Wednesday 27 July 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৪


শতদল মিত্র’র কবিতা-

১.
∆ আষাঢ় ১৪২৯ ∆



আষাঢ়ে আশ্বিন যদি ভাসে
সাদা মেঘগুলো ঘুরে ঘুরে কাঁদে যদি
ছাদের আলসেয় প্রাণ ফাটিয়ে
হেসেছে যে বটচারা এতদিন
আজ ম্রিয়মান হলে আর
মৃত্তিকা যদি পাথর পারা
সে প্রত্ন প্রস্তরে 
দেখো পাঁজর জ্বালিয়ে হোমাগ্নি জ্বেলেছি তবে।
আমিই ঋত্বিক, হোতাও আমি
মন্ত্রে উচ্চারণ আঁকি—
      ওম! স্বাহা!
      হে অগ্নি! আমাকে খাও!
জলহীন জলাশয় যদি খায় সকল পঙ্কজ আজ 
আষাঢ় বোধনে তবে
উপড়ে আনি নিজের আত্মা!
এসো হে সজল মেঘ—
আহুতি শেষে বৃষ্টির জলে
পবিত্র যজ্ঞাগ্নি পুণ্যে যেন জাগে !

সে পুণ্যাহে, এই দেখো ছাই ভেদ করে
জন্ম নিই নতুন উদ্ভিদ আমি
                  জীবনের সংরাগে!


২.
∆ খোঁজ ∆


 
ধুলো উড়িয়ে হাঁটছি একা 
হাঁটছি হারিয়ে যাব বলে
হাঁটতে হাঁটতে একদিন বুঝলাম
আমি খুন হয়ে গেছি
তবুও হাঁটছি...
ওরা আমাকে খুঁজল
পথে
নদীর নিরালা ঘাটে
গাছের ছায়ায়
গোধূলির খুনখারাপি মায়ায়
রক্তের আঁশটে গন্ধে
       নিহিত লবণে তার
জনহীন শ্মশানে, কবরে
এমন কি আমার একলা কবিতায়—
কোথ্থাও খুঁজে না পেয়ে
হাল ছেড়ে দিল ওরা...
সেই থেকে খুন হয়ে যাওয়া আমি
হাঁটছি একা, ধুলো উড়িয়ে, ধুলো উড়িয়ে
আর খুঁজছি সে খুনিকে—
              হয়তো নিজেকেই!

বহু দূরে কাজলরঙা মাঠে তখন
          জেগে উঠেছিল হরপ্পা, সান্নাটা ভেঙে!



৩.
∆ প্রেম ∆


ভালো আছি ভালোবাসাহীন !
বেদনাও নেই
আনন্দও নেই কোনো |
শুধছি শুধু জন্মের ঋণ !
ভালোবাসি--
এ কথাটি দু ঠোঁটে আর
আঁকবো না কক্ষনো ! 


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

তুষারকান্তি রায় এর লেখা-



১.
∆ জলদূত ∆


আকাশে মেঘদূত বাতাসে রিমঝিম 
নাগাড়ে ঝরঝর বর্ষাপূর্তি 
ঝরছে প্রিয়গান কবিতা থইথই 
খিড়কি খোলাপাতা ভরসা ফুর্তি 

উড়ছে দিনরাত চলছে কথকতা 
মেঘের মল্লার গাছের জলসায় 
মুছেও মোছে না যে শ্রাবণে পোড়া চোখ 
শব্দ উড়ে বসে শব্দহীনতায় 

পায়ের পাতা জলে দাঁড়িয়ে বুড়ো বট 
একলা চেনা পাখি বিষাদে নির্জন 
স্মৃতির তারে ভেজে পাগল কাটাঘুড়ি 
মরমি স্বরলিপি পুরনো গুঞ্জন 

            

২.   
∆ জলছবি ∆


একটু একটু করে এগিয়ে  আসছে বৃষ্টির দিন 
হাত বাড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে 
গল্পের গুজব  ;  আর 
মেঘে মেঘে ছেয়ে যাওয়া  অবাধ‍্য জলধারা 
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ছুটে চলেছে 
হিতে - বিপরীতে  
ভেঙে যাচ্ছে পার না ভাঙার প্রতিশ্রুতি 

মন্হর গতিতে যমুনা পেরিয়ে গেল বৃষ্টির নামতা 

           

৩.
∆ মনবাদল ∆


ঝাঁকড়া চুলের কমবয়সী মেঘ 
মাঠ পেরিয়ে আলতো ডানা মেলে 
মাথার উপর আকাশ হয়ে গেলি 
নকশা তুলে বাড়ালি উদ্বেগ 

সন্ধ্যা হঠাৎ টুপটিপটাপ জল 
চমক দমক গায়েতে বিদ‍্যুত 
কাছে দূরের গন্ধ ভেজা  হাওয়া 
মেঘ চরানো জলযাপনের ছল 

আচমকা তুই উথালপাতাল নীল 
থইথই সুর খেলার বারান্দায় 
ঝামুর ঝুমুর নামিয়ে বিরামহীন 
দিনরাতদিন লিখিস জলমিছিল 

আসলে তুই ঘুমের ভিতর ঘুম 
পাখির খেলা খেলতে শেখা মন 
তোকে ছোঁয়ার ইচ্ছে নিয়ে বুকে 
জানলা খুলে দাঁড়ালো নি:ঝুম 

ছবি- মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


ঈশিতা পাল এর কবিতা-



∆ হাইকু ১ ∆


আকাশজুড়ে
সঘন কালো মেঘ,
বৃষ্টি নামছে।


∆ হাইকু ২ ∆


একলা ঘর,
সঙ্গী সায়ানাইড-
কবির মৃত্যু।


∆ হাইকু ৩ ∆


মনকেমন,
এমন বর্ষাদিনে
তুমি কোথায়?



ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 21 July 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৩

বদরুজ্জামান আলমগীর এর কবিতা-


১.
∆ ন হন্যতে হন্যমানে ∆



কৈ মাছ চাষাভুষা লোক- খানদানির কোন ব্যাপারই নেই তার মধ্যে: শক্তপোক্ত শরীর- পেটানো কাঠামো, গায়গতরে জেল্লার নামগন্ধ নেই, পুরো চামড়া খসখসে, সারা গায়ে কালশিটে দাগ, ঘষায়-বসায় রুক্ষসুক্ষ রুখ; অন্য পাড়ে মান্যবর ইলিশের ইস্ত্রিকরা মোলায়েম দেহবল্লরী, রীতিমত সুগন্ধিমাখা সাহেবসুবা লমলমা ইংরাজের বাচ্চা! অল্পেই তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন, সল্পেই গা ছেড়ে দেন।

কৈ মাছ কামলা কামিন নামহীন গোত্রহীন প্রান্তিক অন্ত্যজ  মানুষ- ডৌল নকশার ধার ধারে না, বর্ষার প্রথম নিনাদে ইলিশ যখন পারিষদবেষ্টিত ব্যূহের অন্তরালে ভীত,পাগলপারা কৈ মাছ সঙ্গীর খোঁজে কানকো বেয়ে উজানের দিকে ছোটে: সঙ্গীর বদলে তার জন্য উজানে অপেক্ষা করে কোঁচের তীক্ষ্ণ ফলা, কোঁচের ফলাকে কৈ মাছ ভাবে শ্রাবণ দিনের প্রথম কদমফুল!

কৈ মাছ নিজেই নিজের পক্ষ ও প্রতিপক্ষে হাজির, নিজেকে আহত করে, আর শুশ্রূষায় ছটফটানি বাড়ায়, বাতাসের সঙ্গে আয়ুর হিস্যার দেনদরবারে নিদারুণ  তৎপর, নিজেই নিজের কবর খনন করে, কানকোর রক্তে তিলক পরে নিজের মৃতদেহ সজ্জিত করে তোলে!

আগামী বর্ষায় সে আবার অন্তর্গত উল্লাসে প্রেম ও মৃত্যুর অঙ্গুরি পরিতে উজান পন্থে আসিবে- বাদল দিনের প্রথম কদমফুল ফুটিলে আসিবে, না ফুটিলেও আসিবে- ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে!



২.
∆ বিল হই ∆



তারা খসে নিঃশ্বাসে নাকফুলে নথে,
ভুলে বসে তনুমূলে চেনাশোনা পথে।

হাওয়াগুলি বাড়ি দেয় জানালার শিকে,
নদীও পাশ ফেরে খোলে কোনদিকে!

চখাচখী মঞ্জিলা ধ্যানে বসে ছোটার,
হাতে চুলে অনল আর নিরালা কুঠার।

কৃষিকাজে দুধঘরে পাতা পল্লব ভাসে,
লেবু বনে নিশিপাওয়া প্রতি প্রত্যুষে।

তুমি আমি বিল হই তেলিভিডা মোড়ে,
কে তোলে ফুল গো আগুনের পুরে!
 
বুক পাতি চৌচির সাতবাড়ি ঘাটে,
ডিঙা যদি ভিড়ে আশা নিলামের হাটে।

দেশে দেশে মনকড়া জামের কুঁড়ি,
ঘুম মাগি নির্ঘুম পাথর আর নুড়ি!





৩.
∆ কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি ∆



কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি
মেঘের পরে মেঘের শরণার্থী শিবির।
কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি লাউনের বিল
জলি ধানের কোমর জড়িয়ে হাওয়ার ব্যাকুলতা
শুনতে থাকি।

অর্ঘ্য সেনের গলায় বসে জানলার বাইরে
দুয়ারের থেকে দূরে দিগন্তের সিথানে জলমগ্ন কথা।

নীলুফার ইয়াসমীনের কন্ঠে খয়েরি দেয়ালের বাইরে
ঝিরঝিরে নামে মেধাবী বর্ষার জল;
দেবব্রত বিশ্বাসের আহবানে আছড়ে পড়ে
রুয়াদরের বিল।
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরের নকশি কাঁথায়
ফুটে ওঠে অন্তঃসলিলা তারা-
নমিত ধুলিপড়া তুলসি পাতা।

তাদের গানের নিচে  আমি একা শুয়ে থাকি
জলমগ্ন পাথর- শ্যাওলা জলে ধুয়ে যায়
অনাগত জন্মের করতল।

মেঘ ঘন হয়ে আসে নিমজ্জনের ঘোরে-
কোন জানালার শিকে মাথা হেলায়ে দাঁড়িয়ে আছো আমার সিজোফ্রেনিক বোন;
পাথরের সঙ্গে শুয়ে থাকো কেন ও আমার ভাই!

ডুমুর পাতার এতো অন্তরাল, এতোটা নিভৃতি  কম্পনের সাথে মিলিয়ে যাও কোথায় জননী আমার!
স্মৃতিডোরের ওই পাশে ধরো ভাগ করে নিই
মেঘেদের জমে ওঠা।

ব্যথা জমিয়াছে- ছায়া ঘনাইছে,
কোথাও এমন ঘনাইছে বুঝি!


ছবি- অর্ণব জানা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

দীপক বেরা’র কবিতা-


১.     
∆ ভ্রমণ ∆


একটা অতৃপ্তি আমাকে ছুটিয়ে মারে
ছুটছি মানে এই নয় যে, রাস্তার শেষে গন্তব্য
ভুল পথে ছুটে ছুটে রাস্তা বেড়ে চলে শুধু
পায়ের তলায় ক্লান্ত ঘোড়ার খুরের আওয়াজ 
পেছনের দূরত্ব কমিয়ে অবিরাম ছুটে চলা 
সময় গড়িয়ে চলে, বয়স বাড়ে..
ছুঁয়ে দেখা হয় না জীবনের মহার্ঘ অর্জন কিছু
মানুষের মতো অবয়বগুলো ক্রমে ফিকে হয়ে আসে
বিবর্ণ শরীরে এখন পোকাদের গুঢ় জটিলতা 
অসমাপ্ত পথের পাশে, শূন্য পৃথিবীর নিচে
শুয়ে থাকে নিথর, এক ভ্রমণপিপাসু কঙ্কাল!




২. 
∆ অন্ধকারের কারিগরি ∆


আস্তিনের নিচে আধশোয়া গণিতের ভ্রূণ 
জ্যামিতির স্থিরচিত্রে তখনো লেগে রক্তছিটে
তদন্ত উৎসবে নামবে মস্ত গোয়েন্দাগিরি দল
এবার একে একে কত গল্প গাঁথা হবে
গোধূলির ভণিতাচিহ্নের পাশে, 
ঘাতকেরা সভ্যতার ফিরিস্তি শোনায়—
কতটা রক্তপাত হলে, মৃত্যুও শিল্প হতে পারে! 

কৌশলের ক্রমাগত বিস্ফোরণে উড়ে যায় প্রাণকণা
ইচ্ছেফুলের ছোট ছোট গন্ধ উবে যায়.. 
গড়ে ওঠে অন্ধকারের কারিগরি, কৃৎকৌশল! 



৩.
∆ মন ∆



মালী রোজ ফুল তোলে, মালা গাঁথে
অথচ জানে না সে, তার হাতের স্পর্শের 
এত যে নিত্য ফুল, চলে যায় কোথায়? 
কোন্ উৎসবে, কোন্ প্রয়োজনে 
মিশে যায় কার উৎসর্গে, কোন্ নিবেদনে?
নিত্য কাজের ছলে দেখে নি চোখ তুলে 
কখনো কোনোদিন ফুলের রূপ-সৌন্দর্য 
বিহ্বল হয় নি, কোনো এক মুহূর্তের তরে! 

অপরূপ লাবণ্যবিভায় দিনান্তে রেখে যায় ফুল 
তার নৈঃশব্দ্যলিপি, মর্মমূলে গেঁথে রাখে শোক 
মন ছাড়া স্বপ্ন নেই, স্মৃতি নেই.. 
লক্ষ্মীপ্যাঁচা সারারাত জেগে বসেছিল পাঁচিলে
গভীর নিদ্রাশেষে—
ভোরের আলোয় কোনো চিহ্ন নেই তার..!


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সোমনাথ সাহা’র কবিতা-


১.

∆ অন্ধনির্জনতা ∆


"There are more things in heaven and earth than are dreamt of in your philosophy."
                           Hamlet : Shakespeare


অন্ধনির্জনতা থেকে একটু এগিয়ে যাও দেখবে একটি লোক ঢেউয়ের মতন আকুল হয়ে বাঁচার আশায় দাঁড়িয়ে আছে।
এখন আর একটু এগিয়ে যাও,
দেখবে ওটা আসলে লোক নয়, গাছ।
এইবার তুমি দৃষ্টিগুলোকে তীরের ফলার মতন ছুঁড়ে দিতেই দেখবে ও আসলে গাছ নয়, নদী!
তুমি দেখতে না পারার ব্যর্থতা দিয়ে প্রশ্ন করবে,
তা আবার হয় নাকি! গাছ কখনও নদী হয় ?
তুমি যুক্তি দেখাবে,  পৃথিবীর লুপ্ত ইতিহাস থেকে তর্ক তুলবে আঙুল নাচিয়ে, লজিকের বই খুলে পাতার পর পাতা উল্টাবে।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমার অন্ধ-মহাকালে যে বিষণ্ণতা জমে আছে তা দিয়ে আমি বোঝাবো
কীভাবে একটি লোক একদিন গাছ হয়ে নদীর মতন ভেসে যায়।
গাছের ভিতরে কোনো মেঘ থাকেনা। জানো ?
থাকে শুধু সাদা-কালো বিশ্বাসের বৃষ্টিধারা।
জীবনের সকল মৌনতা সিঁড়িভাঙা জলে ভাসিয়ে দিতে হয় নদী হওয়ার আগে।
কারণ, ঈশ্বর বইতে প্রদীপের সরলতা লাগে।
তুমি ভাবছো। ভাবছো, কীভাবে এতসব জানলাম ?
কারণ, আমিই তোমার বুকের পাশে বসে থাকা প্রথম পুরুষ।



২.

∆ মৃত্যুহীন প্রাণ ∆



"কবিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় রাইফেলের নিচে

তারপর তার কফিন বাক্সের ওপর খোদাই করে দেওয়া হয়- এটা দেশদ্রোহীর লাশ

                     একে স্পর্শ করোনা"

                                                   -প্রবীর আচার্য্য


যে ঘরে আগুন লাগে তাতে বিষয় পোড়ে;

 মানুষও পোড়ে কখনো কখনো।

আবার কখনো ছেলের চিতায় বাবাও পোড়ে নীরবে।

প্রশাসন আসে সহানুভূতির ঘন্টা বাজিয়ে।

তখন এমন এক ঝড় ওঠে যার ভিতরে বাতাস থাকেনা।

আঁধারের পেটে জ্বলতে থাকা ক্ষুধার আগুন ইতিহাসকে ডেকে আনে।

আর ইতিহাস আসে কার্তুজ পাল্টাতে।

কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আগুন লাগলে?

পোড়ে দেশ,

পোড়ে সভ্যতা,

পোড়ে সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি।

কেউ আসেনা প্রতিবাদের ঘন্টা বাজিয়ে।

পুড়তে পুড়তে বদলে যায় মানুষ।

পুড়তে পুড়তে বদলে যায় কুতুবমিনার-তাজমহল-ধর্ম-শিক্ষা-আইন-আদালত।

সব পোড়ারই গন্ধ ভাসে বাতাসে।

এই যেমন দুধ পুড়লে দুধের,

ভাত পুড়লে ভাতের,

প্রাণ পুড়লে প্রাণের।

তবে, ইতিহাস পুড়লে কোনো গন্ধ ভাসেনা বাতাসে।

এই ভাবেই হারিয়ে যায় বহু যুবকের ঘুম, এই ভাবে হারিয়ে যায় বহু যুবতীর লাশ।



অলংকরণ- মেহবুব গায়েন


•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Saturday 16 July 2022

কবিতা

টুপ বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-২

  



তৈমুর খান এর কবিতা-


১.
∆ সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে ∆


সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে 
আমাদের ছোট ছোট রাস্তায় 
অন্ধকার চলাফেরা করে 
হাত ধরাধরি মেঘ নামে 
ফিসফাস কথাদের বেশ আনাগোনা 
তর্জন গর্জন দেখে আমরা ঘরে ফিরি 
পতাকা ওড়ে দেখি সব মোড়ে মোড়ে 

কাদের পতাকা এত  ? 
সব পথ রাস্তা হয়ে গেলে 
এরকম পতাকা ওড়ে ? 
মহল্লা মহল্লা জুড়ে এরকম গলি হয়  ? 
মানুষেরাও পাল্টে যায় অচেনা মানুষে ? 

ঘরে ফিরে আসি —
সারারাত চাঁদ নয় , মৃত মায়ের মুখ মনে পড়ে  ! 



            
২.
∆ যদি ছুঁতে পারো ∆



আমি দৈর্ঘ্যে নেই , প্রস্থে নেই 
শূন্য অবতলে কোথাও নেই 
অথচ আমার ভাষা ব্যাপ্ত চরাচরে 
     শব্দ ও স্বপ্নের তালিকায় 
     বাঁচা ও মরার নির্বাহী ক্রিয়ায় 
     ছলকে ওঠে গন্ধে ধূপে 

    তুমি এসে ছুঁয়ে দাও 
    যদি ছুঁতে পারো 
   যদি এ নিঃসঙ্গতার বেড়া থেকে 
  আমাকে বের করে দাও.... 

     ইহজাগতিক পথে 
     জয় ঘোষণার কাছে 
     কারা কারা গেল? 
আমি শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাব 
ওই তো জবাগাছ ! 
কত জবাফুল ফুটে আছে 
 সবাই ডাকছে আমাকে ... 
তুমি ছোঁও 
  একটিবার অন্তত ছুঁয়ে দাও  ! 



 
৩.
∆ আমরা হেমন্তের দিকে যাব ∆



ব্যস্ততায় দুলছে পটভূমি 
কোথাও সুচারু সদ্গতি 
দেখিনি আজও 
         নরম স্নেহের পলি রেখে 
         কবে ঢেউ চলে গেছে 
         চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নদী 
           আমরা শুধু মাছেদের ভ্রমে 
          কল্পনার জাল বুনে গেছি 

অনুভূতি, নৌকা আনো 
যতই রোদের বিলাসী দিন 
জ্বালাক আগুন—
আমরা হেমন্তের দিকে যাব 
হয়তো ফিরবে আবার 
করুণার শিশিরে ঝিকিমিকি !


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

পলাশ দাস এর কবিতা-



১.
∆ দোকান ∆


মাথার ওপর একটা আকাশ 
আর তার শরীরের ভিতর একটা জালের মতো স্তর 
সেখানে মুষ্টিমেয় আমরা কয়েকজন 
হাত পা নেড়ে যাচ্ছি 
মাথা নেড়ে যাচ্ছি 
একটা দোকান আর কাচের ওপাশের মুষ্টিমেয় শরীর 


২.

∆ যেদিন ∆


যে বিড়ালটিকে প্রথমে খেতে দিত বীরেনরা 
সেই বিড়ালটি আমাদের বাড়িতে আসত, খেত 
সুবিধা মতো এ-ঘর ও-ঘর করত   
বারান্দায় শুয়ে থাকত দীর্ঘক্ষণ 

সেই বিড়ালটির দেখাদেখি আরও একটি বিড়াল 
প্রিয় হয়ে উঠল বীরেনদের  
আমাদেরও প্রিয় হয়ে উঠল সে, কিছুদিনের মধ্যে 
প্রথমের বিড়ালটি যেমন ঘর বারান্দা করত, 
পরেরটিও তেমন ঘর বারান্দা করতে শুরু করল 

এরপর একদিন প্রথমটিকে আর বীরেনরা খেতে দিত না  
আমাদের এখানেও অচিরেই তারও খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল  


৩.
∆ দাঁড়াই ∆

অন্ধকার যখন কেকের মতো হয়ে ওঠে 
মাথার দুপাশে ওপরে সুস্বাদু রঙ ও গন্ধের 
তখন থাবা বসায় বাড়িয়ে দু হাত 
 
অন্ধকার বৃষ্টির মেঘের মতো হয়ে উঠলে 
খুব আকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে রোদের উঠোন  
  
গাছের নীচের ছায়ার শরীরে অন্ধকার জমলে  
তার শরীরের সাথে মিশে যেতে যেতে 
অন্ধকার গাছ হয়ে ওঠে থমকে থাকা মাঠের মতো সময়ে


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

ঋতুপর্ণা খাটুয়া’র লেখা-





১.
∆ জুলাই সিরিজ (১) ∆

প্রতিবার আমি ভাবি, আমার হাত থেকে আর কোনও
খাজা কবিতা বেরোতে দেবো না, এই ভেবে সরে আসি
ধ্বংসস্তূপ হতে। জানালার পর্দায় গিঁট বেঁধে তাকে
অলীক এক তানপুরার আকার দিয়ে গরাদে ঝুলিয়ে
দিই গান। একটু আধটু বই পড়ার অভিনয় করি। এদিকে
অভিনয়েও পটু নই,  সে হিসেবে চটচপ অভিনয় ছাড়তে
বাধ্য হই। ওপারের অমোঘ ডাকের মতো করে ডাক আসে
দুপুরে ভাত খাওয়ার। হাতে ভাত মাখতে মাখতে কিছু খাজা
কবিতা আসে চচ্চড়িতে। তাদের আমি অপেক্ষা করাই।

হাবিজাবি ইতর-ভদ্র শব্দগুলো এত সহজে নিজেদের
হক ছাড়ে না। থালার পাশে ঘোরে, অধিকারের দাবীতে।

কিছুতেই বোঝাতে পারি না ওদের, অসময়ে
শব্দের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমার নেই।



২.
∆ জুলাই সিরিজ (২) ∆


সে রূপকথারা রাতের চাঁদ থেকে নেমে আসে।  ছুটে আসে কিনা জানি না। যখন দূরে কালো নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আলোময় জানালাটা নিভে যায় তখন বয়সের ধারনায় কেমন যেন মনে হয়। মনে হয় এবার আদরও নামল বুঝি ও জানলা বেয়ে রূপকথার দেশে। রাজপুত্তুর আর রাজকন্যার রাতপোশাকে ক্ষণিক বিরতি।

একটু পর দেখি টর্চ জ্বেলে, চাঁদ হাপুস নয়নে রূপকথা খুজতে বেরোয়।  তার পা টলে। ঝিঁঝিঁ পোকারা আর নাইট ডিউটি করবে না বলে হল্লা করে।  তাদের সাথে জোনাকিরা তাল মেলায়।  এরোপ্লেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষনা করে। কোনো অ্যারিস্টোক্র্যাট মেয়ে মশা নাকি বস্তির ঝি মশা আমায়  কামড়াতে ছুটে আসে ঠিক বোঝা যায় না। 

গ্লাস আর বোতলের ইগোর লড়াই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়।  ‘আত্ম সম্মান নিয়ে ফিরে যাওয়াই ভালো’ এই বলে গ্লাস, ড্রাঙ্ক অবস্থায়, হাত থেকে পড়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে জানলা দিয়ে আদর শেষে ফিরতে
গিয়ে রূপকথার পা কাটে।

জীবনে সবই দুর্ঘটনা — এই বলে আমি সব কেস ডিসমিস করে দিই জোর করে।




৩.
∆ জুলাই সিরিজ (৩) ∆


গড়গড় করে বলে যাওয়ার মতো কিছু কথা রিহার্স করছি মনে।
কমবয়সের প্রেমের মতন কিছু একটা রোগে ধরেছে হয়তো।
তাতে বুঁদ হয়ে আছি। উড়ে যাচ্ছি। চারিত্রিক স্খলন দেখছি
আয়নায়। এত লুচ্চা একটা মানুষ আমার ভেতরে থেকে এতদিন
বিড়ি ফুঁকছিল,  খেয়ালই করিনি। হয়তো সে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে
দাঁড়িয়েছিল, আমি পাশ কাটিয়ে গেছি, ভদ্রতার দোহাই দিয়ে।
হায়রে জুলাই,এমন তরতরে বৃষ্টি হচ্ছে, দেবী গলে গলে পড়ছে,
শক্ত কাঠামো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে, ওকে নগ্ন করল জুলাই।
স্যাঁতস্যাঁতে ভীরু  উচ্ছিষ্ট আবহাওয়া, প্রেম। বয়স যত বাড়ছে,
ততই আত্মার নগ্নতা যে একটি উদযাপনের বিষয়, তা জানছি।
নিজের ভেতরে এতদিন যে যীশুর আরোপিত মহিমাগুলো
দেখতাম, তার ভ্রম কেটে গিয়েছে। দুষ্ট, লোভী,  শয়তান,
ইতর, জানোয়ার ও অপরাধপ্রবণ যে মানুষটা বেরিয়েছে
তাকে আমি গড় করি। তুমিই আমার লুক্কায়িত মানিক।
গচ্ছিত রত্নাকর। নির্লজ্জ এক মাইডিয়ার মানুষ।


অলংকরণ- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



Tuesday 12 July 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-১

রূপক চট্টোপাধ্যায় এর কবিতা-



১.
• বানভাসি •


ভোরের আলোর ভেতর পৃথিবীর বালিকা বয়স
হেঁটে যেতে দেখি। তিনটি লাল সিঁড়ি নামলেই 
সামনে সামুদ্রিক উঠোন। উঠোনে উবু হয়ে বসে
রাঙা দিদি আলপনা আঁকে।তার আঁকা লতাপাতায় 
জেগে থাকে রূপসী প্রজাতি, আড়ালে গিরগিটির 
জিভ নজরে পড়ে না! আলপনা শেষ হয়না কভু
উবু হয়ে বসেথাকা রাঙা দিদির শরীরে
বিচ্ছিন্ন দ্বীপেরনোনা ঢেউ লাগে,
 বিষন্ন সাইকেল উড়ে যায় 
কবেকার ওড়না উড়িয়ে স্কুলের দিকটায়! আবছায়া
পেয়ারা গাছে উঠে বসেছে বিশু মাস্টারের উড়নচণ্ডী 
মেয়েটা। আঁচলের পেয়ারা দিয়ে সাজাচ্ছিল 
মেঘের মনেস্ট্রি! তার সুজাতা বয়স তখন খোলা চুল।


এই স্রোত ক্রমশ প্রবাহিত হয় হলুদ জ্বরের মতো
উষ্ণ বালিয়াড়ির ওপর দিয়ে। হঠাৎ চোখের
জল আসে স্মৃতির নদীতে। ডুবে যায় ধানিজমি! 



২.
• হাওয়া মোরগের গান •


সাইকেলের কেরিয়ারে একরত্তি মেয়ে,
সামনে হাড়ের স্তূপের ভেতর থেকে
প্রাণপণে প্যাডল ঘোরায় বাবা। চাকা ঘোরে,
একটু খানি গড়ায়, দাগ কেটে কেটে!
সামনে অনেকটা পথ, পৃথিবী নিজের মত
করে বিপদ সংকুল করেছে! সরল বাক্যের
মাথায় হাত উঁচিয়ে হঠাৎ পূর্ণচ্ছেদ বসিয়ে দিয়েছে! 
নামিয়ে দিয়েছে সান্ধ্যকালিন ক্লান্তি শিরা ও সন্তাপে!

একরত্তি মেয়ে তবুও চুল ঝাঁকিয়ে 
গেয়ে চলেছে হাওয়া মোরগের গান। তাই শুনতে
বৃষ্টির কার্ণিশে, উড়ে এসে বসলো 
তৃতীয়ার চন্দ্র ইসারা!



৩.
• নিয়ম ছিঁড়ে •


এমন নীল লবন পাখা পেলে
আমিও সামুদ্রিক সন্তরণে যাবো। 

মাঠ খোলা বুক পেতে সহজ মাটিতে 
জটিল শেকড় সন্ধি মেনে সরলবর্গীয় 
সাজাবো আবার বন বিলাসে। 

বিচ্ছিন্ন ডিঙা গুলির মনি কাঞ্চন বেলা শেষে ,
তীরে এসে দুলেদুলে খুলে দেবে চুলের অন্ধকার।

সারস শুভ্র নারীরা শঙ্খ বেদনায় 
বাজাবে  মঙ্গল কামনার শাঁখা, যাদের
স্বাতী সজ্জিত বিনুনি র ফাঁসে কত
উজ্জ্বল পুরুষ মেনে নিয়েছে শেকলের
কৃতদাস স্বাদ। মনে নিয়েছে মীন রাশি।

এমন অরূপ রতন 
আমি পাগলের প্রলাপ থেকে খুঁজে পেলে
সান বাঁধা গণিত ভেঙে দিঘিকে দেব ইচ্ছেমতি জল। 
  জল হবে বারোমাস নদীর শরীরে...
জাফরানী রঙের হরিণী 
এমন বয়স এলে তোকে মৃত্যু ভেঙে ছোঁবো। 

এমন নীল লবন পাখা পেলে 
আমিও সামুদ্রিক সন্তরণে যাবো

ছবি:- অর্ণব জানা
.................................…...................................





কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-১

রবীন বসু’র কবিতা-



১.

• বর্ষালিপি •


কোথাও বৃষ্টি পড়ছে

কোথাও কদম গাছ ভিজছে একা দাঁড়িয়ে।


গত জন্মের ওপার থেকে

ধূসর নিবিড়তায় ব্যথারা কান্না করছে

মেঘ-পৃথিবী জুড়ে নিদারুণ মেদুরতা

মানবীহৃদয় নিয়ে শ্রীরাধিকা হাঁটছেন

সিক্ত বসন থেকে টুপটাপ জল 

অলকাপুরীর দিকে চলে যায়

কানাইয়ের দেখা নেই

যমুনার পাড় ঘিরে শূন্য নূপুরের ধ্বনি

ছায়াচ্ছন্ন চরাচর বৃষ্টিবিগলিত পড়ে আছে।


আমাদের আক্রান্ত পৃথিবী

তবুও বর্ষালিপি লিখে রাখে মেঘেদের গায়ে…


২.

• শ্রাবণশ্লোক •


শ্রাবণের বৃষ্টিধারায় অক্ষরেরা ভিজে কাক।


আমার সমূহ বিষাদ জড়ো হল দরজায়

অভ্যন্তরে ঘন মেঘ, বজ্রগর্ভ অভিমান জমে

তুমুল কলহ নিয়ে দুইটি চড়ুই

রামগিরি পর্বতের দিকে ডানা মেলে দিল

ঘাড় নিচু করে কালিদাস বর্ষার শ্লোক লিখছেন।


হতভম্ভ আমি চেয়ে দেখি শ্রাবণ-সরস্বতী, এইমাত্র

ভিজেকাপড় থেকে যাবতীয় শ্লোক নিঙড়ে নিলেন।


৩.

• পুনরায় মেঘমল্লার •


বৃষ্টিবিঘ্নিত বেলা, জলস্তর উঠে আসে

আকুল উঠোন

মেঘমল্লার বাজেনি কোথাও…


বিষাদরাগিনী বাজছে মহল্লা মহল্লায় 

পাড়ায় পাড়ায়

অনিকেত ভয় নিয়ে ন্যুব্জ সময়ের ঘেরাটোপ

ওই দেখো শূন্য চেয়ে আছে

মাস্ক পরিহিত সুস্থতা কিছুটা দাঁড়িয়েছে ঠায়

অবিরল জলধারায় আরোগ্য ভাসছে

কাগজের নৌকো নিয়ে খেলছে না শিশু

যাপিত জীবনের চিত্রকল্প অদৃশ্য মিহিসুতোয়

কাটাকুটি খেলা…


হে সময়গ্রন্থি, উচাটন দূর করে পুনরায়

জীবনের মেঘমল্লার বাজাও আনন্দে!



ছবি:- মেহবুব গায়েন

......................................................................


কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-১

মাসুদুল হক এর কবিতা-


১.
• খুচরো যন্ত্রাংশ •


এখানে বাতাস ফসিল হয়ে 
কাঁচের মতো রোদে পুড়ছে 
কার্বন পোড়ানো দিন 
রাতের শরীরে মার্কারি 
বৃক্ষদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয় 
কোথাও কোনো পাখি নেই 
 এখন যন্ত্রযুগ 
মানুষের শরীরে কিছু হলে 
বিপণী বিতানের তাক থেকে 
 খুচরো যন্ত্রাংশ বদলে নেয়া যায় 



২.
• মধ্যবিত্ত • 


সবুজ টিপ-পরা দিন 
ক্লান্ত মুখে অন্ধকারে ডুবে যায় 

তবুও ছাড়ে না মধ্যবিত্ত রক্ত 

সংসারের মুখ তিমির মতো 
গ্রাস করে ক্ষুধার জাহাজ 

তবুও স্বপ্নে উঠে আসে 
হলুদ সূর্য 
মেটার্নিটি সেন্টারে 
নীরবতা ভাঙে কচি শিশুর কণ্ঠ


৩.
• তোমার সৌন্দর্য •


তোমার সৌন্দর্য চুম্বকক্ষেত্রের 
মতো অভিকর্ষ বল

নতজানু প্রেম তোমাকে ঘিরে 
বিচূর্ণ লৌহমরিচার আবেগে 
সাদা কাগজের বুকে 
পড়ে থাকে এলোমেলো... 

দাহ ও দহনের ভেদ ভুলে 
তোমাকে ছুঁয়ে দেখবার মোহে 
ক্ষত নিয়ে শুয়ে পড়ে 
আরোগ্য নিকেতনের সফেদ চাদর

তোমার সৌন্দর্য চুম্বকক্ষেত্রের মতো 
আমাকে গ্রাস করছে 

লাবণ্যময়ী চাঁদের চকচকে 
রৌপ্যরশ্মী জ্বলে ওঠে 
তোমার বুকের সমুদ্রে জেগে ওঠা 
                                    নতুন চরে


ছবি- মেহবুব গায়েন
......................................................................