Friday, 31 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি দীপঙ্কর গিরি’র কবিতা-





১।।   ∆ দুঃখ ∆



অন্তর্বাস খুলে দেখি 
যন্ত্রণার খাদে শুয়ে আছে 
মনখারাপের নদী 

এ পর্যন্ত কোনো স্নান রেখে যায়নি কেউ 





২।।   ∆ আবহ ∆



ফুলে ফুলে ভরে গেছে বুক 

এ বুকের মালিকানা কার 

ভাবতে ভাবতে আমার 
               মেঘ ছিঁড়ে যাচ্ছে 
               চোখ ঝলসে  যাচ্ছে
আঙুলে আঙুলে জ্বলে উঠছে পঞ্চপ্রদীপ 

রচিত হচ্ছে আরতির আবহ 





৩।।   ∆ ঘর ∆



এসো, আজ ঘরের কথা বলি । সহজ বউ আর সাবলীল দুটি সন্তানের কথা । অথবা তাদের কথা থাক ।বরং বৃদ্ধা মা 'কে নিয়ে দু চার কথা হোক । বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে বলবার খুব প্রয়োজন। অথচ এই মাত্র মনে হলো, মা'কে নিয়ে বলা যায় না কিছুই ।

তথাপি সংক্ষেপে আজ ঘরের কথা বলি । শোনো মন দিয়ে, - সে এক উলম্ব দেওয়াল, ঝুঁকে থাকা ছাদ । না কোনো মেঝে নেই তার 





৪।।   ∆ আগুন ∆



মা'র মৃত্যু ভুলিনি এখনও 
এখনওভুলিনি আগুন দাউদাউ 

মা'র মৃত্যু ভুলিনি এখনও আমি 
ভুলিনি কুঠার খৈ ঢোল মরণকীর্তন 

আচারে ধর্ষিতা হয়ে মা তখন 
মরা মা ভুলে গেছে শিয়রে শিশু,অবোধ 

তারপর শুধু পুড়ে যাওয়া 
সেই বুক ভরা গাল মায়া হাত 
অথবা চিবুক 
সব নাকি পুড়ে যায় 

পোড়েনি আগুন দাউদাউ 





৫।।   ∆ রসদ ∆



একটা করে কবিতা লেখার পর 
একটা করে আঙুল কেটে ফেলছেন কবি 
তারপর তাকে লুকিয়ে ফেলছেন বুকপকেটে 
অতঃপর কলমটি অভ্যাসবশতঃ গুঁজে রাখছেন সেই পকেটেই ।

কলমে ভরে উঠছে কালি 

শাবাশ দর্জি,  সমস্ত জামার পকেট তুমি বাঁ দিকে বানিয়েছো 




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি সুব্রত সাহা’র কবিতা-






১।।   ∆ প্ল্যাকার্ড ∆



ছেঁড়া আঙিনায় জমাট রক্ত ও চেন খোলার গল্পে রেকাবী
দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং। মিছিলের মাথা, হাত,
পা, নাভি, রোমকূপ সমস্তটায় লিখে রাখা ওম।
রেখার পাশটায় দেখেছি কাটাকুটি মাধ্যম
                                      ঘুড়ি ঘুড়ি খেলা -
বেঘোর আসমান তুলে নিলে পাড়াময় শিষ
ছড়ানো ধানের কুশ থেকে অবলা ব্যক্তিগত আখর
উনুনে হাঁড়ি; ঝাপানো পোলাপান
নগর বাড়ছে, অংশত জলের হিসেব বদল
পাশ কাটছে বাদামী সিংহ
ঘোড়সওয়ারী মহীন এবং নীলভিয়া নাম্নী কোন এক
পাখির পালকে আগামীকাল লিখে রাখা
মাঠ ভরতি উতসাহের আড়ালে উঁকি মারে নরম চাদর,
       শীত ও হ্যান্ডমেড চা
এরপর আমরা বড় হয়ে যাই
            সেগুন কাঠের চেয়ারটি বড় হয়না।
কাঠের কুন্দানো পায় জন্মে থাকা অহংকার দাঁড়ায়,
তাই বলে চেয়ারের সাথে লুকাছুপি খেলিনা
ফুরসতে লিখে রাখা গোপনীয়তা





২।।     ∆ বৃষ্টির কায়দা ∆



কায়দাটা নাকি বেজায় সোজা, ঢোকেনা মাথায়
কি করে বৃষ্টি হয় মনের আকাশ, সবুজ পাতায় ?
মেঘ জমেছে সহজ উঠোনের একটু কোণে
মেঘলা মেয়ে মেতেছে গুড় গুড় বাদলা দিনে !
কবে থেকে লিখিনা ছন্দের কবিতা
কি লিখি কেমন লিখি, পাইনা ভেবে তা !
মেঘ কি নেয় রানারের খোঁজ, বক্সা পাহাড়ে
জয়ন্তীর কোলে বৃষ্টি ছুঁয়ে থাকা আহারে !
শামুকতলা কলেজ আর আমলকি বনে মন
সাদরী কবি সন্জু কুজুর পুখুরিয়া বাড়ি,
বান এলে ভাই ভয়ের প্রহর বর্ষা ঘিরে
জল থই থই কুঁড়ে ঘর, বিছানায় হাঁড়ি !
ভিজছে সব আখরগুলো অঝোর ধারাপাতে
চালচুলোহীন মানুষগুলো ধুকছে হাভাতে !
পারিনা কিছু করতে, চোখে গড়ায় শুধুই জল
এমনি দিনে জ্বলছে আগুন, চাই নেভাতে ।




৩।।   ∆ ওয়ে ∆



অতসী একটা ফুলের নাম। ফুল কোনদিনও পুরোনো হয়না।
তোমার লাজুকতা আমার স্বপ্ন দেখার গল্প।
আঙুলগুলো নিশপিশ করে। বড্ড শর্মিলা।  আবার কখনো বেহায়া - বেশরম।
গভীর। গহন। বোধে নাড়ায়। ছুঁয়ে যায় টেরাকোটা শিল্প। 
ঘুম পাহাড়ের চড়াই উৎরাই ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ ধ্বস নামে...
শাড়ির আঁচল ভিজতে থাকে কোজাগরী চাঁদে। ছিপড়া বাঘবন।
ঝিনইডাঙার ঝিনুক মেয়ে। নদী বন্ধু  হয়। শরীরে শরীর রেখে ভালোবাসা
                                   অ্যালজেব্রা ফর্মুলা। পরিবৃত্ত - ব্যাস
ব্যাসার্ধ বরাবর এঁকে দিলাম অন্তবৃত্ত। জ্যামিতি - গণিত অনুসরণ
করে বৃষ্টি  নামে। সব ভেজে। আকাশমণি গাছ, নদী, জোনাকি সব...
খসে পড়ে শাল পিয়ালের ফুল।
রাত বারেটার পর খুলে যায় যাবতীয় সংলাপ। তুমি আমি কথা বলি।
পাশাপাশি। নগ্ন করি নিজেদের। যে পথে নিঃসীম অন্ধকার নিঃশব্দে  হেঁটে
চলি সেই পথ ধরে...





৪।।   ∆ আনকহা - ১ ∆



বটম খুলে মাকড়সা
         হিজিবিজি লিখছে
বীজ গলে টসটসে
সিমের ফুল = তুমি?
বিয়োগের খাতা খুলে
জল লিখছে চাঁদ
লাল টুপি বুটের ডাল
               ফ্যান ভাতের গন্ধে উবু হওয়া
রোদ্দুর গড়ালো
পিঠের ঘামে





৫।।  ∆ মাখানো খাম ∆



নীলগুলো আঁকা হলে মেঘ খুলে যায়
মাখানো খাম খোলে নদীরা
তুরতুরি আদর খায়। আসমানী লাফায়
চাবাগিচায় গপ্পো জমে। সবুজ পাতায় উত্তরা হাঁটছে...
শাপলা পর্বের কিস্তি শেষে কবিতার খাতায় রাত নামে
জলজ প্রত্যয় থেকে উঠে আসে আখর আর শব্দেরা
নিয়মিত যোগাযোগ লেখে নরমেরা
সেতুও উতলা
শাপলারা জড়িয়ে যায় যেতেই থাকে...




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি অর্থিতা মণ্ডল এর কবিতা-





১।।   ∆ খেলা ∆



ঠিক কতটা অপেক্ষার পর তুমি চিহ্নিত হবে
ঠিক কতটা আগুনের পরে দগ্ধতা নামবে
এই নিশ্চুপ নিঃশেষ বেদে এবং বেদেনীর খেলা।
তুমিও তো হাত রাখো হাতে,হেঁটে যাও আভূমি বিস্তৃত শিখা
শীত ঘুমে ঢুকে  যায় সাপিনী।বেদেদের ঝুড়িতে শিকড় বাকর
তুমি উঠে আসো জলকন্যা, অচিহ্নিত অপেক্ষার প্রহর
বেদেদের  ঘর, যাযাবরী শিস তোলে লোকজাত খেলা





২।।     ∆ নিঃসঙ্গ ∆



সে এসে দাঁড়ায় একা,শান্ত স্থির
ধুলোয় মিশে গেছে নিভৃত আলাপ
তুমি তাকে দেখেছিলে গভীর কিংবা অগভীর
 বিস্মৃত মুহূর্ত সব। সূক্ষ  নিশ্চিন্ত  মুদ্রা,
সংগোপনে মিশে যায় ভিটেমাটি
চোখে লেগে আছে অগুন্তি সংসার।
এবার তাঁকে ডাকা যাক,ফিরে আসার  ব্যর্থতা ছুয়ে
আরও আরও দূরে ঘর,তুমি দেখে ফেল তাঁর অগস্ত্য যাত্রা
তারও পরে নিশ্চুপ জোনাকির ভিড়





৩।।   ∆ অস্থি ∆



সবকিছু মুছে যায় শুধু এক গন্ধ প্রাচীন
তুমিও চেনো না তাকে বাড়ি কিংবা পী ঠ স্থান
আত্মবিস্মৃত ছুঁয়ে থাকো অদৃশ্য মেঘমল্লার
সাপুড়ের বীণ বাজে,খেলা শেষ বেদেনীর সংসারে
তোমার ঘুম পায় গাঢ় হয়ে আসে বিষ
ছায়া ছায়া হেঁটে গেল নগর সংলাপ
সে এক মায়াবিনী নখের আঁচড়ে কাটে কুহক
তখনো সানাই,তখনো অতলান্ত গভীর বুনন
অতঃপর নেশা ধরে,তুমি তাকে ধোঁয়া ভাবো
বুক ভরে টেনে নাও শ্বাস,সহস্র সহস্র পেছন
হাতছানি আবছায়া মহুয়ার ঘ্রাণ

অপূর্ব গৃহবিদ্যার ভেতর ঈশ্বরী ধারণ করছেন সম্পূর্ণ ঈশ্বর





৪।।     ∆ মেদুর ∆



দু'দিকে দুটো কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠছে ক্রমাগত
মেহগেনি কাঠের টেবিলে গত শতাব্দীর ঘরের গন্ধ
কফিতে চুমুক দিতে দিতে লোকটি হাই তুলল
বিশ্রী রকমের একটা ঘুম,গড়িয়ে যাওয়া আপেলের টুকরো
টেবিলের আরেক দিকে শূন্য একটা অবয়ব
ধোঁয়ার ভেতর অনাগত জন্ম জেগে উঠল,সংগোপনে





৫।।        ∆ পাহাড়ি নৌকো ∆



রঙিন ফানুসের খেলা দেখাবেন বলে তিনি মাঠে নেমে আসেন
সুগভীর বিস্তৃত মাঠ কত জন্ম আগে রুইদাস ফসল ফলিয়েছিলেন
জরিপে মেপে নিচ্ছেন বন্ধ্যা গাথা,খেলুড়ে বালকের ভিড়
দূরে ঈগলের ডাক বসন্তবাউরি ফিরে গেছে নদীদের দেশে।
" ঘন পাহাড়ে নৌকো বাঁ ধো হে নাবিক"-
বলে ওঠে মায়াবিনী খোলা চুল উন্মুক্ত আবেশ
ফানুস উড়ে যায়  ছেঁড়া ছেঁড়া পরিক্রমা,
পাহাড় কেটে কেটে ফুলে ওঠে পাল,তাঁর ঠোঁটে লেগে আছে জোকারের হাসি

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি কেশব মেট্ট্যা’র কবিতা-





১।।   ∆ হে সংসারী ∆

 

১.
হে সংসারী...
পূর্বজন্মে কাঠুরে ছিলাম,
কত ক্ষমা পাওনা রয়ে গেছে...

লতা ভাবিনি তোমায়,
বৃক্ষ জেনেই
ছায়ায় রেখেছি আঙুল।

মাথা ভর্ত্তি ঋণ..
ক্ষমায় ক্ষমায় ঝুঁকে গেছে কাঁধ।

পিঠে ঘৃণা মাখালো কেউ...

২.
এসো চঞ্চল,
ছলাৎছল পায়ে নূপুর পরিয়ে দিই;

বাজছে বাজছে...
বড্ড বাজছে কানে,

কেন...

৩.
অগোছালো স্বভাব রক্তে আমার।

ভেসে গেছি...

যত্ন নিয়ে দাঁড়ালে যখন,

নোঙর দাও;
সাঁতার কাটি।

৪.
বিভোর হয়ে কী বা দেখছো?

পাটাতনের নীচে যে ক্রোধ,
যে স্বচ্ছ টানাটানি–
সন্দেহ নাম দিতেই
হাত গড়িয়ে পড়ছে
যাবতীয় সঞ্চয়...

৫.
আহা
কী বা এমন দুঃখ?
কী বা এমন হাহাকার?
গাছে গাছে লিখে দিচ্ছো...

ও  নোনতা জল,
তোমাকে মানায় না।
হে পুরুষ...

৬.
এই তো ঝিমঝিম করছে মাথা...
শরীরে বাড়ছে লাশের গন্ধ...
একটা মশাও ছুঁয়ে দেখছে না পিঠ,
তুমি তো অনেকদূর...

কে ডাকছে কে ডাকছে ব্যাকুল...

যাই...




২।।    ∆ সংসারী হে ∆


১.
বাতাস পড়ে ফেলছি। পড়ে ফেলছি
বিধি লিখন;

বিধি বাম।
বিধি ডান।

তবে মধ্যবর্তী কে?

২.
ইশারায় উড়ছে পাখি। বসছে না।

ভেসে গেছে জীবন

জেগে উঠেছিল ভেলা

সে আর কতদিন?

বেহুলার আঁচলে ভেজা চিঁড়ে
কোলে সন্তান।

৩.
স্নেহ লিখে লিখে
কেটে গেছে কাল।
সন্দেহ বাসা বাঁধছে ডালে
যে বসে বসুক‌।
যে ঠোকরায় , ঠোকরাক

ঘ্রাণ কতটা তীব্র এমন যে
খুলে যাবে দ্বার, গন্ধশিকল

৪.
নোঙর খুলে ভাঙছ ঢেউ,
হাহাকার নেই...
নেই মনস্তাপ;

দিনের সঞ্চয় আমি,
পথের সঞ্চয় আমি।

নির্ভার ভ্রমণ...

এভাবে জগৎ ভাবো কেন?

৫.
গুছিয়ে নিয়েছো সব!

সবকিছুই কি গোছানোর প্রয়োজন হয়?

কিছু মুহূর্ত তো চিরকালীন
গচ্ছিত রয়ে যায়...

থাকে না বিধিনিষেধ
থাকে খেয়ালখুশি...

ফুরসত দিয়ো,
বিস্তার দেবে এঁকে...

৬.
সেই তো পরম
যা হারিয়ে যায় না।
তার ভুলে থাকা থাকে
খেয়ালী শিশুর মতো...

স্মরণে শান্তি
নির্জন নিরাময়।

৭.
পারাপার কখন কাছে আসে
কে বা জানে!

যত্নে রাখা সঞ্চয়
লালিত পালিত ক্রোধ

আতুল ঘুমঘোর

হাই তোলে,
রোদ মেখে  কাদা মেখে  জল মেখে...

৮.
গাছে গাছে ঝুলছে নিয়তি
খসে যাওয়া পাতাও ভোলেনা
জন্মদাগ।

নাভি বড় ঠাণ্ডা হয়ে আসছে
আগুন দাও  আগুন দাও
হে শ্মশানবন্ধু আমার...




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি মধুমিতা বেতাল এর কবিতা-






১।।  ∆ খসে পড়া সময়ের গান ∆



জামা থেকে ছেঁড়া টুকরোগুলো
খসে পড়ে যেতে চায়...। 
দার্শনিক দৃষ্টি চোরকাঁটার মতো
জড়িয়ে ধরে শুধু, জোড়া লাগাতে পারে না!

মেমোরি ঘেটেঘুটে দেখি 
কবে যেন কোথায় দেখেছি।
অনেক কষ্টে মনে পড়েছে...
সে তো তখন খুব ছোটো ছিলাম।

মাগো খুব ক্ষিদে পেয়েছে,
হাত পেতে থাকি চোখের সামনে।
খুচরো আছে কি? থাম দেখি, এই নে বলে
দৌড়ে পালিয়ে গেল সময়।

আমায় কি মনে রাখবে?
আমিও তো রাখবো না,
কে জানে কেউ কি মনে রাখে!





২।।   ∆ প্রযত্নে মহাবিশ্ব ∆



কবিতার পাশে বসে ঘন অন্ধকারে 
শরীরের গল্প শুনছিলাম...।
পুরো রাত্রিটাই পপকর্নের ঠোঙায় মিশিয়ে
একটু একটু করে খেয়ে ফেলছি...।
পোড়া পিয়ানো থেকে অজানা সুর ভেসে আসছে,
ধোঁয়ার সাথে উড়ে আসছে মিষ্টি গন্ধ।
বুঝলাম পুড়েও কত সুখ !
শক্তিশেলের মতো প্রশ্ন ছুটে আসে...
আমি পালিয়ে যাচ্ছি কোথায় ?

এবার বোধহয় গল্পের বিরতি।
চাঁদবিহীন খোলা হাওয়া ক্রমাগত ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মহাশূন্যের গভীর থেকে আরও গভীরে।
আরোও দ্রুত ছুটে যাচ্ছে শহর গ্রাম জল মাটি...।
কোথায় যায় এরা !
উলকিগুলো চামড়া সমেত রেখে এসেছি
কোনো এক প্রেমিকের তীক্ষ্ণ চোখে।
সারাজীবনের উপার্জিত লাইক,কমেন্ট, শেয়ারগুলো খুব যতনে মহাজাগতিক খামে ভরে পোস্ট করেছি বুকের ডাকবাক্স থেকে।





৩।।    ∆ প্রশ্নোত্তর ∆



কাঁদানোর জন্যে সবসময় কাউকে লাগবে এমন কোনো কথা নেই ।
শোনার জন্যেও না...।
তবে মাঝে মাঝে শূন্যতা খুব কঁদায়,
নির্জনতাও মন দিয়ে কান্নার কথা শোনে।

রাত্রি হলেই তারা খোঁজা অথবা বৃষ্টি হলেই রামধনু...
এটা কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যেসে...।
পা-টিপে টিপে পিচ্ছল পথ পেরোলে যে আনন্দ আসে, তার ওপর ভর দিয়ে আরও অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়া যায়।

রতিশাস্ত্রের স্বাদ অথবা
পোশাকে এসেন্সের ম ম
টেনে রাখবে ঘরের চার দেওয়ালে ...? কতদিন...!
এক নারী, এক পুরুষ
অথবা নারী-পুরুষ
কোনটা কতটা সত্য কে জানে!

সবপ্রশ্নের সঠিক উত্তর অবশ্য সবার জানা থাকে না।





৪।।   ∆ শুনিনি যে কথা.... ∆



যে অসুখে ডুবে গেছি হাজার বছর
সে গল্প তো লিখেছি অনেক...।
আজ লিখবো যে কলমের প্রতিটা আঁচড়েই
ছবি হয়ে থেকেছি আমি।
যে কথা শুনিনি, যে ব্যাথা বুঝিনি কখনোও...
           আকুতির পলকে পলক রাখিনি দু-দণ্ড
      দূরত্ব মেপে দেখিনি নিঃশ্বাসে...!
                  একটুও ভালোবাসে...!
      
কেঁদে কেঁদে ওঠে
         ছিঁড়ে যায় বুক....
                    না-ঝরা ফুলের কলি ওলি-ঘ্রাণে
   লেখা হয় কয়েকশো শতাব্দীর 
                                         না দেখা মুখ।
বিশ্বাসের বিশ্বে চুপটি করে এসে
     আঁধার কালো ছায়ার পালক যখন
 গোপন হয়ে বসে...
                   খুব মনে পড়ে।
                   
খড়মের পথ বড়ো দূর্গম...
ধূ ধূ ধুলো ঝেড়ে দীর্ঘ প্রান্তরে 
কখনো দেখিনি সবুজের পাতানড়া,
দেখিনি সরোবর মাঝে পদ্মের আঁখি খোলা।

অজন্তার গুহা কোণে পোষাকের ওপর পোষাক
রেখেছি যতনে,
কি করে বলি--
          একটি রাত্রিও রাখিনি...
 কোথাও কোনো ফেরারি মনের 
                                     শান্ত মন্থনে।
 
জানি আজও বলবে--
একটু বসো সিন্ধু সৈকতে তুমি 
                অনামিকা স্রোতে ডুবে তুলে আনি
                সহস্র নামের মালা
            সাজাবো নতুন করে মন্দিরের
            মূর্তিখানি,
    হোক না যতোই  অবেলা।





৫।।    ∆ বৈরাগীর ক্যানভাস ∆


‌কবে কোন নদী ধুয়ে গিয়েছিল
‌ঠোঁটের নেশায় মনে নেই... ।
‌দীর্ঘ ঘুম মরণের চোখের কোনায়
‌সমাধি হয়েছে মৌরাতের ভাষা।
‌কোন ফাঁকে চাঁদ এসে বসে গেল 
‌খুব কাছে, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বব্দে!
‌চোখে ছিল পারিজাতের সাম্রাজ্য,
‌মুখে কবিতার অমল গন্ধ...।
‌দূরত্ব ভেঙে গেছে অনেক আগেই
‌আদিমতার পায়ে পায়ে।
‌ভ্রু-ইশারার সূক্ষ্ম আলিঙ্গনে
‌গভীর অন্ধকার কখন ঘুমিয়ে গেছে
‌পাহাড়ি  বুকে।
‌ক্যানভাসে শুয়ে আছো তুমি 
‌এলাচের ফুল হয়ে, তাকাও বৈরাগী...
‌দেখ পদ্মকলির মতো চিবুক তুলে।
‌চন্দনের সুগন্ধে নিখুঁত বুনেছি তোমায় 
‌সন্ন‍্যাসীর তুলি ডুবিয়ে... 
‌জানো তো বড়োই বেমানান ছিল 
‌চোখ বিনা কাজল পাতার পান্ডুলিপি,
‌পা-হীন পালকির গানের মতন।
‌ধুয়ে গেছে সব রঙ প্রশান্ত জোনাকির সমুদ্রে...
‌মনন-মেঘনায় পেতে রেখেছি 
‌ঔপন্যাসিক পালঙ্ক,
‌এসো বৈরাগী এবার শরীরে সরোবর আঁকি...।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি বনশ্রী রায়দাস এর কবিতা-






১।।    ∆ প্রস্তুতি পর্ব -- এক ∆

                     


আলোর চমক নিয়ে বিদ্যুতের তার 
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু ,
যেতে যেতে জিরিয়ে নেয় পাহাড়ের গায়ে 
আবার ঘুমিয়ে পড়ে ক্লোরোফিলের
নরম আস্তীর্ণে ।

মাটির শিরা উপশিরা কাতরাতে থাকে
পালক-ভেজা জলের অপেক্ষায় ,
প্রেম নামের বিভীষিকাময় ছায়া ফেলে 
আউলা মেঘের হম্বিতম্বি , উলগ্ন গর্জন  ।

সে জানে না নদী ভয়ঙ্করী হলে তার 
স্রোতে ও জ্বলে উঠবে বিদ্যুতের আগুন  ।

             


২।।    ∆  প্রস্তুতি পর্ব  -- তিন ∆

                     


অক্ষর বৃত্ত থেকে ভয়ঙ্কর ঘুর্ণাবর্ত 
হাওয়া ঝটকা ধাক্কাধাক্কি বেশুমার 
ভিতর কম্পন মোচড় দিয়ে ওঠে চক্রনাভি ।
বেহুঁশ ছাতা উড়ে উড়ে বেহুদা  
ভিক্টোরিয়া থেকে সেন্টপল ক্যাথিড্রাল হয়ে 
কানামাছি খ্যালে অকাদেমি চত্বরে 
ভাপ ওঠে একশো বছর আগের ইট পাথর
কাগজ কলমের দলিল থেকে ।

এদিকে পরস্পরের অভিযোগের তর্জনীতে 
বুদবুদ যোগ্যতা মাপছে 
আর রক্ত ঝরছে কালের বিষোদ্গারে ,
রক্তে ভেসে যাচ্ছে একটি নাড়ি ছেঁড়া 
সভ্যতা ও সংস্কৃতির হৃৎপিণ্ড ।

          



৩।।   ∆ প্রস্তুতি পর্ব  -- দুই ∆

   
                  

মিছিলের পায়ে চিৎকার উড়াই
আর বুকে গলিয়ে ফেলি মোম ,
ধুলোর সংক্রমণ ঢাকতে মুখে কাপড়ের ফেট্টি ।

একই নাটকের মহড়া দেখতে দেখতে 
শীত ঢুকে পড়ছে অক্ষিকোটরে ।

প্রশিক্ষকগণ দানার পাত্র সরিয়ে 
ভুরিভুরি কেতাবে ভরে দিচ্ছেন 
পাখিটির সোনার খাঁচা ।

হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে
পাকস্থলী উড়িয়ে দেয়ার আগে
সে বুঝিয়ে দিলো যুগে যুগে মিথ্যে দাসত্ব 
উন্মুক্ত কন্ঠস্বরে মুক্তির উড়ান সত্য l




 
৪।।   ∆ প্রস্তুতি পর্ব  -- চার ∆

                     


শব্দ ধ্বনি তরঙ্গ থেকে কয়েক ফোঁটা বিশুদ্ধ জল
কোষাকোষী থেকে ছড়িয়ে দিলাম পঞ্চইন্দ্রিয়ে 
আহা ! গায়ত্রী স্নানে মগ্ন, স্থিতধী চরাচর ,
আকাশের ব্যালকনি থেকে ঝুলে আছে 
অলংকৃত নক্ষত্রপুঞ্জ ।

দুই ভ্রুর মাঝে ওঁ বসিয়ে দিলে ধ্যানকোষ 
প্রথমে হলুদ হলুদ বিন্দুর মতো সংযমী ফুল ,
অলক্ত দেহ শুধুমাত্র লোভ লালসার গর্ভগৃহ।
আত্মা তখন আলোর ফুলকি ,
নেই হিংস্রতা ,  বেদনা- অশনি
শুধু জ্যোতি অনিকেত  ।

দর্শনের গুঞ্জনগুলো মৃদুস্বরে অনুরণিত হচ্ছে অনন্তের আঘ্রাণে
স্কন্ধপুরাণের শিবগুরু স্রোত্র 
                                গুরু কৃপাহি কেবলম্ 
                                        গুরু কৃপাহি - - 
                                 




৫।।  ∆ প্রস্তুতি পর্ব    --- পাঁচ ∆

        


একথাল গরম ভাতের জন্য কতখানি 
ঘামের প্রয়োজন হয় ?
কতটা ঝঞ্জা পেরলে নক্ষত্র বারোয়ারি হাটকে
কাছের মনে হয়  ?
সেসব জানবার মতো অঙ্ক শেখেনি 
জঙ্গল কুড়ুনি মেয়ে 
স্কুল তো দূরের বিভীষিকা 
সে জানে না বর্ণের রূপ গন্ধ ।

সন্তানের ভাতের থালায় সকালের সূর্য দেখবে বলে
পেটের আগুনে কাপড় পেঁচিয়ে 
ঘন বনে নিজেই 
সরীসৃপের ক্ষুধা মেটানোর 
আহার্য বস্তু হয়ে যায় ।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি শুভঙ্কর দাস এর কবিতা-







১।।    ∆ অফুরন্ত ১ ∆



অভাবের বুকে সহস্র ছুরি ঘুরছে,
এতখানি তীক্ষ্ণ আর তপ্ত
উঁকি মেরে দেখলেই কেটে রক্তাক্ত বা পুড়ে ছাই হওয়ার সম্ভবনা শুধু প্রবল নয়,একেবারে নিশ্চিত! 
অথচ অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয় তাদের... 
যাদের অন্ন নেই,ফুটো আকাশ আছে,বস্ত্র নেই,বজ্রপাতী বৃক্ষ আছে,আর বাসস্থানের কথা না তোলাই ভালো।
অভাব ধুলোর ভেতর খেলতে খুব ভালোবাসে,খেলাতেও...
রূপকথার ভেতর এমন রাক্ষসের কল্পনা দক্ষিণারঞ্জনও করতে পারবেন না যে,সহস্রবার মরে গেলেও মরে না!

ঠিক কোনো ভিখিরির হাত ধরে উঠে এসে রাজার মুকুট ধূলায় মিশিয়ে দেয়,

আমাদের ভাবের ঘর চুরি গেলেও,অভাব অফুরন্ত! 





২।।   ∆  অফুরন্ত ২ ∆




কতখানি একা হলে শূন্যতার তীর সাজিয়ে ফেলবে শরশয্যা!
সত্যিকারের তীরের চেয়ে ভয়ংকর, বুকে- পিঠে গেঁথে থাকা তীরের ছায়া।
 দিনরাত সচল ভীষ্ম হয়ে ঘুরতে হবে,এই ভয়ে হৃদয় এতোখানি সকাতর, যে কৃপনকঠিন,তার সামনেও অঞ্জলিপুটে স্থির
আসলে প্রাপ্তি নয়,এই চাওয়ার ভঙ্গিটুকুই আসল,
শুধু ফুটিয়ে তোলা,সে যে নিঃস্ব নয়,
এই তার শক্তি, অফুরন্ত জয়!




৩।।   ∆ অফুরন্ত ৩ ∆



মনে হল ফুরিয়ে গেছি...
যেইমাত্র এমন জল-শুকনো অনুভব আসে,অমনি কোথা থেকে এক শস্য-আঁকা মেঘ উড়ে আসে!
আমি ছুটতে থাকি,রক্তে,স্নায়ুতে,আয়নায় আর অপ্রত্যাশিত আয়োজনের ভেতর
দেখি,কোথাও সেই মেঘ নেই!
এতো সরোবর নয়,যে স্নান করে নেব বা ডুবসাঁতারে পান করে নেব আকন্ঠ! 
এ তো সাবান নয়,যে নিজস্ব মুদ্রায়  মেখে নেব প্রতিটি অঙ্গে স্বাধীন সৌরভের ঘোষণায়!
তাহলে কী? 
এই মেঘ আর প্রেরণা এক!
এই প্রেরণা আর পৃথিবী এক!
প্রথম দরজা খুলে গেলেই পরেরটা খুলে যায়
যেন আকস্মিক অভিযান...
রৌদ্রে ক্লান্ত, তার মধ্যে সহসা ভেসে আসা কোমল কটাক্ষ,যেন বলতে চায়,এই তো তোমার নিজস্ব ভুবন,তোমারই ভাবে

আমি অন্ধকারে অফুরন্ত আলো হয়ে যাই!





৪।।   ∆ অফুরন্ত ৪ ∆



স্কুল-পালানোর গন্ধ নেই যে শৈশবে,তা যেন সেইরকম আঁকা ছবি,বড্ড রঙভরা,কিন্তু অরঙিন!
নানারকমের পালানো ছিল আমার,ঠাকুমার কাছে শেখা,তিনি বলতেন,যে চোখের জল থেকে পালাতে পারে,সে সাগর ছুঁতে পারে!
এরকম এক স্কুলপালানোর দুপুরে এসে দেখি,সকলের চোখের জলে ঠাকুমা তুলসীপাতা নিয়ে শুয়ে আছেন একা!
আমার মনে হল,এ আবার কী ধরণের পালানো?
কোনো শোক বা দুঃখের  লেশমাত্র আমাকে পালানোর আনন্দ থেকে বিরত করতে পারল না!
মা-পিসি- দিদিরা ঠাকুমার মরিচাপড়া সিন্দুক খুলেছে,বের হচ্ছে জিনিস,কাঁসার বাসনকোসন, রূপোর বালগোপাল,দাদুর সাদাকালো ফটোগ্রাফ,সোনা বাঁধানো বাইশটি কড়ি,আর একটা খবরের কাগজে মলাট দেওয়া বই,গীতাঞ্জলি... 
ঠাকুমা দুপুরবেলা শুয়ে বলতেন,একটু ঠাকুরের বই পড়ি!
এটা পড়লে, আর কোথাও পালাতে ইচ্ছে করে না!
আমি পাশে শুয়ে চুপটি করে শুনতাম!
একথা মনে হতেই চোখে কালো মেঘরঙা জল এসে গেল এবং কিছুতেই পালাতে পারলাম না!

আমি সাগর ছুঁতে চাই না,ঠাকুমা তোমাকে ছুঁতে চাই অফুরন্ত জলে...





৫।।   ∆ অফুরন্ত ৫ ∆



সময়ের বড্ড জ্বর।
এই ভুবনের ভার কার হাতে ন্যস্ত?
আমরা কি ইতিহাসের প্রতিটি পাতা উলটে দেখেছি! না কি নিজের সুবিধে মতো সাজিয়েছি ঘটনার ধূসরতা!
নিজের অল্প আয়েশের আয়োজনে নাকি
যত গাঁজাখুরির আড়ম্বর! 

সেই তপোবন থেকে উড়ে আসছে যজ্ঞের ধুলো
অশ্বমেধের অসহায় পশুর চিৎকার
দেবতার বরে অভিষিক্ত রাজা ও রাজার পরিবার
এত সাধনার সম্রাট মুনি-ঋষিদের চোখের সামনে ভোগের চূড়া
চমৎকার! 
আমি তো সেই দেশ থেকে হেঁটে আসছি...
যেখানে অসুখ আরামে সহবাস করে অপ্রতিরোধ্য অতিথির মতো!
যেখানে অন্যায় হাসিমুখে সকল মুখোশ পরে নিয়ে সাধুর ভড়ং করে!
যেখানে একদিকে কুবের বসে থাকে চব্য-চুষ্য-লেহ্যর পাহাড়ে আর পরাণ মাঝি নিজের হাড়ে নৌকা বানিয়ে ভুবন পারাপার করে!

তার মাঝখানে সহসা কোনো এক রাজার পুত্র  সবকিছু ছেড়ে মানুষের পায়ের ধুলোর ভেতর খুঁজে নেয় বৃক্ষ, বোধের

সেই  অফুরন্ত ভারতবর্ষ চাই... জন্মান্তর...



অলংকরণ - শুভদীপ প্রধান

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি জগন্নাথদেব মণ্ডল এর কবিতা-






১।।    ∆ হে প্রাচীন দোতলা বাড়ি ∆




তোমাকে দেবতার চানজল ভেবে ধীরে ধীরে পান করেছি উদরে।
যমকাক উড়ে চলে গেছে উনপঞ্চাশ হাওয়ার ভিতরে।

অথচ সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায় কাচের বাতিদান ছিল না।
শুধু মাদুরের গায়ে উল্টে গিয়েছিল লন্ঠন।

অগ্নি নয়,পোড়া ময়ূরদেহ নয়,
কর্পূর মেশানো ঠান্ডা জল গলার নালার ভিতর কলকল শব্দে নামছিল।

মাটির কুঁজোর গা ঘামছিল,রবার গাছের অাগায় রাত,নীলবর্ণ ফুলের নীচে গোখুরা সাপের শঙ্খ।

জল ঝরছিল কেবলই,জল,শুধু জল।

আর প্রিয় আমার,তোমাকে পান করে অামার মলভাণ্ড অবধি শুদ্ধ হয়ে উঠছিল।

 (১)
সকালরেডিও,
আর হাতে শাদা রুমাল চেপে ধরা
 সন্ধ্যা মুখার্জির গানে মনে হয় ;
আমার মায়ের মুখ পুরোনো গানের মায়া দিয়ে গড়া। 


(২)

অনি, আমার খুব ভয় করছে, আবার সূঁচ ফোটাবে রে.. 

তুই এখন না খাওয়া মানুষ , বেশি ভয় পাস না তো,দ্যাখ শুধু একটু কাঠপিঁপড়ে কামড়ানোর মতো কুট করে লাগবে কেবল।

পিঁপড়ের উপমাতে বারবার রক্ত নেওয়ার বেদন উবে যাচ্ছে যেন কর্পূর। 


(৩)

নমশূদ্র বৌ, জট মাথায় গলায় পৈতে নিয়ে গলাজলে ডুবে হাতের বাসনে চেয়ে আছে বহুসময়। 

স্তব নয়,প্রণামমন্ত্র নয়,
পাগলিনী টেনে টেনে বলছে -
শ্রীমদভাগোবত গীইইতাআআ,চৈতন্য চরিতামিতঅঅ,নরহরি দাস...

মাদারির খেলার মতো বেলা ডুবছে ;
আর মেয়েশিব হয়ে বাংলা কবিতার সুধাবিষ কন্ঠে ধারণ করছে বৌমানুষটি। 


(৪)

ভোরে ঠাকুমা ধানের পুরুষ্টু  গোছা হাতে বলছে - 

এমন কইরা ধানগাছে পরপর সুন্দর ধানগুলান কে সাজায়ে দিল কও দেহি, এ মানুষের কাম না।
যিনি সাজাইছে তারে গোবরজলে ধোয়া উঠানে বসাইয়া সেবা দিতে হয়,এই ধানের দুধের মইধ্যেই সেই চিরল মা ঠাকরানের বসতি... 

একথা বলার সাথে সাথেই ঠাকুমা ফরিদপুরের ভিটার ডালিমতলায় কবিতা রচনা করছে,  আর লক্ষ্মীপেঁচার বুকের বসনখোলা হাওয়া এসে লাগছে ১৯৩০ সালের পুববাংলায়।


(৫)

ওদের রেডিওতে কী সুন্দর কথা বলে রে...
তুমি রেডিওর শব্দ কানে শুনতে পাও বাবা?
কেন পাব না, আবছা শুনি কিন্তু কতো সুন্দর সুন্দর কথা বলে ওদের রেডিও।

বাবা,শুধু ওদের রেডিওই কেন গো? সবার রেডিওতে তো একই কথা বলে,একই অনুষ্ঠান ,একই গান.. 

উহুঁ, ওদের বাড়ির সবার মন ভালো, তাই ভালো ভালো সুন্দর শাদা কথা বলে রেডিও...

সকালবেলার রেডিও কি মন বুঝতে পারে বাবা? 





২।।   ∆ গরলের দেশ,উপশমের দেশ ∆




রাষ্ট্রযন্ত্র ঠিক করিয়াছেন এবার সে ঠান্ডা গাড়িতে চড়ে গাঁয়ে গাঁয়ে যাবে।
পায়ে হেঁটে ঘুরবে শীতল আঙিনা, নিমগাছ, গোয়ালের চর্তুদিক!
হ্যাঁ, সত্যি বলছি পায়ে হেঁটেই ভ্রমণ!

জমিতে জমিতে কৃষকভাইদের পায়ে যাতে সাপে ঠোকর দিয়ে কিছু করতে না পারে
তাই দেওয়া হবে গামবুটের মতো শক্ত সুরক্ষা কবচ।

এতে আনন্দিত পরিবার, কৃষকভাই, স্ত্রীসকল।

কতো চন্দ্রবোড়া, আলকেউটে, খড়িশ ব্যর্থ হল।
হাসপাতালে কমে গেল কিছু ভিড়, মনসাথানেও।

তাই গণতন্ত্রের দেশে ভোটদানের দিন চাষি পরিবার হাতে হাতে নিয়ে যাচ্ছে দুধভান্ড, চাঁপাকলা।
ওরা ভোটদান পুজো ভাবছে,
বলিও হয়।

শরীর বাঁকিয়ে বিড়বিড় প্রার্থনা করছে গ্রাম্যলোক-হে দেবী, এবার যেন গাছ, টিপকল ও মানুষগুলান আনন্দে বাঁচে!


( ১)

তুমি এক ঠান্ডা শ্যাওলার ছায়া,
আমাদের ত্রিপলগৃহে তোমায় মাঝেরাতে নাভিঘায়ের ভিতর বসিয়ে আরাম পাই।

ভিতরের কলকল জল খুলে যায়।
স্বপনে ডালিমগাছের ঠাকরুন বসন নিয়ে পালায়।

 কিছুদূরে শরৎকালীন হাওয়ায় কাঁপে আমার হাঁস।

চুনভাঁটার মাঠে অবশ হয় অলস এ দেহভার।

তোমার গৌরিহাত আমার গলার প্লাস্টিকসাপ খুলে খেলা দেখায়।

গাছে গাছে বানর,
তুমুল হাওয়ার দেশে উড়ে আসে অচল খুচরো আর বাতিল নোটসকল। 


(২)

একদিন অন্তর স্নানে ক্ষয়ে গেছে তব ত্বকনাভিচোখ।
তবু রঙহীন মাটির ঠাকুরের মতো তোমাকে গলা ভাত খাওয়াই।
হাবা মুখে তুলে দিই স্তনের অধিক।

বাঁশবনে নির্জন হাওয়ায় পাতার মকুট ঝরে।
ইতস্তত ঘুরে বেড়ায় স্ফটিকের মোষ।

তোমার গলার ফুটোয় রাত্রি ঘোরে।দিনকর আর চন্দ্রতারার বোন।

তোমায় মনে মনে পরমহংস ভাবি,আমি বিনোদিনী দাসী। 

একথা ভাবতে গৃহের হাঁস বক হয়ে আকাশের মেঘে লুকায়।


অলংকরণ - অমৃতা নায়ক

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি রিমি দে’র কবিতা-






১।।    ∆ প্রতিশোধের আকাশ ∆



এতটা আমফানেও শ্যাওলা ধরা জমানো মাটিগুলো
গলে যায়নি
স্বরূপ বুঝতে মাটি খুঁড়ি,দেখি কেঁচোগুলো স্বাস্থ্য পেয়েছে ঢের…..
কিলবিলগুলো বেশ আকর্ষণীয়

তৎক্ষণাৎ মাটি চাপা দেই

একে তো মারণ ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ
তার উপর সাপের অত্যাচারের কথা মনে পড়লে

নিজেও হয়তো আমফান হয়ে যাব
ছড়িয়ে পড়বে অনিয়ন্ত্রিত বিষ

যা এই মুহূর্তে চাইছি না!





২।।     ∆ জঙ্গল ∆



ভোররাতে অন্ধকার মেলে  দিয়ে জঙ্গল ছুঁয়েছে ঘর
এক পা ঘরের ভেতরে নড়ে
অন্য পা বারান্দা ছাড়িয়ে ধুলোয় মাখানো আকাশ 
ভেতরে ও বাইরে মন কষাকষি

আমি হিম মেখে কেঁপে উঠি মৃদু
বাঁশ  ও বেগুন গাছের  অনুরণন বলে দেয়
ঘর ও জগতের  শূন্যতার মায়া

পাখি গান গায় 
                    আমি পাখা মেলে উড়ি

জঙ্গল  ঝরে  পড়ে     
শরীরের অলিগলি থেকে!





৩।।     ∆ ওষুধ ∆



গড়িয়ে পড়া সিঁটিয়ে যাওয়া অস্থিরতাগুলি গাঢ় নীল হয়ে গেছে


তাতে বেশ কিছু  গুঁড়ো ভয়  আর লজ্জা লেগে আছে 
এখনও

দেখে ফেলি আমি
কেউ কেউ আমাকেও দেখে ফেলে
চুপচাপ জড়ো করে  
 গোলমরিচ ছিটিয়ে রক্তপাত বন্ধ করি সাময়িক!

সার্থক কবিতা আমার চারদিকে ঘুরপাক খায়!





৪।।    ∆ উড়োচিঠি ∆



খোলা চিঠির  কুয়াশায় কুয়াশায় কৈফিয়ৎ ভাসছে
 কত ব্যাখ্যা কত  ভাবসম্প্রসারণ জনে জনে লিখছে
যেন স্বীকারোক্তি!

বর্ষার কুয়াশা অদ্ভুত,ভেজা অথচ হিমমাখা নয়
ভাবগুলো ধরে রাখে ভালোবাসায়
স্কুলে একবার ভালোবাসা নিয়ে ভাব-সম্প্রসারন লিখেছিলাম
সেখানে প্রেম পরকীয়া পাখি গাছ বারান্দা চিঠি -
এসব প্রসঙ্গ এসেছিল

এমনকি বিয়ের ঠিক হবার পর উড়ো চিঠির প্রসঙ্গও এনেছিলাম, তাতে লেখা ছিল- ছেলেটি চরিত্রহীন !




৫।।   ∆ কবিতা সম্রাট ∆



রাজায় রাজায় তলোয়ার হয়
রাজায় রাজায় খানা পিনা হয়
রাজায় রাজায় আলো-আঁধারি হয়
রাজায় রাজায় কেল্লা হয়
রাজায় রাজায় অন্ধকার হয়
রাজায় রাজায় চুপিচুপি  সুড়ঙ্গ হয়
রাজায় রাজায় কবিতা হয়

রাজায় রাজায় কবিতার লটারি হয়!




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি জয়শ্রী সরকার এর কবিতা-





১।।    ∆ তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে ∆



আমি তোমাকে একটা উজ্জ্বল তারা দিতে চেয়েছি,
তুমি গোটা আকাশটাই 
মেলে ধরেছো আমার সামনে !

আমি তোমাকে একটা ফুটন্ত গোলাপ দিতে চেয়েছি,
তুমি বিশ্ববাগিচার সৌগন্ধ
বিলিয়ে দিয়েছো আমার ঘ্রাণে !

আমি খাঁচায় পুরে একটা পাখি দিতে চেয়েছি তোমায়,
তুমি আগল খুলে দিয়ে
উড়িয়ে দিয়েছো অনন্ত আকাশে ......

আমি জল তুলতে চেয়েছি পোশাকি ঘড়ায় ,
তুমি লাবণ্যদীঘির অক্ষরমালায়
সাজিয়ে তুলেছো শেষের কবিতা !

আমি জ্ঞানবৃদ্ধের মতো এ্যানাটমি করি তোমার সৃষ্টিকে,
তুমি ভাবনার বিশ্বকোষ বিমল বিভাসে
বিলিয়ে দিয়েছো তোমার জীবনদেবতাকে !

আমি ' আগুনের পরশমণি ' শুনিয়েছি তোমায়,
তুমি পুরো গীতবিতানটাই
খুলে দিয়েছো আমার হাতে !

তোমার অসীমতায় আজ আমি উদাসী বাউল,
তাই, নিমগ্ন-ধ্যানে প্রার্থনা করি,
" চরণ ধরিতে দিও গো আমারে ....... "

     



২।।    ∆ ঈশ্বর-মানব ∆
           

             
তোমাকে সূর্যের পাশে বসিয়েছি ,
তুমি পলকে দাহ্য হ'য়ে যাও নি ----
ভাস্বর থেকেছো !

তোমাকে আকাশের নীলে মিশিয়েছি ,
তুমি মেঘে ঢেকে যাও নি -----
মুক্তি খুঁজেছো !

তোমাকে ঝরণার কাছে রেখেছি ,
তুমি ধারা হ'য়ে বও নি -----
স্বচ্ছতাকে ধ'রেছো !

তোমাকে বন-বাংলোয় দেখেছি ,
তুমি ফুলটবে শুধু ফোটো নি ----
সৌগন্ধ বিলিয়েছো !

তোমাকে আরাধ্যের আসনে বসিয়েছি ,
তুমি অমরত্বের আশ্বাস দাও নি ----
মানুষের কথা বলেছো !





৩।।    ∆ ভালো ∆
     
   

ভালোকে কত সহজেই ভালোবাসা যায়
স্থান-কাল-পাত্র
লিঙ্গভেদ না করেই !

ভালোকে কত সহজেই কাছে আনা যায়
মনন-উপলব্ধি দিয়ে
স্পর্শ না করেই !

ভালোকে কত সহজেই শ্রদ্ধা করা যায়
বয়ঃজ্যেষ্ঠ হ'য়েও
অহং-কে তুচ্ছ না করেই !

ভালোতে কত সহজেই আলো ফেলা যায়
স্বচ্ছ জীবনবোধে
স্বার্থত্যাগ করেই !

ভালোকে কত সহজেই মনে রাখা যায়
দূরান্তরিত হ'লেও
অলখে অশ্রুপাত করেই !




৪।।  ∆  কবিতা স্বপ্নময় ∆
     
        


কবিতায় সত্তার স্বপ্নকে হত্যা কোরো না,
সামনে রেখো চরৈবেতি মন্ত্র ------
সূর্যের মতো বিশ্বাসী তেজ আর আলোর উৎস,
মমতাময়ী মাটির সবুজতা আর মানব-উত্থান !
তা যদি না হয় -----
বিশ্বের সমস্ত কবিতাই হ'য়ে উঠবে
ধ্বংসস্তূপের মতোই প্রাণহীন শুধুমাত্র
অক্ষর-পিরামিড !





৫।।  ∆ অ-উ-ম ∆
        
      

তুমি যাকে সেবা বলো, প্রজ্ঞা বলো ,
বলো ভালোবাসা -------
আমি তাকে আধ্যাত্মিকতা বলি !

তুমি যাকে জীবন বলো , যুদ্ধক্ষেত্র বলো ,
বলো চলিষ্ণুতা -------
আমি তাকে দার্শনিকতা বলি !

তুমি যাকে কবিতা বলো , আনন্দ বলো ,
বলো রূপমাধুরী -------
আমি তাকে সত্য-শিব-সুন্দর বলি !



অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি দেবাশিস প্রধান এর কবিতা-




  ১।।      ∆ ক্ষত ∆



গমরঙা রোদ কাঁপছে ঘাসের ধুলোয়, বেবুর গাছে পাখপাখালির সভা।
মনুষ্যজন ন্যায় অন্যায় বাঁধে, জোট বাঁধো হে, তৈরি হও এমন আহ্বানে
এক এক  পাখি ভিন্ন স্বরে চেঁচায়। এই পাখি তোর হাড়গোড় সব চ্যাঁছা।
 গুলতি ছুঁড়ে কি মার মারে খোকাবাবুর দল !  জোরসে ডাকে পেদুর বনের পেঁচা।
সবুজ টিয়া বনের হরিয়াল যায়না ধানের ক্ষেতে
চার্দিকে রোজ ঝুলছে মায়া জাল, আমরা মরি, ক্ষুৎকাতরে রোজ 
হায়,এমনই দিন কাল!





২।।   ∆ আয়ু ∆



আমার না বলা কথা তুলে রাখি তোমাদের চৌকাঠ সীমায়
এমন। পবিত্রমুখ লক্ষ্মীজলার মাঠের হু হু ছড়ায় বাতাস
শীতল আলোয় নারী রি রি রোদের বাগানে
           খোঁজে অমল পরাগ
তেমন আঢাকা শরীর থেকে খুঁজে নেবো বেবাক গন্ধ মৈথুন
তোমার হিমবাহ রাতের শরীর থেকে ছেঁকে নাও দিনান্ত উত্তাপ
এখন ওমুখেই ঝরে পড়ছে নাক্ষত্রমথিত ক্ষমা, মকর জলের আয়ু 

তোমার আমার মধ্যে এভাবেই গড়ে উঠেছে আলোর অহংকার
তথাগত রোদ্দুরের তুকতাক, সুখ-দুঃখ বিষাদ সিন্ধু ঘাঁটা নিজস্ব ভূগোল।




 ৩।।  ∆ ভেতরে ভেতরে ∆



তোমার ভেতর শীতল গন্ধ 
অগাধ ইচ্ছে সবুজ অহর্নিশ 
কলবলিয়ে ফুটছে কমার তোড় 
পাখপাখালির কিচিরমিচির দুধেল ধানের শীষ !
      
তোমার মধ্যে আঁটুল বাঁটুল কথা 
আয়ুযাপন দিঘল পাতার পাতার জল----
 কাঁপছে শুধুই কাঁপছে দিন ও রাত 
ক্ষমার মতো আকাশ চোখের নীলে
টপটপাটপ পড়ছে তরল ধারা
সময় এবং সময় অনর্গল !
      
 আমার মধ্যে তোমার সরল হাসি
ঘাই মারছে চিরহরিৎ উষ্ণ অভিলাষী ।




৪।।   ∆ টান ∆



চরিতার্থ কথাটি লিখি,তোমাদের কোমল হৃদয়ে চামড়ায়
আদ্যন্ত এমনই লিখি-----অক্লান্ত অভিপ্রায়, প্রাণান্ত অভিজ্ঞাতার
সুচিমুখে জরুরী অক্সিজেন খুলে দিই-----জীবন্ত বেঁচে থাকার
এও এক আশ্চর্য বিধান। এসো, তবে আঁধার পর্দা ছিঁড়ি ক্রমাগত হ্যাঁচকা টানে-----।




৫।।     ∆ জড়তা ∆



আজ না পাওয়ার জন্য দুঃখ নেই -----
অনিশ্চিত ধূসরতা, ধুলোময় এটলাসের
 প্রতি অক্ষে অবাক আলো-আঁধারের 
প্রতি কথা, প্রতি অঙ্গে শ্যামপবনের
 হাওয়া ইতিহাস । উৎসাহের মুষ্টি ভিক্ষার
জন্য দু’হাত পেতেছি ধুলোর চামরে,
 রক্ত রসের অঢেল আয়োজন পড়ে রইলো
দক্ষিণে উত্তরে । তার চেয়ে সামাজিক 
মহার্ঘ সময়ের ডানায় বেঁধে রাখি
 প্রেম । হে নৈঃশব্দ্য, তুমি এত অসহযোগী
 প্রবাহের মধ্যেও প্রেক্ষিতে প্রতিমার বিরুদ্ধ
 চেতনা দাও, এসো----- অনড় সভ্যতার
 ভিত নাড়িয়ে  চুরমার করো, অজীর্ণ সংস্কৃতি।



অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 27 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় এর কবিতা-


অভি কর্ষিত চারণভূমির ডাইরি



১.

তোমার অর্ন্তবাসের পরিপূর্ণ জানালা দেখতে চেয়ে

যে গূঢ় তত্ত্বের অবতারণা করতে হলো,তার সাথে

শুধুমাত্র তৃষ্ণার্ত উটের তুলনা দিতে পারি।যে উট

বসতিতে আসামাত্র সমস্ত কুঞ্চিত জন্মদ্বারে লেগে

গিয়েছিল অমূলক আগুনের শঙ্কা।শূন্যে ভাসমান

প্রতিটি সুস্থ বারান্দা ফিলআপ ছিল দেবতাদের

উন্মাদ কলকাকলিতে।উটটির বোধহয় সামান্য

বাতজ বেদনার প্রকোপ ছিল।না হলে ক্যান

বলো বারবার অর্ন্তবাসের জানালায় নাক ঠেকিয়ে

জেনে নিতে চাইছিল দৈব ওষুধের প্রকরণ ক্রিয়া।

 

 

২.

কার্যত প্লেজ়িয়ারিজমে্র ঘনত্ব অনুধাবন করা

আকাটা হীরকখন্ডের মতো কঠিন।সুবাতাস

এড়িয়ে ঘৃত ও গব্য চর্চিত বাঁশ দিয়ে ঠেলে

তোলা মাংসের বস্তুবাদ তোমার কাছে জননী

সুরক্ষা থেকে প্রাপ্ত টাকার সমান,যা দিয়ে তুমি

একশো ব্যাঘ্র শাবককে ঘাস খাইয়ে ছিলে।কার্‍্যত

অক্ষম মুদ্রাদোষে একটি লৌহখন্ড জ্বালিয়েছি

বৈমাত্রেয় ছাইদানে।কোথাও এক টুকরো ধোঁয়ার

সিলেবল্‌ নেই।তবু আজ,লোহাটির মনখারাপ।

 

 


৩.

কণা কণা ইশ্বরঞ্জান-আমাকে দাও মধ্যরাত্রি

বিভাজন করার মতো তলোয়ার।আমাকে দাও

নকল পাথর বসানো জ্যোতির্ময় আংটির আশা।

ছেঁড়া নোট দাও,টুটাফুটা স্বপ্ন দাও,দাও ফর্ম

হারানো খেলুড়ের সঙ্গলাভ।এ স্থবির জীবনচর্য়ায়

দাও অপেক্ষার চূড়ান্ত শীর্ষে গমনের যোগ্যতা।

রক্তে দাও প্রোটনের নির্বাণ।ইলেকট্রনের বৈধতা।

বিন্যস্ত বা অবিন্যস্ত যেভাবেই স্থিরতা পাক

তোমার মহাজাগতিক রহস্যোপন্যাস,তুমি কিছু

দাবি কোরো না শুধুমাত্র আমার বিস্ফোরনোত্তর

লিঙ্গটুকু ছাড়া।



     
৪.

কবিতার নিকষিত হেম হে ব্রাদার

বিকশিত কন্টক ফুলের মেটাফর,

কাষ্ঠ সাজ়ায়।ইহজন্মের অপ্রকৃতস্থ

গ্রহ পা টেনে চলে গ্যাছে ভৌমজলের

সারল্য বিন্দুতে।কবচ কুন্ডল তার

গচ্ছিত রাখা আছে সদ্য চাকুরিহারা

যুবকের সমাধিফলকে।এখন মধুক্ষরা

সাঁঝ।লবণ নিবন্ধীকরণ শেষ।গ্রেভইয়ার্ডে

নিভে যাচ্ছে অগ্নিশলাকা।যুবকের অশক্ত

চিবুকের নিচে এসে আড্ডা জমাচ্ছে

মাতাল ভ্রমর আর বৃদ্ধ হওয়া স্যাক লেটার।


 
৫.

তোমার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ ইতিউতি মাথা

গলাচ্ছে হাফ্‌বেকড শ্বদন্তের সহায়তায়।রক্ত

নয়,বিঠোভেনের বেহালার খোঁজে।কোনোকালে

একপ্রকার নগ্ন সুর ধসিয়ে দিয়েছিল তার ধারালো

প্রাচীরের ব্যাবস্থাপনা।এখন ও ধার্মিক কিছু লোক

সেইসব কথা বোলে-টোলে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা

করে মুমূর্ষু বন্দনাগীতি।বেহালায় ঢুকে পড়ে

আহত চাঁদের স্মৃতিকথা।নশ্বর ঠেক ভেঙে

যাওয়ার পর পৌনে পাঁচজন ছায়া তাস পেটাতে

বসে গানের স্কুল ফেরত শ্বদন্তের মেখলায়।




অলংকরণ - শান্তনু মহাপাত্র

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°


কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি রাখী মাহাতো এর কবিতা -





১।।  ∆ আত্ম- সত্তা ∆



এক অনার্য রমণী
শুকতারার ঝোলায়
এক- একটি করে মহুল জমা করে
শূন্য অন্ধকারে ফাঁদ পাতে---
মাথার উপর এক-থালা চাঁদ
লালা ঝরায়,
রুপালী মহুল তুলে
ঢলে পড়ে সাদা পাতায়।

খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে তখন-
আমি পাতা উল্টাই
শব্দবিহীন নুপূরে নিজেকে সাজাই
মাদল- তালে রুপালী জ্যোৎস্নায়
মাটি খুঁড়ি,মাটি- গন্ধে খুঁজি
পূর্বজ আত্মীয়ের ঘাম।

চোখের শিশির বাগ মানে না ,
সোনা ঝরা রোদ্দুর কর্পূরের গন্ধ পেলে ; 
চাঁদ- মণ্ড তুলে
আমানি- হাঁড়ি শূন্য করি।





২।।   ∆ ঘুড়ি ∆



আমার হাতে এক মুঠো আকাশ
তারাখসা রাতে ঘুড়ি উড়ায়
বিড়ালের চোখ হয়ে
আমিষের গন্ধ শুঁকে;
পাতার পর পাতা গেঁথে
ঘুড়ি তার লেজ বানায়----  
কিন্তু মাটির উনোন 
তাতে যদি বাঁধে আগুন ........




৩।।     ∆  রাজহাঁস  ∆



ভরা পুকুরে জলের হাসি মেখে
বাতাস যখন
রাজহাঁসের পালকে মুখ গুঁজে
চোরাই ধন লুকিয়ে খায়
আর কুড়িয়ে রাখে
 একটি- দুটি চিহ্নিত পালক
রাতের অন্ধকারে নির্জনে
উষ্ণ রক্তের স্বাদ পেতে ;
বাহির ঘুরে ঘরে ফিরে
রাজহাঁসেরা আমার উঠোনে ঝাড়ে পালক, 
উঠোন- ভর্তি ফুলে ফুটিয়ে দেয় জলের ছাঁচ; 
চোখ মুছে অক্ষরবিহীন কবিতা তখন
প্রদীপের সলতে হয়।





৪।।     ∆ অতি- প্রাকৃত  ∆



আমার হিমস্নাত পাথুরে বরফকে
রোদ্দুরে রাখব না।
নক্ষত্র মেলার জীবন
 ফিকে করে দেয় ভোর,
শব্দ গাঁথার বিনুনী শিশিরে ভিজে
খুলে ফেলে অক্ষর---- 
শুকনো গ্লেসিয়ারে পা হড়কে পড়লে
ফিনকি দিয়ে রক্ত বেগবতী হয়;
তাঁর থেকে বরং
পাথুরে বরফ রাত্রি- ঔরসেই তৃষ্ণা মেটাক





৫।।  ∆  মহুল- তাপ ∆



পঞ্চচুল্লীর আভায়
দ্রৌপদী আজ দেখে----
ফাটধরা প্রিজমে অনেক বিবস্ত্র মুখ-- 
তুষ ঢালা আগুনে
ক্যাবলা মেঘের হাসি।

সৃষ্টি -ঝরা  পাতায়
গাছের স্বপ্ন পুড়ে, 
গো- মুখ গহ্বরে ছাই ফেলে
মুখে রাখে পোড়া আলু; 
পাণ্ডবের স্বর্গীয় সুধায় 
আজ মহুয়ার গন্ধ....



অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি তাপস দাস এর কবিতা-




১।।  ∆ শ্মশানবন্ধু ∆



শরীর এভাবে শক্ত হয়ে যায়
শরীর এভাবে কাঁচা- শুকনো বাঁশের ওপর
নির্বিকার উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে
  আত্মজনের দুঃখ শরীরকে নরম করতে পারে না
শরীর থেকে জগৎ খুলে পড়তে থাকে দফায় দফায়...

আশ্চর্য বাউলরোগ নিয়ে আমরা শ্মশানে বসে থাকি
একটা হারমোনিয়াম, একটা খোল, একজোড়া করতাল বাজতে থাকে,ধোঁয়া উঠতে থাকে ওপরে,
কেউ কেউ মদ্যপানে রত হয়, বুঝতে পারি
তোমার  কলমে হেলান দিয়ে বসে থাকি খানিকটা সময়...

এই যে ধোঁয়ার সাথে কীর্তন মিশে যায়
কেউ হাসে,  কার মুখের মতো
তখনই ফুরায়...!




২।।   ∆ স্মার্ট নই ∆



স্মার্ট নই হুটহাট কারো সাথে মিশে যেতে পারি না।
মনে হয় আমার শরীরে পূর্বজন্মের জল জমে আছে।
এজন্মের হাস ও অন্য পাখিরা স্নান সেরে নেয় আমার ভেতর।
যদি তোমাদের সাথে হুটহাট কোলাকুলি করি
তারা উড়ে চলে যাবে অনেকটা দূরে...

আশায় আশায় থাকি
ওদের বিজ্ঞ ঠোঁট আমারই পাক ঘেটে
আমাকে তুলে দেবে ঐশ্বর্য নামের প্রাজ্ঞ বালিকার মুখ
যার চোখে ঘুম হয়ে নিভিয়ে দিতাম তারার আলোকে...




৩।।  ∆ শিরোনামহীন ∆



যে তারিখে আমার জুতো ছিঁড়ে যাবে
খানিকটা ভয় ও ধুলো রেখে,
দম্ভ -ওজন ও অভিশাপ মুছে, গা এলিয়ে দেব তোমার কোলে

জুতো ছিঁড়ে যাবেই
তুমিও পোশাক খুলে ফেলবে গা থেকে
কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য
প্রেমিকা, বোন, পরিচিতা সব অবস্থা
ফু দিয়ে উড়িয়ে দেবে

ক্রমশ মা হয়ে উঠবে। জুতো খুলে আমিও সন্তান...




৪।।   ∆ ভোর ∆



মাকে দেখে আজ প্রথম ভোরের মতো  মনে হল
আবছা আলোয় আমার অকৃতজ্ঞ বয়স আর
পাতাগুলো ঝরে আছে
একটা সম্ভাবনার আলো আর পাখির ডাক
ছড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে

পাখিরা আশ্চর্যভাবে ডাকছে, এখন তো গ্রীষ্মকাল
পাতা ছুঁয়ে শিশির নাকি কুয়াশা নামছে
নাকি আমারই যন্ত্রনার মতো নিছক ভিজে উঠছে
মুছে যাওয়ায় জন্য...

আমার বাড়ির পাশে একটি ভাঙা বাড়ি, চালে টিন নেই
ধোঁয়া বেড়িয়ে আসছে, কোন চক্রান্ত নেই ওরা হাসছে
ওদের ক্ষুধাচিহ্ন সরাসরি ছড়িয়ে দিচ্ছে বৃহৎ আকাশের দিকে।

আবছায়াতেই ফুটে উঠতে হয়, আজ
ফুলের কাছে শিখতে চাইছি সময়
সূর্য ওঠার কত মিনিট কত কম্পাঙ্ক আগে
একটি প্রকৃত ভোর শুরু হয়...



৫।।   ∆ হাসপাতাল ∆



তুমি আমার মধ্যে একটি হাসপাতাল খুঁজতে এসো। দেখবে হাসপাতালই প্রকৃত ধর্মস্থান। স্যালাইনে আজান গুলে আছে, ট্যাবলেট হরিনাম। পাশাপাশি বসে দূর্গানামের তালেই বিড়বিড়িয়ে উঠছে কোরান। করুণ মুখ করুণতর হয়ে পরস্পরকে দেখছে। কোথাও একটিও ধূপকাঠি জ্বলছে না। একটিও মাইক তারস্বরে চিৎকার করে ডেকে উঠছে না কোত্থাও...




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°′°°°°°°′°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি সৌমাল্য গরাই এর কবিতা-



১।।  ∆  মহাপ্রস্থান ∆



যেতে হয়। কোনো দাগ--
বোঝে না জলের পরিণয়
এভাবে আড়াল টুকু আড়ালেই রেখে, সামান্য ভগ্নাংশটিকে
সে কেমন নির্লিপ্ত সরলে প্রদক্ষিণরত 

 এমন প্রস্থান রেখো
যেন শব্দ না হয় কখনো 
 সুখ ও আনন্দে তার মায়াচোখ মৃগনাভি হোক
 শুধু সে খুঁজে না পাক কোনোদিন অশ্রুত হরিণ 
 
অনির্বাণ করাঘাত, পথ চলে গেলে জেনো
মহাপ্রস্থানের শেষে নিঃস্বমুদ্রা হাতে
বুদ্ধের সমগ্র দুঃখে সুজাতা স্থবির হয়ে আছে...





২।।  আড়াল



কতটুকু চেনো তাকে খোয়াবের আঁতুড় ভেঙে যে
চুরি করে নিয়ে আসে, বেহেস্তের আলোক- শরীর?
গভীর গোপন থেকে, দেহাতীত তাদের ইশারা
ভ্রান্তির কুহক ফেলে খেলা করে রক্তের ভিতর

আমিও চিনিনা তাই, শরীরের আড়ালে শরীর
কি নিপুণ দক্ষতায় শিকার করেছো মায়াবিনী
অধীত দৃষ্টির থেকে যত দূরে যাই মনে হয়

তবে কি জন্মের মোহ জন্মান্ধ করেছে আমাদের?





৩।।  ∆ ছায়াবাজি ∆



নিঃসঙ্গ স্বপ্নের মতো কেউ আসে, যেন মৃত্যু অথবা পাখি, ধীর সন্তর্পণে, স্পর্শ করলেই মারা যাবে। এমন শিশুর কান্না ওঠে বুকে,যেন পুরুষের স্তন মা হতে চায়।

বিস্তীর্ণ একটা গমখেত শুয়ে থাকে সরল যোনির মতো, তার কূপে কূপে খেলা করে বয়সের শিশুরা, গোধূলির পর মারা যায় আর
নীল কাফন জড়ানো আয়নায় চুপচাপ ঢুকে পড়ে। 
  কে আসে তবে নিহিত স্বপ্নের ভিতর!
আরও নিবিড়ে গেলে, নিভে আসে আলো
অন্ধের আলোক ছাড়া  বাঁচে না ছায়ারা, শুধু হাজার হাজার বিন্দু সপ্তসিন্ধুপার জুড়ে ভাসে।
অদূরে ঘোষণা শোনায় কেউ-
অদৃশ্য জামা গায়ে মানুষ যায় না কোথাও,শুধু তার ছায়াটি নিখোঁজ হয়..





৪।।  ∆  নিরক্ষরের প্রতি ∆



যে তুমি চেনো না অক্ষর লিপি

ভাবি সে কীভাবে শিখবে —যা লেখা থাকে মাঠে ঘাটে বনে

 পাখির ডানায়, 
     শালুকের জল যে ছন্দে নাচে।

  লিখন প্রতিমা এসে দেখে 
শ্রান্ত ভাষার কপালে কে যেন 
পরিয়েছে টিপ আর
আমার মায়ের কাঁপা হাতে 
        লেগে আছে বাংলা কবিতা




৫।।  ∆ পলাতকা ∆




শরীরী প্রপাত থেকে অভিধান খুলে গেলে দেখি
সেখানে শব্দের মায়া, শব্দহীন আলুথালু শুয়ে
সরল শিশুর বুকে হামাগুড়ি দেয় আর কাঁদে

কখনো খিদের চোটে কামনা জড়িত লোলজিহ্বা
চেটে চেটে সুললিত একজোড়া স্তনের প্রপাতে
রেখে আসে স্রোতস্বিনী, স্নান শেষে তার নগ্ন  পায়ে 
প্রসববেদনা বাজে, গর্ভবতী জলস্তম্ভ সেও
জানেনা কিভাবে হায়! ভূমিষ্ঠ কান্নার বর্ণমালা
কবিতা জরায়ু ভেঙে প্রতি রাতে কোথায় পালায়

কিশোরী নর্তকী  মেয়ে,মৃতবৎসা হলেও জীবিত
আমি তার কিনারায় কবিতারোপণ করে দেখি
আসলে তফাত নেই প্রেমিকা ও ঈশ্বরীর দেহে
কাছে দূরে  আশ্রয়ের সাধনা দুয়ার খুলে রেখে
আমিও পালাবো ঠিক,শরীরে শরীর ঠেলে ফেলে




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

********************************************

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি সন্তোষ চক্রবর্তী’র কবিতা-





১।।    ∆ গুজব ∆




কিছুই রাখোনি তুমি।যেটুকু রেখেছো গচ্ছিত
পরবাসে ঝড়ের মতো একা গৃহস্থ নির্বাসন
তিল ক্ষেতে খইয়ের মতো সাদা ফুল নিরালায়।
বেনাবনে কে আর সর্প শিকারের স্বপ্ন দেখে?
অতি তুচ্ছ শিকার প্রণালী,শান নেই দীর্ঘকাল এমন বিদ্যায়!
যদি বা তুষ্ট হয়েছিলে কোনদিন অথবা তাও না
একক প্রয়াসে গ্লানিন্তে মুঠো করা দু একটি নির্বিষ দিন।
এমন স্বর্গীয় গুজবে নাই বা গাইল গান আর সাই!
তুমি এসেছিলে চতুর্দিক এত আলো তাই,হাওয়ার শব্দে
কেঁপে ওঠে আমাদের পর্ণ কুটির।প্রান্তিক জলসাঘর।





২।।     ∆ দহন ∆




দেহ থেকে আত্না বাহির হয়েছে,তাই যোগাযোগ হীন মানুষের সাথে।একটি ভিতু চড়াই রোজ ডাকে শিয়রের কাছে।ওকে দানা দি।জল।আলো।
ধুলোর শরীর জুড়ে খণ্ড খণ্ড মূহুর্ত গুলি আজ নিশ্চিত আশ্রয়ে।
পূর্ব স্মৃতির কথা ভাবলে পাপ জাগে।অনুতাপ
আশাতীত আলোয় এখন মাটি থেকে পৃথক করা হয় ধান।ওতে কোমল আত্মা গচ্ছিত।খর বায়ু।বাদলের দিন
ফুলগুলি আজ কেমন গাছে গাছে আশ্রিত।পাখিরা ডাকে
স্তব্ধতার ভেতর নৈঃশব্দ আমাকে শান্তি দিয়েছে।
অন্য যে পৃথিবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি,তা আমার থাক।
ভীতু চড়াই,জেনো মৃত্যু হবে কোনদিন।তোমার।আমার।
আমাদের নৈঃশব্দ ভিন্ন মাত্রা পাবে তাতে।মোহমুক্ত হও
দেখো কেমন সমাদর করে আমাদের আদর!





৩।।     ∆ শঙ্খনীড় ∆



শঙ্খনীড়!কবেকার স্বাদ মিশে তাতে
ভাঙা সুর।ভাঙা ডাক।ভাঙা আহ্লাদ
অবেলায় এই কুটিরে আলো এসে পড়ে
মাঝরাতে স্বপ্ন আসে।আত্মমগ্ন কবি নিশি ডাকে
ঘর ছেড়ে চলে যায় দূরে অন্য এক নিরালায়
যেখানে বহুযুগ পর কায়েত রমণী বাগ্র চিত্তে ডাকে!





৪।।   ∆ কৌশল ∆



চিহ্ন হীন যতি।আঙুল রাখো।দুই হাত
এক করো।কর জোরের ভঙ্গিমা যেমন!
পর্যাপ্ত স্থানের অভাব।জল হাওয়া আছে
ভঙ্গিমা এমন যেন তুমি সব জানো!
আমার সাধ্য নেই তোমাকে আটকে রাখার
যদি মনে হয় চলে যাবে,চলে যাও!





৫।।    ∆ সংকেত ∆



দেখেছি কুঁড়ির মতো আসা
শেষে ফিরে যাওয়া যুবতী ফুল,
আমাদের মালতী মাধবী নেই
বাড়া ভাতে ঋণ,অভাব ব্যাকুল।
আসা যাওয়া সামান্যই মাত্র
অসাবধানে গা লেগে গেছে গায়ে,
আমাদের অভাবী দিনে দেবী ভেবে
তোমাকে প্রণাম তার চেয়ে।
দেখেছি ঝড়ে যাওয়া,আর
ভ্রমর মধু নিয়ে ফিরে গেছে,
গরীব পূজারী আমি,তাই নিয়ে
প্রার্থনায় দেবীর পায়ের কাছে।
যদি মালি হতাম,তবে তোমাকে
নিয়ে এসে গেঁথে একের পরে
বাজারে বিকিয়ে দিতাম যে
দরে পেয়েছি,তারও কম দরে।
দায় থেকে আজ পূর্ণ সংকেতে
অতএব বিদায় জানায় তোমাকে।



অলংকরণ - সৃজিতা মাইতি

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০

কবি অনিমেষ সরকার এর কবিতা-



অনিয়মিত ডায়েরী-Abstract Series
                       


১।।    ∆ ০৬.০৬.২০২০  (১) ∆



"নয়নাভিরাম" আসলে তুচ্ছ শব্দমাত্র,
জুড়ে জুড়ে থাকে গাছের সাথে।

কৈশর থেকে হালকা দানা
                            আপেক্ষিক
                          সীমানা
                    বিহীন
       ধ্বজকেশর।।

কোনো কাল গল্পের প্রবেশ নেই
  শুয়ে থাকা দায়
                              তাই
                                    বেঁধে বেঁধে রাখা
                                              একটা তীর্যক ছায়া

গাছ মরে গেলে, পাতাও ছেড়ে দেয় শিরা উপশিরা
বোধীবৃক্ষ তুমি কাকে ঈশ্বর বলো!...




২।।   ∆ ২৪.০৬.২০২০(১) ∆



তোমার মনোযোগ বাড়ানোর জন্যই আমার এই যাওয়া আসা,

টেনে টেনে রাখি নজর,
ঘুম কেড়ে নাও অপ্রত্যাশিত ভাবে।

অতটাও ঘোরে থেকো না, যাতে গাছের রঙ চিনতে ভুল হয়;
কেটে গেলে মায়া,
আহ্বান করো ।

ভেঙে গেলে টান,
আমরা ; পাশাপাশি বসবো...




৩।।  ∆ ১৫.০৭.২০২০(মন্দ চিন্তা / বেসড বোর্ড)∆ 



মোহন বাস্ফোর-কে চিঠি

একটা সাময়িক বিরতি নেবো বলে মোহন বাস্ফোর  তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম ,
উল্লেখ করা ছিলো ঠিক কোন কারণে আমার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত ,
তোমার কোনো সদুত্তর পাইনি এতদিন  ,গোলাপী বারুদের ধান নিয়ে বেশ কিছু শলাপরামর্শ হয়েছে যতদূর জানি ,
আপেল ঠোঁট আর জঙলী জানোয়ারদের নিয়ে যে বইটা প্রকাশ হবে বলে অপেক্ষায় ছিল তা নাকি আজ পড়ে রয়েছে পান্ডুলিপি সুদ্ধ কোণে!
মোহন বাস্ফোর তোমাকে আরও কয়েকটা চিঠি লিখেছিলাম মনে আছে! জানিয়েছিলাম আমার কালো রোগা মেয়েদের ঠোঁট ভালো লাগে ,যেখানে জড়িয়ে থাকে নিরুত্তর বনসাইয়ের ঘ্রাণ ,
এলিয়ে দেওয়া চুলের বিবাহিত নারীরা আমার প্রিয় , কোমড়ের ভাঁজ থেকে একটা কামরেনু গন্ধ ভেসে আসে ,তবুও আমি কারো কাছে গিয়ে বলিনা একটু স্পর্শ দাও ,
মোহন বাস্ফোর তোমাকে জানাইনি আমি,  কবিতা লিখি বলে তোমার বউ বিছানা ভাগ করে নেওয়ার সময় আমার গলায় চুমু এঁকে দিয়েছিল আর বলেছিল কোনো নারীর ছোঁয়া পেতে গেলে আগে মন ছুঁতে হয় ,
মন ছুঁয়েই নাকি শরীর ,বাতাবি লেবু জাতীয় স্তন ,বক্ষ বৃক্ষের আঁতুরঘরে পৌছোনৌ যায় ,

আমি কিন্তু তারপর থেকে দীর্ঘদিন প্রেমের কবিতা লিখবো বলে বসেছিলাম , কিন্তু আর কোনো নারীর শরীরই আমাকে পরাস্ত করতে পারেনি ,

তোমার বউ ব্যতীত...



৪।।  ১৭.০৭.২০২০(২৪.০৬.২০২০)২ 



তন্দ্রা কেটেছে বলে আঁধার দেখছি ,
পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে কথা আর উপগ্রহ;
কোনো বিবর্তন বাদের কালিমা লিপ্ত নয় এরা।

তোমাকে নদী দেবো বলে পাহাড় গুচ্ছ খাড়া ঢাল এনেছিলাম ;
ঘুমের মধ্যে কেউ একজন বলে গেলো এখন কক্ষচ্যুত উপগ্রহ তুমি ...





৫।।  ∆ ১৮.০৭.২০২০(লেখা আহ্বান পদ্ধতি) ∆



তোমার মধ্যে দীর্ঘ বছর ধরে গাছ বেড়ে ওঠে, ডালপালা কাটার পর পাখিরা চলে যায়।

সারাজীবনের সঞ্চয় আমার কাছে গচ্ছিত রাখো , শেষ স্রোতটুকু এক দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি।

যদি কাঠঠোকরার দলে আমি ভিড়ে  যাই কখনও , ঠোঁট কেটে বাদ রেখে দিও আপেলের




অলংকরণ - দেবজ্যোতি মজুমদার

°°°°°°°′°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

কবিতা

শাপলা পর্ব -১০


কবি জগন্নাথ চ্যাটার্জী’র কবিতা-



১।।  ∆ অসুর কথা ৯ ∆




পরিধি ছোটো হতে হতে নিখোঁজ হয় ব্যাসার্ধ।

বৃত্তের মাথায় বিসমার্ক, নিজের হাতে ঠিক করে দেয় সম্পর্কের গাঢ়ত্ব

আদিম ছিটেবেড়াতেই বেজে ওঠে ধামসা, সেজে ওঠে সময় সংসার এবং আমি।





২।।   ∆ মায়াবি ডাস্টবিন ∆




কোনো দিন ডাস্টবিনের ধার দিয়ে হেঁটেছো?

ডাস্টবিন এক মায়াবাক্স,গমগমে   ইনস্ট্রুমেন্ট, ওখানে মালা গাঁথার স্বপ্ন ফেরি হয়।  টিনের দেওয়ালে পারিজাত অরন্যের নিভৃত সঙ্গম, কামধেনু শবলার ভরা সংসার।

এখানে চাঁদ ওঠে সারাদিন, এ চাঁদ পশ্চিম দেখে না, ঘুর্নন বোঝে না। এখানে আকাশের রং একঘেঁয়ে নীল না, বরং অনেকটাই  সাদা বা ধূসর,
বা সমস্ত রঙের হিজিবিজি,

এখানে শুধুই  'পাতিয়ালা' শরৎ আর 'মারওয়ারি''  বসন্ত। মৃদু রোদে 'খুশি' ঘাম এলিয়ে শুয়ে থাকে হাসনুহানার পাহাড়ায়।  নরম বাতাসে পাখনা মেলে  নিরুত্তাপ অভিধান।
অথবা 'কোড নেপোলিয়ান'।

ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে হাঁটো মালিক...

সেখানে টুকরো টুকরো  বৈদুর্য্যরা অপেক্ষা করে, আলবাত করে। বৈদুর্য্যরা  পেশাদার, শেয়ার সূচকের ওঠানামা, জিডিপির বাড়বাড়ন্ত,  লিবিয়া, সিরিয়া, ওয়ালস্ট্রিট সব বোঝে। তবুও সেই কালি-ঝুলি ঘাঁটা হাতে বা সিগনালে  চ্যাপ্টা  হওয়া পেটে যোগনিদ্রায়  নিদ্রিত। 

ডাস্টবিনের দেওয়ালে কান রেখেছো কোনোদিন?

"পাশাক্ষমালিকাম্বজ  পদ্মা পদ্মালয়ে শোভে" শুনতে পাবেই...

ডাস্টবিনে চাঁদ ওঠে...  ডাস্টবিনে চাঁদ উঠবেই...

মায়াবাক্সে জমা থাকা বৈর্দুয্যের গায়ে একটা করে চাঁদ গাঁথা থাকে...

ডাস্টবিন দেখেছো?

এখানে পৌরুষ আর কবজ পরস্পর সমান্তরাল।





৩।।    ∆ অসুর কথা ৪ ∆




বিকালে  মরা পালকের সাথে নেমে এল বৃষ্টি।
অগুন্তি ফোঁটার সাথে একটু আমি মিশেছিলাম।

অকাল সন্ধ্যা নামানো চুলে হারানোর আগে, আমাকে ভরে নিল উন্মুক্ত ঠোঁট।
মৌচাকে মৌমাছি হিংসেয় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল বেশ কয়েক বার  ।

তোকে ছুঁয়ে বৃষ্টি মদমত্ত হস্তি যুথ। সাথে আমিও।

এখন তুই তৈগা।
সমস্ত উপত্যকা এখন অনাবৃত। দিনের মত দাড়িয়ে আছে  বিভাজিকা, ঝর্ণা হয়ে বয়ে চলছে বৃষ্টি অথবা আমি।
বস্তুত হরিণ আর আমি এখন অভেদ।

গভীর গিরিপথ পেরিয়ে গ্রস্ত উপত্যকা।
বৃষ্টি বুঝল,
কেন বিশ্বমিত্র,
কেন উর্বশি,
কেন শুকুন্তলা।

বাষ্প হল। হলাম।
দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে লিভিংস্টোন বাড়ি ফিরল।
চাঁদ উঠল। পাখি ডাকল। মৌ জমল আবার।

আমি তোকে দেখলাম।






৪।।    ∆ অসুর কথা ৮ ∆




ফাগুনের মাঝামাঝি, পলাশ -শিমুল- অশোক এখন  মতাল বেহেড।পাহাড়ি ঝোরার মত তরুণীর খোলা পিঠে  ইমন - মল্লারের ঢুঁ ।
যদিও এসবে  অভিজ্ঞান  খুঁজে পায়না কোনো নির্মেদ নাভিদেশ।

কেবলই একটা দাউ দাউ -এ ঝলসাচ্ছে রোজ। যেন দম পাচ্ছে না, যেন প্রসবের  অপেক্ষায় দিনগোনা শিশু, যেন নেফারতিতির মুকুটচ্যুত ঝুটা মুক্ত,
যেন পূর্ণিয়ার খুপরিতে থাকা সেই মালা।

অথচ  কথা ছিল না এমনটা হওয়ার। চেয়েছিল সেগুন মঞ্জুরি ও তাতে লেখা কয়েকটি  প্রেম।
আর বাতাসের ফোঁপসে গাঁথা শান্তিনিকেতন ।

কিন্ত ভাত  এক করালবদনা ভৈরবী। কোন এক মন্ত্রবলে কেড়ে নিল দুইমলাট,  কলম ও  রাজকুমারি ।

প্রতিরাতে খুন হয় সমস্ত যাপন।

অভিজ্ঞান এখন স্পষ্টদেখে যে পাহাড় -পাথরেরই জাবেদামাত্র, কোনো ষোড়শীর খোলা বুক না।
প্রেমিকার চোখ কেবলই রক্তের ঢেলা,
আর  নেফারতিতি?
কঙ্কাল ছাড়া কিচ্ছু না।





৫।।    ∆ ইতি প্রেম ∆




এক নদীপথ পেরিয়ে হেঁটেই চলেছি। ঘর ঘর খেলায় আমি বড্ড বেমানান--- মালিক। শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় সমস্ত বাকল।

এই চুন সুড়কির দেওয়ালে আমি তোর ঠোঁট আঁকতে পারি না, কানের লতির কাছে ঘুম জমা করার আগেই ফিকে হয়ে আসে সময়।  এ মুদুনি চাল আমাকে গিলতে আসে, ছিঁড়ে খায় আদিম  পৌরুষ।

কুলুঙ্গিময় বিষের বোতলে রোগা প্রেম - সূর্যাস্তের অপেক্ষায়।
                   কেঁদে ফেরে অস্তরাগ ও আবেশ ।

তোর শরীরে আস্তানার বদলে খুঁজে পাই পথ।  যেখানে হাঁটুল মাটুল দিয়ে বসে থাকে গার্হস্ত্য ঘুম। এলানো চুলে বারবার কেঁপে ওঠে বানপ্রস্হ।

এপথে আমি একাই। বিভাজিকার গলিপথে হিমশৈল , গিরিপথে অতীন্দ্র পাহাড়ায় দুই শো ছয় অক্ষৌহিণী সেনা।  গুপ্ত ছোরার ডগায় লেখা আমার নাম।
                                                 তবুও আমি হেঁটে চলেছি, তোর পথ ধরে। ঘাতকের বলিরেখার সমান্তরালে। ঘরের বিপ্রতীপে পলল ব্যজনী ধরে।

মালিক, এই পথে আলাদা যাপন আছে- ফিনিক্স আছে, ফুলদানি ভরা ডুুমুর ফুল আছে।

শুধু অস্তাচলের দিনে আমিত্ব ক্ষয়ের হিসেব নেই/ তুই ছাড়া আমার কোনো নদীও নেই।




অলংকরণ - অঞ্জন দাস

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°