∆ দিশারী মুখোপাধ্যায় এর কবিতা -
[] বিপন্ন প্রেম
তোমার সঙ্গে অনেক কথা ছিল , বলা হল না ,
কাছে যাবার রাস্তা পাচ্ছি না ;
টেলিফোনের টাওয়ারও সক্ষম নয় ।
কয়েকটা সুন্দর সুন্দর জামা বেছে রেখেছিলাম
তোমার কাছে যাবার সময় পরব বলে ,
যাওয়া হল না ,
পরা হল না ।
রাস্তাগুলো মাঝে মাঝে কাচের পুতুলের মতো ভেঙে গেছে ।
ভাঙা রাস্তাগুলোর মাঝে মাঝে
মৃত ও ধর্ষিত বিশ্বাসের শব পড়ে আছে ।
যে সব কথা বলা হল না , যেগুলোকে এতদিন
সুন্দর ও পবিত্র মনে হতো ,
আমার নিজের সেই কথাগুলোকেই এখন ফাঁদ বলে মনে হচ্ছে ;
ধারালো ছুড়ির মতো তাদের রূপ।
ঘরে ফিরে আসি ।
হ্যাঙারে ঝুলন্ত সুন্দর জামাগুলোকে এখন
প্রতারকের পাসপোর্ট বলে মনে হয়।
[] বাগানের বাইরে থেকে
ভেবো না, না-ডাকলেও ,গেট খুলে বাগানে ঢুকব ,
দরজায় কলিংবেল আছে বলেই তা বাজাব।
তোমার ঘরের করিডরের নৈঋতকোণে একটি পামগাছের পাশে
বিষণ্ণ মনে বসে আছে ভায়োলিনটি ,
আমি গিয়ে যদি তাকে একটু স্পর্শ করি
একটা হাল্কা সবুজ রঙের উষ্ণ আলো জ্বলে উঠবে তার চোখে ;
কিন্তু সংবিধান অমান্য করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
সে একদিন আমার কাছে পরামর্শ চাইবে , - এই বিশ্বাসকে
রোপণ করে চলেছি অবিরাম।
ডাকোনি বলে ভেতরে ঢুকিনি ,
ঢুকিনি বলে চোখে দেখিনি , হাতে স্পর্শ করিনি ,
কণ্ঠে ধারণ করিনি ঈর্ষার কামড়।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়েও আমি দেখতে পেয়েছি সবুজ গর্ভাশয় ,
দুহাতে মেখে তৈরি করেছি প্রতিমার মাটি ,
তোমার বিষদাঁতের ওষ্ঠে দিয়েছি চুম্বনের মধু।
ঠিক এই মুহূর্তেই একডজন শাড়ি উড়ে যাচ্ছে আকাশে ,
একটু পুরনো ভাষায় যাকে বলে বলাকা।
[] মধ্যপদলোপী
এই মধ্যবর্তী সময়ে যে লেখাগুলো শরীরী ভাষা পেল না
তারা এখন কোথায় রয়েছে খুঁজে পাব না।
যেসব নিরাকার যন্ত্রণা আমার দৈহিক যন্ত্রণাগুলোকে লঘু করছিল
তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে গেছে একটি মেয়ে ।
তার অকুতোভয় শরীরের মধ্যে পারমাণবিক আকার পেয়েছে
ওদের তীব্রতার মিনারগুলো।
আমার হারিয়ে যাওয়া কবিতাগুলোকে আমি
তার কাছেই যেতে বলেছি এখন ,
সে তাদের অভয় মন্ত্র দিয়ে আবার ফেরৎ দেবে আমাকে।
এই মধ্যবর্তী সময়টুকুর বিবরণ
তোমরা ইতিহাসের মধ্যে রেখো না ,
পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ইতিহাস।
অলংকরণ- কনিষ্ক শাসমল
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment