Monday, 5 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৫

ত্রিদিব রায় এর কবিতা -

[] চই চই
     
আয় আয় চই চই
দিঘি জলে চিৎ সাঁতরে এগিয়ে যায় প্রেম 
জলে ভাসা হাঁসের দল
সরে সরে পথ করে দেয় ।
ওপারের ঘাটে বসে নবীন বধূটি
ছাই দিয়ে কাঁসার বাসন মাজে,
ঘোমটা পড়েছে খুলে তার ।
প্রতিবেশী যুবকটি ঘাটে আসে
দুজনেই দুজনের চোখে চোখ রাখে
বধূটি সলজ্জ হাসে। শাপলা ফুলের মত
রাঙা দুটি ঠোঁট তার কেঁপে কেঁপে ওঠে।
যুবক লুকিয়ে হাসি ঝাঁপ দেয় জলে,
তার পর সাঁতার সাঁতার আর
স্নান স্নান জলকেলি ---
নিঝুম মধ্যাহ্ন বেলা 
ভেজা শাড়ি পাশে আসে 
আঙুলে আঙুল ছোঁয়, দূরে যায় ।
বধূটি তাকিয়ে থাকে,
মনে পড়ে যায় তার ফেলে আসা প্রেম।
                  

[] এভাবেই দিন কাটে 
                   
সকাল বেলাতেই একরাশ
এঁঠো বাসন ধূতে বসেছে পুকুর ঘাটে 
দীনু মণ্ডলের কিশোরী মেয়েটি,
রুক্ষ চুলে কতদিন তেল পড়েনি 
গায়ে ছেঁড়া ফাটা ফ্রক ।

খোকা চৌধুরীর কিশোরী মেয়েটি 
জোড়া বিনুনি দুলিয়ে চলেছে ইস্কুলে,
কাঁধে তার বইয়ের ব্যাগ 
শাড়ি ব্লাউজে টগবগে লাবণ্য 
ফুটে উঠেছে জ্বল জ্বল করে।
হেঁটে চলেছে হরিণীর মতো চপল ছন্দে।

দীনু মণ্ডলের মেয়েটি তাকিয়েই থাকে 
তার বাসন মাজা থেমে যায়
চোখের কোণে চিকিয়ে ওঠে জল।
এ ঘটনা নিত্য দিনের,
এরপর সে ঘুঁটে কুড়োতে যাবে
তুলতে হবে কচু শাক কলমি লতা,
ছাগল ছানার সঙ্গে খুনসুটিতেই
কেটে যাবে আধা উপোসী দুপুর।
এভাবেই দিন কাটে, কেটে যায়।
                
[] ভয়
     
দুঃসময়ের ঝরা পাতা উড়ছে  
পাতা কুড়োনি মেয়েরা ঝুপড়ির ধূসর উঠোনে বিষণ্ণ বসে আছে ,
মুখে হাসি নেই।
কতদিন উনুন জ্বলেনি ঘরে।
গোপন আস্তানা থেকে কালো চাদর গায়ে 
বেরিয়ে আসছে ভয়।

মানুষের ঘরে সঞ্চিত চাল ডাল 
তেল নুন টাকা কড়ি সুখ
কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে।
শাসক শোনেনি অভিযোগ,
ওদের সময় নেই।
এখন প্রতীক্ষা শুধু 
ভয় মুক্ত নতুন দিনের।
          

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment