Tuesday, 29 April 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৪

মহম্মদ সামিম এর কবিতা -


[] সম্ভ্রম 

এই কথা স্বীকারে কোনও যন্ত্রণা নেই
একদিন দিগন্তের ওপার থেকে
সূর্যের লাল মুছে
আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠবে।
সেদিন আগুন, নরম তুলোর মতো হয়ে
নিভে যেতে যেতে দূরের নক্ষত্রে মিশে যাবে
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে গাছেদের সম্ভ্রম
সেদিন তুমি ফিরে আসবে নিশ্চয়?
গভীর শ্বাস দিয়ে আমাকে উড়িয়ে দেবে
আর আমি
ছোট ডিঙির উপর দুলে দুলে
ক্রমশ ঘন হয়ে তোমার ভিতর সম্পৃক্ত হয়ে যাব।

[] বর্ম

ছিল না কোনও অসুখ, লুপ্ত অশ্রুর উচ্ছ্বাস
তালুতেই বন্দি ছিল অপার পৃথিবী
কিছুটা বিক্ষত, মুষ্টিবদ্ধ, আঘাতসমূহ
আঁজলা ভরে তুলে আনি আয়ুর নিজস্ব লিপি
মৃত্যুও সবুজ মাঠ, চির উন্মাদ

প্রশ্রয়ের বিভা ছিল তোমার চোখে
আমি অপরাজেয় হতে চাইনি কোনওদিন
আত্মনিবেদন করেছি তোমার নিদ্রাবিলাস

যুদ্ধ শেষে
 চির ঘুমের ভিতর স্বপ্নবন্দনায় রত হয়ে
                                 রয়ে গেছি চিরকাল।


[] অব্যর্থ আলোর শোক 

কী নিপুণ ঘুম,ভঙ্গিটি যেন প্রদীপ শিখা
অনন্ত উদারতা নিয়ে এটুকুই প্রশান্তি
খুব ধীরে ভাতের থালাখানি রাখলেন অশক্ত ভিক্ষুণী
জল ও লবনের নির্লিপ্ত তরল
আটপৌরে জীবনের উপর দিয়ে
বয়ে গেছে কত ঝড় ও বজ্রপাত
আলো নেই তেমন, বাদল মেঘের উপর
জোনাকির শাশ্বত বৈভব
দূরে কোথাও বেজে চলেছে উদাসী সানাই
করুণ দৃষ্টির ভিতর এসে বসেন স্বয়ং ঈশ্বর
খুব ধীরে চোখ মেলে তাকায় অন্ধ কিশোরটি
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিমা আলোর মণি
দিনান্তের সঞ্চয় বলতে এটুকুই—
ভাতের থালার উপর গড়াগড়ি খায় জীবন

অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 26 April 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৩

রওশান রুবী’র কবিতা -


[] রোদ

কেউ দেখতে পেল না, কেউ না, /

কার্নিসে ঝুলে আছে একফালি রোদ।/

সবাই রোদ খুঁজে আচমকা ভিতরে;/

আমি কার্নিস থেকে রোদটুকু এনে /

আগামীকালের ক্যানভাস উন্মোচিত করি,/

তারা তন্নতন্ন করে খোঁজে আমার ছড়ানো শস্য/

আর শুধু বুনে যায় একার আরাম।/


[] পা

পায়ের কোনও নিজস্ব চাওয়া নেই/

পথ জুড়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতা/

ডানে বাঁয়ে তারকাটা, ঘনিষ্ঠ ধূলি/

পেছনে ফেলে সে তোমার জন্য ছোটে,/

তোমার জন্য বিবর্ণমুখ শুষ্ক দিন লুকিয়ে

আকাশটা নুন জলে কেনে।/


পায়ের কোনও বিশেষ চাওয়া নেই/

অন্যের ভিতরে চুপ তার /

ঋতুচক্রের অগণন বাসনা।/


[] আয়না 

আমরা কারো দুঃখ কেউ ছুঁবো না কখনো বলিনি,/

বলিনি বাষ্পিভূত হয়ে যাচ্ছে স্থবির তাপ,/

কিংবা ছাতার ভেতর থাকুন হয়ে ছাতার আসবাব।/


তবুও, আমাদের খুলে যাচ্ছে অহর্নিশ বৃষ্টি কাঁপা ঋতু,/

দূরে যাচ্ছে সেচ্চায় দূরত্বের দ্বিধা,/

মাঝে মাঝে অভিন্ন অন্তরের হাহাকারে বলি,/

আমরা যদি সেই কবি হতে পারতাম/

যে কবি আঙুলে তুলেছেন শিল্পীত সাক্ষর।/


আমাদের কোন ক্যালেন্ডারের প্রিয় তারিখ নেই/

নেই ক্যান্ডেলসন্ধ্যায় উঠা নীল সমুদ্রের উত্তাপ/

আমাদের আরম্ভ নেই, ক্লেদ নেই, নেমে আসা নেই/

যুদ্ধের পর্বত ডিঙিয়ে তবুও বিহ্বল জেগে থাকা।/


রোজ মানচিত্রে খুঁজি প্রতিচ্ছবির ব্যাঞ্জন/

সাতকাহনের সংশয় পেরিয়ে অনুভব ছুঁই/

আমাদের ভয় নেই বলে স্থির বিশ্বাসে বলি-/

‘আমার ভেতর জেগে থাকুন একটা আয়না।’/

মূলত, আয়নাই মানুষের বোধ অবগাহনের মরমিচোখ।/


অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Thursday, 24 April 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৩

দেবার্ঘ সেন এর কবিতা -


[] দাঁড়ি

এ কোন সুর, 
              জ্বালাময়ী
তিলে তিলে কুয়াশা-জীবন।

বাতাসে আজ অপমান বাজে—
কাকের ঠোঁটে মাংসের টুকরো।

ক্রমশ দহন, 
               শরীর টাইম ব্যোম
বেঁধেছি স্বপ্ন, আমার ছায়া
                   ছায়া খুন উল্লাসে।



[] অনুবাত

পর্বত গাল বেয়ে অশ্রু নামছে—
নামছে, পাপড়ি সিক্ত গোধূলি 
                             কাঞ্চনজঙ্ঘায়
অকাল দহন, সমগ্র গিলেছে
আলো কিংবা রোদ, 
যদি বলো, এরপরও তুমি অসহায়।

তুমি নিষ্ঠুর, 
চলে যাও যেদিকে দু'চোখ যায়।


[] স্মার্ট বাজার

তবুও শরীর—
চৈতন্য ছুঁয়ে যাচ্ছে হাওয়ার লিপি।

এখানে তোমার নামে,
আঙুর বাগান।

বোয়মের জলে ভাসে রঙিন মাছ।

রঙ যত ক্ষত
ততই রঙিন।

বাগান ঘুরে দেখি, ভাঙা পেণ্ডুলাম
ফলের কোনও নিরাপত্তা নেই।

শাসন-শূন্য অতনু পৃথিবী
পৃথিবীর কবজিতে, ব্যর্থ; স্মার্ট ওয়াচ।



অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Wednesday, 23 April 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -৩

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল এর কবিতা -


[] মেহবুব এবং শান্তিব্রত 


এক

বরং অনুভূতিকে আশ্রয় করি, অমূর্ত ধারণাকেই গ্রহণ করি, সেই সাধনার কাছে যেতে চেষ্টা করি বিনম্র সত্য নিয়ে। তারপর চোখ বন্ধ করে খুঁজতে থাকি সেই তীক্ষ্ণ খসড়ার শব্দ। সমকালীন পরিবেশের মধ্যে কবি সময়ের স্রোতে কাণ্ডারী, নেমে পড়েন ভবিষ্যতের সন্ধানে। অতীতকে আঁকড়ে ধরেই সমকালীন সময়টাকে মেনে নেয় । তাই আসে ভবিষ্যত। এই যে নিশ্বাস নিচ্ছি তখনও কি সুর খুঁজে চলেছেন তিনি, আড়বাঁশি বাজাচ্ছেন জ্যোতির্গময়? তবে আমার উৎস কি জোনাকি বয়ে বোড়ানো পাগলপারা বাতাস ? তাই প্রতিদিন জন্ম হয় সম্ভাবনা। জন্ম হয় মাটি মাখা নাভিমূল আর সুগন্ধী গন্ধরাজ। তারই নাম পরা অথবা অপরা , তারই নাম পিপাসা। কেবল নিজেরই অপেক্ষা থেকে পরাজিত হতে চাইনি কেউ –


দুই

জড়বস্তুর ছন্দকে জড়িয়ে ধরতে সজীব হতে হয়। শরীর এবং আত্মার স্তরে একে অপরের প্রতিটি স্পন্দন অনুভব করতে হয়। যেমন ধরুণ মৃত কাণ্ডের উপর সাদা কালো ছত্রাক, সম্পূর্ণ পরজীবনে থেকেও সূর্যের সাথে জন্ম মৃত্যুতে জড়াজড়ি। অন্ধকার নিচ্ছে, নিচ্ছে পরোক্ষ আলো। হাওয়া আসছে সেই দক্ষিণ থেকে। আসেপাশের কথাবার্তা হাঁটাহাঁটি এমনকি গরম কিংবা ঠাণ্ডা ভালোবাসতে বাসতে বুঝতে পারছে কিছুই বদলায় নি। কিন্তু আশ্চর্য হতে হয় — ঘড়ির শব্দ আসছে। হৃদয় ছুটছে অথচ বৃক্ষলতার মৌনতার কাছে তার কোনো নবজন্ম নেই।   চিড়চিড় করে ছড়িয়ে পড়ছে  ছোট্ট গ্রামের গড়পড়তা কান্না। পোকামাকড়ের গাছপালায় হয়তো আর্দ্রতা হয়তো অনার্দ্র খুশি। 


তিন 

আমি সকাল সকাল সকালের ভিতর নেমে যাই। জুতো পরতে পরতে আমাদের পায়ের পাতা শক্ত থেকে নরম হয়ে যাচ্ছে। আমদের নতুন জুতো পরার অভ্যাসে অনেক সতর্ক,  তবুও কাঁচা মাটির গুঁড়ো লেগে যাচ্ছে পায়ের ভিতর। গতবারের থেকে আরও খারাপ এই রাস্তা। মোচড় লাগছে নিতাই মামার পায়ের গাঁঠে। রক্ত জমাট বাঁধছে মোচড়ানো অনুভবে। সেখানেই আমাদের সাক্ষাৎ হয়, ছোটবেলা থেকেই পুকুরটা বাঁশঝাড়ে ঢাকা, চুইয়ে আসা আলোর ফোঁটা গুলি চাঁদপানা। তার দিকে তাকিয়ে আমার বেড়ে ওঠা - একটির পর একটি সিঁড়ির ধাপে শুধুই আগাছা। এবং পরবাসী বোল্ডারে পায়ের নখ উঠে যায় — রক্ত পড়ে ফিনকি দিয়ে। 




অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

Saturday, 19 April 2025

কবিতা

আঁচলডোবা জল পর্ব -২

কনিষ্ক শাসমল এর কবিতা -



[] প্রেমিকা ও ছায়া

আমার যে ভাইটি আত্মহত্যা করল গত পাঁচ দিন আগে
আমি দেখতে পাই না তার মাথার মধ্যে জ্বলে ওঠা নক্ষত্রের সুর। 
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো বুকে কোন পাখির শুধু ডানা ঝাপটানো ? 

কী রঙের পোশাক পরে বোহেমিয়ান আলোয় হাত বাড়াচ্ছে ! 

হাতের তালু থেকে আজ ভেসে আসছে রূপনারায়ণের জল,
আলগা পাড়ের কুয়াশা ঢেউ, অভিমান
আমাদের সবার চোখ নীল হয়ে আসছে তার ঠোঁটের মতো । 
ঘন নীল

তার প্রেমিকার অমাবস্যা ছায়ায় আমাদের বাড়ির উঠান চিরকালীন একাদশী রোগ। রোগাচ্ছন্ন অবস্থায়।



[] অলক্ষ্মী


তীক্ষ্ণ পেটের যন্ত্রনা থেকে যখন খসে পড়ছে নক্ষত্র 
বাবার পায়ের কাছে
তখন আমাদের ভাতের হাঁড়িতে সন্ধ্যা
মায়ের একাদশী। 

এই বিদ্যুৎ সংযোগহীন গ্ৰামে কখনো লোডশেডিংএর ভয় হয় না। 

মৃত বালকের বুকের মাপ চওড়া হচ্ছে
সরস্বতী ধূপের গন্ধে
আর
এপাড়া ওপাড়া সব লক্ষ্মীর ডালাতে তিল ছড়িয়ে দিচ্ছে গর্ভপাতের ভারসাম্য। 


[] প্রজাপতি রঙের মাঠ


গভীরে কিছু নিদ্রাহীন রাত জন্ম নিচ্ছে
প্রজাপতি রঙের মাঠে শাড়ি খুলে দিয়েছ রোজ। 

তোমার জাতক হাওয়ার গহীন লাগা স্মৃতি
শিমুল তুলোর মতো উড়ে যাচ্ছে

কানকো কাটা কই মাছ রঙের আকাশ
মাথার উপর অংশত মেঘলা। 



অলংকরণ - কনিষ্ক শাসমল 
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••