Thursday, 21 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌

প্রসেনজিত রায় এর কবিতা -


আগামীকাল 

আগামীকাল তোমাকে সব কথা বলে দেব--- 
কেন মাথা নীচু করে হাঁটি, ঢিলেঢালা পোশাক পরি,
কথা কম বলি, 
কেন বিশ্বস্ত অসুখের মতো জীবনকে ভালোবাসি?

এসব কথা অপেক্ষার মতো দীর্ঘ একা পথ,
রাতের মতো একা, দিনের মতো একা!

এ পথে এখন আমি ছাড়া, আর কেউ আসে না,
এখানে পড়ন্ত বিকেলে তোমার আমার মাঝে ছাই ওড়ে রোজ... 

তবুও অপেক্ষা। আগামীকাল তোমার জন্মদিন।


জানি, তুমি আসবে না।


∆       
শীতকালীন ৪

যাকে শেষবার ছুঁবো বলে শবগাড়ির পিছন পিছন ছুটে গেছি,
শশ্মানে এসে দেখি, সে আমার কেউ না!
এখানে মানুষ মহাকাল। বন্ধু ও শত্রু ভুলে যায়। 

আমি দূর থেকে প্রণাম করে ফিরে আসি।

এই শরীরটাকে একদিন গাছ হতে দেখেছি 
কত পাখি এসে বসে, ঘর বাঁধে
পাতা জুড়ে আলোছায়া, রান্নাবাটি খেলা

অথচ এই শীতকাল, এখন শুধু পাতা ঝরার সময়....


মায়া

স্বপ্ন মরে গেলে মানুষ পাথর হয়ে যায় 
কেউ কেউ পাথার কেটেকুটে ঐশ্বরিক রূপ নেন

আয়ু আর ক্ষয়ের মাঝে যেটুকু হারালাম, সেটুকুই মায়া

আলোর মতো দৈবিক অন্ধকারে যা কিছুই পাওয়া যায়, 
সবকিছুই হারিয়ে ফেলি আমরা।

ছবি - মেহবুব গায়েন‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


                                                   

Wednesday, 20 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌
 
লক্ষী‌ নারায়ণ মুখোপাধ্যায় এর কবিতা -


দীক্ষা


তোমার সাথে দেখা হবার কথা কি আমার ছিল?

তুমি বলবে‌, 'জানি না।' তুমি বলবে, 'যা হচ্ছে হতে দাও।'

তোমার মুখে মুখে ঘোরে বিজ্ঞান,'বিপরীত মেরুর‌ই আকর্ষণ বেশী।'

অথচ,

বুকের ওপর তুমি অবলীলায় ধরে রেখেছ পবিত্র বাইবেল,

তোমার আঙুলের স্পর্শে আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে কাঁটার মুকুট। হাঁ করে শুনছ লুথার, ক্যালভিন!

পায়ের পাতা ছুঁয়ে গেলে, বুকের ভেতর বসে থাকা বিশ্বাসঘাতক জুডাস,স্পর্শজাত শিখায় উত্তপ্ত করে নিচ্ছে হাতুড়ি!

হৃদপিন্ডের ওপর গেঁথে যাচ্ছে একটার পর একটা পেরেক।

তোমার ক্যাথোলিক বুকের ওপর প্রোথিত হোক সাতানব্ব‌ই হাজার নিবন্ধ! 

লেখা থাক "ওমনিয়া ভিনশিট অ্যামোর: এট্ নোস সেদামুস অ্যামোরি।" 

প্রটেস্টান্ট হতে গেলে, ঝড় উঠবে নিশ্চিত। 

নির্বাসন‌ই হবে আমার শাস্তি, 

তবুও কি তোমার মনে প্রশ্ন জাগবে না,'সমমেরুর‌‌ও কি আকর্ষণ করার ক্ষমতা ছিল?'


খাবার


খাবার খাওয়ার বিবিধ নিয়ম!

কেউ খায় গোগ্রাসে, কেউ খায় রেখে রেখে,

কেউ কেউ খাবার আগে মন্ত্র বলে, 

"ভোজনেচ জনার্দনম্ !", ছড়িয়ে দেয় জল।

কারো কারো খাওয়া ভীষণ যত্নের-

আসনের সামনে পঞ্চব্যঞ্জন এনে রাখে গৃহলক্ষ্মী, 

পাশে বসে তুলে নেয় হাতপাখা।

কারা যেন খায় খুঁটে খুঁটে?

কোনো দেশে খায় এক হাতে, কোনো দেশে দু'হাতে।

একমুঠো'তে চোখ জ্বলে ওঠে কারো কারো, হর্ষে;

কারো আবার মুঠো মুঠো খেয়েও বিষাদ জমে ওঠে,

কোনো কিছুতেই তখন আর পেট ভরে না,

ধীরে ধীরে সে খেতে শুরু করে সবকিছুই - 

চাল, ডাল, আলু, টাকা-পয়সা, ঘর-বাড়ি, জমি-জায়গা, 

শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, নিয়ম-কানুন, আইন-আদালত, একটা রাজ্য, হয়তো একটা দেশ‌ও…


মা

হারিয়ে ফেললাম আংটি, 

বোধহয় আরো একটা...

হারিয়ে ফেলেছি বাজুবন্ধনী, 

রূপোলী হার, একে একে সব‌ই - 

ফের হারিয়ে ফেলব জেনেও,

ফেরার আগে, কী বিশ্বাসে 

আবার কড়ে আঙুল কামড়ে

হাতের ওপর বেঁধে দিচ্ছ বিপদতারিণী'র লাল সুতো!


ছবি- মেহবুব গায়েন‌

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌

মহা‌ আকমল হোসেন এর কবিতা -

আমাকে ঘুমোতে দাও


একটা আগুনের নদী পার হয়ে এসেছি। আমাদের শরীর সম্মোহিত রক্তমাংসের নৌকাগুলি নোঙর করছে

এক অলৌকিক ঘাটে।

পরজন্মের কোন বৈষ্ণবী তার প্রেমিক ছায়ার পাশে একতারা নামিয়ে বলে ওঠে -প্লিজ আমাকে ঘুমােতে দাও।

আমাকে ঘুমোতে দাও-

রাতের বাহু প্রসস্তির ভিতর! 


সহজিয়া 

 
সহজিয়া নিয়মে এখানে শীত আসে

পাথরকুচি রোদে। 


 নিকানো বারান্দা আর- 

 একতারার তারে দোয়েল বার্তা এলে

 তুমি শুখোতে দিও সনাতন রঙের শাড়ি।

 পার্থিব ভিক্ষার শেষে জ্বালবে ফাল্গুনী লন্ঠন। 


পদাবলী 
 
সখি 

বাঁশি কিনে নেবো এই দোলের আগে

 চৈত্রের সংক্রান্তির শেষে উঠোনে পুতে দেবো একটা কদম গাছ।

শ্রাবণী এলেই যাব যমুনার ঘাটে 

সমস্ত অপবাদের ওপারে বসে লিখব তের খন্ড পদাবলী।

ছবি- মেহবুব গায়েন‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 19 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌
কৌশিক চক্রবর্তী’র কবিতা -

ফ্যারাওয়ের চোখ


নির্ভাবনায় আঙুল তোলো মুকুটে
খর্ব হয় নির্জনতা
বিপথে ছড়িয়ে যায় ঝুরঝুরে বালি
যে গাছে বেয়ে ওঠে লতা
তার দিকেও এসে পড়ে বিরুদ্ধ নজর-

অসহায় কুঞ্জদিনে পা ফেলি ঘাসে
লুকিয়ে পড়ে নদীর অসুখ...
এখনো নিরস্ত্র জিভে
জেগে ওঠে বিচ্ছিন্ন প্রপাত...

বিপরীত স্রোতে সিংহাসনের টুকরো
অচেনা নৈশদিনে ঘুম নামে ফ্যারাওয়ের চোখে... 

বটগাছের অপারগতা


সারা পৃথিবী যখন ঘুমোয়,
আমি একটু অন্ধকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি দরজায়
ফেলে যাওয়া পাঁচিলের দিকে নজর থাকে রোজ
ঘুম না এলে অযথা পাহাড়ের কথা ভাবি-

নি:শুল্ক জানলায় হাত রাখার কথা বলিনি আর
যদি পুরনো দায় এসে পড়ে নগরকেন্দ্রিক শাসনে
আলোর বিপরীতে তখন নজর কাড়ব...

সারা পৃথিবীর কাছে আজ একটাই প্রশ্ন
সত্যিই দরজা কি অধিকারহীন?

ভেবে দেখব
পৃথিবী নয়
রাত্রির কাছে প্রশ্ন করা সহজ...

না ঘুমনোও ভালো
কিন্তু যতদিন না বটগাছের অপারগতা মানতে হয় প্রকাশ্যে... 

বিধর্মী মানুষ


বেড়ে যাক ততটাই দূরত্ব
সাহস ফুরোলে যেভাবে আঁতকে ওঠে সবাই
রুমালের গিঁটে বায়বীয় বাসস্থান
ধর্মসঙ্কটে পড়ুক দম নেওয়া পুতুল...

ঘাড়ে কোপ মারার জন্য কবরের তল্লাশি
শূন্যস্থান নামক যেকটি কবিতা ছিল
তারাই ছাপা হয়েছে নামী ম্যাগাজিনের পাতায়
শেষ পৃষ্ঠার কবিতা 'আঙুলহীন মানুষ'...

ঘেরাটোপে গেরুয়া দিগন্ত
নতুন করে দরকষাকষি হয় নি
গিঁট পড়েছে অবচেতনে
আরও দামী হয়েছে কৃষ্ণগহ্বর।

মেঘ জমলে সূর্যের নমনীয়তা স্পষ্ট
এই মুহূর্তে দরকার
অন্ধকার হাতড়ে বেড়ানো বিধর্মী মানুষ...  

ছবি- মেহবুব গায়েন‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌

অনিন্দিতা মণ্ডল এর কবিতা -

গুমরে মরায় কোনো দাগ থাকেনা

চোখের কাজল অশ্রু জমায়
বুকের পাঁজর মনখারাপ
পায়ের পাতায় শরীরের ভার
গলার কাছে শুকনো পাপ ।

কিছু ছায়া নিজেকে চেনায়
রক্তপাতে ভেজে অহং বোধ
ক্যালেন্ডারের দাগ বেড়েছে যত
গুলিয়ে গেছে অনাদরে রাখা শোধ ।

পাহাড় রাখছে নদীর বুকের ব্যথা
আকাশ শোনায় খুচরো রোদের গল্প
ক্ষিদের দিনে যারা ভরিয়েছে পকেট
তাদের চোখেও অনাহার অল্পসল্প।

ভাঙাচোরা মানুষ আঁকড়ে ধরে হাত
দুঃখ দিয়ে চিক টেনে দেয় দরজায়
চোখের জলের দাগ চেনা যায় সহজে
শুধু দাগ থাকেনা গুমরে মরা-য় ।


যারা হারায় ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় 

বোকা হাত ঘাম মুছে নেয়
সহজ করে শীতের রোদে
ফর্সা গালে লজ্জা নামে
মরশুমি ঠোঁট আড়ালে কাঁদে ।

অঙ্ক বাড়ে আনাগোনায়
সমাধান রাখা হলুদ মাফলারে
চিঠির খামে পুরোনো কৌশল
বেলা বাড়ায় অযথা কলঘরে।

খোলা ছাদে জোছনা এসে পড়ে
শিশির মেখে ভারী হয় বিনুনি
যে পাড়া শুনশান হয় সন্ধ্যেয়
সে পাড়ায় রাতে কোলাহল শুনি ।

খুঁটে রাখা সন্ধ্যারতির ভাপ
মানুষ রাখার নিখুঁত পদ্ধতি
যারা হারায় ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়
তাদের বোধহয় না ফেরাটাই রীতি।

আমাদের কোনো বাসা থাকেনা


বন্দর রেখেছে পুরোনো মানুষছাপ
ঋণের গায়ে ঠুনকো বেঁচে থাকা
ভরাডুবি জীবনের মোহ ছেড়ে
ছায়ারা খোঁজে বিষাদের ব্যাখ্যা।

রাত ছড়ায় ঘুমের ঘোরে বালক
যন্ত্রণা পেয়ে কুঁকড়ে ওঠে ভোরে
তার শুধুই ক্ষিদেরা রঙচঙে
এমন যথাযথ উপোসের ভিড়ে।

জোনাকিরা প্রহরী পাঠায় রোজ
চোখের জলের গন্ধ তারা চেনে
বিদায় মানে আবার ঘুরে আসা
অপেক্ষারা মন থেকে তা মানে।

ভগবানের কোনো দোষ থাকেনা আসলে
সবকিছুই মিথ্যে আলোর সান্ত্বনা
ক্ষিদের গন্ধ যাদের গা থেকে ওঠে
তাদের কোনো বাসা-ই থাকেনা ।


ছবি- মেহবুব গায়েন‌

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 18 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী -শেষ পর্ব‌

রূপক চট্টোপাধ্যায়’র কবিতা -

লক্ষী হীন

এবছর অকাল বর্ষণে সব ধান পচে গেছে।
পচা ধানের খেতে অলক্ষ্মী শুয়ে থাকেন।

কৃষ্ণরঙ দেহের ওপর অনাবাদি কারুকাজ
পায়ের গোড়ালিতে একটু আলতা রঙ ভোর।

ঘুম ভাঙতে ভাঙতে এমন সকাল দেখা যায়
বহু গাঁয়ের পাড়ায় পাড়ায়। টিউশনি মুখরা
সাইকেলে অলক্ষী যায় বাবা কে নিয়ে

হলুদ ডানায় হা ভাতের ওড়না জড়ানো
বাবার ফুসফুস গলতে গলেত নিভে গেলে
বিশ্ব নিখিল
গড়িয়ে পড়ে যাবে খাদের অতলে।

অলক্ষী মনে মনে কেঁদে উঠবে না আর
সব কান্না নিয়ে গেছে অকাল বর্ষণে!


চুম্বন

প্রশ্ন বিজড়িত ঠোঁট
ওখানে চুম্বন নামবে কি করে?

কাঁচ কাটা জোৎস্নায় নিজের পরমায়ু খুইয়ে
ঘর ছেড়েছে হতভাগা। তারপর সারাজীবন ধরে
সেই পরমায়ু খুঁজেছে এখানে ওখানে,
ইতি উতি। মনোজ্ঞ ডাস্টবিন অথবা
সার্কাসের জোকার সুলভ জন সমাগমে!
অথবা দ্বিধা বিভক্ত পথের অসুখ নিয়ে
চলে যাওয়া গাঁয়ের ঠিকানায়!

তার কাছে সব প্রশ্ন-ই
গাছে গাছে ভারি হয়ে আসা ছায়া,
এলোমেলো ধান খেত, ধুলা মলিন বধ্যভূমি,
তীক্ষ্ণ নখের আগায় বসিয়ে রাখা কিশোর প্রেমিক!

বলো হে চুম্বন নামতে পারো কি তুমি
এমন কোনো কঙ্কালের পাথুরে কপালে?

ঘড়ি

পুরানো পোশাকের ভেতর ফেলে এসেছি যে শরীর
তার পুঁতি গন্ধ মাখানো
একটা সকাল এসেছিলো আজ।

কতোদিন পর বিগলিত ফুসফুসে নিয়ে তার সাথে
কথা বললাম। গল্পের গোছগাছ, চায়ের কাপ
টি টেবিলের পিঠে গুলঞ্চ ঝোপ, কাঁচপোকা
হাত থেকে পড়ে যাওয়া সরণিকায় ভোঁকাট্টা ঘুড়ি।

এমন সময় দেখি

সে হঠাৎ উঠে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা গুলো ভেঙে ফেলে
নিজেই টিকটিক করে বেজে চলল
আমি চোখ বন্ধ করে দেখে নিলাম পৃথিবীকে!

ছবি- মেহবুব গায়েন‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday, 17 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী - শেষ পর্ব‌

সৌমিত বসু’র কবিতা -

জীবন এক আশ্চর্য দূরবীণ

যতবার সূঁচের ফুটোর ভেতর দিয়ে
গলিয়ে দিচ্ছি রোদ্দুর
তুমি হাত বাড়িয়ে টেনে নিচ্ছ গর্ভের ভেতর।
আমাদের জীবন শেষ।মৃত্যু জেগে উঠে
বসে আছে বুকের ওপর।
আলো হারিয়ে সুঁচ হাঁ করে বসে রয়েছে খিদেয়।
ব্রিজের ওপর থেকে আমি যতদূর দেখতে পাই
তুমিও কি তাই পাও? বলো


খুশি তুমি নিজে হতে পারো কিংবা হরিণ।
মৃতের নীলাভ খাম দরোজার নীচ দিয়ে বয়ে আসে,
গলায় জড়িয়ে রাখো বটফল, তার আঠা এসে ঢেকে দেয় যোনিমুখ, মুখমন্ডল।
কোনো কোনো রাতে টাঙ্গির কোপে তার ভেঙে যায় ঘুম 
টপটপ ঝরে পড়ে চাঁদের টুকরো, মেঘ আর তারা।
পাতার পর পাতা উল্টে সে খুঁজে চলে সম্ভোগ চ্যাপ্টার,
ফ্ল্যাটের জানালা খুলে মুখ বের করে ভাইবোন, হারানো পিসিরা।

চুপচাপ সংসার ওড়ে
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কঙ্কালের স্তুপ সে একা একা জোড়ে।জুড়ে চলে।
আলোগুলো দপদপ করে ওঠে
কিন্তু নেভে না।


বিনীত ঝাউপাতা থেকে ঝরে পড়া সংস্কার
আমি কুড়িয়ে কুড়িয়ে ভরে রাখি
খুব ভোরে কথাগুলি থেকে ধোঁয়া ওঠে
রাত্রিগুলি মাথা ঠোকাঠুকি করে বলে দেয় কঙ্কালের সরু পথ মাঠের ভেতর।
এভাবে সিরিজ জুড়ে আলো জ্বলে ওঠে।
বুকে ভর দিয়ে ছোবলে প্রস্তুত যারা গুড়ি মেরে তারাও কিভাবে ঢুকে আসে সিরিজের ডগায় আবার।
ঠোঁটে খুঁটে খাই।উড়ে বসি প্রতিবেশী ছাতে।সময় সুযোগমতো তুমি ইতিহাস সরিয়ে একবার সত্যি হয়ে ওঠো।

ছবি- মেহবুব গায়েন‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 13 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৯

তীর্থঙ্কর সুমিত‌ এর কবিতা -

ভালোবাসার দেবালোকে


স্তম্ভের ওপর আরো কতগুলো স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে
দারুন অনিচ্ছায় একটা বটগাছ দুলছে
হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে 
নিঃসর্গ ও মানুষ অঙ্কনচিত্রে ক্রমশ বদলে যায়
অক্ষম শিলালিপি ক্লান্ত হয় পথে পথে
ধারাবাহিকতার পরিবর্তন সূচিত হয়
আঁকার সাদা পাতায়
দীর্ঘদিন পরে আরো কত নীরবতা ভেঙে
নিজেকে অটুট রেখেছি 'কবিতা' র কাছে
এইভাবে একদিন পৌঁছে দেবো অনিচ্ছার মানবজন্ম

ভালোবাসার দেবালোকে।


সূচনা


ইচ্ছের ছুটি হয়েছে বহুবছর আগে
মানস সরোবরে ফেলে আসা ঐকান্তিক ইচ্ছে
সময় পাল্টে গেলে মুখের বিবর্তন ঘটে
অসহায় ঝিনুক খোলস ছেড়ে...
আত্মতৃপ্ত পথে এক দারুন অনুরণন
কলিং বেলে পাখির ডাক
ছন্দেলা সুরে গেয়ে ওঠে নদী
জলের বিবর্ণ ইতিহাস পথ চেয়ে বসে থাকে
মুক্তির আত্মশুদ্ধিতে
তাই প্রাচীন দেওয়ালের গায়ে

এখনো কত পতঙ্গ ইতিহাসের সূচনা করে।


সম্বল


নিজেকে অটুট রেখে
প্রতিদিন ভেঙেছি আড়ালে
নির্মল ঝিলের পাশে বসে
বাংলার রূপ দেখতে দেখতে
চাওয়ার হাত বাড়িয়েছি নদীর কাছে
সবুজ ঘাসে সকালের ঘুমকে দেখেছি
একান্তে স্বপ্ন দেখতে...
বাড়ির পেয়ারা গাছে
বেশ কিছুদিন হলো সেভাবে আর পাতা ঝরেনা
নতুন পাতায় ডাল ভরেছে
আমি একাকী তার সংরাগ দেখেছি

প্রক্রিয়াহীন জীবনে শুধু প্রতিক্রিয়াই সম্বল।

ছবি - মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday, 12 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৯

দেবশ্রী দে এর কবিতা -

পলাশ

গল্প বলা হচ্ছে দেখে
কেউ কেউ ছুটে গেল রাতের শেষে
তখনই প্রবল হাওয়া,
তখনই তোমার দরজা খুলে যাওয়া
নিশ্চিন্ত হতে হতে ভাবি
যাদের গায়ে এখনও শীত লেগে আছে
যাদের গায়ে এখনও চাদর,
তুমি তো তাদের কাছে আলো হবে ঠিক

আমি কোন অন্ধকার স্বরে বৈকুণ্ঠের পলাশ কুড়োব?



ভিজে যাও তবে

আমাদের ছবিতে কত রং
বসন্ত, কাচের গ্লাসে বেগুনি তরল
চুমু খাচ্ছি দেখে যারা হেসে ফেলল খুব
তাদের মুকুল দাও, গন্ধ শুনুক
আমি কারও নই, কেউ নয়তো আমারও
ভিজে যাও, ভিজে যাও চোখে
সাধের নৌকাটিতে শোক নেই ডুবে দেখবার

আহত নেশার মতো তোমাকে জেনেছি


সেবা

এই যে বারান্দায়
জ্বর এল রক্তদাগ বেয়ে
অলৌকিক ভাবুক যে যেমন লোকে

তুমি জানো, এইসব বৃথা গবেষণা

কী তরঙ্গ খেলেছে এই কাছে-আসা-দিনে

তুমি জানো, বসন্ত কেমন বেদনা

সেবা আনো অপরিচিত হাওয়ার দখিনে

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 11 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৯
গৌতম কুমার গুপ্ত এর কবিতা -

নীল উপাখ্যান

ধনুকে ভাঙোনি পণ অগ্নিতেজ সমান
সেও তো মোহজাত দ্রবণের ঐচ্ছিক ফেনা
চোখের ওপরে ভাসাও কমনীয় শ্রীমুখ
আমি তাকে ঘৃণা বলি না, বলি প্রিয়তা
অঙ্গীভূত করি তাই সমূহ ছাই ও ব্যথা
উড়ে যায় অসম ও তফাত প্রাচুৃর্য ভিন্নতা

ভালবাসা যদি এভাবে উচ্চারিত হয়
জলাশয়ের অথবা ভিজে যাওয়া শব্দে
মিশে যাবো তোমাতে প্রাণিত দৈব বৈভবে
আমার যা ফেলে দেওয়া ধূলো অথবা কাদা
কুড়িয়ে নেবো, শুধু তোমাকে নয় ঈশ্বরী
আমাকেও ভালবেসে নিজস্ব জলীয় সহজে

এও তো ঐশ্বরিক ভালবাসার অর্জিত মেধা
দেহে মনে মিলে যায় আমার সব অর্জিত দ্বিধা...


প্রাক্তন

অভ্যাসের ঘর থেকে বের হয়ে গেলে
পড়ে থাকে অবশেষের অংক
শূণ্য চেয়ারে বসে আছে ছায়া
ছায়া দেখছে হাসছে কথা বলছে

শূন্য দৃষ্টিতে অস্তরাগের বিকেল 
পাখিদের ফিরে যাওয়া সাঁঝবেলা
এখনো পড়ে আছে খাতা পেনড্রাইভ
কাগজপত্র ফাইলের পুরোনো গন্ধ

চেনা জানালার পর্দা পাইনগাছের সারি
ঝাউ দেবদারু দেয়ালের গায়ে ক্যালেন্ডার
অপরিচিত ঠেকছে ফিরিয়ে দিচ্ছে তাকে
পরিচিতের মাঝখানে এক আগন্তুক সে

দেনা পাওনার হিসেবে পড়ে আছে
শ্যাওলা চোখের অর্ন্তভেদীর দৃষ্টি
পরাজিত নয় তবু নিয়মনিগড়ে বাধা
পাঁজরের ইতিহাসে শ্মশানের হাড়গোড়....


মধু-সংক্রান্তি 

এই য়ে বটবৃক্ষের ছায়া এই যে অশ্বত্থ জারুল 
এই যে হিরন্ময় হিরণ্যরেতা
এই য়ে হরিতকী শাখার শুষ্ক ভগ্নাংশ
ওই য়ে ছিন্ন পালকের এক ফোঁটা শোণিত
ওই য়ে নীল অম্বরের ভগ্নাংশ মেঘ

এই যে পুষ্করিণী অববাহিকা এই যে তৃণগাছের পত্রমুকুল
এই য়ে সুশোভন যুবা্ এই যে সুলোভিত কপালের টিপ
ওই যে মহাকাব্যিক মোহমায়া ওই যে জাগতিক প্রেম
ওই যে মধুচৈত্রের শেষ বেলার লগ্নপ্রহর

বড়ো আনন্দে রেখেছে রভসের শ্লীল
আমি তার কথাকলি তুমি তার পত্রভাষ
আমি তার যাজ্ঞিক তুমি তার তপস্বীনী স্বাধ্বী
আমি তার আত্মিক তুমি তার অনুব্রতী

এই যে বৃন্দ সুললিত সুরম্য এই যে আমোদিত আহ্লাদ
এই যে প্রবুদ্ধ সহজাত চোখের অনাবিল ছায়া
এভাবে ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়তে পড়তে..........


অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday, 7 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৮

নিমাই জানা’র কবিতা -

ক্ষুধা ও পাতকের তীর্যক লেহন দৃশ্য


জীবের মতোই অদৃশ্য জড় জগত । শরীরে সুধন্যার জলযোগ । কল্কিদেশ পাথর , ঝুলে থাকে এক একটা কৈলাস অথচ সরোবরে আমাদের শ্বাসকষ্ট রোগ । ক্ষুধা বড় ভগবানের প্রিয় । ভিক্ষুক ও । এখানেই দাঁড়ায় চর্মরোগের মতো একটি কারুবাসনা । উদ্ভিদের পিপাসা বেড়ে ওঠে । নাভির থেকেও আরো পাতালে সবুজ পাঁকের মতো নরম মাটির দেহজ কঙ্কাল । শুক্তির মতো স্ত্রী শরীরেরা ছায়া আঁকে আঙ্গুলের ফাঁকে নখর ও মোলায়েম মেহনে ।
থকথক করে ওঠে ক্ষতিযোগ । রতি একটি প্লাস্টিক কোটেড রমন । সূত্রধর , কে কাকে নির্মোহ শেখায় হে ভক্ত ?
নিষিদ্ধ ছিলায় বাণ যোগ করো , উপড়ে আনো এ গুরুআশ্রম । অগস্ত্য ও শ্বেতাঙ্গ পিতার ত্রিবিধ অরণ্যের কঙ্কাল ।
এখানে শুধু রাজাধিরাজ এসে কামনা করেন কর্মযোগের । কর্নিয়ার অতলে পিপাসা ভাসে কঙ্কাল স্বেদ ও তর্পণ পিণ্ডের মাংস।
পিপাসা বলতে ক্ষয় রোগ।ছুঁয়ে যায় নাভি ও আচম্বিত উৎসব ঘোর । এখানে কেউ কোন সম্বন্ধ যোগের কথা বলল এবার
ভগবানই আসলে দুমুখো সাপ । আমি কাঁচের বোতলে পরাগত বিষের শীতল জমিয়ে রাখি , অট্টহাস্য প্রেম বন ফরাস জ্বালো ।


 অম্লজান নেশা ও জাগতিক শীতলের উত্তরাগমন


জগত ও বুবুক্ষাময় । শক্ত সনাতন স্বৈরীনী নারীটি নিভৃতে রোদন করে । আসক্তি কি মর্মরের মতো ? অদ্ভুত বাস্তব পোকা ক্ষয় খায় ।
রক্তে ভজামহ্যম নৌকা । শুধু নেশা চলে যায় ভক্তির উপাচারে । সাজায় সব গোধূলি, গোপালীগণেরাই নগ্ন শ্রীহীন অভ্যাস জ্ঞান ।
শীতল মেলক বলে কিছু নেই , কণিকার মতো রক্তস্রাবের অঙ্গুলি লেহন ।
জলপ্রপাত । হে অর্পণ , কর্ষণ যজ্ঞের মহা প্রসাদকে এখনই কঠোর পিতার হর্ষ ভয় উদ্বেগ করো , বেরিয়ে এসো শীতল জাগতিক শরীর থেকে। এখনই করুণার মতো উত্তরাখণ্ড ঘটবে শরীর যোগে
পিতারা চলে যাবেন দক্ষিণ গমনে..
তূর্য বাণের মতো নিক্ষিপ্ত দরজা , ঠেলে আসে বেদ ও ঈশ্বরের মতো কঠিন বস্তু পিন্ডেরা উত্তরায়ণ চন্দ্রখন্ডের তিমির পলাশ। হ্রিং ক্রিং। মেষ রাশিটি বড় বিহ্বল ।
এ যজ্ঞেই শুধু সমর্পণ ও ভক্ত মানুষ । ভক্তই মাতা । তারপরেই অদৃশ্য সব । ব্রহ্মের নব অর্জুন শাখা নষ্ট হয়ে যেতেই বিদূরিত তপস্যা লাগে । নির্মম কুবের কতবার ছুঁয়েছে ভদ্রাকে ।
এবার শ্রীনিকেতনে রাধা বিসর্গ চিহ্নের দেবদাস লুকাও । হত্যা ও তুরীয় । নিভৃত নিরবিচ্ছিন্ন যোগ সাধনায় তৃষ্ণাতুর কখনো কখনো বিশুদ্ধ দৃশ্যের পাপস্খালন দেখে ।


 তৃষ্ণার কমন্ডুল ও কল্কির সঙ্গম বাধক দশা যোগ

স্তন সমগ্র । মেদ সমগ্ৰ । মুখাগ্নি সমগ্র । ভেষজ মাংসাশী সমগ্র । নঙ্গর্থক দোলা থেকে শাঁখের মতো দুলছে অদৃশ্য চুম্বক । পালকে পালকে করাঘাত অদ্ভুত সংঘাত , মুক্তিযোগ ঈশ ।
ফেনাময় এ স্রোত । জিভের গ্যাঁজলা ও কর্কট । সাত রিপু ও শব উপাচারে উদ্দেশ্য বিহীন তরল ধাতুর নিষ্কাশন । পাত্রে অদৃশ্য ভূত
এ গৌর মহাঘোর , বিভাজিকায় আঙুল দিয়ে ছিদ্র করি সাপ।
বিকট অন্ধকারে এ মহাজগত ঘোরে লেলিহান দগ্ধ আগুনমুখীর ইদ্রিশে ইদ্রিশে
লাল আজরাইল নাচে । কৃষ্ণ পাথরে পাথরে চুম্বন কষ লাগা ঘর । চাঁদ ও জন্ম নেয় যোনি দেশ থেকে , পিতাদের চোখে গৃহ ও আলোর শক্ত মানুষের খনি, রাত্রির মতো নির্ভুল গাছ চুপ করে থাকে ঈশ্বর দরজায়। এতো এতো আকাঙ্ক্ষা ক্ষীতের উপাংশে।
সব পাপ খাই আমি । শ্রীহীন উলঙ্গ দরজায় বিষাক্ত কাঁকড়া। এ দরজায় দরজায় নৃসিংহ নাচে । পাত্রী ও কমন্ডুল দিশাহারা।
কাঠের মতো বিষোদ্গার করে যৌনরোগ । বাধক ‌। শ্লেষা ।
ঈশ্বরের ভেতরে ও নিকৃষ্টতম যৌন রোগের উপসর্গ, দেয়াল বেয়ে কান্না নামে গাছের পলকের ধার ও রন্তিদেব , ক্রিয়া ।
হে ক্ষমা , তৃষ্ণা দাও অদ্ভুত প্রান্তদেশে একটা রক্তের উৎসর্গকৃত মাংস খেয়ে আমি জলের অটলে স্নান করি চামড়ার প্রদাহ মেখে । গর্ভস্থ সুনিতা নৃত্য করছে । কল্কি কাঁদছেন মায়া অঘোষ সংসারে সংসারে ...

ছবি - মেহবুব গায়েন
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 6 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৮


নীলম‌ সামন্ত এর কবিতা -

হঠাৎ মেঘ চলে এলে

হঠাৎ মেঘ চলে এলে 
মস্তিষ্কে অঙ্কুরোদগম ঘটায় অজ্ঞাতবাসের দানাপানি 

মাথার ওপর চিল
ঘিলুতে বন্দী হয় লুব্ধক 
নানান মাপের ফানেল, ভিন্ন কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন 
বাষ্পের আগল খুলতেই উড়ে যায় প্রশ্রয়জনিত চাঁদমুখ 

চন্দনের হাওয়া মহল 

চাঁদ আর চন্দনের মধ্যে কোন ব্রিজ নেই 
অথচ ভাষ্যকারের সামনে জয়েন্ট স্ক্রিন 
সম্প্রচারিত হতে চায় 
বেহেশতের ছোলা গুড় আর তেল জলে ডুবে থাকা পেপার ওয়েট 

হেমন্ত আসছে

প্রথম যাম পেরিয়ে যাচ্ছি 
এখন লিঙ্গ নির্ধারণের সময় 
প্রেম করার নয় 

অপ্সরার পোশাকে সাপের ছোবল 
আসনে নির্বাচনী শ্লোগান
                         ... উচ্চারণে দ্রাক্ষারস 
চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ভিজে যাচ্ছে রোমাঞ্চিত স্নানঘর 

শার্সির বাইরে দেখ একটুখানি আলোয় 
লাইন ধরে বসে আছে জলছাপ পালক

হেমন্ত আসছে 
শিশিরে ভিজে যাচ্ছে ব্রহ্মলোকের দ্রুমরাজ

আগামী দশদিন পর 

বৈকুণ্ঠধাম থেকে পালিয়ে আসা মেজাজ 
আর পেরেকের রাজকোষে 
হাই তোলা দৃশ্য 

অতঃপর 
গল্প তৈরি হওয়ার কারখানায় ভাবনাদের উন্নয়নে 
জিভ কার্যকরী না হলেও 
পাকস্থলী প্রব্যাবিলিটির ধাপে বসিয়ে দেয় 
বিষক্ষয়ের উঁকিঝুঁকি 

এই সব দেখেশুনে, আঁশের খাঁজে ঢুকিয়ে দিচ্ছি 
দ্বিতীয় রিপুর তরতাজা হাত-পা 
আগামী দশদিন পর 
গরু দান প্রসঙ্গে উল্লেখ করব 
শিল্পের অভাব আর হাওয়াই চটির বিজ্ঞাপন

অলংকরণ - প্রসাদ মল্লিক
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday, 4 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৮

অশোক অধিকারী’র কবিতা -

প্রিয়েরে দেবতা

সন্ন্যাসের আগে সে এক নারীর বিছানায়
দু'বার শুয়েছিল। বৈরাগ্য অথবা বালিশের
একটিকে বেছে নিতে সে গলায় পরেছিল রুদ্রাক্ষ। 

শ্লোক পর্ব শেষে প্রণাম রেখেছিল বৃহন্নলার পায়ে;
গঙ্গা স্নানের আগে পড়েছিল গীতা।
ফলের আশা অথবা নিষ্কাম কর্মের দোহাই
দিয়ে মানুষ বারবার খুঁজেছে নারী।


আমার মল্লিকা বনে

বনবাসপর্ব শেষে তুমি একটা ‘না’শব্দ
উচ্চারণ করতে সাহস পেলে না।
ফলমূল শাকান্ন অল্প আগুনে সাদাভাত
ঘৃত মধুর পরেও একট শব্দ এত দামী।

গোটা মহাকাব্য জুড়ে এত পৌরুষ কান্তি
তার পাশে বাল্মিকী রেখেছিল আগুন।
সবটুকু খেয়ে সেই যে স্থবিরতা নিলে
তারপর থেকে নারী শুধুই নারী।


মালা ডাক 

ঐ মালা আমার।

ফুলগুলো বিরক্ত হয়ে নড়ে উঠল;
সাদা সুতোর বহমানতা এত বিধর্মী যে
গলার বাছ বিচার করেনা।

ঐ মালা আমার।
নিলামে তুলেছে যে পুরুষ তার
লিঙ্গ স্নানে অগাধ ঢেলেছি ডবল টোন দুধ।
তবু,বর রোজ রাতে বিছানায় রাখে চিতাকাঠ;
শরীর পাল্টে পাল্টে একবার মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য 
আর একবার কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ; 

ছবি- বিপ্লব ভূঞ্যা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 2 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৭


রাজু মণ্ডল এর কবিতা -

সন্দেহ 

রোজ কথা বলি 
কম হোক 
বেশি হোক 
তবুও বলি 

আর যতটুকু বলি 
ততটুকুই আমি 

যাকে যাচাই করে করে তুমি 
শুধু সন্দেহই করে গ্যাছো বারবার 


ফুল মাটির

ফুলকে নিয়ে 
গাছ ও হাওয়ার লড়াই 

এ বলে আমার 
ও বলে আমার 

ফুল এসব ভাবে 
আর হতাশ হয় 

তারপর 
একদিন ঝরে পড়ে 

আসলে 
ফুল মাটির ছিল 


আলো হয়ে ফোটা

আমাদের সব দেখা 
আলো হয়ে ছড়িয়ে যায় 

আমি তোমাকে দেখি 
আর তুমি আমাকে 

শুধু 
দুজনের চোখের কাছে 
দুজনের শরীর 

আলো হয়ে ফুটে থাকে


দৃষ্টিগোচর 

গরিব বলে 
বাড়িতে পূজা হবে না 
সন্ধ্যা দেওয়া হবে না 
তাই কি হয় 

মা প্রতিদিন সন্ধ্যায় 
ঠাকুরের কাছে প্রদীপ জ্বালান 

আর 
শাঁক বাজিয়ে দেবতাকে বলেন যে 

সামান্য 
সর্ষের তেলে জ্বলা প্রদীপ
নেভার আগে 

তিনি যেন 
এই সংসারের দিকে একবার তাকান 

অলংকরণ - প্রসাদ‌ মল্লিক‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Friday, 1 March 2024

কবিতা

বসন্ত বৈষ্ণবী পর্ব-৭


কবিতা সামন্ত এর কবিতা -


পৃথিবী 


আমি বাবার মতো পৃথিবী দেখিনি...

পৃথিবীর মতো বাবাকে দেখেছি।


বাবার পৃথিবীতে আমি,আমরা আর জীবন থাকে।


আমার বাবা পৃথিবীতে বাবার সবটা আছে 

তাই আলাদা করে 

পৃথিবী দেখার ইচ্ছে নেই।


দিন শেষে বাবার মুখটা দেখলেই 

সব দেখতে পাই।

আমি পৃথিবীর মতো 

আস্ত একটা বাবাকে দেখেছি।



আশ্চর্যের আলোকবর্ষ


ঘেরাটোপের ভেতর ঢুকে 

পড়ছে আলোকবর্ষ।

অথচ আমি কোন আলোকবর্ষের 

ভেতর হাট বসাইন...

শুধু জল রঙের একটু খিদে চেয়েছিলাম।


রাতের হাওয়ায় জন্ম নেবে ভোরের 

আলোয় মুক্ত হবে আর...

আর তারপর উবে যাবে দিনের শুরুতে।


আমি আলোকবর্ষ ছুঁতে চাইনা...

আমি আলোকবর্ষ স্পর্শ করতে চাইনা তবুও 

স্পর্শে দেখি আলোকবর্ষ 

মজ্জায় মজ্জায় মিশে যাচ্ছে!


বিলাসিতা

  
তুমি উত্তেজিত হয়ে যাও 

আকাশের দিকে তাকালেই।

আমি তখন পায়ের তলার মাটি তল্লাশ করি!


তুমি উড়ছো তো 

উড়েই চলেছো পাখিদের মতো আপন খেয়ালে।

আমার আর কিছু করার থাকেনা!


আমি তখন নিজেকে বড্ড অপরাধী ভাবি...

যদি আমার সঙ্গে এই মাটির মতো 

মিশতেই পারলেনা তো কেন 

আমাকে ভালোবাসলে মিছিমিছি!


আমার কোন আকাশ কুসুম ভাবনা নেই।

আমার কোন ওড়ার মতো পাখনা নেই 

বিলাসিতা করার।


অলংকরণ - প্রসাদ‌ মল্লিক‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••