সুপম রায় এর কবিতা-
১।
∆ খাদ ∆
ছায়া বাঁধার আগেই নিভে আসে আলো।
পাহাড়ি মেঘের পারে
রেলিং ধরে যে মেয়েটি খাদের দিকে
তাকিয়ে থাকে অপেক্ষায়;
আমার সাথে সেই মেয়েটির আলাপ নেই।
ছোটবেলায় এক শনিবার স্কুলের দেওয়াল টপকে ছাদে উঠেছিলাম,
ছাদ থেকে দূরের পাহাড় দেখা যেত
যেন আমার কাঁধ সমান উচ্চতা তার।
সেইবার প্রথম শুনেছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা ---
জেনেছিলাম, এমন উঁচু পাহাড়েও নাকি মানুষ চড়ে।
জানি না, সেই দিন এমনভাবে রেলিংয়ের ধারে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল কিনা।
একটা বাঁশির শব্দ আসছে কোত্থেকে...
আজ পাহাড় চড়তে চড়তে বুঝতে পারছি -
ছোটবেলা, পাহাড়, আমি আর সেই মেয়েটির মাঝে
একটা কালো বড় খাদ রয়েছে।
২।
∆ বদ্ধহীন ∆
সম্পূর্ণ দেহকে শেষ অধ্যায়ের কিনারায় পৌঁছে যেতে দেখেছি।
দু’হাতে আগুন-পদ্ম,
দু’চোখে তুলসী,
নাকে তুলো,
হৃদকম্প বন্ধ।
এমন এক ডাকের ভালোবাসায় কে আর অমন সাড়া দেবে!
মাটিতে ফুলবীজ পুঁতে দিলে
সেও একসময় বড় হয়ে গন্ধ ছড়ায়।
এ-তালার কোনও চাবি নেই কিংবা এ-চাবির কোনও তালা নেই।
দেখছি, হারিকেন জ্বালিয়ে সে মিশে যাচ্ছে মাঝ-আকাশে;
আর আমার বেরসিক স্বপ্নে
কোনও রকম ক্ষতের দাগ থাকছে না।
সীমাবদ্ধে কিছুই নেই
শুধু মোহ ছাড়া।
৩।
∆ যে তারা নিষিদ্ধ ∆
নিষিদ্ধপল্লীর সেই তারাটা আজ কয়েক মুহূর্তের জন্য এসেছিল আকাশে ---
মরে যাওয়ার একরাশ সম্ভাবনার কথা জানাল আমাকে।
আমি যতবারই জীবনের কথা বলি, বাঁচার কথা বলি -
সে তার একেকটা শিরা ছিঁড়ে ফেলে শরীরের।
আর যখনই মৃত্যুর কথা বলি,
দেখি সে তৃপ্তি পায় খুব।
তাকে আরও বেশি বেশি মৃত্যুর কথা বলে থামিয়ে দিলাম আজ।
বললামঃ থাক আর নয়, একটা শিরা অন্তত থাক।
শরীরের শেষ শিরাটা ছেঁড়ার আগে যদি কখনও তোমার বাঁচার ইচ্ছে জাগে!
তারাটা হঠাৎ নিভে গেল।
৪।
∆ সর্বনাম ∆
কেবলই সর্বনামের বিশেষ্য আর বিশেষণ খুঁজে চলেছি ...
মরীচিকার প্রান্তগুলো
কখনও কখনও তীব্র ধারালো মনে হয় ।
আমি নাগরিক আগন্তুক ধ্রুব-গ্রহের,
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কলোনির গলিতে পথ হারিয়েছি ।
পিছন থেকে যারা যারা আমায় ডাকে
তারা আমার নাম জানে না ---
আমি সর্বনামের বিশেষ্য আর বিশেষণ খুঁজে চলেছি ।
ফিরে এলে
যদি পারো অস্বীকার করো আমায়,
আমি নতুন নামের হার মেনে নিতে শিখেছি ।
৫।
∆ আক্রান্তকারী ∆
কবিতা লিখতে লিখতেই শব্দাক্রান্ত হয়ে পড়ছে কবি।
তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠছে পাহাড়, নদী, তারা।
সে তাঁর অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্যে
ছড়িয়ে দিচ্ছে মোহ-ঘ্রাণ,
বিস্তৃত করছে ছায়া কবিতার মহাকাশে।
সেই কবিতা পড়তে পড়তেই
পাঠক দেখে নিচ্ছে ভবিষ্যৎ-বর্তমান, প্রাকাতীত কাল;
এমন কি মোহ থেকেই প্রেমে পড়ে যাচ্ছে
কবি এবং কবিতার।
এখন আক্রান্ত হচ্ছে পাঠক নিজেও,
নতজানু হয়ে বসে পড়ছে কবির কবিতার সামনে ---
এবং তার চোখ আর মুখে
তৃপ্তির তারা জ্বলজ্বল করছে।
মন ও স্বপ্নে স্পষ্ট হয়ে উঠছে কবির মুখ।
অলংকরণ- এনা
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
No comments:
Post a Comment