Tuesday 13 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৪

দিশারী মুখোপাধ্যায় এর কবিতা -

নিজেকে অপ্রিয় করে 
 
নিজেকে অপ্রিয় করে তোমাদের চোখে 
দাঁড়িয়ে রয়েছি এই অনতিদূরেই ,
বুঝে নিতে চাইছি বন্ধু কীরকম লাগে এই খেলা ।
কতটা হাতুড়ি ঠিক সহ্য হয় আমাদের সামান্য প্রেমে ,
রোষের কামারশালে কতক্ষণ টিকতে পারে প্লাস্টিক-মন।
আমার শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বেড়াই ,
দেখতে চাই অতিষ্ট হওয়া কত দ্রুত শিখে নিতে পারো।

এত এত রঙ আছে পৃথিবীতে 
শুধুমাত্র সফেদ সাজ পছন্দ হয় না আর , 
কালোকেও একবার সাধ হয় আলিঙ্গন দিতে ।
আমার কর্কশবাক্যে নাইই যদি খুশি হও  নাইই হবে,
অখুশির বিভা লাগলে 
তোমাদের জামার প্রিন্ট কীরকম হয় , জানা হবে ।

আমি যদি একবারও বিষদাঁত ব্যবহার করি , দেখা হবে 
মৃত্যুর ঠুনকো ঘায়ে 
তোমাদের অমিয়-রূপ কতটুকু টেকে ।


চলো সূর্যের সঙ্গে 
 
চলো , সূর্যের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আসি ।
অস্থির ভেতর যত জড়তা ,দুর্বলতা ,অভিমান সঞ্চিত হয়েছে ;
তার কাছে বিস্তারিত বলি সেইসব।

কতদূর যাওয়ার কথা ছিল আমাদের এই মানুষ-জীবনে,
কতটুকু যাওয়া হল,
বাকি রয়ে গেল আরও কত বেশি ,
সেইসব নিয়ে সফেন আত্মস্মৃতি লিখে লাভ নেই।
চলো, তাকে সব খুলে বলি।

সর্বাঙ্গ দিয়ে যদি তাকে করি আলিঙ্গন ,
সে তার উষ্ণতা দিয়ে আমাদের সব অপারগতা 
ছাই করে দেবে ।
আর কোনো যন্ত্রণা, কোনো অনটন 
আমাদের ভাঁড়ারের বাড়ন্ত সামর্থ্য নিয়ে 
ব্যঙ্গ করতে সাহস পাবে না।

চলো, সূর্য-সঙ্গমে কিছু রতি 
যথাযথ ব্যবহার করি।


ওহে নিশ্চয়তা ,আর কতদূরে 

ওহে নিশ্চয়তা , আর কতদূরে তুমি ঘাপটি মেরে আছ ?
পৃথিবীর সব পথ হাঁটতে হাঁটতে শেষ হয়ে এল ,
ঠিকানা কি কোনোদিন পরিচিত হবে না আমার সঙ্গে 
এ জীবনে ? 

মধ্যাহ্নে ছাদের কার্নিশে বসে 
বিজাতীয় পরিচয়হীন দুটো পাখি 
পরস্পরের কথা নিজ নিজ বোধ দিয়ে বুঝে নিচ্ছে ঠিক ,
তাদের তো ধরা দাও তুমি সহজেই আপন গরজে।

ভাষা দিয়ে তৈরি হয় আমাদের যত ভালোবাসা ,
ভাষার অভাবে তারা মারা যায় ইতিহাস জুড়ে ।
এই নিয়তির অন্য কোনো অন্যথা হবে কি কখনো ,
নিশ্চিত বাড়ির খোঁজ আসবে কি আমাদের কাছে? 


তোমার সমস্ত কথা  

তোমার সমস্ত কথা হানা দেয় আমার বাড়িতে ,
আমার উঠোনে যত গাঁদা কসমস - এই শীতে ,
তাদের পাপড়িতে লেগে থাকে ।
গরম কফির ছোঁয়া তোমার দৃষ্টি ছুঁয়ে ফিরে আসে বলে 
আমার হরমোন-তন্ত্র রম্য হয়ে ওঠে । 
এই কথা জানা হয়ে গেছে বলে 
অতিরিক্ত দেমাক দিয়ে নিজেকে অমিল করতে চাও।
তোমার কথারা কিন্তু ,যা যা তুমি বলেছিলে একসময় ,
জলের বিন্দুর মতো ভেসে ভেসে ফিরছে হাওয়ায় ;
তারা ওই দেমাকের কথা ভেবে নিরস্ত হয় না কখনও।

তোমার সমস্ত ঘ্রাণ লেবুর পাতার দেহে 
যেন ক্ষীর , নাচে কাফি-স্বর হয়ে ।
তোমার সমস্ত ছায়া 
উজ্জ্বল আলোয় ভরে থাকে ।


জানি এটা বিষ 

জানি এটা বিষ ,
মুখে নিলে মৃত্যু অনিবার্য।
তবুও, সামান্য মৃত্যুর ভয়ে 
বিষের মোহিনী-রূপ ,
মধু-স্বাদ 
অস্বীকার করতে পারি না ।

জানি ঢি-ঢি হতে পারে ,
সমাজে ,সভায় 
পদচ্যুতি হতে পারে 
সংসারের দাক্ষিণ্য প্রাপ্তি থেকে ,
তবুও গহ্বরে ঝাঁপ 
না দিয়ে পারি না ।

জানি ওটা শব্দভেদী ,
বুকে এসে বেঁধে ।
তবুও জলের সঙ্গে মিলনের কালে 
শীৎকারের শিল্পরূপ 
না এঁকে পারি না ।

ছবি- মেহবুব গায়েন
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment