কবি অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস এর কবিতা-
১।। স্বাগতম, রাজা
••••••••••••••
আসবে রাজা
শহর সাজা
রাস্তাঘাটের পাল্টা ভোল।
শিল্পী ডেকে
ছবি এঁকে
প্রাচীরগাত্র সাজিয়ে তোল।
যে পথ দিয়ে
হুটার নিয়ে
যাবেন রাজা, তার পালিশ
হোক জবর।
অন্যতর
রাস্তা খারাপ? কার নালিশ?
মিষ্টিমধুর
ক্ষীরের পুর
রাজার মুখে ধর তুলে,
প্রজার দল
খাক না জল
যাক না ভাতের স্বাদ ভুলে।
২।। লকডাউনে
••••••••••••
বেশ তো আছি লকডাউনে।
ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড গুনে
দিনরাত্তির পার হয়ে যায়
বন্দী থেকে ঘরের খাঁচায়।
লকডাউনে বেশ তো আছি
মরার ভয়ে দিব্যি বাঁচি।
আজকে বাঁচা, কাল কী হবে ?
আর কতকাল অমর র'বে?
বেশ তো আছি লকডাউনে
খবর খেয়ে, খবর শুনে,
ফোনস্ক্রিনে দু'চোখ এঁটে
দিব্যি সময় যাচ্ছে কেটে।
লকডাউনে বেশ রয়েছি
সঙ্গীবিহীন, সয়েই গেছি।
বই হয়েছে বন্ধু এখন
তাতেই নিবেশ করেছি মন।
লকডাউনে কাটছে খাসা
সার করেছি মায়ের ভাষা।
বাংলা বলি, বাংলা শুনি
কল্পনাজাল, তাও তো বুনি।
বুনতে গিয়ে এই তো কেমন
তৈরি হ'ল শব্দবুনন।
খারাপ কি এ? তোমরা বোলো -
সব মিলে যা তৈরি হ'ল!
৩।। বুদ্ধিজীবীর রঙ্গকথা
•••••••••••••••••••••
ভারতবাসী শুনুন সবাই শুনুন দিয়ে মন
বঙ্গবুদ্ধিজীবী-রঙ্গ করি যে বর্ণন।
(এরা) চিত্র আঁকে, কাব্য লেখে, কণ্ঠগীতি গায়
কেউ বা আবার চাকরি করে নামী পত্রিকায়।
কেউ আইনের ব্যবসা করে, কেউ বা শুধু নেতা
সিনেমা’র কেউ অভিনেত্রী, নাট্য – অভিনেতা।
কারও মুখে শোভা করে ধবলকৃষ্ণ দাড়ি
কেউ বা রাখেন বয়কাট চুল, কেউ বা পরেন শাড়ি।
কেউ বা রোগা সিড়িঙ্গে, আর কারোর মাথায় টাক
লম্বা দাড়ি ঝুলিয়ে কেউ এঁকেছিলেন কাক।
গোঁফ-দাড়িহীন কারো বা মুখ চকচকে নির্লোম
কাব্য লিখে পরিয়ে দেন ত্রিশূলে কন্ডোম।
কারোর গলার মালায় ঝোলে পোড়ামাটির সরা
এরাই নাকি বুদ্ধিজীবী বঙ্গবসুন্ধরার।
এবার এদের গুণের কথা খোলসা করা যাক
রাজ-প্রসাদের আশায় বাঁচে এসব তীর্থকাক।
বামশিবিরে কখনও রয়, স্বভাব যে বিদঘুটে
ক্ষমতাঘ্রাণ পেলেই এরা দক্ষিণে যায় ছুটে।
যারা ছিল দু’দিন আগেও বৌদ্ধ-অনুগামী
তারাই হঠাৎ মায়া’র শরণ নিচ্ছে দিবসযামী।
গাড়ি-বাড়ি-ক্ষমতা পায় বদলালে এই ভোল
অনায়াসে মা-মাটি দেয় স্নেহভরা কোল।
সংখ্যালঘু তোষণে এই বুদ্ধিজীবী-যূথ
রং ভুলে হয় অনায়াসে ভাই তারা মাসতুতো।
এদের কাছে সংখ্যাগুরুই যত দোষের মূল -
বাকিরা সব যা করে তা সকলি নির্ভুল।
সংখ্যাগুরু অপানবায়ু ত্যাগ করলেই, তারা
তুলবে আওয়াজ, ‘ফন্দি এটা সংখ্যালঘু মারা’।
প্রাপ্ত টাকার মূল্য ফেরত দিক বা না-ই দিক
অমনি শুরু হবে ‘অ্যাওয়ার্ড ওয়াপস’-এর হিড়িক।
কিংবা নিয়ে হাতে হাতে মোমের বাতি-শিখা
আমজনতার চোখে দেখায় শান্তি-মরিচীকা।
অন্যদিকে, এদের এমন মহত্তর গুণ –
মাফ করে দেয় সংখ্যালঘু’র সাতশো সাতাশ খুন।
তখন মুখে রা’ কাড়ে না ‘কিন্নর’ এই দল
তখন তাদের ‘ঢোলক’, ‘তালি’ খোঁজে সাগরতল।
তখন তারা মূক ও বধির, নিশ্চিত নির্ঘাত
গর্তে ঢোকে তখন এসব সরীসৃপের জাত।
৪।। আত্মসমর্পণ
•••••••••••••
ক'দিন পরে এই আমি আর থাকব না,
মাটি-মা'কে মা বলে আর ডাকব না।
ফুরিয়ে যাবে নির্ধারিত পরমায়ু
করোনাতে বন্ধ হবে শ্বাসবায়ু।
আজ থেকে হোক শুরু শেষের দিন গোনা।
ষাট পেরিয়ে এই তো এলাম এ বছর,
শেষ হয়েছে বেঁচে থাকার শখবহর।
বিশ্বপিতা ! আমার শেষের ইচ্ছে এই
তোমার কানে সংগোপনে জানিয়ে দেই -
সুস্থ রাখো সবার নবীন বংশধর।
৫।। হায় ধর্ম !
••••••••
মহামারী ভাইরাসে পৃথিবী যেখানে আছে ভয়ে,
প্রতিষেধ খুঁজে খুঁজে বিজ্ঞান যেখানে দিশেহারা -
শিয়রে মরণ নিয়ে ধর্মখেলা করে যাচ্ছে কারা,
কারা বলছে নিরাময় খুঁজে পাবে উপাসনালয়ে ?
দৈহিক দূরত্ব শুধু রোগমুক্ত থাকার নিদান -
একথা জেনেও যারা জমায়েতে জয়ধ্বনি করে,
অন্যকে মারে তো বটেই সেই সঙ্গে নিজেরাও মরে,
মৃত্যুবীজ বুনে চলে হঠকারী ধর্ম-অনুষ্ঠান।
আদিম যাপন-বাঞ্ছা সংস্কার ও যাদের নীয়ত,
যারা ফিরে যেতে চায় শত শত বছর পিছনে,
পোশাকে-আশাকে কিংবা তৎকালীন ধর্ম-আচরণে -
সভ্যতার কাছে তারা কোন মুখে দেবে কৈফিয়ত ?
এখনও যদি না ধর্ম বুঝে ওঠে কোনটা সঠিক
ধর্ম যদি পিছু টানে, যদি-না সে হয় অগ্রসর
যদি ধর্ম-আচরণে পোষা হয় মৃত্যু-সহচর -
তাহলে সে ধর্ম আজ পৃথিবীকে কৈফিয়ত দিক।
অলংকরণ - ইন্দ্রানী পন্ডা
""""""""""""""""""'''"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
No comments:
Post a Comment