১.
নিরুত্তর পাখি থেকে গড়িয়ে পড়ছে খুব খুনী উর্বরতা...
আমার অক্ষরে অক্ষরে মেঘ-ভাঙা প্রবল জ্বরের হানা।
তাকে কোনোদিন কাছে বলতে না-পারা সে সৌখিন মৌনতা
এখন ডিঙি ছলাৎ থিতিয়ে জমায় পাললিক কান্না।
স্নায়ুর সখ্যতা আঁকড়ে বুঝি, অভিমান খুব বেসামাল;
প্রয়োজনীয় উপুড় আর লেখা নেই আদুরে ইনবক্স জুড়ে।
স্খলিত পাতার মতো অতীত এভাবেই কি তবে চিরকাল
বিশুদ্ধ হয়! শাব্দিক চিৎকারে অপূর্ণতা যায় পুড়ে পুড়ে...
কিছু কি ক্ষতি হয় সে সোনালী শস্যের সুখ উঠে এলে ঠোঁটে,
দু হাত জুড়ে কি এক অবাধ্য সমর্পণ আজো খেলা করে--
প্রেম কি ফিরবে বাদশা শাহরুখের কাঁচ ভাঙা আখরোটে?
আজ শুধু ফালি ফালি ফাল্গুন গুমরায় যে যার আড়াল ঘরে।
অপ্রাপ্তি চরকায় খুব, স্থির বুকে সব সামলাই নিরবধি,
বুঝি, উপেক্ষা এক পতন আর অপেক্ষাও আজ নয় ঔষধি।
২.
∆ ঔষধি বিষ ∆
আমন্ত্রিত যন্ত্রণা এখন আমার শূন্যঘরে
পালক খোঁজে না আর। বিরোধী হাওয়া দিকে দিকে---
আপেক্ষিক ওম নিয়ে এতদিন উড়েছিল যে ফড়িং
তার সহযোগী ডানায় সূর্যাস্তের শোক
ভাঙা-ভাঙা জমাট নষ্ট রঙ দিয়ে লিখে
ঊর্দ্ধক্রমে হলুদ শিখার প্রলেপ পেরিয়ে এখন চোখের কার্নিসে
চুপ।
অপূরণীয় ক্ষতির পাশে
নত শীত-পোড়ানো খড়-ছাই...
এখন দু'বেলা শিকার-শূন্যতা খাবি খায় আত্মজ্বরে।
এই যে নিপুণ দহন, এর পাশে
আর দরকার নেই আগুনের ঝটপট
তুমি ঔষধি-বিষ
আজ স্বীকার করি অকপট।
৩.
∆ তথাকথিত আলো ∆
তথাকথিত আলোর ভিতরে ঢুকে দেখেছি এই আমি
ক্রমশ সুস্পষ্ট হতে থাকা বিড়ালের ওৎ আঁচড়।
থাবা থাবা সুখের বিপরীতে ক্ষুরধার নাব্যতায় আগামী...
হারিয়ে ফেলছি বটবীজের মতো স্বপ্নের সাজঘর।
এত যে অবহেলা, এত কাটাকুটি শিখেছি দু'বেলা তাও।
তোমার বুঁদ জুড়ে উড়ছে একরোখা বিকল্প দাগ।
দুরন্ত বিনয় দিয়ে আমার কলম ভেঙে কি পাও?
ভাঙা-ভাঙা সংলাপ ছুঁয়ে তুমি পাওনি টের সে বীতরাগ।
ফেরাই উষ্ণতা, পালক ব্যবচ্ছেদে জেগে সস্নেহ ঘাম।
দেখি, রোদ চলকে পড়ে যায় উঠতি ঘাসের আঙিনায়।
অপমান সামলে তবু মজ্জায় গেঁথে নিই ক্ষত আরাম,
একাকী দুপুরে সরীসৃপ সুখে কে প্রজাপতি ছড়ায়?
সেতু নড়বড়ে, তবে পারাপার জেনে গেছে তার স্থির বিশ্বাস;
সাঁতার শিখি আর দেখি, দূরে উড়ে উড়ে যায় আলোর হাঁস।
৪.
∆ সন্ন্যাসী-ভস্মে ∆
কোন উচ্চারণের কাছে ঝুঁকে এসে আজ আমি
মাছরাঙা হবো? পাথর-গিন্নি খেলবো না আর।
ডিনামাইট স্পর্শ অতিক্রম করে গেছি আমি
শূন্যতার দিকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিগন্তের ডগায়
খসে পড়ছি কাক শুনশান আদিম কোটরে।
সত্যি ছিল না ঠিক যতটা ভেবেছি হৃদয়
অবুঝ ঈর্ষার ভিতর হাত পেতে তবু তোমাকে
সুগন্ধি শিলালিপিসম আঁকড়াই পূজনীয় মুগ্ধতায়
এই দোষ দেবত্বহীন
এই নভেম্বর ক্রমশ উধাও শিশিরের বিছানায়
কাঙ্ক্ষিত রোদের চকমকি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
তবু কি এক আরোগ্য অদ্ভুত ছায়ার তাড়নায়
নিমরাজি আগামী এখন ফাঁসসম ভবিতব্য ভঙ্গিতে
লাজুক মজ্জা ফাটিয়ে সজোরে পুঁতে দেয় তুমূল অক্ষমতা।
তোমাকে আঁকড়াতে পারি না আর দাউদাউ,
শুধু নিরামিষ জলের শরীরে প্রাক্তন সাঁতার খুঁটে খুঁটে
নিভে যাই সন্ন্যাসী-ভস্মে।
৫.
∆ প্রদাহ ∆
কিভাবে দু'হাতে ভরে রাখি এত ধ্বংস, লুণ্ঠন, ভোগ আর মিথ্যাচার,
মানুষের কাছে আজ আর কোনো সহজিয়া পাখি নেই ভোরের আল্পনায়।
চলে গেছে পতঙ্গজীবনের স্বরলিপি, বিশুদ্ধ ছোবলের সহজাত দিন...
এই যে এত পরিকল্পিত ওৎ, দাম্ভিক প্রয়োগের দিবারাত্রি ক্ষমাহীন,
শীতের সোহাগে চিরহরিৎ ম্রিয়মান, ক্ষত লুকানো একপেশে মলিনতা,
এর কাছে কি হবে রেখে অমৃতের স্বর? বিশুদ্ধ কবিতার আর্তি?
ভঙ্গিল মগ্নতায় মানুষের মনে আজ আর ওড়ে না পড়শী ফড়িং,
কচিকাঁচা ঘাসের শিখায় শিশির-তৈরী আয়নায় ভাসে না প্রিয় মুখ।
জেরবার যন্ত্রণায় মানুষের ভিতর এখন সংক্রামক লোভের আলাদিন,
লাভক্ষতির পান্ডুলিপিতে আর ছায়া-সুন্দর নয় মেঘ-চেরা স্বপ্নিল বক।
আমাদের ঘুমের ভিতর হৃদপিন্ডে আর গড়ায় না সেই কাঙ্ক্ষিত
প্রথম বর্ষার জল-ছোঁয়া ধানবীজের অঙ্কুরিত ফসলের প্রবাহ;
পরিবর্তে রাখা আছে বিজ্ঞানসুলভ বিষ, গতিঋণ, সৌখিন টোপ:
ভালোবাসার কাছে সব ভালোবাসা হেরে হয়ে আছে প্রদাহ।