কবি অরূপ সেনগুপ্ত’র কবিতা-
১.
∆ প্রকৃতির আকর্ষণে ∆
তোমার চেয়ে তোমার আশেপাশের প্রকৃতিই আমাকে বেশী টানে,
বেশি আকর্ষণ করে;
তোমার পেছনে ঐ যে ভাসমান বৃন্দাবনের তুলসীবন,
ডুবন্ত মথুরার আকাশে রুপোলি একফালি চাঁদ, তারা....
তোমার ডানদিকে শান্তিকুঞ্জের বনবীথিকায় শায়িত
সদ্য ঘুমভাঙা এক সিংহিনী,
আর বাদিকে- অদূরেই একটি মায়াবী শীতার্ত হরিণ-
মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে স্বর্গের সিড়ির দিকে...
তোমার আশেপাশের প্রকৃতি কি জানে?
অদূর ভবিষ্যতে
স্বর্গ থেকে ঝরে পরা স্ফুলিঙ্গ,
ভাষাজ্ঞাণ ছাড়াই পরিণত হবে উল্কাপাতে?
২.
∆ অবসর ∆
রঙিন উল্কা এসে পরে পুকুরের জলে,
মাছরাঙা ধরে মাছ ছিপের বদলে;
নির্জন পুকুর পাড়, নিস্তরঙ্গ স্তব্ধতা,
শূণ্যতার ক্ষত নিরাময়ে নীরব শূণ্যতা;
বেলা বয়ে যায় আজ ছাতিমতলায়,
মাছরাঙা রামধনুর আগুন ঝরায়;
কোকিলের কোলাহল কাকের বাসায়,
নীড় ছেড়ে তীর খোঁজে অবসর সময়।।
৩.
∆ তুমি কি ডাকলে? - শৈশব ∆
আবার যদি ফিরে যেতে চাই সেই সীমাহীন আশৈশবে!
তুমি কি আমায় একটুকরো জায়গা ছেড়ে দেবে?
এতগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে ওপরে উঠে আমি আবার মাটি ছুঁতে চাই,
উঁচু, আরো উঁচু, অসীম অনন্ত, না ফুরোনো চাহিদা - এ পথের শেষ নাই।
আবার ফিরে যেতে চাই তোমার কাছে, তোমার উষ্ণ ক্রোড়ে,
একটুকরো ছোটো বাগান, দুটি খরগোশ, ভাঙা দোলনার বৈভব;
তিনটে শালিক, ডুমুর গাছের কন্দরে,
তুমি কি ডাকলে? আমার একান্ত শৈশব।।
৪.
∆ কুয়াশা ∆
তীক্ষ্ম থেকে তীক্ষ্মতর ছুঁচমুখ চুম্বক দেখে করে মাথা নত,
অনর্গল ছুটে আসে প্রলাপ, অকথ্য অবিরত;
বায়ুর বেগে চূর্ণ হয়ে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী মেঘ জমে বুকে,
গাঢ় কলো দীর্ঘশ্বাস স্তরে স্তরে সাজানো অজানা অসুখে;
একদিন হঠাৎ অঝোর বৃষ্টি ঝড়ে মণিকাঞ্চনতলায়,
মৃত্তিকাকে চিত্রিত করে ঘনঘোর রাত্রিতে-অবেলায়;
ছুঁচমুখ দিখন্ডিত হয়, বিপন্ন হয় তীক্ষ্মতা,
বিনিদ্র রাত্রির চাঁপা জড়তা, ব্যর্থতা।
বাসি হয় ফুল, ভেঙে যায় ভুল,
ভাঙে বালিয়াড়ি, ভাঙে ঢেউয়ের সারি,
ভেঙে যায় প্রবালপ্রাচীর,
ভাঙা হৃদয়ে আয়াসবিহীনভাবে
জ্বলে শূন্যতা স্থবির।
দেহের রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ যায় নিরুদ্দেশে,
বাতাস আবদ্ধ হয় নদীবক্ষে অবশেষে;
জলীয় গান বাস্পীভূত হয়ে জন্ম নেয় কুয়াশার,
দীর্ঘস্থায়ী পরিত্যক্ত শ্বাসরোধী রূপকথার!
বেদনার দানা নিয়ে অনুচ্চ স্বরে গান বাধে শুভ্র-স্নিগ্ধ জোৎস্না;
ধূসর অব্যক্ত কুয়াশা.....
৫.
∆ অন্য অন্ধকার ∆
অন্ধকার শেষে আরেক অন্ধকার,
মাঝে বড় খাঁই, এক ফাঁক আড়াল;
জ্বলছে অক্ষর অগণন, জ্বলছে খিদের মশাল,
মুছে যায় ছায়া, ভঙ্গুর দীর্ঘশ্বাস করুণার।
ঝড়া পাতায় অরণ্যের মর্মর ধ্বনি,
আকাশে ওড়ে শেণ্য শকুন;
হঠাৎ ছুটে আসে রুপসী কালবৈশাখী,
হয় উদর জ্বালা দ্বিগুণ।
দূরের নির্জন দিকচক্রবাল,
ফুটিফাটা ক্ষেত, দুটি ক্লান্ত খালি পা;
দুটো অলস বলদ, শাণিত লাঙল,
গায়ে মৃত পশুর বিষম দমকা।
বাতাসে ভাসে নিঃশ্বাসের নিঃশব্দ আকুলতা,
আদিম উদর জ্বালা মেটায় খুঁটে খুঁটে;
শব্দ পোড়ে, অন্ধকার ভাঙে, দুর্গন্ধের কুম্ভীপাকে,
অন্ধকার- এ এক অন্য অন্ধকার - নৈসর্গিক বিচিত্রতা।।
ক্যামেরা- মেহবুব গায়েন
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০