Friday 1 December 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯



সুপ্রভাত মেট্যা’র কবিতা-


সেও, আমার অশ্রু


এতদিনে প্রায় তুমি কবিতা হয়ে গেছো।

মেয়েদের দুপুর দেখে বড় হয়ে উঠি আমি, এইখানে।
এইখানে ভরে ওঠে আমার শ্রাবণ পুকুর।
তখন হৃদয়ে নোঙর ফেলে তোমার ছায়াটি এসে কাছে,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, চুপচাপ।
আমি বলি এসো, বসো ওই কাঠের চেয়ারটি নিয়ে
আমার বুকের খাঁচায়, নিরিবিলি।
সে আড়চোখে দেখে। তাকিয়ে,'আজ আসছি' বলে,
হৃদয় ছুটিয়ে চলে যায় কোলকাতা শহরের দিকে কোথাও।

সেখানে রাতের ভালোবাসা আলোকরে বসে থাকে সে,
গল্প করে। আর সেই আলোর শ্রম দিয়ে গড়ে ওঠে তার নরম শরীর।
অ্যাতো অন্ধকার; তবু সে চকচকে, সাদা ধবধবে হয়ে ওঠে ক্রমশ,
চমকবাহী হয়ে ওঠে। তবে কী আলো হতে গিয়ে,
আবার সে শরীর হারাবে কোথাও!

তোমার চন্দ্রবেলা বেরিয়ে আসে চক্ষুজুড়ে, দেখি,
প্রচার মেঘের সামনে এসে তোমার কলঙ্ক ঝরে,অশ্রু ঝরে......
সেও, আমার অশ্রু......আমার অশ্রু......


কথা সমগ্র 


আলো থেকে পাতার সংসার সরে গেলে
দু'চোখে অন্ধকার নামে।
দুঃখ বড় 
গাঢ় শ্রাবণ হে মুগ্ধ পাঠিকা;
যা কষ্ট দেয়, ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে তোমাকে ডুবিয়ে দেয়,
                               তোমার আক্ষরিক জীবন।

অত কবিতা লেখার দৌড়াদৌড়িতে গিয়ে কি হবে?
তার চেয়ে বরং নিদ্রা খোলো, শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখো,
স্বপ্ন দেখা কী যে আনন্দের কী বলব তোমাকে!

তবু কী মন সে চায়?
তাই প্রথম প্রথম, তোমাকেই তুলি, নাড়া দিই,
আমার কলেজ ফেরত দুপুরের কথা বলি,
আগামী কাব্যের সাফল্যের কথা।
বসে থাকি, অসময়ের ভাবনাগুলির গায়ে 
রঙিন জামা-কাপড় জড়িয়ে চুপচাপ।
দেখি, আমার সমস্ত কথাগুলির নীচে,
বাড়ি থেকে সামান্য দূরে, ধান ঝাড়ার পাটায়
কবিতা তার ডালপালা ছড়িয়ে বসে আছে।
আর বলছে:
                আহা নড়বড়ে হৃদয় তোমার ;
                সারাই করো গো, এসে সারাই করো!



প্রাক কথন


সকালের খুশি 
দুপুর অবধি গড়িয়ে সঙ্গ নিয়েছে আমার।
তোমার মনের সঙ্গে আজ বিকেল-ধুলো উড়িয়ে
ঘুরে এলাম আবার।

"এই সর্দি-জ্বরের ঠাণ্ডায় তুমি নেমোনা রাস্তায়।"
বলেছিলে একদিন।
বলেছিলে, "সাবধানে থেকো, ভালো থেকো।"
হ্যাঁ, সে-কথা ভুলিনি আমি।
তুমি যখন আসতেনা, আমিও তখন
না আসার কারন নিয়ে হাজির হতাম, তোমার বাড়ি।
হাজার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতাম।

তুমি চুপটি করে বসে সব শুনতে।
আর মৃদু হেসে বলতে, "নতুন দম্পতি রাত্রি দেখার জন্য 
যেভাবে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তেমনটি হয়োনা লক্ষ্মীটি।"
আমি বলতাম, "নিশ্চয়ই কেউ আশ্চর্য হয়েছে দেখে,
তানাহলে এত ঐশ্বর্য কিসের তোমার, এত অলঙ্কার,
আয়নাখুশির ঝিলিক কিসের এত তোমার চোখে-মুখে,
অ্যাঁ?" তুমি দুধেল হেসে,
আমার হৃদয়ে একটা টোকা মেরে
বলে উঠতে, "সে তুমি, তুমি।"

অলংকরণ- ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Sunday 26 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯

 যদি কবিতাকে প্রশ্ন করি


যদি কবিতাকে প্রশ্ন করি 
চাকাতে তাঁদের দমিত করা কি ঠিক? 
আঙুলের পাঁচখানা দাগ এঁকে দেওয়া কি ঠিক? 
তবে একবাক্যে বলবে..... হ্যাঁ

চামড়া ছিলে দেওয়া কি
তাদের ধর্ম নাকি অধিকার
তবু তারা নিঃসন্দেহে এগিয়ে এসে
লাঠির সরলরেখা চোখ বন্ধ করে 
হিসেব করে দিতে পারে। 

চামড়া মুখ হাড় দেহ আজ একাকী
তাদের সঙ্গী স্বপ্ন এবং ঘুমহীন চোখ
আর চারিদিক ছিটিয়ে দেওয়া 
এলোমেলো বাক্য
যেগুলো ভীষণ নিষ্পেষিত নীরিহ

তারা শুধু হাত বাড়িয়ে সকাল খুঁজে
বেঁচে থাকার.....। 


মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় 


এতদিন যাকে সোহাগের আকাশে মুড়ে 
প্রহর গুলো এগিয়ে নিয়ে এসেছি
শৈশব যৌবন বার্ধক্যের সূচিপত্রে
যাকে না পাওয়ার শব্দবন্ধনে বেঁধেছি 
আজ আচমকাই তার চলে যাওয়ার পালা
নীরব নিকষ অমাবস্যা তাকে আহ্বান করে

চারিদিক আলোকিত করে... তাদের জীবন
অন্ধকারে নিমজ্জিত করার সভ্যতা
শতাব্দী পেরিয়ে আজও... জয় চিৎকার শোনা যায় 
সংখ্যা গণনা আজ আরও দ্বিগুণ

এ বর্বর রক্তরঙের উন্মত্ততা 
মালাকাঠে নিশ্বাস বন্ধের কারসাজি
সবই সময়মাত্র রাক্ষসরূপী স্বভাবের আস্থা
এ কোনো আনন্দের উল্লাসমঞ্চ নয় 
অন্ধকারের সঙ্গী হয়ে রক্তধারার আতশবাজি 

মুখশ্রী ভোলা যায় না 
ছেড়ে দেওয়া যায় না
তবুও অশ্রুধারা দিয়ে শেষ মূহুর্তে ভোলার ভান করে
                                         ...মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়। 



একটা বিপ্লব


ললাট এবং সিন্দুকে
দীর্ঘস্থায়ী... বুলেটের দুটি বিদীর্ণ গর্ত 

তবু বেঁচে আছি 
আরও রক্তাভ আবরণের জন্য 

কাঁদতে এক জন্ম পূর্বেই ভুলে গেছি 
বিপ্লবের জন্য

এখন শুধুই 
আমি এবং আমার মন
পরস্পর 
দু চোখ দু হাত দু পা এবং অর্ধ জীবন
বিস্ফোরণের বিপ্লব বাঁধে

এক একটা প্রাচীরের পর প্রাচীর। 

অলংকরণ- ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 24 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯

সন্দীপন দত্ত এর কবিতা -


নিরাময়


বিশুদ্ধ হেঁটে চলে মাথার ভিতর—
তরল নামিয়ে রাখি উচাটন তুলি।

খুব দূর মনে হয় কাঙ্ক্ষিত ভোর,
চিরুনি হারিয়ে ফেলা জটিল জীবন।

প্রাচীন মুখের ছায়া বিষণ্ণ হাসে—
চোখ চলে গেলে তবু থেকে যায় চোখ!

জল ঢালা ভাতে থাকে সুপ্ত যে ঘুম,
মাথার ভিতর সেই নিরাময় কাঁদে।


জোনাকি


ভাবছি ভালো নেই তুমি;
ভাবছি, ভুল ভাবছি।

ভেসে আসা বিষাদের গন্ধ—
চুল খুলে গেল দূরে কোথাও।
আজও সেই কার্নিশের নীচে দাঁড়িয়ে,
বৃষ্টি থামেনি...

আলো ফিরে আসে, ফিরে যায়।
অনুভূতির শরীর, পরিস্থিতির কুয়াশা।

পরিবর্তন ভাবলে কত কী অনুযোগ অভিমান,
ভবিতব্য ভাবলে চুল তো খোলারই ছিল।

সেলাই শেখার ধৈর্য্যে তোমায় শিখেছি;
শিখেছি ভেসে থাকার নির্মম মৌলিক।

ভুলে যাওয়া কোনও ভুল নয়,
ভুলে থাকা নিঃশব্দ অপরাধ।


'A Clockwork Orange'


আপনার প্রেমিকের কাছাকাছি আপনি একটি মেটে রঙের চাঁদ তুলে বসে আছেন ঠোঁটে। জাগ্রত শনিবারে আমিষ স্বাদের চূড়ান্ত সাধ জাগে। শরীর একটি মন্দির মনে করি— আর ঈশ্বর তো কবেই মৃত। পেঁয়াজ-রসুন তীব্র কষিয়ে আপনাকে এবার বস্তুকল্পনা করিব— কাব্যির দোহাই! মাংস হজম হবে না, বয়স আসছে, এরপর। অতএব আমরা পাখি কিনে খাঁচা খুলে দেব, কালো কাঁচুলিটি হারাবে কামরাঙা বনে। আমাদের খামারে পশুরা পাবে গণতন্ত্র। সমস্ত নির্মাণ যদিও কাঠেরই হবে। মূকেদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা সহজ— জলপাই গাছের নীচে সমবেত হব। একটি জমাট রক্তেরঙের লেখা ক্রমশ সবুজ হচ্ছে। বুঝতে পারছেন কতটা সামলে উঠেছি আমি? এরপর তো আর লিখতে না পারলে দুঃখও হবে না! এরকম কোনও স্বর্গের লোভ ছিল কি আমার? একটি ধারালো চাকু— কাগজ কেটে যায় তির্যকভাবে— আসুন আপনাকে লোকে ঠোঁটকাটা বলুক— এরকমই চান আপনি— নয় কি? অবিশ্বাস্য ডিনার এই ঠোঙায় নামিয়েছি। পাঠকের জন্য আমার করুণাই হয় মাঝেমাঝে। এই রেসিপিটুকু এবার লেখা হয়ে উঠবে। আপনিও উঠুন। দেখুন হাঁটতে পারছেন কিনা...

অলংকরণ - অতীশ কুণ্ডু
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday 12 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

অনিমেষ এর কবিতা -

এই রঙ বদলের গজল


যা লেখার জন্য রাখতে চেয়েছি তা আসলে অবশিষ্ট সংলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়,
মেদুরতার কথা এইসব
যারা জানে তারা জানে এইসব দিনরাত্রির হিসেব রাখা কাজ নয়
আদতেই নিঃস্কলঙ্ক কোনো তরুণীর দিকে যাওয়ার জন্য এতকিছু

তুমি তো শহরের ধূলো, খেয়ে ফেলে দেওয়া অংশ 
আমার ভাগ্যে চুল পড়ুক, কোমর বন্ধনী পড়ুক

যা আমার তা বহুদিন ধরেই পরগাছায় ভোগ করে যাচ্ছে...

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday 11 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

সুপ্রভাত দত্ত এর কবিতা -


ক্ষতের পাশেই যারা

     
একটিও পাতা নেই - 'ওই গাছ' শুধু
একটি পাখির পায়ে সান্ত্বনা এনেছে !
এমন প্রবাহ মাঝে এই টিকে থাকা
যেন-- ' ভিক্ষা নিয়ে বাঁধা নিজেদের গান !'
সরল মনের তল ছুঁয়ে না দেখেই
তাকে যে অনন্ত তলে রেখেই দিয়েছে ।
যে মত কাঁপতে থাকে হিম্মতের পাশে
সে তো হৃদয়ের এক নবজন্মক্ষত !


যে-জন ক্ষতের পাশে শিস দিয়ে ফেরে
তারা আভা স্বরচিত-- গভীর বুননে ..
সেখানে কিভাবে ছুঁচ পথ কেটে চলে?


এখন যে কার চোখে

                   

এতটা তফাৎ নিয়ে আগে কি ছিলাম ?
নিজের পাড়ার রোদে খেটেখুটে শুধু
শরীরের রং গুলি পাল্টে ফেলেছি ...

কত যে অতীত ছিল - ' মনের প্রশ্রয় ' ।
সমস্ত শৈশব জুড়ে পাড়াতুতো রং
এপাড়া ওপাড়া খেলে এক হয়ে গেছে....
সজনে গাছের পাতা সারি সারি ছিঁড়ে
তার পায়ে সাজাতাম- ' সবুজ নুপুরে '
ঘরের পালুই মানে লুকোচুরি মন
দুপুরে প্রহরী হত শ্রমিক হাওয়া ।

এখন তো ব্যবধানে হেঁটে চলা শুধু ।
পাড়াতুতো রোদ আছে ; নেই মাখামাখি..
এখন যে কার চোখে অন্ধকারে দেখি ?

এই তো পুকুর

        
পাখিদের ডানা থেকে অনুভূতি সব
ক্লান্ত হয়ে লেগে থাকে বাতাসের গায়ে...
তারপর বাতাসের সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
নরম পুকুর গায়ে নিজেদের আঁকে!
এই তো পুকুর , যা বনানীর কাছে
সূর্যের আলোর দায়ে আয়নার মতো..
এই তো পুকুর যার বৃত্তাকার ঢেউ
শ্যাওলার তলে খোঁজে নিরিবিলি যত !

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 10 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৮

পলাশ মজুমদার এর কবিতা -

কবিতার দোকান


কবিতার দোকানে কবিও বিক্রয় হচ্ছে।
এক কিলো কবি কিনতে আধা কিলো বিশ্বাস।
বহু কিনলে দু'এক কিলো ফ্রিতে দিচ্ছে দোকান।

অবিক্রিত ছেঁড়াফাটা কবিদের চৈত্রসেলে
অতি সুলভে ক্রয়ের সুবিধা।
সামান্য বিশ্বাসে ছাড়া হবে ত্রুটিযুক্ত কবিদের।

ভাবনা হচ্ছে, বিশ্বাস ফুরিয়ে গেলে
কবিতা দুর্বিনীত হয়ে ওঠে।

ভাবনা হচ্ছে, কবিতার জন্য আত্মঘাতী হওয়া
কবিদের কাছে বিচিত্র কিছু নয়।


ডট


এই দেখুন মানচিত্র।
আসুন আমরা ম্যাপ পয়েন্টিং শিখি।
প্রথমে ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি।
ধান, গম, যব, বাজরা হয়ে খনিজসম্পদ খুঁজি আসুন।
তারপর পাহাড়, পর্বত, নদী, ইন্ডিয়া গেট, তাজমহল হয়ে
সবশেষে ধর্ষণপ্রবণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করি কালো ডট পেন ব্যবহার করে।

ডট দিতে দিতে মণিপুর, রাজস্থান, ইউপি, বিহার 
প্রভৃতি শেষ করে ঢুকে পড়ি সোনার বাংলায়।
কালু মিদ্যার ধানক্ষেত, লখাই মান্ডির গোয়ালঘর ছুঁয়ে
বিষ্যুদবারের হাটে, রাজার পথে ডট দিতে দিতে এগিয়ে যাই পরিক্রমায়...
নিজের গাঁয়ে এসে যখন পৌঁছলাম আমরা,
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার নেমেছে, গাঢ় নিষেধাজ্ঞা নেমেছে!
অগত্যা আমরা যে যার বেডরুমের দিকে
এগিয়ে গেলাম কিছু অভিজাত ডট চিহ্ন সঙ্গে নিয়ে।

কালো ফুটকির তারায় ছেয়ে যাচ্ছে ভারতবর্ষের দেহ!
অথচ আপনাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না,
ধর্ষণ কোন সুস্থ দেশের অর্থকরী ফসল হতে পারে না!


জনৈক সুবীরদাকে নিয়ে


সুবীরদাকে তোমরা চিনবে না। খামখেয়ালী। একরোখা। দরিদ্র, অথচ অহংকারী বারোমাস। নষ্ট করার মতন দেদার অবসর, অথচ সংসারে তার যমের অরুচি। ৩৬৫ দিনে ৭৩৭টা কবিতা লেখা তার কাছে জলভাত, অথচ ভীতুরা পড়ে না তাকে। অথবা আমরা সকলে ভীতু।

আসলে সুবীরদা বলতে চান, অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মানুষ বলে ডাকা হোক। এই যে আমি লিখছি, তুমি লিখছো, মহারথীরা লিখছেন। ধরে নাও, এইসব লেখায় মনভোলানো অজস্র প্রশংসা স্তুতির নিচে একজন লিখলেন, 'শালা, যত্তসব অখাদ্য লিখেছিস।" 
জানবেন, তিনি সুবীরদা। আসলে সুবীরদা হলেন দাউ দাউ আগুন, চিতা যার প্রণয়নী। সুবীরদা বরাবর অন্ধকারের দিকে। আলোর দিকে চাটুকারিতা আর অনাবশ্যক সৌজন্যতা। 

আমাকে পড়তে না পারার অক্ষমতার জন্য পৃথিবী তোমাকে ক্ষমা করলুম না - একথা সুবীরদা অনায়াসেই লিখতে পারতেন, কিন্তু লিখলেন না। আসলে তাঁর কাছে, ক্ষমা করার অক্ষমতা জানান দেয়া, একপ্রকার ক্ষমা-ই।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday 7 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭

অরিত্র দ্বিবেদী‌'র কবিতা -


বন্ধুতা আসলে ভেক্টর রাশির নাম  


একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটি। একটাতে এক বন্ধু অন্যতে আর এক। একজনের গায়ে ক্ষতি। অন্যজনের বিন্যাসে গ্লানি। এক অভিজ্ঞতা কাটি। বহুদিন দুপুর, শুভসন্ধ্যা দুয়ার। পড়তে বসি তিন-জন পাশে। ফিজিক্স, পড়ানো চলে রোজ। "একটি মাঝি গুণ টেনে চলে -- ভেক্টর রাশির প্রয়োগ" বললেন স্যার, "একবার বাঁয়ে একবার ডাঁয়ে"। তবু নৌকা সোজা চলে যায়...। একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটি। আমরা তিন বন্ধু। একটা ডাঁয়ে, একটা বাঁয়ে। ওরা আর কথা বলে না নিজেরা, পড়ে। আমি একা বকবক বকবক। ওদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছে। আমি গুণ টেনে নিয়ে যাই। একবার ডাঁয়ে, একবার বাঁয়ে। একটা অভিজ্ঞতাকে দু-টুকরো করে কাটে। আমাকে একবার কাটে, দেখে আবার পালটায়। একপাশে ক্ষতি একপাশে গ্লানি।।


বিদায়


বিদায়। এর অনুরূপ শব্দাবলি নেই কোথাও আমাদের গঞ্জে। প্রথমে হারিয়েছিল সহজ পাঠ। তারপর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়, ধাপার মাঠ, ঠাকুরদিঘি আর...আর লাল ফ্রক। সেদিন সন্ধ্যেবেলাতেই হারিয়ে গেল পরিদি, সুন্দরী, নাচ জানতো, বাবা ট্যাক্সি চালাত...বাড়ি ফাঁকা। সাইকেলটা নিয়ে ফিরতে ফিরতে শুনেছিলাম বোসেদের বাগানটাও বেচে দিয়েছে ওরা। বিদায়। এর পরিবর্তন নেই! শুধু কালবৈশাখী এলে আমি সাইকেলে চেপে শপিং মল উঠে যাওয়া বোসেদের বাগানে এখনো আম কুড়োতে যাই, পথে পড়ে ধাপার মাঠ, ঠাকুরদিঘি, লাল ফ্রক আর পরিদি। পরিদি, সুন্দরী, নাচ জানতো....


ওম্ মণিপদ্মে হুম


প্রথম লামা দ্বিতীয় লামাকে ডেকে বললেন, "ওম্ মণিপদ্মে হুম"! দ্বিতীয় জন তৃতীয়কে। তৃতীয় জন চতুর্থ কে ... পঞ্চমকে... ষষ্ঠকে...। এইভাবে লামাদের সারি আমার ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায় হিমালয়ের দিকে। সেখানে পাহাড়ের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা আছে,"ধার বাকি", "ট্রেন বাতিল", "কাজ নেই", ... আরও আরও বিস্তার। ওঁদের কাজ এসব মুছে ফেলা। হিমালয়ের প্রতিটি পাথরে লিখে দিতে হবে: "ওম্ মণিপদ্মে হুম"।।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Monday 6 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭

অনিন্দিতা মণ্ডল এর কবিতা -


গোলাপী সন্ধ্যামণি।


টানা আটদিন বৃষ্টিতে উঠোনজুড়ে রোদের অস্পষ্ট পায়ের ছাপ—
কোনোটা ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে , 
কোনোটা দাঁড়িয়ে আছে বল্লম হাতে ।
দেওয়ালের গায়ে পুরোনো আতরের গন্ধ 
জমিয়ে রাখছে বিকেলের সূর্যছোঁয়া দোতলা ।
আঙুল ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে টুকরো টুকরো যুদ্ধ
আর হরিণীর ডাক মিশে যাচ্ছে শাঁখের আওয়াজে।
বুকের ভিতর ইমোশনাল মথ সিক্ত ডানায়
তুলে রাখছে আমাদের সংসারিক স্বপ্ন দেখার দিনগুলি ।
পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে শরীর ছেড়ে 
তুমি কাফকা পড়ছ , সে আওয়াজ ভেসে আসছে 

এখন ,
একা হতে হতে আজ এসে দাঁড়িয়েছি 
খোলা আকাশের নীচে—
যে আকাশটা টানা বৃষ্টিতে কেমন চুপ হয়ে গেছে।
এই উদাসীন সন্ধ্যায় নেমে আসছে শারীরিক কান্না,
অথবা তুমি গোলাপী সন্ধ্যামণি হয়ে ।


 দূরে থাকা সহজ 


যে কাকটা মারা গেল সেদিন ভোরে
সে জানত বেঁচে থাকার কৌশল ,
বারোমাসী মেঘ বিশ্রী গরমে গেয়ে ওঠে
সাদাকালো সিনেমার পুরাতনী গান ,
সস্তার বিজ্ঞাপনে আবহাওয়া হেসে ওঠে 
সব আলো নিভে যায় , পড়ে যায় গ্লাস...
কাকটা আত্মহত্যা করেছে সেদিন 
অথচ কোনো শোরগোল নেই।

কাকটা কি জানতো— দূরে থাকা বড্ড সহজ ,
আর কাছাকাছি থাকতে গেলে উদ্দেশ্য লাগে কিংবা অজুহাত ?


মা এসেছে কখন !


কাল রাতে রোদ্দুর পড়েছিল হাতে
আলো বলতে যা সবাই জানে , তার নিকষ কালো রূপ 
আমার ভিতর ঢুকেছিল দামাল ছেলের মতো
বর্ষার সোঁদা বিছানায় মা এসে কখন বসেছে কেজানে 
মায়ের চুল সরিয়ে নাকের ডগার কালো তিল ছুঁয়েছিলাম ,
মাথার ভিতর—মাছের মাথা দিয়ে রাঁধা মিষ্টি বাঁধাকপি ,
মোটা ডালে মাখা ভাত , আর একটা লড়াইচিন্হ 
নেচে উঠেছে ভাসানের রাতে মাতালের মতো।
একপিঠ চুলে লেগে আছে পুরোনো মিছিলছাপ ,
জোছনার গায়ে ফুটে উঠছে মায়ের সন্ধ্যারতি ,
সোঁদা বিছানা উষ্ণতায় শুকিয়ে গেছে ,
চারপাশে গভীর অন্ধকার , কোনো আলো নেই 

তবু মা আবার ছেড়ে যাচ্ছে ,মাথায় বাম লাগিয়ে দিয়ে 
মা জানত ,মাইগ্রেনে আমি আলো সহ্য করতে পারিনা ।

অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Sunday 5 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৭


তপেশ দাশগুপ্ত এর  কবিতা-

আমি জানি না

তুমি আমার এত ভালবাসা দিয়ে কি করো
রান্নাঘরে সারি সারি কৌটোর ভিড়ে
কোনখানে রেখে দাও
জিরা হলুদ গোলমরিচ সেরকম কোনো
রেখে দাও
আস্তাবলের পাশ দিয়ে যাও
ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনো
লনের ঘাস ঘোড়াদের জন্য
জ্যোৎস্না ভালবাসা তৈরি হয়
দূরে বনভূমি
জ্যোৎস্নায় অন্ধকার শান্ত হয়ে থাকে
তুমি অঙ্কের মাথা নিয়ে যাও
টেনিসন আওড়াও
ঘোড়াদের ঘেরা জায়গার পাশে চেয়ার পাতা থাকে
ওয়ার্ডসওয়ার্থ রবার্ট ফ্রস্ট এইসব থাকে
কৌটো খুলে ভালবাসা বের করো?
মেলে?
না আবার রেখে দাও?
একদিন মিলে যাবে বলে


পাহাড়ের ছবি

বলেছ পাহাড়ের ছবি পাঠিও
আমি ছাদের ছবি পাঠিয়েছি
ছাদে তুমি দাঁড়িয়ে আছো
পুরনো অ্যালবাম থেকে বার করে পাঠিয়েছি
তুমি আমি দাঁড়িয়ে আছি ছাদের রেলিং-এ
হেলান দিয়ে
পাহাড়ের থেকেও উঁচু লাগছে


উড়নচন্ডি পায়রা


উড়নচন্ডি পায়রা
আমি তোমার চেয়েও আরেকজনকে ভালবাসি
তোমাকে সরিয়ে তার কথা মনে আসে
এক পা দু পা করে .. তোমার মতো সে
উঠোনে চরে বেড়ায়
খুঁটে খায় উঠোন থেকে
উড়নচন্ডি পায়রা তোমার থেকে আমি
আরএকজনকে ভালবাসি
তোমাকে সরিয়ে তার কথা মনে আসে
সারাদিন পর সাঁঝের আগে
নদীর স্রোতে জেটি ভাসানো দেখে


জয়দেব


আমি ভাবি তুমি আমাকে খুব ভালবাস
এদিকে তুমি তেমন বাসো না
পুকুরের ঘাট বর্ষায় পিছল হইয়া থাকে
তুমি জানো
কোনোদিন বাসন হাতে করিয়া উল্টাইয়া যাও নাই
যদিও বাসন ভাঙিয়া যাইবার সম্ভবনা নাই
কারন তুমি কাচের বাসন কোনোদিন পছন্দ কর নাই
সব বাসনই ফিরিয়া আসে
তবে আছাড় খাওয়া তেমন ভাল জিনিষ নহে
বাসন লইয়া পড়িলে প্রকান্ড আওয়াজ হইত
বিড়াল এবং কুকুরেরা হতচকিত হইয়া ছোটাছুটি করিবে
তুমি অতটা চাহ না
আর শরীরের কথা
পড়িয়া তোমাকে চোট দিবে এমন শরীর
তোমার নহে

অলংকরণ - অতীশ‌ কুণ্ডু
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday 1 November 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬


শিবালোক দাস এর কবিতা -

তরণী 


জলে পা রাখতেই সরে গেল কাঁটা। হয়তো খেলার ছলে।
হতভাগ্যের মতো দরজা খোলা। নিভে যায়নি মোমবাতি।
এতদিন তরণী ভাসিয়ে এসেছ। মাটি ঋণের কথা বলে।

হঠাৎ স্খলিত তোমার দেশ। তুমি কি ফিরিয়েছ তাকে ?
পেছন ফিরে তাকিয়ে সে দেখেনি। হাত দুটি ছোঁয়াও।
যমুনা এতদিন রয়েছে বন্ধক। কই জানাওনি তো তাকে !

তরণী কিন্তু বয়ে চলেছে। সে দেখেছিল শমনের মুখ। 
কপালে ভাঁজ। তরঙ্গ কেমন অনিয়মিত। অনিশ্চিত। 
নীচে লুপ্ত তোমার আপন দেশ। তাকে দাও চুম্বনের সুখ।


যমুনা-২



আজ সমস্ত কম্পন ডুবে গিয়েছে 
একাধিক কালোয়। 
তুমি কি আদৌ কোনো ব্যথা বোঝো ?
বন্ধ চোখ কত শীতল, 
পা রাখতেই বেশ জোরে বৃষ্টি নামে। 

জানলা যেখানে শেষ হয়েছে, 
সেখানেই উঠেছে একটি পান্ডুলিপি।
নিভে যেতে তো পারত, অতর্কিতে !
তুমি ঠিক মনে করিয়ে দিতে।

আকাশে তখন ভাসছে চুম্বন, 
যমুনার খেয়াল নেই কখন সে 
ছুঁয়েছে আমার হাত, ফুটেছে রেখা। 

তুমি বুঝতে পারোনি, আমি তোমাকে 
কখন ভালোবেসেছিলাম, নক্ষত্রে পুড়ে ?

প্রতিদিন সন্ধের পর পান্ডুলিপি...

প্রতিদিন সন্ধের পর অক্ষরবৃত্ত থেকে স্বরবৃত্ত...

 

যমুনা-৩


তুমি আজ পরিপূর্ণ যমুনা !
আকাশ ভেঙে গেছে, 
তোমার জ্বরে পুড়ে যাওয়া 
কপালে কোনোদিন হাত রাখিনি।

বিদেহী নয়, মাটি থেকে খুঁড়ে আনা
খাঁটি সোনা গলিয়ে দিয়েছি নিজের বিরুদ্ধে।
তুমি এখনও বলবে আমার স্পন্দন হাওয়ায় 
ভেসে বেড়ায়, যখন গোধূলি গাঢ় হয় ?

আমার কপালে একদিন আঙুল রেখে
চক্রাকার আবর্তে খুলেছিলে দরজা,
তারপর আমার মনে ছিল না মোটেও, 
আমি ছুঁয়েছি ধারালো স্বর, যেখানে 
গতকাল একটি মাছি আহত হয়েছিল।

আমি ছুঁয়েছি রুক্ষ চামড়া, কতগুলি শীতল 
শ্বাস আমি বাঁচিয়ে রাখি অন্তিম সময়ে...

তোমার স্রোতের উপর নামে অকাল তুষারপাত...


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Tuesday 31 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬

দীপান্বিতা রায় সরকার এর কবিতা -

নিমন্ত্রণ

কোন মুক্ততন্ত্রের কথা বলো..
স্বর্ণ আয়ুর নদী।
অবশ্যম্ভাবী,  শেষ বাকলের ঝড়।

বুকের মাঝে সঙ্গত হই কিসে!
সর্বনামের শেষে..
সব হারালে আর কি অতঃপর?

এমন মন্ত্র কি তা জানো!
ও জন্ম যুগের ধারা..
শ্রান্তিহীন, বিরাম শেষ কদম?

কোথায় যেন ফুল ফুটেছে বনে,
পাচ্ছি ভীষন সাড়া,
প্রবল ভাবে আমার নিমন্ত্রন।


সব চাই যে


গাছেদের যে ছায়াপথ, মাঠেদের মতো বিস্তৃত।
চাইবো সেটা  আজীবন  সঙ্গ দিক।
মেঘেদের  যে আলাপন, বজ্রের সন্ধি সকল,
সব অর্জনই থাকুক ভীষন  আন্তরিক।

এই যে নরম কঠিন, আলোছায়া  উপত্যকা,
নির্মাণ ভেঙেছে যা এই বর্ষণে।
জানি সব জল সরে যায়, দাগ মুছে যায়
দিন চলে যায় দিনান্তের দর্শনে।

প্রথমে চাইবো সেসব, যা কিছু এই জাগতিক
প্রারম্ভিক শব্দ থেকে, সব কিছু শেষ  অব্দি।
সব কিছু শোক ও বিলাপ, পাখিদের সব কলতান।
সহজ কঠিন প্রবলতার মন্ত্র দিক।


যৌথখামার

আমাদের ভাঙ্গা বাড়ী ঘরে
দেওয়ালে লিখনে,
কোলাজের রংহীন মুখ|

ছিড়ে আনা টুকরো চাদরে
 যত্নের আখরে,
 ফসলের কাঙ্ক্ষিত সুখ|

এত রূপ !স্তুপ স্তুপ ভরে,
নিরাকার জটিল জঠরে,
যতবার জন্ম আমার|

ফেরো একবার,তাকাও এঘরে
যেটুকু জমেনি আদরে,
সে ভ্রম ছিলো কার?

সম্মত হও, যদি দাও ছুঁয়ে
অনাঘ্রাত ঘ্রাণে,
প্রকটেই দেই অধিকার|

আমাদের যৌথ খামারে,
বোনা বীজ ধানে,
প্রতিবার জন্ম আমার।


দঙ্গলে সব
    

ফুল পাখিদের আস্তানা সব,বন বাদড়ে ঘিরে,
ঐ যেখানে বৃষ্টি ঝড়ে,মগডালে মেঘ ফেরে।

রোদ্দুর এসে আলতো করে,আদর সোহাগ করে।

 কই সেটা গো ?কংক্রীটে আমার শহর ঘেরে,
একলা একটা সঙ্গী ছাড়া বিষন্ন গাছ মরে।

ভাঙন এলো  , বন্যা এলো মাটির শেকড় কই?
ভারসাম্যের তাপ প্রবাহে,উষর ভূমি হই।

গাছকে বাঁচাও গাছ বসাও,যাক কেটে যাক খরা,
গাছ বিহনে রৌদ্দুরে পুড়ে সক্কলি মন মরা।

গাছ লাগালেই মিলবে সুফল,ফিরবে ফুল আর পাখি,
আবার হবো দঙ্গলে সব,সবুজ মাখামাখি।


অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শব্দরঙ হাউস-এ প্রকাশিত হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়‌  এর কাব্যগ্রন্থ -
সংগ্রহে করতে যোগাযোগ করুন - 9679655286
********************************************

Monday 30 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৬
গোলাম রসুল এর কবিতা -

এন্ড্রয়েড মানুষ


নস্টালজিয়া বন্ধুরা আমার 
এন্ড্রয়েড মানুষ 

সাইরেন বাজছে 
আমাকে জন্মের তথ্য দিতে হবে
বলতে হবে আমার দেশের নাম  
পাত্রটি থেকে গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামে  মনে হয় আমি জন্মেছিলাম একটি রেডক্রস 
মোরগের ছুরি আমাকে ডাকে 
 প্রতিটি ভোরের জন্যে
সূর্য  খ্রিস্টোফার কলম্বাসের রান্নার কুক
হাত বাড়িয়ে রয়েছে   তুলোভর্তি  নৌকাগুলোর দিয়ে 
ধু ধু ইমিগ্রেশন অফিস 
বইগুলোর মধ্যে  ফুটো শহর
স্টিলের আলমারি
স্কুলের জানালা দিয়ে সিমেন্টের শিশুরা দেখছে রাজপুত্র ঘোড়ায় করে সূর্যে যাচ্ছে 

বিধ্বংসী দিনের সব কটা আঙুল  চেপে ধরে রয়েছে পাথর 
নিহত নক্ষত্ররা দোলা খাচ্ছে সবুজ কাঁচের বোতলে 
আর চায়ের পেটিতে ভরা আন্দোলন

সিল্কের রুমাল শোভাবর্ধন করছে রামধনুকে
আমি মনে করছি আমি যাত্রা করেছি পাথর আর জলে
পাখিদের  ডানায় আমার তাঁবু
কঠিন পরিশ্রমের পর আমি যখন বিশ্রামের জন্য চিৎ হয়ে সাঁতার কাটছি আমার পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া বিশাল গুঁড়িগুলোর বেহালার তার তাদের অরণ্যকে বাজিয়ে চলে যাচ্ছে 
একটি প্রবল দ্রাঘিমা রেখা
বিশাল ডাইনোসরের পুনরুভ্যুত্থান
দুহাজার বছরের পুরনো সাপ
প্রাচীন বেগুনী রঙের হালকা আভা
প্রতিটি বৃহত্তম মৌসুমী বায়ু 
যখন
তামা 
সোনা 
রূপো 
দাউ দাউ করে জ্বলছে
তখন সব কটা ধাতুকে আমি নিভিয়ে দিয়েছি আমার অশ্রু দিয়ে 
আর একটি অস্পষ্ট বিন্দুতে শেষ করছি মহাবিশ্বের প্রসারতাকে
 

উদ্বোধন


নীল আকাশ
পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর সাদা চুলের মতো এখানে ওখানে 
দু এক টুকরো মেঘ 
কালো রক্ত আর লাল ঘোড়ার লড়াই চলছে সূর্যের আলোর মধ্যে
সন্ধ্যা নামছে ডানার শিকল কবরের মতো চেপে ধরে 

রাত্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
নক্ষত্ররা পাঠাচ্ছে তাদের  অঙ্গসজ্জা চোরাগুপ্তা  

নিরবতা
যার গায়ক থেকে বেরিয়ে এসে গান কাঁদছে 
আর সেই কান্না থেকে আমি লবণগুলো মুছে দিচ্ছি
যাতে অশ্রুর জল স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারে 
আর কান্নার তলানিটুকু ঝিনুক জন্ম হয়ে 
খুঁজে নিতে পারে ত্রিভুজ জলের এক কোণ 

দূর সমুদ্রশিশুরা খেলা করছে ঢেউয়ের মাথার খুলিগুলি নিয়ে 
বাতাস পরপর সাজিয়ে যাচ্ছে  অবিস্মরণীয় কঙ্কাল 

সাজানো হলো এক পরিপাটি বিমূর্ত
তাকে টেনে রেখেছে কান্নার  বলিষ্ঠ ফোঁটাগুলো 
কান্না বাঁশের কেল্লা
কান্না খরস্রোত সরীসৃপের দড়ি
কান্না সব হারিয়ে সব পেয়ে যাওয়ার এক রান্নাঘর
কান্না নেবুর জলের ফানুস যা আকাশে গিয়ে খানাতল্লাশি চালায় দুঃখের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের

অভিভূত  হই যখন আকাশ   নেমে এসে মুছে দেয় সমুদ্রের কানা
আর ক্ষিপ্র এক সাপ পরিভ্রমণ করে সমগ্র সমুদ্র

অন্য এক ঘূর্ণিতে দেখছিলাম এক দীর্ঘ ক্ষুধার্ত যখন খাচ্ছে তখন নিঝুম বর্ণনা করছে পৃথিবীর
       
অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শব্দরঙ হাউস-এর প্রকাশিত বই-
সংগ্রহে করতে যোগাযোগ করুন - 9679655286
********************************************

Saturday 7 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫


দেবশ্রী দে’র কবিতা-


দণ্ড 

নবজন্ম খুঁটে খুঁটে খাও 
সময়— এক বিশ্বস্ত আঁচড়

আমাদের পদ্মপাতায় 
ঈশ্বরের ব্যক্তিগত তরল খেলা করে
মায়া-কারুকাজ

স্বপ্নের গর্ভপাতে 
যার আবেশ সাজাপ্রাপ্ত হলো

আমি সেই শয্যার দেহঋণ মকুব করেছি


টুপ

আমাদের মুখোমুখি কোনও মুখ নেই
নেই কথা বলবার মতো কথা-ও 

পাহাড়ের গা-ঘেঁষে কুয়াশা যেমন 
লেগে থাকা, 
তবু ছুঁয়ে থাকা নয় 

বিচ্ছেদের শেষ লগ্নে পাতাটিও চুপ করে যায় 
'টুপ' শব্দে ঝরে পরে 
                               কয়েকটি যুগ্ম সময়



উৎসব-ফেরত

উৎসব শেষের চাঁদটি স্নেহভিখারি
চোখে কান্নার গন্ধ 

সমুদ্রে জোয়ার আসবে না জেনে 
বিহ্বল হয়ে উঠছে দেহ-নৌকা

একটি ফুল হয়ে ফুটে উঠলে 
শোকের বুকে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দেবো

আমাকে ডেকো না আর 
ওইসব ভ্রমর-আবেশে

সংসারে কত কী যে কাজ! 
কত কাজে আমি পড়ে আছি


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 6 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫

সন্তোষ চক্রবর্তী’র কবিতা -

∆∆
এসো আয়ুষ্কাল 



১.
বাংলা কবিতা নিয়ে ভ্রূক্ষেপহীন রাজা মেজাজেই লিখি,বর্ষা এসেছে
রাঢ় দেশে আর আবার তুলেছি পেখম ময়ূরের মতো অভাব ও
অসুখ ভুলে আলোর বলয়ে নেচে!কতদিন কতদূর আজ
কোমল তরু আছো মন আলো করে কার?আমরাও বিপরীতে
জাগতিক সমস্ত কিছু থেকে দূরে অমলিন রুক্ষতা আবার!শুধু গান
আর গানে মেতে জন্ম মৃত্যুর মাঝে কিন্নর সহজ এই বোধে
বুঁদ হয়ে অশ্রুকাতর এমন কাঙাল বর্ষাদেশে নির্বোধ ভাবি
জয় করে যাবো অহংকারী বাংলা অভিধান আপন দীনতায়!

২. 
মায়ালোকে এই আমার সমর্পণ।চতুরতা ও ছলনাহীন সহজ
এখন কবিতা কবিতা ভাবনা থেকে সরে আসি। পথের ক্লান্তি মিলিয়ে যায় পথে
সুন্দরীর হাসিমুখ। লোকজন উড়ে বেড়ায় পাখির মতো!
ভিড়ে ঠাসা দূরপাল্লা আলো আঁধারি বাস, তুমি জানো
হাজার কথাকে পাশ কাটিয়ে সমস্ত পথ ভেবেছি ঐ মেয়েটির মুখই!
তবুও কি আছে বাংলা গানে!প্রাক সন্ধ্যার মায়ায়!শেষ হতে চলল
একুশ শতক!এখনই হতে পারে যা কিছু!লাফ দেবো দারিদ্রতা থেকে
ঘুরে বেড়াবো পুরুলিয়া!সন্ধ্যা প্রদীপের মতো মেয়েটির মুখ!

৩. 

অধিভৌতিক জগৎ থেকে নির্বাসনে আরও কিছুদিন।
কিছুই দিলে না স্পর্শ ছাড়া!রমণীয় ফুলের সুবাস!
এখনও পথে পথে যে কোন সুবাসে প্রথমে
তোমার কথা মনে আসে। আয়ু থেকে চূর্ণ আয়ুর মাঝে
লিখি তা প্রাণ প্রতিষ্ঠায় যদি মরে যাই এই বোধে!
সাবেকি সকল সফল মূহুর্ত শুধুই কি তোমার!
এই গাঁ নামগানে মেতে তো পরক্ষনে নৈঃশব্দ উজাড় ওতে!
চণ্ডাল বিভা ভুলে কাঙাল পনায় দেখি ধরণী আমার
শুষে নেয় জল। অন্তর্গত কিরণ। দীনতায় মেতে উঠে!

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 5 October 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৫

শীর্ষা’র কবিতা -

∆∆
অথ যাত্রাকথা

|
অত্যন্ত আশ্চর্যের ভিড়ে মানুষ হারিয়ে যায়। ভুলে যায় নিজের পরিচিতি। গন্তব্য। দিশা। এযাবৎ করে যাওয়া সংগ্রাম। আশ্চর্য মানুষকে শক্তি প্রদর্শন করে। তার হাতে তলোয়ার। চোখে রুদ্র। শরীরে অগ্নি। যেন আস্ত দাবানল গ্রাস করতে করতে এগিয়ে আসছে মানুষের যত বেদনাগাছকে। ছিন্ন করছে মায়ের জরায়ু। তার শাবকদের থেকে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মণিকর্ণিকা হয়ে উঠছে মানুষের পরিচিতি। গন্তব্য। দিশা। অত্যন্ত এক আশ্চর্যের তলোয়ারে জবাই হচ্ছে মানুষের নিজস্ব যাত্রাটি।

||
আশ্চর্যের চোখ নেই। মুখ নেই। কান নেই। তবুও সবই আছে। তার অদৃশ্য পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে সে জব্দ করে রেখেছে মানুষের স্বপ্নকে। উদ্দেশ্যকে। মানুষ যত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করার কথা ভাবে, এক আশ্চর্যের বিদ্যুচ্চমক তাকে পিছনের পথ দেখায়। যে পথের শেষে সারি সারি সাজানো রয়েছে শোকের দোকান। বিষাদের মেলা। মানুষ যত আলোর দিকে যাত্রা করার কথা ভাবে, মেঘনাদের মতো এক আশ্চর্যের ঝঞ্ঝা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তাকে আটকে দেয় বিষণ্ণ ঘড়ির কাঁটায়। মুখ-কান-চোখ না-থাকা সত্ত্বেও পরম শক্তিশালী ইন্দ্রিয়সম্পন্ন অলৌকিক এভাবেই জিতে যায় বারবার। তার পায়ের কাছে পড়ে থাকে মানুষের মরা নখ, হারানো অশ্রুর বীজ।

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



Saturday 30 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


রোদ্দুর রিফাত এর কবিতা -

∆∆
মদের গ্লাসে তোমার আয়ু অতিশয় সামান্য 


সিগারেটের মাথায় নিজের ফুসফুস জ্বলছে। এস্ট্রে ভরে উঠছে নিজের ছাইয়ে। কেমন ধূসর ধূসর রঙে ছড়িয়ে যাচ্ছে আত্মা এদিকে-ওদিকে। ভেতরের মহানগরে প্রেমের তুমুল তোলপাড়। তবুও বালিশের পাশে নিজেকে মনে হয় একাকি এক মানুষ।

নিসঙ্গতার তরল লাল মদের রূপে গভীর হয়ে উঠে রাতের কোলে তবুও মদের গ্লাসে তোমার আয়ু অতিশয় সামান্য। মাংস ও চানাচুরের বাটিতে উঠে আসো তুমি। অতঃপর যখনি মাংস ও চানাচুর চিবুতে থাকি তখন মনে হয় এখন বোধহয় নিজেকেই চিবুচ্ছি।


∆∆
হারানোর ভয়

ফিরে এসো বসন্ত বনে—যেখানে ফুল ফোটছে তোমার বুকের তাপমাত্রা ডিঙিয়ে—যেখানে পাতার শরীরে তোমার নামের জিকির—সমস্ত কিছুর ভালো সম্ভাবনা ও না হারানোর ভয়। মানুষ তো হারিয়ে ই কাঁদে—এই হারানোর ভয়টুকু যদি কাটিয়ে দিতে পারি তোমাকে, তাহলে আর কি চাও? এর বাহিরে কি কিছু চাওয়ায় থাকে? 


∆∆
আমি আবারো প্রেমে পড়েছি


তবু প্রেম আসে বাসিয়া নদীটির পাশে 
স্কুলফেরা বালিকার এলোমেলো চুলে—রাজনগর রোডে...
কেমন বিকেল বেলা গড়িয়ে যায় রঙ চায়ের পেয়ালার তলে—

তবুও প্রেম আসে কিশোরী মেয়েটির খয়েরি স্কুলড্রেসে—
তার দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশার স্টেশনের পাশে

সিগারেট পুড়ে হাতে—ঠান্ডা হয়ে আসে চা 
তখন আমি বিবস তার এলোমেলো চুলে—চোখের নজরে...
কেমন অপলক তার চাহনী, ধবধবে দাঁতে রেখেছে আয়নায় কায়া

আমি ডিঙাতে পারি না তার ছায়া—
সন্ধ্যা তবুও দিচ্ছে ইশারা...

কেমন যেন ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছি তার ছায়ার ভিতর—

আমি আবারো প্রেমে পড়েছি কিশোরীর চিবুকের নিচের
গভীর ছায়ায়—যেখানে ঘুমাবো জীবনের সমস্ত রজনী।


অলংকরণ - নিশিপদ্য
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 29 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় এর কবিতা -

∆∆
লবণহ্রদ কিম্বা ক্ষত 

ভালো যে আছি এমন কিছু নয় অথচ খারাপ বলতেও পারছি না ।  
এমতবস্থায় একটু বেশি জল পান করলে শরীর হালকা হয় - একে একে বেরিয়ে যায় 
ক্ষোভ -ক্ষতি - ক্ষতের ঘন তরল । শারীরিক সৌন্দর্যের জমা দাগ মিশে গিয়ে এঁটো হয়ে যায় 
আমায় পবিত্র করে যাও কিম্বা নষ্ট করতে হলে সাথে নিয়ে নাও  
অথচ এরকম শান্তিপূর্ণতা কখনোই কাম্য ছিল না 
যে যায় সে দীর্ঘ গেলে - চলা থেমে যায় 
চলে যেতে হয় বলেই হয়ত ফিরে আসা 
কিম্বা হয়ত ফেরা না চাওয়ায় - যেতে বলা 
এত জটিল তো কিছুই কোথাও ছিল না 
নিতান্তই সরল বলেও যে কিছু হয় না তাও জানা 
অথচ রোজ দেখছি তুমি যেখানে আছো সেখানে গেলে তুমি আমার জায়গায় চলে আসছো 
বলা ভালো একটি লবণহ্রদে তুমি ভেসে যাচ্ছো কিম্বা দূরে... অথবা এসব কিছুই না!


∆∆
 মেহগনি সহযোগে 

প্রত্যাখান নেওয়ার মতো ক্ষমতা এসে গেলে আমরা বড়ো হয়ে যাই। কান্না একটি ছোঁয়াচে রোগ - দরদের চেয়ে ঢের গুণ বেশি! তো যা বলার - একটি পোষ্য কান্না। প্রভুর কাছে জিরিয়ে নিতে চায় এবং 
আরেকটু চায় নরম হতে। এই অঝোরে বর্ষা দেখার সৌভাগ্য ময়ূর জীবনকে আমি ঈর্ষা করি। মানুষের সংস্পর্শে এলে বর্ষা বাড়ে কিম্বা জলতল। লেখা ছড়িয়ে আসছে, আরও ছিটিয়ে থাকছে ধারালো আঘাত - পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা এবং বন্ধুর গ্রেফতারী পরোয়ানা। 

তো যা বলা হয়েও হল না - তোমার বোঝা উচিৎ, কেন একমাত্র তুমি বললেই নৈঃশব্দ্য আসে  
সেদ্ধ মগজ ঠান্ডা হয়ে বিস্তারিত দিনলিপি গুছিয়ে রাখি

আসলে যা বলার,ক্রমশ যা বোঝা হয়ে উঠছে -
আমার সমস্যাটা কী? 
কেন এত রাগ হয়? 
কেনই বা এত গা জ্বলে? 
এত ভাবিই বা কেন?

এখন যেমন, একটি বলিরেখা বরাবর সমস্ত সরল শিশুসুলভ আলো এনে রাখে - সমস্ত জটিল বর্গীয় চিরহরিৎ জীবন আরেকটু বেশিদিন আটকে থাকুক - 
মেহগনি আঠার সহযোগে সেগুনের বাকল...  
শিলিগুড়ির একটিমাত্র অমলতাস আমার চেনা - যে দেখিয়েছিলো তার শীতঘুম পর্ব উদযাপন হয়। আমার কাছে একটি রাধাচূড়া এবং জারুল গাছ আছে। এসব চেনা গাছ ক্রমশ মিশে যায় অমলতাসের সাথে।
একেকটা জড়ুল পৃথক করে দিচ্ছে সকলকে - দাগ সংযোগে তৈরি হয় একটি পবিত্র জন্ম। এসো এবার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা নিরূপণে বসি - কিম্বা একটি জন্মবৃত্তান্ত...


∆∆
চাতক-জন্ম 

বহুদিন লেখা হচ্ছে না! বলা ভালো বহুদিন লিখতে পারছি না... 
তো যা বলার ছিলো - একটি বাড়ি! যাবো একদিন যেখানে অথবা যেখান থেকে বাধ্য হয়ে এসেছি তাদের কথা। আমি যে বাবাকে ভালোবাসি না তা নয় কিম্বা আমি যে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাইনা এমনটাও নয়। বখে যাওয়া ছোটো একজনকে বোঝাতে চাইছি না এমন কিছুও নয়! এসবের জন্য আমাকে ছুটতে হবে। ক্রমশ এসো সচন্দনে ফুল বেল কাটা ছিটিয়ে দিচ্ছি । কুঞ্জে কুঞ্জে কুউহু করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে স্বর্ণলতার মতো কেউ একজন। পেলব হলদে বর্ণের খানিক ঝিমিয়ে থাকা একটা কান্ড দেখছি - পাতলা পাতলা শিরা ছড়িয়ে আছে একেকটি পাতা জুড়ে। এরম কারুকার্য না জানি কোন সুদূর দেশের বানানো। একটি গেরুয়া পরিধান করা জীব আবির্ভূত হয়ে কতটা সন্ন্যাসী হতে পারে? অথবা আমাদের পাতি বসনে ত্যাগ কতটা ? 
এই যে দেখছি যাদের তাদেরকে তাড়াচ্ছিই বা কেন! অথবা যাদের তাড়াতে চাইছি তাদের রাখতে পারলাম না কেন?  
এরকম রাতের ভয় বহুদিন পর আসছে! লেখার মতো। এ মুহূর্তে আমার কাছে একজনের থাকা, এই চাওয়াটা আসছে। পরিবার ভীষণ ছোটো একটা কথা তাও দেখুন কীভাবে ভয় এবং জয়ে তাদেরকে খুঁজে বেরোলাম! কোথাও কেউ নেই। অথবা আমিই থাকতে পারিনি। তো যা বলার, বলাটুকু হলো - "সবাই তখন কইবে কথা তুমি রবে নিরুত্তর"- উত্তরে নীরবতা ভাঙে না নিরবতা উত্তর হয়? এ শহরে সবাই কথা বলছে, সবার আওয়াজও হচ্ছে তবুও ক্রমশ এই শহর স্তব্ধ হয়ে আছে। একটিমাত্র কিম্বা গুটিকয়েক আওয়াজের অভাবে কান তীর্থের কাক হয়ে আসছে। এ চাতক-জন্ম বড়োই করুণ! চিল-শকুন গন্ধ গা গুলিয়ে দিচ্ছে 
আমিই বা শালা কতটা নিচ্ছি নিজে??


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 28 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৪


 প্রসেনজিত রায় এর কবিতা -


∆∆
পাহাড় এবং তুমি


বোকার মতো পাহাড় দেখে খুশি হই 
মনে হয়,
এই বুঝি ছুঁয়ে ফেলছি ঝরণার জল, কাঠের দোতালা, নির্জন টং ঘর, 
প্রেমিক-প্রেমিকার একান্ত পাইন বন, অথবা তোমাকে...

পাতার ফাঁকে দুর্লভ সূর্যাস্ত দেখে হাসতে থাকি 
হাসতে হাসতে ঠকে যাই, ঠকে গেলেও 
আমার অবৈধ উচ্চারণের একমাত্র সঙ্গী তুমি 

আমার ছোঁয়া হয় না কিছুই!

রাস্তার সব ধুলো চোখে মুখে নিয়ে বাড়ি ফিরি
বুকের ভেতর ভাঙতে থাকে পাহাড়ি নদী, বনফুল 
চোখ লাল হয়ে আসে। মা বুঝতে পারেন, আবার নেশা করেছি। 

মায়ের চোখের ফাঁকি দিয়ে কী করে তোমায় দেখি বলো তো?


∆∆
মৃত্যু


একটা মৃত্যু ফড়ফড় করে দেহ ছেড়ে উড়ে যায় 
কেউ জনে না, কোথায় যায়?
একটা মৃত্যু মানুষের ভিতেরেই মরতে থাকে রোজ

নিকোনো উঠোন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতেই মনে হয় 
যেন ফিরে আসি 
অথচ, যদি ফিরে না ফিরি, আটকে পড়ি কোথাও 
তুমুল বৃষ্টির মাঝে--- 

কোন পাখি উড়ে যায়, কে জানে এ ঝরের দিনে?

বাড়ি থেকে বেরিয়ে সব রাস্তা নদী হয়ে গেছে 
পাড়ে পাড়ে বাঁধানো শশ্মান, বটগাছ--- কত পাখি! 

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে আরও....


∆∆
ঠিক কেমন যেন!


তোমরা সবাই কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছ 
আমি বুঝি না, ঠিক কেমন?
কিন্ত বুঝে যাই, ঠিক কেমন যেন...

কতদিন বড়ো হচ্ছে না মায়ের চালতা গাছটি 
পোষ মানছে না ভুলো বিড়াল 
বাক্সে জমে থাকা জামাকাপড় রোদে আসছে না 
কলের পারে কেমন যেন, কেউ স্নানে যাচ্ছে না 

আমি বাবার দিকে তাকালে, বাবা মা'র দিকে তাকায় 
মা উনুনের দিকে তাকালে, আমি আকাশের দিকে তাকাই 
আকাশটা যেন কেমন কেমন ঘোলাটে, 
যেন সব মেঘেরা ফেরি করা বন্ধ করে দিয়েছে 
চুপচাপ, নিশ্চুপ---

বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, তাও হল না 
খালি বারবার ভুলভাল মোরগের ডাক শুনছি!

অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Friday 22 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩

 ভগীরথ সর্দার এর কবিতা -

∆∆
রাস্তা 

যেখানে রাস্তা শেষ হয়
সেখান থেকে ঘরমুখো হতে নেই।

রাস্তার মনের খোঁজ নিয়ে দ্যাখো
প্রতিটি শেষ রাস্তার পরেও
না-হাঁটা আরও অনেক রাস্তা থেকে যায়
আড়ালে ...


∆∆

নদী চেয়ে রয়েছে

নদীর চেয়ে থাকা নিয়ে জল বয়ে যায়।
কিছু প্রশান্ত চিহ্নের আলো
ঘুরে ফিরে আলোময় করে তোলে পথ।

পাড় বেয়ে ধীরে স্রোতের বিপরীত অভিমুখে
ভেসে থাকা দখিনা হাওয়া
আধো অন্ধকারে চুপি চুপি একা
পথ হারায়।


∆∆
অনুপ্রবেশকারী


আর একদিন তার জন্য মরব।
আর একদিন তাকে নিয়ে পাড়ি দেব নিজের ভেতর।

আর একদিন হয়তো সে আমাকে এসে বলবে
আমাকে নিয়ে তার না-ভাবা রাতগুলো
অনুপ্রবেশকারী।

এই প্রজন্মের দোহাই দিয়ে তাকে বলবো
আমি তোমাকে ৩৬৫ দিন কাছে পেতে চাই ‌।


অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 21 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩


মিসবাহ জামিল এর কবিতা -

∆∆
ফারিহা ঋতি

ভালো লাগে বলে বন্ধু ফুল হয়ে চলি
এমনই আমার জীবনের অলিগলি 
ভাবি, ফুল ছাড়া এ জীবনে কিছু নেই
আমি তো লুকিয়ে আছি নামের ফুলেই

ভাবনায় ছেদ পড়ে; মনে হলো এক
কোপ দিয়ে কেউ কেটে দিলো কলাগাছ
অথচ দেখেছি আমি তোমার স্বরূপ
পুড়ে খাক হচ্ছি যেন আগর কি ধূপ!
ভিতরে হয়েছে সৃষ্টি প্রেম-ঘূর্ণিনাচ
হৃদয়ের মাঝে বিদ্ধ তাড়না-পেরেক

তোমাকে বলছি, শোনো, হে ফারিহা ঋতি,
ধুলি ঝাড় নমুনায় দূর করো ভীতি
ঢোলের মতন প্রেম ঝুলিয়ে স্ব গলে 
ফাটে না এমন তালে বাজাও নিরলে


∆∆
বিপ্লব

মানুষ, প্রেমের আঠায়
ঐক্যবদ্ধ হও
উড়া শিখো
শূন্য থেকে পাথর হয়ে নামো
জালিমের মাথার ওপরে 

স্বস্তি বের করতে হবে
নারকেল ফাটিয়ে যেলা পানি বের করি


∆∆
অনুসন্ধান 

আমি মেয়েমানুষের ভিতর দেখি
নিজেকে বেড়াই খুঁজে 
পুকুরে পলো দিয়ে
মাছ ধরার পদ্ধতিতে

মেয়েমানুষের মন-ময়দানে 
নিজের ঘরান খুঁজি
কুত্তা যেলা মরাগোরুর গন্ধ শুঁকে 
সামনে এগোয় 

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday 20 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৩

দেবাশিস সাহা'র কবিতা -

∆∆
শস্যগোলা

মা রঙের মেয়ের কাছে
জন্ম থেকেই শস্যগোলা 
বয়স বাড়তে থাকলেই
ঘড়া পূর্ণ হতে থাকে শিশুখাদ্যে
বাবা রঙের ছেলের কাছে থাকে 
সেই শস্যগোলা খোলার চাবিকাঠি 
ছেলে রঙের বাবা মন পাঠায়
মেয়ে রঙের মায়ের কাছে
জোছনায় ভেজা মন
পাহাড় সমুদ্র পেরিয়ে পৌঁছে যায়
সেই শস্যগোলার কাছে
আড়ালে হেসে ওঠে ঈশ্বর...... 


∆∆
সম্পর্ক 

অপমানে পুড়ে পুড়ে
খাঁ খাঁ বাজপড়া তালগাছ
কোথাও কোনো স্নেহ নেই  প্রেম নেই
শুধু অবিশ্বাসের হাওয়া খেলা করে
পোড়া তালগাছের ছায়ায়
ছায়ার আড়ালে অভিমান জমে জমে মেঘ
ছায়ার কাছে মা এসে দাঁড়ালেই
ঝর ঝর 
             ঝর ঝর 
 ঝর ঝর
মা ও তালগাছের সে কি কান্না
শান্তি  
শান্তি 
শান্তি 


∆∆ 
ডেডবডি

একদিন   টুপি থেকে চলে যাবে গন্ধ
একদিন   ডাকনাম ভুলে গিয়ে 
   সবাই তোমাকে ডেডবডি বলে ডাকবে
একদিন 
          সবকিছু নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে
  চুমু খেতে চলে যাবে চুল্লির ভিতর... 


∆∆ 
চন্দ্রপৃষ্ঠ ও কলঙ্ককথা

চাঁদে তোমার আলতা মাখা পায়ের ছাপ
আলতা ও সিঁদুর খেলা কি
মহাকাশে মানায়
কানাই এখানে বাদাম ফেরি করে
তুমি তো এখন চন্দ্রকলা
তোমার বিন্দি জ্বলে 
আমরা চাঁদ বলি
জোছনা এসে সরিয়ে দেয় আড়াল 
মেতে উঠি মাতনে
তুমি চন্দ্রবিন্দু পাঠাও
আমি পৌঁছে যাবো
 তোমার কলঙ্ক মাখা কপালে। 
অলংকরণ - সুধাংশু বাগ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday 16 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২
শান্তিব্রত‌ বারিক এর কবিতা -

 ∆∆
আঙুল অববাহিকা 

১. 
দেহজ কান্নার সময়লিপি
তোমাকে জানাইনি ইচ্ছে করে
তুমি একাদশ শ্রেণীর ষোড়শী মেয়ে
খুব সহজে বিশ্বাস করবে কি 
জানালার হাড়ে মনখারাপের দুঃখজল ।
বিষাদ বাগান বুকের ভেতর
তোমায় নিয়ে ধামসা মাদল
তোমার সুরে ভাদুগান !

বিজ্ঞানের ক্লাসে নিরুচ্চার বুদবুদ
একটা বাদাম একবারই ভাঙে...

২.     
ফসল তোলার কয়েক বিকেল পর
ধাতুক্ষয় নিয়ে বসে থাকে একলা মাঠ
যেকটা দিন ছিলে কাঁটা উলের সংসারে
খুব দ্রুত পড়ে যাওয়া ডিম বীজ কেশর
জমিয়ে রেখেছি আলমারীর আতর গন্ধে।

নিছক বৃষ্টির আবিষ্কার প্রণালী
খোঁপায় গুঁজে সামনে দাঁড়াও
সময়ের গহ্বরে শ্যাওলা জমে
কাটাকুটি সাঁতারে শামুক হতে
চায় কামড়ের নেশাগুলো...

৩.       
বাইরে শুধু বৃষ্টি, ভেতরে জমে বিশ্বাস 
তোমার গান অনেক দিনের চেনা নলকূপ
মেঘ তুলে রাখো, খরচ হয় খোঁড়া নালিশ
পরজন্ম তোমাকে কৃপণ করেছে নৌকায় 

দূরত্ব সৃষ্টির কায়দায় জিভের শিল্প খোঁজো
হ্রদের কাছে নিভে গেল পোড়া সেফটিপিন

রাতের মতো স্বচ্ছ ঝঞ্ঝাটে তৃপ্তি পাও
দেখা হলেই শেষ হবে রমণ ধাক্কার শোক
গায়ের রং ভুলে গিয়ে প্রতি স্নানের আগে
থালায় ঝুঁকে পড়ে সাদা লিঙ্গের ঘুঙুর...

অলংকরণ - সুধাংশু বাগ 

Friday 15 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২
সায়ন্তনী হোড়‌ এর কবিতা -

∆∆
এবং তীব্রতা

নুয়ে পড়া রৌদ্র আরো পিছিয়ে গেলে
সহজবোধ্যতা গুঁড়ো হয়ে যায়
থিকথিক করছে বালির স্রোত
তার উপর শুয়ে আছি একটা ঘুমহীন স্বপ্ন দেখবো বলে
যেখানে রেটিনার সহস্র তীব্রতায় ভেঙে যায়
স্মৃতিপটের আধার


∆∆
 ক্ষয়- প্রাপ্তি

তোমার অবয়ব মুছে ফেলার  কোনো অবসর  নেই আমার
অথচ সম্পর্কের গায়ে শুয়ে থাকা বাসি ফুলের  নকশা এঁকে চলেছি
আরো ক্ষীণ হয়ে থাকে গোলাপের চূড়া
সময় হয়ে এলে মুড়ির মতো উড়ে যায় আমাদের কথোপকথনের রেখা

মাছের শ্বাস ঘন ঘন হয়ে এলে,
সে এক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে
যেন তোমার লেখা চিঠির আসরে আমার অপেক্ষার ক্ষয় হচ্ছে

∆∆
খসে পড়া পাতার স্মৃতি

দোপাটি ফুলের পাপড়ি মতোই আলগা হয়ে আসছে সম্পর্কের সুতো
চুপ
   আরো চুপ
এখন শান্ত হয়ে বসে থাকা পেঁচার কাছে আমার উদাসীনতা র কথা বলি

এই অবেলায় মেঘের আদরে বৃষ্টি আরো কাছে আসছে
এক একটা স্মৃতি আরোহণ-পর্ব হয়ে

অলংকরণ - নিশিপদ্য‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 14 September 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -২

সব্যসাচী মজুমদার এর কবিতা -

∆∆
পড় জল…

পড় জল জলপর্ব জলেহস্মিন
পড় হস্তি হস্তির চলন চলৎশক্তি
শেখ উদ্ভিদ ভেদন ক্ষমতা ভেদ্য পর্দা
শেখ পদাধিকার প্রতিবর্ত ক্রিয়া অপরার দেহ
বোঝ দেহগন্ধ গন্ধকের খনি খনন প্রক্রিয়া
বোঝ ক্রীড়াক্ষেত্র ক্ষেত্র সমীক্ষা ইক্ষ্বাকুবংশ
দেখ বংশানুক্রমিক ক্রোমোজোম জমদগ্নি
দেখ অগ্নিভ অরণ্য দণ্ডকারণ্য আরণ্যক
শোন শ্লোকজন্ম জন্মমিথ মিথের কাহিনি
শোন অক্ষৌহিণী হীনপ্রেত প্রেতের ফুৎকার
গাও কারবালা বালার আঘাত দ্বিঘাত প্রেক্ষণ
গাও প্রেক্ষাগৃহ গৃহের হিংসা রিরংসার ভাষা
বল ভাষার কাম কামনাদেব এমতাবস্থা
বল অবস্থানভূমি ভূমির ক্ষমতা মর্ষক্ষমতা
লেখ ধর্ষগুণ গুণের সম্পাত পরীর প্রয়াণ
লেখ তোমারই হত্যা
                       করে ফেলে তোমার সন্তান…



∆∆
আমাকে দাও শুধু

আমাকে দাও শুধু রাস্তা বিস্তর 
অন্ধ মাকড়েরা যেভাবে জাল গড়ে,
আমাকে দাও তার কার্য- কৌশল
আমাকে দিও আম কাঁঠাল ভরা আলো…
হাঁটতে গিয়ে ছুঁয়ে দেখার মতো জল

এখানে অক্ষর যাত্রা করলেই
সামনে উড়ে যায় পাল্টা পরিযান
আকাশে মেরি জান,তোমারও ভাগ ছিল
এটুকু জানাবার শর্তে দিও শুধু
তোমার অনুদিত কাব্য পুস্তিকা…

অলংকরণ- সুধাংশু বাগ
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••