Sunday, 26 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯

 যদি কবিতাকে প্রশ্ন করি


যদি কবিতাকে প্রশ্ন করি 
চাকাতে তাঁদের দমিত করা কি ঠিক? 
আঙুলের পাঁচখানা দাগ এঁকে দেওয়া কি ঠিক? 
তবে একবাক্যে বলবে..... হ্যাঁ

চামড়া ছিলে দেওয়া কি
তাদের ধর্ম নাকি অধিকার
তবু তারা নিঃসন্দেহে এগিয়ে এসে
লাঠির সরলরেখা চোখ বন্ধ করে 
হিসেব করে দিতে পারে। 

চামড়া মুখ হাড় দেহ আজ একাকী
তাদের সঙ্গী স্বপ্ন এবং ঘুমহীন চোখ
আর চারিদিক ছিটিয়ে দেওয়া 
এলোমেলো বাক্য
যেগুলো ভীষণ নিষ্পেষিত নীরিহ

তারা শুধু হাত বাড়িয়ে সকাল খুঁজে
বেঁচে থাকার.....। 


মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় 


এতদিন যাকে সোহাগের আকাশে মুড়ে 
প্রহর গুলো এগিয়ে নিয়ে এসেছি
শৈশব যৌবন বার্ধক্যের সূচিপত্রে
যাকে না পাওয়ার শব্দবন্ধনে বেঁধেছি 
আজ আচমকাই তার চলে যাওয়ার পালা
নীরব নিকষ অমাবস্যা তাকে আহ্বান করে

চারিদিক আলোকিত করে... তাদের জীবন
অন্ধকারে নিমজ্জিত করার সভ্যতা
শতাব্দী পেরিয়ে আজও... জয় চিৎকার শোনা যায় 
সংখ্যা গণনা আজ আরও দ্বিগুণ

এ বর্বর রক্তরঙের উন্মত্ততা 
মালাকাঠে নিশ্বাস বন্ধের কারসাজি
সবই সময়মাত্র রাক্ষসরূপী স্বভাবের আস্থা
এ কোনো আনন্দের উল্লাসমঞ্চ নয় 
অন্ধকারের সঙ্গী হয়ে রক্তধারার আতশবাজি 

মুখশ্রী ভোলা যায় না 
ছেড়ে দেওয়া যায় না
তবুও অশ্রুধারা দিয়ে শেষ মূহুর্তে ভোলার ভান করে
                                         ...মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়। 



একটা বিপ্লব


ললাট এবং সিন্দুকে
দীর্ঘস্থায়ী... বুলেটের দুটি বিদীর্ণ গর্ত 

তবু বেঁচে আছি 
আরও রক্তাভ আবরণের জন্য 

কাঁদতে এক জন্ম পূর্বেই ভুলে গেছি 
বিপ্লবের জন্য

এখন শুধুই 
আমি এবং আমার মন
পরস্পর 
দু চোখ দু হাত দু পা এবং অর্ধ জীবন
বিস্ফোরণের বিপ্লব বাঁধে

এক একটা প্রাচীরের পর প্রাচীর। 

অলংকরণ- ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday, 24 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯

সন্দীপন দত্ত এর কবিতা -


নিরাময়


বিশুদ্ধ হেঁটে চলে মাথার ভিতর—
তরল নামিয়ে রাখি উচাটন তুলি।

খুব দূর মনে হয় কাঙ্ক্ষিত ভোর,
চিরুনি হারিয়ে ফেলা জটিল জীবন।

প্রাচীন মুখের ছায়া বিষণ্ণ হাসে—
চোখ চলে গেলে তবু থেকে যায় চোখ!

জল ঢালা ভাতে থাকে সুপ্ত যে ঘুম,
মাথার ভিতর সেই নিরাময় কাঁদে।


জোনাকি


ভাবছি ভালো নেই তুমি;
ভাবছি, ভুল ভাবছি।

ভেসে আসা বিষাদের গন্ধ—
চুল খুলে গেল দূরে কোথাও।
আজও সেই কার্নিশের নীচে দাঁড়িয়ে,
বৃষ্টি থামেনি...

আলো ফিরে আসে, ফিরে যায়।
অনুভূতির শরীর, পরিস্থিতির কুয়াশা।

পরিবর্তন ভাবলে কত কী অনুযোগ অভিমান,
ভবিতব্য ভাবলে চুল তো খোলারই ছিল।

সেলাই শেখার ধৈর্য্যে তোমায় শিখেছি;
শিখেছি ভেসে থাকার নির্মম মৌলিক।

ভুলে যাওয়া কোনও ভুল নয়,
ভুলে থাকা নিঃশব্দ অপরাধ।


'A Clockwork Orange'


আপনার প্রেমিকের কাছাকাছি আপনি একটি মেটে রঙের চাঁদ তুলে বসে আছেন ঠোঁটে। জাগ্রত শনিবারে আমিষ স্বাদের চূড়ান্ত সাধ জাগে। শরীর একটি মন্দির মনে করি— আর ঈশ্বর তো কবেই মৃত। পেঁয়াজ-রসুন তীব্র কষিয়ে আপনাকে এবার বস্তুকল্পনা করিব— কাব্যির দোহাই! মাংস হজম হবে না, বয়স আসছে, এরপর। অতএব আমরা পাখি কিনে খাঁচা খুলে দেব, কালো কাঁচুলিটি হারাবে কামরাঙা বনে। আমাদের খামারে পশুরা পাবে গণতন্ত্র। সমস্ত নির্মাণ যদিও কাঠেরই হবে। মূকেদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা সহজ— জলপাই গাছের নীচে সমবেত হব। একটি জমাট রক্তেরঙের লেখা ক্রমশ সবুজ হচ্ছে। বুঝতে পারছেন কতটা সামলে উঠেছি আমি? এরপর তো আর লিখতে না পারলে দুঃখও হবে না! এরকম কোনও স্বর্গের লোভ ছিল কি আমার? একটি ধারালো চাকু— কাগজ কেটে যায় তির্যকভাবে— আসুন আপনাকে লোকে ঠোঁটকাটা বলুক— এরকমই চান আপনি— নয় কি? অবিশ্বাস্য ডিনার এই ঠোঙায় নামিয়েছি। পাঠকের জন্য আমার করুণাই হয় মাঝেমাঝে। এই রেসিপিটুকু এবার লেখা হয়ে উঠবে। আপনিও উঠুন। দেখুন হাঁটতে পারছেন কিনা...

অলংকরণ - অতীশ কুণ্ডু
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 12 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

অনিমেষ এর কবিতা -

এই রঙ বদলের গজল


যা লেখার জন্য রাখতে চেয়েছি তা আসলে অবশিষ্ট সংলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়,
মেদুরতার কথা এইসব
যারা জানে তারা জানে এইসব দিনরাত্রির হিসেব রাখা কাজ নয়
আদতেই নিঃস্কলঙ্ক কোনো তরুণীর দিকে যাওয়ার জন্য এতকিছু

তুমি তো শহরের ধূলো, খেয়ে ফেলে দেওয়া অংশ 
আমার ভাগ্যে চুল পড়ুক, কোমর বন্ধনী পড়ুক

যা আমার তা বহুদিন ধরেই পরগাছায় ভোগ করে যাচ্ছে...

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 11 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

সুপ্রভাত দত্ত এর কবিতা -


ক্ষতের পাশেই যারা

     
একটিও পাতা নেই - 'ওই গাছ' শুধু
একটি পাখির পায়ে সান্ত্বনা এনেছে !
এমন প্রবাহ মাঝে এই টিকে থাকা
যেন-- ' ভিক্ষা নিয়ে বাঁধা নিজেদের গান !'
সরল মনের তল ছুঁয়ে না দেখেই
তাকে যে অনন্ত তলে রেখেই দিয়েছে ।
যে মত কাঁপতে থাকে হিম্মতের পাশে
সে তো হৃদয়ের এক নবজন্মক্ষত !


যে-জন ক্ষতের পাশে শিস দিয়ে ফেরে
তারা আভা স্বরচিত-- গভীর বুননে ..
সেখানে কিভাবে ছুঁচ পথ কেটে চলে?


এখন যে কার চোখে

                   

এতটা তফাৎ নিয়ে আগে কি ছিলাম ?
নিজের পাড়ার রোদে খেটেখুটে শুধু
শরীরের রং গুলি পাল্টে ফেলেছি ...

কত যে অতীত ছিল - ' মনের প্রশ্রয় ' ।
সমস্ত শৈশব জুড়ে পাড়াতুতো রং
এপাড়া ওপাড়া খেলে এক হয়ে গেছে....
সজনে গাছের পাতা সারি সারি ছিঁড়ে
তার পায়ে সাজাতাম- ' সবুজ নুপুরে '
ঘরের পালুই মানে লুকোচুরি মন
দুপুরে প্রহরী হত শ্রমিক হাওয়া ।

এখন তো ব্যবধানে হেঁটে চলা শুধু ।
পাড়াতুতো রোদ আছে ; নেই মাখামাখি..
এখন যে কার চোখে অন্ধকারে দেখি ?

এই তো পুকুর

        
পাখিদের ডানা থেকে অনুভূতি সব
ক্লান্ত হয়ে লেগে থাকে বাতাসের গায়ে...
তারপর বাতাসের সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
নরম পুকুর গায়ে নিজেদের আঁকে!
এই তো পুকুর , যা বনানীর কাছে
সূর্যের আলোর দায়ে আয়নার মতো..
এই তো পুকুর যার বৃত্তাকার ঢেউ
শ্যাওলার তলে খোঁজে নিরিবিলি যত !

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday, 10 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

পলাশ মজুমদার এর কবিতা -

কবিতার দোকান


কবিতার দোকানে কবিও বিক্রয় হচ্ছে।
এক কিলো কবি কিনতে আধা কিলো বিশ্বাস।
বহু কিনলে দু'এক কিলো ফ্রিতে দিচ্ছে দোকান।

অবিক্রিত ছেঁড়াফাটা কবিদের চৈত্রসেলে
অতি সুলভে ক্রয়ের সুবিধা।
সামান্য বিশ্বাসে ছাড়া হবে ত্রুটিযুক্ত কবিদের।

ভাবনা হচ্ছে, বিশ্বাস ফুরিয়ে গেলে
কবিতা দুর্বিনীত হয়ে ওঠে।

ভাবনা হচ্ছে, কবিতার জন্য আত্মঘাতী হওয়া
কবিদের কাছে বিচিত্র কিছু নয়।


ডট


এই দেখুন মানচিত্র।
আসুন আমরা ম্যাপ পয়েন্টিং শিখি।
প্রথমে ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি।
ধান, গম, যব, বাজরা হয়ে খনিজসম্পদ খুঁজি আসুন।
তারপর পাহাড়, পর্বত, নদী, ইন্ডিয়া গেট, তাজমহল হয়ে
সবশেষে ধর্ষণপ্রবণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি কালো ডট পেন ব্যবহার করে।

ডট দিতে দিতে মণিপুর, রাজস্থান, ইউপি, বিহার 
প্রভৃতি শেষ করে ঢুকে পড়ি সোনার বাংলায়।
কালু মিদ্যার ধানক্ষেত, লখাই মান্ডির গোয়ালঘর ছুঁয়ে
বিষ্যুদবারের হাটে, রাজার পথে ডট দিতে দিতে এগিয়ে যাই পরিক্রমায়...
নিজের গাঁয়ে এসে যখন পৌঁছলাম আমরা,
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার নেমেছে, গাঢ় নিষেধাজ্ঞা নেমেছে!
অগত্যা আমরা যে যার বেডরুমের দিকে
এগিয়ে গেলাম কিছু অভিজাত ডট চিহ্ন সঙ্গে নিয়ে।

কালো ফুটকির তারায় ছেয়ে যাচ্ছে ভারতবর্ষের দেহ!
অথচ আপনাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না,
ধর্ষণ কোন সুস্থ দেশের অর্থকরী ফসল হতে পারে না!


জনৈক সুবীরদাকে নিয়ে


সুবীরদাকে তোমরা চিনবে না। খামখেয়ালী। একরোখা। দরিদ্র, অথচ অহংকারী বারোমাস। নষ্ট করার মতন দেদার অবসর, অথচ সংসারে তার যমের অরুচি। ৩৬৫ দিনে ৭৩৭টা কবিতা লেখা তার কাছে জলভাত, অথচ ভীতুরা পড়ে না তাকে। অথবা আমরা সকলে ভীতু।

আসলে সুবীরদা বলতে চান, অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মানুষ বলে ডাকা হোক। এই যে আমি লিখছি, তুমি লিখছো, মহারথীরা লিখছেন। ধরে নাও, এইসব লেখায় মনভোলানো অজস্র প্রশংসা স্তুতির নিচে একজন লিখলেন, 'শালা, যত্তসব অখাদ্য লিখেছিস।" 
জানবেন, তিনি সুবীরদা। আসলে সুবীরদা হলেন দাউ দাউ আগুন, চিতা যার প্রণয়নী। সুবীরদা বরাবর অন্ধকারের দিকে। আলোর দিকে চাটুকারিতা আর অনাবশ্যক সৌজন্যতা। 

আমাকে পড়তে না পারার অক্ষমতার জন্য পৃথিবী তোমাকে ক্ষমা করলুম না - একথা সুবীরদা অনায়াসেই লিখতে পারতেন, কিন্তু লিখলেন না। আসলে তাঁর কাছে, ক্ষমা করার অক্ষমতা জানান দেয়া, একপ্রকার ক্ষমা-ই।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 7 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭

অরিত্র দ্বিবেদী‌'র কবিতা -


বন্ধুতা আসলে ভেক্টর রাশির নাম  


একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটি। একটাতে এক বন্ধু অন্যতে আর এক। একজনের গায়ে ক্ষতি। অন্যজনের বিন্যাসে গ্লানি। এক অভিজ্ঞতা কাটি। বহুদিন দুপুর, শুভসন্ধ্যা দুয়ার। পড়তে বসি তিন-জন পাশে। ফিজিক্স, পড়ানো চলে রোজ। "একটি মাঝি গুণ টেনে চলে -- ভেক্টর রাশির প্রয়োগ" বললেন স্যার, "একবার বাঁয়ে একবার ডাঁয়ে"। তবু নৌকা সোজা চলে যায়...। একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটি। আমরা তিন বন্ধু। একটা ডাঁয়ে, একটা বাঁয়ে। ওরা আর কথা বলে না নিজেরা, পড়ে। আমি একা বকবক বকবক। ওদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছে। আমি গুণ টেনে নিয়ে যাই। একবার ডাঁয়ে, একবার বাঁয়ে। একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটে। আমাকে একবার কাটে, দেখে আবার পালটায়। একপাশে ক্ষতি একপাশে গ্লানি।।


বিদায়


বিদায়। এর অনুরূপ শব্দাবলি নেই কোথাও আমাদের গঞ্জে। প্রথমে হারিয়েছিল সহজ পাঠ। তারপর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়, ধাপার মাঠ, ঠাকুরদিঘি আর...আর লাল ফ্রক। সেদিন সন্ধ্যেবেলাতেই হারিয়ে গেল পরিদি, সুন্দরী, নাচ জানতো, বাবা ট্যাক্সি চালাত...বাড়ি ফাঁকা। সাইকেলটা নিয়ে ফিরতে ফিরতে শুনেছিলাম বোসেদের বাগানটাও বেচে দিয়েছে ওরা। বিদায়। এর পরিবর্তন নেই! শুধু কালবৈশাখী এলে আমি সাইকেলে চেপে শপিং মল উঠে যাওয়া বোসেদের বাগানে এখনো আম কুড়োতে যাই, পথে পড়ে ধাপার মাঠ, ঠাকুরদিঘি, লাল ফ্রক আর পরিদি। পরিদি, সুন্দরী, নাচ জানতো....


ওম্ মণিপদ্মে হুম


প্রথম লামা দ্বিতীয় লামাকে ডেকে বললেন, "ওম্ মণিপদ্মে হুম"! দ্বিতীয় জন তৃতীয়কে। তৃতীয় জন চতুর্থ কে ... পঞ্চমকে... ষষ্ঠকে...। এইভাবে লামাদের সারি আমার ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায় হিমালয়ের দিকে। সেখানে পাহাড়ের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা আছে,"ধার বাকি", "ট্রেন বাতিল", "কাজ নেই", ... আরও আরও বিস্তার। ওঁদের কাজ এসব মুছে ফেলা। হিমালয়ের প্রতিটি পাথরে লিখে দিতে হবে: "ওম্ মণিপদ্মে হুম"।।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 6 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭

অনিন্দিতা মণ্ডল এর কবিতা -


গোলাপী সন্ধ্যামণি।


টানা আটদিন বৃষ্টিতে উঠোনজুড়ে রোদের অস্পষ্ট পায়ের ছাপ—
কোনোটা ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে , 
কোনোটা দাঁড়িয়ে আছে বল্লম হাতে ।
দেওয়ালের গায়ে পুরোনো আতরের গন্ধ 
জমিয়ে রাখছে বিকেলের সূর্যছোঁয়া দোতলা ।
আঙুল ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে টুকরো টুকরো যুদ্ধ
আর হরিণীর ডাক মিশে যাচ্ছে শাঁখের আওয়াজে।
বুকের ভিতর ইমোশনাল মথ সিক্ত ডানায়
তুলে রাখছে আমাদের সংসারিক স্বপ্ন দেখার দিনগুলি ।
পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে শরীর ছেড়ে 
তুমি কাফকা পড়ছ , সে আওয়াজ ভেসে আসছে 

এখন ,
একা হতে হতে আজ এসে দাঁড়িয়েছি 
খোলা আকাশের নীচে—
যে আকাশটা টানা বৃষ্টিতে কেমন চুপ হয়ে গেছে।
এই উদাসীন সন্ধ্যায় নেমে আসছে শারীরিক কান্না,
অথবা তুমি গোলাপী সন্ধ্যামণি হয়ে ।


 দূরে থাকা সহজ 


যে কাকটা মারা গেল সেদিন ভোরে
সে জানত বেঁচে থাকার কৌশল ,
বারোমাসী মেঘ বিশ্রী গরমে গেয়ে ওঠে
সাদাকালো সিনেমার পুরাতনী গান ,
সস্তার বিজ্ঞাপনে আবহাওয়া হেসে ওঠে 
সব আলো নিভে যায় , পড়ে যায় গ্লাস...
কাকটা আত্মহত্যা করেছে সেদিন 
অথচ কোনো শোরগোল নেই।

কাকটা কি জানতো— দূরে থাকা বড্ড সহজ ,
আর কাছাকাছি থাকতে গেলে উদ্দেশ্য লাগে কিংবা অজুহাত ?


মা এসেছে কখন !


কাল রাতে রোদ্দুর পড়েছিল হাতে
আলো বলতে যা সবাই জানে , তার নিকষ কালো রূপ 
আমার ভিতর ঢুকেছিল দামাল ছেলের মতো
বর্ষার সোঁদা বিছানায় মা এসে কখন বসেছে কেজানে 
মায়ের চুল সরিয়ে নাকের ডগার কালো তিল ছুঁয়েছিলাম ,
মাথার ভিতর—মাছের মাথা দিয়ে রাঁধা মিষ্টি বাঁধাকপি ,
মোটা ডালে মাখা ভাত , আর একটা লড়াইচিন্হ 
নেচে উঠেছে ভাসানের রাতে মাতালের মতো।
একপিঠ চুলে লেগে আছে পুরোনো মিছিলছাপ ,
জোছনার গায়ে ফুটে উঠছে মায়ের সন্ধ্যারতি ,
সোঁদা বিছানা উষ্ণতায় শুকিয়ে গেছে ,
চারপাশে গভীর অন্ধকার , কোনো আলো নেই 

তবু মা আবার ছেড়ে যাচ্ছে ,মাথায় বাম লাগিয়ে দিয়ে 
মা জানত ,মাইগ্রেনে আমি আলো সহ্য করতে পারিনা ।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 5 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭


তপেশ দাশগুপ্ত এর  কবিতা-

আমি জানি না

তুমি আমার এত ভালবাসা দিয়ে কি করো
রান্নাঘরে সারি সারি কৌটোর ভিড়ে
কোনখানে রেখে দাও
জিরা হলুদ গোলমরিচ সেরকম কোনো
রেখে দাও
আস্তাবলের পাশ দিয়ে যাও
ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনো
লনের ঘাস ঘোড়াদের জন্য
জ্যোৎস্না ভালবাসা তৈরি হয়
দূরে বনভূমি
জ্যোৎস্নায় অন্ধকার শান্ত হয়ে থাকে
তুমি অঙ্কের মাথা নিয়ে যাও
টেনিসন আওড়াও
ঘোড়াদের ঘেরা জায়গার পাশে চেয়ার পাতা থাকে
ওয়ার্ডসওয়ার্থ রবার্ট ফ্রস্ট এইসব থাকে
কৌটো খুলে ভালবাসা বের করো?
মেলে?
না আবার রেখে দাও?
একদিন মিলে যাবে বলে


পাহাড়ের ছবি

বলেছ পাহাড়ের ছবি পাঠিও
আমি ছাদের ছবি পাঠিয়েছি
ছাদে তুমি দাঁড়িয়ে আছো
পুরনো অ্যালবাম থেকে বার করে পাঠিয়েছি
তুমি আমি দাঁড়িয়ে আছি ছাদের রেলিং-এ
হেলান দিয়ে
পাহাড়ের থেকেও উঁচু লাগছে


উড়নচন্ডি পায়রা


উড়নচন্ডি পায়রা
আমি তোমার চেয়েও আরেকজনকে ভালবাসি
তোমাকে সরিয়ে তার কথা মনে আসে
এক পা দু পা করে .. তোমার মতো সে
উঠোনে চরে বেড়ায়
খুঁটে খায় উঠোন থেকে
উড়নচন্ডি পায়রা তোমার থেকে আমি
আরএকজনকে ভালবাসি
তোমাকে সরিয়ে তার কথা মনে আসে
সারাদিন পর সাঁঝের আগে
নদীর স্রোতে জেটি ভাসানো দেখে


জয়দেব


আমি ভাবি তুমি আমাকে খুব ভালবাস
এদিকে তুমি তেমন বাসো না
পুকুরের ঘাট বর্ষায় পিছল হইয়া থাকে
তুমি জানো
কোনোদিন বাসন হাতে করিয়া উল্টাইয়া যাও নাই
যদিও বাসন ভাঙিয়া যাইবার সম্ভবনা নাই
কারন তুমি কাচের বাসন কোনোদিন পছন্দ কর নাই
সব বাসনই ফিরিয়া আসে
তবে আছাড় খাওয়া তেমন ভাল জিনিষ নহে
বাসন লইয়া পড়িলে প্রকান্ড আওয়াজ হইত
বিড়াল এবং কুকুরেরা হতচকিত হইয়া ছোটাছুটি করিবে
তুমি অতটা চাহ না
আর শরীরের কথা
পড়িয়া তোমাকে চোট দিবে এমন শরীর
তোমার নহে

অলংকরণ - অতীশ‌ কুণ্ডু
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 1 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬


শিবালোক দাস এর কবিতা -

তরণী 


জলে পা রাখতেই সরে গেল কাঁটা। হয়তো খেলার ছলে।
হতভাগ্যের মতো দরজা খোলা। নিভে যায়নি মোমবাতি।
এতদিন তরণী ভাসিয়ে এসেছ। মাটি ঋণের কথা বলে।

হঠাৎ স্খলিত তোমার দেশ। তুমি কি ফিরিয়েছ তাকে ?
পেছন ফিরে তাকিয়ে সে দেখেনি। হাত দুটি ছোঁয়াও।
যমুনা এতদিন রয়েছে বন্ধক। কই জানাওনি তো তাকে !

তরণী কিন্তু বয়ে চলেছে। সে দেখেছিল শমনের মুখ। 
কপালে ভাঁজ। তরঙ্গ কেমন অনিয়মিত। অনিশ্চিত। 
নীচে লুপ্ত তোমার আপন দেশ। তাকে দাও চুম্বনের সুখ।


যমুনা-২



আজ সমস্ত কম্পন ডুবে গিয়েছে 
একাধিক কালোয়। 
তুমি কি আদৌ কোনো ব্যথা বোঝো ?
বন্ধ চোখ কত শীতল, 
পা রাখতেই বেশ জোরে বৃষ্টি নামে। 

জানলা যেখানে শেষ হয়েছে, 
সেখানেই উঠেছে একটি পান্ডুলিপি।
নিভে যেতে তো পারত, অতর্কিতে !
তুমি ঠিক মনে করিয়ে দিতে।

আকাশে তখন ভাসছে চুম্বন, 
যমুনার খেয়াল নেই কখন সে 
ছুঁয়েছে আমার হাত, ফুটেছে রেখা। 

তুমি বুঝতে পারোনি, আমি তোমাকে 
কখন ভালোবেসেছিলাম, নক্ষত্রে পুড়ে ?

প্রতিদিন সন্ধের পর পান্ডুলিপি...

প্রতিদিন সন্ধের পর অক্ষরবৃত্ত থেকে স্বরবৃত্ত...

 

যমুনা-৩


তুমি আজ পরিপূর্ণ যমুনা !
আকাশ ভেঙে গেছে, 
তোমার জ্বরে পুড়ে যাওয়া 
কপালে কোনোদিন হাত রাখিনি।

বিদেহী নয়, মাটি থেকে খুঁড়ে আনা
খাঁটি সোনা গলিয়ে দিয়েছি নিজের বিরুদ্ধে।
তুমি এখনও বলবে আমার স্পন্দন হাওয়ায় 
ভেসে বেড়ায়, যখন গোধূলি গাঢ় হয় ?

আমার কপালে একদিন আঙুল রেখে
চক্রাকার আবর্তে খুলেছিলে দরজা,
তারপর আমার মনে ছিল না মোটেও, 
আমি ছুঁয়েছি ধারালো স্বর, যেখানে 
গতকাল একটি মাছি আহত হয়েছিল।

আমি ছুঁয়েছি রুক্ষ চামড়া, কতগুলি শীতল 
শ্বাস আমি বাঁচিয়ে রাখি অন্তিম সময়ে...

তোমার স্রোতের উপর নামে অকাল তুষারপাত...


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••