রুমি’র কবিতা-
১.
∆ স্বপ্ন ∆
একটা শতছিন্ন কাঁথায় পাঁচজন শুই,
টানাটানি করে টুকরো টুকরো সুখ ভাগ করে নিই চোখের পাতায়;
মনে পড়ে সেদিন শাস্ত্রীয় গানের জলসায়-
হঠাৎ সুর ছেঁড়ে,ছেঁড়া তানপুরার তারের সাথে -
দু'প্রান্ত জোড়া লাগেনি ,তবু তানপুরাটা ফেলে দেয়নি....
পূঁজিবাদীরা আমাদের ওখানে ঢুকতে দেয় না, তবু আমরা সব জানি!
তথ্যগুলো বাতিল টায়ারের খোলে
জমা তরলে গচ্ছিত রেখেছি,
সাম্যবাদের প্রতিষ্ঠা হবে কাল।
আজ আমি সাঁওতাল রমনীর স্বপ্ন দেখি
আঁটোসাঁটো চেহারার-
মুকুটের মত হেলানো খোঁপায় গোঁজা জলজ লিলি -
ওর নাম 'মধূপ'......
আমার 'টাড়বারো' হওয়ার ইচ্ছা খুব।
২.
∆ সেভাবেই ∆
যেভাবে ক্ষয়ে যায় মুগ্ধ চাঁদ, ঝাঁঝি জ্যোৎস্না ও রূপোলী রাতে-
যেভাবে রোজ মরে মাতাল নদী, উড়ে চলা বৃরের দমকা হাওয়ায়-
যেভাবে জোনাকীরা ওড়ার শেষে ভুলে যায় প্রত্নতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার-
সেভাবেই প্রকৃতি আধঘুমে কেঁপে ওঠে,
স্বপ্ন ধাঁধায় হাসে জীবনের সরল হাসি,
সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে নিভন্ত প্রদীপ হাতে!
যেভাবে রাত্রির অগভীর ঘুমে, অভিজ্ঞতায় শিখে নেয় স্বপ্নময় সংগীত-
যেভাবে ভোরের চৌকাঠ ভরে থাকে প্রগাঢ় অন্ধকার শেষের বার্তায়-
যেভাবে কবর ভেঙ্গে উঠে আসে আবছায়া ঘোমটার বয়সী ইঙ্গিত-
সেভাবেই এলোমেলো পথ চলি,
পিছনে পথের বাঁকে থেকে যায় একলা হৃদয় !
আমার তখন ভিক্ষু বেশ, হাতের মৃৎপাত্র অদৃশ্য।
যেভাবে লাবণ্যরাত বৃষ্টিতে ভিজে অবশেষে হয় নিখোঁজ অভিসারীকা-
যেভাবে নাকচাবি নক্ষত্রফুল ছিঁড়ে পড়ে পথে জীবনের যা কিছু ধ্রুব-
যেভাবে তারুণ্য দুমড়ে মুচড়ে সঘন মেঘ জমে আকাশের গায়-
সেভাবেই বহুদিন পর আজ বৃষ্টির দিন,
জানালায় বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু,
রাতরঙা শাড়িতে বেশ লাগে আঁধার!
যেভাবে হেমন্তের পাতাঝরা সমারোহে মধু যন্ত্রণা বুকে বাসা বাঁধে-
যেভাবে অন্তরের দূর্বা তরুণ জলের উপর ভাসে শরতের চাঁদ-
যেভাবে বিবশা দৃষ্টি মাপে পাখির ডানার মত ওচোখের মুগ্ধতা-
সেভাবেই সদ্য ভূমিষ্ঠ মোহ; ছায়া হয়ে হাঁটে,
মধ্যরাতের উঠোনে পড়ে থাকে ভালবাসার শিউলী,
তবু কেন আবরণ খসিয়ে আভরণে সেজে উঠি জান?
৩.
∆ সমান্তরাল-পথ ∆
আলতো ধোঁয়াময় সন্ধ্যার কাঁধে ভর করে সমান্তরাল হাঁটা সহজ নয় গো ভ্রমর!
শরতের গন্ধ লেগেছিল যে বাতাসে,
আগমনী গাইছিল শিশির ভেজা দূর্বার
গৈরিক বসন-
তুমি তো দেখেছিলে!
নিঃশ্বাসে আলসেমি আমার একলা বিকেল; একাকী রাতে,
কল্পিত মেঘে-
কাব্য লিখি গো ভ্রমর,
টুকরো হৃদয় পেতে শুনি তোমার দীর্ঘশ্বাস!
নদীর গল্পে মগ্ন পাঠক হয়ে-
জেগে থাকি উল্কাবৃষ্টির আশায়!
উৎসবের আমেজ মাখা ঘুঙুর রাতে
আমি তো শুধুই শ্রোতা গো!
কর্ষিত জমি যে বিপথগামী-
বন্যার মত অবুঝ স্বৈরাচারে আনন্দিত,
তাও তুমি জানতে ভ্রমর!
অপরাজিত মেঘে তৃপ্তির নিঃশ্বাস-
দেহের অলিন্দে ঝোলানো ছিল দাম্ভিক তাবিজ,
দহনে যে ভস্ম হয় গো স্বপনের গ্রাস-
সঙ্গিহীন হয় পাখির চোখ!
তুমি তা বোঝনি ভ্রমর...
তুমি অত বোঝনি....
৪.
∆ শুইনচ্যিস-বো ∆
গাঁইয়ের লুকে জাইনত সুবাই
বৌ ন্যেওটা আমি,
তুর লাজ্যে রাঙা গাইল, জানান দিত্য-
মু বট্যি মুন্যের মতন সোয়ামি!
সানকাড়া মাতা, নামো পানে চোক
পা দিয়েঁ মাটি খুঁট্যে-
ধুকপুকাইনটো বাড়্যিয়েঁ দিতিস
অঁয় যৈবনে লাড্ডু ফুট্যে!
নিকষ কালো আন্দার রেইতে
তু হলি মুর চান্দ!
চট্টাই পেইতে বাকুল্যে শুইতোম
থুব্যি মাত্যা বাড়্যিয়েঁ দিত্যোম, ভাল্যোবাসার কাঁন্দ।
তুকে লিয়্যে সিনিমা যাব, গরম ভাজ্জা চপ খওবো-
খিটক্যেইলে বাপ উটল্যে তেইড়্যে,
"নামুনেট্যোর চামটো উটিন ল্যুব!
ঘর্যে উন্য বো ঝিয়েরা লাইচব্যে মাত্তায় চইড়্যে!
বুইজব্যে নিক্যি লেল্যা উট্যো জম্ম শোদের এঁইড়্যে!"
বাপ্পের সঙে, গাঁয়ের সঙে কাটান দিলোম সাত-
তুক্যে লিয়ে পলায় এলোম বাগাইন ধইর্যে হাত!
বদ্দমানের তেল্যের কলে আটঘন্টা কাজ
তুর গন্দে মাতোয়ারা, ঘর্যে ফিরত্যোম লাইগত্য য্যেকুন সাঁজ।
পেত্থম পেত্থম শওরে এইস্যে
ঘোমটার ফাঁকফুঁকুল গইল্যে আইনকানুন দেইখ্যে, পত্যেই পড়ত্যিস বইস্যে!
দেক্য আদেখলাট্যোই বট্যে! দেইকবি যদ্যি ঘোমটা খানিক সর্যা!
একগল্যা শরম লিয়্যে শওরে কী চল্যে! এইবিটিনি কী বইলবেক 'শালো' তুর শ্বউর ঘাট্যের মর্যা!
ঘোমটাখান সর্যায়ে দিত্যিই; তুর চাঁন্দ পানা মুখ ভাইলচ্যে শওরবাসী-
আহা্ তু মোর রানী হইলেও লাইকো র্যে দাস দাসী!
ফটফটিতে চইড়্যে স্যিদিন বন্দু আম্মার, মাস্যুদ এইল্য ঘর্যে-
ড্যাবড্যাবাইন তাকায় ছিলিস ফটফটিট্যোর 'পর্যে!
পোড়্যা কপ্পাল বট্যে, তেল কলেতে পইড়ল্য কুলুপ সমসারেতে টান-
সাঁজের বেলা এলোম ঘরে শরীলট্যো আনচান!
হাট কইর্যে দোর বেবাক খুল্যা, গেল্যি কোত্তাকে আঁটকুড়্যার বিট্যি!
"আবাং তুম্যি চিরকেইল্যে" থুয়্যে গেল্যি চিট্যি!
৫.
∆ রাগ শিবরঞ্জনী ∆
যদি বলি জলের রঙ বসন্তবৌরি ;
আর, শরীর জুড়ে ছিল খাজুরাহের আকুল সন্ধ্যা!
কানে তখনও পোড়া মাটির বাঁশিতে -
রাগ শিবরঞ্জনী বেজে চলেছিল নিভন্ত স্বরে,
খড়কুটো খুঁজছিল আকৃষি ডুবো হৃদয়!
তুমি বিশ্বাস করবে না কি!
ভাবো, এমনও তো হতে পারত!
বেখেয়ালি জলঝাঁঝরির পাটাতনে-
মরু ঝড় মাথা কুটে মরছে শন্ শন্ শব্দে!
তবুও তুমি চলেছ টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে-
আমার আভূমিলুণ্ঠিত আঁচল নিয়ে বিজয় কেতন উড়িয়ে!
অমনি আকাশ জুড়ে মেঘের মাতনে-
ভিজে গেলাম তুমি আমি!
মনে পড়ে সেদিনের কথা!
অলক দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে তুমিময় জলবিম্ব দেখে-
মদমত্ত ছোট ডিঙি ভরে তুলে এনেছিলাম লাল শালুক ;
আজ জন মজলিসে গাজন সভায় হরগৌরীর মিলন পালা গাওয়া হবে,
তুমি সমাপ্তিতে শালুক ডাঁটির মালা গলায় এসো-
কথা শেষে ব্যথা যাপন করব-
আসবে তো!
ছবি- অঞ্জন দাস
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
No comments:
Post a Comment