Saturday 26 October 2024

মুক্ত গদ্য

কৃষ্টি কেতাবী পর্ব 

প্রীতিলতা চাকী নন্দী’র মুক্ত গদ্য 

প্রকৃতির কোলে যাপন চিত্র 
     

নিবিড় যাপন মানে এক অনন্য ভালোলাগা তথা ভালোবাসা।নগর জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে কখনও  কখনও একাকীত্ব বড় তৃপ্তি দেয়,বেঁচে থাকার রসদ জোগায়।নিভৃতে নিরালায় অতিবাহিত সময় পুুুরোটাই অনুভূতিময়।তেমনই এক যাপনের নাম বক্সা জঙ্গল আর  তার  পাহাড়।
সমতল থেকে উঁচুতে উঠতে উঠতে পৌঁছে যাই পাহাড়ি জনপদে,দূর থেকে নিজের শহরটাকে অচেনা মনে হয়।একাত্ম হয়ে যাই পথের দুধারে গাছ-গাছালি,পাহাাড়ি মানুষ  জন ও পশুপাখিদের সান্নিধ্যে।তাদের অবাধ স্বাধীনতা ----যেখানে তুমুল কোলাহল নেই,শান্ত স্নিগ্ধ প্রকৃতির পাশে দুরন্ত জিনিসকে নেওয়া যায়।পাখিদের কলকাকলির পাশাপাাশি  আতিথয়তা একরাশ মুুুুগ্ধতা আনে।পথ চলতে চলতে পৌঁছে যাই 'বক্সা দূূর্গ।'ইতিহাস জড়়া়নো সেই স্থানের ভগ্নদশায় মন ভারাক্রান্ত। জরাজীর্ণ দেওয়াল গুলোতে কান পাতলে শোনা যায় বন্দীদের ফিসফিস কানাকানি।ঘোড়ার পায়ের শব্দ,বন্দুক আর প্রহরীদের করুুণ ইতিহাস বলে দিয়ে যায়। দেশের জন্য ভালোোবাসার টান কতটা উৎসর্গীকৃত শহীদ স্মৃতি  সৌধ  তার প্রমান বহন করে চলেছে।
আরো বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে পৌঁছে যাই দূরে আরো দূরে ,অন্য জগতে ----যার নাম 'লেপচাখা'।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষগুলোর কি অপূর্ব অভ্যর্থনা।সত্যিই হারিয়ে যাবার মতন পরিবেশ।রাতের বেলার ছবিটা পুরোটাই ভিন্ন।নিঝুম রাতের শূন্যতায় মাথার উপর দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদ তার সৌন্দর্যের পুরোটা উজার করে ঢেলে দিয়েছে।চারপাশের পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে বয়ে চলেছে নদী,পাহাড়ের ঝর্ণা কল্ কল্ ধ্বনি----নিদারুণ দৃশ্যের ছাপ ফেলেছে।বাতাসে ভেসে আসা শীতল তৃপ্তি ,দূর থেকে দেখা যায় অসংখ্য আলো।রাত বাড়লে শূন্যতা বাড়ে।পাহাড়ের সারমেয়দের চিৎকার আর ঘরগুলো থেকে বাচ্চাদের কান্নার শব্দে এক মন কেমন করা পরিবেশ।
নাগরিক সভ্যতার বাইরের জগতে দূষণ মুক্ত প্রকৃতি দুহাত বাড়িয়ে বন্ধুত্বের আবদার রাখে।আর সেই আবদারেই বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে  করে।রাত কাটতেই ভোর হয়,একটা নতুন সূর্য -‐-আরেকটা নতুন দিনের আবির্ভাব। যত্রতত্র বিনা পরিচর্যায় ফুটে থাকা নাদুস নুদুস রঙিন ফুলগুলো স্বাগত জানায় অবলীলায়। মুগ্ধ হই তাদের সম্ভাষণে।কোথাও এতটুকু দু:খ এসে তাড়া করে বেড়ায় না।প্রকৃতির উন্মুক্ত দরবারে ক্লান্তি নেই,ক্ষেদ নেই,ভালোবাসায় ভরপুর।অপূর্ব  সৃষ্টির আড়ালে থেকে যায় অনন্ত সুখ।তাদের কঠোর যাপনে বিস্মিত হই। তবুও এতটুকু ক্ষোভ ধরা পড়ে না।রাতের মায়াবিনী চাঁদের নৈসর্গিক রুপে স্নাত হয় বিশ্বজগৎ।দরাজ প্রকৃতির কোথাও একবিন্দু খামতি নেই।গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত -বসন্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে প্রকৃতির কোলে।   

 

ছবি- মেহবুব গায়েন 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment