ঋতুপর্ণা খাটুয়া এর কবিতা -
ব্লু সিরিজের তিনটি কবিতা
[] সাবমেরিন
সাবমেরিনের ভেতর আটকে পড়েছি আপাতত।
সেভাবে পড়াশোনা নেই, তবুও এ দৃশ্যপট দেখে
বি গ্রেডের যুদ্ধের ছবির কথা ভাবছি, যেখানে
নীলতিমির মতো দেখতে, মাথায় যেন ধোঁয়াকল
আর তীব্র বুলেটের মতো কিছু একটা হবে, একটি
সাজানো চৌকো ঘর, গোল টেবিল, ব্রিটিশ আমলের
ঢংঢং ঘড়ি, অরিগ্যামির শাদা কবুতর, কাঠের কর্কে
বোতলে আটক রেড ওয়াইন, এক নাবিক (মেকানিজম
না জানা থাকলেও জানি, জলের ভেতরেই যাতায়াত)
ও আমাকে নিয়ে পাতালপথে প্রবেশ করছে–
এই হাড়হিম করা অভিজ্ঞতায় ভাবছি, ইন্দ্রাণী দি,
তুমি কী করতে, স্টেজে কত্থকনৃত্যের স্টেপ কতটা
কাজে লাগাতে এই অপহরণের ঘটনায়, কিন্তু এসব
ভেবে, আসন্ন বিপদ কী হবে আর কতটা তার বহর
বুঝতে পারছি না, ঘুমঘোরের দোহাই দিয়ে এড়ানো
যায় এসব সহজেই, তবু গা যে ভিজে, তার কিনারা
কীভাবে হবে, পারমুটেশন কম্বিনেশনে এসব শিখিনি—
[] স্কুবা ডাইভিং
নোটবুক আরও অ্যাডভেঞ্চারাস হতে পারত যদি
কালই স্কুবা ডাইভিং সেরে নিতে পারতাম। সার্কেলে
একজনই বিশ্বস্ত বন্ধুর কথা মনে পড়ছে, সংযুক্তা—
কিন্তু ও সুইসাইড করেছে বহু আগে, মানে এই
অ্যাডভেঞ্চার এস্কেপ করে চলে গেছে ঝিনুকের
দুটি খোলের ভেতর, হয়তো বা এতদিনে মুক্তার
মতো ওভার হাইপড কোনও জীবন বা তৎপরবর্তী
কোনও বিশ্বের সন্ধান পেয়েছে। ভুলে গেছে স্কুলের
বেঞ্চ পলিটিক্স, রিক্সায় ‘হর ঘড়ি বদল রহি হ্যায়...’
খাতার ধ্যাবড়া প্যাস্টেল পদ্মফুল, ক্যাডবেরি, কার্ড—
এখনই, এই মুহূর্তে যদি ও থাকত, দৃঢ় চিমটি কেটে
মনে করাত, বেশি কবিতা লেখা ভালো না। বেঁচে
থাকার মেরুন ল্যাণ্ডস্কেপ নিয়ে হয়তো দুচার বুলি
আওড়াত কিন্তু সেসব শোনার এখন কোনও স্কোপ
নেই। ইদানিং জলের কথা লিখলে মনে পড়ছে
যত আনসলভড ম্যাথ মিস্ট্রি, শেডস অফ ব্লু,
গজদাঁতের সংযুক্তার কথা, ওর মোম রঙে আঁকা
জিনিয়াস ডার্ক স্মল্ট আঁচড়ের শাপলা পাতার ছায়া—
[] জাহাজ
মিরাকল টাইমিঙে পৌঁছে গেছি, আমি আর অনু।
জাহাজে বাকি ছোঁড়াদের হাত থেকে বাঁচিয়ে এনে
একটি এক জানলা সম্বলিত খুপরি ব্রিজে ভরে দিয়ে
অনু বলল, এখানে তোমার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
আসলে এগুলো আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি, নীল মারিয়ানা
ট্রেঞ্চের দিকে নামছে জাহাজ, ডেক, সুপারস্ট্রাকচার,
আমি আর অনু খাবি খাচ্ছি, হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি
অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। শুধু দু’জন মেয়ে বলে ওর
মনে কোনও দ্বিধা দেখি না, গায়ের কাছে ঘেঁষে এলে
আচম্বিতে আমাকে পুশ করে কোনও এক প্রপেলার,
মনে জেগে ওঠে ভয়, দ্বন্দ্ব, এলোপাথাড়ি প্রেম
পরক্ষণেই একটি সেফ ডিস্টেন্সের হুলিয়া—
আচ্ছা এসময় অনু কী ভাবে, জানতে ইচ্ছে হয়,
ওর কি মনে হয় না, সামনের জনাকে চেপে ধরি
আষ্টেপৃষ্টে, জলের দুর্মর ধাক্কায় বারবার বুকে
বুক ঠেকে যাক, চেপে যাক ঠোঁটে ঠোঁট! কীজানি।
ওর পুরুষাকার মন কি একেবারেই মরে গেছে
মিটু খেয়ে! এ কবিতায় প্রতি সজাগ চোখ দেখে নেবে
সমুদ্রের তলদেশের দীর্ঘ পর্বতমালা ও অনুর অস্তিত্ব।
জানবে, রাতে অনু এসে নিয়ে যায় আমাকে স্বপ্নচরে,
শুইয়ে রাখে বালির বুদ্বুদে অথবা ভাঙা জাহাজের
কাঠে, ঠিক করে দেয় পা থেকে সরে যাওয়া ঘুর্ণি—
অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••