Monday 27 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি সৌমাল্য গরাই এর কবিতা-



১।।  ∆  মহাপ্রস্থান ∆



যেতে হয়। কোনো দাগ--
বোঝে না জলের পরিণয়
এভাবে আড়াল টুকু আড়ালেই রেখে, সামান্য ভগ্নাংশটিকে
সে কেমন নির্লিপ্ত সরলে প্রদক্ষিণরত 

 এমন প্রস্থান রেখো
যেন শব্দ না হয় কখনো 
 সুখ ও আনন্দে তার মায়াচোখ মৃগনাভি হোক
 শুধু সে খুঁজে না পাক কোনোদিন অশ্রুত হরিণ 
 
অনির্বাণ করাঘাত, পথ চলে গেলে জেনো
মহাপ্রস্থানের শেষে নিঃস্বমুদ্রা হাতে
বুদ্ধের সমগ্র দুঃখে সুজাতা স্থবির হয়ে আছে...





২।।  আড়াল



কতটুকু চেনো তাকে খোয়াবের আঁতুড় ভেঙে যে
চুরি করে নিয়ে আসে, বেহেস্তের আলোক- শরীর?
গভীর গোপন থেকে, দেহাতীত তাদের ইশারা
ভ্রান্তির কুহক ফেলে খেলা করে রক্তের ভিতর

আমিও চিনিনা তাই, শরীরের আড়ালে শরীর
কি নিপুণ দক্ষতায় শিকার করেছো মায়াবিনী
অধীত দৃষ্টির থেকে যত দূরে যাই মনে হয়

তবে কি জন্মের মোহ জন্মান্ধ করেছে আমাদের?





৩।।  ∆ ছায়াবাজি ∆



নিঃসঙ্গ স্বপ্নের মতো কেউ আসে, যেন মৃত্যু অথবা পাখি, ধীর সন্তর্পণে, স্পর্শ করলেই মারা যাবে। এমন শিশুর কান্না ওঠে বুকে,যেন পুরুষের স্তন মা হতে চায়।

বিস্তীর্ণ একটা গমখেত শুয়ে থাকে সরল যোনির মতো, তার কূপে কূপে খেলা করে বয়সের শিশুরা, গোধূলির পর মারা যায় আর
নীল কাফন জড়ানো আয়নায় চুপচাপ ঢুকে পড়ে। 
  কে আসে তবে নিহিত স্বপ্নের ভিতর!
আরও নিবিড়ে গেলে, নিভে আসে আলো
অন্ধের আলোক ছাড়া  বাঁচে না ছায়ারা, শুধু হাজার হাজার বিন্দু সপ্তসিন্ধুপার জুড়ে ভাসে।
অদূরে ঘোষণা শোনায় কেউ-
অদৃশ্য জামা গায়ে মানুষ যায় না কোথাও,শুধু তার ছায়াটি নিখোঁজ হয়..





৪।।  ∆  নিরক্ষরের প্রতি ∆



যে তুমি চেনো না অক্ষর লিপি

ভাবি সে কীভাবে শিখবে —যা লেখা থাকে মাঠে ঘাটে বনে

 পাখির ডানায়, 
     শালুকের জল যে ছন্দে নাচে।

  লিখন প্রতিমা এসে দেখে 
শ্রান্ত ভাষার কপালে কে যেন 
পরিয়েছে টিপ আর
আমার মায়ের কাঁপা হাতে 
        লেগে আছে বাংলা কবিতা




৫।।  ∆ পলাতকা ∆




শরীরী প্রপাত থেকে অভিধান খুলে গেলে দেখি
সেখানে শব্দের মায়া, শব্দহীন আলুথালু শুয়ে
সরল শিশুর বুকে হামাগুড়ি দেয় আর কাঁদে

কখনো খিদের চোটে কামনা জড়িত লোলজিহ্বা
চেটে চেটে সুললিত একজোড়া স্তনের প্রপাতে
রেখে আসে স্রোতস্বিনী, স্নান শেষে তার নগ্ন  পায়ে 
প্রসববেদনা বাজে, গর্ভবতী জলস্তম্ভ সেও
জানেনা কিভাবে হায়! ভূমিষ্ঠ কান্নার বর্ণমালা
কবিতা জরায়ু ভেঙে প্রতি রাতে কোথায় পালায়

কিশোরী নর্তকী  মেয়ে,মৃতবৎসা হলেও জীবিত
আমি তার কিনারায় কবিতারোপণ করে দেখি
আসলে তফাত নেই প্রেমিকা ও ঈশ্বরীর দেহে
কাছে দূরে  আশ্রয়ের সাধনা দুয়ার খুলে রেখে
আমিও পালাবো ঠিক,শরীরে শরীর ঠেলে ফেলে




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

********************************************

5 comments:

  1. " এমন শিশুর কান্না ওঠে বুকে,যেন পুরুষের স্তন মা হতে চায়। " যে লিখতে পারে তার নাম সৌমাল্য ।

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগলো কবিতাগুলি। 'নিরক্ষরের প্রতি' বেশ ভালো।

    ReplyDelete