Tuesday 31 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬

দীপান্বিতা রায় সরকার এর কবিতা -

নিমন্ত্রণ

কোন মুক্ততন্ত্রের কথা বলো..
স্বর্ণ আয়ুর নদী।
অবশ্যম্ভাবী,  শেষ বাকলের ঝড়।

বুকের মাঝে সঙ্গত হই কিসে!
সর্বনামের শেষে..
সব হারালে আর কি অতঃপর?

এমন মন্ত্র কি তা জানো!
ও জন্ম যুগের ধারা..
শ্রান্তিহীন, বিরাম শেষ কদম?

কোথায় যেন ফুল ফুটেছে বনে,
পাচ্ছি ভীষন সাড়া,
প্রবল ভাবে আমার নিমন্ত্রন।


সব চাই যে


গাছেদের যে ছায়াপথ, মাঠেদের মতো বিস্তৃত।
চাইবো সেটা  আজীবন  সঙ্গ দিক।
মেঘেদের  যে আলাপন, বজ্রের সন্ধি সকল,
সব অর্জনই থাকুক ভীষন  আন্তরিক।

এই যে নরম কঠিন, আলোছায়া  উপত্যকা,
নির্মাণ ভেঙেছে যা এই বর্ষণে।
জানি সব জল সরে যায়, দাগ মুছে যায়
দিন চলে যায় দিনান্তের দর্শনে।

প্রথমে চাইবো সেসব, যা কিছু এই জাগতিক
প্রারম্ভিক শব্দ থেকে, সব কিছু শেষ  অব্দি।
সব কিছু শোক ও বিলাপ, পাখিদের সব কলতান।
সহজ কঠিন প্রবলতার মন্ত্র দিক।


যৌথখামার

আমাদের ভাঙ্গা বাড়ী ঘরে
দেওয়ালে লিখনে,
কোলাজের রংহীন মুখ|

ছিড়ে আনা টুকরো চাদরে
 যত্নের আখরে,
 ফসলের কাঙ্ক্ষিত সুখ|

এত রূপ !স্তুপ স্তুপ ভরে,
নিরাকার জটিল জঠরে,
যতবার জন্ম আমার|

ফেরো একবার,তাকাও এঘরে
যেটুকু জমেনি আদরে,
সে ভ্রম ছিলো কার?

সম্মত হও, যদি দাও ছুঁয়ে
অনাঘ্রাত ঘ্রাণে,
প্রকটেই দেই অধিকার|

আমাদের যৌথ খামারে,
বোনা বীজ ধানে,
প্রতিবার জন্ম আমার।


দঙ্গলে সব
    

ফুল পাখিদের আস্তানা সব,বন বাদড়ে ঘিরে,
ঐ যেখানে বৃষ্টি ঝড়ে,মগডালে মেঘ ফেরে।

রোদ্দুর এসে আলতো করে,আদর সোহাগ করে।

 কই সেটা গো ?কংক্রীটে আমার শহর ঘেরে,
একলা একটা সঙ্গী ছাড়া বিষন্ন গাছ মরে।

ভাঙন এলো  , বন্যা এলো মাটির শেকড় কই?
ভারসাম্যের তাপ প্রবাহে,উষর ভূমি হই।

গাছকে বাঁচাও গাছ বসাও,যাক কেটে যাক খরা,
গাছ বিহনে রৌদ্দুরে পুড়ে সক্কলি মন মরা।

গাছ লাগালেই মিলবে সুফল,ফিরবে ফুল আর পাখি,
আবার হবো দঙ্গলে সব,সবুজ মাখামাখি।


অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শব্দরঙ হাউস-এ প্রকাশিত হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়‌  এর কাব্যগ্রন্থ -
সংগ্রহে করতে যোগাযোগ করুন - 9679655286
********************************************

Monday 30 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬
গোলাম রসুল এর কবিতা -

এন্ড্রয়েড মানুষ


নস্টালজিয়া বন্ধুরা আমার 
এন্ড্রয়েড মানুষ 

সাইরেন বাজছে 
আমাকে জন্মের তথ্য দিতে হবে
বলতে হবে আমার দেশের নাম  
পাত্রটি থেকে গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামে  মনে হয় আমি জন্মেছিলাম একটি রেডক্রস 
মোরগের ছুরি আমাকে ডাকে 
 প্রতিটি ভোরের জন্যে
সূর্য  খ্রিস্টোফার কলম্বাসের রান্নার কুক
হাত বাড়িয়ে রয়েছে   তুলোভর্তি  নৌকাগুলোর দিয়ে 
ধু ধু ইমিগ্রেশন অফিস 
বইগুলোর মধ্যে  ফুটো শহর
স্টিলের আলমারি
স্কুলের জানালা দিয়ে সিমেন্টের শিশুরা দেখছে রাজপুত্র ঘোড়ায় করে সূর্যে যাচ্ছে 

বিধ্বংসী দিনের সব কটা আঙুল  চেপে ধরে রয়েছে পাথর 
নিহত নক্ষত্ররা দোলা খাচ্ছে সবুজ কাঁচের বোতলে 
আর চায়ের পেটিতে ভরা আন্দোলন

সিল্কের রুমাল শোভাবর্ধন করছে রামধনুকে
আমি মনে করছি আমি যাত্রা করেছি পাথর আর জলে
পাখিদের  ডানায় আমার তাঁবু
কঠিন পরিশ্রমের পর আমি যখন বিশ্রামের জন্য চিৎ হয়ে সাঁতার কাটছি আমার পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া বিশাল গুঁড়িগুলোর বেহালার তার তাদের অরণ্যকে বাজিয়ে চলে যাচ্ছে 
একটি প্রবল দ্রাঘিমা রেখা
বিশাল ডাইনোসরের পুনরুভ্যুত্থান
দুহাজার বছরের পুরনো সাপ
প্রাচীন বেগুনী রঙের হালকা আভা
প্রতিটি বৃহত্তম মৌসুমী বায়ু 
যখন
তামা 
সোনা 
রূপো 
দাউ দাউ করে জ্বলছে
তখন সব কটা ধাতুকে আমি নিভিয়ে দিয়েছি আমার অশ্রু দিয়ে 
আর একটি অস্পষ্ট বিন্দুতে শেষ করছি মহাবিশ্বের প্রসারতাকে
 

উদ্বোধন


নীল আকাশ
পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর সাদা চুলের মতো এখানে ওখানে 
দু এক টুকরো মেঘ 
কালো রক্ত আর লাল ঘোড়ার লড়াই চলছে সূর্যের আলোর মধ্যে
সন্ধ্যা নামছে ডানার শিকল কবরের মতো চেপে ধরে 

রাত্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
নক্ষত্ররা পাঠাচ্ছে তাদের  অঙ্গসজ্জা চোরাগুপ্তা  

নিরবতা
যার গায়ক থেকে বেরিয়ে এসে গান কাঁদছে 
আর সেই কান্না থেকে আমি লবণগুলো মুছে দিচ্ছি
যাতে অশ্রুর জল স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারে 
আর কান্নার তলানিটুকু ঝিনুক জন্ম হয়ে 
খুঁজে নিতে পারে ত্রিভুজ জলের এক কোণ 

দূর সমুদ্রশিশুরা খেলা করছে ঢেউয়ের মাথার খুলিগুলি নিয়ে 
বাতাস পরপর সাজিয়ে যাচ্ছে  অবিস্মরণীয় কঙ্কাল 

সাজানো হলো এক পরিপাটি বিমূর্ত
তাকে টেনে রেখেছে কান্নার  বলিষ্ঠ ফোঁটাগুলো 
কান্না বাঁশের কেল্লা
কান্না খরস্রোত সরীসৃপের দড়ি
কান্না সব হারিয়ে সব পেয়ে যাওয়ার এক রান্নাঘর
কান্না নেবুর জলের ফানুস যা আকাশে গিয়ে খানাতল্লাশি চালায় দুঃখের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের

অভিভূত  হই যখন আকাশ   নেমে এসে মুছে দেয় সমুদ্রের কানা
আর ক্ষিপ্র এক সাপ পরিভ্রমণ করে সমগ্র সমুদ্র

অন্য এক ঘূর্ণিতে দেখছিলাম এক দীর্ঘ ক্ষুধার্ত যখন খাচ্ছে তখন নিঝুম বর্ণনা করছে পৃথিবীর
       
অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শব্দরঙ হাউস-এর প্রকাশিত বই-
সংগ্রহে করতে যোগাযোগ করুন - 9679655286
********************************************

Saturday 7 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫


দেবশ্রী দে’র কবিতা-


দণ্ড 

নবজন্ম খুঁটে খুঁটে খাও 
সময়— এক বিশ্বস্ত আঁচড়

আমাদের পদ্মপাতায় 
ঈশ্বরের ব্যক্তিগত তরল খেলা করে
মায়া-কারুকাজ

স্বপ্নের গর্ভপাতে 
যার আবেশ সাজাপ্রাপ্ত হলো

আমি সেই শয্যার দেহঋণ মকুব করেছি


টুপ

আমাদের মুখোমুখি কোনও মুখ নেই
নেই কথা বলবার মতো কথা-ও 

পাহাড়ের গা-ঘেঁষে কুয়াশা যেমন 
লেগে থাকা, 
তবু ছুঁয়ে থাকা নয় 

বিচ্ছেদের শেষ লগ্নে পাতাটিও চুপ করে যায় 
'টুপ' শব্দে ঝরে পরে 
                               কয়েকটি যুগ্ম সময়



উৎসব-ফেরত

উৎসব শেষের চাঁদটি স্নেহভিখারি
চোখে কান্নার গন্ধ 

সমুদ্রে জোয়ার আসবে না জেনে 
বিহ্বল হয়ে উঠছে দেহ-নৌকা

একটি ফুল হয়ে ফুটে উঠলে 
শোকের বুকে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দেবো

আমাকে ডেকো না আর 
ওইসব ভ্রমর-আবেশে

সংসারে কত কী যে কাজ! 
কত কাজে আমি পড়ে আছি


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 6 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫

সন্তোষ চক্রবর্তী’র কবিতা -

∆∆
এসো আয়ুষ্কাল 



১.
বাংলা কবিতা নিয়ে ভ্রূক্ষেপহীন রাজা মেজাজেই লিখি,বর্ষা এসেছে
রাঢ় দেশে আর আবার তুলেছি পেখম ময়ূরের মতো অভাব ও
অসুখ ভুলে আলোর বলয়ে নেচে!কতদিন কতদূর আজ
কোমল তরু আছো মন আলো করে কার?আমরাও বিপরীতে
জাগতিক সমস্ত কিছু থেকে দূরে অমলিন রুক্ষতা আবার!শুধু গান
আর গানে মেতে জন্ম মৃত্যুর মাঝে কিন্নর সহজ এই বোধে
বুঁদ হয়ে অশ্রুকাতর এমন কাঙাল বর্ষাদেশে নির্বোধ ভাবি
জয় করে যাবো অহংকারী বাংলা অভিধান আপন দীনতায়!

২. 
মায়ালোকে এই আমার সমর্পণ।চতুরতা ও ছলনাহীন সহজ
এখন কবিতা কবিতা ভাবনা থেকে সরে আসি। পথের ক্লান্তি মিলিয়ে যায় পথে
সুন্দরীর হাসিমুখ। লোকজন উড়ে বেড়ায় পাখির মতো!
ভিড়ে ঠাসা দূরপাল্লা আলো আঁধারি বাস, তুমি জানো
হাজার কথাকে পাশ কাটিয়ে সমস্ত পথ ভেবেছি ঐ মেয়েটির মুখই!
তবুও কি আছে বাংলা গানে!প্রাক সন্ধ্যার মায়ায়!শেষ হতে চলল
একুশ শতক!এখনই হতে পারে যা কিছু!লাফ দেবো দারিদ্রতা থেকে
ঘুরে বেড়াবো পুরুলিয়া!সন্ধ্যা প্রদীপের মতো মেয়েটির মুখ!

৩. 

অধিভৌতিক জগৎ থেকে নির্বাসনে আরও কিছুদিন।
কিছুই দিলে না স্পর্শ ছাড়া!রমণীয় ফুলের সুবাস!
এখনও পথে পথে যে কোন সুবাসে প্রথমে
তোমার কথা মনে আসে। আয়ু থেকে চূর্ণ আয়ুর মাঝে
লিখি তা প্রাণ প্রতিষ্ঠায় যদি মরে যাই এই বোধে!
সাবেকি সকল সফল মূহুর্ত শুধুই কি তোমার!
এই গাঁ নামগানে মেতে তো পরক্ষনে নৈঃশব্দ উজাড় ওতে!
চণ্ডাল বিভা ভুলে কাঙাল পনায় দেখি ধরণী আমার
শুষে নেয় জল। অন্তর্গত কিরণ। দীনতায় মেতে উঠে!

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 5 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫

শীর্ষা’র কবিতা -

∆∆
অথ যাত্রাকথা

|
অত্যন্ত আশ্চর্যের ভিড়ে মানুষ হারিয়ে যায়। ভুলে যায় নিজের পরিচিতি। গন্তব্য। দিশা। এযাবৎ করে যাওয়া সংগ্রাম। আশ্চর্য মানুষকে শক্তি প্রদর্শন করে। তার হাতে তলোয়ার। চোখে রুদ্র। শরীরে অগ্নি। যেন আস্ত দাবানল গ্রাস করতে করতে এগিয়ে আসছে মানুষের যত বেদনাগাছকে। ছিন্ন করছে মায়ের জরায়ু। তার শাবকদের থেকে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মণিকর্ণিকা হয়ে উঠছে মানুষের পরিচিতি। গন্তব্য। দিশা। অত্যন্ত এক আশ্চর্যের তলোয়ারে জবাই হচ্ছে মানুষের নিজস্ব যাত্রাটি।

||
আশ্চর্যের চোখ নেই। মুখ নেই। কান নেই। তবুও সবই আছে। তার অদৃশ্য পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে সে জব্দ করে রেখেছে মানুষের স্বপ্নকে। উদ্দেশ্যকে। মানুষ যত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করার কথা ভাবে, এক আশ্চর্যের বিদ্যুচ্চমক তাকে পিছনের পথ দেখায়। যে পথের শেষে সারি সারি সাজানো রয়েছে শোকের দোকান। বিষাদের মেলা। মানুষ যত আলোর দিকে যাত্রা করার কথা ভাবে, মেঘনাদের মতো এক আশ্চর্যের ঝঞ্ঝা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তাকে আটকে দেয় বিষণ্ণ ঘড়ির কাঁটায়। মুখ-কান-চোখ না-থাকা সত্ত্বেও পরম শক্তিশালী ইন্দ্রিয়সম্পন্ন অলৌকিক এভাবেই জিতে যায় বারবার। তার পায়ের কাছে পড়ে থাকে মানুষের মরা নখ, হারানো অশ্রুর বীজ।

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••