আছো আজও 
ফিতে ক্যাসেটের ধুলো ঝেড়ে বুঝতে পারি 
থেকে থেকে বেজে উঠো— একাই বাজো
হয়নি বাড়াবাড়ি, হয়নি কোন আড়ি। 

কলি থেকে ফুটে ওঠা ফুল...
এমন চেনাজানা তুমি কবে?
ভুল করেও ভাবিনি এই ছিন্নমূল ভালোবাসা
 কলিতেই মগ্ন ছিল সেই অনুভবে। 

সাহসটুকু নাই বা থাকুক 
দীর্ঘশ্বাসই থাকতো বুকে —
ছিপি আটকানো ভালোবাসা—
কী  করে গড়াবে বাগান!
 রক্তজবা অথবা কিংশুকে? 
 রক্তজবা ছিঁড়ে আনা রক্তিম তায়
ভয় পেয়োনা কোনদিন... 
হাসনাহেনা চেয়ে এনেছি সিথানে রাত বালিশে, চুলের এলোমেলো আশ্লেষে। 
মানুষ জীবনের ফোঁড়নে হাত বাড়ায়—
 হাত ছড়ায়।  

দাও না তবে, 
রাত জাগা বুনো ফুলের নামে নাম 
সাহস করে বললেই পারতে,
এই যে তোমার হাতখানি ধরলাম,
বেছে দাও নাম— খুব করে বলেছিলাম। 
প্রিয়,কোন আড়ম্বর নেই আমার।
তেমন প্রস্তুতি ছিলনা আদৌ—
তোমাকে এপিটাফের কবিতাটি উৎসর্গ করতাম।




২।।  ∆ দূরত্ব অথবা ধাঁধা ∆




জীবন ছড়িয়ে যায়— জড়িয়েও যায় নানা পথে 
তাই বলে কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন কী করে হবে!
বহু শাখা-প্রশাখায় বিকশিত 
যে কোন বৃক্ষের মূল যেমন থাকে
 একবিন্দু বেদনার মত সুপ্ত বীজে...
প্রশ্ন করো নিজেকে নিজে 
আমি সেই কেন্দ্র যার অস্তিত্বের সাথে তুমি বাঁধা
যদিও তুমি বারবার চলে যেতে চাও
 কেন্দ্র থেকে দূরে বহু দূরে—
হায় প্রেম! নিকট দূরে তুমি শুধুই ধাঁধা? 




৩।।  ∆ ক্ষত ∆




প্রত্যেক মানুষের বুকের নিভৃতে কিছু দগ্ধ ক্ষত থাকে
থাকে কিছু অসম্পূর্ণ নির্মাণ 
ভাঙ্গাচোরা গেরস্তালি ঘরদোর—
প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু নিদ্রাহীন রাত থাকে— 
যাকে মরে যাওয়া নখের মত
 বেশি যত্ন করে রেখে দিতে হয় অনিচ্ছার বাগানে। 


 

৪।।  ∆ জার্নি ∆




ব্যস্ত সকাল, ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত সময়ের কোলাজ... 
টিপটিপ জল কেলির উৎসবে স্লিপার ভিজে গেছে;
প্রতিটি মিডিল ক্লাস ঘরে জল জমে
 জুতো জুড়ে নোংরা লেগে 
পুরো শহর ময়লা-জলে স্নাত জুবুথুবু— 
হয়তো ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে করেও ছাড়ছে না 
গা করছে না কেউ তেমন 
চোখে লেগে আলস্যের চৌকাঠ
সারি সারি ট্রেন যে কোনো বগি চেপে নিলে রিনিঝিনি ধ্বনিত প্লাটফর্ম নিস্তব্দ— নিপাট। 
জানালার কাঁচে জড়িয়ে বিন্দু রেখা 
সময় মিলিয়ে গেলো হুইসেলে—
ব্যস্ততার ব্যস্ত শরীর জুড়ে প্রকট গোল দাগ... 
যান্ত্রিক আলাপন ছেড়ে চোখ মিশে যায় সবুজ ক্যানভাসে...
কতটা গিয়েছো জানা নেই—  টিপটিপ বৃষ্টি চলছে ভেতর বাহিরে। 
কার চোখে কতো জল কে জানে! 
অমনিবাস মালিকানায় নোনা জল কই?





৫।।  ∆ তৃষ্ণা-পোড়া হাত ∆




ঘন নির্জনেও সুখ—যদি তুমি দূর থেকে স্বপ্ন দিয়ে ভরে দাও বুক। 
প্রখর রোদেও যদি তোমার অপেক্ষা নিয়ে কখনো দাঁড়াই 
মনে হয় চরাচরে আশ্চর্য বৃষ্টির শান্তি— 
সেই স্নিগ্ধতায় বাড়িয়ে দেই 
 আমার একান্ত শূন্য তৃষ্ণা-পোড়া হাত... 
প্রখর দুপুর দেখো কী করে হয়ে যায় পূর্ণিমার রাত!





অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি অমর্ত্য দত্ত এর  কবিতা-




১।।  ∆ বিরহ ∆



(১)

প‌রিচয়হীন যে আলো, কোন চো‌খে নে‌বে তু‌মি তা‌কে ?
‌ব‌সে‌ছে নিশ্চুপে, ধীরে অথবা সে আজও বিরহিনী ।
‌রা‌তের ডানা থে‌কে খ‌সে পরা দীর্ণ পাল‌কের-
শরীরতো বিষাদ স্মারক, আঁধার ম‌নের সঙ্গিনী ।

প‌রিচয়হীন যে ছোঁয়া, তা‌কে কোন বু‌কে‌তে জড়া‌বে ?
হৃদয়-উঠোন তার চা‌রি‌দি‌কে স্মৃ‌তি ভাঁঙা কাচ ।
সময় লহরী মাত্র, বিদ্রুপ পা‌শে রে‌খে যা‌বে ।
মো‌হ-ফুল ঝ‌রে গে‌লে প‌ড়ে থা‌কে শুধু কাঁটাগাছ ।

সুর যে বাঁচার মন্ত্র, সে কথা কী জা‌নে বাঁ‌শিওয়ালা ?
প্রহর গুনছে হাওয়া, ফি‌রে ফি‌রে চৌকাঠে থা‌মে ।
হারি‌য়ে যাওয়ার পর র‌য়ে‌ গে‌ছে যেটুকু না বলা-
ও রাই তু‌মি কতখা‌নি অধিকার চে‌য়ে‌ছি‌লে শ্যা‌মে ?

আ‌লো জা‌নে, হাওয়া জা‌নে, কে পু‌ড়ে‌ছে বির‌হের আঁচে ।
‌ছুঁ‌য়ে দ্যা‌খো, দ্যা‌খো রাই স‌বে‌তেই শ্যাম লে‌গে আছে ।
        


(২)

এ'পল‌কে শ্যাম ঘন, সে'পল‌কে ভে‌সে‌ছে কিনারা ।
‌নিথর দু'‌চোখ তবু পে‌য়ে‌ছে কী আলো ? মে‌ঘে মে‌ঘে 
কে‌টে গে‌ছে কতকাল । অবিরত বৃ‌ষ্টির ধারায়-
এক বুক জল নি‌য়ে কমলিনী কেনো আছো জে‌গে ?

অতীত স্মৃ‌তির সু‌তো, বিরহ অবসাদ-পুঁতি ।
পা‌রো‌নি ছিঁ‌ড়‌তে তু‌মি সেই মালা খুবদা‌মি ব‌লে,
বিঁধ‌ছে কাঁটার ম‌তো তবু এ কেমন অনুর‌তি !
ও রাই যেওনা আর কা‌লি মাখা যমুনার জ‌লে ।

কুহকী যে সুর তার শিক‌ড়েই প্রবঞ্চকতা ।
লু‌কি‌য়ে রেখে‌ছো বুকে, জা‌নো না সে কুঁ‌ড়ে কুঁ‌ড়ে খায় ।
‌কীভা‌বে ভুল‌বে তা‌কে ? কা‌কে তু‌মি ‌শোনা‌বে সে কথা ?
‌বিথান শো‌কের‌ বেশ, মলিনতা ‌তোমা‌কে মানায় ?

এ'ভা‌বে খুঁজোনা আর এ'ভা‌বে বা‌ড়িও না ক্ষ‌তি ।
সে ছি‌লো, সে আছে আজও, চিরকাল থাক‌বে শ্রীম‌তির....

  

(‌৩)

কে বেঁ‌ধে‌ছে চুল তার ? কে পোশাক দি‌য়ে‌ছে গু‌ছি‌য়ে ?
সাঁ‌ঝের প্র‌দীপ কাঁ‌দে আর কাঁ‌দে কূল যমুনার ।
অভাগী দাঁ‌ড়ি‌য়ে থা‌কে ডু‌বে যাওয়া জীবন‌কে নি‌য়ে ।
মন, বেঁ‌ধে নি‌তে চায় । চোখ ব‌লে নেই সে‌ তো আর....

প্রণয় এমনই হয় ? এমনই কী হয় গো প্রণয় ?
‌ফি‌রে এসো প্রসা‌রিণী, সেই পথ কো‌রো না স্মরণ ।
হৃদয় দাহ্য বড়, স্মৃ‌তিরা তো ব‌হ্নিবলয় ।
শুধু পু‌ড়ে ছাই হ‌বে, ছাই হ‌বে তু‌মি প্র‌তিক্ষণ ।

‌কে পে‌তে রে‌খে‌ছে কোল ? কে কে‌ড়ে নি‌য়ে‌ছে ঘুম তার ?
‌স্বপ্ন অলীক বস্তু, বিরহ জ্বাজল্যমান ।
‌যে বাঁ‌শি বিষের, তা‌কে তু‌মি মে‌খে‌ছো বারবার ।
অনঙ্গ সুর-র‌সে বি‌নো‌দিনী ক‌রে‌ছি‌লে স্নান ।

ও রাই চোখ মো‌ছো আর কেঁ‌দো না কৃষ্ণাধিকা‌রে....
তুুমি মিশে আছো তাই, তাছাড়া কে চে‌নে কানহা-‌রে ?




২।।    ∆ জখম ∆




এ'ভা‌বে না ভাসা‌লেও হোতো । ডুবে আছে হৃদ‌য়-সরণী ।
‌বেঁ‌চে থাকা আঘাতজ‌নিত, সে কথা তো শরীর বো‌ঝেনি ।

দু'‌চোখ মে‌খে‌ছে ঘন মেঘ । পল‌কে বৃ‌ষ্টি বিষাদ ।
অ‌ধিকার খোঁ‌জে‌নি জন‌মে । ‌বো‌ঝেনি ভেজা অজুহাত ।

এ'ভা‌বে ভাসা‌লে ব‌লো কে‌নো ? জা‌নো এর গভীরতা ? মাপ ? 
অগণন ছো‌বোল বিছা‌নো । ‌চা‌রি‌দি‌কে ধ্বং‌সের ছাপ......

দ্যা‌খো চে‌য়ে অভিঘাতহীন যে পলক রাগ মল্লা‌রে-
উ‌ঠে‌ছি‌লো কো‌নো এক‌দিন ‌ভা‌লো‌বে‌সে ভো‌রের সেতা‌রে,

তা‌কে ছুঁ‌য়ে এসে ছি‌লে নে‌মে, যে পথ ধ‌রে রা‌ধিকার ম‌তো,
‌সেটা ‌বি‌ভে‌দের জখ‌মে জখ‌মে, এ'ভা‌বে না ভাসা‌লেও হো‌তো ।





৩।।  ∆ রূপকথা ∆




অনন্ত তখন না‌মে‌নি চো‌খের গভী‌রে ।
মা‌টি‌তে ছ‌ড়ি‌য়ে ছিলো অজস্র হরশৃঙ্গার ।
তু‌মি নে‌মে গি‌য়েছি‌লে কুয়াশার হাত ধ‌রে ।
আ‌মি দূর থে‌কে দে‌খে‌ছিলাম তোমার রজতশুভ্র জ্যো‌তি ।
‌পৃ‌থিবী আলিঙ্গন ক‌রে তুমি তখন অর্ধশা‌য়িত অনুরক্তা রুক্মিণীর ম‌তো । 
‌অরণ্য শরী‌রে খে‌লে বেড়া‌চ্ছি বন্য হ‌রি‌ণের ম‌তো একা । 
আমি একা । 
জ্যোৎস্নার ঘ্রাণ নি‌তে নি‌তে ।
অথবা এই জাগ‌তিক অন্ধকা‌রে আমার তোমা‌কেই শুধু চাঁদ ম‌নে হয় ।

রা‌ত্রি যখন একটু একটু‌ ক‌রে নি‌জে‌কে মে‌লে ধ‌রে নদীর ম‌তো ।
আ‌মি স্নান সেরে উঠে আসি ।  
তখন আমার মাথায় রাজমুকুট, 
কপা‌লে বিজয়‌তিলক, শরী‌রে সুবর্ণ বর্ম প‌ড়ি‌য়ে দাও তু‌মি । 
আমার হা‌তে স‌পেঁ দাও পাঞ্চজন্য শরীর ।
 তার মহাধ্বনীতে সূর্যোদয় হয় পৃ‌থিবীর । 
‌সে এক অনন্ত রূপকথা চো‌খের গভী‌রে গেঁ‌থে গেঁ‌থে থা‌কে 




অলংকরণ - শ্রীকৃষ্ণ কর্মকার

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি স্বপন নাগ এর কবিতা-





১।।  ∆ নিছক অভ্যাসে ∆



অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে এবার খানিক থেমে
যেই দেখছি পিছন ফিরে  :  পথ গিয়েছে  নেমে !
খাদের  সিঁড়ি  বেয়ে  বেয়ে  আরেকটু  যাই  যদি
ঝিলমিলিয়ে উঠছে জেগে  কবেকার এক নদী ।
ঘাটের কাছে থমকে আছে সারবাঁধা সব নৌকো
আরশিতে দাগ কাটছে সময় গোল-তেকোনা-চৌকো,
এই ভাসছে, ডুবছে আবার কাটাকুটির খেলায়
অজস্র চুমকিতে আকাশ সেজেছে রাত-বেলায়।
শোনাচ্ছে কি শোলককথা  নীরবতার  ভাষায় ?
অতীত, আমায় অতীত টানে মুখর ভালোবাসায় !

যেন  আমি দাঁড়িয়ে  আছি  সময়  ছুটছে  দ্রুত --
ছুটন্ত  সব  ছবির  সারি  --- অদেখা  অশ্রুত ।
ধানের ক্ষেতে লুটিয়ে আছে শেষবিকেলের রোদ
বাতাসে  কি  বাজছে  কোথাও  বিষণ্ণ  সরোদ ?

কেউ কি আছে দূরে কাছে, কেউ কি আছে পাশে
তাকিয়ে ফিরি তোমার দিকেই নিছকই অভ্যাসে !





২।।    ∆ কথাবিষয়ক ∆



১.

আমাদের যারা বলেছিল সেই কথাটি
তারা কেন আজ লুকিয়ে বেড়ায় আড়ালে ?
আত্মগোপনে তৎপর কেন তারা সব
তীক্ষ্ণ সময় মুখোমুখি এসে দাঁড়ালে ?

সে কথায় তবে ভুল ছিল কোনো, বিভ্রম !
আবেগতাড়িত স্বপ্ন ও রঙে ছড়ানো ?
ছিল কি শুধুই কথা ও কথার বেসাতি
মিথ্যে এবং অলীক মোড়কে জড়ানো ?

আসলে তা নয়, বলেছিল যারা কথাটি
ছিল না কথায় বিশ্বাস কণামাত্র ;
মুখোমুখি এই সময় দাঁড়ালে যেন-বা
ঠোঁটের সমীপে বিষভরা এক পাত্র !

দিন গেলে দিন কথা আর কাজে ফাঁকটা
বেড়ে যায় রোজ দিন ও রাতের প্রান্তে ;
যারা চলে গেল, এই নিদারুণ প্রহরে
পারবে কি আর ফিরিয়ে তাদের আনতে ?


২.

শেষবিকেলের সূর্য গা ধুচ্ছে অজয়ের জলে
রাঙা আকাশকে মুখরিত করে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল
তারা ফিরে যেতে চায় খড়কুটোর সংসারে ...

জয়দেবের মেলায় তোমার সঙ্গে হঠাৎ-দেখা
ভিড় থেকে, ভিড়ের ধূলোর অস্পষ্টতা ভেঙে
কী ভাবে যেন আমরা মুখোমুখি, হঠাৎ !

মাঝখানে অনেকগুলো দিন
তুমি বলে উঠলে, 'ইশ্, কতদিন পর ...'
অস্ফুটে আমিও !

আমাদের দেখা হল মুখোমুখি, আচম্বিতে
কথা হল, যেরকম কথা হয় দুজনের মধ্যে
কলেজ ক্যান্টিন থেকে সুবলের ঢাকাকেবিন হয়ে
কথারা ফিরে এল মোদি রাহুল আর নীল-সাদায়

আখরায় ফিরে এসে শেষ প্রহরে
অক্ষরে সাজাতে চাই তোমার অবিরল কথাদের

কথারা হারিয়ে যায় স্মৃতির আবছা কুয়াশায় ...


৩.

এই কথাটাই সেই কথা কি, বলতে চেয়েছিলাম !

সম্মুখে এক ধূধূ প্রান্তর
পথ গিয়েছে আলপথটি ধরে
ওই দিকে এক আকাশপ্রান্ত ছুঁয়েছে ধানক্ষেত

ওদিকেই কি গিয়েছিলাম তোমার হাতটি ধরে ?

তোমার হাতে ভরা ছিল আশ্রয়েরই ছায়া
জিরিয়ে নেবো,জুড়িয়ে যাবে সারাদিনের ক্লান্তি
টলটলে জল একটি দিঘি দিগন্তের ও পারে
কেন আমায় এমন ডাকে ডুবদেওয়া এক নেশায়

প্রচ্ছদে আজ লুকিয়ে আছে না-বলা সব কথা
বাহির ভুবন মাতোয়ারা উৎসবে উৎসবে ...

ভিতর ঘরে ঘুমিয়ে আছে সেই কথাটাই তবে ?

৪.

তুমি যখন বলো কথাগুলি, মনে হয়, ঠিক।
সে যখন অন্যভাবে,
তা যে কথার কথা নয়, বুঝতে পারি।

এ দু'য়ের দোলায় আমি নিরালম্ব ভাসতে থাকি ...

অথচ কতো কী-ই তো বলা যেতে পারে
কতো রকমভাবে :
তুমি জানো, সেও বিলক্ষণ জানে।

বিপর্যস্ত আমি শুধু খুঁজে ফিরি এইসব কথাদের মানে।




অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবিতা-






১।।   ∆ শেষ ট্রেনের খবর ∆



আয়না দিয়ে আমার যে নদী বয়ে গেছে
তাকে আমিই তৈরি করেছি একটু একটু করে
শহরের সব মূর্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এসে
অনেকটা পথ একা হেঁটেছি
আমার জামা তো আর কারও গায়ে হবে না
সঙ্গে ডাকতে পারি নি একজনকেও
দু'একবার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল মাত্র
কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন গলি হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল
রাস্তার গায়েই আমার যাত্রা বলে
গলি আমায় নিয়ে সুবিধে করতে পারে নি

আয়নায় ফুটে উঠেছিল গোটা শহরের মুখ
কিছুটা পিছনে গ্রামের ছবিও স্পষ্ট হয়েছিল
আমার লক্ষ্য ছিল একটামাত্র তালগাছে
বিশ্বাস ছিল তাল খেঁজুরেই সাজিয়ে দেব দিগন্ত

সব ঝড় এসে লেগেছিল তালগাছে
উদ্দাম হাওয়ার শত হাতের অভিমুখ বদলাতে পারে
এমন কোনো প্রতিহত গুণিতক আমার নামতায় নেই
মরুভূমির গান শিখে যে ছেলে আয়নায় তাকিয়েছিল
তারও পাও কিছু দূর গিয়ে বালিতে পুঁতে গিয়েছিল
আয়নায় এখন বালি, কাঁচ, সাপের মতো 
প্যাঁচানো অন্ধকার, হলুদ বাতাসার মতো চোখ

যে মুখের দু'ঠোট সারা দুপুর 
আপন বংশলতিকার গানে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল 
পকেটের জমানো টাকা উড়িয়েছিল হাত খুলে
তারা এখন গভীর রাতের স্টেশনের অন্ধকার কোণে 

শেষ ট্রেনের খবর এখনও কেউ জানে না।





২।।   ∆ চিরকালীন কুয়াশা ∆



শেষ ট্রেনে রাতের গভীরে যারা স্টেশনে নামলো
সকালের কুয়াশায় যারা আগেই স্টেশনে নেমেছে
আগামীকাল দুপুরে যারা স্টেশনে এসে নামবে
তাদের কারও মাথার ছাদ নেই
শুধু ঘর নেই বলেই তারা গলা খুললেই
তা দিগন্ত পেরিয়ে সমুদ্রে মিশে আন্তর্জাতিক হয়ে যায়

নক্ষত্রের গ্রাম থেকে যারা হেঁটে এসেছিল
তারাই একমাত্র জানে সূর্যের স্বাদ 
পৃথিবীর কোনো উপমায় তারা কান দেয় নি
নিজের গর্তকে ভালোবেসে ছিল খুব
আর নিজে হাতে গর্ত খোঁড়ার প্রক্রিয়ায়
শ্রদ্ধা ছিল বলেই খুব তাড়াতাড়ি তা পাঠ্যে এনে তুলেছিল 

স্কুল বাড়ির সমস্ত দরজা একমুখী
ঘর আর উঠোন জুড়ে থাকে
সাপের মতো মাটির গভীর সংস্পর্শে থাকা
শাসকের কিছু বাজার চলতি চটুল হাওয়া
একাকী বড় হয় যাবতীয় মাংসের শরীর
কুসুম রোদ্দুরের তুলির গভীর টানে 
ধরা দেয় না রামকিঙ্করের হাসি

নদীর খাতায় লেখা থাকে 
কিছু জটিল সমীকরণের সহজ সমাধান
হাত দিয়ে যারা জল খুঁটেছিল 
নদীর প্রাসাদে ঢুকে কেউ কোনো ঘর খুঁজে পায় নি
বটপাতায় মাটির ইতিহাস লেখকদের কেউ চেনে না
গাছের মাথায় রোদ ----- আর কয়েক মিনিটের অপেক্ষা
সন্ধ্যে নামার মতো নিঃশব্দে হেঁটে যাবে লেখকেরা
তারপরই হাতে হাতে নেমে আসবে চিরকালীন কুয়াশা ।



                         


৩।।  ∆ মাটিদের ঘর ∆




বেড়ার এপারে হেলান দিয়ে আছে যেসব বেড়াল
তাদের কারো সঙ্গেই আমার খুব একটা চেনা নেই
শুনেছি ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকের কোনো এক সন্ধেয়
গোপন গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছিল ভেজা ভেজা গায়ে
সূর্যের আলোয় গা শুকিয়ে নেওয়ার অভিসন্ধি ছিল কিনা
পাশের বাড়ির লোকেরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি
তবে পাঁচমাথায় চারটে সভা করেছিল
কোনো মঞ্চ ছিল না
কে যেন তাদের শিখিয়ে দিয়েছিল 
এটাই মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সবচেয়ে যুতসই শর্ত
আসল মাথায় ঢাকা ছিল নিজেদের পায়ের ছাপ

বেড়ার এপাশে সব বেড়ালের চোখ ছিল স্থির
আসলে তারা প্রচার চেয়েছিল সবচেয়ে স্থির প্রাণীর 
যেকোনো সময় যেকোনো দিকেই তারা চলে যেতে পারে
তবুও স্থির দাঁড়িয়ে থাকা আরও কিছু পায়ের প্রত্যাশায়
এই পথেই হেঁটে যাক সভ্যতার সবকটি নদী

ধুলোপথে যারা গান করে রাতদিন
ঘন্টা মিনিট সন তারিখ কে কবে দেখেছে তারা 
ফাটা পায়ে ধুলোপথ শেষ হলে 
গোল হয়ে ঘিরে ধরে কালো-কটা বিড়ালের ঘর 
সব মাটি আমাদের -------- উল্লাস শেষ হলে 
ভেঙে যায় সবুজের চারপাশে সবকটি বেড়া
গুঞ্জন ওঠে আলপথ ধরে, খুলে যায় সব নদীপথ 
সিংহাসনের নিচে যারা চাপা পড়েছিল 
তারা সব লতা হয়ে উঠে আসে হাতলে দেওয়ালে
তারপর সবকটি চারাগাছ জেনে যায়
চারপাশে ঘিরে আছে মাটি মাটি মাটিদের ঘর ।





৪।।   ∆ নরকের দেশে ∆




অস্বস্তিকর স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা আকাশ
কিছুই পড়া যায় না
আবছা আবছা হয়ে সবকিছু
চোখের সামনে দিয়ে ঝুলে থাকে
উঠোনে এসে দাঁড়ালে হৃদয়ের মতো
প্রাচীন বট কাছে আসে
শেষবেলার একফালি রোদের মতো

দুপুরের রান্না হয়ে গেছে কোনকালে
ভাতের থালার রোদে স্পষ্ট হয়ে উঠছে 
একটা দুটো তিনটে চারটে পোকা
সাতসকালে ভীষণ ঝগড়ায় যাদের ঘুম ভেঙেছিল
এখন ভাতের গন্ধে তাদের শরীর থেকে মুছে যাচ্ছে
দখিনের হাওয়ায় শেষ ঘামবিন্দুর মতো খিদের কষ্ট

মিনিটের অপেক্ষাতেই মনে হয় সব পাথর হয়ে যাচ্ছে
নদীর জলের কাছে দাঁড়ায় না কেউ
উঠোনের জলে ভেসে ওঠে একটাই শুধু বাড়ি
এমন দিনকে কি করে কোলে নিই বলো
মন না থাকলে শরীর যে পাহাড় হয়ে যায়

রোদের ডানায় পাখিরা উড়ে এলে
নদীর জল পাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলে যাবে গল্প
সেই গল্পের কুঁড়েঘরে বাতাস আসে অঞ্জলি হয়ে
মেঘগান জলের আল্পনায় কুঁড়ের ক্যানভাসে
এত আয়োজনেও নিঃস্ব হলে
কথাপাখি উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে 
চলে যাবে নরকের দেশে ।






৫।।  ∆ স্টেশনের ক্যানভাসে ∆




প্রতিটা ট্রেন ছেড়ে গেলে
স্টেশনের ক্যানভাসে 
একটু একটু করে রঙ ধুয়ে যায়
কথা বলতে বলতে কথারা সরে আসে
অনেকটা শরীর গুটিয়ে এনে
একটা বিন্দুতে এসে জড়ো হয়

রুক্ষ কথাদের এখন শুয়ে পড়ার সময়
খালি হয়ে আসা অক্সিজেনের থলির সামান্য অংশ
বাকি অন্ধকারটুকুর জন্যে

স্টেশনের শাসকের হাতে এখন অন্য রঙের প্রাচুর্য
অল্প একটু রঙ গুললেই অনেকটা দাগ হয়ে যায়
আঙুল তোলার মতো নেই এখানে কেউ
মাথা নিচু বলে এখানে তাড়াতাড়ি সন্ধে হয়

কোনো কোনো গলির মুখে বসে থাকে
সাদা চুলের মতো স্থির মুরগি
কোনোদিন চারপাশ ফরসা হয়ে এলে
শেষ ট্রেনে উঠে চারপাশ মুখর করে দেবে।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি মলয় গোস্বামী’র কবিতা-





১।।  ∆ সুখের ফেউ ∆




 উজ্জ্বল মেখেছে বিষ:মোহিনী জানে না 

মোহিনীর আঙুলে কিংবা ওষ্ঠে,জিহ্বায়
যদি বিষ লেগে যায়
তাই সে ভিতরেই শুধু : বাইরে মাখেনি মাখে না তো।

উজ্জ্বল মেখেছে বিষ:মোহিনী জানে না

উজ্জ্বল পাগল নাকি ?
না হলে ভিতরে কেউ
সুখের ফেউ-এর মত নির্বিবাদে রেখে যায় বিষের প্রলেপ।
কিংবা কেউ মৃত্যু-ঘন্টা গোঁজে ?

যে যার নিজের মত ভালোবাসা বোঝে।

আয়না পারদ মাখে।মেখে মেখে উজ্জ্বল হয়।
যাকে সে সামনে রাখে, তাকে বুকে ধরে রেখে তাকেই দেখায়।
সে দ্যাখে ,কখনো কি তার বুকে আয়না নিজেকে খুঁজে পায় !

উজ্জ্বল মেখেছে বিষ: মোহিনী জানে না





২।।  ∆ বিপ্রশ্নিকা ∆




যদিও ছন্দ জানি;ছন্দবাণীর ফাঁকে ফাঁকে
এ জীবন কুয়াশাবিধুর, তার মৃত্যু লুকিয়ে রাখে।

‘বিনিপাত’ ছন্দে এলো;অর্থ বলি- অধঃপতন।
এইমত সমানুপাতে সাজিয়ে রাখি ইঁটের মতন।

কেন হয় তাও জানিনা! শুধু জানি-এখন, যেমন স্ত্রীর মুখ বন্ধ হলে শান্তি পাবো;এমন ব্যামো
পিঁপড়ের মতন, ধীরে,কুটুর কুটুর এগিয়ে এসে
জীবনের রসস্থিত ছন্দগুলি ধরছে ঠেসে।

কী এমন ছন্দ জানি! ছন্দবাণীর বিপ্রশ্নিকা
নিয়তই খুঁচিয়ে মারে এগিয়ে নিয়ে মৃত্যুটিকা!
এ-ঘরে ধুতরো বীচি, তার ওপরে খোদাই করি :যদিও পীযূষ-ই চাই: দিন তো গেল এবার হরি ।


হরি হে দিন তো গেল, সন্ধে হলো-রাত্রি এবার!
আগামী রৌদ্র এলে- একটা কাজই ছিনিয়ে নেবার ।






৩।।   ∆ খুন ∆




খেয়েছে আলমারি ন্যাপথলিন। তবু আমি প্রায় প্রায়ই চাবিটা
ঘুরিয়ে দেখি সাজানো সম্পদ; ঠিকঠাক আছে তো সব ? চারদিকে তাকিয়ে নিই,বন্ধ করি,ফের হয় লীন।কি জানি পাশেই হয়তো রয়েছে আপদ! সোনালী শরীর খানি অপলক চোখে মাপি মায়ার বহরে;ওষে বড় অভিমানী। সামান্য বৃষ্টিপাতে, সামান্য রৌদ্রতাপে কষ্ট পায়।আমিও ছাড়ি না ওকে জটিল শহরে , যদি সে হোঁচট খায় কূট কৌশল!ও আমার স্বপ্নের জলে অমন ঝিলিক দিয়ে বিম্বপ্রিয় হয়।নয়,সে তো নয় শুধু কাঠের ছন্দে গড়া জড় আনমনা।ওর মধ্যে আমি আছি; হীরা অন্তর্যামী আছে।আর আছে এক কিশোর, তার আকাশ,তার যত ফুল্ল আরাধনা।

আমি একে ঝাড়ি পুছি প্রতিদিন যতদিন পারি। ন্যাপথলিন দিয়েছি তবু ভয় করে,তালা দেখি টেনেটুনে বন্ধ ঘরে রঙিন আলমারির।

পেছনে কিন্তু তার শুরু হয় এক খেলা,সত্য,নিয়মিত।আমি আছি জীবন-অমৃতর সোজাসুজি;অথচ ওদিকে মধুর গান অন্তরে করছে গুনগুন;

ও গান শুনিনা আমি, একটুখানি সরে আসি পাশে,দেখি-ভিতরে
সবাই আছে, কিন্তু কাঠের পোকা কিযে করছে খুন!সানের উপরে অতি
বেদনা বিধুর করে সাদা গুঁড়ো আল্পনা এঁকে দিচ্ছে ঘুন।





৪।।   ∆ লন্ঠনের আলো ∆




গাছ আছে? গাছ আছে?
জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে বালিকা নামের এক মেয়ে।
ঘরে তার লন্ডন আছে।লন্ঠনের আলো আছে।
দূরে বাবা বসে আছেন, প্রাচীন পৃথিবীর কথা ভেবে।
আলোটা পড়েছে তাঁর পা-য়ে।

বাবাও বললেন,‘আয়।কাছে এসে বোস।’
বালিকা গিয়েছে কাছে, গাছের প্রশ্নটুকু নিয়ে।
গিয়ে দেখলো - বাবার গায়েও আছে শাখা।
আর আছে অজস্র পাতা। দুপা-য়ে শিকড়।
শিকড়েই পড়েছে সেই লন্ঠনের আলো।

বালিকার প্রশ্নটুকুই,আমাকে দিয়েই আজ এমন লেখাল ।



             

অলংকরণ -অমৃতা নায়ক

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••      ‌

Thursday, 13 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি শৈলেন চৌনি’র কবিতা -




১।।  ∆ ডানার বয়স ∆




১|
ছোরা খাওয়া হাসির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষত।এভাবেই ক্রমশ ছোটো হয়ে এল ঋতুর পোশাক...


২।
ডানার সময় ফুরিয়ে এলো।
সূর্যাস্তের রঙে হ্রেষাগান ফেলে ফিরে আসছে মাহুত, আর ক্রমশ সুরেলা হয়ে উঠছে বিচ্ছেদের মৈথুন।


৩।
আবিষ্কৃত বিকেলের ধুলো মেখে শাদা হচ্ছে রিটার্ন টিকিট।সুসজ্জিত অস্ত্রের গায়ে আধোহাত রেখে নরম হচ্ছে সৈনিকের আয়ু


৪।
চওড়া সিঁথির মেরু।
শিথিল প্রান্তের গ্রহে ডুবে যাচ্ছে স্মৃতি —
বিচ্ছেদের বয়স বাড়লে পেকে যায় চুল,
প্রতিটি পুরোনো বিকেল উজ্জ্বল হলে
আজও সবাই বালাইষাট…




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি পল্লব গোস্বামী’র কবিতা-





১।।   ∆ মাটি ∆



মাটির ঘর থেকে 
তুমি নেমে গেলেই
বৃষ্টি নামে।
           দেওয়াল থেকে দাখিলা ঝরে পড়ে ...
আমি মাটিকে ধীরে ধীরে তরল হতে দেখি 
               আর চোখের সরল দিয়ে 
                        স্নেহ আঁকি 
                মা- শশকটির মতো করে ...

মাটির খোঁয়াড়েই শরীর তোমার
আমারও শরীর খেয়ে যায়  মাটির সকাল 
          শুধু 
চোখদুটো রেখে যায় ।
দেখে যায় ,
                বুদ্ধের বঙ্কিম বুকের ভেতর 
   অপার করুণায় ।




২।।  ∆  অন্যনাম ∆



আকাশ এর মাথা থেকে 
           সমস্ত চাংড় খসে পড়লে 
একটা আকাশমণি গাছের গুঁড়ি -
আমাদের 
    গুঁড়ো গুঁড়ো পললভূমি 
         আর সৌরখচিত মাঠের 
স্বপ্ন দেখায় -

স্বপ্নেও আমাদের বুকে 
     একদিন আকাশমনির জঙ্গল হবে
 জঙ্গল থেকে তিরতিরে নদী ! 
            চোখে চোখে কুমারী 

সেইতো মিড় ভেঙে মাথুরের সময় 
সেইতো আমাদের প্রাকৃতিক পদাবলী !

প্রেমতো এমনই এক প্রকৃতির ডাকনাম 
যার আবিশ্ব বর্ষা ,ভালোনাম - ভালোবাসা |



    
৩।।    ∆ শ্মশান ∆



আমাদের প্রত্যেকের বুকে শ্মশান থাকে ।
যেমন থাকে -
ঘুমের ভেতর ঘুম  
স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন ।

 বর্জ্য  জমতে জমতে 
একদিন পাহাড় হলে 
সেই পাহাড়ের কোলে , মেঘের ফাঁকে 
দক্ষিণমুখী জলাধারের পারে -
জেগে ওঠে বধ্যভূমি ।

 আমাদের কুন্ডলিনী চক্র পোড়ে
                        হাওয়া-মোরগের ঠোঁটে  

প্রেয়সী দাঁড়িয়ে থাকেন : ঠিক যেন বজ্রযোগিনী 
যাঁর প্রচন্ড কাতরিতে - 
খাঁক হয়ে যায় ,
আমাদের অতীত ও আগামী ।





৪।।   ∆ কুঞ্জবনের কথা ∆



রাই , একটু ভালোবাসার কথা বলো ।
সুমি কই ?
সরপুঁটিদের ঝাঁকে পা টিপে টিপে 
প্রিয়াঙ্গী বিরজার জলে
আলগোছে লুকিয়ে এসেছি ওকে ।
তাঁর ময়ূরী দেহে
    কাজল ফুটলেই 
                     আবার যাবো ।
এখন দমবন্ধকর দুপুর ।
তালাবদ্ধকর কুকুরের মতো 
লালা ঝরছে দ্যাখো ;
রাই , একটু মুগ্ধতার কথা বলো ।
আমার বুকের হাড়বাঁশি ,তোমার নূপুরনিক্কণে-
ক্ষুধাও উধাও হয় জানি ;

হাওয়ার ঘাগরে ভাসছে দ্যাখো অগুরু চন্দন...
 
     রাই , আজ আবার কুঞ্জবনের কথা বলো ...।





৫।।    ∆ পরিযান ∆ 



বালিকা বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে 
      চখাচখিরা উড়ে গেল | 
সিঁথিহাঁসের চোখে 
    আমি তোর নাম 
           বিড়বিড় করলাম কিছুক্ষণ |
বিড়বিড় করতে করতে একা একা ভাত খেলাম | আধপেটা খেয়েই উঠে গেল তিতির |
তারপর, এক্কা দোক্কা খেলতে খেলতে 
            তুইও উড়ে গেলি  ...
মহাজনের মারের মতো ,
         বুড়ি বেলগাছটিতে 
                 আটকে রইল 
              নীল পরিযানের পালক |




অলংকরণ - মঞ্জু হেমব্রম

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি সুমিত পতি’র কবিতা-





১।।   ∆ ঐশ্বরিক ∆



অনতিক্রম দূর নক্ষত্রের চোখের আলো নিয়ে লিখিত ইতিহাস।
দুপুরের ফেরিঘাটে অলস মাঝির ঘুমে জেগে থাকা স্বপ্নদোষ 
কিংবা নিপুন টোপের ওপারে মাছেদের গেলা, না গেলা সন্দেহে;
অনন্ত ঈশ্বর মেলে দিলো ডানা আকাশে - আকাশে, মেঘে - মেঘে ।

নিজস্ব বোধের অতল তলে সাজিয়ে রাখা ক্ষমার সৌন্দর্য্য।
ঈশ্বরের হাত ধরে নিয়ে যায় জীর্ণ, কীটদস্ট কাব্যের পাতায় ;
নতুন করে লিখিত হয় ইতিহাস, মর্মর জীবনের দুঃসহ সংলাপ।

বোধ থেকে ক্রমশ কেঁপে কেঁপে ওঠে লিখিত জীবনের কথামালা 
নিজস্ব ভালোবাসার আকার ইঙ্গিতে ভাস্বর হয়ে উঠে ঈশ্বরের কায়া। 




২।।   ∆ জরা ∆



জরাটিও রেখে দিয়েছি নিজেরই নামের পাশে 
খাক কুরে খাক প্রিয় যৌবন, যাবতীয় স্বপ্নদোষ
পরকীয়া ভোরের আলো গৃহস্থকে সবেমাত্র ছুঁয়ে গেলো
'প্রিয়' - তোমাকেই, সাজিয়ে দেবো অরূপরতন, প্রিয় নিবারন।

ঝুমুরের সুরে ভেসে ওঠা স্বামীহীন রমণীর অচেতন উৎকণ্ঠায়
বহুকাল ধরে বেজে চলে যৌবন সঙ্গীত, পিপাসার গান...
শরীরের মড়ক থেকে চোখে ফুটে উঠে নাগরের জন্যে তীব্র অভিমান।

আমি তো বরাবর 'নাগর' হতে চাই; রমণীর দেহজ অহংকার 
জরাটি কেবলই জড়িয়ে ধরে, হৃদয় হয়ে উঠে বৃদ্ধ আশমান।




৩।।  ∆ পাঠক্রম ∆



শরীরে শরীর মিলে গেলে রাত্রি রচনা করে কবিতার ঢেউ
ভালোবাসা হয়ে উঠে সীমফুলের মতো নীলাভ বেদন
আলগা একটা নির্ভার জীবনে যতো আলোর রোশনাই
তুচ্ছতার শেকড় উপড়ে নিয়ে আসে কাব্যের উদার আকাশ।

মিলে যায় রাতের অন্ধকারে আকাশের যত কালো রঙ
রাতচরা পাখির চোখে লেগে থাকা চৌর্যবৃত্তির মহিমা 
সদ্য যুবকের বুক থেকে টেনে আনে অতল প্রেমের সংবাদ।

রাতের দরজা - জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে ভালোবাসার পাঠক্রম 
শরীরের নিয়মেই জাগে শরীর, কাব্যে লিখে যায় কেউ কেউ।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°


কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি মানবেন্দ্র পাত্র’র কবিতা-





১।।  ∆ খনন ∆



১. 
ধীরপায়ে এগিয়ে আসে কুচকাওয়াজ
ক্রীতদাস অন্ধকার আটকে থাকে
মশারিতে,আলনায়

আমি চাদর জড়িয়ে পরোয়ানা হাতে
দু-দিকে তাকাই
রাস্তা পেরোই।

তোমার ফ্যালনা ঘরদোর মুছে যেতে থাকে।

২.
নচিকেতা এবার জানিয়ে যাবে আমন্ত্রণ

এ-সময় ভিক্ষাপাত্র হাতে বুদ্ধের ওই ছবি 
যত্ন করে টাঙিয়ে রাখো দেয়ালে

নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে
শুধু
" উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত...."

৩.       
কেউ খিদে নিয়ে শুতে গেলে
 অট্টালিকার সর্বোচ্চতলে বীণা বাজে

আমরা সামাজিক তো? 
এ পরিচয় ভালো জানে কাকেরাই।

আমরা সুযোগসন্ধানী
শুধু মাটি খুঁড়ি! 





২।।    ∆ সমর্পণ ∆
              


মেঘ ভাঙে সারারাত পথে পথে ভিজি
উলঙ্গ মাঠের মাঝে বসে থাকে ঈশ্বর এক
খিদে পায় অচেনা বৃত্তে তাই বারবার ঘুরি
কলিঙ্গ নগর খুঁজি, বোধি বৃক্ষের সমাবেশ।

কবে থেকে মাখছি ধুলা শরীরে শরীরে
আকাল পার করা বুড়ো নিম গাছ  --
জেগে থাকে সারাক্ষন বুকের ভেতরে
জ্বর এসে এঁকে যায় রাতের কোলাজ

জেগে আছি ঊজ্জয়ীনি মগধের পথ
গভীর রাতের চাঁদ মাথার ওপর
টেরাকোটা মায়ামুখ কিছুটা শপথে
আমাকেও ডেকে যায় কুয়াশার ভোর

এরকম অঙ্গীকার ! পাথর বসানো দু চোখ
ভেবেছি ঈশ্বর বুঝি ঈশ্বরীও হতে পারে
আমারতো নেই আর দেবার একটুও শোক
নিঃশ্বাস টুকু ছাড়া সব কিছু তোমার দুয়ারে ।




৩।।   ∆ বসন্ত ∆
 


অনেক রাতের পর আজ মধুরাত
নিকোটিনহীন

কৃষ্ণচুড়া হোক কিংবা রাধাচুড়া
টিউলিপ কিংবা রডোডেনড্রন
মিলে মিশে যাবার প্রত্যাশা

অথচ
ঢুকে পড়ছি ম্যানহোল
ফুটপাথ শিখিয়ে দিচ্ছে স্যাডো
গতিপ্রকৃতি,  কামু - কাফকা
ক 'অক্ষর ভুলে যাচ্ছি আর রক্ত মাংসময় পৃথিবী যন্ত্রনায় নীল হতে হতে
ভেসে যাচ্ছেন 

কসাইখানায় বসন্ত আসেনা বোধহয় !




৪।।  ∆ ঋতু ∆



কে আর জেনেছে পূর্ণ - নিটোল তাকে
যে এখন প্রাচীন মাটিতে শুয়ে শুয়ে 
বেহালা বাজায়!
এক জোড়া হাঁসের কালোজল চোখ
এক মনে আমাকে দেখেছে খুব।

সহচর-সহচরি তারা
মিলিয়ে মিলিয়ে সেই সব আশাপ্রদ রাগে 
উষ্ণতায় বেজেছে
আর
খতম করেছে শীত
রাতের পিপাসা...

আজকেও ম্যাজিক মেমেন্ট এ
ভালোবাসা তার লাল ঠোঁটে 
এরকমই
বিন্যাসে খেলা করে
জানিয়েছে চিরহরিৎ গাছ।
তোমাদের ট্রাফিক সিগন্যালে।

আমার তো খাঁচায় রাখা এমনই উত্তাপ
সারা সময় ট্রেন ছুটে যায় -

অলৌকিক এক জানালার পাশে
যারা বাসা বেঁধে আছে
তাদের দেখাই আমি সবুজ সংকেত!

পরোয়া করিনা কিছুই

নির্বাসনের এই সময় পেরোলে
দেখে নিও
মাঝে মাঝে ঋতূকাল

নিজেকেই চেটেচেটে খাই...




৫।।   ∆ পাতা গান ∆



প্রতিটা কনিকার ভেতর আমাদের ঘর-বাড়ি 
সহবাসময় ঘ্রাণ 
যতটা তুমি এবং আমি। 

নিদারুণ রাগ বাজায় যে বাঁশি 
তাকে জাগিয়ে রাখে খোয়াব, ডুলুঙ 
আমের পল্লব...

প্রতিটি চক্ষুদানে মিশে যায় কনিকা।

এক, দুই, তিন 
এই সময় আরোগ্য আল্পনা আঁকে
আর
তুমিও কি কখনো আঁকোনি কাজলের মেহফিল?

সরবতের দ্রবণে মিশে যাই 
তুমি অনায়াসে চুমুক দাও সুমিষ্ট চকমকি

আমার বসতঘর হয়ে বাতিস্তম্ভের দিকে চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
দেখি
পর্যাপ্ত অসুখ।

ও আরোগ্য 
শরীরে এসো এখন

আমপাতা হই।




ছবি বন্দি- মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি দুঃখানন্দ মণ্ডল এর কবিতা-






১।।    ∆  হে প্রেম ∆



তুমি যাকে অপেক্ষা বলো
আমি তাকে অনুরাগ বলি।

তুমি যখন অনুরাগের মানে জানতে চাও
আমি প্রেমের কথা বলি।

তুমি প্রেমের মানে খোঁজও অনন্ত আকাশে
আমি তোমার তর্জনী ধরে বলি চলো।

 তুমি বলো তোমার হাতে উষ্ণতা আছে
আমি বলি তোমার চোখে রামধনু আঁকা।

তুমি দেখো রামধনুর মাঝে প্রেমের বৃষ্টিখেলা
আমি বলি খানিক পথ বাকি ঘর বাঁধার।




২।।   ∆ অনন্ত পথ ∆



যুদ্ধ আর জীবন কেমন যেন একটা সম্পর্ক 
জীবনের জন্য যুদ্ধ বা যুদ্ধের জন্য জীবন
জটিলতাগুলো একত্রিত হয়ে উঠে 
শক্তি বাড়ে শত্রুর। 

জয় বা পরাজয় দুই শত্রুর হাতে
আমরা কেউ বলতে পারি না;
তুমি পরাজয় বরণ করো।
অস্বীকার করবে।
আসলে তারও জীবন অধুরা।
কেন না একসময় যুদ্ধ বন্ধ হয়
শূন্য জীবন বিস্তৃর্ণ মাঠ।

জীবন বা যুদ্ধ একটি অবয়ব রেখা
দেহতত্ত্বের সুর ভেসে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশে।
             



৩।।   ∆ পুরানো হওয়ার আগে ∆
 


পরিচিত ব্যথা ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যায়
আঘাতের পর দ্বিতীয়বার মনে হয় না আঘাতের পরিমাণ। 

একটি পথ সরলরেখা ছেড়ে ভিন্ন পথ ধরে
পরিচিত মুখগুলো নেই অপরিচিত যাত্রাপথে।

দেখা না হওয়ার বিষয়টি নাও থাকতে পারে
নতুন পথ,কিন্তু কথাগুলো খুব পরিচিত-পুরাতন ব্যথার মতো।

আমি এখন অন্ধকারে বৃষ্টি দেখি
আমি এখন তোমার জন্য নয়,বৃষ্টির কথা শুনি কান পেতে।

অভিনয়ের পর্দা সরে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে
মেকআপ তুলি শেষ করতে পারছে না প্রলেপরূপ।

সময়ের সাথে যুদ্ধ করছে দর্শক 
তোমার সাথে দর্শকের দূরত্ব বেড়ে চলেছে তোমার অলক্ষ্যে।




৪।।  ∆ পরিযায়ী ৬ ∆



যন্ত্রণা তোমার, আমার কাছে তোলা 
ঘরে ফেরার কথা পথ অনেকখানি 
 মন অনুভব করে শরীরি ক্লান্তি 
তবু ঘরে ফেরা নিজের মাটির কাছে।  

ভালবাসো বলে ফিরে এসেছো 
কিসের টানে তা জানা নেই
কিসের জন্য দূরত্বের সৃষ্টি তাও জানা নেই
 মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তোমার হাতে পোঁতা গাছটি।

গোয়াল দুয়ারে বাঁধা তোমার প্রিয় জীবটি ডাক দেয়
ঘরের চাবি হারিয়ে গেছে শেষবার উত্তরী খোলার সময়
এখন তুমি অতিথি,এখন তুমি পরিযায়ী 
 তোমার মাটির কাছে, তোমার জন্মভিটার কাছে।




৫।।   ∆ দাগ ৩৩ ∆



মৃত্যু কি এমন ভাবে আসে! আমার জানা নেই।
আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে ঘুম
আমি স্বপ্নে দেখি মাথার সামনে মৃত্যুদূত অপেক্ষারত
ঘুম ছাড়ছে না, ভোরের আলোও ফুটেনি এখনো
একটু ঘুমতে দাও। কত কথা স্বপ্নে তোমার সাথে
মাথার সামনে অপেক্ষা করছে আত্মাবাহক।

জীবনযাপন শেষ। সময় ধার দেওয়ার কোনো সুজন নেই
দেহটি ঘুমিয়ে আছে। ভোরের আলো পড়ছে জানালা দিয়ে।

এখন আর চেনা যায় না আবছা মুখটা। 
অনেক দিন ধরে জলের গ্লাসটা খালি পড়ে আছে।




অলংকরণ - মঞ্জু হেমব্রম

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩


কবি দেবাশিস মাঝি’র কবিতা-




১।।   ∆ নিষিক্ত সংঘাতের নেপথ্যে ∆


                   
নেশার আবেগে ছায়ার প্রতিবিম্ব
ঢেউ খেলে যায় সাঁকো শরীরে
মঞ্চের নেপথ্যে অশরীরী মুখোশ
কলকাঠি নাড়তে নাড়তে রাইফেলে হাত রাখে।
সীমান্তে সীমান্তে ড্রোনের নজরদারি ...

হিমেল হাওয়ায় সোনালি সকাল
সুগন্ধি জীবন সাহচর্যে নামতার খসড়ায়
ডুব দিতে দিতে বেহুঁশ ,
উন্মত্ত শিকারীরা স্বল্প-মেয়াদী সুখে-
অন্তর্বাসে ঢাকা বৃত্তপথ পরিক্রমায় ঔৎসুক।

ভারী বিষন্ন বাতাসে জেগে উঠছে চরাচর-
বেআব্রু অভিসারী সাজে সংলাপ মুখর দিনরাত,
শান্তিজল ছিটানোর মহড়ায় কনভয়ের মৃত্যু ভয়।
সরল বিশ্বাসগুলি সংগোপনে গৈরিক ধুলোয় এক এক মধুমাস,
পাথর ভাঙ্গার গান আর বর্ণপরিচয়ের পাতায়
মন আবিষ্ট করে তোলে সরস ঠোঁটে।
ব্যারোমিটারের পারদ অনেকটা নিচে-
সুতো ছেঁড়া ঘুড়িগুলো বেপথু হচ্ছে সীমান্তের ওপারে,
তারাগুলি ঢেকে যাচ্ছে মেঘে।
আশ্চর্য এক আঁধার ধেয়ে আসছে...
নতুন গাছের শিকড়গুলো অসহায়প্রায়
অসম্পূর্ণ অক্ষরের হাত ধরে
সাঁকো পার হবো যদিও পরবর্তী পথ
ফিনফিনে কুয়াশায় ঢাকা!





২।।   ∆  কায়া- ছায়া- মায়া ∆
               


চলমান ছায়ার পিছনে ছুটছিলাম
এক অর্বাচীন অনিকেত সময়ে
তার অস্তিত্ব অবয়ব সবকিছুই নাগালের বাইরে
তবুও সেই ছায়া, কায়া হয়ে সামনে পিছনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিভিন্ন ভাবনা দুঃস্বপ্নের স্মৃতি
দুর্বিনীত ঘোড়া ছুটিয়ে ধরতে পারিনি,
শুধু নির্বিকার আরোহী হয়ে দেখেছি অপলকে
তার কল্পনার শরীরী লজ্জা।
অন্ধকূপের পাশে দাঁড়াই
সেই অস্বচ্ছ ছায়া এখন অতল গভীরে
কেঁপে উঠছে আমার প্রতিবিম্ব
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা,
পরাবাস্তবতা
ছায়া কায়া নাকি কাঙ্খিত মায়া!




৩।।   ∆  বর্তমান-পুরাণ ∆
                     


কালো মোড়কে উপঢৌকন রাত
আঁতুড় ওয়ার্ডে কান্নার অনুরণন
দৈবকীর আর্তনাদ- 
এক হাঁটু জ্যোৎস্না ভেঙে
চাঁদে মুখ ডুবিয়ে নদী পারাপারে ব্যস্ত বাসুদেব।

অনায়াস তৃপ্তির অন্তরঙ্গতা,
অপার্থিব মায়াজাল মুক্তির স্বাদে আত্মহারা কংস।
আশ্চর্য সুন্দর হারানো দিনগুলি খেলা করে আজ
সমুদ্র বিছানায় নিষিদ্ধ রাত্রিকে আড়াল করে।

যশোদার এখন আলো করা সংসার
বহুতল মল, সুইমিং পুল
গোপিনীর বিকিনির মধ্যে জেগে উঠছে
হাজার আলোকবর্ষের পথ
রাবণ রাজার সীতা চুরির ছক...




৪।।  ∆ অন্তরঙ্গতা ∆
       


যে নদীর পাশ দিয়ে আমার প্রতিদিনের যাত্রা শুরু
তার জল, সূর্য থেকে বিকীর্ণ তাপ
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে- 
আমি নাকি তার প্রতিবেশী।

যে পথ দিয়ে রোজকার 
গন্তব্যে পৌঁছাই,
সেই পথ বলে-
আমি নাকি তার আপনজন
কারন আমার পায়ের চিহ্ন
থেকে যায় তার বুকে
 ফসিল হয়ে ...
দুপুরের নৈঃশব্দভেদী ঘুঘু চিৎকার করে বলে-
এখন কালবেলা...

ভালোবাসা নাকি আজকাল প্রহসন!
কালো মেঘ উড়িয়ে মেঘ বালিকার একগুচ্ছ প্রেম
বাস্পে বাস্পে সমুদ্রে ইমারত গড়ে।
অক্ষর ও অন্তরের একাত্মতা থেকে নাকি কবিতার জন্ম,
ভালোবাসা নদী কিংবা পথ
যার জন্ম মৃত্যু সূত্রপাতের কেউ খতিয়ান রাখে না।
অক্ষর বাঁধানো আলপথ ধরে কবিতা হাঁটে
পাতায় পাতায় আল্পনা আঁকে,
ফেলে আসা স্মৃতির পাতায়
ছাপ পড়ে থাকে শুধুই অতীত
জোয়ার ভাটার আবর্তনে
চোরা বালির চরে চরে...




৫।।   ∆ সম্পর্ক ∆
            


হাতে হাত রেখে যে সম্পর্ক তৈরি হয়
প্রদীপের আলোয় ধরা পড়ে তার প্রতিচ্ছবি
মুখে মুখ রেখে যে প্রতিফলন তৈরি হয়
আয়নার শরীরে ভেসে ওঠে তার গভীরতা,
দহনের মানে বুঝতে বুঝতে
আগুন একদিন দাবানলে লাফ দেয়।

শামুকের খোলে লুকিয়ে থাকা
আস্ত একটা জীবন
পরিস্থিতি দেখে স্থান বদলায়
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে...

মাঝরাতে চাঁদকে ছোঁবো না বলেই
অন্ধকারের দিকে পা বাড়াই,
আস্থা অনাস্থার প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে
ভ্রমণ সুখের অবিনশ্বর শক্তির টানে-
সেলফোনিক দূরত্ব ভেঙ্গে
দৃশ্য অদৃশ্যের নির্বাসনে
ভালোবাসার সম্পর্ক 
ঘুরে ফিরে আসে
চিরন্তন স্পর্শের শরীর বেয়ে।



ছবি বন্দি- রাখী মাহাতো

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°


কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি অরুণ ভট্টাচার্য’র কবিতা-




১।।   ∆ অন্ধকারের ভেতর ∆



সূর্য আড়াল হলে কোন দিন অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করি। দীর্ঘ এক অন্ধকারের ভেতর একান্ত ভ্রমণে 
অকস্মাৎ একটা মোমবাতি জ্বেলে দিল ফেলে আসা দিন,  সেই আলোয় কয়েকটা চেনা মুখ মুখোমুখি আমার !
চমকে উঠি থমকে দাঁড়াই.. এসকল অবিশ্বাস কি সাংঘাতিক জীবিত এখনো !

 পাথরের নিস্তব্ধতা ভেঙে সমস্ত জগৎ ঢেকে নিই চোখের পাতায়
আর বুঝি 
কতখানি অবিশ্বাসী এরা..
    সে কথা শুধু বিশ্বাসই জানে।




২।।  ∆ জন্মদিন ∆
           


এবারেও এসেছিল জন্মদিন অস্ফুট শব্দে মালগাড়ির মত, তখনও আমি স্টেশনে দাঁড়িয়ে।
 ধূসর খয়েরী তার শরীর ধুলোমাখা পৌষের মত।

 এভাবেই দিন আসে বছরে
বছরে আর মাসে 
বুঝে নেয় তুলে নেয় নতুন পুরনো সব ভার,
 চলে যায় সেইভাবে দিগন্তের দিকে ।

তারপর বকুলের ঘন পাতার ভেতর কাকের পালক বেয়ে কচুবনে অন্ধকার নামে।
আমার দুচোখে তখন লোডশেডিং পৃথিবী।

 এই রাত্রি এই কাক আর আমি 
দ্রুত হেঁটে যাচ্ছি তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশ দিয়ে- জন্মদিনের একটা কেক কাটার নেশায়।




৩।।    ∆ গ্রহণ ∆
         


ক্রমশঃ গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার কক্ষ পথ থেকে সরছে আলো,
অন্ধকারে অবগাহনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

পিচের মতো জমাট হলে অন্ধকার দিয়ে নির্মাণ হবে রাজপথ ‌।

এ সময় জাগো -
 গ্রহণ দোষে ঘুমোতে নেই।
 রাহুমুক্ত হলে কবিরাই আলোর দিশারী হয়।




৪।। ∆  কুরুক্ষেত্র ∆



এক সময় থমকে যায় কলম রক্তচাপ বাড়তে থাকলে বলি 'হাই প্রেশার' । আহা কি সুন্দর শব্দ !
আসলে বোঝাটা বড় ভারী বলাও যায় না - ফেলাও যায় না ।
বইতে বইতে ধমনী শিরায় আগুন জ্বলে..
তখন ভীষ্মের শরশয্যা ।

নাকি শান্তি রাজ্যের পূর্বাভাস !





৫।।     ∆ বাঁচো ∆ 
      


সবটুকু ব্যস্ততা-  হিসেব-নিকেশ 
ফেলে দাও ডাস্টবিনে
 ফিরে পাবে অন্তহীন শ্বাস। পুরসভার গাড়ি আসার আগে
এসো এই অনিঃশেষ পথে.. আশ্রয় নিই ঈশ্বরীর ত্রাণশিবিরে 
আকাশ যাপন করি 
গড়ে তুলি আরেক বাগান।

 মৃত্তিকা - বৃক্ষ - বাতাস ফিনাইল ঘ্রাণ।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি কৌশিক বর্মন এর কবিতা-





১।।  ∆ 'যতিচিহ্ন' ∆



আমার জীবনে কোনও যতিচিহ্ন নেই
সময়সরণীতে নিত্যকালের শিল্পী আমি
শৈল্পীক নগ্নতায় সুন্দরের আলো ধরে দাঁড়িয়ে আছি

ঈশ্বরের বাগানে যে দেবীমূর্তি দেখছ
তারও কোনও নাম নেই গোত্র নেই তবু
সে পুজো পেয়ে আসছে

ওই দেবীমূর্তিও কোনও যতিচিহ্ন নেই
আমি তাকে হাসতে দেখেছি সিন্ধুসভ্যতায়   বৌদ্ধযুগে মুঘলসাম্রাজ্যে চৈতন্যের হাত ধরে

আজ ওই হাসির তীব্র শ্লেষ
আমার জীবনের সমস্ত যতিচিহ্ন মুছে দিয়ে গেছে
               শৈল্পীত নগ্নতায়
আমি উদ্ভাসিত হয়েছি তোমার প্রেমে... কৌশিক





২।।   ∆ প্রেম ∆



আমাকেই কেন বাঁধলে ভালোবাসায়
আধখেলা পূব জানালায় রেখে চোখ
রাতের পাখিকে কী গান শোনাতে চাও
শোনও মন দিয়ে তোমাকে বলছি মেয়ে

তোমাকে বলছি ঘোরাধরা পার্ক থেকে
রাতের আকাশে এখনও অনেক গান
ভেসে যায় দূর ঠিকানাবিহীন পথে
তুমি জেগে কেন লাজরাঙা ভালো মেয়ে

শোন লক্ষীটি- তোমাকে বলছি আমি
ঝড় থেমে গেলে সব কথা যাবে ভুলে
রাত শেষ হলে আজানের সুর শুনে
স্হির হবে তুমি ফল্গুচোখের জলে




৩।।   ∆  সাম্যের কবি ∆



বিদ্রোহী কবি নজরুল তুমি সাম্যের কথা বলেছ 
জাত- বিভেদের ঊর্দ্ধে উঠে জীবনের গান গেয়েছ
"বুকে নিরবধি বহে শত নদী" - সেই স্রোতে আজও ভেসেছ
শিকল পরে শিকল ভেঙে বন্ধুর পথে হেঁটেছ

তোমার দেখানো দুর্গম পথে শত শহীদের খুনে 
"বালাশোর বুড়ি বালামের তীর" রক্তে গিয়েছে ভেসে 
"জাতের নামে বজ্জাতি" ছেড়ে হিন্দু মুসলমান 
একই বৃন্তে ফুল হয়ে ফোটে ভুলে সব অভিমান 

কান্ডারী তুমি পথের দিশারী অগ্র পথিক গোকুল নাগ
উন্নত শির সুর সৈনিক বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত প্রাণ
সম্প্রীতি আর ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নাও চিত্তকে
পরোয়া করো না, প্রার্থনা করো সৃষ্টি সুখের উল্লাসে

দুখু মিঞা থেকে কাজী নজরুল কাল প্রবাহের স্রোত
কত না অভাব দারিদ্র ঋণ শরীরের রোগ ভোগ
তবু ইতিহাস আজও মনে রাখে বিনম্র শ্রদ্ধায়
গানের কলিতে বেঁচে আছো কবি সাম্যের কবিতায়।  




৪।।  ∆ 'মৃত্যুযাপন' ∆



প্রিয় দুঃখগুলো দিয়ে একটা বাড়ি বানাব
প্রিয় স্বপ্নের বাড়ি
দরজায় ঝুলবে আফসানি রঙের পর্দা
টুকরো স্মৃতিগুলো জানালায় এঁকে দেবে 
আরর্চাড সময়ের বৈচিত্র
ঝকঝকে মেঝেতে পাতা থাকবে পুরু জল রঙের কার্পেট
নিঃসঙ্গতার রঙে ভরিয়ে দেব
ভালবাসার চারদেয়াল

একদিন সেই ঘরে
গভীরতার ভেতর মিলিয়ে যাব একাকীত্বের অহংকারে
পশ্চিমের ভেন্টিলেটারে চোখ রেখে সময় সরনিতে
হলুদ পাতার মতো ঝরে পড়ব
      তোমার বসন্ত বিকেলে




৫।।  ∆ 'স্ট্যাচু' ∆



চশমার গ্লাসে আটকে আছে ওষ্ঠরাগ
সামনে যা কিছু সবই ঝাপসা মায়াছবি
অথচ চোখে কোনও ব্যাধি নেই
যত ব্যাধি সব মনের হারেমে
         মুক্তো হয়ে বেড়ে ওঠে

আজকাল চাপচাপ অন্ধকার ঘন হয়ে নামে
বর্ণমালার সাজে রূপসঙ্গীরা
             বাইশ থেকে বাহান্ন
মিলেমিশে হৈচৈ

পুরুগ্লাসে একজোড়া মাসকারা চোখ
নান্দনিক ঠোঁট সুডৌল বুক নিয়ে
একজীবনের দৃষ্টি ঝাপসা করে বহাল তবিয়তে
থর আর চেরাপুঞ্জির মাঝখানে
আমাকে স্ট্যাচু করে রেখেছে

আমি না পারি জীবনের কথা বলতে
না পারি মৃত্যুর কথা লিখতে




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি শ্যামলী সেনগুপ্ত এর কবিতা-





১।।    ∆ পৃষ্ঠা ∆



ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি এক প্রবল খাতের গভীরে
ঝড় উঠেছিল,
ঝড়ের সোঁ সোঁ গ্রাস করেছে
ঘর ও বাহির
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে মেপে নিচ্ছি
জল ও অন্ধকারের শ্বাস শব্দ
উজানে সাঁতার কাটছে মীন
হলদে পাতার মতো,
রোজ রাতে পরের দিনের 
সূর্যের কথা ভেবে রাখে জীবন

তেমন কোনো শিল্পীর দেখা নেই
যে কোণামুড়েরাখা পৃষ্ঠার মতো
চিহ্ন এঁকে দেবে 
জীবনের মগডালে
           




২।।  ∆ বন্ধ্যা সময়ের চার-ছ' পংক্তি ∆



জঙ্ঘা ও হাঁটু মুড়ে গেলে
একটি 'দ' তৈরি হয়
ভেতরে শুয়ে থাকে দু'মুঠো
জলজ ঋণ...একটি বিজ্ঞাপন৷

আমি মুহূর্ত গুনি
       



৩।।  ∆ সেটস্কোয়ার ∆



ছড়ানো বাহুদুটি সমকোণ হলে
অতিভূজে বুনেদিই বৃত্তীয় আলাপ

বিন্দুগুলি সংকুচিত হয়
          




 ৪।।  ∆ অসুখ ∆



পুরনো চিঠির ভাঁজে
অসুখের নাম লেখা থাকে...
অসুখ ভীষণতর হলে,
তাকে আমি উনোনমুখী বলি
         




৫।।   ∆ সমীকরণ ∆



মাঝে মাঝে অন্ধকার ভালো লাগে
অন্ধকার = রাত
এসব সমীকরণে যাই না
 রাত মানে ঘুমঘুম চোখ
হতে পারে নীলাভ কোনও অক্ষি-পিঞ্জট
অথবা উজ্জ্বল আলোর নীচে ধোঁয়ার বুদ্বুদ

সকাল জুড়ে আসা বাদুলে-চাঁদোয়া
পাতা ও পতত্রীর ঝিরঝিরে গান
একলা কুয়োটির গভীরের ছায়া
এসবও হতেই পারে লেফট-সাইড
ইক্যুয়াল-টু আমিই সমাধান



        
অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°