Sunday, 25 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -শেষ 

ঋতুপর্ণা খাটুয়া এর কবিতা -



ব্লু সিরিজের তিনটি কবিতা
[] সাবমেরিন

সাবমেরিনের ভেতর আটকে পড়েছি আপাতত।
সেভাবে পড়াশোনা নেই, তবুও এ দৃশ্যপট দেখে
বি গ্রেডের যুদ্ধের ছবির কথা ভাবছি, যেখানে
নীলতিমির মতো দেখতে, মাথায় যেন ধোঁয়াকল
আর তীব্র বুলেটের মতো কিছু একটা হবে, একটি
সাজানো চৌকো ঘর, গোল টেবিল, ব্রিটিশ আমলের
ঢংঢং ঘড়ি, অরিগ্যামির শাদা কবুতর, কাঠের কর্কে
বোতলে আটক রেড ওয়াইন, এক নাবিক (মেকানিজম
না জানা থাকলেও জানি, জলের ভেতরেই যাতায়াত)
ও আমাকে নিয়ে পাতালপথে প্রবেশ করছে–
এই হাড়হিম করা অভিজ্ঞতায় ভাবছি, ইন্দ্রাণী দি,
তুমি কী করতে, স্টেজে কত্থকনৃত্যের স্টেপ কতটা
কাজে লাগাতে এই অপহরণের ঘটনায়, কিন্তু এসব
ভেবে, আসন্ন বিপদ কী হবে আর কতটা তার বহর
বুঝতে পারছি না, ঘুমঘোরের দোহাই দিয়ে এড়ানো
যায় এসব সহজেই, তবু গা যে ভিজে, তার কিনারা
কীভাবে হবে, পারমুটেশন কম্বিনেশনে এসব শিখিনি—


[] স্কুবা ডাইভিং

নোটবুক আরও অ্যাডভেঞ্চারাস হতে পারত যদি
কালই স্কুবা ডাইভিং সেরে নিতে পারতাম। সার্কেলে
একজনই বিশ্বস্ত বন্ধুর কথা মনে পড়ছে, সংযুক্তা—
কিন্তু ও সুইসাইড করেছে বহু আগে, মানে এই
অ্যাডভেঞ্চার এস্কেপ করে চলে গেছে ঝিনুকের
দুটি খোলের ভেতর, হয়তো বা এতদিনে মুক্তার
মতো ওভার হাইপড কোনও জীবন বা তৎপরবর্তী
কোনও বিশ্বের সন্ধান পেয়েছে। ভুলে গেছে স্কুলের
বেঞ্চ পলিটিক্স, রিক্সায় ‘হর ঘড়ি বদল রহি হ্যায়...’
খাতার ধ্যাবড়া প্যাস্টেল পদ্মফুল,  ক্যাডবেরি, কার্ড—
এখনই, এই মুহূর্তে যদি ও থাকত, দৃঢ় চিমটি কেটে
মনে করাত, বেশি কবিতা লেখা ভালো না। বেঁচে
থাকার মেরুন ল্যাণ্ডস্কেপ নিয়ে হয়তো দুচার বুলি
আওড়াত কিন্তু সেসব শোনার এখন কোনও স্কোপ
নেই। ইদানিং জলের কথা লিখলে মনে পড়ছে
যত আনসলভড ম্যাথ মিস্ট্রি, শেডস অফ ব্লু,
গজদাঁতের সংযুক্তার কথা, ওর মোম রঙে আঁকা
জিনিয়াস ডার্ক স্মল্ট আঁচড়ের শাপলা পাতার ছায়া—


[] জাহাজ

মিরাকল টাইমিঙে পৌঁছে গেছি, আমি আর অনু।
জাহাজে বাকি ছোঁড়াদের হাত থেকে বাঁচিয়ে এনে
একটি এক জানলা সম্বলিত খুপরি ব্রিজে ভরে দিয়ে
অনু বলল, এখানে তোমার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
আসলে এগুলো আমি প্রায়ই স্বপ্নে দেখি, নীল মারিয়ানা
ট্রেঞ্চের দিকে নামছে জাহাজ, ডেক, সুপারস্ট্রাকচার,
আমি আর অনু খাবি খাচ্ছি, হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি
অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। শুধু দু’জন মেয়ে বলে ওর
মনে কোনও দ্বিধা দেখি না, গায়ের কাছে ঘেঁষে এলে
আচম্বিতে আমাকে পুশ করে কোনও এক প্রপেলার,
মনে জেগে ওঠে ভয়, দ্বন্দ্ব, এলোপাথাড়ি প্রেম
পরক্ষণেই একটি সেফ ডিস্টেন্সের হুলিয়া—
আচ্ছা এসময় অনু কী ভাবে, জানতে ইচ্ছে হয়,
ওর কি মনে হয় না, সামনের জনাকে চেপে ধরি
আষ্টেপৃষ্টে, জলের দুর্মর ধাক্কায় বারবার বুকে
বুক ঠেকে যাক, চেপে যাক ঠোঁটে ঠোঁট! কীজানি।
ওর পুরুষাকার মন কি একেবারেই মরে গেছে
মিটু খেয়ে! এ কবিতায় প্রতি সজাগ চোখ দেখে নেবে
সমুদ্রের তলদেশের দীর্ঘ পর্বতমালা ও অনুর অস্তিত্ব।
জানবে, রাতে অনু এসে নিয়ে যায় আমাকে স্বপ্নচরে,
শুইয়ে রাখে বালির বুদ্বুদে অথবা ভাঙা জাহাজের
কাঠে, ঠিক করে দেয় পা থেকে সরে যাওয়া ঘুর্ণি—

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 24 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -শেষ 

দেশিক হাজরা’র কবিতা -


[] নতুন []

শিষ ভারে শশি নূর ঢলে পড়ে কুমুদের কোলে
পৌষের রোদ্দুর পিছু নেয় কুয়াশা সরিয়ে।

আঙুলের প্যাঁচে সাদা খড়ি মাটি, আঁকা হয় 
লক্ষ্মীর পা, দেখে বৈরাগী। নবান্নে নব চাল
মিঠে গুড়ে মাখা। ভোর হলো দোর খোলো, 
দাও মা ভিক্ষা।

নতুন এসেছে উঠোনে লুটোপুটি খেতে
কোঁচড়ে বাঁধা লাল মুড়ি, সাদা গুড় পিঠে।


 [] গাঁ []

শহরের কোলঘেঁষা বন্ধু এক উদাস 
থাকে সে সেখানেই, আমাদের ঘর 
পানে তাঁর মন করে বাস। শহরের 
অনেক দূরে আমাদের বাড়ি। তালগাছে 
বাঁধা থাকে রসালো পিড়িতের হাঁড়ি

দেখেনি সে তেতুলের বোন, জামপাতা 
মোরা ছোট ডিঙি, কালো দিঘির ঢেউ। 
পথের পাশে বয়ে যাওয়া বিল

কে জানে সে, ওখানে একা একা কী করে! 
বলি তাকে চলে আসিস পৌষের কম্পন ধরে। 
তুসু গানে সুর তোলা হিমেল বালিকার মুখ, 
দেখাবো কাক ভোরে ডুমুরে ফুল। 

মনে তার বড়ো ব্যথা কৃপণ অন্তরে 
কোন এ মাঝ রাতে, একা একা শুনেছিল
হেডফোনে 'জীবনানন্দ' বলে যাঁরে

[] বিভাজন []

এসব আলগুছে অহমিকায় আর কষ্ট পাইনা
বরং 'তাহাদিগকে' ভাগবান বানিয়ে তোলার প্রক্রিয়া
অভ্যাস করেছি প্রাতঃকালে। বক্ষে টলটলে দিঘী
একটি ডিঙ্গি পাড় ঘেঁষে বাঁধা। প্লাস্টিকের নিসর্গমূলক
অ্যালবাম খুলে রেখে দরজা দিয়ে হেঁটে চলে যাই
বহুদূর, যদি কিছু পাও নিয়ে যেও অযথা সংকোচে
ফুরিও না বেলা। তোরঙ্গে তোলা আছে উষুদের ফর্দ,
অশ্রুগ্রন্থি, তোলা আছে কিচ্ছু অবহেলা। যা কিছু দুঃখ
শুনিও এই বেলা ওবেলাতে বেলা পরে যাবে। চকচকে
আলো গুলো ধৈর্যহীন, শোনে নাকো কিছু— বলে
এসো দলে যদি চাও উন্নত 'করিতে' শির। 

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday, 22 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -শেষ

শিবালোক দাস এর কবিতা -


[] কীর্তিনাশা

এক অদ্ভুত জ্বরের মধ্যে ছলাৎছল।
শুধু একবার রাখো হাত, বদল
শুধু নিঝুমেই হয়‌।

দেখো, একবার অস্ফুটে ডেকে ওঠে।

তার অন্ধকার সেই জানে দরজার আড়ালে
কিভাবে স্বর্গবাস পেরিয়ে গেছে, তবু দাঁড়ালে
আজ হঠাৎ করেই নিষিদ্ধকরণ লিখতে হয়।

তুমি জানো, বন্ধ দরজায় ফুল ফুটে ওঠে।

তবু নিঃশব্দেই কিছু মনে রাখা যায় না
জ্বরে, ছিঁড়ে যায় নিভৃতে ভালোবাসা, পায় না
তুলে রাখবার জন্য দু আঁজলা জল।

ভয় নেই। ছলাৎছল। একটু আমাকে 
ভাসিয়ে নিয়ে যাও, অনুজ্জ্বল...
চোখ বুজে রাখি। শয্যা ক্ষয়।


[] মরণের পরে স্রোত আসে

সফেন হাতে তোলা থাক প্রান্তরপৃথিবী--
নম্রতার অপরাধে সংকেত পীড়িত হলে,
ভুলে যাই নশ্বরতা...
চাইনি রাতারাতি পাল্টে যাওয়া আলোর
আড়ালে দরজা খুলে দিক কেউ,
এ দেহে কখনো থামে না অপচয়...

পরিচয় ? হারানো প্রত্নে থেমেছে লিখন,
ছায়াসম্বল এটুকুই,
বুকের ভেতর নিঃশেষিত ছল উপমায়
জ্বেলে রাখে আগুন যতক্ষণ না মরণের
পরে স্রোত আসে যমুনায়...



[] মরণের পরে স্রোত আসে - ২


ব্যর্থ কবিয়াল আমি।
জ্যোতিঃপাতে চিরায়ত মুখ
থমকে দাঁড়ায়, 
বিচিত্র অনুনয় নিঃশব্দে তুলে
রাখো নষ্টপ্রবাহ, কালো লাগে...

অশুদ্ধ প্রণিপাতে কোথায় আনলে আমাকে ?
থাক অন্তরায়। মৃগশিরা ফেটে যে লালনগানে
ধুয়ে গেছে শরীর, 
চিহ্নিত করো, মারো অশ্বক্ষুরে !
নদী চাই স্পর্শহীন অন্তরে।

কম্পনে আজও খুলি অন্ধকার...
পড়ি নিপুণ লোভ,
ঔরসজাত স্তব্ধতায় কেটে গেছে নীলিমা।
উপনীত জন্ম কেন অখন্ড ?

অগ্নিমুখে মরণ আজও বড় মৃদু,
ভাঙে শ্বাস দৃশ্যমান মিথ্যার আড়ালে !

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 20 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব-শেষ

জয়া বসাক এর কবিতা-


[] মৃত শিল্পীর সৎকার 

দূরবর্তী সকল সাম্যবাদ : সংসারের অদেখা তুমি

পিষে ফেলার আগেই সামগ্রিক নির্দেশ
ধীর স্থির । ধীর স্থির
ধীরে ধীরে যত মৃদুল ব্যথা
মেঘমন্দ্রস্বরে উথলে ওঠা বিহ্বল
'ওরা নেমে আসে আকাশের গায়
তারা খুঁটে খুঁটে ওরা ঐ যে যায়' -- ইতিহাসের গোপন তথ্য অনুযায়ী
এ কথা জানবার নয় । কামোদ চোখে মৃতের অনাদি সুর
লেগে থাকে বক্ষের চারুমালায়

উৎপ্রাসে কেউ চলে যেতেই পারে, তাই বলে শিল্পীর ঘর অনাথ হয়ে ঝুল পড়ে ক্রমশ একা হয়ে উঠবে ?
তীব্র দারিদ্যের এও এক অশ্বত্থ দিন --
খুব শীত করে, খু ব খু ব
গায়ের শীতবস্ত্রে অর্ধোক্ত আড়ম্বরী
যেন দলাপাকা ভূর্জ, সে গান -- যে গানে চির জেগে থাকা --অপরাজিত অপর্ণে

এভাবে দুয়ার খোলা --
একে একে সবাই ফিরে যাবে । যেভাবে একে একে সকলেই কাছে এসেছে...


[] গন্ধরাজ বিচ্ছেদ
 
মৃত মানুষের বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটা সুখী মানুষ, কতদূরে রাতজাগা ভোর দেখতে পায় ? শ্বাস নিতে নিতে বুক খালি হয়ে এলে, রাজহাঁস ভারী হয়ে ওঠে... চাঁদ উঠেছে কালচে রঙের ভুষিতে,খইয়ের ভুসিতে । চাঁদের স্পষ্ট কথা শুনতে পাই, ভীষণ জ্বরে-- গন্ধরাজ, গন্ধরাজ...। আজ খুব ঝোড়ো হাওয়া পশ্চিম আকাশে, সেদিনের পর যন্ত্রণার কথা কাউকে বলতে কষ্ট হয় না কিন্তু মৃত্যু পায়। একটা বিচ্ছেদ ঘোষণা হবার পর মৃত গর্ভে যমজ সন্তান জন্ম নেয়...



[] ভয়

মেহগনি গাছের নিচে কত দেহ পড়ে আছে
থোকা থোকা--
তারই মধ্যিখানে বসে একটা সারস পাখি
দোল খায়
দোল দেয়
বন বন করে ঘুরতে থাকা
মাংসপিন্ড কেঁপে ওঠে
নেমে আসে পর্দার ভ্রূণ ধরে, অন্তিমে...
এরপর ভ্রমণ 
চেয়ে আছে, যেমন কতকাল কেউ ঘরে ফেরেনি
হারিয়ে গেছে নির্মানুষ জনস্রোতে 


একা একা ভয় হয়
পাছে কেউ ফিরে এসে আবার চলে যায়
মেহগনি বুকের 'পরে--

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday, 16 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৫

অনিন্দ্য পাল এর কবিতা -

[] আলোর ঝরনার নীচে  

রাতের লিপিঘর থেকে নিয়ে এসেছি 
মন খারাপ 
তোমার চুলের ছায়াবন থেকে এনেছি একমুঠো রোদ্দুর 
মাতাল হাওয়ার বুকপকেট খুঁজে পেয়েছি অস্থির জোৎস্না 
অতঃপর আলোর ঝরনার নীচে এখন মাখামাখি আদর 
এবং গান্ধর্ব মতে রোপন করেছি পূর্ণিমার বীজ ... 


[] ঘরের পথে  


ডানায় হলুদ আলো মেখে ভেসে আছি 
ভেসে আছি বিকেলের নীলিমা বেলায় 
দূরান্ত থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে 
অচেনা সন্ধ্যা প্রদীপ 
মেঘশিশু কানে কানে বলে দাঁড়ি টানো 
                                    এবার খেলায়...
আলোঘর পেরিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারের 
পশমী গুহায় 
বিকেল ফুরিয়ে গেলে ফিরে যেতে হবে 
নিশ্চুপ মিথুনবেলায়, 
আগামী বাতাস পেরিয়ে যাচ্ছি পর্ণকুটির 
চকমকি আকাশের বুকে মুখ গুঁজে কেটে যাবে রাত আর অগুনতি মন খারাপের ভিড় 
ডানা মেলে আছি একা বন্ধুরা পৌঁছে গেছে কখন 
                          একে অপরের আদরের নীড়। 

 
[] ঢেউ 

অন্ধকারের গর্ভ থেকে বেরিয়ে কড়া নাড়লাম 
সময়ের সদর দরজায় 
কোন সাড়া নেই কেবল বয়ে চলার একান্ত ছলাৎ 
তবুও দাঁড়িয়ে থাকি হাতে ঢেউ ভাঙা একমুঠো জল 
যদি তোমাকে একবার পাই চাঁদের প্রতিবিম্বে...  
জ্যোৎস্নার জোয়ার সুঁচের মত বেঁধে হৃদয়চাদরে 
বহু দূর থেকে ভেসে আসে যারা উথাল পাতাল 
তাদের সঙ্গে ঝাউ কেয়ার একাগ্র কানাকানি 
কোন নীল বালিয়াড়িতে জন্মভূমি, আমি কি জানি? 
তবু ভেসে আছি ডুবিয়ে দিয়েছি সব ঠিকানা গুলো 
যদি কখনও খুঁজে পাও তোমার গেরস্থালি জানিও, পৌঁছে দেব হাজার বছর ধরে বাস্তুহীন ঢেউভাঙা বিরহধুলো... 

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 7 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৫

কিশোর নাগ এর কবিতা -



[] সাঁওতালি জন্ম

এই দেখো রাস্তা চলে গেছে তীব্র দিনরাতের
সময় ধরে নক্ষত্রের প্রান্তে
দ্যুতির অনুগমনে ব্যাপ্ত তিমিরের দরজায় হাত
রাখি শব্দহীন 
সোনালি ফসলের ঘ্রাণে বাজে ঘামের এস্রাজ 
বাঁশি বাজে বাঁশের কোটরে
বাসন্তী বাতাসে ভাসে মহুয়ার গন্ধ
এটা কোন গল্প নয়
এখন স্থাবর-জঙ্গম জুড়ে ফেলে যাওয়া
যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নিরীহতা 
এই যে গালে হাত দিয়ে বসে আছো তুমি
ভেতরে একটা সাঁওতালি জন্ম অনবরত ঘুরছে 


[] ক্যানভাস 

সময় কেমন করে তার আদল পাল্টায়
এক এক মুহূর্ত চলে যায় 
ঘ্রাণে ঘ্রাণে রুপোলি বিন্যাসে সূর্য হাসে আকাশে 
জীবনানন্দের সোনালি ডানার চিল 
ঢাল খায় বাতাসে
গভীর নগ্নতার মতো খুলে যায় সব আচ্ছাদন 
আলোরিক্ততায় আবাসিক পাখিদের আচমন
বন্দরের নি:সঙ্গতা থেকে বকেরা উড়ে আসে
ঝরাপাতা থেকে থেকে নাচে আর হাসে
এটা কোন গল্প নয়
দগ্ধ শব্দের জয়
বারান্দা পেরিয়ে তুমুল বসতি গড়ে ওঠে বুকে
মাধবীলতাও দেখে ঝুঁকে 
আজ-কাল-পরশুর আভাস
শিল্পী তুলি নিয়ে এঁকে চলে প্রস্তুত ক্যানভাস


[] একটি অমল উপলব্ধি 

প্রত্যাশিত ফলটুকু সবসময় মেলে না  
কয়েকটুকরো ফানুস ভাসে নীল আকাশে 
যদি তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বপ্নের নীল পরীটা 
ডানা মেলে উড়ে যায় স্বপ্নের ভেতর 
খুঁটে নেয় সোনালি গমের দানা 
(অবশ্য কে চায় এমন পাগল, কবি আর প্রেমিক ছাড়া) 
ইচ্ছে-পূরণ ভীষ্মের মতো যদি হতো 
পাতলা ওড়নার মতো পর্দা চোখের উপর 
'আয় ঘুম আয়, ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি...'
ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছিল এবং শেষ রাতের চাঁদ 
দেদার বিলচ্ছিল আলো হরির লুটের বাতাসের মতো
এরই মাঝে ঘুম এলো নির্বিবাদী 
অশরীরী নিরুদ্বেগ ইচ্ছেগুলির ধ্যান সমাধি...

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 5 May 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৫

ত্রিদিব রায় এর কবিতা -

[] চই চই
     
আয় আয় চই চই
দিঘি জলে চিৎ সাঁতরে এগিয়ে যায় প্রেম 
জলে ভাসা হাঁসের দল
সরে সরে পথ করে দেয় ।
ওপারের ঘাটে বসে নবীন বধূটি
ছাই দিয়ে কাঁসার বাসন মাজে,
ঘোমটা পড়েছে খুলে তার ।
প্রতিবেশী যুবকটি ঘাটে আসে
দুজনেই দুজনের চোখে চোখ রাখে
বধূটি সলজ্জ হাসে। শাপলা ফুলের মত
রাঙা দুটি ঠোঁট তার কেঁপে কেঁপে ওঠে।
যুবক লুকিয়ে হাসি ঝাঁপ দেয় জলে,
তার পর সাঁতার সাঁতার আর
স্নান স্নান জলকেলি ---
নিঝুম মধ্যাহ্ন বেলা 
ভেজা শাড়ি পাশে আসে 
আঙুলে আঙুল ছোঁয়, দূরে যায় ।
বধূটি তাকিয়ে থাকে,
মনে পড়ে যায় তার ফেলে আসা প্রেম।
                  

[] এভাবেই দিন কাটে 
                   
সকাল বেলাতেই একরাশ
এঁঠো বাসন ধূতে বসেছে পুকুর ঘাটে 
দীনু মণ্ডলের কিশোরী মেয়েটি,
রুক্ষ চুলে কতদিন তেল পড়েনি 
গায়ে ছেঁড়া ফাটা ফ্রক ।

খোকা চৌধুরীর কিশোরী মেয়েটি 
জোড়া বিনুনি দুলিয়ে চলেছে ইস্কুলে,
কাঁধে তার বইয়ের ব্যাগ 
শাড়ি ব্লাউজে টগবগে লাবণ্য 
ফুটে উঠেছে জ্বল জ্বল করে।
হেঁটে চলেছে হরিণীর মতো চপল ছন্দে।

দীনু মণ্ডলের মেয়েটি তাকিয়েই থাকে 
তার বাসন মাজা থেমে যায়
চোখের কোণে চিকিয়ে ওঠে জল।
এ ঘটনা নিত্য দিনের,
এরপর সে ঘুঁটে কুড়োতে যাবে
তুলতে হবে কচু শাক কলমি লতা,
ছাগল ছানার সঙ্গে খুনসুটিতেই
কেটে যাবে আধা উপোসী দুপুর।
এভাবেই দিন কাটে, কেটে যায়।
                
[] ভয়
     
দুঃসময়ের ঝরা পাতা উড়ছে  
পাতা কুড়োনি মেয়েরা ঝুপড়ির ধূসর উঠোনে বিষণ্ণ বসে আছে ,
মুখে হাসি নেই।
কতদিন উনুন জ্বলেনি ঘরে।
গোপন আস্তানা থেকে কালো চাদর গায়ে 
বেরিয়ে আসছে ভয়।

মানুষের ঘরে সঞ্চিত চাল ডাল 
তেল নুন টাকা কড়ি সুখ
কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে।
শাসক শোনেনি অভিযোগ,
ওদের সময় নেই।
এখন প্রতীক্ষা শুধু 
ভয় মুক্ত নতুন দিনের।
          

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••