কবি ঋতুপর্ণা সরকার এর কবিতা-
১.
∆ সুনয়না ১ ∆
সুনয়না,
জীবন শুরু করি চলো আমরা শুরু থেকে।
ভরসার পাহাড়ে ডিঙিয়ে এগোবো কি
আমরা?
সুনয়না?
অনাদায়ী অন্ধকারের শ্লথগতিতে
ভাঙবে কি
তুমি ওই পাহাড় বা ইমারত?
বিকেলের রং মুছে সন্ধ্যা নেমেছে,
অথচ তুমি তা দেখনি কতকাল!
বন্ধ জানলার ওপারেি আজকাল মেঘ আসে।
তুমি সে সব কিছুই না দেখে
শুধু মৃত্যু ভয়ের গল্প শোনাও।
কতরাত আমরা আড়ম্বরহীন প্রেমে
অন্বেষণ করেছি মুক্তির,
অথচ আমাদের ব্যাক্তগত ভূখন্ডটুকু
তুমি হারিয়ে ফেললে!
বিপন্নতা যখন ধর্ম হয়ে যায়
আর ভীরুতা অভ্যাস,
তখন প্রেমের সব ফুলগুলি ঝুড়িতেই শুকায়।
মাটি খুঁড়ে দেখ সুনয়না,
সেখানে লুকিয়ে আছে ব্যথা, খিদে, কষ্ট
আর প্রেম,
খুদকুঁড়ো বাঁচিয়ে প্রেম টুকু রেখো।
জানলা খুলে আলো আসুক,
আসুক অক্ষর, দিকনির্দেশ।
যদিও ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা,
তবুও সুনয়না,
ব্যূহের ভেতর দাঁড়িয়ে
শুরু করি আবার শুরু থেকে।
২.
∆ সুনয়না ২ ∆
সুনয়না,
মহাভারত পড়ছো আবার!
তবে যুদ্ধ কি আসন্ন?
এবার তবে তৃতীয় পক্ষ আছে।
অস্ত্রে শান দিও,
তৈরি করো নিজের বর্ম।
ভরসা নেই মৃত্যুরও আজ।
তাকিয়ে দেখো,
মহাকালও আজ নামছে।
কৌরব পাণ্ডব কেউ যদি না বাঁচে,
তবে কুরুক্ষেত্রের ইতিহাস
তুমি লিখে যাবে তো?
তুমি মহাভারতের নিয়ম মানবে সুনয়না?
বীরের হাতে বীরের মৃত্যু সম্মুখসমরে!
ঋণশোধ হলে পেছনে তাকিয়ে দেখো,
আজকাল বেশি যুদ্ধ ওখানেই হয়।
৩.
∆ সুনয়না ৩ ∆
সুনয়না,
তাকিয়ে দেখো
আজানের আলো পড়েছে পবিত্র চোখে
হিমালয় শৃঙ্গ , উজ্জ্বল বর্ণের , নির্জন পরিক্রমা।
অন্ধকার সরোবরের তীরে ব্রাহ্মণী হাঁস
খুঁজে পায় নক্ষত্রপথ আর গন্তব্য আলো।
সে আলো তুমি দেখেছো?
সেই নরম আলো দুচোখে মেখে ভোর আসে সুনয়না
মিশকালো জীবনে বদ্ধ হলেও
এখনো আকাশে অতর্কিত চাঁদ আসে ।
গোপন আশ্রয়ে ঢোকার আগে একবার ছুঁয়ে নিও তাকে
দেখবে এক অলৌকিক জগৎ কে বন্দী করার বৃথা চেষ্টা চলছে পৃথিবী জুড়ে !
তবু আমরা বাঁচবো সুনয়না ,
সেই গভীর রাতের কথা ভেবে
যখন ধূসর অন্ধকারে পথভ্রষ্ট হয়ে হটাত তুমি দিয়েছিলে চাঁদের আশনাইয়ের আঁচড়,
আত্মমগ্ন আমি পথ খুঁজে পেয়ে
হাত ধরে তোমাতে মিলিয়ে ছিলাম
চাঁদ তখন ফিকে হয়ে এসেছে তোমার খোপায়!
একা হয়েও আমায় সাথে রেখো সুনয়না,
দিনভর রোদে পুড়ে
আমি শেষ বিকেলে যখন ফিরবো
দরজাটা খুলে দিও
দুজনে মিলে সূর্যাস্ত হব আজ।
৪.
∆ জেনেসিস এর আর্ক ∆
একা থাকতে দাও হে ঈশ্বর
আকাশের নীল আজ গাঢ় ..
তবুও প্রান থেমে যাচ্ছে।
অনন্তকাল দেখি দিগন্তের স্তম্ভ একই উচ্চতায়
অথচ আমরা শুধু নিজের মাপ নিয়ে গেছি।
স্পন্দন আজ ঘাস চাপা ফ্যাকাশে
যদিও বৃক্ষ আজ সতেজ ..
তাও বুকে আজ নিঃশাস নেই
ঈশ্বর একটু ক্লোরোফিল দিও।
উপাসনার মন্ত্রে শুনি মরণচিত্কার
প্রতিবিম্ব খুঁজেছি চুপিচুপি
জলে শুধু বিষনীল আর বধির ছিটেফোঁটা।
একা ধ্যান দাও ঈশ্বর
রঙচটা গন্ধে মনষ্কামনার হদিশ হোক
স্থির হয়ে ভাবি শুধু সৃষ্টি
অথচ প্রতিদিন ব্যাধি থেকে ব্যাধিতর যখন
পরিযায়ীও পিছু হটে তিলতিল।
জীবন দাও ঈশ্বর
সীমাহীন অচেনা রোদে পুড়ে গেছি
উদ্ধতরা শিকড়ের খুঁজছে অবশেষ
নোয়ার ভেলাতে তবুও প্রান রেখো না
অক্ষয় করো দয়া,প্রেম,বিশ্বাস,বিনয়।
৫.
∆ ফ্রেম ∆
আমার মা বৃদ্ধ হলে কেমন হতো আমি জানিনা !
সাতচল্লিশ বছরের মা এখনো ফ্রেমে হেসে যায় ,
আমি দিন গুনে যাই -কবে আমি সাতচল্লিশ হব...
বৃদ্ধ মা কে জড়িয়ে ধরে ঘ্রাণ নেবো ,
মা র সেই অপূর্ব লক্ষী হাতের পাতায় রেখা জমবে
আমি রেখাগুলো গুনতে গুনতে নেবো শশুরবাড়ি যাবার আগের পাঠ মায়ের কাছে ...
আমার বৃদ্ধ মা আমার মেয়ের কাঁথা সেলাই করে দেবে ..
আমি ফোঁড় গুনে যাবো- আমার বয়েসও ,
কবে আসবে আমার সাতচল্লিশ !
আমি দেখবো আমার বৃদ্ধ মা কে
কেও বলেনি মাতৃমুখী মেয়ে সুখী হয় !
অলংকরণ- মেহবুব গায়েন
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
No comments:
Post a Comment