Wednesday, 5 May 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৭

মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া’র কবিতা-








১.
∆ ছায়া ∆



উলু দিল ধানদুব্বো
শাদা থোড়ের মত ভারি পায়ের গোছ দেখে
আরশির মাথা ঘুরছিল
আয়না আয়না বলে ডাকে কেন ওরা?
রাগ ধরতো বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতাম প্রায়ই
বুঝতো না কেউ অবশ্য
বরাবরের মতোই মোটা শেকলে
আমার ছায়া বাঁধা থাকতো কাচের গায়
শরতশশী বলে ঠাকুমার ছবির সঙ্গে মেলাতো সবাই
রাঙা এসে ঠাট্টা করত খুব
শেষবার ফিরলাম যখন,ওরা সন্দেহ করে বসলো
কাচের ওধারে লম্বা সরু রাতকে
গর্ভিনী জেনে ভিড় করে এল  অসময়
রূপোর বাসনে পোড়া শোলমাছ বেড়ে দিলে
কানকোর লাল দেখে বমি হয়ে গেল সবুজ তাঁতের শাড়ি,
ফুলকারি রেকাবিসমেত মেয়েলি হাসির সাধভক্ষন
খন্ড খন্ড আনন্দ দৃশ্য বেরিয়ে এল টক জলের সাথে
বাব্বা! তলপেটের এই ঘূর্ণি ঢাকা যায় বলো?
আঁচল সরাতেই টানা নথে জল ভেঙে গেছে
ফোলা পেট নিয়ে ঘিরে আছে সধবারা,
হাতে খেজুরফুলের শরবত, নেশা হয় খেলে,
রক্তাভ চোখে দেখি আকাশের নীল দর্পনে
সন্ধের গায় গায় বেঁধে রাখা স্বর্ণ গোধিকা
পোয়াতি রাতের ভারি ঠিলে উল্টে প্রসব করেছে
লালাজড়ানো  হাজার হাজার মরা প্রজাপতি
আয়নায় ফুল ফুটেছে…!





 ২.
∆ রাস্তা ∆



হাততালি থামতেই গুঞ্জন শুরু হল
কাঠের সিঁড়ি ধরে নেমে এলেন যখন
কোনাকুনি আলো এসে পড়লো
চশমার ঘোর কেটে গেল তক্ষুণি
ফাঁকা সিটগুলোও ভরে উঠলো ফের
হ্যাপি এণ্ডিং পছন্দ যাদের,আজন্ম বৃষ্টি দ্যাখেনি
বাতিল টিকিটের সাথে রেখে দেয় অমর চিত্রকথা,
গ্রীষ্মকাল,ডায়ানা পামারের সোনাবেলা..
বনফায়ার ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে  চুল্লির ধারে
জানেনা ছেড়ে দিচ্ছে দূরপাল্লার গাড়ি
মোরামের রাস্তা,নিচু স্টেশনবাড়ি
অপেক্ষায় বাঁধানো এক কৃষ্ণচূড়া
ঘুমের বার্থ থেকে একটু দূরেই
থেমে আছে শ‍্যাওলার ভাঙাঘাট
শুধু কপ্পুর জ্বালানো প্রদীপ ভেসে যাচ্ছে একলা
সরু তেলের বাতি হাতে এ গল্পও তবে রওনা হল
পাথুরে জলের চিরপথ...
পৌঁছবো বলে যেখানে শুরু করেছিলাম আমরা....






৩.
∆ মেরুন ডায়েরি ∆



বেঁচে থাকার উপায় খুঁজতে হবে আবার
ঘুমের বড়ি,শস্তা পার্লার আর লেবুজল
সন্ধেয়  হাঁটাও জরুরি নাকি
গতবারের চিঠিতে লেখা সমুদ্রঝড়
এবারেও আসবে না নিশ্চই
হালকা সুতির পোশাকে বেড়াতে যাবো আবার
সুস্বাদু ঘুমে শুয়ে পড়বে রাত
শুধু ফেরার সময় মনে করে
ডায়েরিটা নিয়ে যেও  তুমি
জাদু জানে মেরুন ডায়েরি,
নাম ধরে তিনবার ডাকে যেই
নিশি হয়ে ধারালো চুল খুলে দেয় অন্ধকার
শাদা বুকে মায়া এক আলো
উন্মাদ কথামালা খলবল জড়ায় এমন
মগজে ঝাঁক বেঁধে মৌমাছি ওড়ে
ধোঁয়া ওঠে তাবৎ মৌচাক ফুঁড়ে
মাথাভর্তি মধু আর মোম নিয়ে
লেখাদের ঘুম আসে বলো?
অক্ষর ঘুমোয় কখনো?





৪.
∆ চশমা ∆



দম আটকে আসতো বিকেলের
দূরত্ব বেড়ে গেলে খা খা করতো চশমা
শুরুতেই যার ঠিকানা হারানো এক চিঠি
বাতিল খামে লেখা ক’লাইন ছলছল করে
কেমন আছেন, দেখিনি কতদিন..
মামুলি কথার ফাঁকে মেঘ করে অমনি
আসলে জুলাইয়ের বুনো ঝড় সে বলতে চাইতো
ভুলে যাওয়ার আগেই সে বলতে চাইতো খুব
আর মনে পড়তো না
অথচ বিবাদ নাই কোনও
মেঘ ফুঁড়ে চাঁদ উঠলেই স্বচ্ছ নেটের মতো চাকভর্তি আলো
নীচে তড়বড় করে চেনা মুহুর্ত...
উড়তে চায় বলে হুহু করে ওঠে
লিখতে গেলে যেমন হাত কাঁপে বড্ড
ত‍্যাড়াব‍্যাঁকা লেখা থেকে মৌমাছি উড়ে যায়
দ‍্যাখে চশমা নিজেই আলো কমিয়ে আনছে
মজাদার ভঙ্গি করছে ছায়া
টাটকা যুবকের হাসিতে দম আটকে আসে বিকেলের
শুধু চশমা থেকে রোজ জল পড়ে বলে
গোধূলির আবছা তাকে খুলে ফেলে অন্ধ হয়ে যায়…!





৫.
 ∆ পাথর জন্ম ∆




বালি খুঁড়তে খুঁড়তে আমরা তুলে আনলাম
অচেনা শহর.. তার রাস্তা
শিলাখন্ডে চাঁদ উঠল যেদিন
এদিক ওদিক ছড়ানো ভুল থেকে তুলে আনলাম
স্পর্শকাতর আয়না, মায়াবী আঙুলছাপ
নমুনা সংগ্রহের একেবারে নিচে
থমথমে প্রাচীন সুড়ঙ্গের অভিমান
নর্তকী ও দীপদান ঘিরে তখনও উড়ছিল
ভাঙাপ্রাচীর,জোছনার খিলান,নগরের প্রধান দরোজা..
এ শহর বৃষ্টিহীন !
কাত হয়ে পড়ে আছে কলস ও গনস্নানাগার
নাচের মুদ্রায় পাথরের নারী পেরিয়ে আসছিলো
তামাটে দিগন্ত ও ধুধু অবকাশ
ফাঁকা চোখে সে তুলে ধরছিলো জলপাত্র
টর্চের আলো পড়তেই খসে গেল চোখ
ধুলোর আস্তরে চাপা পড়ে আছি কত অশ্রুযুগ
মরা নদীখাতে এত রক্তমেঘ দেখে হতবাক তুই
সিঁড়ির পর সিঁড়িতে মৃত প্রজাপতির স্তুপ,
চুলে জড়ানো হাড়ের মালা  ডিঙোতে গিয়েও
মনে পড়ছে না, তোর মনে পড়ছে না
তোর জন্য সে জন্মেও অপলক পাথর ছিলাম?





শিল্পী- প্রতাপ হালদার


০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

No comments:

Post a Comment