Saturday 30 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


রোদ্দুর রিফাত এর কবিতা -

∆∆
মদের গ্লাসে তোমার আয়ু অতিশয় সামান্য 


সিগারেটের মাথায় নিজের ফুসফুস জ্বলছে। এস্ট্রে ভরে উঠছে নিজের ছাইয়ে। কেমন ধূসর ধূসর রঙে ছড়িয়ে যাচ্ছে আত্মা এদিকে-ওদিকে। ভেতরের মহানগরে প্রেমের তুমুল তোলপাড়। তবুও বালিশের পাশে নিজেকে মনে হয় একাকি এক মানুষ।

নিসঙ্গতার তরল লাল মদের রূপে গভীর হয়ে উঠে রাতের কোলে তবুও মদের গ্লাসে তোমার আয়ু অতিশয় সামান্য। মাংস ও চানাচুরের বাটিতে উঠে আসো তুমি। অতঃপর যখনি মাংস ও চানাচুর চিবুতে থাকি তখন মনে হয় এখন বোধহয় নিজেকেই চিবুচ্ছি।


∆∆
হারানোর ভয়

ফিরে এসো বসন্ত বনে—যেখানে ফুল ফোটছে তোমার বুকের তাপমাত্রা ডিঙিয়ে—যেখানে পাতার শরীরে তোমার নামের জিকির—সমস্ত কিছুর ভালো সম্ভাবনা ও না হারানোর ভয়। মানুষ তো হারিয়ে ই কাঁদে—এই হারানোর ভয়টুকু যদি কাটিয়ে দিতে পারি তোমাকে, তাহলে আর কি চাও? এর বাহিরে কি কিছু চাওয়ায় থাকে? 


∆∆
আমি আবারো প্রেমে পড়েছি


তবু প্রেম আসে বাসিয়া নদীটির পাশে 
স্কুলফেরা বালিকার এলোমেলো চুলে—রাজনগর রোডে...
কেমন বিকেল বেলা গড়িয়ে যায় রঙ চায়ের পেয়ালার তলে—

তবুও প্রেম আসে কিশোরী মেয়েটির খয়েরি স্কুলড্রেসে—
তার দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশার স্টেশনের পাশে

সিগারেট পুড়ে হাতে—ঠান্ডা হয়ে আসে চা 
তখন আমি বিবস তার এলোমেলো চুলে—চোখের নজরে...
কেমন অপলক তার চাহনী, ধবধবে দাঁতে রেখেছে আয়নায় কায়া

আমি ডিঙাতে পারি না তার ছায়া—
সন্ধ্যা তবুও দিচ্ছে ইশারা...

কেমন যেন ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছি তার ছায়ার ভিতর—

আমি আবারো প্রেমে পড়েছি কিশোরীর চিবুকের নিচের
গভীর ছায়ায়—যেখানে ঘুমাবো জীবনের সমস্ত রজনী।


অলংকরণ - নিশিপদ্য
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 29 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় এর কবিতা -

∆∆
লবণহ্রদ কিম্বা ক্ষত 

ভালো যে আছি এমন কিছু নয় অথচ খারাপ বলতেও পারছি না ।  
এমতবস্থায় একটু বেশি জল পান করলে শরীর হালকা হয় - একে একে বেরিয়ে যায় 
ক্ষোভ -ক্ষতি - ক্ষতের ঘন তরল । শারীরিক সৌন্দর্যের জমা দাগ মিশে গিয়ে এঁটো হয়ে যায় 
আমায় পবিত্র করে যাও কিম্বা নষ্ট করতে হলে সাথে নিয়ে নাও  
অথচ এরকম শান্তিপূর্ণতা কখনোই কাম্য ছিল না 
যে যায় সে দীর্ঘ গেলে - চলা থেমে যায় 
চলে যেতে হয় বলেই হয়ত ফিরে আসা 
কিম্বা হয়ত ফেরা না চাওয়ায় - যেতে বলা 
এত জটিল তো কিছুই কোথাও ছিল না 
নিতান্তই সরল বলেও যে কিছু হয় না তাও জানা 
অথচ রোজ দেখছি তুমি যেখানে আছো সেখানে গেলে তুমি আমার জায়গায় চলে আসছো 
বলা ভালো একটি লবণহ্রদে তুমি ভেসে যাচ্ছো কিম্বা দূরে... অথবা এসব কিছুই না!


∆∆
 মেহগনি সহযোগে 

প্রত্যাখান নেওয়ার মতো ক্ষমতা এসে গেলে আমরা বড়ো হয়ে যাই। কান্না একটি ছোঁয়াচে রোগ - দরদের চেয়ে ঢের গুণ বেশি! তো যা বলার - একটি পোষ্য কান্না। প্রভুর কাছে জিরিয়ে নিতে চায় এবং 
আরেকটু চায় নরম হতে। এই অঝোরে বর্ষা দেখার সৌভাগ্য ময়ূর জীবনকে আমি ঈর্ষা করি। মানুষের সংস্পর্শে এলে বর্ষা বাড়ে কিম্বা জলতল। লেখা ছড়িয়ে আসছে, আরও ছিটিয়ে থাকছে ধারালো আঘাত - পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এবং বন্ধুর গ্রেফতারী পরোয়ানা। 

তো যা বলা হয়েও হল না - তোমার বোঝা উচিৎ, কেন একমাত্র তুমি বললেই নৈঃশব্দ্য আসে  
সেদ্ধ মগজ ঠান্ডা হয়ে বিস্তারিত দিনলিপি গুছিয়ে রাখি

আসলে যা বলার,ক্রমশ যা বোঝা হয়ে উঠছে -
আমার সমস্যাটা কী? 
কেন এত রাগ হয়? 
কেনই বা এত গা জ্বলে? 
এত ভাবিই বা কেন?

এখন যেমন, একটি বলিরেখা বরাবর সমস্ত সরল শিশুসুলভ আলো এনে রাখে - সমস্ত জটিল বর্গীয় চিরহরিৎ জীবন আরেকটু বেশিদিন আটকে থাকুক - 
মেহগনি আঠার সহযোগে সেগুনের বাকল...  
শিলিগুড়ির একটিমাত্র অমলতাস আমার চেনা - যে দেখিয়েছিলো তার শীতঘুম পর্ব উদযাপন হয়। আমার কাছে একটি রাধাচূড়া এবং জারুল গাছ আছে। এসব চেনা গাছ ক্রমশ মিশে যায় অমলতাসের সাথে।
একেকটা জড়ুল পৃথক করে দিচ্ছে সকলকে - দাগ সংযোগে তৈরি হয় একটি পবিত্র জন্ম। এসো এবার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা নিরূপণে বসি - কিম্বা একটি জন্মবৃত্তান্ত...


∆∆
চাতক-জন্ম 

বহুদিন লেখা হচ্ছে না! বলা ভালো বহুদিন লিখতে পারছি না... 
তো যা বলার ছিলো - একটি বাড়ি! যাবো একদিন যেখানে অথবা যেখান থেকে বাধ্য হয়ে এসেছি তাদের কথা। আমি যে বাবাকে ভালোবাসি না তা নয় কিম্বা আমি যে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাইনা এমনটাও নয়। বখে যাওয়া ছোটো একজনকে বোঝাতে চাইছি না এমন কিছুও নয়! এসবের জন্য আমাকে ছুটতে হবে। ক্রমশ এসো সচন্দনে ফুল বেল কাটা ছিটিয়ে দিচ্ছি । কুঞ্জে কুঞ্জে কুউহু করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে স্বর্ণলতার মতো কেউ একজন। পেলব হলদে বর্ণের খানিক ঝিমিয়ে থাকা একটা কান্ড দেখছি - পাতলা পাতলা শিরা ছড়িয়ে আছে একেকটি পাতা জুড়ে। এরম কারুকার্য না জানি কোন সুদূর দেশের বানানো। একটি গেরুয়া পরিধান করা জীব আবির্ভূত হয়ে কতটা সন্ন্যাসী হতে পারে? অথবা আমাদের পাতি বসনে ত্যাগ কতটা ? 
এই যে দেখছি যাদের তাদেরকে তাড়াচ্ছিই বা কেন! অথবা যাদের তাড়াতে চাইছি তাদের রাখতে পারলাম না কেন?  
এরকম রাতের ভয় বহুদিন পর আসছে! লেখার মতো। এ মুহূর্তে আমার কাছে একজনের থাকা, এই চাওয়াটা আসছে। পরিবার ভীষণ ছোটো একটা কথা তাও দেখুন কীভাবে ভয় এবং জয়ে তাদেরকে খুঁজে বেরোলাম! কোথাও কেউ নেই। অথবা আমিই থাকতে পারিনি। তো যা বলার, বলাটুকু হলো - "সবাই তখন কইবে কথা তুমি রবে নিরুত্তর"- উত্তরে নীরবতা ভাঙে না নিরবতা উত্তর হয়? এ শহরে সবাই কথা বলছে, সবার আওয়াজও হচ্ছে তবুও ক্রমশ এই শহর স্তব্ধ হয়ে আছে। একটিমাত্র কিম্বা গুটিকয়েক আওয়াজের অভাবে কান তীর্থের কাক হয়ে আসছে। এ চাতক-জন্ম বড়োই করুণ! চিল-শকুন গন্ধ গা গুলিয়ে দিচ্ছে 
আমিই বা শালা কতটা নিচ্ছি নিজে??


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 28 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


 প্রসেনজিত রায় এর কবিতা -


∆∆
পাহাড় এবং তুমি


বোকার মতো পাহাড় দেখে খুশি হই 
মনে হয়,
এই বুঝি ছুঁয়ে ফেলছি ঝরণার জল, কাঠের দোতালা, নির্জন টং ঘর, 
প্রেমিক-প্রেমিকার একান্ত পাইন বন, অথবা তোমাকে...

পাতার ফাঁকে দুর্লভ সূর্যাস্ত দেখে হাসতে থাকি 
হাসতে হাসতে ঠকে যাই, ঠকে গেলেও 
আমার অবৈধ উচ্চারণের একমাত্র সঙ্গী তুমি 

আমার ছোঁয়া হয় না কিছুই!

রাস্তার সব ধুলো চোখে মুখে নিয়ে বাড়ি ফিরি
বুকের ভেতর ভাঙতে থাকে পাহাড়ি নদী, বনফুল 
চোখ লাল হয়ে আসে। মা বুঝতে পারেন, আবার নেশা করেছি। 

মায়ের চোখের ফাঁকি দিয়ে কী করে তোমায় দেখি বলো তো?


∆∆
মৃত্যু


একটা মৃত্যু ফড়ফড় করে দেহ ছেড়ে উড়ে যায় 
কেউ জনে না, কোথায় যায়?
একটা মৃত্যু মানুষের ভিতেরেই মরতে থাকে রোজ

নিকোনো উঠোন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতেই মনে হয় 
যেন ফিরে আসি 
অথচ, যদি ফিরে না ফিরি, আটকে পড়ি কোথাও 
তুমুল বৃষ্টির মাঝে--- 

কোন পাখি উড়ে যায়, কে জানে এ ঝরের দিনে?

বাড়ি থেকে বেরিয়ে সব রাস্তা নদী হয়ে গেছে 
পাড়ে পাড়ে বাঁধানো শশ্মান, বটগাছ--- কত পাখি! 

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে আরও....


∆∆
ঠিক কেমন যেন!


তোমরা সবাই কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছ 
আমি বুঝি না, ঠিক কেমন?
কিন্ত বুঝে যাই, ঠিক কেমন যেন...

কতদিন বড়ো হচ্ছে না মায়ের চালতা গাছটি 
পোষ মানছে না ভুলো বিড়াল 
বাক্সে জমে থাকা জামাকাপড় রোদে আসছে না 
কলের পারে কেমন যেন, কেউ স্নানে যাচ্ছে না 

আমি বাবার দিকে তাকালে, বাবা মা'র দিকে তাকায় 
মা উনুনের দিকে তাকালে, আমি আকাশের দিকে তাকাই 
আকাশটা যেন কেমন কেমন ঘোলাটে, 
যেন সব মেঘেরা ফেরি করা বন্ধ করে দিয়েছে 
চুপচাপ, নিশ্চুপ---

বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, তাও হল না 
খালি বারবার ভুলভাল মোরগের ডাক শুনছি!

অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 22 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩

 ভগীরথ সর্দার এর কবিতা -

∆∆
রাস্তা 

যেখানে রাস্তা শেষ হয়
সেখান থেকে ঘরমুখো হতে নেই।

রাস্তার মনের খোঁজ নিয়ে দ্যাখো
প্রতিটি শেষ রাস্তার পরেও
না-হাঁটা আরও অনেক রাস্তা থেকে যায়
আড়ালে ...


∆∆

নদী চেয়ে রয়েছে

নদীর চেয়ে থাকা নিয়ে জল বয়ে যায়।
কিছু প্রশান্ত চিহ্নের আলো
ঘুরে ফিরে আলোময় করে তোলে পথ।

পাড় বেয়ে ধীরে স্রোতের বিপরীত অভিমুখে
ভেসে থাকা দখিনা হাওয়া
আধো অন্ধকারে চুপি চুপি একা
পথ হারায়।


∆∆
অনুপ্রবেশকারী


আর একদিন তার জন্য মরব।
আর একদিন তাকে নিয়ে পাড়ি দেব নিজের ভেতর।

আর একদিন হয়তো সে আমাকে এসে বলবে
আমাকে নিয়ে তার না-ভাবা রাতগুলো
অনুপ্রবেশকারী।

এই প্রজন্মের দোহাই দিয়ে তাকে বলবো
আমি তোমাকে ৩৬৫ দিন কাছে পেতে চাই ‌।


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 21 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩


মিসবাহ জামিল এর কবিতা -

∆∆
ফারিহা ঋতি

ভালো লাগে বলে বন্ধু ফুল হয়ে চলি
এমনই আমার জীবনের অলিগলি 
ভাবি, ফুল ছাড়া এ জীবনে কিছু নেই
আমি তো লুকিয়ে আছি নামের ফুলেই

ভাবনায় ছেদ পড়ে; মনে হলো এক
কোপ দিয়ে কেউ কেটে দিলো কলাগাছ
অথচ দেখেছি আমি তোমার স্বরূপ
পুড়ে খাক হচ্ছি যেন আগর কি ধূপ!
ভিতরে হয়েছে সৃষ্টি প্রেম-ঘূর্ণিনাচ
হৃদয়ের মাঝে বিদ্ধ তাড়না-পেরেক

তোমাকে বলছি, শোনো, হে ফারিহা ঋতি,
ধুলি ঝাড় নমুনায় দূর করো ভীতি
ঢোলের মতন প্রেম ঝুলিয়ে স্ব গলে 
ফাটে না এমন তালে বাজাও নিরলে


∆∆
বিপ্লব

মানুষ, প্রেমের আঠায়
ঐক্যবদ্ধ হও
উড়া শিখো
শূন্য থেকে পাথর হয়ে নামো
জালিমের মাথার ওপরে 

স্বস্তি বের করতে হবে
নারকেল ফাটিয়ে যেলা পানি বের করি


∆∆
অনুসন্ধান 

আমি মেয়েমানুষের ভিতর দেখি
নিজেকে বেড়াই খুঁজে 
পুকুরে পলো দিয়ে
মাছ ধরার পদ্ধতিতে

মেয়েমানুষের মন-ময়দানে 
নিজের ঘরান খুঁজি
কুত্তা যেলা মরাগোরুর গন্ধ শুঁকে 
সামনে এগোয় 

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday 20 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩

দেবাশিস সাহা'র কবিতা -

∆∆
শস্যগোলা

মা রঙের মেয়ের কাছে
জন্ম থেকেই শস্যগোলা 
বয়স বাড়তে থাকলেই
ঘড়া পূর্ণ হতে থাকে শিশুখাদ্যে
বাবা রঙের ছেলের কাছে থাকে 
সেই শস্যগোলা খোলার চাবিকাঠি 
ছেলে রঙের বাবা মন পাঠায়
মেয়ে রঙের মায়ের কাছে
জোছনায় ভেজা মন
পাহাড় সমুদ্র পেরিয়ে পৌঁছে যায়
সেই শস্যগোলার কাছে
আড়ালে হেসে ওঠে ঈশ্বর...... 


∆∆
সম্পর্ক 

অপমানে পুড়ে পুড়ে
খাঁ খাঁ বাজপড়া তালগাছ
কোথাও কোনো স্নেহ নেই  প্রেম নেই
শুধু অবিশ্বাসের হাওয়া খেলা করে
পোড়া তালগাছের ছায়ায়
ছায়ার আড়ালে অভিমান জমে জমে মেঘ
ছায়ার কাছে মা এসে দাঁড়ালেই
ঝর ঝর 
             ঝর ঝর 
 ঝর ঝর
মা ও তালগাছের সে কি কান্না
শান্তি  
শান্তি 
শান্তি 


∆∆ 
ডেডবডি

একদিন   টুপি থেকে চলে যাবে গন্ধ
একদিন   ডাকনাম ভুলে গিয়ে 
   সবাই তোমাকে ডেডবডি বলে ডাকবে
একদিন 
          সবকিছু নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে
  চুমু খেতে চলে যাবে চুল্লির ভিতর... 


∆∆ 
চন্দ্রপৃষ্ঠ ও কলঙ্ককথা

চাঁদে তোমার আলতা মাখা পায়ের ছাপ
আলতা ও সিঁদুর খেলা কি
মহাকাশে মানায়
কানাই এখানে বাদাম ফেরি করে
তুমি তো এখন চন্দ্রকলা
তোমার বিন্দি জ্বলে 
আমরা চাঁদ বলি
জোছনা এসে সরিয়ে দেয় আড়াল 
মেতে উঠি মাতনে
তুমি চন্দ্রবিন্দু পাঠাও
আমি পৌঁছে যাবো
 তোমার কলঙ্ক মাখা কপালে। 
অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday 16 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২
শান্তিব্রত‌ বারিক এর কবিতা -

 ∆∆
আঙুল অববাহিকা 

১. 
দেহজ কান্নার সময়লিপি
তোমাকে জানাইনি ইচ্ছে করে
তুমি একাদশ শ্রেণীর ষোড়শী মেয়ে
খুব সহজে বিশ্বাস করবে কি 
জানালার হাড়ে মনখারাপের দুঃখজল ।
বিষাদ বাগান বুকের ভেতর
তোমায় নিয়ে ধামসা মাদল
তোমার সুরে ভাদুগান !

বিজ্ঞানের ক্লাসে নিরুচ্চার বুদবুদ
একটা বাদাম একবারই ভাঙে...

২.     
ফসল তোলার কয়েক বিকেল পর
ধাতুক্ষয় নিয়ে বসে থাকে একলা মাঠ
যেকটা দিন ছিলে কাঁটা উলের সংসারে
খুব দ্রুত পড়ে যাওয়া ডিম বীজ কেশর
জমিয়ে রেখেছি আলমারীর আতর গন্ধে।

নিছক বৃষ্টির আবিষ্কার প্রণালী
খোঁপায় গুঁজে সামনে দাঁড়াও
সময়ের গহ্বরে শ্যাওলা জমে
কাটাকুটি সাঁতারে শামুক হতে
চায় কামড়ের নেশাগুলো...

৩.       
বাইরে শুধু বৃষ্টি, ভেতরে জমে বিশ্বাস 
তোমার গান অনেক দিনের চেনা নলকূপ
মেঘ তুলে রাখো, খরচ হয় খোঁড়া নালিশ
পরজন্ম তোমাকে কৃপণ করেছে নৌকায় 

দূরত্ব সৃষ্টির কায়দায় জিভের শিল্প খোঁজো
হ্রদের কাছে নিভে গেল পোড়া সেফটিপিন

রাতের মতো স্বচ্ছ ঝঞ্ঝাটে তৃপ্তি পাও
দেখা হলেই শেষ হবে রমণ ধাক্কার শোক
গায়ের রং ভুলে গিয়ে প্রতি স্নানের আগে
থালায় ঝুঁকে পড়ে সাদা লিঙ্গের ঘুঙুর...

অলংকরণ - সুধাংশু বাগ 

Friday 15 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২
সায়ন্তনী হোড়‌ এর কবিতা -

∆∆
এবং তীব্রতা

নুয়ে পড়া রৌদ্র আরো পিছিয়ে গেলে
সহজবোধ্যতা গুঁড়ো হয়ে যায়
থিকথিক করছে বালির স্রোত
তার উপর শুয়ে আছি একটা ঘুমহীন স্বপ্ন দেখবো বলে
যেখানে রেটিনার সহস্র তীব্রতায় ভেঙে যায়
স্মৃতিপটের আধার


∆∆
 ক্ষয়- প্রাপ্তি

তোমার অবয়ব মুছে ফেলার  কোনো অবসর  নেই আমার
অথচ সম্পর্কের গায়ে শুয়ে থাকা বাসি ফুলের  নকশা এঁকে চলেছি
আরো ক্ষীণ হয়ে থাকে গোলাপের চূড়া
সময় হয়ে এলে মুড়ির মতো উড়ে যায় আমাদের কথোপকথনের রেখা

মাছের শ্বাস ঘন ঘন হয়ে এলে,
সে এক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে
যেন তোমার লেখা চিঠির আসরে আমার অপেক্ষার ক্ষয় হচ্ছে

∆∆
খসে পড়া পাতার স্মৃতি

দোপাটি ফুলের পাপড়ি মতোই আলগা হয়ে আসছে সম্পর্কের সুতো
চুপ
   আরো চুপ
এখন শান্ত হয়ে বসে থাকা পেঁচার কাছে আমার উদাসীনতা র কথা বলি

এই অবেলায় মেঘের আদরে বৃষ্টি আরো কাছে আসছে
এক একটা স্মৃতি আরোহণ-পর্ব হয়ে

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 14 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২

সব্যসাচী মজুমদার এর কবিতা -

∆∆
পড় জল…

পড় জল জলপর্ব জলেহস্মিন
পড় হস্তি হস্তির চলন চলৎশক্তি
শেখ উদ্ভিদ ভেদন ক্ষমতা ভেদ্য পর্দা
শেখ পদাধিকার প্রতিবর্ত ক্রিয়া অপরার দেহ
বোঝ দেহগন্ধ গন্ধকের খনি খনন প্রক্রিয়া
বোঝ ক্রীড়াক্ষেত্র ক্ষেত্র সমীক্ষা ইক্ষ্বাকুবংশ
দেখ বংশানুক্রমিক ক্রোমোজোম জমদগ্নি
দেখ অগ্নিভ অরণ্য দণ্ডকারণ্য আরণ্যক
শোন শ্লোকজন্ম জন্মমিথ মিথের কাহিনি
শোন অক্ষৌহিণী হীনপ্রেত প্রেতের ফুৎকার
গাও কারবালা বালার আঘাত দ্বিঘাত প্রেক্ষণ
গাও প্রেক্ষাগৃহ গৃহের হিংসা রিরংসার ভাষা
বল ভাষার কাম কামনাদেব এমতাবস্থা
বল অবস্থানভূমি ভূমির ক্ষমতা মর্ষক্ষমতা
লেখ ধর্ষগুণ গুণের সম্পাত পরীর প্রয়াণ
লেখ তোমারই হত্যা
                       করে ফেলে তোমার সন্তান…



∆∆
আমাকে দাও শুধু

আমাকে দাও শুধু রাস্তা বিস্তর 
অন্ধ মাকড়েরা যেভাবে জাল গড়ে,
আমাকে দাও তার কার্য- কৌশল
আমাকে দিও আম কাঁঠাল ভরা আলো…
হাঁটতে গিয়ে ছুঁয়ে দেখার মতো জল

এখানে অক্ষর যাত্রা করলেই
সামনে উড়ে যায় পাল্টা পরিযান
আকাশে মেরি জান,তোমারও ভাগ ছিল
এটুকু জানাবার শর্তে দিও শুধু
তোমার অনুদিত কাব্য পুস্তিকা…

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 8 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -১


অঞ্জন ঘোষ রায় এর কবিতা -

ধ্রুব 

জুবুথুবু ধোঁয়া ওঠা ঝিল এর উপর 
এক বিশাল পেল্লায় জাল বিছিয়ে রাখা আছে।
মাকড়সার নাকি মানুষের?

অন্ধকার স্বর্গ যেমনটা দেখতে হতে পারে,
ঠিক তেমন একটা 
ফ্রেম তুলে ধরবার চেষ্টা করে চলেছি আমি।

সমস্ত কবিতার বয়স সেই আদিম যুগ থেকে ধরা হয়েছে এই ফ্রেমে,

যেখানে মৃত্যু আর বিচ্ছেদ সমানুপাতিক।

এর কোনো নতুন সংস্করণ নেই,নিরন্তর,
অন্তহীন গদ্যের মতন ধ্রুব।।

অলংকরণ - অঞ্জন দাস
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Thursday 7 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -১

পিন্টু‌ পাল এর কবিতা -

নির্জনতা

১.
এখানে এই ভালোবাসা কতুটুকু, কার ? 

কোনো একদিন ভিনদেশী আয়ু 
দূরে দূরে গিয়ে 
অবিকল নৌকার মতো 
অতলে হারায়... 

২.
ভালোবাসা ফুরায়নি এখনো...

এর মাঝে নির্জনে 
কোপাই নদী আসে  

মাঝে মাঝে জলেই দেখি মুখ

∆∆
মৃত পাখি ও একটা লাঙল
           

মাটি ভেজা গন্ধ , হৈচৈ ,অথচ একে একে রাত্রি ছিঁড়ে দেয় সব  
ভেসে আসে দূরে, জাহাজ নক্ষত্রের আলো  ---
দাঁড়িয়ে শান্ত সাঁঝবেলা, খালি পা, পুব দিকে হেঁটে হেঁটে 
এক দগ্ধকাতর চাষি, ফেরে , যেন কলসী খুইয়েছে  ঘাটে

ভাঙা লাঙলের গান, বাঁকা আলপথ, কিংবা সেই ঘাসমারা কালো দু'পা --
দৃষ্টি স্থির চোখ ; খেয়েছে গুপ্তছোবল  
ছেঁড়া গেঞ্জি  কাঁধে, দ্যাখে 
 তবুও সে দ্যাখে , তাকিয়ে তাকিয়ে ---
বাঁশবনে একটা ওস্তাদ বিড়াল চুপটি করে গিলে ফেলে আলো... 

এ পৃথিবীতে বুড়ো নক্ষত্রই জানে
 ক্ষুধার্ত পাখি আর লাঙল নতুন করে বাঁচতে চেয়েছে বারবার

∆∆
বান্ধবীগাছ


রোহিনার সাথে আমার প্রেমের 
সম্পর্ক ছিল না কোনো দিন 

মূলত সমান্তরাল দাঁড়িয়ে থাকা 
হিজলগাছের মতো 

মাঝে মাঝে ফুল ধার নিতাম ! 


∆∆
রেলওয়ে ট্র‍্যাক 


কাগজকে টুকরো টুকরো করে 
কেউ ফেলে দিয়েছে রেলওয়ে ট্র‍্যাকে

স্টেশনের বাঁপাশে দাঁড়িয়ে থাকা 
জনা তিরিশ লোক ভাবছে 
---পরিত্যাক্ত হিসাব কিংবা মন খারাপ

তারপর গণদেবতা এক্সপ্রেস 
বিশুদ্ধ হাওয়ায় 
টুকরোগুলোকে পার করে দিল আরেকটি ট্র‍্যাক

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••




Wednesday 6 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব-১

সৌরভ বর্ধন এর কবিতা -

নক্ষত্র

বিদ্যুৎহীন রাতে আমি শুকতারার জন্য
হলদেটে গরদের মেঘ
জ্বেলেছি ঘোরের কোণে
জালার মধ্যে রেখেছি মূকপাখি -----
সে বাণিজ্য জানে না, শব্দও জানে না

সার্থকভাবে এই সুযোগ নিয়ে
নির্বিকার নাড়ীটির ভিতর প্রতিরাতে
একটু একটু করে নক্ষত্র স্থাপন করেছি

আর সেই চিক্কন স্তম্ভের আলো পড়েছে সারাগাঁয়ে


পাখিপুঞ্জ

মাঝির জন্য অপেক্ষায় বোরোধান স্থির হয়ে আছে
হাটকানো ক্ষেতের ভেতর বহু কোমর জলের তলায়
২৫ হাত পানির কৃষিকাজ, কৌড়ির বুকের মধ্যে ঢেউ
আমি দেখিনি বলেই এখন চাঁদরে পোহায় পাখিপুঞ্জ
বিছানার গায়ে যত দ্বন্দ্ব -- লেগে আছে ব্রাহ্মী শাকে

অথচ একদিন নদীই চূড়ান্ত নেমে আসবে দেহে ----
উড়ন্ত পাখির পা হয়ে      পা গুটিয়ে রেখে প্রকাশ্যে


উদান দহন

কিছুদিন কিছু দীর্ঘ দহন শেষে
এই কায়াদিঘি ভরে যাবে অরণ্য হাওয়া জলে
উঁচু মেঘ, আরও অটুট জলীয় ভারে
তবু সীমাহীন হবো স্বাদ
সংকীর্ণ পোশাক পড়ে আছে খালেবিলে
                 স্বতোৎসারিত ভাষার ছায়ায়
                 বসে আছে দীর্ঘক্ষণ

আর দগ্ধ হয়ে ছুটছে নয়ন ঈষৎ নয়নে, সমভিব্যাহারে

তবুও ভ্রান্ত নির্জনতা, ভ্রান্ত আহতের শয়নকাল
যেন নিসর্গভয় ঝেড়ে ফেলে, রমনব্যথায়
ফুলের পাহাড় সে বয়নের মতো তুলে ধরে
আঁকড়ে ধরে ঘুম ও জীবনের কুহু কুহু ডাক ------
উদান ভাসে চিৎকারে ----- সহায় ও সহায় তোমার
আমি পেয়েছি তোমায় গাঢ়তম অন্ধকারে...

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌

____________________________________________________________