Thursday, 29 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৭


হামিদুল ইসলাম এর কবিতা -

বিষণ্ণ রাত
                              

কতোদিন বৃষ্টি নেই
হৃদয় খরা
টুপটুপ শিশির ঝরে রোদের দুপুর


শহর বোঝাই মিথ্যের বেসাতি
তবু স্বপ্ন ফেরি করি
লোলিতার বুকে আঁকি ভোরের মিছিল


তুমি আসলে ভোর হয়
তুমি গেলে রাত
তোমার নির্যাস তুলে রাখি পালতোলা নৌকোয়


দিন গুণি 
কথা গুণি
আমার কথার ভেতর ঘুমিয়ে থাকে বিষণ্ণ রাত


বিবস্ত্র


বিবস্ত্র শব্দের সাথে ঘর করি প্রতিদিন
নষ্টাল মায়া বুক বরাবর
তুমি আছো আমি আছি
কবিতার হৃদয়ে জেগে থাকি সারারাত


তুমি কাছে
তবু কতোদূর
প্রেমের ক্যাক্টাস ভেঙে দেখি কোকিলা সুখ


নির্জন উপত্যকা
স্বপ্নে ভাসে কালবেলা
তিরতিরে নদীর বুকে ইচ্ছেগুলো সাজাই


সব কথা ফিসফিস
তুমি আমি বিবস্ত্র ক্ষণকাল পরই 


কবিতা


আশায় আশায় দিন গুণি
গোলাপ ফোটে
রাতের খোলস ফেটে বেরিয়ে আসে ঈশ্বর


লাল ঘোড়া নীল ঘোড়া
বুকের উপর
প্রতিদিন মাড়িয়ে দিয়ে যায় প্রাচীন বসত
রুক্ষ ফাগুন


জীবন এমনই
এমনই জীবন
হররোজ কবিতা হয়ে ভাসে শুকনো জলের উপর

অলংকরণ - প্রসাদ‌ মল্লিক‌

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 27 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৬


ভবানী বিশ্বাস এর কবিতা -

তুমি


ডুবে যাচ্ছি, অতলে
এভাবেও ডুব দেওয়া যায়! 
জানতাম না... 

হাসছি, ভাবছি
হঠাৎ হঠাৎ বুঝতে পারি
হৃদয়ের স্পন্দন... 

ভয় নেই, দুশ্চিন্তা নেই
আমি নীরব থাকব... 

শুধু বুঝে নিও
তোমায় ভাবলেই এমন হয়… 


বিরহ


চলে যাবে? যাও... 
আমি কিছুই জানতে চাইব না… 

বুঝি...
অথচ কিছু বলি না

ক্ষতি চাইনি– 
শুধু ঈশ্বরকে বলি, 
আমার চোখের জলের হায় যেন 
তোমায় স্পর্শ না করে…

নদী হবো


তুমিই সেই,
যে, শুধু দিতে জানে... 

আমি থাকব না
তবুও দিতে চাইলে... 

মুখোমুখি বসার এই শেষ মুহূর্ত

সন্ধ্যা হলে অমাবস্যা নামবে
আর মুখ দেখব না

আবারও বললে- কী চাও! 
বললাম- দুঃখ দাও, নদী হবো...


অলংকরণ - প্রসাদ‌ মল্লিক‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 26 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৬


মহুয়া জানা’র কবিতা -

বিরতি অর্থে 

সূর্যের একটা বিরামহীন দিন শেষ ---
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে মুখটা 
সময় আছে ভেবেই জলচৌকির 
উইয়ের ঘরে নিবৃত্তির ক্ষুধা অব্যাহত ,
রাতে শিকার আসবে জেনে 
ঝিমিয়ে নিচ্ছে কালপেঁচা ।
এক ক্ষনজন্মা অবকাশে 
থরে থরে গজিয়ে উঠছে পাতা 
অভিমুখ চড়াই জেনেও 
আর একটা অভিযানের প্রস্তুতি ।


চাঁদ জাগছে কোজাগরী 

রং ঢালা উৎসব , ছেঁড়া ছেঁড়া কান্নাও চৌকাঠে 
তবু কোলাহল থেমে গেছে 
বিচ্ছিন্ন দ্বীপে দীপজ্বলা কোমলতা --
নির্মল ছেলেখেলা , নিবেদিত প্রসাদ 
শুষে নিচ্ছে সব অপূর্নতা ।
রসকলির মুর্চ্ছনা কন্ঠ ছাপিয়ে আলতো আলতায় 
অন্তঃসলিলা শুচি প্লাবনে 
চাঁদ জাগছে কোজাগরী --
তীরে তখন নিভন্ত ভস্মেরা 
থিতু হচ্ছে কদমের তলে ,
অদৃষ্টের বাঁশী ভরা শ্রাবনের অপেক্ষায় ।


সম্ভাব্য জলচিত্র এবং 

দিগন্ত জুড়ে তখনও সূর্য 
প্রথামত , সমুদ্র বিদায় জানিয়ে নেমে যায় ।
তীরের পথে অনড় চাঁইয়ের কাছে 
নতজানু প্রতিদিন ---
ক্ষয়স্রোত সমকোণে হিসাব লিখবে অনেককাল ।
শিলাময় ক্যানভাস ---
সংগোপনে ফুল ফোটে , ফুল ঝরে 
সম্ভাব্য জলচিত্র কল্পনায় এঁকে 
শূন্যকে লিখে ফেলি সব কথা ---
কিছু তবু পিছুটানে মুছে যায় ,
রয়ে যায় অনাগত দৃশ্যেরা ।


ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 25 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৬


শিশির আজম এর কবিতা -


রক্তের ফোঁটা


রক্তের প্রতিটা ফোঁটাই গুরুত্বপূর্ণ
মানুষের রক্ত
শুয়োরের রক্ত
তেলাপোকার রক্ত
ভ্যান গঘের কাটা কানের রক্ত
চাঁদের রক্ত
অপ্রকাশিত বইয়ের রক্ত
রক্ত
রক্ত
ফ্যাকাশে মুখ কিশোরী বসে আছে
আয়নার সামনে
নতুন রক্তের আতঙ্কে


মোমবাতি কিছু বলতে চেয়েছিল


স্বীকার করছি মোমবাতিটা আমিই কিনে এনেছিলাম
বাজার থেকে
গত রাতে যখন আমরা কেউ ঘুমোইনি
এমন কি ডিনারটাও সারিনি
তখন
আমাদের মারাত্মক অমনোযোগিতার সুযোগে
পুড়লো
পুড়ে পুড়ে শেষ হয়ে গেল
ওর কথা আমরা শুনতেই পেলাম না


কফির টেবিল

আজ বেশ সকাল সকাল সূর্য আমার জানালায় উঁকি দিচ্ছে
আজ
আমাকে সে বসাবে কফির টেবিলে
আজ
নিজেকে আমি বারংবার বোঝাচ্ছি
কফি
আর কফির টেবিল
কোনটাই যেন তোকে খেয়ে না ফেলে

ছবি- বিপ্লব ভূঞ্যা
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Tuesday, 20 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৫


শুভ্রজিৎ‌ মহাজন এর কবিতা -

আশ্রম


তোমার দোষে,ঈশ্বর খুঁজি
যতবার চোখ বুঝি
হয়না প্রকট

আমি যতবার বলি ঈশ্বর
নির্বাণ একটা শব্দ
প্রবল,বিকট...


পরম ২
    

তোমার সাথে কটিয়ে দিতে পারতাম স্বর্গ মর্ত পাতাল,
অথবা তোমার সাথে যাপন হতো ভূত ভবিষ্যৎ অতীত,
রাতের ভয় দিনের আলো আদিম কোন নক্ষত্রে,দুরের পাহাড় কাছের নদী শৈশব আরো কতকি,এক ছাদের মায়ায় আমরা বৃদ্ধ হতাম।মিলনের সূত্রকালে প্রার্থনায় থাকতো ঈশ্বর,চাইতাম আলো বাতাস উর্বরতা।সাথে একটি প্রবাদবৃক্ষ।বিপরীত মুগ্ধতায় হাজার বছর ধরে মহাশূন্যে..


চাতক


তার
অনলে

মধু
জলে

হয়
ত্রাণ,

ফিরতি
পথে

একা
বাউল

ধরেছে
গান

ওরে দিন তো গেলো, সন্ধ্যা হলো...

ছবি - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 19 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৫


মহিউদ্দিন সাইফ এর কবিতা -


১.
যখন উদ্ভিদ ছিল, সে বলত, তাকে যোনি বদলাতেই হবে। কেউ ডালপালা ভাঙলেও তাই দুঃখ করত না অন্যদের মতো। বসন্ত বাতাস এলে সে ফিরিয়ে নিত মুখ। ফুলও ফোটাত না। যোনি বদলানোর নেশায় সমর্পিত ছিল অনিমিখ। এমনকি পরজন্মের কথা ভেবে গরু ছাগল শুয়োপোকাদের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে করত সখ্যতা।

যখন সে পূর্ণ মহীরুহ। অভিমানী ডালপালারা সব মমতাহীনভাবে বেড়ে গেছে। সেই আসন্নসম্ভব দিনে সাঁওতালপাড়া থেকে টামাক বাজিয়ে এল শিশিরপরশস্নিগ্ধ মাটির সন্তান। সিঁদুর কাজল লেপে শুরু হল পুজো। গাছটা সেদিন দেবতা হওয়ার গর্বে সারারাত হাত-পা নাচিয়ে গেয়েছিল আবির্ভাব দিবসেরই গান। আর তার ভেতর থেকে উঠে আসছিল পাথুরে ধ্বনির তীব্র ইঙ্গিত। বাসন্তী বাতাস, সে-ও বয়ে যাচ্ছিল পাশ কাটিয়ে। সন্তর্পনে অন্য জগতে।


২.
অচেনা পাথরে বসে যেদিকে তাকাই, বিস্মিত হই। দেখি নতুন জাহান। তার বিকিরিত ইশারা, কম্পন। এই সহজ মাটির বুকে তা-উম্র যখনই দেখেছি অন্ধকার। উন্মোচন হয়েছে জাহান। মলে ও কমলে বসেও পেয়েছি সমন্বয়। স্পর্শ করে জেগেছে শিহর, লীলায়িত বঙ্কিম জীবন।

দেখেছি। কোনো সম্পন্ন দৃশ্য নেই লণ্ঠনের এপারে ওপারে। তবু কার জেবা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি নিরালাতে। বারবার কত যে বসন্তঋতু এসে মুকুল ফুটিয়ে, ঝরিয়ে গেছে চলে, উৎসবযামিনী শেষে অনিবার্য দেশান্তরপথে। রেখে গেছে ক্ষতগুলি। কতগুলি স্তব্ধ বকুল আর বেলি। তাই তুলে, গভীরতম জোছনায় আমি অদেখা বনের পানে হাঁটি। সরে সরে যায় ক্রমে দেউল, সরাইখানা, জাতকের দেহগুলি, সঞ্চিত ভালোবাসা, বেদনা, বিষাদ, রাত্রি-দিন।


৩.
তাকে আমার পাওয়া হবে না কোনোদিনই। আমাকেও পাবে না সে জানি। চাঁদের লতাটি দেখে এই বেদনার বোধ আরও তীব্র হল। আবছা জোড়ের ধারে বসে বসে তাই তার মুখ আমি অপ্রাপ্ত রেখা-রঙে আঁকি। ডেকে ডেকে বসাই চারিভিতে নিমগ্ন মনোময় রাত। বন্ধুলি ফুলের পানা ঠোঁট আঁকি, দুটি চোখ ভীত কৃষ্ণসারিণীর, ভুরু জুলফিকার। খসলা ফুলের পারা নাক। গ্রন্থলকারবৎ কানের পাশেই শিরীষবিস্ময়ে কাঁপা নিবিড় কুন্তল।

তাকে দেবনা বেদনা আমার, হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া পাতার বিকার। গাজার মৃত্যুলীলা, জন্মভূমির ক্ষয়কাল, কিছুই জানাব না তাকে। যে যন্ত্রণা আমাকে স্থবির, বিবর্ণ করেছে, গহন বারতা অন্ধকার। আমি তার কিছুই দেবনা তাকে।

এই স্বল্প জীবনে সে সবকিছু বুঝে যাবার আগেই বলে ফেলব, "রাত্রি হয়ে এল। এই নির্জন জোড়ের ধারে আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।"

৪.
আমি কি বুঝেছি বলো কী অর্থ তার সন্ধ্যেবেলা ভিজেচুলে আসার? সে-ও কি জানে সে কেন আসে এত মাড়িয়ে কাঁটাতার? যখনই সে আসে এই নিরক্ত পটাকাশ প্রতিবাদ করে। ভেঙে পড়ে ফুলাধার, নিদ্রাহীনতার স্রোত বহে। আমি যুক্তিহীন বচন ফুকারি আর বিচিত্র মালা পড়ে ছিঁড়ে।

তবুও চাই, তার মুখের ভাষাই হোক ভাষা কবিতার। তার প্রেম, নিগূঢ়তা আর আসা কাছে, যেন এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকে।
কেননা কী হবে এত ভেবে?
তারই করুণা তাই এত ভালোবাসি। করুণা সরিয়ে নেবে, মাটির পুতুল ফের হয়ে যাব মাটি।

সমস্ত অশোক রইবে পড়ে।

ছবি - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 18 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৫


সংস্কৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়‌ এর কবিতা -

আরোগ্য

রোজ লিখি না
মাঝে মাঝে লিখি

নিয়মিত বাঁচি না
কিছুদিন বাঁচি


অপেক্ষা

তোমার সাথে দেখা হবে
পুরোনো বইয়ের মতো

সেখানে দাগ কাটেনি কেউ,
আজও পড়েনি ভাষা,
অসম্পূর্ণতা রেখে গেছে...

তুমি ছেড়ে যাওনি তাকে
অপেক্ষা করছ

হারিয়ে যাওয়া মানুষের
শেষ পাতা ওল্টানোর শব্দ


বসন্ত

আজও শহরে
ফুল বিক্রি হয়

এখানে ভালবাসা
অবৈধ নয়...

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday, 15 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৪

খুকু ভূঞ্যা’র কবিতা -


আমাদের জীবাশ্মগুলি

দূরে ওই মেঘের সঙ্গে আমার মিইয়ে যাবার কথা ছিল
বৃষ্টি এনে দিল মাটির কাছে
ভেবেছিলাম মাটি আমাকে শুদ্ধ করবে
জন্মের যত ক্ষতচিহ্ন সব মুছে দেবে
মাটি বিষ খেয়েছে,যেন সতীশের বউ
গজলা ওঠা বুকের ভেতর জাপটে ধরে বলছে এই নাও আমার আত্মহত্যা

ভেবেছিলাম কোঁচড় ভর্তি ঘাসের মত কোমলতা দেবে
সেই তো তুমি মৃত, আমি মৃত
আমাদের জীবাশ্মগুলি মিছিলে মিছিলে চিৎকার করছে
এবার সত্যযুগ আসবে


নিস্পন্দ

পৌষের চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবি আমাদের মৃত আবেগগুলি ঝরে পড়ছে নিঃশব্দে
যেন সদ্য বিধবা নারীটি সাদা কাপড় পরে তাকিয়ে আছে সর্ষে ক্ষেতের দিকে
পৃথিবীর ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি মুছে গিয়ে মৃত্যুসফেদ সুর বাজছে ঝরা পাতায় ঘাসে ঘাসে

আমি কখনও চাইনি আলোর শব বুকে নিয়ে অশৌচ পালন করি
অথচ আমার স্নায়ু শিরায় গোধূলির পাণ্ডুলিপি
কারা ছায়া ওড়ায় শোক ওড়ায়
আমি মৃত জোসনার মত ক্রমে সাদা হয়ে যাই

স্বপ্নছাওয়া উঠোনে পড়ে থাকে পৌষের নিস্পন্দ অঙ্গীকার


ইচ্ছের কলহ

প্রত্যাশাগুলো একা হয়ে যাচ্ছে
যতবার ভেবেছি অনেক্ষণ আজ আকাশ দেখব
হঠাৎ পাখিটি পথ হারিয়ে জানিয়ে যায় অসীমেরও দুঃখ আছে
মৃত্তিকার ওমে যে ঘাস সুবাসিত
তাকে কোলে নাও, আঁচল খোঁজে চাবির গোছা

কতদিন ভেবেছি সোনালী স্বপ্নের মত মুক্ত হব
লাশ হত্যা খুন অথবা অপরিনত বধূর নিরুচ্চার চোখে ডুবে যায় গোপনে জমানো কোজাগর
এজমালি হয়ে যায় সুখ ইচ্ছে আকাশ

সবই খোয়া যায়
সবই রয়ে যায় এই জীবনে এই শরীরের
অভিন্ন ছায়ায় ছায়ায়

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌ 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 14 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৪


আশিস মাইতি’র কবিতা-


সুষমা নিয়েছি শুষে


সুন্দরের থেকে চেয়ে নিতে
বসি বৃক্ষতলে, প্রান্তরের মুথা ঘাসে 
তিয়াসি নদীতীর কিংবা শিরীন সানুদেশে অপলক
শুভ্র বিভাজিকায় কখনোও চেয়ে থাকি তরল চোখে।
আদর-অনাদরে উপুড় করে দিয়েছ ভিক্ষাপাত্র
সুষমা নিয়েছি শুষে হাড়গিলে পাখিটির মতো
আমি র‍্যশনাল, রৌরব বুঝি না।
নভেম্বরের শেষ বিকেলে লাজবতী লাবণ্যকে
কাছারির নির্জন অরণ্যে সংবৃতি দিয়েছো।
লিপ্তপদ প্রাণীটির সরোবরে, নিভৃত বিশ্বাস। 
স্বর্গদ্বার সে পেছনে রেখে, সেই নির্জন রাতে
পূর্ণচন্দ্রের আকাশে সংবেদী, স্হির, সমান্তরাল
পাহাড়ের অবয়ব, আমি দেখেছি।


বিষাদ

শিমুল সুতোয় বাঁধা অমোঘ বিধান।
বার বার ফিরে ফিরে আসে,তবু
বাসনা বিহ্বল নিঃশব্দে আগুন জ্বেলে
ফাগুনের সীমানা ছাড়ায়,
গাছেদের প্রান্তরেখা দিয়ে যেদিন
অবয়ব ফুটে ওঠে অসহায় পর্বতের ছায়া।
পূষনের প্রতি তোমার একমুখী প্রণয়
অলজ্জ সাহসিনী শীলাবতী, বয়ে যাও অন্তহীন…
পিঙ্গল উষ্ণীষে কুন্ঠাহীন জেগে আছে
চপল প্রেম, একবার ফিরে এসো স্মৃতির দুয়ারে;
জানি শীতের সময়, পাতা থেকে 
ঝরে পড়ে শিশিরেরা আরেক পাতায়।
তথাগত, পিপুলের নিচে স্মিত হাস্যময়!

দ্যোতনা

অলীক বৈরাগে জানি একা একা লাগে,
যাওয়া আর হলো কৈ, মেঘের ওপারে?
পোড়া হাত আকুল খোঁজে কিঞ্জল আলো
নিবিড় বুৃকে লুকোনো, নিত্য যা ধক ধক বাজে। 
কাঙ্খা সংক্রামিত হলে সব সম্পর্ক কায়িক হয়।
এই ভাবে হারাই হিতৈষী, অতীত ঐশ্বর্য হিমঘুমে…
আমারও ঘুম লাগে, ক্রমে রাত নামে,
পতঙ্গের আওয়াজ শুনি ম্রিয়মান উষ্ণতার বিষাদে। 
কুমুদ পুকুরে ফড়িং হলুদ ডানা মেলে নিরন্তর,
লাল চাঁদ উঁকি দিয়ে অমোঘ দ্যোতনা আঁকে,
কাগজের সারস ভাসাও কেন, হে বিষাদময়ী!

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 13 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৪

দিশারী মুখোপাধ্যায় এর কবিতা -

নিজেকে অপ্রিয় করে 
 
নিজেকে অপ্রিয় করে তোমাদের চোখে 
দাঁড়িয়ে রয়েছি এই অনতিদূরেই ,
বুঝে নিতে চাইছি বন্ধু কীরকম লাগে এই খেলা ।
কতটা হাতুড়ি ঠিক সহ্য হয় আমাদের সামান্য প্রেমে ,
রোষের কামারশালে কতক্ষণ টিকতে পারে প্লাস্টিক-মন।
আমার শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বেড়াই ,
দেখতে চাই অতিষ্ট হওয়া কত দ্রুত শিখে নিতে পারো।

এত এত রঙ আছে পৃথিবীতে 
শুধুমাত্র সফেদ সাজ পছন্দ হয় না আর , 
কালোকেও একবার সাধ হয় আলিঙ্গন দিতে ।
আমার কর্কশবাক্যে নাইই যদি খুশি হও  নাইই হবে,
অখুশির বিভা লাগলে 
তোমাদের জামার প্রিন্ট কীরকম হয় , জানা হবে ।

আমি যদি একবারও বিষদাঁত ব্যবহার করি , দেখা হবে 
মৃত্যুর ঠুনকো ঘায়ে 
তোমাদের অমিয়-রূপ কতটুকু টেকে ।


চলো সূর্যের সঙ্গে 
 
চলো , সূর্যের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আসি ।
অস্থির ভেতর যত জড়তা ,দুর্বলতা ,অভিমান সঞ্চিত হয়েছে ;
তার কাছে বিস্তারিত বলি সেইসব।

কতদূর যাওয়ার কথা ছিল আমাদের এই মানুষ-জীবনে,
কতটুকু যাওয়া হল,
বাকি রয়ে গেল আরও কত বেশি ,
সেইসব নিয়ে সফেন আত্মস্মৃতি লিখে লাভ নেই।
চলো, তাকে সব খুলে বলি।

সর্বাঙ্গ দিয়ে যদি তাকে করি আলিঙ্গন ,
সে তার উষ্ণতা দিয়ে আমাদের সব অপারগতা 
ছাই করে দেবে ।
আর কোনো যন্ত্রণা, কোনো অনটন 
আমাদের ভাঁড়ারের বাড়ন্ত সামর্থ্য নিয়ে 
ব্যঙ্গ করতে সাহস পাবে না।

চলো, সূর্য-সঙ্গমে কিছু রতি 
যথাযথ ব্যবহার করি।


ওহে নিশ্চয়তা ,আর কতদূরে 

ওহে নিশ্চয়তা , আর কতদূরে তুমি ঘাপটি মেরে আছ ?
পৃথিবীর সব পথ হাঁটতে হাঁটতে শেষ হয়ে এল ,
ঠিকানা কি কোনোদিন পরিচিত হবে না আমার সঙ্গে 
এ জীবনে ? 

মধ্যাহ্নে ছাদের কার্নিশে বসে 
বিজাতীয় পরিচয়হীন দুটো পাখি 
পরস্পরের কথা নিজ নিজ বোধ দিয়ে বুঝে নিচ্ছে ঠিক ,
তাদের তো ধরা দাও তুমি সহজেই আপন গরজে।

ভাষা দিয়ে তৈরি হয় আমাদের যত ভালোবাসা ,
ভাষার অভাবে তারা মারা যায় ইতিহাস জুড়ে ।
এই নিয়তির অন্য কোনো অন্যথা হবে কি কখনো ,
নিশ্চিত বাড়ির খোঁজ আসবে কি আমাদের কাছে? 


তোমার সমস্ত কথা  

তোমার সমস্ত কথা হানা দেয় আমার বাড়িতে ,
আমার উঠোনে যত গাঁদা কসমস - এই শীতে ,
তাদের পাপড়িতে লেগে থাকে ।
গরম কফির ছোঁয়া তোমার দৃষ্টি ছুঁয়ে ফিরে আসে বলে 
আমার হরমোন-তন্ত্র রম্য হয়ে ওঠে । 
এই কথা জানা হয়ে গেছে বলে 
অতিরিক্ত দেমাক দিয়ে নিজেকে অমিল করতে চাও।
তোমার কথারা কিন্তু ,যা যা তুমি বলেছিলে একসময় ,
জলের বিন্দুর মতো ভেসে ভেসে ফিরছে হাওয়ায় ;
তারা ওই দেমাকের কথা ভেবে নিরস্ত হয় না কখনও।

তোমার সমস্ত ঘ্রাণ লেবুর পাতার দেহে 
যেন ক্ষীর , নাচে কাফি-স্বর হয়ে ।
তোমার সমস্ত ছায়া 
উজ্জ্বল আলোয় ভরে থাকে ।


জানি এটা বিষ 

জানি এটা বিষ ,
মুখে নিলে মৃত্যু অনিবার্য।
তবুও, সামান্য মৃত্যুর ভয়ে 
বিষের মোহিনী-রূপ ,
মধু-স্বাদ 
অস্বীকার করতে পারি না ।

জানি ঢি-ঢি হতে পারে ,
সমাজে ,সভায় 
পদচ্যুতি হতে পারে 
সংসারের দাক্ষিণ্য প্রাপ্তি থেকে ,
তবুও গহ্বরে ঝাঁপ 
না দিয়ে পারি না ।

জানি ওটা শব্দভেদী ,
বুকে এসে বেঁধে ।
তবুও জলের সঙ্গে মিলনের কালে 
শীৎকারের শিল্পরূপ 
না এঁকে পারি না ।

ছবি- মেহবুব গায়েন
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 10 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৩


দেবার্ঘ‌ সেন এর কবিতা -

অসম্পৃক্ত 

দুটো মানুষের ছায়া মিশে যাচ্ছে, 
আলো যেন পাউডারের মত 
ছড়াচ্ছে মৃদু দূষণ—
চারপাশে বন্ধ্যা বাতাস
প্রজাপতিরা রঙ মাখছে সাদাকালো। 

মনকে কেন্দ্র করে, ঘুরে চলেছে গ্রহেরা—
কক্ষপথ মাড়ালেই টের পাবে তরঙ্গের, 
তোমার চোখে কাঁদানে গ্যাস এসে 
মর্মান্তিক হতে চাইবে সময়।

অথচ তোমার হাতের সমস্ত রেখাই তো
চেয়ে চেয়ে থাকা বৃষ্টির-কাল।
যেমন দুটো মানুষের ছায়া মিশে যাচ্ছে 
তবু মানুষ দুটো মিশতে পারছে না কিছুতেই।

ব্যাপন

অবজ্ঞার মতো এক দূরে ঠেলে দেবার প্রক্রিয়া থেকে, 
নিজেকে ঢেকেছি অন্ধকারে—
এ অন্ধকার দেশলাই বাক্সের ভেতরে থাকা অমিয় আড়াল।
প্রক্রিয়া যতই নিষ্ঠুর হোক, বিস্মিত হই না আর। 
যতভাবে ভাঙার থাকে বা থেকে থাকে ভাঙার
তার থেকেও মিহি এ যাপন থরে থরে বারুদমাখা। 
তোমাকে বলতে পারার মতো কোনও কথাই আর নেই, 
নেই কোনও বায়ু ধোয়া জল।
বিশ্বাসের বিষে বিষে জুড়ে থাকা নশ্বর ভাইরাস 
সাজিয়ে তুলি আলমারিতে। 
একদিন আলমারির পেট থেকে 
গ্যাস অম্বলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে চারিদিক।

রাঙামাটি মিথ

মন বড়ো ছোট বলে কিছু হয় না, 
যা হয় তা সবটাই বড়ো। 

জন্ম থেকে কোলাহল আর কাঁচে 
পা কেটে যায়
পা কাটতে কাটতে, 
ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস প্রগাঢ় হয় এমন 
যেন তা রাঙামাটি। 

রাঙামাটি, বিশ্বাস সবই কিন্তু মিথ
মন বলে যে বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া এতো
সে আসলে মিথেরই পক্ষপাত

কোলাহল অথবা কাঁচ থেকে 
জন্মের পা কেটে যায়, কাটতে কাটতে তখন
মন দিয়ে মনকে দেখি—

কখনও তা রক্তশূন্য 
কখনও বা রক্তিম।

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday, 9 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৩


হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়‌ এর কবিতা -

লুকোচুরি 

ক্রমশ রাত গভীর হলে অন্ধকারে আমাদের আজন্মের লুকোচুরি শুরু হয় 
মিউট করা টেলিভিশনে আলোও তখন ম্লান হয়ে আসে আজব সে চু কিত কিত ,কবাডি কবাডি খেলা
ছোটাছুটির মাঝে এক সময় ললিতা বিশাখা হাতের মুঠোয় উঠে আসে, ধরা দেয় ঊর্বশীর নগ্ন শরীর 
মোহ ময় লাস্যে যেন মোম ,যেন কস্তুরী মৃগ
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো ঝুনে খামচে অদ্ভুত সব হযবরল. ..দাঁত বসিয়ে দেওয়া. ..ঠোঁট থেকে ঝরতে থাকা রক্তের লালা , ,নোনাস্বাদ চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে তবু কেউ কাউকে দেখতে পাই না. ..
সংঘাতজটিল পিঠ থেকে ক্রমশ নেমে আসা পার্বত্যভূমি কেঁদে কঁকিয়ে ওঠে, কবিরা শুদ্ধাচারে
যাকে বলে জঙ্ঘা,যেন প্রতি অঙ্গ কাঁদে রতি মহারণে
পা থেকে মাথার চুল অব্দি নিঃশ্বাস উদ্গীরণে
অধীর হয়ে ওঠে যেন মুহূর্মুহূ কেঁপে ওঠে সসাগরা 
মেদিনী, রেকটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা সবিশেষ 
পূর্ণতা পা য় ,সেও যেন বলতে চায় ,আর নয় আর নয় স্বর্গ মর্ত্য পাতাল যে ধ্বংস হয়ে যায় ......


জোৎস্নার ভাষা

আমি কিছু বলার আগেই সে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় হাত,আমি কি এই হাত স্পর্শ করবো,টেনে নেব বুকে. ..? জানিনা সমস্ত কথায় আজ কথার কথা হয়ে ধরা দিচ্ছে মথুরার হাটে
ক্রমশ তোমার ছায়া দেখা যায় 
শহরজুড়ে মেঘ জমে ,বৃষ্টি পড়ে 
সুয়োরাণি দুয়োরাণি আমাকে দেখায় ...
কী যেন মায়া তার শরীরে, ফেলে যায় গতিপথ সবুজ
ঘাস ও সোনালী ধানে ,গোপন কথার মতো 
মিলনের আনন্দ স্বপ্নের কাজল এমনকি পার্বতী ও পরমেশ্বরের অলৌকিক ষড়যন্ত্রে চিকচিক করছে তখন ভালবাসার শালগ্রাম শিলা 
কিন্তু কোনও ছবিই আজ স্পষ্ট নয় ,মনে হয় 
প্রেম ভালবাসা আঁকতে আঁকতে ঘৃণা ঈর্ষাকাতর 
ক্রোধ ঢেউ গুনতে গুনতে রাত্রি কাবার হচ্ছে শুধু 

ভাবছি, অন্ধকারের আলো আর জ্যোৎস্নার ভাষা তাকে ঠিক শিখিয়েই ছাড়ব, তবে অবশ্য শেষপর্যন্ত 
সে হাত সরিয়ে নেবে কীনা জানিনা ......

 
দৃষ্টির বদলে হাসি

দৃষ্টির বদলে হাসি তুমি শিখিয়েছিলে,অক্ষরে অক্ষরে 
আমি সারাজীবন তা পালন করে গেছি 
এখন বিভ্রমের অনুশীলন না অনুশীলনের বিভ্রম ,
অন্ধকারের বেদনা না বেদনার অন্ধকার জানিনা
আন্দোলনের যন্ত্রণা না যন্ত্রণার আন্দোলন প্রতিদিন 
প্রতিমুহূর্তে আমাকে তিষ্টোতে দিচ্ছে না
কুরে কুরে খায় যা আমার না কিংবা ছিলনা কখনো 
তাকে ছোঁয়ার প্রবণতা কি ঠিক ? 
ভাগ আর বাটোয়ারা কি এখনো সমার্থক শব্দ অভিধানে ,আগুনের সঙ্গে ঘিয়ের তুলনা করতে গিয়ে আমি অন্ধ হয়ে গেছি অথচ ঋতুভেদে বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বজ্রপাতে প্রলয়তো বন্ধ হয় নি. ....


ঘুড়ির সঙ্গে সুতো আর সুতোর সঙ্গে ঘুড়ি 
যেভাবে লেপ্টে থাকে সুখের সময় দুঃখ 
আর শান্তির মধ্যে অশান্তি ঠিক সেইভাবে আমার জীবনে লেপ্টে আছে মানুষ কেন অহংকারী 
জল কেন নিম্নগামী ,পোষা কুকুর কামড়ানোর আগে 
কেন মালিকের মুখের রেখায় একবার তাকায় 
বিস্ময় , এসব তুমি শেখাওনি কেন আগে 
তাহলে বুঝতে পারতাম খাম থেকে গোলাপি চিঠি বের করার আগে কোনো উড়ানের স্বপ্ন দেখতে নেই...



ছবি - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday, 8 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৩


সুশান্ত সেন এর কবিতা -

তুমি

তুমি ব্যাকরণ আমি জ্যামিতি
এই রকম একটা খেলা খেলতে বসে
আকাশের রামধনু ওঠা দেখছিলাম।

স্কটল্যান্ডে'র আকাশ থম মেরে থাকার পর
ভেলকি দেখাচ্ছিল।
এদিকে দ্রুতগতি মোটর গাড়ী তার নিশানায়
রেখে দিয়েছিল বরফ রাজ্যের রোপওয়ে।

রামধনু যখন বুঝতে পারলো
গাড়িটা থামবে না তখন সে 
তার শাড়ির আঁচল খুলে
গুড়ো গুড়ো করে সাতটা রং
বাতাসে মিশিয়ে দিলো।

পথিক বুভুক্ষু শুধু চেয়ে থাকলো।


কবিতা
             
একটা কবিতা লেখা হলো কি হলো না তাতে
কিবা যায় আসে।
কবির মনে ত সে রচিত হয়েছিল
সেই তার তৃপ্তি সেই তার আনন্দ।
কবিতা সেই আনন্দের কথা ভেবে
পাশের চায়ের দোকানে চা খেতে বসে
যখন উথাল পাথাল মন,
তখন কবি বললেন - এখানে নয়
চলো বিশু'দার দোকান থেকে
টোস্ট ওমলেট খেয়ে আসি।

কবি ও কবিতা পাশাপাশি হাঁটছে ।


পুরোহিত
                   
আকাশের থেকে একটা তারা নেমে এলো
ইনকা পুরোহিত সেই ঘটনা
অলৌকিক বলে প্রচার করলেন
আর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য
পুজোয় বসলেন।

প্রধান বিরোধী কে জোর করে বন্দী করে
হাত পা বেঁধে
সর্প - মুখী দেবতার সামনে উৎসর্গ করে
তিনশ ফুট উঁচু মন্দিরের চাতাল থেকে ফেলে
দেবার হুকুম করার সময়
এতটুকু তার গলা কাপল না।

পাশ্চাত্য ইতিহাস রচনাকারী 
দক্ষিণ আমেরিকার সভ্যতাকে
রক্ত পিপাসু বলে রটনা করলেন।

কারো কিছু এসে গেল না। ইতিহাস আর কতজনে পড়ে !

আকাশ থেকে আর একটা তারা খসে পড়লো।


ছবি- মেহবুব গায়েন
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 4 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-২


অদৃকা ভট্টাচার্য্য এর কবিতা -

আঁধারের রঙিন সঞ্চয়: জীবনের বেহালা

আঁধারের গায়ে খুঁজি মুক্ত দেহ 
হাত পা নাড়িয়ে মনে করিয়ে দেয় অস্তিত্বের আকাশ

*
শব্দদূষণের গতি বারছে, আমি ও বারছি
তলিয়ে যাচ্ছে মেয়েটির বিরহের আঁধার
ক্রমশ আঁধার কমে আসে, মেয়েটির ও আয়ু কমে
হাত পা‌ ছড়িয়ে দিয়ে - কবর গুলো ধিরে ধিরে
গিলে নেয় মেয়েটিকে, গিলে নেয় বেঁচে থাকার বিরহের আঁধার, বেজে উঠে বেহালা 

*
জোনাকি রঙে পরো জন্ম চাতক হব
জীবন কাটাবো রূপকথাতে বেহালা সুরে
ঘর বাঁধবো, সাজাবো, ভাঙ্গবো, উন্মাদের 
উপাধি নিয়ে চিতায় উঠবো, অসীম শূন্যতায়।



ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


 

Saturday, 3 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-২


দুরন্ত বিজলী’র কবিতা -


কেউ চলে গেলে

তুমি যদি আগে চলে যাও,আমি অসহায়,
নিজের মৃত্যু কামনা করতে পারি কিছুদিন।
তারপর ধূসর হতে হতে আরও অসহায়।
তোমার ছোঁয়া গা থেকে ঝরে পড়ে,
এবড়ো খেবড়ো মুখে ঠোঁটে চুম্বনের দাগ
মুছে যায়। চোখে অন্ধকার ।
অবশেষে তোমার কাছে চলে যাব।

ইহলোক পরলোকের ঘূর্ণাবর্ত আছে কিনা
জানি না তবে মানতে ভালো লাগে।
আবার দেখা হবে ।

আর যদি মনিকাও এসে যায়
তাহলে?


প্রেম

বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় শুকনো পাতা।
কেউ যদি...

না না !

কেন চোখে জল ভরে যায়?
কেন মনে হারানোর হাহাকার ?
পরস্পর অদৃশ্য বাঁধনের মুক্ত আলো
নিভে গেলে
অন্ধকার অন্ধকার...

না না না....

বেদনার বেলাভূমে একটি আলো
অমলিন জ্বলে...


বৃষ্টি শব্দহীন আমৃত্যু

প্রেমের কবিতা লিখতে বসলে মনিকা ভেসে ওঠে --
রূপনারায়ণ নদীকূলে হৃদয়ের জল উথলে ওঠে,
আকাশের নীলে মেঘ উদ্ভাসে,
বালুর নিদাঘ উত্তাপ এখন কিছুটা শীতল
চোখ ছলোছল।

কলেজ ক্যাম্পাস কবিতার জন্য
ঘাসে শিশিরে মাখামাখি,
পাশ দিয়ে যাবার সময় ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বেদনা
বিছানো বাবলাগাছের তলায় থমকে দাঁড়াই।

ছলোছল বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি বৃষ্টি ,
ভিজছে ভিজছে ...
গাছের শরীর বেয়ে দুঃখ ঝরে পড়ে।

কাঁদবো না বললে কান্না থেমে থাকে নাকি?
বৃষ্টি পড়ে, শিলা বৃষ্টি শব্দহীন আমৃত্যু।


ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday, 2 February 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-২


বিকাশ চন্দ এর কবিতা -

রাধা প্রেম হলুদ বসন্ত বুকে 

দু'বাহু জড়ালে বুকে ফেরে হারানিধি আত্মা
মানুষের গায়ের গন্ধে ফোটে পলাশ জারুল
সমস্ত ভাবনারা চেনে শিউলি বকুল শাপলা শালুক
তবুও পূর্ণিমা রাত চমকায় কুঠারের ধারালো ঘায়ে
অন্ধকার ঝাঁঝরা করে আবার মন ফকিরা ঘর
দোয়েল পাপিয়া বৌ কথা কও খোঁজে বসন্ত দুপুর

এপার ওপার বুকের ভেতর জল স্তম্ভের উচ্ছ্বাস 
উদাস শিশির কণা মুক্তা বিন্দু দুধ ধান শীষে
হেমন্ত হিমে ভালোবাসা ভোরের শীতে স্নান
উষ্ণতা ভেতরে স্পর্শ সুখ পরস্পর বেঁধেছে পরাণ
দু'পাশে দীর্ঘ সবুজ প্রাচীর সূর্য সিঁড়ি শোনে স্তব গান
দুধে ভাতে মাছে শাকে বসন্ত বরণী মুখ ডাকে আমন্ত্রণে 

আনন্দ হৃদয়ে কতনা ধ্বনিময় সুর সালংকারা 
দেহ বিনিময় জানে সাঁঝবাতি ভোরের শুকতারা
সবুজ পাখি জানে ওড়া উড়ি হাহাকার শুকনো পাতায়
রাধা প্রেম হলুদ বসন্ত বুকে আবীর কুঙ্কুমে চন্দন ঘ্রাণে


ঋতু পত্রের শেষে

পাঁজরের আড়ালে শ্বাস টুকু ঘিরে আছে দেহকাণ্ড
বাইরে দেশান্তরী হাওয়া খেলে সবুজ পাতার
শরীর জুড়ে হিরন্ময় প্রেম ঢাকা বসন্ত কুয়াশায়
ধর্ম কক্ষে ছেঁড়ে জন্ম সেতু ব্যাথাতুর রক্ত বিসর্জন 
পাষাণ শরীর জানেনা নিরন্তর চলে এ ভাসান
দিনাতিপাত নেই দরজা আগলে অনন্যা সে প্রিয়তমা

জমিতে চুমু রেখে অঙ্কুর বুকে মোহন শরীর লতা
অহরহ সংসারী কথার ভেতর প্রতীক্ষার সকল উচ্চারণ 
শরীরেই বাঁচে শরীরেই মরে তবু শস্যের আমন্ত্রণ 
মন্দ্রিত সময়ে লোহিত অঙ্গীকার জাগে মন্ত্র বলে
বেঁচে থাকে সকল ভবিষ্যৎ জানে আত্মার সম্বল
অনাহুত প্রেম পত্র ভাষায় সবিনয়ে রক্ত করবী 

শরীরে মননে জড়িয়ে জন্মান্তর বৃক্ষদেবীর বাকলে
আত্মার সুরে নিরন্তর বাঁচে বাউল ঋতু পত্রের শেষে 


অনন্ত প্রতিভাসে

দোলের চাঁদে রঙ লেগেছে রাতে কৃষ্ণচূড়া সোহাগ
কাঁপছিল কি কোকিল স্বরে পরাগ ওড়া বাতাস
কথার ভেতর বর্ণমালায় প্রেমের আখর আলো
অভিসারে হলুদ বসন্ত রাধাময় শরীরে আগুন মাখো

অসময় তবু রঙ মাখে মনে বনে পারিজাত পরিমলে
অফুরান কথা ফিরে ফিরে আসে মধু মাখা সঙ্গীতে
প্রতি ঘরের উঠোনে কে কার চরণে ফুলের অঞ্জলি 
বর্ষ শেষের অন্তর কথা মুক্তি স্নানে চলে রঙের অভিসারে

আমার পলাশ রাঙা চোখের দেখা বাউল বৈষ্ণবী পথ
লাল শিমূল রঙের হাসি মাখালো ঠোঁটে বাঁশির সুরে
রঙ ঢেলেছি সুখের ঘরের চেনা উঠোন জুড়ে 
হেসে উঠলো দূর্বা তখন গোলাপি রঙের ভোরে

শ্রীখোল রঙ্গে মজেছে নগর কীর্তন তোলে রসিক বোল
আহা ! শ্রীরাধা সিঁথি রাঙা দোলে কপালে রক্ত প্রবাল
কালবেলা জানে ঋতু স্রোত শেষ বসন্তে বিরহে কানু
চিত চোর জানে বন কুটিরে চন্দ্রিমা অনন্ত প্রতিভাসে

ছবি- বিপ্লব ভূঞ্যা
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••|||••|||••||•|||•••••