Monday, 12 April 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

পাপড়ি দাস সরকার এর কবিতা-





১.

∆ ফসিল ∆



এখন জানালার ধারে দাঁড়ালে 

চোখে পড়ে প্রাচীন বটের শেষে শবহী নদী,

পরিযায়ী হাওয়া ব্যস্ত কোলাহল সহসা 

শুনশান ঢুকে পড়ে চার্ণকের বিষন্ন বাগানে।

এখন কলকাতার নিঃসঙ্গ নির্জনপ্রাসাদ 

কক্ষজুড়ে দরবারী গান মায়াবী মোহ,

উৎখননে উল্লসিত প্রাচীন পিতামহ 

স্মৃতির অনিবার্য অনুবাদ অন্তরে বাহিরে।

এখন ছায়ারা দীর্ঘতর হলে 

কলকাতার পাঁজর ভাঙে অনন্ত শোকে 

বিহ্বল ঠোঁটে তার চুম্বনের ভাষা 

কিভাবে বেঁচে আছ মর্মাহত তুমি ময় ?



২.

∆ সময়ানুসারে ∆



পঙ্গপালেরা এসেছে সবুজ থাকবেনা আর 

পঙ্গপাল এসেছে শস্য বাঁচবে না আর 

কারখানার গেটের আশেপাশে 

      পঙ্গপালের ভিড় 

অদৃশ্য বন্ধনে ছিল তীব্র শুষ্কতা 

তারপর পঙ্গপালের দল খুললো নিজেদের 

সমস্ত বন জুড়ে পঙ্গপালের দঙ্গল

সারাদিন ধরে সবুজের দিকে চললো নীল খিদে....

শুকনো আকন্দ বন-মড়কের তার পিছু আমরা সবাই 

কারখানার রুগ্ন ঢালে শুয়ে আছে

শতাব্দীর ঝরে পড়া

উদাস শ্রমিক!



৩.

∆ দিনলিপি 


 

আজ কৃষ্ণ গহ্বর থেকে তুলে আনি তবে 

সৃজনের পথরেখাপাখিদের কুহু 

যেন জলদবংশীয় আস্য।তবে হু হু 

পাথর ঠুকে কেন জ্বালতে পারিনা ক্ষুধা-ক্ষুরধার!

 

মগজে ভাসমান সুড়ঙ্গ পথ 

হিংসার অনল তাকে কাছে আনে

এই নদীযাকে প্রবাহ বলোহলুদ স্নানে 

কৃষ্ণ গহ্বর ডেকে আনেজন্ম নেই যার 

 

মৃত্যুশোকে বিহ্বল গানদেখো,আজ

ডেকে আনে তাকে 

জ্যোতি চিহ্নহীন এক অপার অসীম নির্জনে।

 



 ৪.

∆ শ্রাবনী ∆


 

বিচ্ছিন্ন নিশীথ জুড়ে বিশ্ববেদনা

 স্রোত স্পর্শ করে যায়,

অনন্ত জলের শব্দে রাত্রিটিকে দুভাগ করি,

এক ডালে ধারাবাহী সংসারের জল।

অঝোর বৃষ্টিতে গেট খুলে দিলে ছুঁতে আসে            

                পাঁচলক্ষ কিউসে জল,

গান আর কান্না মিশে পল্লবে পল্লবে ডাকে 

আকাশের সজল আদেশ

পর্যটক জলধারা ঘুরে হাওয়ায় মেতে ওঠে 

গগন কোথাও নেই পৃথিবী কোথাও নে শুধুমাত্র অকুল 

                 সিন্ধুর বার্তা আসে 

ঘুম তো আসে নাউঠি স্টোভ জ্বেলে কেটলি চাপাই

  সম্পন্ন স্রোতে আত্মানুসন্ধান ভালো

  আরো জল টগবগে জলের শব্দ 

কানভর্তি উষ্ণতা 

ফুটপাথ জুড়ে চট আর পলিথিন জড়ানো কাহিনী।

 

 


৫.

∆ ক্রমানুসারে 

 

 

রীতিরূপে বিকশিত স্বাভাবিক ফুল মাছ সেগুন 

এমনকি মানুষও 

রূপ সাধনার দিকে 

সারি সারি পিঁপড়ের দল ডিম মুখে শৃঙ্খলায় বিবর সন্ধানী 

ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেয় আর সুখ ছিদ্রের সমতায়  

চোখের আড়াল থেকে ঘূণ পোকারা 

কথা বলে ফিসফাস 

একি স্বভাব নাকি শীলিত অভ্যাস

অভ্যাসেই নিত্যকাল মজে যায়

জিন,ক্রোমোজোমের দায়বদ্ধতায় তৈরী হয় বলয় 

তাই রোজ বীজে তার প্রাপ্য জল ঢালি

দশটি আঙ্গুলও ব্যস্ত হয় পরে সৌজন্যতা বশত

কনিষ্ঠা মধ্যমা তর্জনী পড়ে থাকে নত নিঃশব্দ শাসনে।

   


ছবি- মেহবুব গায়েন


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

No comments:

Post a Comment