•••••••••••••••••
কবি সুধীর দত্ত এর কবিতা -
১।। শুধোলেন শুকমুনি
সহস্র তক্ষক হেন ভাইরাসগুলো
ছুটে যাচ্ছে বেথুয়াডহরি।
ওখানে হরিণ আছে, শিকারী কুকুর আছে, ডাকবাংলো আছে।
মুনি শুক জিগ্যাসা করলেন,
তোমার কি বাঞ্ছা আছে কোনো? কোনও আহ্লাদ?
চুলের ভিতর তার বিলি কাটছে বাতাসের নরম আঙুল।
মস্তিষ্কের ভাঁজ খুলে
সে খুঁজে চলেছে আত্মঘাতী
ফুলের তোড়ার মধ্যে অপূর্ণ ইচ্ছারা গোপনে
গুটিসুটি মেরে আছে কিনা ?
মুনি শুক বললেন, খোঁজো----
আকাশ তোলপাড় করো , নক্ষত্রকলোনি যাও ,
প্রেতনদী পার হয়ে যেখানে জটলা করছে
অসমাপ্ত পঙক্তিগুলো, দ্যাখো-----
প্রিয় নারীদের কাছে বসন্তদিবসে
খুঁজে দ্যাখো,
বাঁচারা বাঁচার মতো বেঁচেছিল কিনা।
।
যে বাদুড় দিনমানে হেঁটমুণ্ড ঝুলে ছিল অশ্বত্থের ডালে
রাত্রিকালে সে এল গোপনে ডানা মেলে।
শুধোলেন শুকমুনি,
তোমার তো কোয়ারেন্টিনের দিন শেষ হয়ে এল ;
আর কিছু ক্ষণ পরে সপ্তম দিবস।
দংশন করবেন নাগবংশীয় কোভিড।
তুমি কি প্রস্তূত ?
তোমার কি পিছুটান, শোকতাপ, কামনার রাঙা দাহ আছে ?
।
জানালায় শিস দিচ্ছে দোয়েল, শার্সিতে
কবুতর ঠোঁটটি তার সংগিনীর ঘাড়ে
রেখেছে কোমলভাবে। তাতঃ !
এখনও প্রস্তুত নই, গ্লোবাল গাঁয়ের কথা, মেধীস্তম্ভ ঘিরে
কীভাবে ভ্রমণ করে জ্যোতিশ্চক্র? বলো
কোথায়-বা জম্বুদ্বীপ? করোনাকালেও
অজনাভবর্ষে কেন দেবতারা জন্মাতে চেয়েছেন?
।
মুনি শুক দেখলেন, চতুঃশ্লোকী ধীরে আলাপে বিস্তৃত হচ্ছে। আর
দংশনে উদ্যত ফণা সম্মোহিত, স্থির হয়ে আছে।
২।। ঋষি অথর্বানের আজ্ঞায়
মশক পাহাড় ছেড়ে তুমি তো কাঁকড়াদাঁড়া গিয়েছ ক'বার।
একটি বার বলে দ্যাখো ,কাঁকড়াটি দাঁড়ার বিষ তুলে নেবে, ছত্রাকের মতো
যা বিস্তার করছে বংশ ,ঘিলু খাচ্ছে, ফুসফুসের স্বাদু মাংস, সুকোমল প্লীহা ও যকৃত।
##
সন্তানের কাতরতা তাঁকে বড়ো বিহ্বল করে
##
আমি কি পিতার সংগে এক, তুমি বিশ্বাস করো?
তা যদি বিশ্বাস কর
মুহূর্তে শিথিল হোক সকল সংশয়-গ্রন্থি,
ভাঙুক মাটির ঘট, এই বিদেহ আমি
খুলে ফেলছি পঞ্চকোষ, অন্নদেহ, আতিবাহিক,
বিশ্বাস সত্য হোক, অন্ধ যেরকম ফিরে পেয়েছিল চোখ,
যেরকম ত্বক থেকে নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছিল কুঠ,
তোমার দৃষ্টির নীচে
ভবন্তু সুখীনঃ সর্বে, সন্তু নিরাময়।
##
এই নাও আয়ু তবে, নাও ক্ষুদ্র জীবৎকাল, আয়ু।
শান্তি, শান্তি, ওঁ শান্তি ; ভেদ করুন অগ্নি মিত্র বায়ু ও বরুণ
ষাটকৌশিক এই দেহ,পঞ্চ প্রাণ ; ঋষি অথর্বানের আজ্ঞায়
ধায় বাক, ব্রহ্মবাক৷ ; ওষধিসকল
##
যাও শুশ্রুতের কাছে , হে শুশ্রূষা ওসিমার্টিনিব *
তৃতীয় পুরুষে জন্ম
শোণিতপ্রবাহে ধাও , ধাও করোটির নীচে,
ধংস করো, শুষে খাও
ত্বরিতে সমূহ কূট বিষ -------
*এ-টি একটি আধুনিকতম টারগেটেড থেরাপি
৩।। তিনি আসবেন
এখন সময় হল বুঝি ! কিংবা আজও হয়নি সময়।
ব্রততীকে ভালোবেসে অশ্বত্থ তরুটি ক্রমাগত
ব্রততী হয়েছে !
কে কার স্বরূপ পাবে, ঊর্ধমূল অধঃশাখ আমি
চাইনি অসঙ্গ শস্ত্র, চাইনি ইঁদুরগুলি কেটে দিক অবান্তর মূল।
কেননা অপ্রাসঙ্গিক বলে কিছু নেই। শুধু
প্রকরণ-আঙ্গিক বদলায়।
তিনি আসবেন। এবং
এই সেই গর্ভকাল, আমাদের কোয়ারেনটাইন।
কে-বা আনন্দ ছাড়া বাঁচতে চেয়েছে ?
পৃষ্ঠারা হলুদ হয়ে গেছে, তবু শৌনক ঋষি
ভুবন সোমের মতো পৃথিবীকে আশ্চর্য এক কবিতা জেনেছেন :
দেবতার এ-কাব্য মরে না , মাত্র তার জীর্ণ শরীর বদলায়।
এই কি তপস্যা নয় ? পৌনঃপুনিক
সহন করেছি তাপ, ঝরিয়েছি মেদ আর অভ্যাসতাড়িত ভূভার।
কল্প যায়, কল্প আসে, জলজ শৈবাল ক্রমে স্থলবাসী ; উষ্ণ,স্যাঁতসেঁতে মাটি, জলে ও কাদায় সেইসব
কনিফার দানব বৃক্ষেরা শুয়ে আছে , আর মেসোজয়িক প্রানীরা
স্তন্যপান করে চলে গেছে।
আমিও সস্নেহে
বুকের পাঁজর ফেঁড়ে হিমবন্ত, আন্দিজ ও রকি,
মানবের জন্য ফুল, ফলের গোপনে বীজ লুকিয়ে রেখেছি।
চতুর্থ তুষার যুগ এল।
এখন সময় হল তার , কিংবা আজও হয়নি সময়।
ব্রততীকে ভালোবেসে তরুটি কি ব্রততী হয়েছে ? নাকি
ব্রততী অনেক দূরে থাকে ?
যে উল্লাস উপচে পড়ে আনন্দের প্রচুরতা থেকে,
আমি সেই আদি ক্ষেত্র,
ভেঙে ভেঙে টুকরো হই, অগ্নি ও আদিত্য হই ,
মাটি ও আকাশ হই, চ্যূত কোন নক্ষত্রের দেহ থেকে প্রতিরূপ গড়ি।
এবং ঘুরে ফিরে আসি , দেখে যাই ---
মানবের মগজের ভিতর হৃদয়
কতখানি প্রশস্ততা পেল।
কেননা কোয়ান্টাম লাফে
যখন মস্তিষ্ক তার বিস্ফারিত হল,
যখন সে জয় করল অন্ধকার, হিম আর ভয়
সে আত্মকেন্দ্রিক হল। ভেঙে গড়ল বিকল্প ভুবন।
শুধুই বিচ্ছিন্ন হল, মাকে ভুলল,
বিচ্ছিন্ন, বিচ্ছিন্ন আর বিচ্ছিন্ন হতে হতে
একদিন সে হত্যা করল সহোদর, সহোদরা, প্রিয় নদীদের ;
দোহন করল মাটি, মাটির গোপন শস্য, বাতাসের মধু।
অথচ সুকৃত এই দেহ।
অথচ হৃদয় ছাড়া অন্নগত মানুষের প্রাণ
রাক্ষসের মতোন আত্মহা,
পণ্ড করে বহুহিতে যে যজ্ঞ, সুখায়।
এবং সময় হয়ে এল।
কেননা সময় ও তার মন্থরতা ক্রমে
বাড়ায় ত্বরণ , যেন মহাজাদুকর
জাল দিয়ে চলেছেন ফুটন্ত কড়াইয়ে, নীচে গনগনে আগুন।
বইছেও উত্তুরে হাওয়া, ইউহান থেকে আততায়ী ।
পুরনো লক্কড় যত, মূল্যবোধ, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং বাজার,
ভূস্বর্গে বরফ পড়ছে, বরফের ভিতর আগুন,
দেখে আসি---
কীভাবে গলানো হচ্ছে ভেঙে চুরে টুকরো টাকরা, নীলনক্সা হাতে।
এদিকে অশ্বত্থ তরু এবং ব্রততী
ক্রমশই ঘন হয়, শ্বাসাঘাতে, চতুর্থ মাত্রিক
৪।। শব্দতান্ত্রিক এক কবি
এই তাঁর আসন। রোজ দেখি -----
শব্দদের উপর ঠায় অর্ধ-উন্মাদ এক কবি, সমকায়- শির ও গ্রীবা, দূরাগত তারাদের সংগে কথা বলে। জনমনিষ্যিহীন
চার দিকে মৌনী গাছ, বৈঁচিবন, হু হু হাওয়া ; দূরে
শিয়াল ক'টি হাঁক পাড়ছে প্রহরে প্রহরে :
আয়ু গেল।
আয়ু যায় -------
দণ্ড ও মুহূর্ত ধায়, ধায় চন্দ্র মেঘের ভিতর ; শেষ যামে
হঠাৎ-ই দেখলেন কবি, নড়ে উঠছে শঙ্খিনী বাক।
বাক কি অম্ভৃণ-কন্যা, নাকি যমী, আদি সহোদরা?
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি চন্দ্রালোকিত
তার নগ্ন মসৃণ উরু, অমর্ত্য নিতম্ব, শ্রোণীভার, আর শব্দ-তান্ত্রিক সেই কবি
পাঠ করছেন মন্ত্র ---
মন্ত্রের ভিতরে গুপ্ত ঋষি অথর্বান
বললেন, শব্দরা হোক কবির সমিধ, যথাযথ বিনিয়োগে কবি
ঈশ্বরের সমতুল, প্রতিস্পর্ধী ; দেবী
স্বয়ং গমন করবেন, সম্ভাষণ ও পানপাত্র হাতে।?
৫।। খ্রিস্ট
যেই লেখার টেবিলে বসে আড় ভাঙি,টের পাই একটি গরগর
আঁচড়ে কামড়ে শব্দদের সুমসৃণ ত্বক,
ছিঁড়ে ফেলছে ভ্রমর-গীতি, জন্মাদস্য যতঃ ।
আমাদের টম-কাকা বসে আছেন দু'হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে,
উঠোনে পায়চারি করছে রোদ।
লোম নেই শরীরে তাঁর ,
কোঁকড়া-চুল , পুরু ঠোঁট, কুচকুচে কালো একটি অর্ধ-মানব?
কে ভাগ্য নির্দিষ্ট করে? তুলোচাষ,খনি আর শিল্পবিপ্লব ?
টের পাই একটি গরগর, কেবলই ভিতরে ফুঁসছে,
আঁচড়ে কামড়ে ফেঁড়ে ফেলছে শব্দদের সুমসৃণ ত্বক !
কী বলেন ডারউইন সাহেব?
মুলুক তার,
বন্দুক উঁচিয়ে যারা ঘিরে ফেলল গাঁ,
প্রাচীরের গায়ে লিখল :
পৃথিবীর ফুল ফল , সারাটা বাগান আমাদের?
বাগানের পাশ দিয়ে, দেখুন না, ঈশ্বরের শববাহকেরা
ঘোষণা করেছে জয়, মহদ্ভয় ----
জমদণ্ড হাতে এক স্বেচ্ছাচারিনী
কোথায় সারকুঁড় হবে,
কাদের হাড়মাস পচবে খড়কুটোর সংগে--জৈব সার ,
কারা-বা মাচায় উঠবে ,বৃক্ষ হবে, নির্বাচন করে রেখেছেন।
আমাদের টম-কাকা মাটিতে উপুড় হয়ে
মুখ তুলে দেখলেন, চারদিকে
ছড়ানো মাথার খুলি, থ্যাঁতলানো পায়ের পাতা, চেটো---
তাঁর মতো তিনি ডার্টি নিগার ছিলেন
কবি সুজিত দাস এর কবিতা -
১। সুজিত দাস আনপ্লাগড্/১০
পাহাড়ে অনেকদিন বৃষ্টি আর কুয়াশার পর রোদ উঠলে ইস্কুলে 'সানি ডে'র ছুটি হয়। আজ কলকাতায় এমন একটা সকাল ছিল। চব্বিশ ক্যারাট। নিখাদ। ঝকঝকে রোদ, নীল সাদা আকাশ, বৃক্ষ এবং লতাগুল্মের শরীরে অফুরান সবুজ। সানসাইন। মেড মি হ্যাপি।
সকালে অফিস যাওয়ার পথে সল্টলেকের একটা আইল্যান্ডে বুদ্ধমুর্তি দেখি। চারটে সোনালি তথাগত। বুদ্ধমুর্তির ডানদিকে আমাকে স্টিয়ারিং ঘোরাতে হয়। ডানদিক মানে ডানদিক। লেফট ইজ নট অলওয়েজ রাইট, সিদ্ধার্থ।
কয়েকদিন বাদে পঞ্চাশ। গোড়ালি উঁচু করলেই শ্মশান। মেয়েদের দিকে তাই তাকাই না আর। একটা বয়সের পর মেয়েদের শুধু অনুভব করতে হয়। কোনও বালিকা পাশ দিয়ে জোরে হেঁটে গেলেও নিঃশ্বাস নিই না। হুগো বস কিংবা ঘামের গন্ধ যাতে আমাকে অপরাধী না করে তোলে। নিজের শরীরকে বায়ুবন্ধ করে ফেলি। ইরা আর পিঙ্গলায় নো বাতাস, নো হাওয়া। কী ভাল হয়ে যাচ্ছি, না?
এই যে আমি ভাল হয়ে যাচ্ছি, এই যে কপালে দইয়ের ফোঁটা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, এই যে চুলে পরিপাটি সিঁথি আর ব্রিলক্রিম। এই যে আমার মুখে বোরোলীন। গায়ে মফতলালের শার্টিং শুটিং, খুশি তো? আমাকে এই 'বঙ্গ জীবনের অঙ্গ' মার্কা নয়া অবতারে মানিয়েছে বেশ।
*
*
*
ভেতরে ভেতরে সেই গাছ হারামিই রয়ে গেছি।
নদী আর নারীর মধ্যে যে ফায়ার ব্রিগেড, সেইখানে বহতা ঝোরা দেখি। কবি আর ব্যালট পেপারের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফেসবুক পোষ্ট দেখি। রাষ্ট্রপ্রধান আর ফার্স্টলেডির মাঝে আমি শুধু মনিকাই দেখি। মনিইইইইকা... ওহ, মাই ডার্লিং।
বাইরে বাইরেও আমি এক চরম বিপ বিপ বিপ। যেখানে হাসার নয় হেসে ফেলি। রবীন্দ্রসদনে বেজে ওঠে আমার 'কী অসভ্য' মোবাইল। ওহ্ বেবি, ডল মে সোনে দি...। গ্রীনরুমে ঢুকে যাই অসময়ে। ঘুমের স্টেশনে দাঁড়ানো টয়ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে পড়ি মাঝরাতে। ভরদুপুরে মিনিভেট পাখির বুক দেখি। শুঁকে ফেলি বনতুলসির ঘ্রাণ। স্ক্রু পাইনকে বলি, আমি তোমারই মেহ্মান।
আছি এইখানে। কাম আর ক্রোধ নিয়ে আছি। দেওয়ালে ডি কে লোধ নিয়ে আছি। আছি, ভেরি মাচ আছি। আমার সকল খারাপ নিয়ে বসে আছি সাড়ে সর্বনাশের আশায়। আনপ্লাগড্।
ইয়ে দুনিয়া পিত্তল দি।
২।। সুজিত দাস আনপ্লাগড্/৫৫
কতদিন বলেছি তোমাকে, অক্সব্লাড রঙের শাড়ি পরবে না। এমনিতেই শাড়ি খুব জটিল ছায়া। কোথাও পড়ে, কোথাও পড়ে না। শিফন যে কীভাবে ঋতুচক্র পালটে দিচ্ছে, 'ধরতেও পারবে না'। তার ওপর এই রক্ত রঙের প্রহেলিকা! এই তো জীবন আমার, খুন করে বাড়িতে গেলেও বাহবা পাবে না। নান্হা সা জান। মারতে হলে টর্নড্ জিন্সে মারো, টিউব টবে মারো, কালো থং-এ মারো। আবার শাড়ি কেন? অ্যাম্ফিথিয়েটারে কত লোক বসে আছে, জানো! এই প্রকাশ্য গোধূলিতে আমাকে এভাবে নক আউট করে দেবে? দোহাই, অক্স ব্লাড রঙের শাড়ি অঙ্গে জড়িও না। হাড়ে সুই বিঁধে যায়। কিংবা মাঘের রাত।
কতদিন বলেছি, বৃষ্টির দিনে জঙ্গলে যেও না। এক একটা দুশ্চরিত্র পুরুষ ময়ুর পেখম তুলে টিজ করবে তোমাকে। ময়ূরের পালকে সহস্র চোখ। দেখে ফেলবে আদিগন্ত। অরণ্য এক গোপন সিকিউরিটি চেক। না বলেকয়ে খুঁজে নেবে কনুইয়ের কালো, ব্যক্তিগত লাল এবং নিজস্ব ঘ্রাণ। যে ঝিঁঝিঁ ডাককে তুমি শুদ্ধ আত্মা বলে ভাবো, সেও আসলে এক কাউন্টার এসপিওনেজ। এখনও সতর্ক হও।
কতদিন বলেছি, প্রিয় আয়নাকেও তেমন বিশ্বাস কোরো না। আয়নায় নিজেকে সবাই পছন্দের কৌণিকে দ্যাখে। তুমিও। তাই একদম বিশ্বাস কোরো না। পৃথিবীর সব গুপ্তহত্যায় শেষ রক্তের ছিট্ ওই আয়নার কাচেই লেগে থাকে। আয়না মোটেও জলের মতো সোজা না। এক সাঙ্কেতিক ফিল্মের মতো টুকে রাখছে তোমাকে। যা কিছু দেখছ সঙ্গোপনে, সবই রচিত হচ্ছে। কাচের থেকে বড়ো ট্যাবলয়েড, আর কিছু নেই। শোনো, অন্তত একবার আমার কথা শোনো। ইনডিসটিঙ্কট চ্যাটার বলে কিছু হয় না। ওসব সাবটাইটেলে থাকে।
মোটমাট, তোমাকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্রের বৃত্ত, তার মূল কারিগর ষাঁড়ের রক্ত, অরণ্যের নির্জন এবং কাচের গোপন। এদের তুলনায় আমি খুব তুচ্ছ শভিনিস্ট। এসব জেনেও ট্রামলাইনের নিচে এমন নির্দ্বিধায় হেঁটে চলেছ?
সাদাকালো বলে কিছু নেই, সুচরিতা। হয় সাদা, নয় কালো। বাকিটা বিভ্রম।
যদিও আয়না তোমাকে টুকে রাখছে অবিকল। রঙিন।
৩।। সুজিত দাস আনপ্লাগড্/৬৩
ভুটানঘাট পর্বতমালা সাদা চোখে দেখলে তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না। এক অদ্ভুত হায়ারোগ্লিফিক্স। সাবটাইটেল চাই। ধরো প্রজাপতির দঙ্গল বসে আছে নরম কালো বালি মেশানো সুড়িপথে। আসলে তো বসে নেই। মেয়ে এবং ছেলে প্রজাপতির দল লবণ চেটে নিচ্ছে বালি থেকে, পাথর থেকে এবং মাটি থেকে। বেঁচে থাকার অবিমিশ্র রসদ।
কী জানো, সাবটাইটেল ছাড়া তুমি জীবনকেও বুঝতে পারবে না। এই ধরো দুই বেণী একটি মেয়ে। সবে ফ্রক ছেড়ে কুর্তি/কামিজের চৌকাঠে পা রেখেছে, তাকে তুমি কতটুকু চেনো? চেনো না নিশ্চয়ই। না চেনার অনেক সুবিধে। সে যদি তোমার অশ্লীল শিস উপেক্ষা করে, যদি সে তোমার প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করে সবিনয়, কিংবা খুব ব্যতিক্রমী এক নিখুঁত ইয়র্কারের মত সে যদি ফণা তোলে...
যে পৃথিবী নির্বাক ছবি দেখে অভ্যস্ত তার কোনও সাবটাইটেল দরকার নেই। শিস, প্রলোভন এবং ফণার বিপ্রতীপে কত বিলবোর্ড, কত ফুস্মন্তর, কত হনন এবং ভাঙানোর প্রক্রিয়া। একবার গ্রামের হাটে বলে দাও ও মেয়ে ভাল নয়, একবার শহরের পবিত্র চবুতরায় ফিসফিস করো ভাল নয় ও মেয়ে। এই গূঢ় ইঙ্গিত একলহমায় সব সবুজ কেড়ে নেবে তার মন এবং অদৃশ্য দোপাট্টা থেকে। ওড়না নেই কেন, বুক নেই তোর, বেহায়া মেয়েছেলে। যে ভাষা ইতরেরা জানে, তাতে সাবটাইটেল নেই।
ভুটানঘাট দেখনি তো কী হয়েছে, জয়ন্তী রিভার বেড দেখেছ নিশ্চয়ই। সুতোর মত নদী। অজস্র পুরুষ পাথর। যে প্রস্তরখণ্ডকে তুমি পেপারওয়েট বানাবে ভেবেছিলে, আসলে তা এক অবাধ্য পাথর। অনার্য ডুংগা। নদীর সঙ্গে তার আজন্ম বন্ধুতা। পেপারওয়েট না হতে চাইলে, শো-পিস্ না হতে চাইলে শিক্ষা দাও ওকে। তুলে আনো জলের গভীর থেকে। একা না পারো, লোক লাগাও। এবং ব্যর্থ হও। এবং দেগে দাও। শুইয়ে দাও অগণন নারীর সঙ্গে। পাথরকে হত্যা করার জন্য সুপারিকিলার ভাড়া করে কেউ? পাহাড় থেকে নামতে নামতে, এক একটা লাইন লিখতে লিখতে সে তো কবেই মরেছে। মরে পাথর হয়ে গেছে।
যে ভাষা বোঝো না, যে ইশারা ছুঁতে পারে না তোমাকে, সে ছবি এমনি দেখো না, দোহাই। সাবটাইটেল পড়ো। এতে লজ্জার কিছু নেই। মেক্সিকান উপকথার ঢালু টেরাইন, পাবলো এসকোবারের পাথুরে চাউনি... সাবটাইটেল ছাড়া হয় এসব! কমদামি সুপারিকিলার ফুটপ্রিন্ট রেখে যায়, রেখে যায় আধখাওয়া সিগারেট, জুতোর ছাপ।
মোটমাট, ভুটানঘাট পর্বতের প্রতিটা পাথরের নিজস্ব ঘ্রাণ আছে। আছে ব্যক্তিগত ড্রয়ার। কামাতুর প্যাঁচার মত সেও যদি বের করে আনে তামাদি হয়ে যাওয়া রসিদ, ব্যাকডেটেড বোর্ডিং পাস, আধখাওয়া মদের বোতল এবং গোপন কথোপকথন। তবে কেমন 'হবে' তুমি বলতো...
এমনিতে পাথরেরা সর্বংসহা।
তুমি ঢিল ছুঁড়তে পারো, আগুন জ্বালাতেও।
৪।। ওভাবে ডাকতে নেই, মণিমালা মিস্।
১। বাইলেন
আস্ত বাইলেন হারিয়ে ফেলেছ বলে দুঃখ কোরো না। শুধু তো একটা গলি নয়। ইটের দেওয়াল, দুধ জ্বাল দেওয়া স্টোভ, একটা আস্ত রেশন দোকান মায় ফেরিওয়ালার ডাকহাঁক। এতকিছু ডিলিট হয়ে যাওয়ার পর ঘুম আসে না। তবু কোনও না কোনও একটা বাইলেন তো তুমি মনে রেখেছ। রেশমের রাজপথ বরাবর ছুটে যেতে যেতে, জ্যোৎস্না এবং কুয়াশার ছিটকাপড়ে এই যে ফিরে এলে, এও তো অনেক।
২। কেউ বাড়ি নেই
কেউ বাড়িতে না থাকলে দরজা খোলা বারণ। চৌকাঠ ডিঙিয়ে হরিণের দল ঢুকে পড়তে পারে। ফাঁকা বাড়ি কি তবে এরিয়া ফিফটিওয়ান! একটা গোটা সুরেন ব্যানার্জি রোড ভেতরে চলে আসবে নির্জন ঘুঘুডাকের মতো? বাড়িতে কেউ না থাকলে নিঃসঙ্গ গীতবিতান পা টিপে টিপে হেঁটে বেড়াবে! অ্যাই, এভাবে দরজা খুলতে নেই। অসময়ে একা থাকো। থাকো নির্জনে। বলে দাও পরে আসতে, এখন বাড়িতে কেউ নেই। সবসময় সবাই বাড়ি থাকে না।
৩। রাত্রি এখন অনেক
জ্যোৎস্না দেখে মুগ্ধ হয়ে যেও না। এই গাঢ় আলোর আড়ালে এক আরকগন্ধী হিম লুকিয়ে আছে। সূক্ষ্ম ফাটলের মধ্যে জমে থাকা এই বিন্দু বিন্দু শীত একদিন আমাদের সকলের পোর্ট্রেট এঁকে ফেলবে। অন্দরমহলের সব ভাঙচুর টুপটুপ করে ঝরে পড়বে ট্যাক্স অফিসের বকুলগাছ থেকে। রাত্রি এখন অনেক। অন্ধকারের আড়াল লাল হয়ে উঠবে প্রহেলিকাময় তাম্বুলে।
৪। জ্বর
না বলে কয়ে আসা এইসব উত্তাপকে একেবারে বিশ্বাস করতে নেই। সে ঠিক তারিণী ডাক্তারকে বাড়ি নিয়ে আসবে। নিয়ে আসবে থিন অ্যারারুট বিস্কুট, সাবুদানার মতো মুক্তো। ভাত বন্ধ, স্কুল নেই। ওদিকে দিলীপ বাগুই-এর শট কাঁপিয়ে দেবে সরোজিনী সংঘের ক্রসবার। আর তুমি কেঁপে উঠবে অবাধ্য উত্তাপে। শরীরে রঘুডাকাত, কপালে জলপটি। জ্বরকে বিশ্বাস কোরো না। ক্রসবার আরও বড় বিশ্বাসঘাতক।
৫। রোলকল
সব শব্দে সাড়া দিও না। দু-একটা উপেক্ষা করাই ভালো। কতদিন সাড়া দিইনি মণিমালাদির ডাকে। তবু এক একটা সংখ্যা চোখ গেল পাখি হয়ে ডেকে উঠত দূরের চিকরাশি গাছ থেকে। 'খুকি হোক', 'খুকি হোক'। এক একটা সংখ্যা ভরা বর্ষার রায়ডাক। পাট শুকোতে দেওয়া শিলতোর্ষা নদীর সেতু।
ওভাবে ডাকতে নেই, মণিমালা মিস্।
৫।। আমি ও অবিনাশ
এই মায়াজন্ম আর ভালো লাগে না অবিনাশ।
এইসব ক্লান্ত বিকেল, ফুটে থাকা সজনেফুল, দিগন্তপ্রসারী সেগুনের মঞ্জরি
কিছুই যে স্পর্শ করে না আর।
শিলিগুড়ি বয়েজ, পরিমল কেবিল, গ্রন্থভারতীর বাদামি মলাট...
এরা ফিরে ফিরে আসে কেন, অবিনাশ!
নির্মীয়মাণ দীনবন্ধু মঞ্চ, ওপারের ফর্সাদিঘি। জলের ওপর পারমিতা করের বাড়ি।
খাতায় ভাওয়াল স্যারের পাটিগণিত। বিট্যুইন দ্য লাইনস, ও কেন তখন উড়িয়ে আঁচল...
আর কেনই-বা বিকেলগুলো এখনও প্রতীক্ষার বাসরঘর?
ধমনিতে দপদপ করে ছোটোখাটো হাসি, গজগামিনী পদসঞ্চার। কেন, অবিনাশ, কেন?
এ কোন্ ট্যুইলাইট সাগা...
মৃত্যু আর সজনেফুল ছাড়া এই মায়াপ্রপঞ্চে আর কী-ই আছে, বল তুই।
আমি তোকে কোন্ অচেনা কৃষ্ণগহ্বরে নামিয়ে এনেছি!
এই ব্ল্যাকহোলে শুধু অবজ্ঞার নয়নতারা? শঙ্খচক্র নেই, ক্রিসান্থিমাম নেই, মেয়েদের ছেড়ে যাওয়া নেই,
ব্রহ্মতালু ফাটিয়ে দেওয়া বাগরাকোটের তোম্বাও কি নেই, অবিনাশ?
কে-কার চুনরিতে দাগ লাগায়,
কে-কাকে কতটা অপমান করলে স্তব্ধ হয় চরাচর।
কীভাবে জুতো মারলে ঠোঁট ফেটে যায়, শার্টের কলার থেকে খসে পড়ে অহংকার?
জানালায় পাখি আসেনি কতদিন, কতদিন নখ উপড়ে গেলেও ব্যথা টের পাইনি।
এই মায়াজন্ম আর ভালো লাগে না অবিনাশ।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কবি ঋত্বিক ত্রিপাঠী এর কবিতা -
সংজ্ঞার বিপরীতে
`````````````````````
বিপরীত
-----------
সংজ্ঞার বিপরীতে কে বা কারা যেন দাঁড়িয়ে থাকে
মুখ
------
মুখ শব্দের মধ্যেই মুখােশ থাকে
সাম্য
---------
সমতা কোনও দিন আসবে না বলেই মার্কস পড়ছি
উধাও
-----------
কোথায় গেল দিব্যা ভারতী সুভাষ হারিয়ে, উধাও
ধর্ম
------
ধর্মের প্রচারকরা অধর্মের আমদানি করেছে
প্রণাম
----------
একমাত্র ইরম শর্মিলা চানুকে প্রণাম করতে চাই
মাদুলি
--------
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরাই মাদুলি বিক্রেতা
সংবাদপত্র
--------------
সংবাদপত্র আমাদের বাবা মা
জীবনবীমা
----------------
না জানিয়ে বীমার টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাঙ্ক
শ্রদ্ধা
-------
শক্তি কাপুরের মেয়ে শ্রদ্ধা! এও সম্ভব!
বিভাজন
-----------
পৃথিবীর তিনভাগ জলে ভাসছে একভাগ স্থল
কর্তৃকারক
---------------
কারক সিলেবাসের প্রথম হল কর্তা
কার্টুন
----------
বিতর্কের পিছনেই থাকছে কার্টুন, সবসময়
কর্মকারক
---------------
সমস্ত কর্মের পিছনে কর্তা নাও থাকতে পারে
নিখোঁজ
-------------
নারী নিখোঁজ মানে পুরুষ আমদানি হচ্ছে
লটারি
-----------
বামফ্রন্ট সরকারও রাজ্য লটারি চালাতো
মা মাটি মানুষ
----------------------
মা তো মানুষই, মাটি তাে জড়ই
মিসকল
-------------
মিসকল দিলেই সদস্য, নেতা, প্রধানমন্ত্রী
মাওবাদী
-------------
মাওবাদী সম্মান গড়ে তুলছে পুনর্বাসন
সংখ্যা
--------
এককে দুভাগ মানে সংখ্যা আট
জয়
--------
সতীদাহকে আমরা জয় করেছি! কিভাবে!
বিসর্জন
-------------
গঙ্গায় আজও সস্তান বিসর্জন! নতুন কি আর!
ভয়
--------
রাষ্ট্রই আমাকে দেখাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভয়
পদবি
---------
বরং সংখ্যা ভালো, পদবি বাদ দাও
কবি
-------
অসামাজিক আমরা সবাই কবি হতে চাই
ভূতের বই
--------------
বিজ্ঞান মঞ্চ উপহার দিচ্ছে ভূতের বই
স্বাস্থ্য
---------
ছােটা রাজনের স্বাস্থ্যের ভার এখন রাষ্ট্রের
পাওয়া
-----------
না-পাওয়াও খুব এক রকম পাওয়া।
হিংসা
----------
ভালবাসতে না পারলেই করাে হিংসা!
অহং
---------
সারা শরীর জুড়ে অলংকারের অহং
ভাবা
-------
তােমাকে ভাববো না বললেই ভাবা হয়
উৎসর্গ
----------
যার সঙ্গে রোজ ঝগড়া, তাকেই উৎসর্গ
------------
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কবি পার্থজিৎ চন্দ এর কবিতা -
১।। আরণ্যক
ক্রমশ ফুরিয়ে আসা কুণ্ডের জলে জ্যোৎস্না পড়েছে
জল খেতে এসেছে হায়না বুনোমোষ নীলগাই
পাশাপাশি জলের দিকেই বেঁকে গেছে শঙ্খচিতির লকলকে জিভ
কাদার ভেতরে তারা ছটফট করে
ছটফট করে মোষের বাচ্চা
কুণ্ডের থেকে তারা পালাতে চাইছে
কাদায় আটকে গেছে বিষধর সাপ, জল খেতে আসা পশুর শরীর
ছটফট করতে করতে আবার তাদের তেষ্টা পাচ্ছে
আবার তাদের জিভ শুকিয়ে আসছে
ফুরিয়ে আসছে কুণ্ডের জল
এই মৃত্যুর মাথার ওপরে
লক্ষ বছরের জ্যোৎস্নার মায়া ঝরে ঝরে পড়ে
২।। বিষাদসিন্ধু
সে প্রথম বোঝা গেল খাড়া ও দেবীর দিকে একযোগে তাকা্নো যায় না। তাই শেষমেশ হাড়িকাঠে ছাগশিশু মাথা নীচু করে নেয়। তাকায় মাটির দিকে। বাজো, সাদিয়ানা বাজো।এই গ্রহপথে বলির বাজনা যদি এতদূর, তবে তুমি তারও থেকে দূর ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়। সোহারির জলে বিষ। সোহারির মুখে হীরক ছড়ানো। কবে আর কোন পিপাসাক্লান্ত ঠোঁট এসব ভেবেছে! যে বলে গুপ্তহত্যা আমি তার দিকে চেয়ে হাসি, মনে মনে বলি, হত্যা গুপ্ত নয়, শুধু খাড়া ও দেবীর চোখের দিকে একযোগে তাকানো যায় না বলে ছাগশিশু মাথা নীচু করে নেয়
৩।। জন্মদিনের লেখা
আলোর বর্গগতি ও অভিশপ্ত পারদের নিবিড় সংযোগ ২১ চৈত্রের বিকেলবেলায় এক কলসাকৃতি জরায়ুর পেটের মধ্যে ঠেসে ধরেছিল মেঘ; বা্যুঘূর্ণন। সরলবর্গীয় গাছ চিরকাল অতলের নাভিবিন্দুমুখী, ট্রলার ঘুরেছে একা। কোথাও পুকুরে সন্ধের ছায়া নেমে আসে। একটি একাকী শোল কালো জলে ঘোরে। নিজের খেয়ালা নিজেকে হারায়, আকাশের দিকে চায়। আঁধার ঘনাইছে বনে বনে…, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন আদিম ওয়াট জলের ভেতর পুঁতে রেখে গেছে সমানুপাতিক অভিশপ্ত পারা। শোলের বিষাদমুখ তাকে ঠোকরায়
গ্রহপথে রাধামাধবের মন্দির ছিল, ছিল ইরানী গোলাপও। মনে পড়ে সে কবে জন্মেছিলাম চৈত্রবেলায়
৪।। বাঁশি
তার চোখ থেকে আলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে প্রখর লুব্ধক
এ বন অন্ধদের
এ বনের ভেতর কালো মিনারেট
নেমে আসছে অন্ধকার
নিভে আসছে ঘড়ি
নিভে আসছে ঘন্টার প্রহর
পুণ্য সরোবরে, পুণ্য জলের ভেতর
শুধু বেজে উঠছে মদনমোহন বাঁশি
শেষবার
৫।। অজ্ঞাতবাস শেষে
তারপর আপনি স্ট্র্যাটেজির নীল টঙ-ঘর থেকে নামলেন। অন্ধকার
ঘাসের ওপর বসে বললেন, কুরুক্ষেত্র একটি ধারণা, ধারণাটির সৃষ্টিমুহুর্ত থেকে
কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে গেছে। কুরুক্ষেত্র একটি অ্যমবুশ
কুরুক্ষেত্র একটি গেরিলাযুদ্ধ
এখানে স্লিপার-সেলের ভূমিকা অসীম। জকি ও নপুংসক হয়ে
এই বিরাট-নগরে ক্ষমতার পেটের ভেতর ঢুকে যেতে হবে
আপনার কথা মতো আমরাও ছদ্মবেশের আগে গাছের কোটরে
লুকিয়ে ফেললাম অস্ত্রশস্ত্র। এক শুকনো-জরায়ু কাঠকুড়ুনির নলি কেটে
ঝুলিয়ে দিলাম গাছে, (যদিও অন্ধকার নেমে এসেছিল বলে তার মুখ দেখতে হয়নি)
ধীরে ধীরে তার মাংসে পচন ধরবে। বেরিয়ে আসবে কঙ্কাল
এই প্রেতগাছটির ধারেকাছে আর ঘেঁষবে না গ্রামের মানুষ
আপনার কথা মতো অজ্ঞাতবাস শেষে অস্ত্র উদ্ধারে আমরা এসেছি
পাখাপাখালির ঝাঁক তাড়িয়ে তাড়িয়ে গাছের কোটর থেকে
বের করে আনছি লুকানো অস্ত্র। নড়ে উঠছে পুরনো কঙ্কাল
চোখের কোটর থেকে আমাদের পাঁচজোড়া হাতে তির তুলে দিচ্ছেন করুণ কুন্তী
কবি লক্ষ্মীকান্ত মন্ডল এর কবিতা -
১।। আকাশি রঙে আঁকা
নেমে যাওয়ার পর বাঁকা তালগাছের অভিমানে আটকে গেছে আলো । তার ওপাশে আর কোনো কিছু দ্যাখা পাওয়ারই কথা নয় । নয় জ্ঞান , নয় প্রজ্ঞা । কেমন করে দুঃখ ঢাকব আমরা ।
চাকার দাগে জমেছে কয়েক ঢোক জল , এই সত্যে কানশিড়ে লতাটি বাড়তে থাকে সূর্যেরর দিকে - সেখানেই ঠোঁট ডুবিয়ে জল কেলিতে মত্ত ছাতার পাখির দল । এই সহজ স্বপ্নে মেঘ জমে -
হয়তো বা কাছেই কোনো গৃহপ্রবেশ । সেদিকেই ভেসে যায় নির্ভয়ের জ্বর । না বুঝেই কেউ কেউ ভাবে পারিজাত । এখন তো মিলনকাল নেই - ভীষণ রকম উষ্ণে হৈ হৈ করে সরে যাওয়া পোশাকগুলি - শরীর পার হয়ে মায়াহীন মর্মর ।
সূর্যাস্তকে পেছনে রেখে স্নান করে সুডৌল নীরবতা ; ভঙ্গীতে চালা ভাঙা শ্বাস নিয়ে চোখ পোড়ায় বিদ্যুৎ । আর থামে না শরীরের ক্ষুধার্ত কৃমি ; ক্রমশ নেশালো হতে হতে পথ খুঁজে নিতে চায় উঠোন । সেই ভোর থেকে নয়নতারার অনাদর গুলি হয়ে যায় সাদা -
নীলিমায় স্বাধীনতা থাকলে আড়াল করতো না কোনো বাঁকের ঝোপ । কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ভুলে যায় দীর্ঘশ্বাসের কথা । সারা গায়ে অনাদর । সারা গায়ে কালো - নত চোখ তামাম প্রহর জুড়ে আকাশ নেমে আসা পুকুর থেকে হাঁস ওঠে আসে ডাঙায় - খুঁটে খায় কীট আর ঝরা শষ্য দানা । এ জীবন পথ হবে না কোনো দিন -
ডান হাতে পোলিও নিয়ে তখনও পুবে তাকিয়ে আছে আকাশি রঙে লেখা পাখির হৃদয় ।
২।। নভোনীলের ফুলগুলি
গাছ আর তারই শিকড়ের কাছাকাছি আসতে চেয়ে এক গৃহের সম্মুখীন হলাম , তার দরজায় আতর মাখানো ওড়না , আর সারা গায়ে ঝুমঝুম শব্দে গান বাজছে , আমি আঙুল দিয়ে ছুঁতে চাইলাম লজ্বাবতী লতার সমস্ত আলো , হৃদয়টি আঁকা হয়ে ওঠেনি তখনও - মাথার ওপর তপ্ত সূর্যের জ্বালা ; কণ্ঠনালীতে এক মরুর হাহাকার - পান করতে চাই নাড়ীর ভেতর সমস্ত নির্যাস - এ কোন পাতাল? - সমস্ত ফুলগুলি এক সাথে ডাকিয়া উঠিলে তবে তো পূর্ণতার আশ্চর্যে অন্ধকার দাঁড়িয়ে থাকবে নির্বাক -
এতো মৃত্যু নয় - এক প্রকাণ্ড সরোবরের তীরে আমি আমারই ছায়া দেখিতে পাইলাম - যে কেবল আঁকিয়া বাঁকিয়া পাঁকের মধ্যে খুঁজছে নিরন্ন ভেটুক --
৩।। তিতির এবং বিষন্নতা
১
হৃদয়ের মাঝে যেসব সূর্যমুখী ফুটে আছে, তার নিঃসঙ্গ দোলায় কয়েক জোড়া তিতির নিঃশব্দ ; জমির পাড়ের গন্ধ জুড়ে পঞ্চস্বর ; বৈধ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই এখনো , সূর্যের আলো ছড়িয়ে আছে কামুক ডিবি থেকে প্রশান্ত বিল -
রিক্ত পত্র মর্মরের কাছাকাছি অভিমানী আগাছা - দোষ কারও নয় - এটা বোঝাতে পারিনা কখনো, বোবা পুরুষটির সারা গায়ে কর্কশ, ঝোপের মাঝে হারিয়ে যেতে তুলে নেয় একগুচ্ছ ভাট ফুল -
প্রতিটি রিপু মাঝে একটি পদ্মাবতী ; পদ্মানদীর মতো অন্তর্লীন। তার বিভঙ্গে কিছুটা মেঘ। ; তবু বাকল ছাড়ানো অর্জুন গাছের চকচকে শরীর থেকে ভাবনাটা সরতে চায় না কিছুতেই -
প্রজাপতিরা উড়ে গিয়ে বসে বোরোধানের প্রদীপে -
২
বিকেল উড়ে গেলে চাঁদের দিকে তাকাই - শালিক সংকেতে হাড়ময় রমনীটি হলুদ প্রজাপতির ভঙ্গী ; মাটির নিরীহে সাজিয়ে দেয় ঠোঁটের উপকূল -
আলো কমে যাওয়া মাঠের ছুঁই ছুঁই শীত, নিচু স্বরে মায়া পেখম চমকে দিয়ে নিয়ম মাফিক অশ্রুবোধ ; মগ্ন দিগ্বিবিদিক ; এক সমুদ্দুর পাখি ওড়ে মোহনায়
চারপাশে ছড়িয়ে আছে ভেজা স্বাদ, দীর্ঘরাত পাড়ির সুপার মুন ; জলরঙ মিশে গেলে - ধোঁয়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সন্ধ্যারূপ কৃষ্ণকায়া
সংগ্রামী অম্বা কেন যে শিখণ্ডী হলেন
৪।। নিরুপায় এক স্পন্দন
আমার কোন ডাকঘর নেই। খাঁ খাঁ মাঠের পাশ দিয়ে নয়ানজুলি, তার জল শুকিয়ে যাচ্ছে মায়াহীনতায়। সাদা সাদা ভাঁট ফুলের উপর ধুলোর ছাপ দেখেই মনে হতে পারে এটাও কোন রাস্তার ধার। এবং কিছু শুকিয়ে যাওয়া লঙ্কেশ্বরী গাছে মরনের ইশারা। চলাচল শুরু হয়েছে মাটি মাড়িয়ে, কত লোক চলে যাচ্ছে এই ঝরা পাতা সময় নিয়ে। আসলে গাছে কয়েকটা পাখি বসে আছে। বসে আছে পলাশের রঙ।
নিরুপায় এক স্পন্দন, মনান্তরের ঠিকানা নিয়ে দিগন্তের বলাকা হয়ে যায়—
৫।। বিমর্ষ স্বর
তাকিয়ে থাকো - সম্মুখের রাস্তার দিক থেকে যে উদভ্রান্ত বাইকটি ছুটে আসছে , সে তোমাকে কাদা ছেটাবেই - ছেটাবেই এবং জর্দা পানের পিকের জন্য ও প্রস্তুত থাকতে পারো - কেননা পানের নেশা না থাকলে বারো থেকে সহজে ষোলো হওয়া যায় না । বাতাসে যে জল কণা অপেক্ষা করে আমিষ গন্ধের - সেও ফুটপাত ঝাঁপাবে
যদিও এখানে কোনো ফুটপাত নেই , নিটোল এক মোরাম রাস্তা , খোপ খোপ জল ধরা নক্সাদার পানমৌরি দ্বীপ । পা বাড়ালে পথ , নয় তো অবাক পাতার ভিড়ে শরীরে জমে থাকা আজীবন ধুলো - বৃষ্টি পড়ে তারই উত্তাপ বেলায় - পাখির ঢঙে বিমর্ষ স্বর । ছুঁয়েও দেখেনি - পিচ রাস্তা দেখে ফেলা নির্বাচিত কোনো শাসনাধিকার ।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে কিছুটা স্বপ্নের দিকে । উড়ে যাচ্ছে লাবনি নামের তৃষাতুর আসাবরী , দিগন্ত বিস্তারের জীর্ণ রোদ্দুরের কথা আর নাইবা বললাম । শিক ভাঙা ছাতার আবছা আড়াল নিয়ে চারপাশে ঘন হয়ে আসে সংক্ষিপ্ত সময় - সেই বোধে চলৎশক্তিহীন পথ । কত আঁকিবুঁকি ; শরীরের রক্ত ক্ষরণ ।
ভয় পাওয়া উচিৎ নয় কখনোই । এই নগ্ন মহিমায় তীব্র হতে থাকে দীর্ঘ শ্বাস । তবুও অদৃশ্য হয়ে যায়নি শব্দরা , সেদিকে তাকিয়ে আমিও ডাকতে থাকি শব্দের কাছাকাছি দৃশ্যগুলিকে, পদে পদে কাঁটা পোঁতা পথ নিয়ে অগাধ দূরত্ব - কবে আসবে উষ্ণতা ; প্রতীক্ষায় ভিজতে থাকে নাকের ডগায় ছুঁয়ে থাকা অস্থিরতা --
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
No comments:
Post a Comment