Sunday 21 February 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-১

কবি অরূপ সেনগুপ্ত’র কবিতা-




১.

∆ প্রকৃতির আকর্ষণে ∆


তোমার চেয়ে তোমার আশেপাশের  প্রকৃতিই আমাকে বেশী  টানে,
বেশি আকর্ষণ করে;
তোমার পেছনে ঐ যে ভাসমান বৃন্দাবনের তুলসীবন,
ডুবন্ত মথুরার আকাশে রুপোলি একফালি চাঁদ, তারা....

তোমার ডানদিকে শান্তিকুঞ্জের বনবীথিকায় শায়িত
সদ্য ঘুমভাঙা এক সিংহিনী,
আর বাদিকে- অদূরেই একটি মায়াবী শীতার্ত  হরিণ-
মুগ্ধ নয়নে  চেয়ে আছে স্বর্গের সিড়ির দিকে...

তোমার আশেপাশের প্রকৃতি কি জানে?
অদূর ভবিষ্যতে
স্বর্গ থেকে ঝরে পরা স্ফুলিঙ্গ,
 ভাষাজ্ঞাণ ছাড়াই পরিণত হবে উল্কাপাতে?



২.

∆ অবসর ∆


রঙিন উল্কা এসে পরে পুকুরের জলে,
মাছরাঙা ধরে মাছ ছিপের বদলে;

নির্জন পুকুর পাড়, নিস্তরঙ্গ স্তব্ধতা,
শূণ্যতার ক্ষত নিরাময়ে নীরব শূণ্যতা;

বেলা বয়ে যায় আজ ছাতিমতলায়,
মাছরাঙা রামধনুর আগুন ঝরায়;

কোকিলের কোলাহল কাকের বাসায়,
নীড় ছেড়ে তীর খোঁজে অবসর সময়।।



৩.

∆ তুমি কি ডাকলে? - শৈশব ∆



আবার যদি ফিরে যেতে চাই সেই সীমাহীন আশৈশবে!
তুমি কি আমায় একটুকরো জায়গা ছেড়ে দেবে? 
এতগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে ওপরে উঠে আমি আবার মাটি ছুঁতে চাই,
উঁচু, আরো উঁচু, অসীম অনন্ত, না ফুরোনো চাহিদা - এ পথের শেষ নাই।

আবার ফিরে যেতে চাই তোমার কাছে, তোমার উষ্ণ ক্রোড়ে,
একটুকরো ছোটো বাগান,  দুটি খরগোশ, ভাঙা দোলনার বৈভব;
তিনটে শালিক, ডুমুর গাছের কন্দরে,
তুমি কি ডাকলে? আমার একান্ত শৈশব।।



৪.

∆ কুয়াশা ∆


তীক্ষ্ম থেকে তীক্ষ্মতর ছুঁচমুখ চুম্বক দেখে করে মাথা নত,
অনর্গল ছুটে আসে প্রলাপ, অকথ্য অবিরত;
বায়ুর বেগে চূর্ণ হয়ে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী মেঘ জমে বুকে,
গাঢ় কলো দীর্ঘশ্বাস স্তরে স্তরে সাজানো অজানা অসুখে;
একদিন হঠাৎ অঝোর বৃষ্টি ঝড়ে মণিকাঞ্চনতলায়,
মৃত্তিকাকে চিত্রিত করে ঘনঘোর রাত্রিতে-অবেলায়;
ছুঁচমুখ দিখন্ডিত হয়, বিপন্ন হয় তীক্ষ্মতা,
বিনিদ্র রাত্রির  চাঁপা জড়তা, ব্যর্থতা।

 বাসি হয় ফুল, ভেঙে যায় ভুল,
ভাঙে বালিয়াড়ি, ভাঙে ঢেউয়ের সারি,
ভেঙে যায় প্রবালপ্রাচীর,
ভাঙা হৃদয়ে আয়াসবিহীনভাবে
জ্বলে শূন্যতা স্থবির।

দেহের রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ যায় নিরুদ্দেশে,
 বাতাস আবদ্ধ হয় নদীবক্ষে অবশেষে;
জলীয় গান বাস্পীভূত হয়ে জন্ম নেয় কুয়াশার,
দীর্ঘস্থায়ী পরিত্যক্ত শ্বাসরোধী রূপকথার! 
বেদনার দানা নিয়ে অনুচ্চ স্বরে গান বাধে শুভ্র-স্নিগ্ধ জোৎস্না;
ধূসর অব্যক্ত কুয়াশা..... 



৫.


∆ অন্য অন্ধকার ∆

অন্ধকার শেষে আরেক অন্ধকার,
মাঝে বড় খাঁই, এক ফাঁক আড়াল; 
জ্বলছে অক্ষর অগণন, জ্বলছে খিদের মশাল,
মুছে যায় ছায়া, ভঙ্গুর দীর্ঘশ্বাস করুণার।

ঝড়া পাতায় অরণ্যের মর্মর ধ্বনি,
আকাশে ওড়ে শেণ্য শকুন;
হঠাৎ  ছুটে আসে রুপসী কালবৈশাখী,
হয় উদর জ্বালা দ্বিগুণ।

দূরের নির্জন দিকচক্রবাল,
ফুটিফাটা ক্ষেত, দুটি ক্লান্ত খালি পা;
দুটো অলস বলদ, শাণিত লাঙল, 
গায়ে মৃত পশুর বিষম দমকা।

বাতাসে ভাসে নিঃশ্বাসের নিঃশব্দ আকুলতা,
আদিম উদর জ্বালা মেটায় খুঁটে খুঁটে;
শব্দ পোড়ে, অন্ধকার ভাঙে, দুর্গন্ধের কুম্ভীপাকে,
অন্ধকার- এ এক অন্য অন্ধকার - নৈসর্গিক বিচিত্রতা।।






ক্যামেরা- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০


কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-১

কবি নিমাই চন্দ্র জানা’র কবিতা-





১.

∆ কলঙ্ক পাথর ∆


অঞ্জনদার সাথে সক্রেটিস হয়ে গেলাম
ব্যাবিলন সভ্যতার নিচে যে করোটি গুলো এখন  ঘুমিয়ে থাকে তাদের নাকি শরীরের রক্তে হিমযুগের জোনাকি সহবাস ঘটিয়ে ফেলেছিল পুরাতত্ত্ব কালেই
আমি এগুলোকে ঔরস ভ্রম বলি না
এগুলোকে একটা পূর্ণচ্ছেদের অভিলম্বের দিকে কাত করে শুইয়ে রাখি স্থলপদ্ম নেশায়
আমার শরীর থেকে গুঁড়ো গুঁড়ো কলঙ্কের পাথর ঝরে পড়ছে বৃষ্টি দিনে
তাই ,আমার ঠোঁটে বিটুমিনাসের লিপস্টিক চওড়া পাথর হয়ে আছে



২.

∆ বাবা ∆



পায়ের গোড়ালি থেকে পাথরকুচির চারাগাছ বেড়ে উঠছে তিন পুরুষ কঙ্কালের
প্রাণিবিদ্যার ভেতর যত রকমের বীজের অঙ্কুর থাকে
তার দিকে পাশ ফিরে ঘুমোলে অন্ধকারের স্বপ্ন দেখতে থাকি রাত আড়াইটের পর
পাতার নিচে এত ঘন অন্ধকার কখনোই সহ্য হয়নি
যে রাত্রে ঈশ্বর ছুঁয়ে যায় সেই রাত্রিতে গ্রহণের দোষ ছিল মায়ের তলপেটে
মহা ঈশ্বর নক্ষত্রের নাভিমূল থেকে নরম ঘাসের মত বেরিয়ে পড়ছে আদিম সঙ্গম ঘোরে
জমজ ঈশ্বর , পুরুষের পাতায় নীল হয়ে ফুটে উঠছে জবা ফুল


৩.

∆ বিছানা ∆


আমার বিছানা একটি গভীর সংক্রমণের চাদর
হলুদ রঙের বুদ্ধ শরীরের কিছু অসুখ সারিয়ে তোলে মহৌষধি বিশল্যকরণী
লুকিয়ে আছে নিভৃত সরীসৃপ লতানো চারা গাছ 
কালো কালো বিষধর সাপেরা উল্টো মুখে চাঁদের কথা বলে
চাঁদ থেকে নাকি এইমাত্র আমার মধ্যে অমৃত পাত্র রেখে গেছে শুক্র গ্রহের কোন মাটির পাত্র মৃত্যুর কাছে এসে মানুষ কেমন গুটিয়ে যায় ব্যঞ্জনবর্ণের মতো
চাদরটি নিরাকার হলে জোনাকি কর্ণিকায় জন্ম দেয় আরেকটা গভীর মৃত্যুপ্রহরের



৪.

∆ জীবাশ্ম ∆

মৃত্যুর পর আত্মীয়রা ঘুমিয়ে পড়ে আবার পাতার তলে যে সম্পর্ক থাকে সে জলের মতো দৃষ্টিভ্রমে পায়ের আঙ্গুলের কাছে শুকনো পাতা আত্মহত্যা করে নিজের বুকের কাছে এসে ত্রিকোণমিতির সবকটি গণিত সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে পাথর ছুঁয়ে গেছে মহাকালের
জাতিস্মর পদ্মাসনে বসে আঙ্গুর পাতার মতো বেয়ে গেছে আজন্মকাল
সব মেঘেরাই উড়ে চলে পরিযায়ী সাপের মত তাদের শরীর ক্রমশ রঙিন হয়ে যাচ্ছে বিষধর চুম্বনে



৫.

∆ সায়ানাইড ∆


আমার জামার ছয়টি পকেটে সায়ানাইড ভরে নিয়েছি
বিষের তীব্রতায় আমার ঠোঁট থেকে হলদে রঙের জোনাকি সঙ্গম ফেলে মিলিয়ে গেল মহাকাশে আমি এখন হাতের আঙুলে তীব্র অবৈধ চাইছি চাঁদের নিম্নাঙ্গে যে রক্ত লেগে আছে
আমার বুক পকেটে সেগুলোকে ভরে নিতে চাইছি ভর সন্ধ্যেবেলায়
আমার বিছানার তলায় কোন অবৈধ দাগ রাখতে চাই নি
সায়ানাইড আমাকে কোনদিন ঈশ্বর দেখায়নি ঈশ্বরের জন্য একটি ফাঁকা মাঠ,আর একটি বাঁশির দরকার 



অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০



কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-১

কবি ফিরোজ শাহ এর কবিতা-






১.

∆ মুখ ∆



আয়না জল হয়ে যাচ্ছে

চোখের ভেতর থেকে উড়ে আসা বালিহাঁস 
সাঁতার কাটছে
রেখে যাচ্ছে পালক

বহুদূরে জলে মুখ দেখছে একটি মশলাগাছ। 





২.

∆ গামছা ∆



চৈত্র
একটি লাল গামছা
জমা হয় রোদের স্তূপ

বরফমেয়ে
শীত সিজনে গামছাটি 

লাল পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে হিমালয়ের দিকে। 




৩.

∆ ছাতা ∆



সূর্যের মুখ বরাবর 
একটি ফুটন্ত  ফুল 
ছাতা হয়ে 

ঢেকে দিচ্ছে রাতের ছায়া। 




৪.

∆ স্নানঘর ∆



গোলাপগাছে
ফুল ফোটার আগে চলে আসে মৌমাছি

বিকেলের হলুদ ভেঙে সায়ার ভেতরে নেমে আসে ক্ষুধার্ত সন্ধ্যা
খেয়ে ফেলে গাছগাছালি

ঝিঁঝিপোকার ডাকে
তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে গোলাপগাছ চলে যায় স্নানঘরে।




৫.

∆ বৃষ্টি ∆



মেঘের ভেতরে

একটা সাদা হাতি  উড়ছে
ধূলিঝড়ে বনে নেমে

বৃক্ষের নির্মিত সবুজ রাত্রি 
মটমট করে ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে লোকালয়ে
বিধস্ত বাড়িঘরে 

মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে হাতির সাদা দাঁত।




ক্যামেরা- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-১

কবি নীপবীথি ভৌমিক এর কবিতা-





১.

∆ রাগ - পরজ ∆
   

 এই যে এতো বাতাস, আকাশ জুড়ে ‌আগুনের উৎসব
   খুন মাটি গান...

      পাতা চিনে নেয় আমাদের এভাবে। কথারা মৃত্যু হয়ে নামে যখন নীলাভ দীঘির জলে

  পরিত্রাণ হয়ে আসে,  সুর  বুকে রেখে
   গাছের সাধিকা

    ‌আমাকে উৎসব এনে দাও আবার। শয্যায় 
  শর সাজিয়ে।
   এ বসন্ত মিথ্যে নয় কখনো, 
      শুধু  বেঁচে থাকার অধিকার ছাড়া।



২.

∆ বসন্ত ∆
 

বসন্ত আসলে রং বদলে যায় ঘরের। চুন প্যালেস্তারা ছেড়া জামা পরা দেওয়ালরা জেনে যায় মাটি আর আকাশের তফাৎ।

  ‌ক্ষীণ হয়ে আসে ক্রমশঃ 
     সন্ধ্যা দীপের ‌আলাপ
খোলা ছাদ জানে জীবন মানেই
   খইফুল আর চন্দনের গান

     বসন্ত আসলে
       আমাকে আমার চাইতে চোখে হারায় না কেউ।



৩.

∆ চোখ ∆


আশ্চর্য ‌নদী বয়ে যায় প্রতিদিন 
   জীবন প্রহরে
 যতটা খরোস্রোতা ভেবেছিলাম তাকে, সময়ের শান‌ দেওয়া  ঘড়ির ঘায়ে ভোঁতা হয়ে যায় আজ,

    আকাশের গায়ে মেঘেদের ঘরবাড়ির গল্প - কথা লেখা হলে কি নিজেকে চেনা যায় আর ?
   অবিশ্বাসী প্রশ্নগুলো‌ উত্তর হাতড়ে মরে তাই

  এ জীবন ভাঙা পতঙ্গের ন্যায়।  প্রাণ বাঁচে শুধু
  ধিকিধিকি আগুনের নিয়মে।

  ‌চোখ ফেরালেই সমস্ত সকালকে রাতের খাতাতেই
    পড়ে নেওয়া যায় অন্ধ বিশ্বাসে।



৪.

∆ খেরোর খাতা ∆
  

   সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।‌ আকাশ চাদরের গায়ে তারারা জেগে উঠে সদ্য ঘুমের অভিনয় ভেঙে

   আমরা খুলে বসি হিসেব নিকেশ। 
    খুলে বসি খেরোর খাতা।  

    ‌এক ঘুম থেকে আর এক ঘুমে পাড়ি দিতে
  গেলে কত যে রাস্তা পড়ে দিন‌ আর রাতের গল্পে,
  তাকে জানতে জানতে জীবনই প্রবঞ্চক হয়ে যায়
      খইফুল আর সাদা ছাইয়ের মধ্য‌বর্তী সঙ্গীতে

   আমরা পথ হাঁটি। হেঁটেই যাই।
  ‌ খেরোর খাতা তো আসলে মিথ্যে প্রবঞ্চনা।




৫.

∆ রেস ∆
 

    রেস মানেই কালো ঘোড়া নয় জেনো
  হরিণও তো হতে পারে ,
  আমার এই দৃষ্টি ছুঁয়ে যে সবুজ ঘাস ছুটে যায় পায়ে পায়ে রক্ত - ঘাম- বমি গন্ধ নিয়ে
  তার গলায় একটা শিকল বাঁধা থাকে দেখ,
  যার শবদেহ শুষ্ক হরিণরূপী ।

   ‌রেস মানে মায়াবী হরিণও নয়...
    রেস কালো‌ হরিণ‌। কোনো হাত ছুঁয়ে নয়,
 নয় কোনো তেল মাখানোর অভিলাষ।




অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-১

কবি জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ এর কবিতা-




১.

   ∆ জন্মপিপাসা ∆



আমাকে ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিবিস্ময় 
দু’চোখে অনন্ত তৃষ্ণার আলপনা
আমি দেখতে পাচ্ছি, এক হাতে জোনাকি আর
অন্য হাতে নক্ষত্র-লণ্ঠন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাত্রি-রানার
এক ছায়াপথ থেকে অন্য ছায়াপথে 
লাফিয়ে নামছে শিকারী কালোবেড়াল
আমার সামনে করুণ চোখে দাঁড়িয়ে আছে 
ব্রহ্মাণ্ডের ঝুলি ও আলোর আলখাল্লা

চারপাশে এত জন্মপিপাসা 
রজঃস্বলা পৃথিবীর কাছে জানু পেতে বসে আছে




২.

 ∆ আমি আছি বলে ∆


আমি আছি বলেই প্রকৃতিতে রহস্য আছে
ভূবনময় আলো আছে
পিতামহ গাছ আছে 
পারিজাত ফুল আছে 
বেহেস্তি ফল আছে
নীলকণ্ঠ পাখি আছে 
গেরস্থালি শস্য আছে 
তোমাকে নতুন করে পাবার প্রাণময় বীর্য আছে 

আমি আছি বলেই নওল কিশোর সূর্য ওঠে
বালিশের মত নরম রাত্রি আসে
শাদা ঘোড়ার কেশরের মত উল্লসিত দিন আসে
ভোরের বাগানে কিশোরীর নূপুরের মত শব্দের ফুল ফোটে 

সীমান্ত চৌকিতে বসে  যখন দুই বাংলারর কবিতা পড়ি
তখন চোখের জলে গলে যেতে থাকে বিভেদের কাঁটাতার ..



৩.


∆ মৃত্যু পরবর্তী ∆



তবুও মৃত্যু ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়
মেঘের গায়ে বিদ্যুৎ চমকালে বুকের বাঁ-দিক চিনচিন করে
মরে যাওয়া শ্রেয় জেনেও মনে হয় 
আর কিছুদিন বেঁচে থাকা কী ভীষণ জরুরী....

ভোরে ঘুম ভাঙলে মনে হয় ‘আজও বেঁচে আছি' 
এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে ?
আজ রাতে ঘুমের ভেতর কত মানুষ মরে গেছে
আমিও মরে যেতে পারতাম 
মরে গেলেও ভোর হত
বারান্দার টবটায় আর একটা সূর্যমুখী পাপড়ি মেলত
আমি যে আপিসে রোজ যাই
সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন হত
পরের দিন থেকে আবার সব আগের মত
একটা বর্ষা এসে মুছে দিত মাঠের শোক 
আর গিন্নির পাশবালিশ
আমার মৃত্যুতে কারও কিছুই তো যায় আসে না
তবু কার জন্য এত বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা 
নিজেকে ভালোবাসার স্বার্থপরতা থেকে 
আমিও বেরিয়ে আসতে পারিনা ...



৪.

∆ আত্মরক্ষার প্রেসক্রিপশন ∆


তবু অন্ধকার ও একা এক ল্যাম্পপোস্টের সাথে রোজ কথা হয় 
যদিও আমরা কেউই নিজের সামর্থ্য পেরোতে পারি না

'ধর্ম' বুঝি না বলে মন্দির-মসজিদের কাছে ঘেষি না 
তবু চোখে সবুজ-লাল কাপড় বেঁধে আসতে বলে মোল্লাপুরোহিত
'রাজনীতি' বুঝি না বলে দূরে সরে থাকি
তবু ডাণ্ডায় পতাকা বেঁধে হাতে ধরিয়ে দেয় –
তিনবার মাধ্যমিক ফেল-করা পাড়ার ডাকাবুকো নেতা

মানুষকে জুম্বি বানিয়ে মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিচ্ছে যারা
তাদের সমর্থন না করলে পেছনে সেঁটে দেবে ‘দেশদ্রোহী’ 
কিংবা ‘মাওবাদী’ তকমা
কোন্ ইজমের প্রেসক্রিপশনে যে আত্মরক্ষার 
সুড়ঙ্গ আছে জানি না
তাই পরস্পর নীচু স্বরে কথা বলি আমরা

এইসব গোপন কথকতার ভেতর কারো অনুপ্রবেশ মঞ্জুর নয়
পথভোলা ধুমকেতুর তোয়াক্কা না করে 
গূঢ় অন্ধকারে একা ল্যাম্পপোস্টের সাথে কথা হয়...



৫.

∆ ল্যাম্পপোস্ট : ভিখেরি ও মজুতদার ∆



ভিখেরি দেখলে এখনও ল্যাম্পপোস্টটির কথা মনে পড়ে
মজুতদার ও চাচানেহেরুর কথা 
আজ পর্যন্ত কোনো মজুতদারকে ল্যাম্পপোস্টে ঝোলানো যায়নি
বরং ক্ষুধাসূচক ল্যাম্পপোস্ট ছাড়িয়ে উঠতে থাকে…
ক্রুশবিদ্ধ যিশুর পেটের মত নেমে যায় জাতীয় আয়
ক্ষুধার্ত শিশুকে মনুমেন্টের চূড়া দেখিয়ে ‘মা’ বলে, 
‘দেখো আমরা বাড়ছি খোকা !'

আমরা কেউই নিজের সামর্থ্য পেরোতে পারি না
তাই ইঁদারার গায়ে হেলান দিয়ে যে ভিখিরি 
এক রাতের রাজা হতে চায় 
আমরা তার পয়সার থালায় মৌন আলো ফেলি 
নক্ষত্রের মার্সিডিজ-বিন্যাস লজ্জা পেয়ে ফিরে যায় উচ্চ গ্যালাক্সিতে




ক্যামেরা- মেহবুব গায়েন

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০