Friday 23 April 2021

কবিতা

রঙ নৌকার ঢেউ-৬

মনোজ পাইন এর কবিতা-





১.
∆ সওদাগর ∆



শেষমেশ প্রশ্ন কর নিজের কাছে।
তোমার ভেতরে বর্ষার 
যে উৎফুল্ল মেঘমালার আবাস ছিল,
যে নদী বইছিল দুকূল ছাপিয়ে 
তারা কী সব আগের মতোই আছে?

নদী কী ভাঙেনি তার দুকূল? 
বর্ষণ ক্লান্ত হয়নি তো মেঘমালা?

সবার আগে নিজের কাছেই 
রাখতে হয় গভীর জিজ্ঞাসা।

আমি জানি সব প্রশ্নের এক
অনিবার্য উত্তর। তুমি আর 
তোমার মতো নেই!
আর আমার  ভেতরে
বাস করে এক আদিম সওদাগর। 




২.
∆ শব্দ রঙের নৌকা ∆


দুপুর গড়িয়ে পড়ছে বিকেলের দিকে।
ছায়া রঙগুলি, সব মায়া শেষ করে 
দাঁড়িয়েছে যেখানে 


সেখানে অশত্থ তলার ঘাটে বাঁধা আছে 
বয়সে পরিপক্ক এক নৌকো।

নৌকাটি হাওয়ায় হাওয়ায় ক্রমশ দুলে দুলে উঠছে!
হঠাৎই কবি খেয়ল করলেন 
নৌকায় হাজারো রঙের বর্ণমালা আর শব্দ ! 

এত রঙ কে দিল? 
কোথা থেকে এল এত শব্দ? 
শব্দগুলো এত রঙিন হয় কীভাবে? 

কেন মাঝিহীণ রঙের নৌকাটি
বাঁধা এক নির্জন ঘাটে?

চমকে চমক ভাঙে, দেখি এক বাউল গান গায়,
"কে যাবি নিয়ে যা আমায় শব্দ রঙের নৌকায়"




৩.
∆ প্রেমিক জন্ম ∆



আমি তো কান্নার কাছে বসিনি কখনো!
বিষাদসিন্ধুক কবেই ছুড়ে দিয়েছি,
নাথারথলির বড় বিলে।

সেখানে পাখি আসে প্রতিদিন।তারা ভালোবাসে।
ওদের ভালোবাসার সুরে হৃদয় গ্যাছে ভরে।
হে পুরাতন শৌর্য, 
আমি অশোকের রাজত্বে কবেই হেঁটে পেরিয়েছি
তোমার নিশ্চন্তপুর।
অভিবাসীদের পথ কক্ষনো কোন  কালেই
ফুলের আশ্বাসে ভরা থাকে না।

আমি তো কোনদিনই চাইনি
আমার পথ নিষ্কণ্টক হোক!
হে বিষাদ,হে অনন্ত শোক
আমি চাই প্রেমেই আমার বারংবার 
নবজন্ম হোক।




৪.
∆ প্রথমবারের সেই কালো জিন্স ∆



আমার প্রথমবার কেনা কালো জিন্স,
তার ভেতরে বেশ কয়েকটা পকেট ছিল!
আমি খুচরো টাকা পয়সা জমিয়ে রাখতাম।
প্রথম প্রথম একটাকা,আধুলি সিকিপয়সা
তারপর প্রথম প্রেম পত্রটিও।
  
প্রথম প্রেম ভেস্তে গেল দ্বিতীয়, 
প্রেমিক হৃদয় কখনোই প্রেমের পথ ছাড়ে না।
তবে তৃতীয়টি আসার আগেই 
জিন্সটাই গেল ছিড়ে!

এখনো কালো জিন্স কিনি, 
তবে এখন 
খুচরো পয়সার বদলে ডলার জমাই
আর কালো জিন্সের জন্য
জমিয়ে রাখি এক আকাশ মনখারাপ। 






৫.
∆ ঈশ্বরকে চিঠি ∆



মেঘপ্রদেশে শোয়ানো রয়েছে ডাকবাক্স
সেখানে ইশ্বরকে চিঠি লিখল একজন।

নিচে তখন একদল পতাকাবাহী লোক
ধর্মের গান গাইতে গাইতে
বিভাজনের শ্লোগান দিতে দিতে হেঁটে যাচ্ছে 
রাজভবনের দিকে।

সিণ্ডিকেটের ইন্ধনে মিছিল করলো অনেকেই! 

ঈশ্বরকে চিঠি লেখা ছেলেটি তারপর থেকে
প্রতিদিন একটি চাকুরীর স্বপ্ন দেখে।







ছবি- মেহবুব গায়েন
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

No comments:

Post a Comment