Friday 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব - ৩

কবি শঙ্খশুভ্র পাত্র এর কবিতা-





১ ৷ নাকছাবি



নাকছাবি কন্যে বটে ৷হন্যে হয়ে তোমাকে যে খুঁজি
কিছুতে জানো না ৷স্বর্গ... হিরের দ্যুতিতে শুধু জাগে,
ফিরে- ফিরে দেখি — বিদ্যা, আমার তো অল্পই পুঁজি
কল্পনার মেঘে নিত্য — বৃষ্টি হয়ে ঝরে অনুরাগে ৷

তুমি সে-সৃষ্টির কথা রক্তিম গোলাপে ভরে দিলে
দিল হয় উচ্চকিত — তুচ্ছ লাগে সমগ্রজগৎ
অত:পর সাদাপৃষ্ঠা ক্রমে-ক্রমে আকাশের নীলে
পরিব্যপ্ত হলে দেখি : বাগীশ্বরী, কবিতাশপথ

হংসদল ডানা মেলে নিজের ভিতরে সহজিয়া
মুর্ছা যেতে একবিন্দু লাগে না সময়, দোলাচল...
অথচ ভাবের ঘরে চুরি গেলে রাজেশ্বরী হিয়া
সাজে কি তেমন করে নাকছাবি, সতত উজল !

জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে হন্যে হয়ে তোমাকে যে খুঁজি
কিছুতে জানো না —মানো, শুধু এক ভুল বোঝাবুঝি ৷




২ ৷ ভার



গাধা, সে-আশ্চর্য ভার ! সে-ও দেখি নিন্দার অধিক
বওয়া ও সওয়ার মধ্যে জেগে আছে নিরন্তর শ্রম
বৃন্দাবনে যুক্তকরে বসে আছি বিমুক্ত আশ্রম
হরিনামে শিহরিত — জাগরিত আজ দশদিক ৷

অথচ গাধার মতো বাঁধা এই সমূহ জীবন
হৃদয়ের ভার কেউ বোঝে না তো — বিরহ অপার
একা-একা বিস্ফারিত, সুমুদ্রিত, সমুদ্রের হাড়
শূন্যচোখে অতলান্ত, আঁকিবুকি, স্মৃতির সীবন ৷

গাধা, সে-আশ্চর্য ভার ! প্রতিবাদে : মূক ও বধির,
ভ্রমণের মন ছুঁয়ে আরও কিছু পায় কি নদীর...




৩৷ পদাবলি



প্রাত:কালে কেন আজ ভেসে ওঠে মুজিব ইরম ?
তবে কি প্রাণের টান ? মরমিয়া ? মরমি সে-সখা ?
ভাবতে-ভাবতে তার পদাবলি — ছুঁয়েছি কিরণ
মাতৃস্নেহে কতবার ৷ মনে পড়ে প্রিয় উপত্যকা ৷

মুজিব খুঁজিব শব্দে, মুই-তুই, আলাভোলা হাওয়া ৷
আড়ালে অনেক কথা বলে লোকে ৷ কী যে হবে তার !
তুমি তো প্রবাসে, আমি প্রভাসের কাছে দ্বারকার
সোমনাথে মহাব্যোম, হরি ওঁম, প্রণব আওয়াজ ৷

ত্রিবিন্দু, নিহিত ধ্যান — জাগতিক ওই দেয়ালায়
সমূহ অক্ষরকণা — এ-ছাড়া জীবন বাঁচে কই ৷
বেহাল হলে কি আর মন থাকে প্রিয় বেহালায়
অনন্তকান্নার কাছে আমিও যে নতজানু হই ৷

তথাপি ইরম, ইরা — পরিশেষে খুঁজে দেখি রাই...
পদাবলি ভিন্ন, মন— জাগে না তো বাউলগোঁসাই ৷



৪ ৷ গৌড়ীয়



বিষয়ের গভীরে এসে গম্ভীরায় আত্মসমাহিত
তমসাচৈতন্যে তুমি ঘোর দীপাবলি ৷শংসাপত্রে
স্বাক্ষরিত অহং-আলোর দিকে ভেসে যায় গান ৷
পল্লিগাঁয়ে লতাবল্লি কুসুম স্বভাবে জানে :স্নেহ...
এইমতে "জল পড়ে, পাতা নড়ে ৷" এর বেশি ছন্দ
কে জানে জীবন, শুধু বাজি রেখে ধূলি-ধূসরিত
রেখাঙ্কিত পথে-পথে চলেছে উন্মাদ ৷গম্ভীরায়
আত্মহত্যাহীন এক অপূর্ব সময় ৷সমন্বয়ে
অন্নদান,ভক্তবৃন্দ, ধ্বজাশীর্ষে মায়াবী পয়ার...
দয়া নয় — ঊর্দ্ধবাহু, মন আজ গৌড়ীয় আকাশ ৷




৫ ৷ পাকশালা



সমস্তই মিলে যায় ৷ অস্তরাগ, বহুবর্ণচ্ছটা...
বিষণ্ন গোধূলি, শূন্য ৷ পাখিদের ঘরে-ফেরা ছায়া
অক্লান্ত বিনুনি ৷ সন্ধে ৷ অতর্কিত অথবা হঠাৎ
কাকে নেবে ? বেনেবউ ৷ নিভন্ত-উনুনে বড় মায়া ৷

কোমল হাতের স্পর্শ ৷ ব্যঞ্জনাদি — রিনঠিন সুর
গ্রাম্য নাকি আধুনিকা ৷ ঘ্রাণে কি বুঝিবে মরমিয়া !
প্রাণে ডাকে পাকশালা — ও আমার ক্ষুধার্ত দুপুর,
গোপনে গোপনে আমি ঘনীভূত সন্ধে আলি মিয়া ৷

শুয়ে কাঁদে খুকি 'ঞ' — তা আমি বুঝিতে পারি বটে ৷
একমাত্রা অন্নাভাবে — তুমি ধন্য, ধনধান্য সুধা...
এমত রচনা লিখে আলুথালু বেশে বালুতটে—
সমুদ্রের কাছে যেন বোমভোলা — কত না উদার !

সমস্তই মিলে যায় — শুধু নীলে মেলে না আকাশ
তারও আছে শারদীয়, শাদামেঘ, আন্দোলিত কাশ...




অলংকরণ - অতীশ কুন্ডু

""""""""""""""""""""""""""”"""""""""""”""""""""""""""""""""""""""""""

No comments:

Post a Comment