Friday, 1 December 2023

কবিতা

বনশালুকি জল পর্ব -৯



সুপ্রভাত মেট্যা’র কবিতা-


সেও, আমার অশ্রু


এতদিনে প্রায় তুমি কবিতা হয়ে গেছো।

মেয়েদের দুপুর দেখে বড় হয়ে উঠি আমি, এইখানে।
এইখানে ভরে ওঠে আমার শ্রাবণ পুকুর।
তখন হৃদয়ে নোঙর ফেলে তোমার ছায়াটি এসে কাছে,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, চুপচাপ।
আমি বলি এসো, বসো ওই কাঠের চেয়ারটি নিয়ে
আমার বুকের খাঁচায়, নিরিবিলি।
সে আড়চোখে দেখে। তাকিয়ে,'আজ আসছি' বলে,
হৃদয় ছুটিয়ে চলে যায় কোলকাতা শহরের দিকে কোথাও।

সেখানে রাতের ভালোবাসা আলোকরে বসে থাকে সে,
গল্প করে। আর সেই আলোর শ্রম দিয়ে গড়ে ওঠে তার নরম শরীর।
অ্যাতো অন্ধকার; তবু সে চকচকে, সাদা ধবধবে হয়ে ওঠে ক্রমশ,
চমকবাহী হয়ে ওঠে। তবে কী আলো হতে গিয়ে,
আবার সে শরীর হারাবে কোথাও!

তোমার চন্দ্রবেলা বেরিয়ে আসে চক্ষুজুড়ে, দেখি,
প্রচার মেঘের সামনে এসে তোমার কলঙ্ক ঝরে,অশ্রু ঝরে......
সেও, আমার অশ্রু......আমার অশ্রু......


কথা সমগ্র 


আলো থেকে পাতার সংসার সরে গেলে
দু'চোখে অন্ধকার নামে।
দুঃখ বড় 
গাঢ় শ্রাবণ হে মুগ্ধ পাঠিকা;
যা কষ্ট দেয়, ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে তোমাকে ডুবিয়ে দেয়,
                               তোমার আক্ষরিক জীবন।

অত কবিতা লেখার দৌড়াদৌড়িতে গিয়ে কি হবে?
তার চেয়ে বরং নিদ্রা খোলো, শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখো,
স্বপ্ন দেখা কী যে আনন্দের কী বলব তোমাকে!

তবু কী মন সে চায়?
তাই প্রথম প্রথম, তোমাকেই তুলি, নাড়া দিই,
আমার কলেজ ফেরত দুপুরের কথা বলি,
আগামী কাব্যের সাফল্যের কথা।
বসে থাকি, অসময়ের ভাবনাগুলির গায়ে 
রঙিন জামা-কাপড় জড়িয়ে চুপচাপ।
দেখি, আমার সমস্ত কথাগুলির নীচে,
বাড়ি থেকে সামান্য দূরে, ধান ঝাড়ার পাটায়
কবিতা তার ডালপালা ছড়িয়ে বসে আছে।
আর বলছে:
                আহা নড়বড়ে হৃদয় তোমার ;
                সারাই করো গো, এসে সারাই করো!



প্রাক কথন


সকালের খুশি 
দুপুর অবধি গড়িয়ে সঙ্গ নিয়েছে আমার।
তোমার মনের সঙ্গে আজ বিকেল-ধুলো উড়িয়ে
ঘুরে এলাম আবার।

"এই সর্দি-জ্বরের ঠাণ্ডায় তুমি নেমোনা রাস্তায়।"
বলেছিলে একদিন।
বলেছিলে, "সাবধানে থেকো, ভালো থেকো।"
হ্যাঁ, সে-কথা ভুলিনি আমি।
তুমি যখন আসতেনা, আমিও তখন
না আসার কারন নিয়ে হাজির হতাম, তোমার বাড়ি।
হাজার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতাম।

তুমি চুপটি করে বসে সব শুনতে।
আর মৃদু হেসে বলতে, "নতুন দম্পতি রাত্রি দেখার জন্য 
যেভাবে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তেমনটি হয়োনা লক্ষ্মীটি।"
আমি বলতাম, "নিশ্চয়ই কেউ আশ্চর্য হয়েছে দেখে,
তানাহলে এত ঐশ্বর্য কিসের তোমার, এত অলঙ্কার,
আয়নাখুশির ঝিলিক কিসের এত তোমার চোখে-মুখে,
অ্যাঁ?" তুমি দুধেল হেসে,
আমার হৃদয়ে একটা টোকা মেরে
বলে উঠতে, "সে তুমি, তুমি।"

অলংকরণ- ঋতুপর্ণা খাটুয়া‌
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••