Friday 16 September 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৮


অপর্ণা বসু’র কবিতা-



১.
∆ কখনো লাইন পেরোই নি ∆



বাবা বলেছিল  বারণ  রইলো আমার 
কখনো লাইন পেরোস না
 মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলাম
সেই থেকে আর কোনদিন লাইন পেরোই নি

আমার স্কুল ছিল রেললাইনের ওপারে
দল বেঁধে স্কুল যেতাম
ঝাঁক ঝাঁক বন্ধু
সবাই আমায় ফেলে চলে যেত
আমি ফিরেও দেখতাম না
টুক টুক  করে সিঁড়ি ভাঙতাম
ব্রীজে চড়তাম

বাবা বলেছিল
যা মানা করলাম তা কখনও করিস না
আমি না থাকলেও কথা শুনিস
সেইথেকে  কখনও লাইন পেরোই নি

এখন  কর্মস্থলে যাই  
রোজ ট্রেন ফেল করি
সিঁড়ি ভাঙতে হাঁটু আটকে আসে
খোঁড়াতে খোঁড়াতে ব্রীজে চড়ি
সহযাত্রীরা সব আমায় ফেলে চলে যায়
আমি ব্রীজে  উঠতে হাঁফিয়ে যাই

হাঁফাতে হাঁফাতে  দেখি
লাইন চলে গেছে অনেক দূরে
বাবাও চলে গেছে অনেকদিন 
রেললাইন আমায় বাবাকে মনে পড়ায়

বাবা বলেছিল
যত কষ্টই হোক কখনও লাইন পেরোস না।


              

২.
∆ পাশের বাড়ি ∆



আমার পাশের বাড়িটা নিস্তব্ধ 
রোজ একা একা  ঝিমোয় সারাদিন

সেই বাড়িতে কারা  যেন এসেছে আজ
থাকতে কিম্বা বেড়াতে  
কল কল নাদে ভরে আছে চারিদিক
বেশ অন‍্যরকম লাগছে 
যেন  কোথাও এসেছি হাওয়াবদলে
একঘেয়েমি থেকে মুক্তি

মাঝে মাঝে ভেসে আসছে হাস‍্যরোল
কখনো উদাত্ত গলায় কোরাস
"ঝরঝর ঝরণা ঝরে রে"
একঝাক ময়না টিয়ার কিচির মিচির

হয়তো কোন সেলিব্রেশান চলছে
অথবা ফ‍্যামিলি পিকনিক
সাথে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন
পাশের বাড়িতে  আনন্দ এসেছে

অবসরগ্রস্ত আমি বসে বসে
আজ সেই আনন্দের ফোঁটা 
তারিয়ে তারিয়ে পান করছি।

 
            

৩.
∆ দূরত্ব ∆



তুমি আর আমি আজকাল 
কথায় কথায় আগুণ হয়ে উঠি
অথচ আমরা গান হতে পারিনা
গান হলে সেতার আবার
আগের মত করে বাজত
সুরে সুরে ভরে উঠত
 দৈনন্দিন সব অপ্রাপ্তি 
তোমার দুচোখে থাকতো সেই প্রশ্রয়
অকারণে হাসতে পারতাম
অবলীলায় ছুঁতে পারতাম 
আবার আকাশের দিকে চেয়ে 
আষাঢ়ের অপেক্ষা করতাম  
ঠিক আগের মত।


ছবি- নিশিপদ্ম
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

অনিরুদ্ধ সুব্রত’র কবিতা-




১.
∆ বাড়িটা আপাতত পরিত্যক্ত ∆



সফল হয়েছে, মধ্য নিশির চামচিকিরা
উড়ছে এবং ঝুলছে দেয়ালে
পছন্দ মতো বিপরীত বর্গক্ষেত্রে, খেলে
স্তব্ধ সিলিং ফ্যানকে 'ফুঁ' বলে বলে।

জানলার বাইরে কতগুলো জোনাকি
তাদের প্রশ্ন অন্য, অবান্তর ধরণের
রাত বাতির অবকাশে, মুখ্য হতে পারত
সবুজাভ ঝিকমিক অসুখের সুখে।

দুটি আরশোলা আজ বিছানায় শুয়েছে
শুয়ে শুয়ে হাসছে---'বিছানা না গড়ের মাঠ'
কিন্তু বলছে, মেঝের নিচের ফুটোতে 
দম বন্ধ হয়ে আসে তাদের, দুঃখে।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, জল ঢুকছে গর্তে
এক বিবাগী সাপ ফটকের ফোঁকর দিয়ে ঢুকল
তবু সারারাত ঘুমোতে পারল না---
পাথরের মেঝেতে নাকি একটা গন্ধ, স্যাঁতসেতে। 




২.
∆ গ্যালারি ∆



আমি দেখি, কতগুলো ছবি দেখি
পৃথিবীতে ছবির কোনো ক্ষমতা নেই, তা কিন্তু না
ছবি যখন মুখোমুখি কথা বলতে আসে, দেখি
আশ্চর্য ! সে জ্যান্ত মানুষের চেয়ে কম কিছু নয়
যুক্তি খণ্ডায়, নতুন যুক্তির শব্দবন্ধ সৃষ্টি করে
হতচকিত করে, আমাকে শাসায়
হারিয়ে ভুত করে দেয়, বিশ্বাসের খেলায়

তখন আমাকে আবার পড়াশোনা করতে
বসতে হয়, মলাট ছেঁড়া বইয়ের কাছে
পাতা গুলো ওল্টাতে হয়, পর পর
আঙুল দিয়ে বুঝতে হয়
সংখ্যা ও সমীকরণ অথবা শূন্য দর্শন
মুখস্থ করতে হয়--- যা কিছুতেই মনে থাকে না
এমন কতগুলো অনুবাদ বা অনুচ্ছেদ 

আসলে ছবি গুলো তো আকাশ থেকে পড়েনি
পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতির মুহূর্ত
তারও মধ্যে আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ ইত্যাদির সমর্থনে
যার কৌণিক অবস্থানের পিছনে
ইচ্ছে, রং, বোধ, ভাবনা, প্রয়োগ কাজ করেছিল
শিল্প তখনই সুন্দর হয়ে ওঠে, যখন তা সত্য---
আমি কি আর এমনি এমনি ছবিগুলো দেখি...




৩.
∆ ব্যস্ত ∆



স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সার সার কলকব্জায়
প্রয়োজনের নিস্ক্রমণ দেখতে দেখতে ফিরতে হয়,
বড় রাস্তার ম্যারাথনে হাততালি দিতে দিতে
বেঁকে গেছে সমস্ত গলি পথ
স্ট্রিট আলোরা হাঁটছে ততদূর, যতদূর মানুষকে
ঠিকানা বলে দেওয়া যায় 
দু'পাশের ঘর বাড়ির মিছিলে শ্লোগানেরা বিভৎস
ব্যস্ত হয়ে তুলছে মুঠো ভরা রোদ
যে সব পুরনো স্বার্থ বলেছিল--- অফিস ছুটি থাক
তারাও হাত পা ছুঁড়ছে আজ
বড় দ্রুত ছুটছে এক দূর-সমুদ্র-বাতাস আর
স্থানীয় বৃষ্টি, একটা হেস্তনেস্ত টানে
সবচেয়ে অস্পষ্ট কিছু কিছু ক্লিশে শব্দের মানে
কিছুতে খেয়াল করছে না ঝড়
মাঠে মাঠে স্বপ্ন-ব্যাপারীর গানে একটা তোলপাড়
শুরু হয়েছে মনের ময়দানে
পোশাক পাল্টে পরবর্তী নাটকের জন্যে এখন
প্রস্তুতির গতিশীল সন্ধে তৎপর
শুধু পা-খোঁড়া স্মৃতি-ভার নূব্জ ছায়াটা তখনও
একা একা আঙুলে গুনছে একটা একটা বিন্দুর 
মতো যত গুপ্তচর অন্ধকার।

ছবি- নিশিপদ্ম

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

বর্ণজিৎ বর্মন এর কবিতা-



১.
∆ যাপনের দিন গুলি ∆


রোজ একটি চিতা হানা মারে
সমস্ত অস্থিত্বের রক্ত মাংসে 
মা  কৃষ্ণপক্ষের রাত জুড়ে 
কাঁচা হলুদ , সর্ষের তেল মালিশ করে 
ক্ষত স্থান জুড়ে 

কি করে বাঁচি?
কি করে বাঁধি স্ব্প্নের ঘর?
কান্না চৈত্রেই শুকিয়ে গেছে 

অনুভূতির জানালায় উপোসী কাক 
হাহাকার হতাশার প্রাচীর বেড়ে ওঠে 

বাসনা পূর্ণিমা খোঁজে -
জ্যোৎস্না সিঙ্গিমারি নদী ঢেউয়ে ভেসে যায় 





২.
∆ রাত ∆


তারা রাজনৈতিক লোক 
অ ক বোঝে না -
আমাকে সিস্টেম শেখাতে আসে 

Phd গবেষক মাথা নিচু 
একচালা ফুটো ঘর 
যদি ভাঙে পিতার ভিটে ?

ভয়ে আর ঘুমহীন চোখ 
রাত পাহারা দেয় 




৩.
∆ বোধ ∆


সাধু শব্দ ফ্যাঁকাশে আজ।
সগর্বে ঘোষণা করে 
টাকা বিনে চাকরি নেই
কি হবে শিক্ষিত গরীব দেশ?

গ্রামের গন্ধ শরীর জুড়ে 
বর্ণমালা -এ পাপ আমাকে দিলে ?

কি করি চৈতন্য কাঁপে 
বোধ আক্রান্ত ভীষণ রোগে 

ছবি- বিপ্লব ভূঞ্যা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Thursday 1 September 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৭


অরুণ কুমার দাঁ এর কবিতা-




১.
∆ সিক্ত জমির গভীরতা ∆
     


বাসা বাঁধার কথা ভুলে গেছি -
এ তল্লাটে, এমন কোনো জমি নাই
যেখানে পোঁতা যায় শক্ত খুঁটি !

নরম মাটি, পা গেঁথে যায়
জলাভূমি ছিল হয়তো -
একটা দুর্গন্ধ ভেসে আসে ।

দু'টো কাক ছিঁড়ে খায়
মরা ইঁদুরের দেহ -
এর আগে এখানে আসেনি কেহ !

সারাজীবন একখন্ড শক্ত জমির জন্যে
শুধু ঘুরেছি
পূর্ব-পশ্চিম
উত্তর -দক্ষিণ

হাতের কঞ্চিতে মেপেছি
সিক্ত জমির গভীরতা ।



৩.
∆ প্লাবন ∆
        

আবরণ খুলে দেখ, টকটকে ক্ষত
ফুটে আছে তাঁরা, ঠিক তোমারই মত ।

নৈঃশব্দে হেঁটেছে যে দুটি পা
জোনাকির আলো ভেজা গাঁ।

গভীর তলদেশ থেকে উঠে আসে চাঁদ
আকাশে জ্যোৎস্না-প্লাবন-ভেঙেছে বাঁধ।

শিশির পতনে, অনিবার্য ঘাসের কাঁপন
সবকিছু মিলেমিশে, মহার্ঘ যাপন।



৩.
∆ গাছ বিষয়ক কাব্য ∆
        

অনেক গাছের মধ্যে
কিছু গাছ পরিচিত -
অপরিচিতও আছে কিছু  ।

কারো হাত ছুঁয়ে দেয় বৃষ্টি
বিষবৃক্ষের ছাল কারো গায়ে -
কারো শিকড়ে ঔষধি ।

গাছ বিষয়ক একটি কাব্য
লেখা হয় -
গাছেরই হৃৎপিণ্ডে !

ছবি:- নিশিপদ্ম
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

মানস চক্রবর্তী’র কবিতা-


১.
∆ অমলাদি ∆


#
বর্ষা এলো 
বৃষ্টিস্নাত হল কদম 
চিলেকোঠার ছাদে এলোকেশী হল অমলাদি 
নোলক পরল, দুল পরল, গলায় দিল হার 
ঘন নীল আঁচল উড়ল হাওয়ায় 
ভেজা চুলে আবৃত হল মুখ 
বৃষ্টি থৈ থৈ হল বুক 
অমলাদি নাচল, গান গাইল 
আর আকাশের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করল, 
শিবম্, সুন্দরম্, আনন্দম্ | 
               
                     
#
অমলাদির একটি চাপা দুঃখ ছিল | অমলাদির ডাইরিতে দেখেছিলাম কয়েকটি লাইন - 
    আমি অনেকদিন দেখিনি গঙ্গা 
     পদ্মের মাথায় ভ্রমরের খেলা 
       দীঘিটির ধারে অবেলা | 
আমার অবেলাকে অবহেলা করে চলে গেলো | 
এখন আমার দিন অন্যদিন, শুধু সম্বলহীন | 

                         
#
অমলাদি হিন্দু | হিন্দু মতেই সৎকার হয়েছিল | তবুও অমলাদি কবর ভালোবাসত | আমি বলতাম, কেনো গো ? বলত, কবরের পাশে বসলে জীবন কী ঠিক ঠিক বুঝতে পারা যায় | মানুষ মোহহীন হয় | আনৃশংস্য হয় | ক্রোধ মরে যায় |  অন্তরে জাগে ঈশ্বরীয় ভাষা | আরো বলত, 
যে রাতে কবরের উপর ঝরবে জ্যোৎস্না 
ঝরবে শিউলি, শিশির 
সে রাতে মরণ থেকে জেগে উঠবে আর একটি আমি |
ছবি:- নিশিপদ্ম


••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সুব্রত দেবনাথ এর কবিতা-


১.
∆ শর্ত ∆
 

একাকীত্বের প্রাচীন শর্ত নিঃসঙ্গতা ।
তাই সঙ্গ খুঁজি 
প্রেমের 
বন্ধুত্বের
আত্মীয়তার 
নিজেকে জাহির করি তাদের উপযুক্ত হবার,

সম্পর্কের ভেতরে গিয়ে দেখি 
সেখানেও শর্তের এক লম্বা পরচি
সে সমস্ত প্যারামিটারে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারি না, 

আবার ফিরে আসি সটান 
অন্ধকার ঘরে
আবার একা, আবার একাকীত্ব আমাকে আঁকড়ে ধরে ।




২.
∆ আত্মবিলাপ ∆


ঝিনুকের মাঝে খুঁজে পাই মুক্তাহীন বেদনা
বারুদের স্তূপ ভিজে আছে অশ্রু জলে
নিজেকে হারাতে শুরু করেছি সমুদ্র সৈকতে 
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পায়ের পাতা 
মসৃণ রাস্তায় হোঁচট খায় মাইল ফলকে
ঘরের দরজা খোলা রেখে বাইরে তালা ঝুলিয়েছি,
চোর কে বলেছি খেয়াল রাখতে

নিজের হিংস্র সত্তা মাঝে মাঝে উৎপাত করে
অভুক্ত শিকারীর মতো ।




৩.
∆ কবর ∆


ধিরে ধিরে নিজের কবর সাজাই,
ঘুনে খাওয়া কাঠের আসবাব
আর পোড়া ইটের টুকরো দিয়ে 
                                    বানাই ঘর
ঘরের ভেতরে কবর, কবরের ভেতর 
একটি কালচিত্র 
নিরাপদ আশ্রয় খুঁজি বাঁচার তাগিদে 
একটি সাজানো গোছানো ব্যালকনি 
সকালে পূবের সূর্য 
বিকেলে দক্ষিণের বাতাস
উপভোগ করতে চাই
আরাম কেদারায় বসে সুরুত সুরুত
                                   চায়ের টান,
বাঁ হাতে সিগারেটের ছাই 

ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেছি একদিন
তুলসী ও ভগবত্ নিয়ে 
অপরিণত কবরের কাছে।

 ছবি:- নিশিপদ্ম

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



Monday 15 August 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব -৬




অঞ্জন দাস এর কবিতা -



১.
∆ রাধে বিদ্রোহ ∆


সে আলো কৃষ্ণ মনি বৃষ্টি আমার 
তোমাকে ধুয়েছি বাঁশি সুর খুঁজি মনে
একান্ত গোপনে খুঁজি সর্বস্ব তোমার 
আমি চোর ভরাডুবি যমুনা নয়নে 

কাননে এসেছি প্রিয় ভুলে যাই পথ
জীবনের মায়ারথ গ্রাস করে মোহ
ডানা দিও শিষ দিও দিও  জ্ঞান রথ
ধুলো পাহাড়ের নিচে রাধে বিদ্রোহ 



২.
একটি পুকুর পুকুর ছবি 


১.
দু এক ফোঁটা গোলাপ গড়াতে এসে
সারা বাগান যখন বুকের দিকে এগুতে থাকে
এক কোটি চোখের অর্জন দিও আচার্য অন্ধকার 

২.
মীরাগাঁয়ে পাতার ঈশ্বরী পা 
খুলে রাখে চটি
হাত নামে পায়ের ভিতর
তুলে নেয় নেমতন্য কার্ড 
মৌচাক জেগে থাক মনে
শ্রমিক বাতাসে ছিল শেকড়ের সমস্ত তরুণী 

সদরে তেতুল কুঁড়ি- আচমকা বৃষ্টি হলেই 
 ঘুমভাঙে ত্রিপল ভূবনে - ঘাম ভর্তি পাঁচু মন্দির 
চেয়ে দেখে ওপাড়ার হুইস্কি রঙের 

পর পর দাপট বাতাসে দেব, দারুচেনা 
ও বাড়ির পাতলা হিঁচড়ে পাকা যুবকের বাড়ি
বারুদ শহরে ওরা পালিয়ে মরেছে 
 

৩.
কাঁটা পঞ্চায়েত সেলাই সমিতির সমস্ত দিদিরা
আমি
গতমাসে টাটকা খরায় শুকিয়েছি সমস্ত মজুরি 
এ মাসে একটা ও প্রেমের কবিতা লেখা গেল না
সেলাই হলনা ডাঁই ফল্স বসাবার রকমারি মেঘডুরে বাড়ি
সারা বাগানের জল চোরা ঘোগে চোখের পুকুরে এলো
আঁকে জলহাঁস  বুকের পরপর কিছু গোল ঢেউ
ভাঙা তছনছ কিছু পড়শী গানের অষ্ট আঙ্গিক

অলংকরণ- নীশিপদ্ম
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

বিপ্লব ভূঞ্যা’র কবিতা-


১.
∆ আলিঙ্গন প্লেট ∆


বন্ধ চোখের ওপারে অবশিষ্ট
সময়কে বালি বলি
বালি তো বৃহৎ রূপান্তর
পর্বত ভেঙে এই খন্ডাকার সময়
রূপান্তর তবু আরোহণই বলি
বালির পাশে আরোহণ তবু মানায়
ফুলের পাশে খালি আলিঙ্গন

আমাকে টুকরো করো আলিঙ্গন প্লেটে 
তুলে দাও - এসময়....




২.

∆ অপেক্ষা সাজানো ইট ∆


তুমিও এসো আমার ইটের অপেক্ষা সাজানো
 এ ঘরে
দেখে যাও পুট্টির প্রলেপ, রঙের টান
তারপর এসে বসো আমার ভেতর
আমার ভেতর ঘরে প্রদীপ জ্বেলেছি
নিভে যায় ভয়ের বন্ধ দরজা
আমার ওঘরের চাবিতে হারিয়েছেন তিনি
ভোরের সত্যি স্বপ্নে দেখি ওরা শ্মশানে
পথ সরিয়ে তুলছে বালি পাথরে
ওদের কি  তবে সব পথ মেরামত
শেষ হলো এত দিনে....


৩.
∆ গোলাপ হরণ ∆


এখানে উঠে এসে দেখো
কেমন কেটেছে পথ হরিণ
             তোমার সবুজের দিকে
উঠে এসে দেখো বেঁকেছে পথ
হরিণীর দিকে জলজ চোখ
আরও একটু উপরে এসে দেখো
আমার নায়াগ্রা জল ভাত

বেচারা গোলাপ অপহরণের সমার্থক
                       কিছু পাতাকে শেখালো...



অলংকরণ- নীশিপদ্ম

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


মেহবুব গায়েন এর কবিতা-



১.
∆ সানন্দ দাঁড়িয়ে ∆


আমার জীবন বন্ধু সাইকেল
কাঁথি শহরের হ্যাজাক পথ দেখিয়ে বাড়ি ফেরাতে
সেদিনও কলেজ গেটে 
হলুদ হ্যান্ডলুম শাড়ি, খোঁপায় কৃষ্ণ চূড়া ফুল, চোখের পাড়ে ভাঁজকরা কাজল রঙ বেয়ে ঠোঁটের এককোনে তিলের মাধকুরী গন্ধ গন্তব্যে নয়, আমার সামনে দাঁড়ালো পছন্দের দোয়াত হাতে, ধরার আগে বেরিয়ে গেলাম সীমা রেখা পেরিয়ে বুড়ির দোকান,

যেখানে আমার সানন্দ দাঁড়িয়ে আছে....



২.
∆ শব্দ হকারি ∆


যুদ্ধে থেমে যেতে হয়
কথার মধ্যে কোন ফ্যাকাল্টি পড়ে নেই
শুধু মারাডোনা আকাশ,

অপু- অঞ্জনের সানন্দে আমার সাইকেল পেরিয়ে গেছে
বাংলাদেশ বারান্দা...
হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্টে রাধাচূড়াও বন্ধু
তুমি বললে সাজানো চুলের ঠুমরী,
পথের আয়নায় উড়ে যাচ্ছে 
ঝুলে থাকা মুখের ব্যারিকেড...
শুধুই শব্দ হকারি-
আমাদের আলো সার্কাসে...


৩.
∆ কূর্পর ওড়া সময় ∆


আমাকে পোড়াও মীন মোম !

মাছ কি পুরুষ!
 নাকি আমি !
জল ঝাপটায় ভেঙে যাওয়া ঘুম
স্বপ্ন নাবালিকা,
সেও আগুন সুতোয় পুড়তে চায় 
 
সাদা শাড়ির ইস্ত্রিতে
পা রঙিন হলে,

 কর্পুর ওড়াও সময় আমাকে...

অলংকরণ- নীশিপদ্ম

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Tuesday 2 August 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব -৫


ওয়াহিদার হোসেন এর কবিতা -



১.
∆ কবিতা লুকিয়ে রাখা হচ্ছে ∆



কবিতাগুলোকে খাপে রাখা যাচ্ছে না

এত ধার,দুপাশেই কাটবে এখন রোদে ঝড়ে 

এখানে ওখানে হাবিবের মা চেঁচিয়ে উঠবে 
কোঠে বেরালো রে সারাদিন এই ভেবে 

ময়ানে রাখা যাচ্ছে না,চোখ থেকে ঘুম উড়ে যাচ্ছে এমন 

অক্ষরগুলো রাখব তবে কাসার থালায় শব্দ হবে
শাড়ির লাল পাড়ে ঢেউ লাগবে কুয়োতলায় 
পিউকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি দশবছর আগের
কুয়োতলায় 
যেভাবে জল তুলে আনত মা 

ফজরের আগে আগেই লুকিয়ে ফেলা দরকার 
এই অস্ত্র 

এই নিস্পাপ আগুন রাখা যায়না 
জোনাকির মতো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে 
আব্বা ভাইয়ার কবর জুড়ে বিষাদ গাথায় 

তবে ভোর হচ্ছে,প্রতিবাদ লুকিয়ে ফেলেছি 
বুকের গহীন অন্ধকারে 
অস্ত্র বাক্য অসি মসি সব 

সব এই প্রায়ান্ধকার জঙ্গলের নিচে 
যোনির গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে 

এইসব স্বপ্নের কবিতা 
এইসব পাথরের ঢিল রাষ্ট্রের থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে 

চুপে চুপে কুয়াশার ধোঁয়ায় দাফন দফতর করছি......




২.
∆ পরমাত্মীয় ∆


গলে পড়ছে রোদছায়া
আসমান থেকে নেমে আসছে 

ফোঁটা বৃষ্টিও 

দূরে বহুদূরে 

মেঘ ঝরে পড়ছে
মেঘের সঙ্গে 

অবুঝ পাপড়ির আঘাত
মেয়েমানুষের আত্মীয়তা।



অলংকরণ- শৌভিক পাল

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সুরজিৎ বেরা’র কবিতা-


১.
∆ প্রণাম ∆



আড়ি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে 
মা কোলে তুলে নেয়...

তুলসী তলায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে
নুইয়ে পড়ি মায়ের সামনে;
ঝুমকো জবা নুইয়ে পড়ে যেমন।

কপাল আমার মাটি ছোঁয় 
মা কোলে তুলে নেয়...




২.
∆ আয়ু ∆


বাবা, এবার তোমার একটা 
নতুন মোবাইল প্রয়োজন। 
বাবা হাঁফ ছেড়ে বলে -
ঘষেমেজে যতদিন হয়।

সারাদিন কাজের শেষে 
স্নানের সময় বাবা সাবান মাখে
দেহের ময়লা জলে সহিত হয়; 
ক্লান্তির রক্তঘাম ক্ষয়।
বাবা হাঁফ ছেড়ে বলে - 
ঘষেমেজে যতদিন হয়!



৩.
 ∆ তুমি ∆


ছুঁয়ে যাও - 
গা ভেজা জলময়ূরীর মতন করে,
শাপলা ফুলের অভিমান ভেঙ্গে চুরে।
ফিরে তাকাই - 
শ্রমহীন ক্লান্ত চোখে যত্ন ভরে,
গতিহীন নদীর মাত্রাছাড়া অক্ষর জুড়ে।

আকাশ আবির রাঙায় উষ্ণ বিকেলে
এ কবিতা জানি একটু সেকেলে।
যদি বলো পাল্টে যাবে এ ঘরানা
শুধু তুমি একবার একবার ফেরোনা।।


ছবি- অর্ণব জানা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
নবীন সরকার এর কবিতা-



১.

∆ দ্বিতীয় পদক্ষেেপ ∆


তোমাকে আমার আলোয় দেখছি
তোমাকে দেখেছি নিপুণ আবছায়ায় নিটোল হতে প্রতিদিন
ছাপা অক্ষরে খাঁজকাটা নকসায়
জোঁনাকিরা এলোমেলো হয়ে যায়
আমি কোটি জোঁনাকের কবরে আঁধার নামিয়ে এলাম

তোমাকে আনবো বলে, ঝিকিমিক আলো এল ই ডি
প্রেমিকের মতো নির্জন গলি আবেগ
সেলফোনগুলো আলো করে রাখে মুখ
তরঙ্গ উঠে তরঙ্গে ডুবে যায়

তোমাকে ডাকার বেদুইন আয়োজনে
কিছু যোগাযোগ ব্লক্ হল গত রাতে
তোমাকে জড়িয়ে পাগলামি স্বরলিপি
স্তব্ধতা ভেঁঙে হরবোলা হয়ে ওঠে

নিপুণ আবেগে ভেসে থাকে আচরণ
গভীরতা খোঁজে দ্বিতীয় পদক্ষেপ....




২.
∆ ইচ্ছেকুসুম ∆



যেখানে মৃত‍্যু যন্ত্রণায় পা ডুবিয়ে বসে থাকি তোর আশায়
মাথায় বিলি কেটেদেয় হাইটেনশন শব্দমালা
দাঁতের গোঁড়ায় শিরশিরিয়ে উঠতে থাকে অসহ‍্য অবহেলা
সেইখানে দু'দন্ড ঘুমোতে চাওয়া তোর নরমে

তোর আঙুলের ভাঁজে অস্বাভাবিক সব বিষাদ কোষ
ভবিশ‍্য নিয়ে অভ্রভেদী কৌতুহলী আলোচনার গোঁড়ায়
রুট-রড্ হলে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলিস
আমি মন পেতেছি বহু প্রজন্ম আগে-
তোর যন্ত্রণা আগলাবো বলে দু'হাত ভরে

যে রুগনো পায়ে ভর করে আকাশকুসুম
ভেবে চলি, গেঁথে চলি অসহ‍্য ফুলমালা
সেসব অলিক ছোটোগল্পের তলপেটে পোঁতা
আছে দু'চারটে মেহগনি বীজ

তুই ওম দিয়ে বড় করিস একদিন
সেই সকল ইচ্ছেকুসুম মহিরুহ




৩.
∆ একা সাপ আর আমি ∆



নিচু গলা ব‍্যবহার করে সুরঙ্গে ঢুকেপড়ি
তারপর কাশবন দূরে পদ্মডোবা
জড়িয়ে থাকে ডোরাকাটা শীত

উত্তুরে মেঘ ডাগর চোখে ফ‍্যানটাসি ফেরি করে
আলোর ঘোরে বুঁদ হয়েগেছি
সাঁতরে এগনো বহুদূর পথ

মৃত চত্তরে হাওয়া দেয় ঝাউপাতা
বালিয়াড়ি চাপা গন্ধেরা ঘুম ছিঁড়ে খায়
তবু অঙ্কুর ঊর্ধ্বগামী স্রোতে
গা ভাসিয়ে জীবন দোলায় আজও




ছবি- মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সংগ্রহে করার জন্য যোগাযোগ করুন- 9679655286(whatapps)

Wednesday 27 July 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৪


শতদল মিত্র’র কবিতা-

১.
∆ আষাঢ় ১৪২৯ ∆



আষাঢ়ে আশ্বিন যদি ভাসে
সাদা মেঘগুলো ঘুরে ঘুরে কাঁদে যদি
ছাদের আলসেয় প্রাণ ফাটিয়ে
হেসেছে যে বটচারা এতদিন
আজ ম্রিয়মান হলে আর
মৃত্তিকা যদি পাথর পারা
সে প্রত্ন প্রস্তরে 
দেখো পাঁজর জ্বালিয়ে হোমাগ্নি জ্বেলেছি তবে।
আমিই ঋত্বিক, হোতাও আমি
মন্ত্রে উচ্চারণ আঁকি—
      ওম! স্বাহা!
      হে অগ্নি! আমাকে খাও!
জলহীন জলাশয় যদি খায় সকল পঙ্কজ আজ 
আষাঢ় বোধনে তবে
উপড়ে আনি নিজের আত্মা!
এসো হে সজল মেঘ—
আহুতি শেষে বৃষ্টির জলে
পবিত্র যজ্ঞাগ্নি পুণ্যে যেন জাগে !

সে পুণ্যাহে, এই দেখো ছাই ভেদ করে
জন্ম নিই নতুন উদ্ভিদ আমি
                  জীবনের সংরাগে!


২.
∆ খোঁজ ∆


 
ধুলো উড়িয়ে হাঁটছি একা 
হাঁটছি হারিয়ে যাব বলে
হাঁটতে হাঁটতে একদিন বুঝলাম
আমি খুন হয়ে গেছি
তবুও হাঁটছি...
ওরা আমাকে খুঁজল
পথে
নদীর নিরালা ঘাটে
গাছের ছায়ায়
গোধূলির খুনখারাপি মায়ায়
রক্তের আঁশটে গন্ধে
       নিহিত লবণে তার
জনহীন শ্মশানে, কবরে
এমন কি আমার একলা কবিতায়—
কোথ্থাও খুঁজে না পেয়ে
হাল ছেড়ে দিল ওরা...
সেই থেকে খুন হয়ে যাওয়া আমি
হাঁটছি একা, ধুলো উড়িয়ে, ধুলো উড়িয়ে
আর খুঁজছি সে খুনিকে—
              হয়তো নিজেকেই!

বহু দূরে কাজলরঙা মাঠে তখন
          জেগে উঠেছিল হরপ্পা, সান্নাটা ভেঙে!



৩.
∆ প্রেম ∆


ভালো আছি ভালোবাসাহীন !
বেদনাও নেই
আনন্দও নেই কোনো |
শুধছি শুধু জন্মের ঋণ !
ভালোবাসি--
এ কথাটি দু ঠোঁটে আর
আঁকবো না কক্ষনো ! 


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

তুষারকান্তি রায় এর লেখা-



১.
∆ জলদূত ∆


আকাশে মেঘদূত বাতাসে রিমঝিম 
নাগাড়ে ঝরঝর বর্ষাপূর্তি 
ঝরছে প্রিয়গান কবিতা থইথই 
খিড়কি খোলাপাতা ভরসা ফুর্তি 

উড়ছে দিনরাত চলছে কথকতা 
মেঘের মল্লার গাছের জলসায় 
মুছেও মোছে না যে শ্রাবণে পোড়া চোখ 
শব্দ উড়ে বসে শব্দহীনতায় 

পায়ের পাতা জলে দাঁড়িয়ে বুড়ো বট 
একলা চেনা পাখি বিষাদে নির্জন 
স্মৃতির তারে ভেজে পাগল কাটাঘুড়ি 
মরমি স্বরলিপি পুরনো গুঞ্জন 

            

২.   
∆ জলছবি ∆


একটু একটু করে এগিয়ে  আসছে বৃষ্টির দিন 
হাত বাড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে 
গল্পের গুজব  ;  আর 
মেঘে মেঘে ছেয়ে যাওয়া  অবাধ‍্য জলধারা 
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ছুটে চলেছে 
হিতে - বিপরীতে  
ভেঙে যাচ্ছে পার না ভাঙার প্রতিশ্রুতি 

মন্হর গতিতে যমুনা পেরিয়ে গেল বৃষ্টির নামতা 

           

৩.
∆ মনবাদল ∆


ঝাঁকড়া চুলের কমবয়সী মেঘ 
মাঠ পেরিয়ে আলতো ডানা মেলে 
মাথার উপর আকাশ হয়ে গেলি 
নকশা তুলে বাড়ালি উদ্বেগ 

সন্ধ্যা হঠাৎ টুপটিপটাপ জল 
চমক দমক গায়েতে বিদ‍্যুত 
কাছে দূরের গন্ধ ভেজা  হাওয়া 
মেঘ চরানো জলযাপনের ছল 

আচমকা তুই উথালপাতাল নীল 
থইথই সুর খেলার বারান্দায় 
ঝামুর ঝুমুর নামিয়ে বিরামহীন 
দিনরাতদিন লিখিস জলমিছিল 

আসলে তুই ঘুমের ভিতর ঘুম 
পাখির খেলা খেলতে শেখা মন 
তোকে ছোঁয়ার ইচ্ছে নিয়ে বুকে 
জানলা খুলে দাঁড়ালো নি:ঝুম 

ছবি- মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


ঈশিতা পাল এর কবিতা-



∆ হাইকু ১ ∆


আকাশজুড়ে
সঘন কালো মেঘ,
বৃষ্টি নামছে।


∆ হাইকু ২ ∆


একলা ঘর,
সঙ্গী সায়ানাইড-
কবির মৃত্যু।


∆ হাইকু ৩ ∆


মনকেমন,
এমন বর্ষাদিনে
তুমি কোথায়?



ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday 21 July 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৩

বদরুজ্জামান আলমগীর এর কবিতা-


১.
∆ ন হন্যতে হন্যমানে ∆



কৈ মাছ চাষাভুষা লোক- খানদানির কোন ব্যাপারই নেই তার মধ্যে: শক্তপোক্ত শরীর- পেটানো কাঠামো, গায়গতরে জেল্লার নামগন্ধ নেই, পুরো চামড়া খসখসে, সারা গায়ে কালশিটে দাগ, ঘষায়-বসায় রুক্ষসুক্ষ রুখ; অন্য পাড়ে মান্যবর ইলিশের ইস্ত্রিকরা মোলায়েম দেহবল্লরী, রীতিমত সুগন্ধিমাখা সাহেবসুবা লমলমা ইংরাজের বাচ্চা! অল্পেই তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন, সল্পেই গা ছেড়ে দেন।

কৈ মাছ কামলা কামিন নামহীন গোত্রহীন প্রান্তিক অন্ত্যজ  মানুষ- ডৌল নকশার ধার ধারে না, বর্ষার প্রথম নিনাদে ইলিশ যখন পারিষদবেষ্টিত ব্যূহের অন্তরালে ভীত,পাগলপারা কৈ মাছ সঙ্গীর খোঁজে কানকো বেয়ে উজানের দিকে ছোটে: সঙ্গীর বদলে তার জন্য উজানে অপেক্ষা করে কোঁচের তীক্ষ্ণ ফলা, কোঁচের ফলাকে কৈ মাছ ভাবে শ্রাবণ দিনের প্রথম কদমফুল!

কৈ মাছ নিজেই নিজের পক্ষ ও প্রতিপক্ষে হাজির, নিজেকে আহত করে, আর শুশ্রূষায় ছটফটানি বাড়ায়, বাতাসের সঙ্গে আয়ুর হিস্যার দেনদরবারে নিদারুণ  তৎপর, নিজেই নিজের কবর খনন করে, কানকোর রক্তে তিলক পরে নিজের মৃতদেহ সজ্জিত করে তোলে!

আগামী বর্ষায় সে আবার অন্তর্গত উল্লাসে প্রেম ও মৃত্যুর অঙ্গুরি পরিতে উজান পন্থে আসিবে- বাদল দিনের প্রথম কদমফুল ফুটিলে আসিবে, না ফুটিলেও আসিবে- ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে!



২.
∆ বিল হই ∆



তারা খসে নিঃশ্বাসে নাকফুলে নথে,
ভুলে বসে তনুমূলে চেনাশোনা পথে।

হাওয়াগুলি বাড়ি দেয় জানালার শিকে,
নদীও পাশ ফেরে খোলে কোনদিকে!

চখাচখী মঞ্জিলা ধ্যানে বসে ছোটার,
হাতে চুলে অনল আর নিরালা কুঠার।

কৃষিকাজে দুধঘরে পাতা পল্লব ভাসে,
লেবু বনে নিশিপাওয়া প্রতি প্রত্যুষে।

তুমি আমি বিল হই তেলিভিডা মোড়ে,
কে তোলে ফুল গো আগুনের পুরে!
 
বুক পাতি চৌচির সাতবাড়ি ঘাটে,
ডিঙা যদি ভিড়ে আশা নিলামের হাটে।

দেশে দেশে মনকড়া জামের কুঁড়ি,
ঘুম মাগি নির্ঘুম পাথর আর নুড়ি!





৩.
∆ কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি ∆



কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি
মেঘের পরে মেঘের শরণার্থী শিবির।
কারণ ছাড়াই শুনতে থাকি লাউনের বিল
জলি ধানের কোমর জড়িয়ে হাওয়ার ব্যাকুলতা
শুনতে থাকি।

অর্ঘ্য সেনের গলায় বসে জানলার বাইরে
দুয়ারের থেকে দূরে দিগন্তের সিথানে জলমগ্ন কথা।

নীলুফার ইয়াসমীনের কন্ঠে খয়েরি দেয়ালের বাইরে
ঝিরঝিরে নামে মেধাবী বর্ষার জল;
দেবব্রত বিশ্বাসের আহবানে আছড়ে পড়ে
রুয়াদরের বিল।
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরের নকশি কাঁথায়
ফুটে ওঠে অন্তঃসলিলা তারা-
নমিত ধুলিপড়া তুলসি পাতা।

তাদের গানের নিচে  আমি একা শুয়ে থাকি
জলমগ্ন পাথর- শ্যাওলা জলে ধুয়ে যায়
অনাগত জন্মের করতল।

মেঘ ঘন হয়ে আসে নিমজ্জনের ঘোরে-
কোন জানালার শিকে মাথা হেলায়ে দাঁড়িয়ে আছো আমার সিজোফ্রেনিক বোন;
পাথরের সঙ্গে শুয়ে থাকো কেন ও আমার ভাই!

ডুমুর পাতার এতো অন্তরাল, এতোটা নিভৃতি  কম্পনের সাথে মিলিয়ে যাও কোথায় জননী আমার!
স্মৃতিডোরের ওই পাশে ধরো ভাগ করে নিই
মেঘেদের জমে ওঠা।

ব্যথা জমিয়াছে- ছায়া ঘনাইছে,
কোথাও এমন ঘনাইছে বুঝি!


ছবি- অর্ণব জানা

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

দীপক বেরা’র কবিতা-


১.     
∆ ভ্রমণ ∆


একটা অতৃপ্তি আমাকে ছুটিয়ে মারে
ছুটছি মানে এই নয় যে, রাস্তার শেষে গন্তব্য
ভুল পথে ছুটে ছুটে রাস্তা বেড়ে চলে শুধু
পায়ের তলায় ক্লান্ত ঘোড়ার খুরের আওয়াজ 
পেছনের দূরত্ব কমিয়ে অবিরাম ছুটে চলা 
সময় গড়িয়ে চলে, বয়স বাড়ে..
ছুঁয়ে দেখা হয় না জীবনের মহার্ঘ অর্জন কিছু
মানুষের মতো অবয়বগুলো ক্রমে ফিকে হয়ে আসে
বিবর্ণ শরীরে এখন পোকাদের গুঢ় জটিলতা 
অসমাপ্ত পথের পাশে, শূন্য পৃথিবীর নিচে
শুয়ে থাকে নিথর, এক ভ্রমণপিপাসু কঙ্কাল!




২. 
∆ অন্ধকারের কারিগরি ∆


আস্তিনের নিচে আধশোয়া গণিতের ভ্রূণ 
জ্যামিতির স্থিরচিত্রে তখনো লেগে রক্তছিটে
তদন্ত উৎসবে নামবে মস্ত গোয়েন্দাগিরি দল
এবার একে একে কত গল্প গাঁথা হবে
গোধূলির ভণিতাচিহ্নের পাশে, 
ঘাতকেরা সভ্যতার ফিরিস্তি শোনায়—
কতটা রক্তপাত হলে, মৃত্যুও শিল্প হতে পারে! 

কৌশলের ক্রমাগত বিস্ফোরণে উড়ে যায় প্রাণকণা
ইচ্ছেফুলের ছোট ছোট গন্ধ উবে যায়.. 
গড়ে ওঠে অন্ধকারের কারিগরি, কৃৎকৌশল! 



৩.
∆ মন ∆



মালী রোজ ফুল তোলে, মালা গাঁথে
অথচ জানে না সে, তার হাতের স্পর্শের 
এত যে নিত্য ফুল, চলে যায় কোথায়? 
কোন্ উৎসবে, কোন্ প্রয়োজনে 
মিশে যায় কার উৎসর্গে, কোন্ নিবেদনে?
নিত্য কাজের ছলে দেখে নি চোখ তুলে 
কখনো কোনোদিন ফুলের রূপ-সৌন্দর্য 
বিহ্বল হয় নি, কোনো এক মুহূর্তের তরে! 

অপরূপ লাবণ্যবিভায় দিনান্তে রেখে যায় ফুল 
তার নৈঃশব্দ্যলিপি, মর্মমূলে গেঁথে রাখে শোক 
মন ছাড়া স্বপ্ন নেই, স্মৃতি নেই.. 
লক্ষ্মীপ্যাঁচা সারারাত জেগে বসেছিল পাঁচিলে
গভীর নিদ্রাশেষে—
ভোরের আলোয় কোনো চিহ্ন নেই তার..!


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সোমনাথ সাহা’র কবিতা-


১.

∆ অন্ধনির্জনতা ∆


"There are more things in heaven and earth than are dreamt of in your philosophy."
                           Hamlet : Shakespeare


অন্ধনির্জনতা থেকে একটু এগিয়ে যাও দেখবে একটি লোক ঢেউয়ের মতন আকুল হয়ে বাঁচার আশায় দাঁড়িয়ে আছে।
এখন আর একটু এগিয়ে যাও,
দেখবে ওটা আসলে লোক নয়, গাছ।
এইবার তুমি দৃষ্টিগুলোকে তীরের ফলার মতন ছুঁড়ে দিতেই দেখবে ও আসলে গাছ নয়, নদী!
তুমি দেখতে না পারার ব্যর্থতা দিয়ে প্রশ্ন করবে,
তা আবার হয় নাকি! গাছ কখনও নদী হয় ?
তুমি যুক্তি দেখাবে,  পৃথিবীর লুপ্ত ইতিহাস থেকে তর্ক তুলবে আঙুল নাচিয়ে, লজিকের বই খুলে পাতার পর পাতা উল্টাবে।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমার অন্ধ-মহাকালে যে বিষণ্ণতা জমে আছে তা দিয়ে আমি বোঝাবো
কীভাবে একটি লোক একদিন গাছ হয়ে নদীর মতন ভেসে যায়।
গাছের ভিতরে কোনো মেঘ থাকেনা। জানো ?
থাকে শুধু সাদা-কালো বিশ্বাসের বৃষ্টিধারা।
জীবনের সকল মৌনতা সিঁড়িভাঙা জলে ভাসিয়ে দিতে হয় নদী হওয়ার আগে।
কারণ, ঈশ্বর বইতে প্রদীপের সরলতা লাগে।
তুমি ভাবছো। ভাবছো, কীভাবে এতসব জানলাম ?
কারণ, আমিই তোমার বুকের পাশে বসে থাকা প্রথম পুরুষ।



২.

∆ মৃত্যুহীন প্রাণ ∆



"কবিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় রাইফেলের নিচে

তারপর তার কফিন বাক্সের ওপর খোদাই করে দেওয়া হয়- এটা দেশদ্রোহীর লাশ

                     একে স্পর্শ করোনা"

                                                   -প্রবীর আচার্য্য


যে ঘরে আগুন লাগে তাতে বিষয় পোড়ে;

 মানুষও পোড়ে কখনো কখনো।

আবার কখনো ছেলের চিতায় বাবাও পোড়ে নীরবে।

প্রশাসন আসে সহানুভূতির ঘন্টা বাজিয়ে।

তখন এমন এক ঝড় ওঠে যার ভিতরে বাতাস থাকেনা।

আঁধারের পেটে জ্বলতে থাকা ক্ষুধার আগুন ইতিহাসকে ডেকে আনে।

আর ইতিহাস আসে কার্তুজ পাল্টাতে।

কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আগুন লাগলে?

পোড়ে দেশ,

পোড়ে সভ্যতা,

পোড়ে সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি।

কেউ আসেনা প্রতিবাদের ঘন্টা বাজিয়ে।

পুড়তে পুড়তে বদলে যায় মানুষ।

পুড়তে পুড়তে বদলে যায় কুতুবমিনার-তাজমহল-ধর্ম-শিক্ষা-আইন-আদালত।

সব পোড়ারই গন্ধ ভাসে বাতাসে।

এই যেমন দুধ পুড়লে দুধের,

ভাত পুড়লে ভাতের,

প্রাণ পুড়লে প্রাণের।

তবে, ইতিহাস পুড়লে কোনো গন্ধ ভাসেনা বাতাসে।

এই ভাবেই হারিয়ে যায় বহু যুবকের ঘুম, এই ভাবে হারিয়ে যায় বহু যুবতীর লাশ।



অলংকরণ- মেহবুব গায়েন


•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••


Saturday 16 July 2022

কবিতা

টুপ বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-২

  



তৈমুর খান এর কবিতা-


১.
∆ সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে ∆


সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে 
আমাদের ছোট ছোট রাস্তায় 
অন্ধকার চলাফেরা করে 
হাত ধরাধরি মেঘ নামে 
ফিসফাস কথাদের বেশ আনাগোনা 
তর্জন গর্জন দেখে আমরা ঘরে ফিরি 
পতাকা ওড়ে দেখি সব মোড়ে মোড়ে 

কাদের পতাকা এত  ? 
সব পথ রাস্তা হয়ে গেলে 
এরকম পতাকা ওড়ে ? 
মহল্লা মহল্লা জুড়ে এরকম গলি হয়  ? 
মানুষেরাও পাল্টে যায় অচেনা মানুষে ? 

ঘরে ফিরে আসি —
সারারাত চাঁদ নয় , মৃত মায়ের মুখ মনে পড়ে  ! 



            
২.
∆ যদি ছুঁতে পারো ∆



আমি দৈর্ঘ্যে নেই , প্রস্থে নেই 
শূন্য অবতলে কোথাও নেই 
অথচ আমার ভাষা ব্যাপ্ত চরাচরে 
     শব্দ ও স্বপ্নের তালিকায় 
     বাঁচা ও মরার নির্বাহী ক্রিয়ায় 
     ছলকে ওঠে গন্ধে ধূপে 

    তুমি এসে ছুঁয়ে দাও 
    যদি ছুঁতে পারো 
   যদি এ নিঃসঙ্গতার বেড়া থেকে 
  আমাকে বের করে দাও.... 

     ইহজাগতিক পথে 
     জয় ঘোষণার কাছে 
     কারা কারা গেল? 
আমি শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাব 
ওই তো জবাগাছ ! 
কত জবাফুল ফুটে আছে 
 সবাই ডাকছে আমাকে ... 
তুমি ছোঁও 
  একটিবার অন্তত ছুঁয়ে দাও  ! 



 
৩.
∆ আমরা হেমন্তের দিকে যাব ∆



ব্যস্ততায় দুলছে পটভূমি 
কোথাও সুচারু সদ্গতি 
দেখিনি আজও 
         নরম স্নেহের পলি রেখে 
         কবে ঢেউ চলে গেছে 
         চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নদী 
           আমরা শুধু মাছেদের ভ্রমে 
          কল্পনার জাল বুনে গেছি 

অনুভূতি, নৌকা আনো 
যতই রোদের বিলাসী দিন 
জ্বালাক আগুন—
আমরা হেমন্তের দিকে যাব 
হয়তো ফিরবে আবার 
করুণার শিশিরে ঝিকিমিকি !


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

পলাশ দাস এর কবিতা-



১.
∆ দোকান ∆


মাথার ওপর একটা আকাশ 
আর তার শরীরের ভিতর একটা জালের মতো স্তর 
সেখানে মুষ্টিমেয় আমরা কয়েকজন 
হাত পা নেড়ে যাচ্ছি 
মাথা নেড়ে যাচ্ছি 
একটা দোকান আর কাচের ওপাশের মুষ্টিমেয় শরীর 


২.

∆ যেদিন ∆


যে বিড়ালটিকে প্রথমে খেতে দিত বীরেনরা 
সেই বিড়ালটি আমাদের বাড়িতে আসত, খেত 
সুবিধা মতো এ-ঘর ও-ঘর করত   
বারান্দায় শুয়ে থাকত দীর্ঘক্ষণ 

সেই বিড়ালটির দেখাদেখি আরও একটি বিড়াল 
প্রিয় হয়ে উঠল বীরেনদের  
আমাদেরও প্রিয় হয়ে উঠল সে, কিছুদিনের মধ্যে 
প্রথমের বিড়ালটি যেমন ঘর বারান্দা করত, 
পরেরটিও তেমন ঘর বারান্দা করতে শুরু করল 

এরপর একদিন প্রথমটিকে আর বীরেনরা খেতে দিত না  
আমাদের এখানেও অচিরেই তারও খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল  


৩.
∆ দাঁড়াই ∆

অন্ধকার যখন কেকের মতো হয়ে ওঠে 
মাথার দুপাশে ওপরে সুস্বাদু রঙ ও গন্ধের 
তখন থাবা বসায় বাড়িয়ে দু হাত 
 
অন্ধকার বৃষ্টির মেঘের মতো হয়ে উঠলে 
খুব আকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে রোদের উঠোন  
  
গাছের নীচের ছায়ার শরীরে অন্ধকার জমলে  
তার শরীরের সাথে মিশে যেতে যেতে 
অন্ধকার গাছ হয়ে ওঠে থমকে থাকা মাঠের মতো সময়ে


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

ঋতুপর্ণা খাটুয়া’র লেখা-





১.
∆ জুলাই সিরিজ (১) ∆

প্রতিবার আমি ভাবি, আমার হাত থেকে আর কোনও
খাজা কবিতা বেরোতে দেবো না, এই ভেবে সরে আসি
ধ্বংসস্তূপ হতে। জানালার পর্দায় গিঁট বেঁধে তাকে
অলীক এক তানপুরার আকার দিয়ে গরাদে ঝুলিয়ে
দিই গান। একটু আধটু বই পড়ার অভিনয় করি। এদিকে
অভিনয়েও পটু নই,  সে হিসেবে চটচপ অভিনয় ছাড়তে
বাধ্য হই। ওপারের অমোঘ ডাকের মতো করে ডাক আসে
দুপুরে ভাত খাওয়ার। হাতে ভাত মাখতে মাখতে কিছু খাজা
কবিতা আসে চচ্চড়িতে। তাদের আমি অপেক্ষা করাই।

হাবিজাবি ইতর-ভদ্র শব্দগুলো এত সহজে নিজেদের
হক ছাড়ে না। থালার পাশে ঘোরে, অধিকারের দাবীতে।

কিছুতেই বোঝাতে পারি না ওদের, অসময়ে
শব্দের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমার নেই।



২.
∆ জুলাই সিরিজ (২) ∆


সে রূপকথারা রাতের চাঁদ থেকে নেমে আসে।  ছুটে আসে কিনা জানি না। যখন দূরে কালো নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আলোময় জানালাটা নিভে যায় তখন বয়সের ধারনায় কেমন যেন মনে হয়। মনে হয় এবার আদরও নামল বুঝি ও জানলা বেয়ে রূপকথার দেশে। রাজপুত্তুর আর রাজকন্যার রাতপোশাকে ক্ষণিক বিরতি।

একটু পর দেখি টর্চ জ্বেলে, চাঁদ হাপুস নয়নে রূপকথা খুজতে বেরোয়।  তার পা টলে। ঝিঁঝিঁ পোকারা আর নাইট ডিউটি করবে না বলে হল্লা করে।  তাদের সাথে জোনাকিরা তাল মেলায়।  এরোপ্লেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষনা করে। কোনো অ্যারিস্টোক্র্যাট মেয়ে মশা নাকি বস্তির ঝি মশা আমায়  কামড়াতে ছুটে আসে ঠিক বোঝা যায় না। 

গ্লাস আর বোতলের ইগোর লড়াই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়।  ‘আত্ম সম্মান নিয়ে ফিরে যাওয়াই ভালো’ এই বলে গ্লাস, ড্রাঙ্ক অবস্থায়, হাত থেকে পড়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে জানলা দিয়ে আদর শেষে ফিরতে
গিয়ে রূপকথার পা কাটে।

জীবনে সবই দুর্ঘটনা — এই বলে আমি সব কেস ডিসমিস করে দিই জোর করে।




৩.
∆ জুলাই সিরিজ (৩) ∆


গড়গড় করে বলে যাওয়ার মতো কিছু কথা রিহার্স করছি মনে।
কমবয়সের প্রেমের মতন কিছু একটা রোগে ধরেছে হয়তো।
তাতে বুঁদ হয়ে আছি। উড়ে যাচ্ছি। চারিত্রিক স্খলন দেখছি
আয়নায়। এত লুচ্চা একটা মানুষ আমার ভেতরে থেকে এতদিন
বিড়ি ফুঁকছিল,  খেয়ালই করিনি। হয়তো সে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে
দাঁড়িয়েছিল, আমি পাশ কাটিয়ে গেছি, ভদ্রতার দোহাই দিয়ে।
হায়রে জুলাই,এমন তরতরে বৃষ্টি হচ্ছে, দেবী গলে গলে পড়ছে,
শক্ত কাঠামো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে, ওকে নগ্ন করল জুলাই।
স্যাঁতস্যাঁতে ভীরু  উচ্ছিষ্ট আবহাওয়া, প্রেম। বয়স যত বাড়ছে,
ততই আত্মার নগ্নতা যে একটি উদযাপনের বিষয়, তা জানছি।
নিজের ভেতরে এতদিন যে যীশুর আরোপিত মহিমাগুলো
দেখতাম, তার ভ্রম কেটে গিয়েছে। দুষ্ট, লোভী,  শয়তান,
ইতর, জানোয়ার ও অপরাধপ্রবণ যে মানুষটা বেরিয়েছে
তাকে আমি গড় করি। তুমিই আমার লুক্কায়িত মানিক।
গচ্ছিত রত্নাকর। নির্লজ্জ এক মাইডিয়ার মানুষ।


অলংকরণ- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••