Friday 23 April 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

সুকৃতি কবিতা-





১.

∆ বিকার ∆



১।

একটি সকালবেলা সুঁচের মাথায়

গেঁথে থাকে সহজ গমনে।

দানের সহজ ভাষা ভ্রমে

করেছে চতুরমুখী তাই।


হরি আসে হরি যায়, আমাকে ধরে না।

আমিও অক্ষম হাতহীন…

ছেড়ে দিয়ে অনাবিল আনন্দ কুড়াই।


২।

চাকার উপরে কাটে অর্ধেক জীবন

বাকিটা চাকার তলে কেটে কেটে যায়।

দাগের চাদর সরে গেলে

কথা বলে মরণের গান।


বহুমুখী শ্রমিকের মতো দাম ওঠে

আকাশে তখন তবু প্রেমের বাজারে

অপবাদ জোনাকির আলোর মতন

জ্বলে শুধু পেছনের ঘরে।


জারে জারে দ্রবীভূত মুখ

কখনও অ‍্যাসিড আর কখনও ক্ষারের

রসে চাপে লিটমাস হয়ে আছি প্রায়।


রোগ ভোগ পাশ দিয়ে ঘোরে

আমাকে অচ্ছুৎ ভেবে হয়তো ছোঁয় না।


তবু আমি বেঁচে আছি অনাবিল প্রেমের বিকারে।



 



২.

∆ জরাসন্ধ ∆



আমার মাথায় আর কিছু আসছে না। 

ঢিলেঢালা সুতোর কৌটায়

কোথায় লুকিয়ে আছে সুঁই!

ভাঙা ব্লেড থাকতেও পারে।


আমি তবু সেলাইয়ের নামে

ভেবেছি নিয়তি দুই টুকরো আপেলে।

আসলে বাঁধতে গিয়ে নিচে

জরাসন্ধ হয়ে গেছি তার।


এইবার পর্যাপ্ত ভীমের কাছে 

একদিন মুছে যেতে হবে সেও জানি।

কৃষ্ণেরও বাঁশি যাবে থেমে।


এখন আসনে রাখা দেবী 

আমার প্রেমিকা।

মননে বসান দেবী বৌয়ের সতীন।




৩.

∆ ক্ষত ∆



গোয়েন্দা প্রবণ মন বেশি সৎ হয়ে গেলে 

কথা বলে ঘরের বেড়াল।

তাকে বেশি না তোলাই ভালো।


হয়তো তখন কোনও অদৃশ‍্য কুকুর টের পায়

নিজেরই শরীর থেকে ক্ষত পচা ঘ্রাণ।

হৃদয় আহত হয়, তবু বেঁচে থাকা 

যেন এক সই দুটো পায়ের উপরে।

চোখের ভিতরে মহাভিনিষ্ক্রমণ।


অগুন্তি পথের শেষে ঠিক একজন

আয়না চিবিয়ে এসে সামনে দাঁড়ায়।


আমরা আসলে তো সময় নষ্ট করার জন‍্যই 

কবিতা লিখছি, মনে হয়

অপেক্ষার নামে রেখে যাচ্ছি কাটা দাগ 

লুকোনো শরীরে।




৪.

∆ কুকথা ∆



কার কাছে ধরা দেব? কার কাছ থেকে যাব ছিঁড়ে!

হরিণের মধ‍্যাহ্ন ভোজন 

বেরসিক নদীর ওপারে গেলে থেমে

এই পার ভাবের ভবন।

কচি কচি পাতার বয়ানে

লেগে কুয়াশার যোনি চেরা আলো

ভাষা আরও প্রবল হয়েছে।


গাল বেয়ে নেমে আসা অশ্রু সকল

হঠাৎ থমকে গেলে ফুঁয়ে

রোদনের জ্বালা নিয়ে দেহে

তবুও থমকে থাকে মোম।


কার রিং কার আঙুলে গড়ায় জানে

বুকের পাথর।

ধীরে ধীরে সব রং ক্ষয়ে যায়,

সব হাসি মুছে যায় গাঢ় সাদা একটি টেবিলে।


আমাকে ছাড়ে না নীল আলো, লাল আলো!

ক্ষণে ক্ষণে চাকার ঘর্ষণে

দূরত্ব মুছতে গিয়ে শেষে

সব ব‍্যাস ছোটো হয়ে গেছে কুকথায়।




৫.
∆ শোয়া ∆



কিছুটা অপূর্ণ থাকা ভালো।

সব পাওয়া হয়ে গেলে কিছুই থাকে না।


দ্রোহের নিরীখে অক্ষরেখা 

বেমানান হয়ে যায় দ্রাঘিমা শুলেই।


আমাকেও মনে হয় শুয়ে আছি

তোমাকেও শুয়ে আছো মনে হয়


গাছ পাখি আকাশ তারারা

সবাই পড়েছে পাশে শুয়ে


এমনই অনন্ত সব শোয়া

কেউ কারো ধারে কাছে নেই।






ছবি- অতীশ কুণ্ডু

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

মিজান হাওলাদার এর কবিতা-





১.

∆ একটু সুগন্ধের অন্বেষণ ∆



দুঃখের মুখোশ পরা যাযাবর শহর!

তোমার ধূলোর ধূসর গলিতে আহত হয়ে-

দূর বহু-দূর পথে ঘুরেছি।


পদতলে প্রাসাদের মত দুঃখ

একটু সুগন্ধের অন্বেষণে 

রসহীন পাথরের ভেতর আটকে যাচ্ছি

তোমার বাইরে ভেতরে যাওয়া আসা করে মরণ।


অনিশ্চিত আমি 

উঠে যাচ্ছি আলোর জঙ্গল থেকে

নিজেকে নিজের থেকে অত্যাচারে

উঠে যাচ্ছি দালচিনি রঙের গম্বুজগুলো থেকে

থমকে থাকা মানুষের ভীড় থেকে

ধারাবাহিক অনন্তের ভেতর।


স্মৃতিতে আগুন জ্বলে, দীর্ঘকাল

একটু সুগন্ধের অন্বেষণ

না পেলে কোনো অভিযোগ নেই;   

যদি পেয়ে যাই তা যেন আমাকে আনন্দ দেয়।





২.

∆ জাদু শব্দ ∆



  আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে


সুখ 


     দুঃখ 


           হাসি


                 আনন্দ 


                        এমন রঙ বেরঙের নানান শব্দ


কিছু শব্দের হাতে হাত রেখে মাইল মাইল পথ  পেড়িয়ে বন্ধুত্বের বুনিয়াদ গড়ি—

কিছু শব্দের সাথে এলোমেলো বন বনান্তর উঁচুনীচু সরলবর্গীয় পথে পথে হেঁটে আমার দিক বেঁকে যায় দিকভ্রান্তপুর

   

আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে

সাহসী 

        নমনীয়

                ভীরু 

                   এমন নানান শব্দের সাথে

তাল মিলিয়ে পাশাপাশি বাজি—

আমাকে শব্দে শব্দে বাজায়; তবুও শব্দের কাছাকাছি আরও একটু ঘন হয়ে বসি —


  আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে—


     আগুন 


           পানি 


              হাওয়া


এমন নানান শব্দেরও আছে যৌনতা বোধ

তাঁরা লজ্জা পেয়ে উলঙ্গ হয়ে আমার সামনে- কাঁপতে থাকে

এসব না দেখার ভান করে

তুমি নামক জাদু শব্দ নিঃশ্বাসে চেপে জীবন গড়াগড়ি




৩.

∆ যা খুঁজে বেড়াচ্ছি ∆

 


বাতাসের হাড়মজ্জার ভেতর যেন ভাসমান  

স্বপ্ন আর মিঠে ভাবনাগুলি

পিছনে পবিত্র আগুন ঘাতকের তাড়া

অনন্তের উপর খোলাখুলি ভালোবাসা আমার। 


শোকগ্রস্ত মোমের পুতুল কাঁদতে কাঁদতে

ভেসে যায় মঙ্গলকলস

জমাটবাধাঁ সময়ে দুঃখ জিভ বাড়িয়ে দিয়েছে  

আগুনমোরগ গান গাইছে 

দীর্ঘশ্বাস, দীর্ঘশ্বাস

নীল স্তব্ধতার মাঝে খোলাখুলি ভালোবাসা আমার। 


হাহাকারে একটানা কেঁদে যায়,

কেঁদে যায় মোমের পুতুল

স্বপ্ন দেখার অত্যাচার থেকে 

বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও

আর্তনাদ, আর্তনাদ

এক ফোঁটা অতল জলের মধ্যে খুঁজে যায়

খোলাখুলি ভালোবাসা আমার। 




৪.

∆ শপথ ∆ 



যখন বৃষ্টির মতো চোখের জল ঝরে

সেরে নিই জীবনের শুদ্ধতম স্নান।


এই ঈশ্বরহীন সময়ের কথা

আমি কাউকেই বলব না

সেকালের গোপন শপথ।




৫.

∆ পথিক ∆



তুমি কান্না নদীর তীরে

আনন্দকে খুঁজে বেড়াও রোজ

সে অজানা উৎসবে

কেউ রাখেনা বিষন্নতার খোঁজ।




ছবি- অতীশ কুণ্ডু

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০




কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

মৌপর্ণা মুখার্জ্জী’র কবিতা-




১.
∆ নক্ষত্রবনে ∆


উত্তাপে পুড়তে পুড়তে দিনযাপন
আরেকটিবার বৃষ্টি হলে
ভিজবে গাছ,মন,শরীর
নক্ষত্রবনে একটু জায়গা রেখো
কে জানে কখন স্বর্গারোহন পর্ব এসে পড়ে।



২.
∆ রঙবাহারী ∆



ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে রঙ
কখন হবে রামধনু।
ওই দ্যাখো মাছরাঙা,সবুজ টিয়াপাখি
অথবা কাঠশালিখের রঙ।

সব রঙের সঙ্গম হলে
জন্ম নেবে  নতুন পাখি,আকাশ,অবকাশ।




৩.
∆ অন্ধকারে ∆




শিখা নিভে গেলে
পোড়া সলতের কালিতে লিখি নাম।
কালো অক্ষরগুলো অন্ধকারে ফেরিওয়ালা।
যে ঘাটে নৌকো থামবে সই
সেখানেই পায়ে বাঁধা নোঙর।
শিকড়ের কাজ শেষ হলে
গাছেরও হাত পা গজায়।
আঙুল আটকে কাঁথা বোনা সুতোয়।
নকশা তুলতে গিয়ে
ছুঁচ টাই বেঁকে গেছে।



৪.
∆ অবশেষে ∆



উপবাসী চাঁদ ও কুমুদিনী
বিনিদ্র রাত,পাঁজরে জমে শিশির।
তিমির ফুরোলে
প্রেম প্রস্ফুটিত হয়,
প্রকৃতি গান গায়।
সহস্র দহনের মাঝেও
একটি স্নিগধ ভোরের আশায়।




৫.
∆  দিনযাপন ∆



কেটেছে নক্ষত্ররাতগুলি
এখন অনন্তদিন
কচুপাতার উপর জমেছে বিন্দুজল।

সমুদ্র চাই নি
একটা নদী চেয়েছিলাম
আর নলখাগড়ার বন।

উঠোনজুড়ে প্রজাপতি
বাকরুদ্ধ আমি।

জানো মাধবীলতা 
ভগ্নাংশ থেকে
ভগ্নাংশ হয়ে যাচ্ছি।

ফুরব না কিছুতেই।

একদিন আতসকাঁচ নিয়ে দেখো
তিতির মুনিয়াদের সাথে বেঁচে আছি।




ছবি- অতীশ কুণ্ডু

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

রাজদীপ সেন চৌধুরী’র কবিতা-





.

∆ কল্পনার জন্যে ∆

 

এভাবে নিঙড়নো অন্তঃসারশূন্য মস্তিষ্কটা অসাড় থাকবে কতকাল

কি জানি। প্রতিরাতে বাঁশবন হাতছানি দিয়ে ডাকে; জ্যোৎস্নার চাঁদ

উজাড় করে দেওয়া স্তনের আলোয় ভিজিয়ে দেয় চোখ-মুখ সর্বাঙ্গ।

আমি কল্পনার পায়ে ফুল দিই, মাথা রেখে শুই অপেক্ষা করি-

যদি শেষ রাতে তুমি ছায়াপথে জোনাকির বেশে এসে মস্তিষ্ক প্রজ্বলিত করো।   

 

 

২.

∆ বন্ধুযোগ ∆

 

আমাদের ! এ প্রজন্মের মতো চারদেওয়ালে বন্ধুযোগ ? বরং

ইতিউতি ঝোপঝাড় পেরিয়ে ভোরের হলুদ আলো ছুঁইছুঁই করত গাছের মাথা,

জটাধারী কোন সন্ন্যাসীর মত ধ্যানরতা বট আশ্রয় দিত। সারাদিন ছিপে জড়ো হত

অজস্র রুই,তেলাপিয়ার দল।

বিড়ির ধোঁয়া আর সে ভাজামাছের স্বাদ আজও ফুসফুসে এবং উদরস্ত জমাট বেঁধে আছে

কৈবাল্যে , গাছে .....হয়ত বা !

 

 


৩.

∆ বারানসী ∆

 

অসির দিকে গড়ানো স্রোতে জোয়ারের খেলা। একফালি চাঁদের মত নৌকোর খোলে চেপে

রাতের গঙ্গা হীরের সাজে মোহময়ী ; পাশে বসা বিসমিল্লাহ্‌র ঠোঁটে তখন বিলম্বিত মালকোশ।

মন্দ্র থেকে গাঢ় তারপর অতিমন্দ্রকে চলে যাবার সন্ধিক্ষণে রাত পেরিয়ে মণিকর্ণিকার উষ্ণতা

পুনর্জন্ম দিলো ; চতুর্দিকে বরুণের লাল আভা।





ছবি- মেহবুব গায়েন


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

মনোজ পাইন এর কবিতা-





১.
∆ সওদাগর ∆



শেষমেশ প্রশ্ন কর নিজের কাছে।
তোমার ভেতরে বর্ষার 
যে উৎফুল্ল মেঘমালার আবাস ছিল,
যে নদী বইছিল দুকূল ছাপিয়ে 
তারা কী সব আগের মতোই আছে?

নদী কী ভাঙেনি তার দুকূল? 
বর্ষণ ক্লান্ত হয়নি তো মেঘমালা?

সবার আগে নিজের কাছেই 
রাখতে হয় গভীর জিজ্ঞাসা।

আমি জানি সব প্রশ্নের এক
অনিবার্য উত্তর। তুমি আর 
তোমার মতো নেই!
আর আমার  ভেতরে
বাস করে এক আদিম সওদাগর। 




২.
∆ শব্দ রঙের নৌকা ∆


দুপুর গড়িয়ে পড়ছে বিকেলের দিকে।
ছায়া রঙগুলি, সব মায়া শেষ করে 
দাঁড়িয়েছে যেখানে 


সেখানে অশত্থ তলার ঘাটে বাঁধা আছে 
বয়সে পরিপক্ক এক নৌকো।

নৌকাটি হাওয়ায় হাওয়ায় ক্রমশ দুলে দুলে উঠছে!
হঠাৎই কবি খেয়ল করলেন 
নৌকায় হাজারো রঙের বর্ণমালা আর শব্দ ! 

এত রঙ কে দিল? 
কোথা থেকে এল এত শব্দ? 
শব্দগুলো এত রঙিন হয় কীভাবে? 

কেন মাঝিহীণ রঙের নৌকাটি
বাঁধা এক নির্জন ঘাটে?

চমকে চমক ভাঙে, দেখি এক বাউল গান গায়,
"কে যাবি নিয়ে যা আমায় শব্দ রঙের নৌকায়"




৩.
∆ প্রেমিক জন্ম ∆



আমি তো কান্নার কাছে বসিনি কখনো!
বিষাদসিন্ধুক কবেই ছুড়ে দিয়েছি,
নাথারথলির বড় বিলে।

সেখানে পাখি আসে প্রতিদিন।তারা ভালোবাসে।
ওদের ভালোবাসার সুরে হৃদয় গ্যাছে ভরে।
হে পুরাতন শৌর্য, 
আমি অশোকের রাজত্বে কবেই হেঁটে পেরিয়েছি
তোমার নিশ্চন্তপুর।
অভিবাসীদের পথ কক্ষনো কোন  কালেই
ফুলের আশ্বাসে ভরা থাকে না।

আমি তো কোনদিনই চাইনি
আমার পথ নিষ্কণ্টক হোক!
হে বিষাদ,হে অনন্ত শোক
আমি চাই প্রেমেই আমার বারংবার 
নবজন্ম হোক।




৪.
∆ প্রথমবারের সেই কালো জিন্স ∆



আমার প্রথমবার কেনা কালো জিন্স,
তার ভেতরে বেশ কয়েকটা পকেট ছিল!
আমি খুচরো টাকা পয়সা জমিয়ে রাখতাম।
প্রথম প্রথম একটাকা,আধুলি সিকিপয়সা
তারপর প্রথম প্রেম পত্রটিও।
  
প্রথম প্রেম ভেস্তে গেল দ্বিতীয়, 
প্রেমিক হৃদয় কখনোই প্রেমের পথ ছাড়ে না।
তবে তৃতীয়টি আসার আগেই 
জিন্সটাই গেল ছিড়ে!

এখনো কালো জিন্স কিনি, 
তবে এখন 
খুচরো পয়সার বদলে ডলার জমাই
আর কালো জিন্সের জন্য
জমিয়ে রাখি এক আকাশ মনখারাপ। 






৫.
∆ ঈশ্বরকে চিঠি ∆



মেঘপ্রদেশে শোয়ানো রয়েছে ডাকবাক্স
সেখানে ইশ্বরকে চিঠি লিখল একজন।

নিচে তখন একদল পতাকাবাহী লোক
ধর্মের গান গাইতে গাইতে
বিভাজনের শ্লোগান দিতে দিতে হেঁটে যাচ্ছে 
রাজভবনের দিকে।

সিণ্ডিকেটের ইন্ধনে মিছিল করলো অনেকেই! 

ঈশ্বরকে চিঠি লেখা ছেলেটি তারপর থেকে
প্রতিদিন একটি চাকুরীর স্বপ্ন দেখে।







ছবি- মেহবুব গায়েন
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

Monday 12 April 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

পাপড়ি দাস সরকার এর কবিতা-





১.

∆ ফসিল ∆



এখন জানালার ধারে দাঁড়ালে 

চোখে পড়ে প্রাচীন বটের শেষে শবহী নদী,

পরিযায়ী হাওয়া ব্যস্ত কোলাহল সহসা 

শুনশান ঢুকে পড়ে চার্ণকের বিষন্ন বাগানে।

এখন কলকাতার নিঃসঙ্গ নির্জনপ্রাসাদ 

কক্ষজুড়ে দরবারী গান মায়াবী মোহ,

উৎখননে উল্লসিত প্রাচীন পিতামহ 

স্মৃতির অনিবার্য অনুবাদ অন্তরে বাহিরে।

এখন ছায়ারা দীর্ঘতর হলে 

কলকাতার পাঁজর ভাঙে অনন্ত শোকে 

বিহ্বল ঠোঁটে তার চুম্বনের ভাষা 

কিভাবে বেঁচে আছ মর্মাহত তুমি ময় ?



২.

∆ সময়ানুসারে ∆



পঙ্গপালেরা এসেছে সবুজ থাকবেনা আর 

পঙ্গপাল এসেছে শস্য বাঁচবে না আর 

কারখানার গেটের আশেপাশে 

      পঙ্গপালের ভিড় 

অদৃশ্য বন্ধনে ছিল তীব্র শুষ্কতা 

তারপর পঙ্গপালের দল খুললো নিজেদের 

সমস্ত বন জুড়ে পঙ্গপালের দঙ্গল

সারাদিন ধরে সবুজের দিকে চললো নীল খিদে....

শুকনো আকন্দ বন-মড়কের তার পিছু আমরা সবাই 

কারখানার রুগ্ন ঢালে শুয়ে আছে

শতাব্দীর ঝরে পড়া

উদাস শ্রমিক!



৩.

∆ দিনলিপি 


 

আজ কৃষ্ণ গহ্বর থেকে তুলে আনি তবে 

সৃজনের পথরেখাপাখিদের কুহু 

যেন জলদবংশীয় আস্য।তবে হু হু 

পাথর ঠুকে কেন জ্বালতে পারিনা ক্ষুধা-ক্ষুরধার!

 

মগজে ভাসমান সুড়ঙ্গ পথ 

হিংসার অনল তাকে কাছে আনে

এই নদীযাকে প্রবাহ বলোহলুদ স্নানে 

কৃষ্ণ গহ্বর ডেকে আনেজন্ম নেই যার 

 

মৃত্যুশোকে বিহ্বল গানদেখো,আজ

ডেকে আনে তাকে 

জ্যোতি চিহ্নহীন এক অপার অসীম নির্জনে।

 



 ৪.

∆ শ্রাবনী ∆


 

বিচ্ছিন্ন নিশীথ জুড়ে বিশ্ববেদনা

 স্রোত স্পর্শ করে যায়,

অনন্ত জলের শব্দে রাত্রিটিকে দুভাগ করি,

এক ডালে ধারাবাহী সংসারের জল।

অঝোর বৃষ্টিতে গেট খুলে দিলে ছুঁতে আসে            

                পাঁচলক্ষ কিউসে জল,

গান আর কান্না মিশে পল্লবে পল্লবে ডাকে 

আকাশের সজল আদেশ

পর্যটক জলধারা ঘুরে হাওয়ায় মেতে ওঠে 

গগন কোথাও নেই পৃথিবী কোথাও নে শুধুমাত্র অকুল 

                 সিন্ধুর বার্তা আসে 

ঘুম তো আসে নাউঠি স্টোভ জ্বেলে কেটলি চাপাই

  সম্পন্ন স্রোতে আত্মানুসন্ধান ভালো

  আরো জল টগবগে জলের শব্দ 

কানভর্তি উষ্ণতা 

ফুটপাথ জুড়ে চট আর পলিথিন জড়ানো কাহিনী।

 

 


৫.

∆ ক্রমানুসারে 

 

 

রীতিরূপে বিকশিত স্বাভাবিক ফুল মাছ সেগুন 

এমনকি মানুষও 

রূপ সাধনার দিকে 

সারি সারি পিঁপড়ের দল ডিম মুখে শৃঙ্খলায় বিবর সন্ধানী 

ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেয় আর সুখ ছিদ্রের সমতায়  

চোখের আড়াল থেকে ঘূণ পোকারা 

কথা বলে ফিসফাস 

একি স্বভাব নাকি শীলিত অভ্যাস

অভ্যাসেই নিত্যকাল মজে যায়

জিন,ক্রোমোজোমের দায়বদ্ধতায় তৈরী হয় বলয় 

তাই রোজ বীজে তার প্রাপ্য জল ঢালি

দশটি আঙ্গুলও ব্যস্ত হয় পরে সৌজন্যতা বশত

কনিষ্ঠা মধ্যমা তর্জনী পড়ে থাকে নত নিঃশব্দ শাসনে।

   


ছবি- মেহবুব গায়েন


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

প্রতাপ হালদার এর কবিতা-





১.

∆ এইসব সাধ ∆

 

কতকাল মানুষ হয়ে আছি!   

জাঙাল পেরিয়ে ভাবি আমার ঠোঁটও কুটোকাটা নিয়ে নীড়ের ওম চেয়েছে

ভাবি বেরেলা ফল হব

জুয়েল পোকার গায়ে রোদ্দুর

কোনো জীবিকা নেইকোন রাজনীতি নেই

খেই খেই নেই


কতকাল মানুষ হয়ে রয়েছি!


একদিন,  তোমাদের  এই ধ্বংসের ভেতর থেকে  

কানশিরে ফুলের রেণু ছুঁয়েচুপচাপ হেঁটে আসি

 

 

 

২.

∆ নির্দিষ্ট ∆

 

নাচের মেয়েটি রেণু রেণু দুপুরেপ্রেম বুঝি এইসব 

বারবার বেরোনোর আয়না

গানে ভরে যায় পথহাতে বালিজল 

দূরের আঁধারে ডেকে আনে

একটা স্তব্ধবিন্দু -

 

যেন লুকনো অভ্যাসে ঘুরে আসি মাটির কিনারা 

 

 

 

৩.

∆ আশ্রয় ∆

 


এটুকু ভাত পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি

একটি তারা তুলসিতলায় এসে মায়ের খোঁজ নেয়

সবচেয়ে আনন্দ যেদিন ছিল তাঁতে বোনা দুপুর

কখনো কান্না অপ্রকাশ্যে থেকে যায় কাগজিফুলের চারপাশ

প্রাণ ফিরিয়ে দিচ্ছে কীভাবে যেন    

এমনই কিছু আমার গানের ধুলো গায়ে পায়ে 

আকড়ে ধরে থাকি    

 

 

৪.

∆ দাওয়াই ∆

 

নদী রাখি আমার পাশে

নির্জনতা রাখি 

ছুঁয়ে আছে শূন্যতার মধ্যে

বন আলোর আয়ু   

 

এইতো চেয়েছি আমি নেহাত পেরোবার নামে

জল ও পথের কাছে চেয়ে থাকা বাঁক 

নির্জনতা পেলে,       

সেরে যায় অসুখ

 

 

৫.

∆ রেডিও ∆

 

পাটসুতোলি বাঁধা ঠোঙা খুলে দেখা চোখ আমাদের

এ লোভ

রেডিওর কাটার মতো এসে দাঁড়ায়

 

বেজে ওঠে গান

খিদে সেরে যায়  

 

আবার কিছু বৃষ্টির মতো শব্দে দুপুর ঘিরে আসে  




 

ছবি- মেহবুব গায়েন


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০


কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

পার্বতী রায় এর কবিতা-




১.

∆ ইঙ্গিতে ∆



তোমার না বলা কথায় কিছু ইঙ্গিত ছিল
তোমার না বলা কথায় ছিল কিছু বৃষ্টিদিনের ডাক 
আমি ধুইয়ে দিয়েছিলাম কথাদের গ্রাম 
আলোচিত প্রজাপতির থেকে উড়ে এসেছিল কিছু বসন্তের ঠোঁট ও ফুলেদের তরতাজা নমস্কার 
 
জানতাম না পলাশ ফুলের ধৈর্যের কথা 
তাই বসন্তকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছি 
আমার বসার ঘরে কোনো ফুলদানি ছিল না 
ছিল কিছু হারিয়ে যাওয়া দিবাস্বপ্নের ধ্বংসাবশেষের প্রশংসা পত্র 
 
বেঁচে থাকার নামে এতদিন আমি কিছু ডিগবাজি কিনেছি




২.
∆ মৃত্যুর আগে ∆



এসেছি তরুণ জল ভেদ করে 

ওই দ্যাখো, মাটির নিচে শিকড় 
রক্তের ঘ্রাণ লেগে আছে  

কে জানে মরণযন্রণা 
তবুও মৃত্যুর আগে একবার ডাক 
দিয়ে যেতেই হয় প্রিয়জনদের 

কখন কোন খানাখন্দ থেকে
 উঠে আসে মৃত্যুর দূত
কেউ কি জানে !




৩.
∆ অনুভূতির প্রেক্ষাপট ∆



 অনুভূতির প্রেক্ষাপট বদলে গেলেই
চেনা মুখ গুলোও কেমন হারিয়ে যায় 

খানিক জিরিয়ে নিই 
জলের অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে আসে সুর

এই নগ্নতা গুলো রোজ ঢাকি
ঢেকে রাখি সম্পর্কের আঁচড়
 দৃঢ়তার সাথে 

আর কোনোদিন ফুলের সাথে মেলাবো না নিজেকে 
দু'হাত বাড়িয়ে মেঘ ধরবো 
নখের আড়ালে লুকিয়ে রাখবো নদী 
আর অনুভূতির বোরোলিন




৪.
∆ চাইলেই ∆




 চাইলেই কি ফিরে আসা যায় 
মুখের কাছে নদীটির ছায়া 

বিকেল বলতেই দরজা খুলে গেল 
অপ্রাপ্তির ঢেঁকুর ...

কেউ কেউ ককিয়ে ওঠে চাকার সাথে 
এখন থামতে বোলো না !

হিসেবে রেখেছি মাটির 
গঙ্গার ধার , পরিচিত মুখ 
দু একবার কাছে এসে দাঁড়ালেই সন্ধে নামে



৫.

∆ চিবুক ∆


 চিবুকের সারল্য দেখে বুঝেছিলাম বৃষ্টি আসবে 
কোনখান থেকে জন্ম নিচ্ছে কথারা !
স্বরবর্ণের গায়ে রোদ উঠলো 

নিয়ম করে হারিয়ে যাওয়াই পাখিদের কাজ 
কাব্যের ডানায় লেখা থাকে স্মৃতির এপিটাফ




ছবি- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০


কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

পঙ্কজ কুমার বড়াল এর গুচ্ছ কবিতা-



১।
জীবন ঘুমায়
আর
জীবন ঘুমায়..

কষ্টগুলি জেগে থাকে–
                            মনে..

২।
এত যে রাত্রি আসে
দিন–
জীবনের এটুকুই ঋণ

কাটিয়ে গেলাম..


৩।
হারানোর মতো কিছু 
নেই
শূন্য ছুঁয়েছি, শূন্য জেনেছি
    ‌‌                                যেই..

৪।
থাকে না 
শেষাবধি কিছুই থাকে না
মানুষের..
          


৫।
তা'ই হোক!
সময় বিগত হলে
সকলেই ভুলে যায় শোক..





ছবি- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০




কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৫

বদরুজ্জামান আলমগীর এর কবিতা-



১.
∆ বোবা কাহিনী ∆


কথা,কথার ভারে ছটফট করে নক্ষত্র তারাদের সাথে
বলতে বলতে, বলা হতে হতে তার কৌমার্য হারায়।

ফলে, এবেলায় বোবা হবার বাসনা আমার।
জানি না আমার দেখা হলো কার সাথে মধু আঙিনায়
বলে সে ভাষার মুক্তি নিরালা কথায়, নীরবতায়-
আমাদের পূর্বপুরুষ আর উত্তরপুরুষ উভয়ে থাকেন
জল ও হাওয়ার গভীরে, না বলা কথায়।

তোমরা বলো, বলতে বলতে মাইল কী মাইল চলে যেও।
আমি বসেছি কথা না বলার তাহাজ্জতি সাধনায়,
সব কথা বলবো আমি রবীন্দ্রনাথের সনে, বোবা মেয়ের
চোখের তারায়, ভিটগেনস্টাইনের বারামখানায়।

নীরবতা বলে যাবে আমার পক্ষে সকল কথা,
সব ঘুমের নহরে কিছু বলার বাকি রইবে না আর।

একটি প্রাণ আরেকটি প্রাণের তালুতে লিখে যাবে
আদিবাসী মন, চিত্রা হরিণের ভয়ার্ত চোখের লোবান
মঙ্গলগ্রহ অবধি সেলাই করা থাকবে হারিয়ে যাওয়া
ভাষাদের মর্সিয়া, ভৈরবী- আদিবাসী কৌমের জবান।





২.
∆ জন্মাষ্টমী ∆


রাধানাম রাধানাম কৃষ্ণ তুমি হও, বিলের পানি হয়ে নদী জুড়ে বও।  দুধ, মধু, দই আর মিস্রির জল, আমপাতা, আনারস, বেদানার ফল। আহবান মুদ্রায় সুগন্ধি পানি, তুলসি পাতায় আমি অভিষেক মানি। চন্দনবাটা, কস্তুরী আর ধূলিস্নান, জালা ধান গুঁড়া ভাঙে কৃষ্ণের মান। লোহা নয়, কাঠ নয় মাটির বাসন, পেতে দিই তোমা লাগি ব্যথার আসন। মেঘে মেঘে আগুন আছে হিয়ার ডলক, সবা মাঝে কৃষ্ণ থাকে আইনাল হক।।




৩.

 ∆ রাবেয়া বসরীর পলাপলি খেলা ∆



সেইসময় রাবেয়া বসরীর নামে একটা গল্প চাউর ছিল : লোকে দেখে তাঁর এক হাতে আগুন আরেক হাতে পানি নিয়ে বেজান দৌড়ে যাচ্ছেন। এই আগুন আর জল দিয়ে রাবেয়া কী করবেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- পানি ঢেলে দোযখের আগুন নিভাবেন, আর আগুন দিয়ে বেহেস্ত জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবেন।

তাঁর জগদ্বিখ্যাত কবিতাটিও তিনি তখনই লেখেন : জান্নাত মিসমার করে দেয়া হোক, যেন মনে না হয় আমি বেহেশতের লোভে তোমার পায়রোবি করি; জাহান্নাম তুলে দাও যাতে তুমি না ভাবো- দোযখের ভয়ে আমি তোমার ভজনা ইন্তেজামে নামি!

ওইসময়ে সুদূর মদিনা থেকে সৈনিক বেশে আসা হাসান ইয়াসার বসরীও পরম ও রাবেয়ার বাঁকা দুই চোখের নেশায় বসরা নগরীতে আটকা পড়েন। একদিন তারা দুজনে পলাপলি খেলায় মাতে। প্রথম পালা আসে হাসানের- তিনি নানা জায়গা ঘুরেটুরে অতিদূর এক কোণায় লুকান। কিন্তু রাবেয়া বসরীর হাসান বসরীকে খুঁজে পেতে তেমন সময় লাগেনি- সাত আসমানের ভাঁজের আড়াল থেকে রাবেয়া তাঁকে একলহমায় বের করে আনেন।

এবার আসে রাবেয়া বসরীর পালা- চকিতে রাবেয়া লুকান। হাসান বসরী তক্কেতক্কে নানা জায়গায় তালাশ করেন, ডানে-বাঁয়ে, উত্তরে- দক্ষিণে,পুবে-পশ্চিমে, আকাশে- পাতালে, স্বর্গে-মর্ত্যে- হেথায় খোঁজে, হোথায় খোঁজে তামাম বিশ্বজুড়ে; কিন্তু কোথাও রাবেয়া বসরী নেই।

হাসান বসরী হার মেনে চোখ বন্ধ করলে রাবেয়া পলকে বেরিয়ে এসে বলে এতো দূরে দূরে কেন খোঁজো- আমি একদম কাছে, তোমার বুকের ভিতর গায়েব হয়ে ছিলাম- তোমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলাম- দেখতে আমায় পাওনি!




৪.

∆ নির্বিকার বিন্দুটি ∆


কৃষ্ণ মাত্র ১৬বছর বয়সে বাঁশি বাজানো ছেড়ে দেন।  তিনি যখনই বোঝেন রাধার মন তমাল গাছের একটি পাতা বুঝি কেঁপে উঠেছে, তখনই বাঁশিটি রাধার হাতে তুলে দিয়ে একটি দূরত্বের রঙে লুকিয়ে যান। এভাবেই লীলাবান কৃষ্ণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণে রূপান্তর লাভ করেন।

আবদুল হাই বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে জলের ঢেউয়ে মিশে মৃগেল মাছের চোখের মণিতে সিদ্ধ হন; মৃত্যুকে পরিধান করে আবদুল হাই মেঘের ধামে বিদ্যুতের পদ্মহেমে লোকান্তরে মেশেন। রঙমালা বেগম প্রতিদিন গণক ডেকে দিশা গুণিয়ে দেখেন- কবে আহা, তার সাধু হাই বাড়ি ফিরবেন! চুলার আগুন একাএকা তরকারি পুড়ে ফেলে, কিন্তু তার আঁচ তাকে ঘুনাক্ষরে স্পর্শও করে না। এভাবে রঙমালা একটি স্থিরবিন্দু, নির্বিকার ঈশ্বর হয়ে ওঠেন।

সন্ধ্যা গড়িয়ে ঢালুতে নামতেই প্রতিদিন নিরুপমা পিসিমার জ্যোৎস্নার ডালি সাজাতে ইচ্ছা করে। দুধেদুধে অন্ধ দুনিয়া দেখতে নিরুপমা পিসিমা ঝামায় কাসার থালাটি ঘষেন- ফলে থালা ঝকমক করে ওঠে। কাহার তরে জানি মায়াপাত্রে জ্যোৎস্না তুলতে দরজার দিকে যান। পিসিমা ভুলে যান, কবেই ওই দরজা আদিঅন্ত কালের জন্য বন্ধ হয়ে গ্যাছে!

পিসিমা নির্বিকার। নিরুপমা পিসিমা এভাবেই ভগবান হয়ে ওঠেন।




৫.

∆ কৃত্য ∆


লেখা একটি রিচ্যুয়ালিস্টিক ব্রত- নয়া ফসল ওঠার আগে ও পরে কলাপাতায় বিলের ঋষী জলের উপর ভোগ ভাসিয়ে দেয়া।

চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ালে সঙ্গেসঙ্গে বিষক্রিয়া হয় না; অনিবার্য মৃত্যু জমা থাকে দেহের সিন্দুকে, হৃদপিণ্ডের স্পন্দনে।

ভরা পূর্ণিমা রাতে চন্দ্রালোকের সাথে বুঝি চন্দ্রবোড়ার বাসর- অমৃতবধির তুমুল জ্যোৎস্না জোয়ারের সাথে বিষক্রিয়া শুরু হয়- তার কল্যাণে মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, যেমত চান্নিতিথি ভরে জন্ম লয় গৌতম বুদ্ধ, শত ভিক্ষু আর ডুমুরফলের দল; লেখাও এমন, একটি আর্তস্বর পেইন্টিং, এমনই রিচ্যুয়াল।

আশুরার সময় তাজিয়া বের করার চরিতে কবিতার ওঙ্কার- কবি হায় হাসান, হায় হোসেন বলে পিঠে শিকল মারেন- এটিই তার কবিতা।

কে আসে, কে-বা যায়, তাতে কিছু যায় আসে না- পিঠে রক্তাভা- খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম দাঁড়িয়ে থাকে এক অনাগত জন্মমৃত্যুর দাগ- মকবুল ফিদা হোসেনের তাজিয়ার ঘোড়া।




অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০



Friday 2 April 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৪

রিম্পা নাথ এর কবিতা-




১.
∆ নিরুত্তাপ চুমু ∆



মনের ভিতর আরো একটা মন
অবসাদের চাঁদ নিয়ে ওলোটপালট খায়

কবিতার ভিতর আরো একটা কবিতা জামা বদলায়
শব্দহীন জ্যোৎস্নায় নিরুত্তাপ চুমু খেতে খেতে

চোখ ভাঁজ হয়
আন্দোলন প্রিয় অনুভূতিরা
চশমাসুদ্ধ ভেঙে পড়ে বক্র বিছানায়

যেন শত শত গাছেদের কাঁধে বসে
পাখিরা সিগারেট ধরায় কাতিল হয়ে
গুঁড়িয়ে যায় কতো প্লাস্টিকের স্বপ্ন

আরো আলোকতত্ত্ব ভেবে মরে ঘটনাতীত গ্ৰহরা...

                                                  



২.
∆ মেগাস্থিনিস চোখ ∆



ঈশ্বরের বুকে মুখ ঘষলেই
মাঝরাত হেসে ওঠে উষ্ণতার পাশে

ফুঁ দিয়ে ধীরে ধীরে উলঙ্গ হও
পবিত্র গাছেদের বেডরুমে

বুকে থুথু দাও

দেখো , সুখ বেড়ে যায় হাততালিতে

ফিরে আসে হাজার বছরের জমানো বরফ
ভুল করে এক যুগ ব্যথা দিয়ে

মেগাস্থিনিস চোখ কুঁজো হয়ে আপেল খোঁজে
সদ্যপোয়াতি সাজবে বলে...

                                         



৩.

∆ চুন সুড়কির পৃথিবীতে ∆



এই চুন-সুড়কির পৃথিবীতে, জানালায় ঘুণ ধরলে
কাত হয়ে আসে অব্যক্ত চাঁদের মাথা।ফিকে হয় চেনাশোনা গাছেদের বাথরুম,ঠাকুরঘর।ঠাকুরের গলার মালা ছিঁড়ে মাটি গলে যায় মানুষের মতো।কাঠ শোকায়। পিঠখোলা তাল আঁটি। সেদিন তোমার মা হয়ে ওঠার কারণে কচুপাতায় জল সরে যায়, আমি ঘড়ি ভেঙে তোমায় মুখ বন্ধি করি নদীর তলায় ...

                                            



৪.
∆ ১১ তারিখ ∆



থুতনিতে ব্রোনরা লাল ফ্রক পরেছে আজ
পণ করেছে যেন হারমোনিয়াম বাজাবে সারা মুখে

বেরিয়ে আসবে গোপনীয়তার চূড়ান্ত শ্লেষ

নীল হয় ক্যালেন্ডার
নীল হয় মুখের কার্নিশে ঝুলন্ত প্রেম

মনে হচ্ছে মৃত হব
আগামীকাল, ১১ তারিখ

ঝড় উঠবে উপত্যকায়
খসে পড়বে চার দেওয়ালের পাঁচটা কান

ধীরে ধীরে কাঁটা দিয়ে মৃত্যু তুলব আমি...

                                    



৫.
∆ নীরবতার গন্ধ ∆



দেশটা একটা কবিতার ঘর
চাষ করে শব্দরা
বর্ণরা খুঁটে খায় চাল

চোখ বুজে ছুঁতে চেয়েছি তোমায়
ভেঙে ভেঙে গেছে তোমার মুখ

তিন তিনটে অলিন্দ নিয়ে
মাঝরাতে ভাত খাই হরিণের মতো

জল সরে সরে যায় আলেয়া দেখে

নিয়তির ঘাস থেকে ছিটকে আসছে সবুজ

ইঞ্চিখানেক দূরে তার নিরবতার গন্ধ...






অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
                                             

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৪

শিহাব উদ্দীন রাশেদ এর কবিতা-



১.

∆ বুলেটের নিচে দাঁড়ায় ∆



ইচ্ছে ক'রে তাজা একটি বুলেটের নিচে দাঁড়ায়
ছায়াহীন নীলিমার অবগাহনে
ঐশ্বরিক স্থূলতা নিয়ে ছুড়ে ফেলি
তন্দ্রাচ্ছন্ন বিকারগস্ত বালিশ থেকে
কষ্টের নক্ষত্রচারী অচেনা অজানা বোধ। হ, শব্দ-ধ্বনি
ধুয়ে-মুছে শিগগিরই প্রশান্তিকে বেপরোয়া ছুড়ে দেই-
রেলগাড়ীর ঝকঝক দ্রুততার ভেতর...
অতঃপর নীলিমার সাহসী পল্লবগুচ্ছ, কন্ঠনালির আত্মতৃপ্তি
যতটা সম্ভব শ্বেতশুভ্র চাদর বিছিয়ে
নিভৃতচারী সিঁড়ির মতো
শুয়ে থাকি আজীবন...



২.

∆ কিরিচে শান দাও ∆


কিরিচে শান দাও সখী, কিরিচে শান দাও
অবগাহনে ঈষদুষ্ণ আঁধার ঘিরে ফেলে যদি
সখী, সহসা কিরিচে -তীক্ষ্ণ স্পর্ধাও দাও
অনিদ্র চোখ জোছনার প্লাবনে নিভে যায় যদি
গোলকধাঁধায় সখী, ছলাকলা শিখে নাও
শিখে নাও, শিখে নাও নখদর্পণেও ভুল হয় যদি



৩.

 ∆ চালিয়ো না মৃত্যুর খঞ্জর ∆


১.
আমার স্বপ্ন অবলীলাক্রমে ছুঁয়ে যাবে
ওগো সাহসিনী তোমায়
আমার সাম্যের দাওয়াত নির্দ্বিধায় পাবে
যদি ভালো বেসো আমায়

২.
ভালো বেসো, ভেদাভেদ খুঁজিয়ো না প্রিয়
যতটুকু অনুরাগ
সবটুকু জমাথাক
ক্ষোভ আর বিরাগ
ভুলে যাও হতবাক
দরদ মেখে ভালো বেসো, বেসো-না প্রিয়

৩.
অঘোর ঘুমে উষ্ণতা দিয়ো
যেটুকু লাগে
হ! গোলকধাঁধায় বেঁধে নিয়ো
নেহাৎ আগে

৪.
উড়ে যাবে হাসি, চালিয়ো না মৃত্যুর খঞ্জর
পার যদি ভালো বেসো
ভুলে রবে কতকাল?
পার যদি সদা হেসো
ছিড়ে ফেলে মায়াজাল
মরে যাই যদি, সাজায়-রে মৃত্যুর পিঞ্জর






অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৪

শান্তম এর কবিতা-



১.
∆ নৌকোযাত্রা ∆


নৌকো থেকে দূরে দূরে

সরে যায় ঘাট, ঘরবাড়ি

 

তারপর দেখি মাঝি নেই


নৌকো নেই, জল নেই

ঘিরে আছে প্রিয় মুখগুলি 



২.

∆ একক সংগীত ∆



এক ভীষণ একলা এসে আমাকে 

বাঁচিয়ে দেয় দুঃখ থেকে, সুখ থেকে 


হঠাৎ যখন সে চলে যায় 


তার পিছনে পিছনে এলে

এই শান্ত একটি পথের ওপরে

সত্যি, আর কেউ নেই

 

শুধু আলো ও বাতাস খেলা করে 



৩.

∆ নিঃশব্দ ∆

 


গাছের থেকে জেনেছি 

মানুষের কোনও ভাষা নেই 


তাই দুঃখগুলি  ; আনন্দগুলি 

শব্দে জড়িয়ে জড়িয়ে


কেবলই ফুল হতে চায় 



৪.

∆ ফেরা ∆



ভয় হয় এভাবে যেতে যেতে

যদি ফুরিয়ে আসে পথ


তাহলে ফেরা হবে না আর 


একটি বিন্দু দাও । এঁকে দাও

তাকে কেন্দ্র করে একটি কক্ষপথ


না হয় থাকুক একটু অপেক্ষা  



৫.

∆ মানবজমিন ∆



ছেঁড়া ছেঁড়া পাতা তোর


ছায়ার পরিধি ফুঁড়ে 

ঢুকে পড়ে রোদ ; শিকারির নখ 


ছায়া ছাড়া সব যেন ছন্নছাড়া 

 

ছায়া পেতে আলো এনে 

হাওয়া এনে রাতভর


জমিনে ছড়িয়ে যাই জল





ছবি- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৪

সুকান্ত দেবনাথ এর কবিতা-




∆ সূর্যাস্তের সাথে ∆


১. 

একটা সূর্যাস্ত ছিনিয়ে এনেছি তোমার জন্য, প্রহেলিকাময় যে ছায়া দীর্ঘ হতে হতে নিজেকে ন্যাংটো করে গেছে, তার কাছ থেকে একটা মিথ্যে চাঁদ উপরে ফেলে, আদেখলা আর অপ্রেমের চাদরে পেচ্ছাপ করে, বিষাদের গ্যাস অভেনে, হারানো ছবির সমান্তরাল হারানো ছবির বসিয়ে, ভেবেছি --- 

 

এই

শেষ সূর্যাস্ত আর তুমি 

একটা জানালার সার্শী 

একটা বিচ্ছিন্ন রেল কোয়াটার          

প্রতি কণা পরমায়ু  সাথে করে 

স্থিতিশীল

কিছু কি বিলবে বলে ডেকে ছিলে     

 

 

২.

 স্বাধীন তুমি এস নাগপাশে জড়ানো বুকের মাঝে, শরীরের দশম ছিদ্র পড়ে আছে, তার আত্ম সম্মান রক্ষা করে আছে মেঘ, তাকে দুহাতে সরিয়ে দেখ, কোনও ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় কিনা, বা কোনও সংকেত, কতদূর গেলে পাওয়া যাবে কি, কোন রাস্তার কোথায় মোচড়        

 

আমিও দেখেছি সেই সব মাইলফলক স্পর্শ করে 

একটা দীর্ঘ পথ হেঁটে চলে গেছে   

পিছনে পড়ে থেকেছে আগুন

আমার জন্ম শহর যাকে আমি মৃতের স্তূপ নামেই ডেকেছি    

পুড়ে যাওয়া মাঠ 

ভাঙা পোড়ো স্কুল 

আর 

আর সেই লেডি বার্ড সাইকেল খানি   

 

 

৩.

আগুনের বীজে নির্বাপিত রহস্য এই পরাক্রান্ত মথভেবেছে দিনভর তার পাখা কিভাবে তাকে না জানিয়ে একটি ফুল খুঁজে পেয়েছে সে ভগ্নপ্রায় শহরে, একটা দেয়ালে, একটা ফাটলে, কিছুটা বিশ্বাসে অনেকটা অবিশ্বাসে, কেঁপে কেঁপে উঠছে মূর্তিমান রাত, ছোঁয়া যাবে তাকে, বুকে জড়িয়ে আদর দেওয়া যাবে, এমনকি সে তুলে রাখা যাবে ভোরের প্রতীক্ষায়, অথচ আমি তো সূর্যাস্ত চেয়েছিলাম        

 

বা হয়তো একটি তুলসী তলার সাক্ষর

আশ্রিত যেখানে আলোর পরিহার ছিল

এক মুহূর্ত শান্তির জন্য  

 

এই আমি শেষমেশ এসেছি নিজেরই হৃৎপিণ্ড দুহাতে করে

আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নদী

কোথায় তুমি সমুদ্র

বেলা যে মেঘে মেঘে ঘুম নিয়ে আসছে

 

 

৪.

তারপর থার্ড বেল, রঙ্গমঞ্চে বিতর্কিত নায়ক হারিয়ে এসেছে মাটি, তার কৃষ্ণ নাম অনুচ্চারিত প্রেমের সাথে মিলে গেছে, সব বিমূর্ত এখানে, এমনকি দুর্যোধনের স্বীকারোক্তি, আমি জানি অধর্ম তবুও আমি করবো, আমিও দেখবো কোথায় যায় সে সূর্য অস্ত গেলে, ঘর আর আঙনের মাঝে যে বারান্দা স্থির তার রং, তার গায়ে এসে পড়া সূর্যাস্তের রং, কিভাবে রাতুল হয়ে যায়, ঝুলে থাকে একটা ঝুলন্ত পা, ভ্রমের সাক্ষী হিসাবে

 

 

৫.

 এই শেষ ফিরে যাচ্ছি

আকাশের ঠিকানা রেখে আমার টেবিল ক্লথের নিচে

পরিত্যক্ত পাঁজরের চিহ্ন রেখে

যে খাতা অসূর্যস্পশ্যা তার প্রকৃত যোনির মাঝে চুমু রেখে

ফিরে যাচ্ছি ফিরেই তো যাচ্ছি

কিছু কি দিতে চাও কোনও মেসেজ, না পাওয়া চিঠির সিনট্যাক্স

আমি রেখেছি সাজিয়ে সব অংশীদারের দেনা পাওনা

ঘর বাড়ি মাটি, দেহ প্রেম মাটি, জীবন জীবন মাটি

পোড়া বাঁশ, চ্যালা কাঠ, উড়ু উড়ু আত্মার শেষ নিঃশ্বাস

একটা আলো একটা পড়ন্ত বেলার আলো

দেখি তাকাও শেষবার





ছবি- মেহবুব গায়েন


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৪

কাকলি মান্না’র কবিতা-





১.
∆ ক্ষত চিহ্নের পাশে ∆



এক আঘাত চিহ্ন ক্ষত হতে হতে পেরিয়ে যায় সুদীর্ঘ টানেল
গুহা চিত্র জুড়ে নিশাঘোর
পরিপাটি সংসার ছেড়ে যাবার আগে ও
ঠিক করছ আরামের কুশন,  বেসিনের পাশে রাখা টাওয়াল,  নিশ্চিত ঘুমের বড়ি
একবার  চোখ পরে আরশিতে
মায়াবী শরীরে ঢেউ তুলে দেখে নিচ্ছ সময়
দেখে নিচ্ছ  জমা অভিমান.

প্রবল ঝড়ে উড়ে যায় নিরুদ্দেশের  চিরকুট
হেঁটে যায় শরীরের ভেতর  শরীর
তড়িৎ গতিতে ভিজছে অনুষঙ্গ

জমা জলে নৌকা দিকভ্রান্ত
ক্ষত মুছতে আঘাত হানছে অবিরত




২.
∆ যতি চিহ্নের দিকে ∆



নিস্তব্ধতায় বারে বারে বেজে ওঠে বিচ্ছেদের  ঘুঙুর
চাঁদ জ্বেলেছে জ্যোৎস্না কুমারী মেয়ের লাজে
নিভে যাওয়া  বিকেলে অপেক্ষার  রিং টোন হয়ে
নাড়িয়ে  দেয় গোপন রোমকুপ
দু এক স্তবক কবিতা চাঁদ নদীর আলেখ্য
প্রতি রাতে  খুন করেছি মায়াবী আদর
তবুও এখোনো কেন ব্যক্তিগত সাইন বোর্ডে ফুটে  ওঠে  চেনা ডাকনাম

শুশ্রূষার টানেল পেরিয়ে যায় সব সন্ন্যাস যাপন
যতি চিহ্নের দিকে...




৩.
∆ নির্ভার ∆



বসন্ত এসেছে বলেই স্বপ্নে ঘুম নেই
পথের পাশে পলাশ দাঁড়িয়ে চেনা  মুদ্রায়
শহর আরো একবার সরল চোখ খুলেছে  সন্ত্রাস  ভুলে
সরোবরের গভীর ছুঁয়ে  তির তির করে কেঁপে ওঠে অদেখা
এইতো গত বসন্তে ফেলে যাওয়া মন খারাপের বাঁশি

শুনছ!  বাজাও না একবার
কতদিন...
বুজিনি চোখ স্বপ্নে




৪.
∆ ভ্রাম্যমান ∆



অনুমান এক আত্ম নির্ভর উপলব্ধি

নতুন বছরের শুভেচ্ছা য় টুকরো টুকরো আমি ,  আমার বোধ আর বোধের গভীরে  হিসাবের খাতা
যা পূর্ব  পরিকল্পিত কারসাজি সংখ্যার নির্মাণ তা কখোনো নতুন হতে পারে না
আদপে নতুন বলে কিছু হয় না
এসবের ভেতর লুকিয়ে থাকে  নিত্য নৈমিত্তিক  যাপন
তুমি আজ প্রথম যেখানে গেলে  সেখানে
সহস্র পায়ের ছাপ

অথচ নতুন এমন এক শব্দ যা কখোনো পুরানো  হয় না




৫.
∆ কোলাহল ∆



ফুরিয়ে গেছে বললেই কোলাহল ডুবে যায়  নির্জনতার চাদরে
মূক শব্দের গভীর ছুঁয়ে সম্ভাব্য অনুমান
কোন প্রতীকী ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না
হারানো সময়ের  রসায়ন অন্তর্লীন
বার বার তুমি নক্ষত্র দূরত্বে

আবছা হচ্ছে কুয়াশা ভোর
পাখির ঠোঁট আর হারানো শস্য দানা
শিখে নেয় কৌশল

কী  আশ্চর্য সব সকাল রোদ্দুর হতে চায়




অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০