Friday 21 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি অশোক ঘোড়ই এর কবিতা-





১।।  ∆ অনেক রাত্রি পর্যন্ত একটি ঘোড়াকে ∆



অনেক রাত্রি পর্যন্ত একটি ঘোড়াকে সে
চরে বেড়াতে দ্যাখে রাস্তার পাশে। সাদা
ঘোড়া। মহিনের ঘোড়াগুলোর একটি
সে-ঘোড়া নয়। ঘোড়াটি কোনও 
সার্কাসওলার। পেছনের পায়ে চাবুকের
নিশান বোঝা যায়। এক রাত্রে সে ঘোড়াটির
ঘাস চিবানোর শব্দ শুনে তার বিষণ্ণতা
বুঝতে চেয়েছিল। আরেক রাত্রে, সে
চোখে চোখ রেখেছিল ঘোড়াটির। এখন
হয়তো তারা একসঙ্গে ঘুরে বেড়ায় কোথাও
কোনও রাস্তার পাশে





২।।  ∆ গন্ধে সে ফুল চিনে নিত ∆




গন্ধে সে ফুল চিনে নিত,সে ছিল অন্ধ।
বিভিন্ন গন্ধের ফুল দিয়ে সে ছোট ছোট
স্তবক বানাতো। তার ইচ্ছে ছিল,লোকেরা
আসবে আর তোড়াগুলো নিয়ে যাবে।
কেউ আসত না।কারন; প্রত্যেক তোড়ার
ফুল ছিল সাদা আর বিষণ্ণতার গন্ধ দিয়ে
গাঁথা। রাত্রে,ঘরে ফিরে,নিজের বিছানাতে
ফুলগুলো সাজিয়ে সে শুয়ে পড়ত




৩।।   নাইনথ সিম্ফনি




মেয়ে ও বউ ঘুমিয়ে গেলে সে উঠে আসে
পড়ার ঘরে। প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। 
দেয়ালে টাঙিয়ে দেয় অ্যান্তনি মিকালেফের
সেলফ পোর্ট্রেটস,রেকর্ড প্লেয়ারে চালিয়ে
দেয় মাহলারের নাইনথ সিম্ফনি। বাজারের
সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের ছুরিটিই সে নিজের
গলায় চেপে ধরে আর বিভোর হয়ে যায়।
রাত্রি বাড়তে থাকে




৪।।   ∆ গণহত্যার কবরের ওপর ∆



গণহত্যার কবরের ওপর সে ঘুঘু ছেড়ে দিত
প্রতি রাত্রে। পাখিওলাকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে
সে কিনে নিত দুটো-চারটে ঘুঘু প্রতি দিন।
ঘুঘুদের ষড়যন্ত্র মৃতদের পাশ ফিরতে সাহায্য
করবে;এ রকমই তার ভাবনা ছিল। অন্ধকারের 
ভেতরও নিজেদের আলোয় নানা ছন্দে উড়ত
যখন এতগুলো ঘুঘু, তখন সে গণহত্যার
কবরের পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে যেত 





৫।।  ∆ শববাহী গাড়িদের যাতায়াতের সময় ∆




রাত্রে শববাহী গাড়িদের যাতায়াতের সময় ট্রাফিকের দায়িত্ব 
সে একাই সামলে নেয়। সমস্ত ট্রাফিক-সিগন্যালে সে 
বাজিয়ে দেয় মাহলারের নাইনথ সিম্ফনি। অন্যান্য গাড়িগুলো 
রাস্তার বামদিক চেপে শব্দহীন স্থির হয়ে যায়। এতদিনে সমস্ত 
চুল্লিই জলের তলায় চলে গেছে। শববাহী গাড়িগুলো রাস্তাতেই 
লাইন দিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। সে জানে, এমন নিঃশব্দ 
রাত্রির সফর শবদেহ কিংবা নাইনথ সিম্ফনি কেউই ভুলতে 
পারবে না




অলংকরণ - অঞ্জন দাস

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment