Friday 21 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি রুদ্র মোস্তফা’র কবিতা-




১।।   ∆ বিপন্ন প্রেমের গেরস্থালি ∆



তোমার চোখের দিকে তাকাতে ভয় হয়;
অনেক জলে ধুয়ে আমার স্বপ্নগুলো
দৃষ্টির রশিতে শুকাতে দিয়েছো:
চোখে চোখ রেখে স্বপ্নগুলো ফিরিয়ে নিতে ভয় হয়। 
অনাহূত অপরাধ মুছে দেয় ভবিষ্যতের সীমারেখা;
বেদনার গেরস্থালি অতীত 
বাসি গল্পের গন্ধ ছড়ায় সম্পর্কের বর্তমান ছায়ায়।
তোমার চোখের দিকে তাকাতে ভয় হয় :
দৃষ্টির অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে
অসমাপ্ত গল্পের অবশিষ্ট বর্ণমালা।





২।।  ∆ কক্ষ পথের দাবি ∆



কণ্ঠজুড়ে শ্যাওলা কাদা পিছলে পড়া ভুল উচ্চারণ,
বুক জুড়ে সৌভিক শৈলবেড়ি 
থমকে যাওয়া শব্দের আস্তরণ;
তবু তোমার পাশে দাঁড়াই,
নৈবিদ্দ ভালোবাসা গামারি ফলের মতো ঝরে
অনুচ্চারিত শব্দের চাপে ।
জানো তুমি-চলছে 
ভেতর-বাহিরে অলিখিত জরুরী বিধান,
স্বরবর্ণ-ব্যজ্ঞনবর্ণের মুছে গেছে সংবিধান;
কোন বন্দরেই আজ আর নেই তাদের 
প্রকাশ্য মিছিল: 
অস্তিত্ব মুছে কণ্ঠের খুব কাছে 
আজ তারা ফসিল;
তবু তুমি চাও কণ্ঠনালী ছিঁড়ে 
বেরিয়ে আসুক অন্তত চারটি বর্ণ
মেহগনি ফলের মতো ছড়িয়ে পড়ুক
দ্রোহ-প্রেম-পুনর্জাগরণে
ভা-লো-বা-সি ।






৩।।    ∆ কোন কালেই ঘর ছিলে না ∆

                                                                                                                                                      কোন কালেই ঘর ছিলে না বাসন্তীর ।
রাত জেগে কপাট আগলে কারো জন্য অপেক্ষা ছিলো না ।
বুকের রশিতে শরীর মেলে দিয়ে কেউ কখনো
ঘাম শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে বলে নি ।
অনাহূত ঈর্ষায় কেউ কখনো বলে নি,
‘অকারণে কেন জানালা খুলো,
কেনো ভিজাও চোখের কাজল ?
চুপসে যাওয়া জারুল বনে 
যে আসে ক্ষণে ক্ষণে
তার জন্য কেনো দিন গুনো ?’
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
হাত ভরা কাঁচা মাটির গন্ধে লেপটে দেয়া উঠোনের স্বপ্ন ছিলো না।
রোয়া উঠা রাতে কারো মাথার চুল বিলি কাটতে কাটতে
কখনো জাগে নি মনে সিঁধেল চোরের ভয় ।
বলে নি কেউ, ‘উঠো ভোর বেলা,
কাজ আছে মেলা,
সকাল সকাল যেতে হবে গঞ্জে ।’                                                                                                                  
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
ছিলো ঈশ্বরের লীলাসঙ্গী মা ;
ক্ষুধা ভাঙতে গিয়ে দেহ ভেঙে ভেঙে
সে চূর্ণ হয়ে গেছে জোছনা-জল-রোদে ।
বাসন্তীর মালসা ভরা সাদা ভাতে মিশে থাকে তার গুঁড়ো —
আর শরীর ঘেঁষা পীড়িত চাঁদের উল্লাসে প্রকট হয় পৈতৃক ঋণ ।                                                                       
কোন কালেই ঘর ছিলো না বাসন্তীর ।
ছিলো তাঁবু ঘেরা এক তাড়িত জীবন ।
ছিলো মাথার উপর উপচে পড়া আকাশ—
আর ছিলো ঈশ্বরের মতো বহুরূপী বাবু ।





৪।।     ∆ খুনি ∆



তুমিও এক দিন দণ্ডিত হবে স্বপ্ন খুনের দায়ে ; 
কিছু স্বপ্ন ঝলসে দিয়েছো,
কিছু স্বপ্নের চেপে ধরেছো টুঁটি, 
থেঁতলে দিয়েছো কিছু স্বপ্ন,
কিছু করেছো গুম।
প্রতিটি স্বপ্নের হাহাকার আগলে নির্বাক হৃদয়।
নিরন্তর যে সূর্য— 
মনের আলো-উত্তাপে যার জেগে উঠে ডুবে যাওয়া;
সেখানে কি কখনো দেখো না স্বপ্ন হত্যার ছায়া?
কখনো কি খুলে দেখেছো সাদা থানে মোড়ানো
মেঘের কফিনে কতোটা পচন ধরেছে স্বপ্নের?
ভারী বাতাসে ন্যুব্জ ভালোবাসায় হৃদয় কতোটা মুমূর্ষু ? 
কতোটা অকালে ভুলেছি একাল- সেকাল?
জেনে রেখো,
তুমিও একদিন দণ্ডিত হবে স্বপ্ন খুনের দায়ে।





৫।।    ∆ ভিজে যাওয়া বর্ষা ∆



আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি অভিযোজনের ছিদ্র দিয়ে 
চুইয়ে চুইয়ে কবে যেনো  ঢুকে গেছে 
আমার নাগরিক  স্নান ঘরে। 
স্মৃতির সুতো দিয়ে সময়ের মসৃণ থানে বোনা
সোনালি শৈশব সারা দেয় 
এই শহরে বৃষ্টিতে বুনোজলের  ডাকে। 

আহা, শৈশব!
ঝুম বৃষ্টিতে ঝাঁক বেঁধে কতো দিন নামি না জলে।
কতো কাল লুকাই না স্নান-রাঙা চোখ 
মায়ের শাণিত শাসনের ভিড়ে! 
কতো কাল ভাসাই না ভেলা... 
কতোকালের ভেসে যাওয়া স্কুল ফাঁকি 
ডুবে যাওয়া সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা সহ 
কেমন করে জেগে উঠে স্নান-ঘরে!

মায়ের শাণিত শাসন ক্ষয়ে গেছে 
বয়ে যাওয়া সময়ের ধারে,
তালি দেয়া ছাতার মতো জীর্ণ হয়ে গেছে 
বাবার বুকের ছাতিম—
তবু শহরে বৃষ্টিতে তাদের ঝাপসা চোখ 
চকচকে হয়ে যায়  বর্ষার জলে।
অভিযোজনের ছিদ্রে চোখ রেখে 
আমি ভিজি স্নান-ঘরে...
জানালার ওপারের বৃষ্টিতে ভিজে যায় 
দুই প্রজন্মের পুরানো বর্ষা।




অলংকরণ - অঞ্জন দাস

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment