কবি মঞ্জীর বাগ এর কবিতা-
১।। ∆ হরিণ ∆
ওরা ছুটে ছুটে আসে
নিভৃত বনের ভেতর সবুজ দিনান্তের আলো।
শিং যেন বৃক্ষ ঘুমন্ত রৈখিক সরলতা
মোহ মাখা চোখে ওরা দেখে
ওরা ছুটে ছুটে ঢুকে পড়ে দেরাজের কোণে
দানাশস্যের শিশি কিংবা মসলার বনে
নিভৃত বিচরণ চালের ড্রাম কিম্বা আটার কৌটো
অপছন্দ নয়
ওরা ছুটে ছুটে আসে
ভেজানো সাবানের বাক্স মেজে রাখা বাসনের
স্তূপে
তীর বেগে ছুটে যায় মায়াবী স্রোত
গৃহস্থ কাজের ফাঁকে কবিতার মতন।
২।। ∆ জ্যোৎস্না রমনী ও সাইকেল ∆
রূপনারায়ন ভাসে
ভাসে, অমোঘ ভাঙা চাঁদ জ্যোৎস্নার জলে
সবুজ অন্ধকার একা এবং একা গুটিসুটি
চাঁদ ও জ্যোৎস্নার নিবিড় কথকতা আঁকে রাগ
অর্থে নিভৃত অনুরাগ,বিব্রত সময়
অসময় অভিসারে
অভিসার কথাটির আগে কোনো বৈষ্ণব গোঁসাই
রাধা নামটি যোগ করেন তবে বাজে নিভৃত মঞ্জীর
চাঁদ বেয়ে নেমে আসে ঠোট,,গাছের চাঁদ মাখা পাতায়
অলীক খুনসুটি;আহা চাঁদ এসো
ওই দেখো মনিরুলের সাইকেল ঘর
গাঙচিল শেষ ডানাটি ঝাপটিয়ে উড়ে গেছে
সন্ধ্যার পূর্বের গানে।গান আহা মোহময় প্রকাশ
নীল জ্যোৎস্নায় পড়ে গেছে দোকানের ঝাঁপ
টায়ার স্পোক নাটবল্টু টাইট দিতে
সোনালী জোনাকী হয়ে ওঠে কবি
ব্যাক লাইট এখন অনন্তের অন্তর ছুঁয়ে
একটু ঘুম দিতে পারো
এরপর তীব্র ক্লাইম্যাক্স
মাঝরাতে নেমে আসে পরী
ডানা তার কালো রাতচাদর
এখন সে গৃহ এবং নারী
সে উড়ে এলেই রূপনারায়ন ধুয়ে দেয়
মনিরুলের ধুলোমাখা হাত,এখন তার হাতে কলম
কলম ছুঁয়ে সে এক হাতে সে জড়িয়ে থাকে পরী
আলতা মাখা পা পায়ে পায়ে ছুঁয়ে যায়
চাঁদ আর কোজাগরী পূর্ণিমার আলপনা
৩।। ∆ নির্বাচিত কবিতা ∆
রাত্রির মাঠে খেলাধুলা হলে
চেটে খায় দুরন্ত কুমির
পারিজাত ফুলের গল্প শুনিয়ে নিয়ে এলো এক দুরন্ত নাবিক
এক বনে যেখানে শুয়ে আছে অতীত কঙ্কাল
অপাপবিদ্ধ কুমারী যেন পুষ্পপাত্র ভরে দেয় অন্তর্জাত গান
চতুরদংশক ডেকে দেয় যুগান্তের পাপ
জলে চাঁদ ভেসে বেড়ায় সেও জলের গভীর
এ গভীরে লুকিয়ে আছে অনিবার্য মৃত্যু
শব্দের এক জাদু মহিমা আছে
জাদু জানে সেই জাদুকর।সেই করে সম্মোহন
শব্দের মালা গেঁথে গুন করে বাণ
কখনো সেই বাণে অষ্টাদশী চাঁদ চিতা হয়ে ভাসে
দেবী অন্নপূর্ণার একান্ত ভাতের হাড়িতে ফোটে কালো কাঁকর
নির্বাচিত কবিতার পাতায় পাতায় ভাসে অজস্র সুঘ্রাণ।
৪।। ∆ ব্লক ∆
পরিযায়ী হাওয়ার সাথে উড়ন্ত দুপুর
মেয়ে পুরুষেরদল আধরঙা খুচরো
বিষন্ন বিস্তার আধুলীতে বেঁধে রাজধানীর
পারাপার ঘাট
স্যাটেলাইটীয় চোখে দেখে যায়
টেলিভিশনের জমায়েত।
দুঃখের অনাদি গান লিখবে বলে যে অমিয়বালক
এখানে ওখানে ভুলভাল ঘোরাঘুরি করে,
সে ঠিক
আমারই মতো বেকুব উজবুক,
কত ভুল করছি
জীবনে হেসে অবহেলায় তার গুনতি সেরে ফেলি
মা লক্ষীর কুনকে কম পড়ে
তুমি খুব গুছিয়ে হিসাব করো অনুদিদি, কবির ওয়ালেট
আমার কেবল পেঁজা পেজাঁ জল ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতন
একবার যদি দেখে নিতে মিতালী পুরান, তবে আমরা দুজন মিতে অম্লশূল সই
সর্ষের ক্ষেতে ছবি আঁকে হলুদপাখি গান
পরিয়ায়ী শব্দের ভারে কেঁপে যায় বুক
একটি পরিযায়ী পাখিকে মেয়ে বন্ধু বলে ডেকেছিল
সামাজিকতার লাল রেখা আঁকা যায়নি বলে
গুঁড়োগুড়ো দেড়দিনের সাজানো সাংসার
সাংসার সাজাবে হাঁড়িকুড়ি বাসনীয় গান
আমার আর কবিতার মাঝে ঘুমিয়ে আছে
আমাদের মেয়ে পরিজাত ঘোর স্বপ্ন প্যাস্টেল
নির্জন পৃথিবীর পথে এখন লগডাউন। সবটাই ব্লগ
প্রতি সকালের মাদকতা জল।টাইমলাইন দেখি কবিতা ভাইরাস।
আতঙ্কে থাকি উন্মাদিনী রাই ডুবে যাই যদি কোলাজ রঙ জল
তার চেয়ে ব্লক করে দিই কবিতার প্রোফাইল
অনুদিদি, আমি ডুবে যাচ্ছি গভীর গভীরে
ভয় করছে আমার
দিদিভাই; তোমায় কি এ বার ডাকা যায়
৫।। ∆ মা নদী ও গান ∆
নদীর জলের চলাচলে যে গান লেখা থাকে
তার সফল সঙ্গতে মিশে থাকে আর্য রমনীর
বেদগান ঋত্বিকহোমাগ্নি বেদ মন্ত্র ধ্বনি। সিন্ধু এক
নদীরনাম নয়;সিন্ধু একটি সভ্যতা। এইসভ্যতার নাগরিক গানে আমি স্নানাগার কিংবা শস্য ঘর
আমাকে এইভাবে আঁকা যায় যেন
ধ্বংস স্তুুপ থেকে পাওয়া নিসুতো রমণীয় গান
গান বলতে মোহময় সুর যদি বলো তবে আমি যোগ্য সঙ্গত।
নদীর জলের সাথে ভেসে ভেসে হয়ত এখন
আমার ভিতর জন্ম নেবে ধান গান।এখন আমি মাটি।মাটি ভিতর ঘুমিয়ে থাকে যে আস্পৃহা
বীজ হয়ে অঙ্কুরোদ্গমের কথা লিপি।
লিপিলেখা ছিল আলতামিরার গুহায়।এক তীব্র বাইসন নতুন প্রস্তর যুগের শিকার লিখেছিল
শিকার জীবনের সত্য। বাঁচার আকাঙ্ক্ষা য় কেউ
শিকার হয় কেউ শিকার করে।
এসময় শিকার হয় অবোধ বধ্য নৈতিকতা র পীঠভূমি
নদীর তীরে বসে আছি।এখন জল স্বচ্ছ নেই আর।
স্বচ্ছতোয়া গঙ্গার শুদ্ধতা এখন পরিহাস
নদীকে শুদ্ধ কুমারী রূপে বয়ে যাওয়া..
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের মতো দেখি
বসে আছি।হেরে যাওয়া স্বপ্ন জড়করে
এখন বাতাসে ভাসে কটু ভেঙে যাওয়া ঘ্রান
চিতায় পোড়া চর্বি মাংসের গলেগলে পড়া
মরাকাঠ
তবু নদী পলিভরা বুকে শ্বাস গানের কথা বলে
তৃষিত জরায়ু ভরে যায় অমৃতবীজ
এসো জল;মা হই গান হই পৃথিবীর মতো
এদূষনের মধ্যে একটি চড়ুইয়ের বাসা এবং
আকাশের নীল রঙে নদীরজল মিশে
মধুবনী গ্রামের দেওয়ালে একটা নতুন
সভ্যতা বিনম্র ছবির মক্স আঁকে::
এমুহুর্ত আকেন্দ্রবিস্তার থেকে
বীজের গর্ভধান গান
হোমাপাখির না ওড়া ডানায় আগুন ও বিদ্যুৎ
অলংকরণ - পৌলমি দেবনাথ
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
"বসে আছি হেরে যাওয়া স্বপ্ন জড়ো করে"
ReplyDeletePoetry becomes artificial without its own feelings. This line is supposed to look good.